আমি ফাইসা গেছি পর্ব-৪২+৪৩

0
220

আমি_ফাইসা_গেছি(৪২)
মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

ডাক্তার ম্যাডামের দেওয়া ডেট পার হয়ে যাচ্ছে, তবুও বাচ্চা হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই তোড়ার।আবার কোনো অসুবিধাও হচ্ছে না।সেজন্য কুশান ডাক্তার ম্যাডামকে কল করে জানালো ব্যাপার টা।ডাক্তার ম্যাডাম শোনামাত্র বললো,

যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোড়াকে যেনো আজকেই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়,কারণ আরেকবার চেকাপ করাতে হবে।

কুশান ডাক্তার ম্যাডামের কথা শোনামাত্র আর এক সেকেন্ড দেরি করলো না,তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে গেলো তোড়াকে।
আজ আবারও আল্ট্রাসোনোগ্রাফী করে, রক্ত পরীক্ষা করা হলো তোড়ার।

ডাক্তার ম্যাডাম পরীক্ষা নীরিক্ষা করে জানালেন আজকের মধ্যেই সিজার করাতে হবে,কারণ বাচ্চার পজিশন সেই আগের মতোই আছে,এ বাচ্চা নরমালে কিছুতেই হবে না।

ডাক্তার ম্যাডামের কথা শোনামাত্রই কুশানের চোখমুখ শুকিয়ে এলো।তোড়ার থেকে সে বেশি ভয় পেতে লাগলো।কিন্তু তোড়াকে এটা বুঝতে দিলো না কুশান।সে উলটো তোড়াকে শান্ত্বনা দিতে লাগলো যে ভয়ের কোনো কারণ নেই।

জারিফ চৌধুরী অন্য কোনো ভালো হাসপাতালে তোড়ার সিজার করার কথা বললেন।কুশান তা শুনে বললো,

আব্বু এই হাসপাতালটির চিকিৎসা ব্যবস্থাও মোটামুটি ভালোই আছে।আমার মনে হয় এই হসপিটালেও ভালো হবে।জারিফ চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো, আচ্ছা ঠিক আছে আমি তাহলে তোড়াকে ভর্তি করালাম।

আজ বিকেল ৫টায় তোড়ার অপারেশন করা হবে।এক এক করে বাড়ির সবাই হাসপাতালে উপস্থিত হতে লাগলো।কারণ শুধুমাত্র কুশান আর জারিফ চৌধুরী এসেছিলেন তোড়াকে চেকাপ করার জন্য।ডাক্তার ম্যাডাম রক্ত ম্যানেজ করে রাখতে বললেন।

তোড়ার রক্তের গ্রুপ ছিলো ও পজেটিভ।কুশান তার একজন বন্ধু,আর জারিফ চৌধুরী তার একজন পরিচিত কে ঠিক করে রাখলেন। যেহেতু ডেট পার হয়ে গেছে সেজন্য আজকেই অপারেশন করানো হচ্ছে।এই অল্প সময়ের মধ্যেই সব ব্যবস্থা করে ফেললো কুশান।

অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ তোড়া কুশানের হাত ধরে বললো,আমার ভীষণ ভয় লাগছে কুশান।কেমন যেনো দূর্বল দূর্বল লাগছে শরীর।

কুশান তোড়ার কথা শুনে কিছু না বলে ওকে কিছুক্ষন জড়িয়ে ধরে থাকলো।কুশান তো নিজেই কথা বলার সাহস হারিয়ে ফেলেছে।আর সেখানে তোড়ার তো ভয় পাওয়ারই কথা।সবাইকে রেখে তাকে অপারেশন থিয়েটারে যেতে হচ্ছে।তোড়া ভয়ে কান্না করছে অনেক।

তোড়াকে কাঁদতে দেখে কামিনী আর চামেলি বেগম নানাভাবে তাকে শান্ত্বনা দিতে লাগলো।এক এক করে সবাই বোঝাতে লাগলো তোড়াকে যে ভয়ের কোনো কারণ নাই।কুশান শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছে।কারণ দুশ্চিন্তায় তার নিজেরই পুরো শরীর অবশ হয়ে আছে।তোড়াকে শান্ত্বনা দেওয়ার শক্তিটুকুও সে পাচ্ছে না।তবুও সে হঠাৎ করে দৌঁড়ে গিয়ে আবার জড়িয়ে ধরলো তোড়াকে।আর ওর কপালে আলতো করে একটা কিস করে বললো,
ভয়ের কোনো কারণই নেই তোড়া।কিছুই হবে না।আমরা তো এখানেই আছি সবাই।এই বলে কুশান আবার তোড়াকে জড়িয়ে ধরলো।তোড়া তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো,
আমার কোনো কথায় যদি কষ্ট পেয়ে থাকো বা আমার ব্যবহারের কারনে যদি তুমি আঘাত পেয়ে থাকো তাহলে ক্ষমা করে দিও,জানি না আমাদের আর দেখা হবে কিনা?এই বলেই তোড়া হু হু করে কেঁদে উঠলো।

তোড়ার মুখে এরকম কথা শুনে কুশান বললো, এই পাগলি?কি বলছো এসব আবোলতাবোল? দেখা হবে না মানে?মাথা কি ঠিক আছে তোমার?বলছি না কিছু হবে না।আমাকে রেখে তুমি কই যাবে?

চামেলি বেগম তখন এগিয়ে এসে বললো, মা তোড়া এসব কি ভুলভাল বলছিস।আল্লাহর নাম নে মা।কিছুই হবে না।এতো ভয় পেলে চলবে?তুই নিশ্চিন্তে থাক মা।কিছুই হবে না।কুশান তুমি ওর হাত টা ছেড়ে দাও তো এখন।ওকে যেতে দাও।এই বলে চামেলি বেগম নিজে তোড়ার হাত ধরে ওকে রেখে আসলেন।

কুশানের হাত থেকে যখন তোড়ার হাত টা বের হয়ে গেলো তখন মনে হলো কেউ একজন কুশানের হৃদয় টা ক্ষতবিক্ষত করে দিলো।এই ক্ষনিকের বিচ্ছেদ টুকু সে কিছুতেই সহ্য করতে পারছিলো না।
এরকম বাজে অনুভূতি কখনোই হয় নি কুশানের।

তোড়া শুধু বার বার পিছন ফিরে কুশানের দিকে তাকাচ্ছে।তোড়ার এই চাহনিতে এই মুহুর্তে কুশানের মনের ভিতর যে এখন কি চলছে সেটা শুধুমাত্র সেই জানে। কুশান ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তোড়ার কাছে ছুটে যেতে পারছে না,তাকে জড়িয়ে ধরে শান্ত্বনা দিতেও পারছে না।
তোড়ার কথাটা কুশানের কানে বার বার বাজতে লাগলো।আর কুশানের ভয় আরো দ্বিগুন গতিতে বেড়েই চলছে।ভয়ে কুশানের পুরো শরীর যেনো কাঁপছে।কুশানের এমন অবস্থা দেখে কামিনী ওর হাত ধরে পাশের সোফায় বসালো।আর কুশানকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললো,

বাবা!এতো কেনো টেনশন করছিস?কিছুই হবে না দেখিস।এতো ভয় পেলে হবে নাকি?

