আমি মায়াবতী পর্ব-০৬

0
281

#আমি_মায়াবতী
#পর্ব_৬
#লেখনীতে_তাহমিনা_মিনা

বইগুলোর দিকে তাকিয়ে আছি। পড়তে ইচ্ছে করছে না। মা বেঁচে থাকতে গতবছরই আমাকে সব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট নোট করে দিয়েছে। আমার বইগুলোতে মায়ের হাতের ছোঁয়া আছে। আমি আলতো করে বইগুলোতে হাত বুলালাম। আমি এখানে এতোটাই বাড়তি। কিন্তু আমার মায়ের কাছে আমি সবই ছিলাম। গতকাল এইবাড়িতে আসার পর থেকে আমি অনেক অপমানের শিকার হয়েছি। কিন্তু আজ শুধুমাত্র টেবিলে বসে খাওয়ার অপরাধে এতো কথা শুনতে হবে ভাবিনি। সাবিহা আমাকে সহ্য করতে পারেনা আমি জানি। এইটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু কেউ খাবার মুখে দেওয়ার পর কিভাবে এতো বাজে কথা বলতে পারে?সাবিহার মা তখন ওয়াশরুমে গোসল করছিল। আমি চাইলেও ওকে কিছু বলতে পারিনি। নিজের খাবারটা নিরবে শেষ করে এসেছি। কারণ আমি জানি, আমার খাওয়া বা না খাওয়ায় কারো কিছু যায় আসে না। এইখানে কেউ আমার ভালোমন্দের খবর নিবে না।

দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে সেদিকে তাকিয়ে দেখলাম, বাবা এসেছে।
” আসবো, মা?”
” এসো, বাবা।”
” স্কুল কেমন কাটলো? বন্ধু হয়েছে কোনো?”
” হ্যাঁ, হয়েছে কয়েকজন। ”
” রাতের খাবার খেয়েছো?”
” হুমম। ”
একটু সময় বাবা নীরব থেকে বললো,” সাবিহা তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে?”
আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে রইলাম। বাবা আমার হাত ধরে বললো,” সন্তান হচ্ছে বাবা মায়ের ভালোবাসার চিহ্ন। সাবিহা আর সাব্বির ও আমার আর ওদের মায়ের ভালোবাসার চিহ্ন। কিন্তু, তুমি আলাদা। আমি জানি তোমার খারাপ লাগবে কথাগুলো শুনতে। কিন্তু তোমার মা যা করেছে, সেটা জানলে মেয়ে হয়ে হয়তো তুমি তাকে ক্ষমা করবে। কিন্তু একজন নারী হয়ে ক্ষমা করতে পারবে না।”
আমি অধীর হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,” আমার মা কি করেছিল বাবা? বলোনা আমাকে।”
” তোমার জানার বয়স এখনো হয়নি। সময় হলে তোমাকে জানাবো। ”
” তুমি এখানে এসেছো, সেজন্য যেমন তোমাকে সাফার করতে হচ্ছে, তেমনিভাবে সাবিহা সাব্বিরকেও সাফার করতে হবে।”
” ওদেরকে কিভাবে?”
” কেউ যদি ওদেরকে তোমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে, ওরা কি জবাব দিবে? বলবে তুমি ওদের বোন। কিন্তু এতো বড় বোন হুট করে আসলো কই থেকে? সবাই আমার চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তুলবে। ওরা এইখানে বেড়ে উঠেছে। স্কুলের সবাই যখন ওদের জিজ্ঞেস করবে, ওরা কি জবাব দিবে? সাব্বির তো ছোট। ওর সাথের মানুষগুলোও ছোট। ওরা সহজে মেনে নিলেও সাবিহার সাথে চলা মানুষগুলো মানবে না। আজকে আমাকে সাবিহার ফ্রেন্ডের মা স্কুল থেকে বের হওয়ার সময় তোমার কথা জিজ্ঞেস করেছে। আমি শুধু বলেছি আমার মেয়ে। আর কিছু বলার সুযোগ দেইনি আমি উনাকে। কিন্তু এভাবে কতদিন? তুমি তো আমারই মেয়ে। আমি তো তোমাকে সারাজীবন রুমে বন্ধ করে রাখতে পারবো না। তাইনা? একদিন না একদিন তোমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবেই আমাকে। আমি সাবিহাকে বুঝিয়ে বলবো। কিন্তু, তোমাকেও বুঝতে হবে। ওদেরকে সময় দিতে হবে। বুঝলে?”
আমি নিরবে মাথা ঝাঁকালাম।
” তোমার কোনো জিনিস লাগবে?”
” নাহ, সবই আছে আমার।”
” কোনো কিছু লাগলে আমাকে বলো কেমন?”
” আচ্ছা।”
বাবা চলেই যাচ্ছিল। আবার ঘুরে আমার দিকে তাকিয়ে ইতস্তত করে বললো, ” কোনোকিছু লাগলে যদি আমি না থাকি, তবে সাবিহার মা কে বলো। কেমন?”
আমি হেসে বললাম,” আচ্ছা।”
***

