আমি মায়াবতী পর্ব-০৮

0
255

#আমি_মায়াবতী
#পর্ব_৮
#লেখনীতে_তাহমিনা_মিনা

° মন। ছোট্ট একটা শব্দ। দুটো অক্ষর। অথচ ভেঙে গেলে এই দুটো শব্দই কোনোভাবেই আর জোড়া লাগানো যায় না। আজ আমারও মন ভাঙলো। ভাবতে পারছি না। মেনে নিতে পারছি না। আমি যাকে ভালোবাসলাম, সে অনেক আগে থেকেই কারো ভালোবাসা। তার অর্ধাঙ্গিনীও আছে। যাকে সে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। যাকে ভালোবেসে সে তার বাবা-মাকে ছেড়ে এসেছে। তাকে একটু সুখে রাখার জন্যই সে আমার বোনকে রাতের বেলায় এসেও পড়ায়। আজ আমার বানানো খাবার সে মুখেও তুলেনি।অল্প কিছুক্ষণ পড়িয়েই সে বলেছে তার স্ত্রী অসুস্থ। তাকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে। সারাজীবনে যা যা চেয়েছি, তার সবকিছুই পেয়েছি। কোনো সময়ই কোনো কিছু না নিয়ে আফসোস করিনি আমি। কিন্তু আজ করছি। যাকে জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি, সে আমার জন্য নিষিদ্ধ। তাকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখাও পাপ। কারণ, সেটা বাস্তবায়নের জন্য একটা মেয়ের সংসার ভাঙতে হবে। আমি মেয়ে হয়ে সেটা কিভাবে করবো?°

°নির্ঘুম একটা রাত কাটাচ্ছি আজও। কতগুলো রাত ধরে যে ভালোমতো ঘুম হচ্ছে না, নিজেও জানি না। একবার আয়নার সামনে গেলাম। আমি কি দেখতে খুবই খারাপ? ভীষণ খারাপ? নাহ,মোটেও না। আজ তো ঐ মেয়েকে দেখে আসলাম। আমার চেয়ে আহামরি কিছুই না। বেশ ভাঙাচোরা চেহারা। চোখ দুটো গর্তে পড়ে গেছে। ক্যান্টিনে বাকিতে খাবার চাইছিল। আমার ভীষণ রাগ হলো ওর প্রতি। অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে। আমিও আগে এই ভার্সিটিতেই পড়েছি। ক্যান্টিনের লোক কে টাকা দিয়ে ওকে বাকি টাকাগুলো ফেরত দেওয়ার জন্য উস্কেছি। ওকে অনেক কথা শুনিয়েছে সে৷ আমার কেন যেন পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছিল। তবে, আমিই একটু পরে ওর বকেয়া সব টাকা পরিশোধ করেছি। ও আমার হাত ধরে বলেছে আমি নাকি মহান। আমার মতো নাকি মানুষই হয় না। আসলেই কি আমি মহান?°

°আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। নিজের মন আর মস্তিষ্ক আমাকে পাগল করে দিচ্ছে। একজন বলছে মনই আসল। তার কথা শুনলেই ভালো হবে। আরেকজন বলছে এইটা মহাপাপ। কিন্তু আমি পারছি না তাকে ভুলতে। সে প্রতিদিন আমার বাড়ি আসে। তার হাসি আমাকে পাগল করে দেয়। আমার মনে হয় আমি ওকে সবকিছু বলে দিই। কিন্তু বিবেক বাঁধা দিচ্ছে। আমি আজও ঘুমাতে পারছি না। কেন পারছি না জানি না।°

°সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি আমি। আমি তাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না। কিন্তু মন দিয়ে ভালোবেসেও আমি এখন তাকে নিজের করে পাবো না জানি। সে আমার ভালোবাসা বা মনের মূল্য দিবে না। তাকে পেতে গেলে আমাকে ছলনার আশ্রয় নিতে হবে৷ নিজের বিবেক আর সতীত্ব সবই তার কাছে বিসর্জন দিতে হবে। কিন্তু আমি এইভাবে কোনোকিছুই চাইনি তার থেকে। আমি চেয়েছিলাম সে আমায় ভালোবাসুক। সে নিজে আমার কাছে আসবে। আমি লাল টুকটুকে একটা শাড়ি পড়ে তার কুঁড়েঘরে বউ হয়ে যাবো৷ কিন্তু এইরকম কিছুই হবে না। আমি সব বিসর্জন দিচ্ছি। নিজের বিবেক, আত্মসম্মান, মর্যাদা, বাবা মায়ের দেওয়া শিক্ষা সবই আমি বিসর্জন দিচ্ছি। আমার সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগছে সেই মেয়েটার জন্য, যার সংসার আমি ভেঙেছি। কিন্তু, আমার কিছুই করার নেই। আমি যাকে ভালোবাসি, তাকে আমায় আমার করে নিতেই হবে। লোকে বলে, প্রেম আর যুদ্ধে নাকি কোনো পাপ নেই। জানি আমার এই ভুল আল্লাহর কাছে ক্ষমার অযোগ্য, তবুও আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইছি।°