কুশান চুপচাপ। সে কোনো কথা বললো না।কামিনী কুশানকে এখনো বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আছে।

বাসার সবাই বসে বসে অপেক্ষা করছে।মিসেস চামেলি বেগম আর হেনা বেগম বেলকুনির এক কোনায় বসে দোয়া পড়তে লাগলো।সবার মুখ চোখেই আতঙ্ক।ভীষণ টেনশন হচ্ছে সবার।

আজ টিভিতে বাংলাদেশের খেলা হচ্ছে।ওয়েটিং রুমে বসা মানুষ জন সবাই টিভির দিকে তাকিয়ে খেলা দেখছে,যে কুশান ক্রিকেট খেলা দেখার পাগল তার চোখ আজ এক সেকেন্ডের জন্যও টিভির পর্দার দিকে গেলো না।সে তো বার বার শুধু অপারেশন থিয়েটারের দরজার দিকে দেখছে।
হঠাৎ একজন নার্স বাচ্চা কোলে নিয়ে কুশানদের দিকে আসতেই কুশান থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে গেলো।তার বুকের কম্পন যেনো বেড়েই চলছে।কুশান হাত বাড়াতেই নার্সটি পাশ কাটিয়ে পাশের এক ভদ্র মহিলার কোলে বাচ্চাটি দিয়ে দিলো।এইভাবে কয়েকটি বাচ্চা বের করলো নার্স।
অর্থাৎ এক একটি অপারেশন হচ্ছে আর বাচ্চাটাকে বাইরে এসে তার স্বজনদের দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মনে হলো প্রায় ১০ টি অপারেশন হয়েছে একই সময়ে।
কুশান তখন নার্সটিকে জিঙ্গেস করলো, অপারেশন রুমে ঢোকানোর কত সময় পর বাচ্চা দেখানো হয়?নার্সটি জানালো ১ ঘন্টা পরে।

কুশানের চিন্তা আরো বেড়ে গেলো।এতো এতো বাচ্চার ভীড়ে তার সন্তান আবার না জানি বদলে যায়। এ যেনো কোনো সন্তান উৎপাদনের কারখানা। নার্স রা কাপড়ে মোড়ানো ছোট্ট ছোট্ট শিশু নিয়ে আসছে এক এক করে। যাদের পেয়ে স্বজনদের মধ্যে সে কি উৎসাহ, উদ্দিপনা আর আনন্দ।

এসব দেখে কুশানের আর ধৈর্য্য নেই। ভীষণ অস্থিরতা কাজ করতে লাগলো আরো।কুশান সেজন্য শুধু পায়চারি করতে লাগলো।কখন যে সে টেনশনে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

হ্যাঁ তাই হলো।অতিরিক্ত টেনশনে কুশান সত্যি সত্যি জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।একদিকে তোড়া অপারেশন রুমে আর এদিকে কুশান জ্ঞান হারিয়েছে।
বাড়ির লোকজন এই রকম একটা পরিস্থিতিতে কি করবে সত্যি বুঝতে পারলো না।কামিনী কুশানকে অজ্ঞান হওয়া দেখামাত্র দৌঁড়ে গিয়ে ছেলেকে ডাকতেই একজন নার্স একটা বাচ্চা কোলে করে অপারেশন রুম থেকে বের হয়ে আসলো।আর বললো, তোড়ার পরিবারের লোকজন কারা?তোড়ার মেয়ে বেবি হয়েছে।

তোড়ার নাম নিতেই চামেলি বেগম,ইরা,মিরা,লিরা সবাই দৌঁড়ে গেলো নার্স টির কাছে।এদিকে কামিনী কুশানের মুখ চোখে পানি ঢালছে আর বলছে বাবা চোখ খোল বাবা,দেখ তোর কি সুন্দর একটা মেয়ে বেবি হয়েছে।এ বাবা ওঠ তাড়াতাড়ি?দেখ!একদম আকাশের চাঁদের মতো জ্বলজ্বল করছে সোনাটার মুখ।

এদিকে নার্সের থেকে সবার প্রথম চামেলি বেগম কোলে নিলো তোড়ার বেবিটাকে।তারপর এক এক করে সবাই
কোলে নিচ্ছে আর কত কথা বলছে।

গোলাপ সাহেব নাতনিকে কোলে নিয়েই কানের কাছে আযান দিলেন।
বাচ্চাকে সুস্থ সবল অবস্থায় দেখে সবার টেনশন একদম দূর হয়ে গেলো।মুহুর্তের মধ্যে সবার মুখেচোখে হাসি ফুঁটে উঠলো।নার্সটি জানালো তোড়াও সুস্থ আছে।তবে ভিতরে কিছু কাজ আছে।এজন্য এখনি রোগীর সাথে দেখা করানো যাবে না।

এদিকে কুশান এখনো বেঁহুশ হয়ে পড়ে আছে।

জারিফ চৌধুরী এবার তাড়াতাড়ি করে অন্য একজন ডাক্তার নিয়ে আসলো কুশানের জন্য।তিনি কুশানের চেকাপ করার পর জানালেন কুশানের প্রেসার একদম লো হয়ে গেছে।
ডাক্তার সাহেব জানালেন অতিরিক্ত পরিশ্রম, দুশ্চিন্তা, ভয় ও স্নায়ুর দুর্বলতা থেকে লো ব্লাড প্রেসার হতে পারে। প্রেসার লো হলে মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব, বুক ধড়ফড়, অবসাদ, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া এবং স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে অসুবিধা দেখা দেয়।যার কারণে রোগী অজ্ঞান হয়ে যায় সাথে সাথে।

জারিফ চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো,ডাক্তার অন্য কোনো সমস্যা না তো?

“না,আমি ঔষধ দিয়ে দিচ্ছি কিছুক্ষণের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে। এই বলে ডাক্তার চলে গেলো।

কামিনী আর জারিফ চৌধুরী কুশানের পাশে বসে আছে।এদিকে চামেলি বেগম, ইরা,মিরা,লিরা আর সোনিয়া তোড়ার বেবিকে নিয়ে আনন্দ করছে।কামিনী কুশানকে রেখে বাচ্চাকে এখন পর্যন্ত কোলে নিতে পারে নি।তখন চামেলি নিজেই চলে এলো কামিনীর কাছে আর বেবিকে কামিনীর কোলে দিলো।

বাচ্চার মুখ দেখে কামিনীর মুখে একদম হাসি ফুটে উঠলো।সে হাত দিয়ে মুখে চুমু খেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো, বাবা কুশান!তাকা একবার বাবা।দেখ! আমার কোলে কে?