°সারাজীবন ধরে আমি যাকে খুঁজেছি, আজ আমি তাকে পেয়েছি। একদম কাছে থেকে। সারাজীবনে অনেক ছেলের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে আমার। সবাই আমাকে চেয়েছে। আমাকে পাওয়ার জন্য কি কি করেছে, তার হিসেব নেই। কিন্তু আমার এমন পুরুষ মানুষ ভালো লাগে না। কেন কেউ নিজেকে এতো ঠুনকো ভাবে দেখবে? কেন কেউ আমার জন্য জীবন দিবে? যখন অপরপাশের মানুষটার প্রতি আমার কোনো অনুভূতিই নেই। পুরুষ মানুষ তো হবে চরম ব্যক্তিত্বের অধিকারী। কেন তার ইগো ঠুনকো হবে? ভাবিনি, ছেলে মানুষ হিসেবে যাকে আমার বোনের টিচার হিসেবে মানতেই পারিনি, তার প্রেমে পড়ে গেছি। কোনো সময় কারো প্রেমে পড়িনি। কাউকে ভালোবাসতে পারিনি। কাউকে ভালোলাগেওনি। কিন্তু এইবার সব কিছুর সমাপ্তি। আমার জীবনেও প্রেম এসেছে। উফফ! আমি স্বপ্ন দেখছি না তো? চিমটি কাটবো নিজেকে? আচ্ছা, আমি কি পাগল হয়ে গিয়েছি?°

°আজ নিজে হাতে খাবার বানিয়েছি। কোনোসময় নিজের জন্যও খাবার বানাইনি। সেই আমি আজ তার জন্য রান্না ঘরে ঢুকেছি। সে ঝাল জাতীয় খাবার ভালোবাসে। কিন্তু আমি মিষ্টি ভালোবাসি। এখন থেকেই ঝাল খাবার খাওয়ার অভ্যাস করছি। না হলে তার সাথে সংসার করবো কিভাবে? সে বলেছে আমার রান্না ভালোই লেগেছে। তাকে দেওয়া সবটুকু খাবার সে শেষ করেছে। একটুও বাকি রাখেনি।বলেছে অনেক ভালো হয়েছে খাবার। কিন্তু আমি খেয়ে দেখেছি।অনেক বেশিই লবন হয়েছে। সে আমার মন রাখতে ভালো বলেছে। আমার চেষ্টা টা দেখেছে৷ তার মানে কি সেও আমাকে ভালোবাসে? আমার হাত অনেকটা পুড়ে গেছে৷ তবুও আমি খুশি। সে আমার হাতের রান্নার কদর করেছে। আমি ধীরে ধীরে তার মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছি। সে নাকি কচু পাতার রঙ ভালোবাসে। কাল শাড়ি পড়বো। কচুপাতা রঙয়ের। ইশশ! কেন সে আরেকটু থাকে না? আমার বোনটাও কেন তাকে আরেকটু পড়ানোর জন্য জোড়াজুড়ি করে না? সেটুকু হলে তো আমি তাকে মন ভরে দেখতে পারতাম।°