°আজ সারারাত আমরা একসাথে ছিলাম। সে আমাকে পাগলের মতো ভালোবেসেছে। ভোর রাতে বাসায় চলে যাওয়ার সময় তার চোখে অনুশোচনা দেখেছি। সে আমার কাছে মাফ চেয়েছে। কিন্তু আমিও মিথ্যে অভিনয় করেছি। বলেছি আমার আর সমাজে মুখ দেখানোর মতো অবস্থা নেই। আমাকে বিয়ে না করলে আমি মরেই যাবো৷ সে উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে গিয়েছে আমাদের বাসা থেকে। তখন মিথ্যে কান্না করলেও এখন আমার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। ছোট বোনের রুমের দিকে গেলাম। সে এখনো ঘুমুচ্ছে। তাকে যে আমি কড়া ডোজের ঘুমের মেডিসিন দিয়েছি। আর আমার ভালোবাসার মানুষটিকে নেশার। নেশার ঘোরেই সে আমার কাছে এসেছিল। আমার ভীষণ কান্না পাচ্ছে৷ আমি এইভাবে সবকিছু হোক, চাইনি। বাবা-মা বাসায় নেই। আমার তাদের কথা ভেবেও খারাপ লাগছে।সারারাত বৃষ্টি হয়েছে। এখনও হচ্ছে। সে ছাতাটাও নেয়নি। আমি তাদেরও ঠকাচ্ছি৷ একটু আগে কাছের বন্ধুটি কল করেছিল। সে সব জানে। তাকে বলেছি সব আমাদের পরিকল্পনামাফিক হয়েছে। কিন্তু আমি আমার মনকে শান্ত করতে পারছি না। আমি যেন মহা অন্যায় করে ফেলেছি। প্রচুর পানি খাচ্ছি। কিন্তু পিপাসা মিটছে না আমার।°
শব্দ করে ডায়েরিটা বন্ধ করে দেয় সাগরিকা। এতো চাপ সে আর নিতে পারছে না। টেবিলে রাখা পানির জগ থেকে পানি নিয়ে ঢকঢক করে ২ গ্লাস পানি খায় সে। সে সহ্য করতে পারছে না। তার স্বামীর শরীরে সে নিজের গন্ধ ছাড়া অন্য কোনো গন্ধ সে সহ্য করতে পারে না। সেখানে অন্য নারীর গন্ধ তার শরীরে ছিল। সে মানতে পারছে না। ভাগ্যিস মায়ার মা মারা গিয়েছে। না হলে সে এক্ষুনি গিয়ে তাকে মেরে ফেলতো। ডায়েরিটা আবারও ড্রয়ারে রেখে দেয় সে। সে এই ডায়েরি পড়তেও ভয় পাচ্ছে। ঘুমন্ত রিজভীর দিকে তাকায় সে৷ না জানি, বেচারা কি কি সহ্য করেছে। মানুষটাকে সাগরিকা ভালোবাসে। বিশ্বাস করে, ভরসা করে৷ সে সজ্ঞানে কোনো অন্যায় করতে পারে না। সেটা সাগরিকা জানে। না হলে মায়াকে সে এই বাসায় একদিনও রাখতো না। তাকে সবটা জানতে হবে। কিন্তু এখন ডায়েরিটা পড়ার অবস্থায় সে নেই। রাগে,ঘৃণায় গা গুলিয়ে উঠছে তার৷ কোনো মেয়ে কিভাবে তার সবটা এইভাবে বিসর্জন দিতে পারে?
★★★
আজ মনটা ভীষণ খারাপ। এইখানে বাবা তার পরিবারের সাথে ভীষণ ভালো আছে।কিন্তু আমি আর মা জীবনে কিছুই পাইনি। মনে হলো, খুব কাছের মানুষদের সাথে যদি কথা বলতে পারতাম! কিন্তু আমার কাছের মানুষটাতো নেটওয়ার্ক সীমানার বাইরে। শত চেষ্টা করলেও তার কাছে আমি কখনোই যেতে পারবো না। ফোনের দিকে নজর পড়তেই নানীর কথা মনে পড়লো। আজ আর কিছুই ভাবলাম না যে কে কী ভাববে। সাথে সাথেই নানীকে কল দিলাম। একবার, দুবার,তিনবার। কল কেটে গেল। কেউ ধরলো না। ভীষণ অভিমান হলো। কিছুক্ষন কান্নাও করলাম। জিদ চেপে গেল মনে। আজকে কথা বলবোই। যেই ভাবা, সেই কাজ। আবারও কল দিলাম নানীকে। এইবার রিসিভড হলো। আমি কিছু বলার আগেই ঐপাশ থেকে রাশভারি গলায় কেউ একজন বললো,” এতো রাতে ফোন দিচ্ছেন কেন? কাকে চাই?”
আমি মিইয়ে গেলাম। বুঝলাম এইটা নানাভাই।আমি আস্তে আস্তে বললাম,” নানাভাই, আমি মায়া।”
নানাভাই খুব দ্রুত বললেন,” কে? মায়া? নানু? এতোদিন পরে কেন ফোন দিয়েছো? আগে ফোন দাওনি কেন? সবকিছু ঠিক আছে নানু? তুমি ঠিক আছো? ঐখানের সব ভালো তো?”
” আমি ভালো আছি নানাভাই। আপনারা ভালো আছেন? নানী ভালো আছে?”
” হ্যাঁ, হ্যাঁ। সবাই ভালো আছে। সবাই তোমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করেছে এইখানে। দাঁড়াও, তোমার নানীকে ডাকছি।”
আমি ফোনের এইপাশ থেকেই শুনলাম, নানাভাই অনেক জোরেজোরে নানীকে ডাকছে। আমার দুচোখ পানিতে ভরে গেল। নানীও আমার সাথে কথা বলে খুব খুশি হলো। আমাকে বললো প্রতিদিন যেন একটা সময়ের জন্য হলেও আমি যেন মিসড কল দিই। উনারাই ব্যাক করবেন। আমি খুব খুশি হলাম।কথার এক পর্যায়ে বললাম,” নানী, একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”
” বলো, নানু।”
” আমার বাবা মানুষটা ভীষণ খারাপ তাইনা নানী? আমার বাকি ২ ভাই-বোনকে যেভাবে ভালোবাসে, আমাকে তার ছিটেফোঁটাও ভালোবাসে না। বাসলেও হয়তো প্রকাশ করে না। এমন কেন করে নানী?”
নানী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,”ঐখানে কি তোমার অসুবিধা হচ্ছে নানু? বলো তাহলে, আমি গিয়ে তোমাকে নিয়ে আসবো।”