জারিফ চৌধুরী তখন বললো, ওকে ডাকো না কামিনী। ডাক্তার তো বলেই গেলো সময় হলে এমনি ওর জ্ঞান ফিরে আসবে।

এবার জারিফ চৌধুরী কোলে নিলো বেবিটাকে।এ যেনো এক চাঁদের টুকরো বাচ্চা।পুরো ঘর যেনো আলোকিত করছে।জারিফ একবার বাচ্চার দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার কুশানের দিকে।

হঠাৎ কিছুক্ষন পর কুশান চোখ মেলে তাকালো।সে তার হাত দিয়ে চোখ ঘষা দিতে দিতে উঠে বসলো।ভালো করে তাকিয়েই দেখে তার মায়ের কোলে বাচ্চা।বাচ্চাকে দেখামাত্র সে মুচকি একটা হাসি দিয়ে দ্রুত বেড থেকে নামলো।
কুশান তার মেয়ের কাছে গিয়ে ছলছল নয়নে তাকিয়ে রইলো নিষ্পাপ ওই মুখ টির দিকে। তার মেয়ের গায়ের রং যেনো চাঁদের আলোকেও হার মানাবে।কুশানের জ্ঞান ফেরা দেখে কামিনী বললো, বাবা দেখ দেখ কি ফুটফুটে তোর মেয়েটা?দেখ কেমন সুন্দরী হয়েছে তোর মেয়ে?কামিনীর চোখে মুখে যেনো আনন্দের বন্যা।

কামিনী আর অপেক্ষা না করে তাড়াতাড়ি করে কুশানের কোলে দিলো বেবিকে।কুশান তার মেয়েকে কোলে নিয়েই হাসতে হাসতে কেঁদে ফেললো একদম।
তার চোখ থেকে অনবরত পানি ঝড়ছে। এই কান্না যে আনন্দের!
মুখে এক রাশ সুখের হাসি আর চোখে অশ্রু। এ যেনো আনন্দ অশ্রুর মিলন ঘটেছে আজ।

কুশান এবার মেয়ের থেকে চোখ ফিরে নিলো আর কামিনী কে বললো, আম্মু তোড়া কেমন আছে?

কামিনী জানালো ভালো আছে তোড়া,সুস্থই আছে সে।

কুশান সেই কথা শুনে কামিনীর কোলে আবার তার মেয়েকে রেখে অপারেশন রুমের দিকে যেতেই একজন নার্স চিৎকার করে ডাক দিলো।এই?এই?কই যান আপনি?ভিতরে কাজকর্ম চলছে এখনো।

কুশান তখন বললো ম্যাডাম আমার স্ত্রী কেমন আছে?ও সুস্থ আছে তো?

নার্স টি তখন বললো কে আপনার স্ত্রী?নাম কি?

–তোড়া।

নার্স সেই কথা শুনে বললো হ্যাঁ ভালো আছে।এই বলেই নার্স টি চলে গেলো।এদিকে কুশানের তো আরো অনেক কথা জিজ্ঞেস করার আছে।সেসব প্রশ্ন করার সময় ই দিলো না নার্স টি।

কুশানের ঘরে এসেছে নতুন অতিথি। সেই অতিথির একের পর এক ছবি তুলছে সবাই।আজ যেনো সবার নজর শুধু তার দিকেই।
কুশান খেয়াল করলো তার মেয়ের হাতে টোকেন লাগিয়ে রেখেছে। যাতে মায়ের সঙ্গে সন্তানকে চিনতে কষ্ট না হয়।

মেয়েকে কোলে নিয়ে আছে কুশান।আর তোড়ার আসার অপেক্ষা করছে।মেয়েকে দেখে তার মনের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইলেও তোড়ার সাথে কথা না বলা পর্যন্ত ওকে এক নজর না দেখা পর্যন্ত তার মনে যেনো শান্তি ফিরে আসছে না।প্রায় এক ঘন্টা পর অপারেশন রুম থেকে বের করা হলো তোড়াকে।তোড়া চোখ বন্ধ করে আছে যার কারণে কুশান কথা বলার সুযোগ পেলো না।তোড়াকে সোজা কেবিনে নিয়ে গেলো সবাই।

তোড়াকে বের হওয়া দেখে সবাই কেবিনের দিকেই ছুটলো।কিন্তু কুশানের কোলে যেহেতু তার কলিজার টুকরো মেয়ে আছে সেজন্য সে ধীরে ধীরেই সিড়িতে হেটে হেটে নিচে নামলো।লিফটে করে যেহেতু ছোট বাচ্চা নেওয়া যাবে না সেজন্য সে লিফট ইউজ করলো না।
কুশানের কোলে বাচ্চা দেখে কামিনী আর চামেলি দুইজনই এগিয়ে এলো।
কামিনী বললো,
বাবা মনাকে আমাদের কাছে দিয়ে দে।তোর শরীর ভালো না বাবা।
কুশান তখন হেসে উঠে বললো,
বাবার কোলে মেয়ে থাকার পরও বাবা কি অসুস্থ থাকে নাকি?আমি এখন সুস্থ আছি আম্মু।কিছুই হবে না আর।আমি নিয়ে যেতে পারবো।কুশান শুধু বারবার তার মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।তবে মেয়ে কার মতো হয়েছে এখনো বোঝা যাচ্ছে না। কারণ প্রথম দিন সব শিশুকেই এক রকম দেখায়।

কুশান কেবিনে আসতেই সোনিয়ার কোলে তার মেয়েকে দিয়ে সে তাড়াতাড়ি করে তোড়ার পাশে গিয়ে বসলো।আর ওর মাথার চুলগুলো বুলিয়ে দিতে লাগলো।তোড়া এতোক্ষন চোখ বন্ধ করেই ছিলো।কুশানের স্পর্শ পেয়ে সে চোখ মেলে তাকানো।চোখ মেলতেই তোড়ার চোখ বেয়ে বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।কুশান তখন তোড়ার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে ওর কপালে আলতো করে কিস করে তোড়ার হাতে হাত রেখে বললো,
চোখ বন্ধ করে থাকো এখন।আর ঘুমানোর ট্রাই করো।মেয়েকে নিয়ে ভাবতে হবে না,আর মেয়ের বাবাকে নিয়েও ভাবতে হবে না।আমরা দুইজনই ভালো আছি।তুমি এখন শুধু নিজেকে নিয়ে ভাববে।

সোনিয়া তখন তোড়ার মেয়েকে এগিয়ে এনে বললো, ভাবি একবার দেখো তোমার মেয়েকে।কেউ বলছে তোমার মতো হয়েছে, কেউ বলছে কুশান ভাইয়ার মতো।কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে এ আমার মতো হয়েছে।দেখো তো তুমি একটু।

তোড়া এই প্রথম তার মেয়ের দিকে তাকালো।যেহেতু সে এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয় নি সেজন্য কিছু বললো না,মেয়েকে দেখে শুধু মুচকি একটা হাসি দিলো।

কুশান তখন সোনিয়াকে বললো, যা এখন নিয়ে যা ওকে।তোর ভাবি এখন ঘুমাবে।তোড়া তুমি এখন ঘুমাও প্লিজ।এই বলে কুশান আবার তোড়ার মাথার চুলগুলো বুলিয়ে দিতে লাগলো।