°আজ শাড়ি পড়েছিলাম। সে আমাকে দরজা খোলার সময় একবার দেখেই আর আমার দিকে ঘুরেও তাকায়নি। সে কেন আমাকে আর একবারের জন্যও দেখলো না? আমাকে কি তবে তার ভালোলাগেনি? তা কি করে হয়? আমাকে ভালো না লাগার তো কিছু নেই। আমার ব্যবহারে তার তো বোঝা উচিত যে আমি তাকে ভালোবাসি। তাহলে সে কেন বাসবে না ভালো আমায়? নাকি আমার দিকে তাকিয়ে থাকলে সে আমাকে প্রোপোজই করে দিত? তাই বলে কি সে পাত্তা দেয়নি আর? বাড়িতে বাবা-মা, বোন সবাই ছিল। সবার সামনে লজ্জা পাবে বলেই কি? হ্যাঁ, তাই হবে হয়তো। না হলে কি আর কালকে আমার নুনে পোড়া খাবারকে ভালো বলতো?°

“কি করছো সাগরিকা?”
রিজভীর প্রশ্নে সাগরিকার হুশ ফিরে আসে। ডায়েরিটা নিঃশব্দে ড্রয়ারে রেখে তার দিকে তাকিয়ে বলে,” তেমন কিছু না।”
” তুমি তো শোয়ার আগে কখনোই কিছু পড়ো না। তাহলে আজ কি পড়ছিলে ঐটা?”
” তেমন কিছু না। বাচ্চারা ঘুমিয়েছে?”
” হুমম। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। ”
কিছুক্ষন কারো মুখেই কোনো কথা নেই। সাগরিকাই আবার বলে,” আজ পাশের ফ্ল্যাট এর ভাবি এসেছিল। মায়ার কথা জিজ্ঞেস করলো। আমি তেমন কিছু বলিনি। তোমার সাথে আলোচনা করা উচিত। কি বলবো সবাইকে আমি?”
“বলবে আমাদের মেয়ে।”
” ও তো আমার মেয়ে নয়। তাহলে কেন আমি ওকে মেয়ে বলে পরিচয় করাবো সবার সামনে?”
রিজভী কোনোকিছু বললো না। সাগরিকা একটু থেমে আবার জিজ্ঞেস করলো,” মায়ার মা কোথায়?”
” মরে গেছে।”
“কিভাবে মারা গেছে?”
” অসুস্থ ছিল। আর ওর হায়াত অতটুকুই ছিল। আল্লাহ নিয়ে গেছে।”
” তোমাদের পরিচয় কোথা থেকে?”
” সাগরিকা, আমি একবার বলেছি তোমাকে। আমি বলতে পারবো না। আমার পক্ষে সম্ভব নয় বলা। তুমি যখন সবকিছু জানবে, তখন আমাকে জিজ্ঞেস করো।”
সাগরিকার ইচ্ছে হলো একবার সবকিছু বলে দিতে। কিন্তু বললো না। ডায়েরিটা পড়া শেষ না করে সে কাউকেই কিছু বলবে না। চিঠিও কাউকে দিবে না। ডায়েরিটা শেষ করেই সে তাদেরকে দিবে।
রিজভী নিচু গলায় আবার বললো,” সাগরিকা, মায়া মেয়ে মানুষ। যথেষ্ট বড় হয়েছে। আমি ওর বাবা হলেও ওর সাথে আমার ঐরকম সখ্যতা নেই। মেয়েদের অনেক কিছুই প্রয়োজন হয়।আমাকে হয়তো মুখ ফুটে লজ্জায় বলতে পারবে না। তোমাকেও হয়তো বলবে না। তুমি দয়া করে এই বিষয়টা একটু দেখো।”
সাগরিকা বুঝতে পারলো, রিজভী কি বোঝাতে চাইছে। সেও মাথা নেড়ে শুয়ে পড়লো। তাদের দুজনের মাঝে মাত্র কয়েক ফুটের দূরত্ব। কিন্তু মনের দিক থেকে যোজন যোজন দূরত্ব।
***
“মায়া, তোমার মা কি করেন?”
বান্ধবী ঈশার কথায় আমি মাথা নিচু করে বললাম,” উনি মারা গেছেন কিছুদিন আগে।”