” নাহ, আমি এখান থেকে যাব না। তুমি কি আমাকে বলবে, আমার মা কি এমন অপরাধ করেছিল যে আমাদের কে বাবার থেকে আলাদা থাকতে হতো? আমাকে বলো না নানী।”
” তোমার মা নিষেধ করে গেছেন, নানু। না হলে তোমাকে আমি বলতাম। কিন্তু একটা কথা শুনো, তোমার বাবা মানুষটা মোটেও খারাপ না। তার মতো মানুষ হয় না। সে যে তোমাকে আর তোমার মাকে ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছে আর সামাজিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে, এইতো অনেক। তার কোনো দায় নেই যে তোমাকে বা তোমার মা কে দেখার। সে নিজের জীবনের ১৭ টা বছর ভয়ে ভয়ে কাটিয়েছে। তার নিজের পরিবারকে হারানোর ভয়।”
আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম। আমার বলতে ইচ্ছে করলো, আমার প্রতি কেন তার দায়িত্ব নেই? কিন্তু প্রশ্ন করলাম না। সে তো আমার দায়িত্ব পালন করছেই।
“শোনো নানু, তোমার মা কে আমরাই এখনো ক্ষমা করতে পারিনি। তুমি বড় হয়ে সবকিছু বুঝতে শিখলে তুমিও পারবে না। কিন্তু তোমাকে মনে রাখতে হবে, সে তোমার মা। সে যাই করুক না কেন, সমাজে বিরুদ্ধে গিয়ে তোমাকে সে নিজের জীবন বাজি রেখে জন্ম দিয়েছে। তোমাকে লোকচক্ষুর আড়ালে জন্ম দিয়েছে। শুধুমাত্র তোমাকে বাঁচানোর জন্য। তুমি তাকে ক্ষমা করে দিও নানু আমার।”
আমি কিছু না বলে ফোন কেটে দিলাম। রাতের আকাশে আজ অনেক তারা। চাঁদ ও দেখা যাচ্ছে। সবাই বলে মরে গেলে মানুষ আকাশে চলে যায়। বিজ্ঞানের ছাত্রী হয়ে আমি জানি এর সবটাই মিথ্যে। কিন্তু আমার আজ এই থিউরি মানতে ইচ্ছে হচ্ছে না। ভাবতে ইচ্ছে করছে লোকের মুখের কথাই ঠিক। সে যেভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি , সেভাবে আমাত মাও আমাকে যেন দেখছে।
★★★
” মা, সাবিহা আপু আজ স্কুলে যাবে না?”
” আপু একটু অসুস্থ সোনা। সুস্থ হলে যাবে। আজ তুমি মায়া আপু আর বাবার সাথে যাও। আপু ভালো হলে তোমাদের সাথে যাবে। কেমন?”
সাব্বির মায়ের কথায় মাথা দুলিয়ে জবাব দেয়,” ঠিক আছে।”
আমি রুম থেকে বের হলেই আম্মা আমার হাতে একটা টিফিন বক্স ধরিয়ে দেয়। আমি বললাম,” আমার কাছে টাকা আছে আম্মা। আমি কিছু কিনে খেয়ে নিব।”
” তোমার ইচ্ছে হলে খেও। কিন্তু এইটাও নাও। এইটাও খেয়ো। উঠন্ত বয়স এখন। হাবিজাবি খেয়ে শরীর খারাপ করো না।”
আমার কিছুটা ভালো লাগলো। উনি আজই প্রথম আমার জন্য টিফিন প্যাক করে দিল। প্রতিদিন সাব্বির এর জন্য দিত। সাবিহাকে মেরেও টিফিন খাওয়ানো যায় না। তাই ওকে দিত না। বাবার দিকে তাকিয়ে দেখলাম বাবার মুখটাও খুশি খুশি। আমি সাবিহাকে সাবধানে থাকতে বলে সাব্বির এর হাত ধরে রওনা দিলাম স্কুলের উদ্দেশ্যে।
স্কুলে গিয়েই আমার কেমন যেন অদ্ভুত লাগলো সবকিছু। সবাই যেন আমাকে আড়চোখে দেখছে। আমি একজন কে জিজ্ঞেস করলাম,” কি হয়েছে? তোমরা সবাই আমাকে এইভাবে দেখছো কেন? হাসছো কেন?”
একজন উঠে বললো,” তোমার মা নাকি তোমার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী? তা প্রথম স্ত্রী কে রেখে কেন তোমার বাবা তোমার মা কে বিয়ে করলো? আর তোমার মা ই বা কেমন মানুষ যে বিয়াইত্যা বেডারে বিয়ে করছে?”
আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম। আমি তো ঈশা ছাড়া আর কাউকে এই ব্যাপারে কিছুই বলিনি। একটু দূরেই তাকিয়ে দেখলাম ঈশাও আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। ইশশ! আমি ওর মাঝের সরলতাই শুধু দেখেছিলাম৷ ওর কুটিলতা চোখে পড়েনি আমার।
★★★
°আজকে আমরা সামনাসামনি দেখা করেছি। এই প্রথম কোনো কফিশপে এসেছি। দেখা হওয়ার সাথে সাথেই সে আমার কাছে ক্ষমাফ চেয়েছে। বলেছে সে যা করেছে এর কোনো ক্ষমা হয় না তবুও সে ক্ষমা চেয়েছে। সেইদিনের পর থেকে আমাদের বাসায় গেলেও আমি তার সামনে আর যাইনি। আজই প্রথম। সেইরাতের পর আজ ২৯ দিন হয়ে গেছে। পিরিয়ডের ডেইট অভার হয়ে যাচ্ছিল। তাই একটা কিট এনে টেস্ট করিয়েছি। রেজাল্ট যেটা চেয়েছিলাম সেটাই এসেছে। আমি প্রেগন্যান্ট। সেই হয়তো প্রথম বাবা, যে তার সন্তান আসছে শুনেও খুশি হয়নি। সে আমাকে রিকুয়েষ্ট করেছে যেন আমি এবোর্শন করে ফেলি। আমি রাজি হচ্ছিলাম না। তার কল আসায় সে চলে গেল দ্রুত। বলে গেল ২ দিন পর দেখা করবে। আমি জানি, বাচ্চাটার জন্য হলেও সে আমাকে অস্বীকার করতে পারবে না। °

