#আমার_একটাই_যে_তুই❤️
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
#পর্ব_৩৩
কুহু চোখে জল টুকু মুছে নেয়। পা বাড়ায় তিথির রুমের দিক। সেখানে তার ব্যাগ ফালিয়ে এসেছে। ভাগ্যিস সে হিজাব পড়ে এসেছিল। তার সাথে দুটো মাস্ক লাগানো।বুঝতে পারবে না কেউ! কুহু ধীরে পায়ে রুমে ঢুকতেই ইউসুফ, তার মা, আর সেই পিচ্চিটিকে দেখতে পায়। তা দেখেই কষ্টে বুক ফেঁটে যাচ্ছে! তাও নিজেকে সামলে তিথির দিক তাকালো। তিথি অসহায় ভাবে তাকিয়ে বলল,,
–” ও আমার বান্ধবী কায়া!ও ডাক্তার। আমাকে দেখতে এসেছে!”
সবার দৃষ্টি এখন কুহুর দিক। এতে কুহুর খানিকটা ভয় ভয় করছে। তাও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার ট্রাই করছে। সকলের দিক এক পলক তাকিয়ে কন্ঠ মোটা করে বলল,,
–” আসসালামু আলাইকুম! ”
সবাই কুহুর দিকে তাকিয়ে সালামের উত্তর দিল। নানান কথা বলল, জিগ্যেস করলো। এদিকে ভয়ে হাত পা কাপা-কাপি শুরু তার। কথার মাঝে আড় চোখে বার কয়েক ইউসুফকে লক্ষ করেছে সে। ইউসুফ নির্বিকার ভাবে তাকিয়ে ছিল কুহুর দিক। তার চাহনিতে বুক ধড়াস ধড়াস শব্দ করছে। বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পর কুহু চলে যায়। নিজের রুমে এসে দরজা আটকিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকে সে। যেন বাঘের গুহা থেকে বেড়িয়ে এসেছে। সাথে সাথে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানায়।
এভাবে কেটে গেল ১০ দিন। তাদের যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসচ্ছে। এর মাঝে অনেক আজিব ঘটনাও ঘটেছে কুহুর সাথে। ইউসুফের সাথে কয়েক দফা দেখা হয়েছে গেছে। কিন্তু তা কাকতলীয় ভাবে নাকি ইচ্ছে করে বুঝে পায় না কুহু। মাঝে মাঝে মনে হয়েছে ইউসুফ বুঝে গেছে। কিন্তু তার কথা বার্তায় তেমন কিছু প্রকাশ পায় নি। এই তো সেদিনের কথা চর কালিবাড়িতে ক্যাম্পিংয়ের আয়োজন করা হয়। সেখাই হুট করে উপস্থিত হয় এমপি সাহেব। কুহু তখন অন্য পেশেন্ট দেখছিল। পিছনে মুড়তেই ইউসুফকে দেখে হকচকিয়ে গেল। নিজেকে সামলে হালকা হাসার ট্রাই করে মোটা কন্ঠে বলে,
–” আপনি!”
ইউসুফ বাঁকা হাসলো। কুহুর খটকা লাগলো। ইউসুফ সে হাসি বহাল রেখে পাশের বেডে শুয়ে পড়লো। কুহু বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলো। তা দেখে আবার হেসে দিল ইউসুফ। বাঁকা হাসি ঠোঁটে রেখে বলে উঠলো,,
–” ডাক্তার সাহেবা রোগী হয়ে এসেছি! চেকাপ করবেন না আমায়?”
কুহু কি বলবে বুঝলো না আমতা আমতা করে বলল,,
–” ক..কি সমস্যা হচ্ছে বলুন?”
ইউসুফ হেসে ফেললো। বলল,,
–” অনেক রোগ ডাক্তার সাহেবা! রাতে ঘুমাতে পাড়ছি না, খেতে পাড়ছি না, কাজে মন দিতে পাড়ছি না।পাগল পাগল লাগে হয়তো সত্যি পাগল হয়ে যাবো বেশী দিন বাকি নেই। কি করি বলুন তো?”
কুহু এবারো হতবাক হয়ে গেল। আদ কি এমপি সাহেবের কোনো রোগ হয়েছে? তাও বলল,,
–“আ..আচ্ছা , আচ্ছা আমি দেখচ্ছি!”