প্রথম সন্তানের বাবা হওয়ার অনুভূতি আসলেই ভাষায় লিখে প্রকাশ করা যাবে না। তার উপর প্রথম কন্যা সন্তান। সবাই বলে যার প্রথম কন্যা সন্তান হয় তার সৌভাগ্যের দরজা খুলে যায়।কুশানের আত্নীয় স্বজনদের মধ্যে অনেকেই বলেছে একটা ছেলে হলে ভালো হতো।কিন্তু কুশান তাদের বলেছে ছেলে আর মেয়ে বড় কথা নয়, সন্তান হতে হবে মানুষের মত মানুষ।
আল্লাহ তাকে আজ একটি সুস্থ সন্তান দিয়েছে,সে জন্য সে সৃষ্টিকর্তার কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে।

কুশান তার মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, তুই সারা জীবন বাবার আদর নিয়ে থাকবি। তোর মাঝে আমি আমাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমার না পাওয়াগুলো তুই পূরণ করবি মা। তোর কাছে একটাই চাওয়া- জীবনে হতাশ হবি না, অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকবি, অহংকার, ঘৃণা যেনো তোকে স্পর্শ করতে না পারে। সর্বোপরি একজন মানুষ হয়ে উঠবি। যে হবে- মানবিক ও শিক্ষিত মানুষ।

প্রথম সন্তানের বাবা মা হওয়ার অনুভূতি কেমন হবে তা আসলে মুখে বলে সহজে অনুমান করে বোঝানো যাবে না যতক্ষন না কেউ একজন নিজে বাবা মা না হয়। ।সন্তান হলো সৃষ্টিকর্তার অফুরন্ত নেয়ামত। সন্তান হাসলে বাবা মা হাসে আর সন্তান কাঁদলে বাবা মাও কাঁদবে।
সন্তানের মুখ দেখলে প্রতিটা বাবা মার হৃদয়ে আনন্দের জোয়ার সৃষ্টি হবেই হবে ।সন্তান হচ্ছে কাঁচের মতো সামান্য একটি আঘাতে ভেঙ্গে পড়লে আপনিও ভেঙ্গে পড়বেন । প্রত্যেকটি ব্যক্তির স্বপ্ন থাকে একদিন শিশুর পিতা হবে । তাই ঘুমিয়ে আছে সকল পিতা সব শিশুরই অন্তরে । প্রথম সন্তানের বাবা হওয়ার অনুভূতি এতটাই আনন্দের যা শুধু হৃদয় অনুভব করতে পারে ।

🖤

কুশান, চামেলি বেগম আর হেনা বেগম বাদে বাকি সবাইকে বাসায় পাঠানো হলো।কারণ হাসপাতালে এতো মানুষের ভীড় না করাই ভালো।কামিনী নিজেও থাকতে চাইলে কুশান জোর করেই পাঠিয়ে দিলো তাকে।কারণ কামিনী তো নিজেই অসুস্থ। হাসপাতালে রাত জেগে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে যাবে তিনি।

অনেক রাত হয়েছে।সেজন্য সবাই এখন ঘুমিয়ে যাবে একটু।তোড়ার কেবিন টা ভি আই পি কেবিন হওয়ায় তিনটা বেড,এক সেট সোফা আর একটা টিভি, সাথে এটাচ বাথরুমের ব্যবস্থা আছে।এক বেডে তোড়া একাই ঘুম পারছে আর অন্য বেডে চামেলি বেগম আর হেনা বেগম শুয়ে আছে।আর কুশান তার মেয়েকে নিয়ে অন্য আরেকটা বেডে।
কুশানের চোখে এক ফোঁটা ঘুম নাই।সে তার মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে ধীরে ধীরে উঠে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করার জন্য নামায পড়লো।মুনাজাতে সে কাঁদতে কাঁদতে বললো,

আল্লাহ, আমার ঘরে এখন চাঁদের আলো।আপনি আমাকে মন খুশি করে এক রাজকন্যা উপহার দিয়েছেন।যার জন্য আমি সারাজীবন আপনার কাছে কৃতঙ্গ থাকবো।
একটা সময় আমি একা ছিলাম।তারপর আমার হাতে হাত রেখে একটি মেয়ে আমার সব বাউন্ডুলেপনাকে কঠিন নিয়মের মধ্যে নিয়ে এলো। সেই থেকে স্বপ্ন আমার একটা পূর্ণাঙ্গ সংসার হবে। অর্থাৎ আমাদের সন্তান হবে। আপনি আমার সেই আশাটাও পূরন করলেন।এখন আমার আরেক টা আশা আমি যেনো আমার নিজের ফ্যামিলির সন্ধান পাই।কে আমার আসল মা, কে আমার আসল বাবা, আমি তাদের কে দেখতে চাই।আজ আমি বাবা হয়েছি,তোড়া হয়েছে মা।বাবা মা হওয়ার অনুভূতি টা আমরা দুইজনই বুঝতে পারছি।আমি যার গর্ভে ছিলাম সেই গর্ভধারিণী মাকে দেখার আমার ভীষণ ইচ্ছা আল্লাহ। একটা সন্তান হতে কত কষ্ট সহ্য করতে হয় মা দের তা আমি নিজের চোখে দেখেছি।আমার মাও তো আমাকে জন্ম দিতে এতোটাই কষ্ট সহ্য করেছে। সেই মাকে একবার জড়িয়ে ধরে তার পায়ে সালাম করতে চাই আমি।আর আল্লাহ আমার আম্মু (কামিনী) যদি কোনো অপরাধ করে থাকে তাকে ক্ষমা করে দিয়েন আল্লাহ। আমার আম্মুকে আপনি সবসময় সুস্থ রাখিয়েন।উনি আমাকে জন্ম না দিলেও নিজের মায়ের মতো এতো ভালোবাসা দিয়ে আমাকে বড় করেছেন যে আমি কখনো বুঝতেই পারি নি তিনি আমার আম্মু নন।তার সুস্থতা সবসময় কাম্য করি আমি।

চলবে,

#আমি_ফাইসা_গেছি(৪৩)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

সোলেমান চৌধুরী হঠাৎ এভাবে কোথায় নিরুদ্দেশ হলেন?তিনি এখন পর্যন্ত কুশানের মেয়েকে দেখতে আসলেন না।কুশান তার নানুর কথা জারিফ চৌধুরী কে জিজ্ঞেস করলে জারিফ চৌধুরী জানালো তিনি একটু ব্যস্ত আছেন।কিন্তু কি নিয়ে ব্যস্ত আছেন সেটা আর বললেন না।কুশান নিজের থেকেও আর বেশি প্রশ্ন করতে গেলো না।কারণ তার নানু কারণ ছাড়া কখনোই এভাবে কোথাও যায় না।
🖤
দেখতে দেখতে তিন দিন পার হয়ে গেলো।সেজন্য আজ তোড়া আর কলিজার টুকরো মেয়েকে নিজের বাসায় নিয়ে যাবে কুশান।কুশানের বংশধর আজ তার বাসায় প্রথম পা দিবে ভাবতেই অনেক খুশি লাগছে কুশানের।তোড়ার মেয়েকে স্বাগতম জানানোর জন্য আজ বাসায় ছোটো খাটো একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলো।যে অনুষ্ঠানে নিকটতম সকল আত্নীয়স্বজন উপস্থিত থাকবেন।আর সপ্তম দিনে কুশানের মেয়ের আকিকা করা হবে সে ঘোষণাও দেওয়া হবে আজ।তবে কুশান এসবের কিছুই জানে না।ব্যাপার টা সারপ্রাইজ হিসেবে রাখলো বাড়ির লোকজন।