” অহ! আমি দুঃখিত। তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি। কিন্তু তোমাকে আজকে যাদের সাথে আসতে দেখলাম, ওরা তোমার কি হয়?”আমার বলতে খুব লজ্জা লাগছিল। কিন্তু যেহেতু সে আমার বান্ধবী, তাই একদিন না একদিন জানতেই পারবে। তাই মাথা নিচু করে আবারও উত্তর দিলাম,” ওরা আসলে আমার সৎ ভাই-বোন। ”
” মানে? তোমার বাবা দুটো বিয়ে করেছে? তোমার বাবা আর সাবিহার বাবা তারমানে একজনই?”
” তুমি সাবিহাকে চিনো?”
“চিনবো না কেন? সাবিহা অনেক ব্রাইট একটা স্টুডেন্ট। ওকে সবাই চিনে। সেই সুবাদে ওর বাবা মাকেও চিনি। কিন্তু আমি তো ওর বাবাকে ভালো মানুষ ভেবেছিলাম। কিন্তু এখন তো দেখছি উনি সম্পূর্ণ আলাদা।”
” তুমি ভুল ভাবছো। আমার বাবা অনেক ভালো একজন মানুষ। আমার মা আর বাবার মধ্যে কেমন সম্পর্ক ছিল আমি জানি না। কিন্তু মৃত্যুর আগে মা বলে গেছে, মায়ের জন্য সবকিছু হয়েছে। প্লিজ, আমার বাবাকে নিয়ে খারাপ কিছু বলোনা।”
“ওকে। কিন্তু এইটা বলোতো, তোমার মা তোমার বাবার প্রথম স্ত্রী নাকি দ্বিতীয়? ”
আমি মাথা নিচু করে জবাব দিলাম,” দ্বিতীয়। ”
ঈশা আর কিছুই বললো না এই ব্যাপারে। আমি ওকে অনুরোধ করলাম কাউকে যেন এইসব ব্যাপারে কোনো কিছু না জানায়। ও আমাকে আশ্বস্তও করেছে। আমার মায়ের জন্য মন খারাপ না করে তার জন্য আল্লাহর দরবারে তার শান্তি কামনা করতে বললো। আমার মেয়েটাকে ভীষণ ভালো লেগেছে।
***
“হয়েছে তো তোমার? শান্তি এইবার? এইখানে আসার উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ?” স্কুল থেকে বাসায় ফিরেই সাবিহা কাঁধের ব্যাগ টা ছুড়ে ফেলে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললো।
আমি আমতাআমতা করে বললাম,” কি করেছি আমি? ”
” জানো না তুমি? কিছুই জানো না তুমি? সবসময় এতো ভালোমানুষির ভাব ধরে থাকো কেন?”
” আরেহ, কি করেছি আমি?সেটা তো বলো।”
” আজকে তুমি ক্লাস থেকে বের হয়েছিলে কেন? বলো? তোমাকে দেখে সবাই তোমার কথা আমাকে জিজ্ঞেস করেছে। কি বলতাম আমি? আমি কিছুই বলিনি। কিছুই বলতে পারিনি। সবাই নিজেরাই নিজেদের মতো করে ভেবে নিয়েছে। জানো, বাবাকে সবাই কি বলেছে? জানো কি বলেছে?”
” কি বলেছে?”
” বলেছে আমার বাবা নাকি চরিত্রহীন। আমার বাবা নাকি তোমার মা কে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছে। তারপর তোমাদের খবর রাখে নি। সবাই আমার বাবাকে লু*চ্চাও বলেছে। আমার বাবা কি এমন? বলো? তোমাকে বলেছিলাম না, রুম থেকে বের না হতে? বলিনি তোমাকে? কেন বের হয়েছিলে? বলো?”