বলে স্টেথোস্কোপ দু মাথা কানে পুরে গোলমতো বস্তুটি দিয়ে এমপি সাহবের দিক ঝুকে তার বুকে, পিঠে লাগিয়ে হৃদস্পন্দন শোনতে লাগে।এতে খুব অস্বস্তি লাগছে তার। ইউসুফের বুকে ডিপ ডিপ যেমন কানে লেগে মনে গিয়ে গিথে তার বুকেও হৃদছন্দ হচ্ছে।ঠিক তেমনি ইউসুফের নিশ্বাস কুহুর মুখে বাড়ি খেতেই কেঁপে উঠছে কুহু।এক পলক ইউসুফের দিক তাকাতেই বুঝতে পারে সামনের ব্যক্তিটি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিক। তখনি নজর ফিরিয়ে নিলো কুহু। তা দেখে ইউসুফ বলল,,
–“কি ইন্টারেস্টিং ব্যাপার ডাক্তার সাহেবা! আপনার চোখ গুলোর দিক তাকালো খুব পরিচিত কেউ মনে হয়।কেন?”
এমন কথায় কুহু চমকে গেল। সাথে সাথে চোখ নামিয়ে সরে এলো। ইউসুফ হাসলো। ব্লাড প্রেসার মাপতে গেল। ইউসুফের হাতে তার স্পর্শ লাগতেই ইউসুফ আবার বলল,,
–” ডাক্তার সাহেবা আপনার স্পর্শও আমার কাছে খুব পরিচিত লাগচ্ছে?কেন?”
বলে হাসলো। এদিকে কুহু নার্ভাস হয়ে গেল। হাত পা কাঁপতে লাগলো। কঁপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জড় হচ্ছে! ইউসুফ বাঁকা হেসে বললো,,
–” ডাক্তার সাহেবা! আপনি এভাবে কাঁপচ্ছেন কেন? আর ইউ ওকে??”
কুহু শুকনো ঢোক গিললো। কাঁপা কন্ঠে বলল,,
–” হে হে আ..আমি ঠিক আছি!”
বলে চলে যেতে নেয়ে তখনি ইউসুফ কুহুকে হেচকা টান মেরে তার কাছে নিয়ে আসে। কুহু ভয়ে চোখ-মুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে! ইউসুফ কুহুর কানের কাছে এসে কিছুটা স্মেল নেয়ার মতো ভাব করে ফিসফিস করে বলল,,
–” কি আশ্চর্য! আপনার শরীরের মাতাল করা স্মেলটাও খুব পরিচিত। ”
কুহু সাথে চোখ খুলে ভয়ে তাকায় ইউসুফের দিক। বুঝে ফেললো নাতো সে কে? তা দেখে ইউসুফ ছেড়ে দেয় কুহুকে। কুহু ভয়ে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে! ইউসুফ তখন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,
— “আপনি ভয় কেন পাচ্ছেন ডাক্তার সাহেবা?আমি তো এমনটা বলি নি যে সেই পরিচিত ব্যক্তিটি আপনি!”
কুহু এতক্ষণ নিচে তাকিয়ে ছিল। ইউসুফের কথায় চকিতে তাকালো। ইউসুফকে তার দিক তাকিয়ে থাকতে দেখে আর দাঁড়ালো না দৌঁড়ে বাহিরে চলে গেল। তা দেখে রহস্যময় হাসি হাসলো ইউসুফ।
এভাবে আরো দুটো দিন কেঁটে গেল। একদিন বিকেলে ডাঃ জয়ীতা আর ডাঃ প্রিজম এসে বলল,,
–” কায়া ইউ নো হোয়াট? ময়মনসিংহে নাকি প্রতিবছর বাণিজ্য মেলা হয়। তা অ্যারেঞ্জ করে ময়মনসিংহের মেয়র! আর আমাদেরকে তারা ফ্রী এন্ট্রি দিচ্ছে। এই দেখ পাশ। আজকে সবাই যাচ্ছি। তুমিও চলো। তাড়াতাড়ি রেডি হও?”
–“জয়ী মেম! আমার শরীরটা ভাল না আপনারা যান আর ইনজয় করুন! ”
জয়ীতা নাছোড় বান্দা। সে বললো,,
–“তুমি না গেলে আমরাও যাবো না। প্ল্যান ক্যানসেল। ”
মুখ ভার করে বসে রইলো জয়ীতা। তা দেখে প্রিজম মুখ গম্ভীর করে হুকুমের সুরে বলল,,
–” কায়া! আমার ওয়াফি মন খারাপ করে আছে তোমার জন্য। তাই তোমার মারকস আমি কাটবো। যদি তা না চাও তাহলে রেডি হয়! এখনি!”
এমন কথা শুনে কুহু যেন আকাশ থেকে পড়ল। অসহায় ভাবে বলল,,
–” আচ্ছা!”