কুশান বাসায় যাওয়ার আগে তার মেয়ের একটু চেকাপ করালো।সেজন্য সে শহরের একজন ভালো নামকরা শিশু ডক্টরের সিরিয়াল কাল নিয়ে রেখেছিলো।ডাক্তার সাহেব কুশানের মেয়েকে ভালো করে পরীক্ষানিরীক্ষা করে জানালেন কুশানের ছোট্ট রাজকুমারী টা একদম সুস্থ আছে।
ডাক্তার সাহেব আরো অনেক উপদেশ দিলেন সদ্য মা বাবা হওয়া কুশান আর তোড়াকে।

ডাক্তার সাহেব বললেন,
আপনাদের মেয়ে সদ্য পৃথিবীতে এসেছে, সেজন্য তার যত্নে আপনাদের হতে হবে অনেক বেশি সচেতন। কেননা একটু ভুলভাল যত্নের কারণেই আপনাদের শিশুটি কিন্তু পড়তে পারে মারাত্মক কোনো অসুখে। নবজাতক শিশুদের কোনোকিছুই প্রাপ্তবয়স্কদের মতো নয়। সব অভিজ্ঞতা, সব ধরণের যত্ন-আত্তিই তার জন্য নতুন। তাই নবজাতকের যত্নে পালন করতে হবে বাড়তি সতর্কতা।বুঝেছেন?

কুশান আর তোড়া একসাথে মাথা নাড়লো।

ডাক্তার সাহেব হঠাৎ খেয়াল করলেন কুশানের মেয়ের শরীরে অতিরিক্ত পাউডার লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে আবার কপালে বড় একটা কালির ফোটাও দিয়ে দিয়েছে।সেজন্য ডাক্তার সাহেব বললেন,

“প্রচুর পরিমাণে পাউডার বা তেল শিশুর ত্বকের জন্য কিন্তু ক্ষতিকর। অতিরিক্ত পাউডার ব্যবহারে শিশুদের ত্বকের রোমকূপগুলো বন্ধ হয়ে যায় বলে সাধারণ শারীরিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। এতে শিশুর ঘামাচি ও ন্যাপি র্যাশও হতে পারে।
আর এটা কি দিয়ে দিয়েছেন কপালে?আর কখনো কপালে বা পায়ে কোনোরকম কালির ফোঁটা দেবেন না। এতে শিশুর ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

কুশান সেই কথা শুনে একটা টিস্যু পেপার দিয়ে দ্রুত কালির ফোটা টি মুছিয়ে দিতে দিতে বললো, এসব বাচ্চার নানীর কাজ।আমি কত করে বললাম দিয়েন না আম্মু ওসব।কিন্তু উনি বললেন,কালির ফোঁটা দিলে নাকি নজর লাগবে না কারো।কুশান এবার আলতো করে পাউডার গুলোও ওঠানোর ট্রাই করলো।

ডাক্তার সাহেব তা দেখে বললেন,নেক্সট টাইম আর ইউজ না করলেই হবে।আর কালির ফোঁটা দেওয়া এটা সম্পূর্ণ একটা কুসংস্কার কথাবার্তা।

তোড়া মাথিয়ে নাড়িয়ে বললো,জ্বি।

” শিশুকে কখনোই অতিরিক্ত রোদে নিয়ে বের হবেন না।শুধুমাত্র ভোরের মিষ্টি রোদ টাতে বের করবেন বাচ্চাকে।বাচ্চার সামনে হাঁচি-কাশি দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন। শিশুকে সবসময় ঠান্ডা ও স্বস্তিদায়ক পরিবেশে রাখবেন।

“জ্বি স্যার।”

“শিশু ঘেমে গেলে বারবার শুকনো নরম কাপড় দিয়ে গা মুছে দিবেন।আর অবশ্যই শিশুকে সুতির নরম ও আরামদায়ক পোশাক পরাবেন।শিশুর ঘর সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন।

এবার ডাক্তার সাহেব তোড়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
আপনাকে এখন থেকে প্রচুর পরিমাণে তরলজাতীয় খাবার ও পানি খেতে হবে। এতে করে বুকের দুধ থেকে আপনার শিশু অনেক বেশি উপকৃত হবে।আর শিশুর রোগবালাই অনেক কম হবে।
তবে বাসায় যাওয়ার পর যদি কোনো প্রবলেম হয় তখন দ্রুত যেনো তাদের সাথে কন্ডাক্ট করা হয় সে কথাও বলে দিলো ডাক্তার সাহেব।

কুশান আর তোড়া ডাক্তার সাহেবের উপদেশ গুলো মনোযোগ দিয়ে শুনলো।কারন ডাক্তার সাহেব যে যে নিয়মে চলতে বললো সব ভালোভাবে তাদের পালন করতেই হবে।একমাত্র মেয়ের যত্নে তারা কোনো ত্রুটি রাখতে চায় না।

🖤

তোড়াকে ধরে কুশান ধীরে ধীরে হাঁটতে লাগলো।যদিও তোড়া এখন একা একাই চলাফেরা করতে পারে তবুও ভালোবাসার বউকে কুশান একা হাঁটতে দিলো না।কুশানের এক হাত তোড়ার ঘাড়ে আর অন্য হাত দিয়ে তোড়ার কোমর জড়িয়ে ধরে তাকে ধীরে ধীরে পা ফেলতে বললো কুশান।অন্যদিকে কুশানের মেয়ে তার নানীর কোলে আরামে ঘুম পারছে।কুশান ফাঁকে ফাঁকে মেয়ের দিকেও তাকাচ্ছে।আর তার শাশুড়ী কে বলছে,আম্মু ধীরে ধীরে পা ফেলেন।তাড়াহুড়ো করার কোনো প্রয়োজন নেই।আপনার কোলে কিন্তু আমার কলিজার টুকরো আছে।

চামেলি বেগম কুশানের কথা শুনে মিটমিট করে হাসলেও হেনা বেগম বললো,
তোর শাশুড়ী তো কোনো দিন বাচ্চা কোলে নিয়ে হাঁটে নি।এই প্রথম তোর মেয়েকে নিয়ে হাঁটতেছে।এজন্য তাকে শিখিয়ে দিতে হবে কেমন করে হাঁটবেন তিনি।

কুশান সেই কথা শুনে বললো, এতোদিন যেসব বাচ্চা কোলে নিয়েছেন তার সাথে আমার মেয়ের তুলনা করছো দাদী?আমার মেয়ে হলো হীরার টুকরো। ওর সাথে অন্য কারো তুলনা চলে না।

তোড়া সেই কথা শুনে বললো, তাহলে আমরা কি কয়লা?তোমার মেয়ে যদি তোমার কাছে ডায়মন্ড হয় তাহলে আমরাও আমাদের বাবা মার কাছে ডায়মন্ড।শুধু নিজের মেয়ের প্রশংসা!সবাই সবার বাবা মার কাছে এক একটা হিরার টুকরো।বুঝেছো?