আমি কি বলবো ভেবে পেলাম না। সাবিহা হয়তো আরও কিছু বলতো কিন্তু তার আগেই ওর মা এসে ওকে থামিয়ে ওকে ওর রুমে নিয়ে যায়। ওকে কীভাবে শান্ত করেছে আমি জানি না। কিন্তু আমার ভীষণ রাগ লাগলো। আমিও তো এমন কথার সম্মুখীন হয়েছি। আমি কার কাছে নিজের কষ্টের কথা বলবো। ভীষণ অভিমান ও হলো। তাই হয়তো সাবিহার মা রুম থেকে বের হতেই আমি ঠোঁট ফুলিয়ে বিচার দিয়ে বললাম,” সাবিহা আমার সাথে এমন করে কেন? আমি কী ক্ষতি করেছি ওর?আপনি ওকে বোঝান না কেন কিছু? ”
সাবিহার মাও হয়তো আমার থেকে এমন কিছু আশা করেননি। উনি কিছু মুহুর্ত পরেই বললেন,” তোমার মায়ের কারণে আমি নিজের স্বামীকে হারাচ্ছি ধীরে ধীরে। এখন তোমার কারণে তো মা আমি আমার মেয়েকে হারাতে পারবো না। আমাকে ক্ষমা করো মায়া।”
আমি স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার নিজের কাছেও আমার করা প্রশ্নটা যুক্তিহীন লাগলো। নিজের এই চরম অসহায়ত্বের মাঝেও হাসি পেল। উনি কি আমার মা নাকি যে আমার অনুভূতির কদর করবেন?
***
এইখানে এসেছি প্রায় ১৫ দিনের মতো হয়ে গেছে। বাবা আর সাব্বির এর সাথে সখ্যতা গড়ে উঠলেও সাবিহার সাথে অবস্থা দিনদিন খারাপ হচ্ছে। ওদের মায়ের সাথে সম্পর্ক মোটামুটি। আমার সাথে খারাপ ব্যবহার না করলেও ভালোও বাসেন না। আমি অবশ্য উনার ভালোবাসা আশাও করিনা। কারণ, সেটা আশা করার অধিকার আমার নেই। ওনাকে এখন আম্মা ডাকি।
রাতে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। বাবা রুমে এসে বললো,” মায়া, কালকে আমি, তোমার মামনি আর সাব্বির এক জায়গায় যাব। তুমি আর সাবিহা বাসায় থাকবে। কালকে যেহেতু শুক্রবার, তাই তোমাদের স্কুলও নেই। তোমরা বাসায় ভালোমতো থেকো। আমি সাবিহাকেও বলেছি।থাকতে পারবে তো? ভয় পাবে না তো?আমরা অবশ্য সন্ধ্যার দিকেই ফিরে আসবো।”
” সমস্যা নেই বাবা, আমরা ভয় পাবো না।”
***
সকালের দিকে বাবা মা চলে গেলে আমার ভয় লাগলো ভীষণ। আমাকে সাবিহাকে দেখাশুনা করতে বলেছে। কিন্তু ও তো সবাই যাওয়ার পরই দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। ওর খেয়াল রাখবো কিভাবে?
দশটার দিকেই অবশ্য আমার ভয় পাওয়া টা সত্যিতে রুপ নিলো। সাবিহার রুম থেকে চাপা কান্নার আওয়াজ পেলাম। আমি বারবার ওর দরজার কাছে গিয়ে ডাকলেও ও সাড়া দিলো না। আমার ভীষণ ভয় লাগলো। একসময় ও বললো, “থেকো এখন তুমি এই বাসায়। ভালোমতো থেকো।আমি তো মরেই যাবো। আল্লাহ আমাকে নিয়েই যাবে। এখন আর তোমাকে কেউ কিছু বলবে না। আরামে থেকো তুমি।”
এতোটা আতঙ্কিত আমি কখনোই হইনি। আমি কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। যদি সাবিহা উল্টাপাল্টা কিছু একটা করে? তবে কি হবে? বাবা কে আমি কি জবাব দিবো? ওর মা কে কি বলবো? আর নিজেকেই বা কীভাবে ক্ষমা করবো। এইখানে যা হচ্ছে, সবকিছুই তো আমার জন্য হচ্ছে…..

চলবে….