°সে আজ সব জেনে গেছে। আমি যে ছলনা করে তার সাথে প্রতারণা করছি, সব জেনে গেছে। কফিশপে বসেছিলাম। সেও এসেছিল। আমার ভীষণ বমি পাচ্ছিল। আমি উঠে ওয়াশরুমের দিকে এগুতেই আমার ফোনে সেই বান্ধবী মেসেজ পাঠিয়েছিল সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না জানার জন্য। তার সন্দেহ হওয়ার কারণে সে সব মেসেজ চেক করেছে। সে সব জেনে গেছে। আমাকে নিয়ে সোজা আমাদের বাসায় এসেছে। তার রাগের সামনে আমি দাড়াতে পারছিলাম না। তার এই রুপের সাথে আমি পরিচিত নই। বাবা-মা সবকিছু জেনে যেন বোবা হয়ে গেছে। কথাও বলতে পারছে না। আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সে বলে দিয়ে গেছে, সে আমার দায়িত্ব নিবে না আর না নিবে আমার গর্ভের সন্তানের দায়িত্ব। সে বলে গেছে না জানি আপনাদের মেয়ে আর কার কাএ সাথে না শু*য়ে*ছে। আমার মতো মেয়েকে নাকি বিয়ে করা যায় না। আমার গর্ভের সন্তানকেও সে অস্বীকার করেছে। আমাকে নিয়ে নাকি সমাজে চলা যাবে না। সত্যিই তো, আমার মতো ন*ষ্টা মেয়েকে নিয়ে কি সংসার হয়?°

°সেইরাতে বাবা স্ট্রোক করেছে। অনেক কষ্টে বাবাকে বাঁচানো গিয়েছে। তাকে ডাকা হয়েছিল। বাবা তার হাতে পায়ে ধরে বিয়েতে রাজি করিয়েছে। আমাদের বিয়ে হবে। এখন শুধু রেজিস্ট্রি। গর্ভাবস্থায় তো আর কোনো মেয়ের ডিভোর্স হয় না। বাবুটা হলে সে কবুল বলে আমাকে বিয়ে করবে। কিন্তু সে অনেক গুলো কঠিন শর্ত দিয়েছে। সেগুলো মেনে নিয়েই বাবা রাজি হয়েছে। যাহোক, বিয়েটা তো হোক। বাবা-মা কেউ আমার সাথে কোনো কথাই বলেনি। ছোট বোন বা ভাই ও বলেনি। শর্তগুলো মানলে আমার উনার মন পাওয়া তো দূর, সংসার করাই হবে না। তাহলে এতোকিছু কার জন্য করলাম আমি?°

চলবে….