কুশান আর কোনো তর্কে গেলো না।কারন এখন তর্ক করা মানে তোড়া গাল ফুলিয়ে বসে থাকবে।এই খুশির দিনে অযথা কোনো ঝগড়া ঝাটি নয়।

কুশান সবার প্রথম তোড়াকে গাড়িতে বসালো।তারপর মেয়েকে কোলে নিয়ে চামেলি বেগমকে বললেন,আম্মু!এবার আপনি ওঠেন।চামেলি বেগম ওঠার পর কুশান উঠে বসলো গাড়ির ভিতর।হেনা বেগম অনেক আগেই বসেছেন।

ড্রাইভার আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি গাড়ি স্টার্ট দিলো।কুশান পুরো রাস্তা শুধু মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়েই পার করে দিলো।কখন যে তারা বাড়ি পৌঁছে গেলো বুঝতেই পারলো না কুশান।

বাসায় পৌঁছে ড্রাইভার গাড়ির হর্ন দিতেই কামিনী, ইরা,মিরা,লিরা,সোনিয়া,স্বর্না,সুমন সবাই একদম দৌঁড়ে চলে এলো গাড়ির কাছে।স্বর্ণা যেহেতু এখনো দেখে নি তোড়ার মেয়েকে সেজন্য সে প্রথম দৌঁড়ে গিয়ে কুশানের কোল থেকে কেড়ে নিলো বেবিকে।আর বললো, মাশাল্লাহ মাশাল্লাহ, কি কিউট হইছে তোর মেয়েটা আপু?একে আমি নিয়ে যাবো আমাদের বাড়ি।
এই বলে স্বর্না তোড়ার পাশে এসে দাঁড়ালো।

তোড়া স্বর্ণার কথা শুনে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো, একটু বড় হলে নিয়ে যাস।এখন ও মাকে ছাড়া কিছুতেই তোর কাছে থাকবে না।

“থাকবে থাকবে।তুই শুধু নিয়ে যাওয়ার পারমিশন দে।”

কুশান সেই কথা শুনে বললো, তোমার বোন পারমিশন দিলেও আমি কিন্তু দিবো না পারমিশন। আমার মেয়েকে ছাড়া আমি আর এক সেকেন্ড ও থাকতে পারবো না।

এদিকে স্বর্ণার হাত থেকে সোনিয়া বেবিটাকে কেড়ে নিয়েই বাসার ভিতর চলে গেলো।

“এই,এই।কি করলি এটা সোনিয়া?”

সোনিয়া তখন পিছন ফিরে তাকিয়ে বললো,কুশান ভাইয়ার মেয়েকে দেখার জন্য বাসার মধ্যে সবাই অপেক্ষা করছে।

স্বর্না এবার তোড়াকে জিজ্ঞেস করলো আপু তোর শরীর কেমন আছে?তুই পুরোপুরি সুস্থ আছিস তো?

“হ্যাঁ ভালো আছি।তুই একাই এসেছিস? চাচী আসে নি?

“হ্যাঁ,আমরা সবাই এসেছি।”

“সায়ক ভাইয়াও এসেছে?”

“হুম।”

তোড়া সায়কের কথা শুনে কুশানের কানে কানে বললো, আজ যখন সবাই এসেই গেছে, সায়ক আর সোনিয়ার কথা টা নানুকে বলে দিও।আর গোপন করে কি লাভ?

কুশান সেই কথা শুনে বললো, নানু থাকলে তো বাসায়?এখন পর্যন্ত নানু আমার মেয়ের মুখ দেখলো না।বুঝতে পারছি না কিছু।নানু যে কোথায় হারিয়ে গেলো এভাবে?আব্বু বললো খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত আছেন তিনি।

সকল আত্নীয় স্বজন এক এক করে কুশানের মেয়েকে কোলে নিতে লাগলো।সবাই বেবিকে দেখে ভীষণ খুশি হয়েছে। কামিনী এবার তার নাতনীকে নিজের কোলে নিলো।আর হাত দিয়ে চুমু খেতে খেতে বললো, কই আমার বুবু টা?আমার বুবু টা আজ তার নিজের বাসায় এসেছে।কত সুন্দর করে সাজিয়েছি তোমার ঘর।চলো দেখবে চলো।
কামিনীর গল্প করা দেখে কুশানের মেয়ে শুধু চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।সে হয় তো ভাবছে এসব কি বলছে তার দাদিমনি?হঠাৎ কুশানের মেয়ে তার দাদীর গল্প করা দেখে ফিক করে হেসে দিলো।
আর সাথে সাথে সবাই হই হই করে উঠলো।আর বলতে লাগলো,
দাদীর গল্প শুনে নাতনী কি সুন্দর হাসছে।কেউ বলতে লাগলো কামিনী এখন একজন গল্প করার লোক পেয়ে গেলো।
কামিনী এবার কুশানের মেয়েকে নিয়ে সোজা কুশানের বেড রুমে নিয়ে গেলো।

এদিকে কুশান তোড়াকে ধরে ধরে বাসার মধ্যে প্রবেশ করলো।বাসায় প্রবেশ করতেই কুশানের চোখ একদম ঝালাপালা হয়ে গেলো।তার মেয়ের আগমন উপলক্ষে বাসাটা যে সুন্দর করে সাজানো হবে সত্যি সে ভাবতেই পারে নি।আরো সবচেয়ে বেশি আশ্চর্যের বিষয় হলো সকল আত্নীয় স্বজন দিয়ে ভরে গেছে বাসা।বাসাতে এমন জাকজমক আয়োজন দেখে কুশান তোড়ার দিকে তাকাচ্ছে আর তোড়া কুশানের দিকে।এদিকে আত্নীয় স্বজনরা কেউ তোড়ার কাছে ছুটে এলো আর কেউ বা তার মেয়ের কাছে।সবাই তোড়ার ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করতে লাগলো।