কুহু রেডি হতে গেল। পিছন থেকে প্রিজম আর জয়ীতা হাসতে লাগলো কুহুকে ভয় দেখিয়ে।
মেলার গেটে আসতেই বড় করে পোষ্টারে মেয়র রাহুলের নাম দেখে চোখ ছল ছল করে উঠলো। রাহুল ভাই তার কতটা চেন্জ হয়েছে। মুটু হয়েছে। কিন্তু সুন্দর লাগচ্ছে।
একে একে সবাই ভিতরে ঢুকে গেল। কুহু পিছনে পড়ে গেল। সে ভিতরে ঢুকতেই পিছন থেতে কেউ তার ওরণা ধরে টান দিলো।ঘাবড়ে গেল কুহু। পিছন থেকে ভেসে আসলো তখন কারো কন্ঠ।
–“আরে ডাক্তার সাহেবা যে!”
কুহু চোখ বড় বড় করে সামনের দিক তাকিয়ে রইলো। ভয় করছে তার। আজ সে হিজাব পড়ে নি। পড়ে নি বললে ভুল হবে! জয়ীতা পড়তে দেয়নি! এখন কি হবে ভেবেই হাতে থাকা মাস্কটা তাড়াতাড়ি মুখে দিয়ে দিলো। ইউসুফ পিছন থেকে সামনে আসতেই গোল গোল করে তাকিয়ে রইলো তার দিক! তা দেখে ইউসুফ বলল,,
–” হোয়াট ইজ প্লেজেন্ট সারপ্রাইজ! আপনি এখানে? ”
কুহু সংকোচিত কন্ঠে বলল,,
–” ঘুরতে এসেছি! ”
ইউসুফ তখন খপ করে তার হাত ধরে ফেললো শক্ত করে! বাঁকা হেসে বলল,,
–” তো চলুন ঘুরিয়ে দেখাই!”
কুহু হাত ছুটাতে ছুটাতে বলল,,
–” না না আপনার কষ্ট করতে হবে না। আ..আমি বাকিদের সাথে এসেছি! তাদের সাথে ঘুরবো!”
ইউসুফ আরো শক্ত করে ধরে কাছে টেনে এনে বলল,,
–” তা কি করে হয় বলুন আপনি আমার স্পেশাল গেস্ট। তিথির বান্ধবী বলে কথা। স্পেশাল সার্ভিস আপনার জন্য চলুন।”
কুহু এবার কেঁদে দেয়ার উপক্রম। নির্ঘাত ইউসুপ তার সত্য যেনে গেছে। তাই এসব করছে। যেভাবেই হোক ময়মনসিংহ ত্যাগ করতে হবে।নয়তো সত্য তার কঁপালে শনি আছে। এভেবেই শুকনো ঢুক গিললো সে। তার পর কাঁদ কাঁদ কন্ঠে বলল,,
–“আমার স্পেশাল সার্ভিস লাগবেনা। প্লীজ যেতে দিন!”
বলতেই ছেড়ে দিলো ইউসুফ। কুহু অবাক হয়ে চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ তার দিক।ইউসুফ নিচের দিক তাকিয়ে আছে। তাকে দেখে কিছুই বুঝা যাচ্ছে না। কুহু চলে গেল। ইউসুফ চোখ মুখ শক্ত করে হাসলো। হাত দুটো মুঠ করে কুহু যাওয়ার দিক তাকিয়ে সে!
সেদিন হোস্টেলে ফিরে কুহু প্রচুর কাঁদে। ভালবাসার মানুষটিকে কাছে পেয়ে আপন করতে পারছে না সে। তার উপর তার দিন রাত এভাবে টর্চার করা আর সহ্য করতে পারছে না সে। এখন যত সম্ভব এ শহর ত্যাগ করবে সে।পরের দিন হাসপাতাল থেকে বের হতেই কুহুর মনে হলো কেউ এক জন পিছু নিয়েছে তার। শুধু আজ বলে না। বেশ কদিন এমন ফিলিংস হচ্ছে তার মনে হচ্ছে কেউ তার উপর নজর রাখছে। মাঝে মাঝে মনের ভুল ভাবলেও ইদানিং স্ট্রং ফিলিং হচ্ছে।কুহু বার পিছনে তাকিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে আবার সামনের দিক হাটা দেয়। তখনি কেউ মুখ চেপে ধরে কুহুর। তারপর আর কিছু মনে নেই।যখন চোখ খুলে তখন নিজেকে অন্ধকার একটি রুমে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় নিজেকে আবিষ্কার করে। ছুটাবার বৃথা চেষ্টা করছে পারছে না। ভয়ে ফুঁপিয়ে উঠছে সে।কথা বলার ট্রাই করেও পারছে না কথা বলতে মুখে কসটেপ লাগানো তার।তখনি সটান করে গেট খুলে যায়। বাহির থেকে আলোর প্রতিফলিত হয়। কুহু সেই আলোতে সামনের ব্যক্তিটিকে দেখে রুহু কেঁপে উঠে তার। গলা শুকিয়ে কাঠ।
চলবে,