কুশান তোড়াকে নিয়ে যেই তার বেডরুমে ঢুকেছে তার চোখ একদম ছানাবড়া হয়ে গেলো।কারণ কুশান নিজের রুম নিজেই চিনতে পারছে না।এটা কার রুম?কোনো কালে যে এই রুম টা তার ছিলো বিশ্বাসই হচ্ছে না তার।কারণ রুমের ডেকোরেশন পুরাই চেঞ্জ করে ফেলেছে কামিনী।
রুম টা দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটা একটা শিশুর জন্য সাজানো গোছানো পরিপাটি রুম।
উঁচু বক্স খাটের জায়গায় নিচু খাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে কুশানের মেয়ে হঠাৎ পড়ে গেলেও ব্যথা যেনো না পায়।রুমের সব আসবাবপত্রও চেঞ্জ।শুধু তাদের রুমের ড্রেসিং টেবিল আর আলমারি টা আছে।আর পুরো ঘর কুশানের মেয়ের জন্য নতুন নতুন আসবাব পত্র বসানো হয়েছে।

যেহেতু শিশুদের জন্য প্রচুর আলো বাতাস এবং ধুলাবালি তুলনামূলক কম ঢোকে এমন ঘর নির্বাচন করা উচিত সেহেতু কুশানের বেডরুম টাই তার মেয়ের জন্য বেস্ট হবে ভেবে কামিনী এই রুমটাই তার নাতনির জন্য নির্বাচন করেছে।ঘরে একদম উজ্জ্বল সাদা জ্বলানো। ঘরের বিভিন্ন কোণে স্পটলাইট, ওয়ার্ম ফোকাস লাইট ব্যবহার করা হয়েছে।আর রাতে অল্প আলোর জন্য হালকা নীল আলোও লাগানো হয়েছে।
কুশানের মেয়ের ড্রেস, খেলনা ইত্যাদি রাখার জন্য একটি গোলাপি রঙের ওয়ারড্রোব, মিনি সোফাও বসানো হয়েছে।

অফ হোয়াইট, পিঙ্ক, হলুদ লাল রঙ ব্যবহার করা হয়েছে দেয়ালে।মানে দেয়ালের কিছুটা অংশ পিংক কিছুটা অংক হোয়াইট আবার কিছুটা অংশ হলুদ আর কিছুটা অংশ লাল,যাকে বলে রঙ বেরঙ এর দেয়াল।ঘরের বিছানার চাদর, বালিশের কভার, পর্দা সব কিছুতেই শিশুবান্ধব নকশা, রঙ-বৈচিত্র্য রাখা হয়েছে।আর বাবুর জন্য একটা দোলনাও টাঙানো হয়েছে।আর সেই দোলনা সুন্দর সুন্দর কিছু বেলুন দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে সবাই।পাশে কিছু খেলনা রাখা।নতুন নতুন কিছু ড্রেস ছোট্ট একটা র‍্যাকে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

তোড়া এসব সাজসজ্জা দেখে কামিনীর কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো, আম্মু এসব কি করেছো?কখন করেছো?এতো কিছু এই শর্ট টাইমে করলে কিভাবে?

কামিনী তখন বললো আমি কি একাই করেছি নাকি?বাসার সকল সদস্য মিলেই করেছি এসব।আমাদের সবার আদরের কথার জন্য এই সামান্য আয়োজন তো কিছুই না।

“কথা?” নাম ও ঠিক করেছো আম্মু?

“হ্যাঁ।” আমি রেখেছি কথা।এখন যার যেটা মন চায় সেটা রাখতে পারো।কামিনীর আদরের নাতনি কথা মনি।কুশানের একমাত্র রাজকন্যা কথামনি।”আমি কথামনি বলেই ডাকবো।

কুশান কামিনীর এমন আবেগমাখা কথা আর এতো আনন্দ উচ্ছ্বাস দেখে সত্যি সে একদম কেঁদেই ফেললো।তার মেয়ে এই দুনিয়ায় আসায় সবার মনে যে আনন্দের বন্যা বইছে এটা বোঝাই যাচ্ছে।
🖤
কুশান মেয়ের সাথে গল্প করছে।মেয়ের কচি কোমল হাত দুটি স্পর্শ করছে আর মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলছে আমার একমাত্র রাজকন্যা তুমি।তোমাকে পেয়ে আমার জীবন টা একদম পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।কই ছিলে এতোদিন তুমি?কুশানের মুখচোখে হাসি যেনো ঝলমল করছে।এই বাবা হওয়ার অনুভূতি টা সত্যি অনেক চমৎকার।নিজের সন্তান থেকে এক মুহুর্তের জন্যও তার কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না।

তোড়া গোসল শেষ করে চুল গুলো ঠিক করতে করতে নিজেও মেয়ের কাছে আসলো।আর কুশানকে উদ্দেশ্য করে বললো,
বাবা মেয়ের গল্প করা কি এখনো শেষ হয় নি?

কুশান সেই কথা শুনে তার মেয়ের মুখে হাত দিয়ে চুমু খেয়ে বললো,”বাবা মেয়ের গল্প কখনো শেষ হওয়ার নয়।আমাদের গল্প করা দেখে কি হিংসা হচ্ছে তোমার?

“কি?হিংসা হচ্ছে মানে?কুশান,খবরদার আবোল তাবোল কথা বলবা না।”এই বলে তোড়া রাগ করে চলে গেলো।

কুশান তখন দৌঁড়ে গিয়ে তোড়াকে জড়িয়ে ধরে বললো, মজা করলাম একটু।তোমার ধৈর্য্য কবে হবে তোড়া?আমি কি একটু ফান করে কথা বলতেও পারবো না?

তোড়া তখন বললো, ছাড়ো আমায়।তাড়াতাড়ি করে গোসল করে নাও।বাহিরে সবাই অপেক্ষা করছে।আম্মু অনেক আগেই যেতে বলেছে।এখন যদি এসে দেখে আমরা রেডি হই নি তখন রাগ করবেন কিন্তু।

” রেডি হবো কেনো?”কই যাবো আমরা?”

“কোথাও যাবো না।আজ নানু ভাই আসবে বাসায়।ওনার সাথে কিছু অতিথিও আসবে।এজন্য।
এই বলে তোড়া আলমারি থেকে নতুন একটা শাড়ি বের করলো।

কুশান তখন তোড়ার হাত থেকে শাড়ি টা রেখে নেশাময় চোখে তাকিয়ে বললো,
তোড়া?আমার না ভালো লাগতেছে না।

তোড়া তখন বললো, ওভাবে তাকিয়ে লাভ নাই।আর এভাবে ডেকেও কোনো লাভ নাই মিস্টার হাজব্যান্ড।অপেক্ষা করতে হবে।ধৈর্যের পরীক্ষা এটা তোমার।বাবা হওয়া এতো সহজ না।যাও গোসল করতে যাও।এই বলে তোড়া মুচকি একটা হাসি দিয়ে কুশানকে ওয়াশরুমের দিকে ঠেলে দিলো।

কুশান তখন তোড়ার হাত ধরে টেনে ওর নরম ঠোঁট দুটি স্পর্শ করতে করতে বললো,
আর তো দেরি সহে না,
মন তো আমার মানে না।
তোমার ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়া পেতে চায় মন।
আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে,,,,?

এরই মধ্যে কুশানের মেয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো।মেয়ের কান্না শোনামাত্র কুশান তার রোমাঞ্চকর জগত থেকে ফিরে এসে মেয়ের কাছে ছুটে গেলো।আর বললো,
আমার সোনা পাখি টা কাঁদে কেনো?কে বকা দিয়েছে আমার মেয়েটাকে।ক্ষুধা লাগছে তোমার?
মেয়ের কান্না তবুও থামাতে পারছে না কুশান।

তোড়া হাসতে হাসতে একদম শেষ হয়ে যাচ্ছে।

এদিকে কান্না শুনে কামিনী বাহির থেকেই চিৎকার করে বললো,তোড়া?কথামনি কাঁদছে কেনো?ওকে বাহিরে নিয়ে এসো।

তোড়া তার শাশুড়ীর কথা শোনামাত্র মেয়েকে কোলে করে নিয়ে বাহিরে চলে গেলো।কামিনী তখন তোড়ার কোল থেকে নাতনিকে নিয়ে বললো,
কই আমার কথামনি?কথামনি কাঁদে কেনো?আম্মু বকা দিয়েছে তোমায়?

সাথে সাথে কথামনি চুপ হয়ে গেলো।কামিনী এবার তোড়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
তুমি মাত্র গোসল করলে?তোমাকে না অনেকক্ষন আগে গোসল করার কথা বলেছি।এখন থেকে ১২ টার মধ্যেই গোসল করে নিবে।দেরি করে গোসল করলে কিন্তু আমার কথামনির ঠান্ডা লেগে যাবে।

“” জ্বি আম্মু।”

“আর তুমি তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে নাও।” কুশান কই?ও কি রেডি হয়েছে।”

“হচ্ছে রেডি।”

“আচ্ছা।” এই বলে কামিনী কথামনিকে নিয়ে চলে গেলো।

🖤

সোলেমান চৌধুরী প্রবেশ করলেন বাসায়।ওনার সাথে শহিদুল সাহেব,লাবুনি বেগম,শ্রাবণ আর জারাও আছে।আরো দুই একজন অচেনা মানুষ।
সোলেমান চৌধুরী বাসায় প্রবেশ করেই চিৎকার করে কুশান কে ডাক দিলেন।কুশান তার নানুর ডাক শোনামাত্র দ্রুত বের হয়ে এলো।আর কাছে এসে বললো,
কই গিয়েছিলে নানু ভাই?
“আমি একটু ব্যস্ত ছিলাম রে।” তোর সাথে পরে কথা বলছি।এখন আগে আমার পুতনিকে দেখা।কই সে?যাকে দেখার জন্য ছুটে এলাম আমি।”

কামিনী তখন কথামনি কে নিয়ে এগিয়ে এসে বললো, খালি হাতে আমি আমার নাতনীর মুখ দেখতে দিবো না বাবা।কি নিয়ে এসেছো ওর জন্য সেটা আগে দেখাও।

সোলেমান চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো,
যা আনার এনেছি।গোপনে দিবো ওকে।তোদের কাউকে দেখতে দেবো না।আগে দেখা আমার পুতনির চাঁদ মুখখানা।এই বলে সোলেমান চৌধুরী নিজেই কোলে নিলেন কথামনিকে।তার পর দেখে বললেন, মাশাল্লাহ, দেখতে যেনো একদম জান্নাতের টুকরো।আমি এর নাম জান্নাত রাখলাম।জান্নাত বলে ডাকবো আমি।

কামিনী সেই কথা শুনে বললো আমার আর কুশানের নামের সাথে মিল রেখে আমি কথামনি রেখেছি বাবা।আমি কিন্তু কথামনি বলেই ডাকবো।

এদিকে শ্রাবণ আর জারা কুশানের সাথে গল্প করতে লাগলো।জারার ছেলেটাও অনেক বেশি সুন্দর হইছে।কুশান জারার ছেলেকে কোলে নিয়ে বললো,
কি নাম রেখেছো এর?

“আমি রেখেছি জয়,আর ওর বাবা রেখেছে শুভ।”

“নাইস নেম।”আর দেখতেও অনেক সুন্দর হয়েছে। এই বলে কুশান জারার ছেলেটাকে আবার ওর কোলে দিলো।

জারা তখন বললো,ভাইয়া,আপনার মেয়েও কিন্তু মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর হয়েছে।তোড়া ভাবি কই?ওনাকে দেখছি না যে?

” ও রুমে আছে।ডেকে দিচ্ছি আমি।”

“না,ডাকতে হবে না।আমি যাচ্ছি রুমে।” এই বলে জারা নিজে চলে গেলো তোড়ার রুমে।

হঠাৎ সোলেমান চৌধুরী কুশানকে আলাদা ভাবে ডেকে নিলো।আর বললো তোর সাথে আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে কুশান। কথাগুলো শোনার পর তোর মনের অবস্থা কেমন হবে জানি না,তবে নানু হয়ে তোর হাত ধরে বলছি,তুই প্লিজ কষ্ট পাবি না কুশান।তোর কষ্ট কিন্তু আমরা কেউই সহ্য করতে পারবো না।

“কি কথা নানুভাই?তুমি এভাবে বলছো কেনো?”

“আজ এই খুশির দিনে আমি কখনোই চাই নি তোর মনে আঘাত দিতে।আমি সবসময় তোর মুখে হাসি দেখতে চেয়েছি।কিন্তু ব্যাপার টা আর গোপন রাখতে পারলাম না।

কুশান তার নানুর কথা শুনে হা হয়ে গেলো।তার নানু এভাবে বলছে কেনো?

হঠাৎ সোলেমান তখন বললো, তোর আম্মু কামিনী আর তোর নানি মনি যে কাজটা করেছে সত্যি আমি তার জন্য অনুতপ্ত। আমি অনেক বেশি সরি,আমাকে ক্ষমা করে দিস এজন্য।

কুশান সেই কথা শুনে বললো, নানুভাই আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করি।আমি সবসময় একটা কথাই ভাবি আমার ভাগ্যে যা ছিলো তাই হয়েছে।এজন্য আমি কাউকে দায়ী করি না।আর কাউকে দোষারোপও করতে চাই না।আমি আমার নানী মনিকে যথেষ্ট ভালোবাসি।তার ভালোবাসা,আদর কখনোই ভুলতে পারবো না।উনি যেহেতু মারা গিয়েছেন সেজন্য সবসময় ওনার জন্য দোয়াই করি।ভুল করেও কখনো ওনাকে আমি গালমন্দ করতে পারি না।আর আমার আম্মু তার সাথেও কখনো আমি খারাপ আচরণ করতে পারবো না।তুমি আর এসব নিয়ে মাথা ঘামিও না।আর তোমাকে এর জন্য অনুতপ্ত ও হতে হবে না।যা বলার তুমি একদম ক্লিয়ার করে বলে দাও।কারণ এখন আমি সবধরনের কথা শোনার জন্য সবসময় প্রস্তুত আছি।

সোলেমান চৌধুরী এবার কোনো সংকোচ ছাড়াই বললেন,জামিলাই তোর নিজের আম্মু হয়।আর জারা তোর নিজের আপন বোন।

চলবে,