আর একটিবার পর্ব-২৪+২৫

0
265

#আর_একটিবার
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_২৪

সাগরিকা থমকে বসে আছে। সবার দৃষ্টি সামনে পড়ে থাকা ঝুমুরের দিকে। জমিনে র*ক্ত ভেসে যাচ্ছে। ইর্তেজা দৌড়ে গেল। শ্রাবণের উপর থেকে ঝুমুর সরিয়ে চমকে উঠল। গালে ও শরীরে বিভিন্ন জায়গায় কাঁচ ঢুকেছে। শ্রাবণের দৃষ্টি ইর্তেজার দিকে। ইর্তেজা হাঁটু গেড়ে বসে শ্রাবণকে ডাকতে লাগলো। কিন্তু শ্রাবণ জবাব দিচ্ছে না। ধীরে ধীরে শ্রাবণ চোখ বন্ধ করে নিলো।

সাঈদ ইরিনার বাসার সামনে এসেছিল। বেহায়া মন মানে নি তার। আসতেই এলাকার লোকেদের কথা শুনে সে চমকে উঠল। ইরিনার বাসার সামনে মানুষের ভীর ছিল। তাদের জিজ্ঞেস করায় তারা সব বলে। বাড়িতে গু*ন্ডারা হামলা করে সবাইকে তুলে নিয়ে গিয়েছে। সাঈদের বুকের বা পাশ মোচড় দিয়ে উঠল তাদের কথা শুনে। ইর্তেজাকে বার বার কল করছে কিন্তু ইর্তেজা ধরছে না। সাঈদ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভাবছে কি করবে। সবাই ঠিক আছে তো? তারা সবাইকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে? হঠাৎ সাঈদের মোবাইল টন বাজলো। ইর্তেজা কল করছে। দ্রুত রিসিভ করে কানে ধরলো। ইর্তেজার কাছ থেকে জানতে পারলো তারা এখন হসপিটালে আছে। সাঈদ এক মুহূর্ত থামলো না। ইর্তেজা এড্রেস দেয়ায় সে দ্রুত গতিতে বাইক চালিয়ে হসপিটাল গেল। ইরিনার কিছু হয়নি তো? সাঈদ হসপিটালের ভেতর গিয়ে পাগলের মতো ছুটাছুটি করতে লাগলো। হঠাৎ সামনে দেখে থমকে গেল। ইরিনা বসে আছে। আর একজন নার্স তার পা ধরে কি যেন করছে। সাঈদ ধীরপায়ে সেখানে হেটে গেল। নার্স ইরিনার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনি ইন শাহ আল্লাহ খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন। ঔষধ ঠিক মতো নিবেন, কেমন?”
“জি আপনাকে ধন্যবাদ”
নার্স মুচকি হেসে উঠে দাঁড়াল। সাঈদকে এক নজর দেখে চলে গেল। ইরিনা মাথা তুলে সাঈদকে দেখে চমকে উঠল। সে সাঈদকে আবার দেখতে পাবে এটার আশা করেনি। সাঈদ হাঁটু গেড়ে বসলো। চোখে অশ্রু টলমল করছে। সাঈদ ইরিনার পায়ের দিকে তাকাল। আবার ইরিনার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনি ঠিক আছেন?”
“তুমি এখানে কি করছো? ইর্তেজার কাছে যাও। ও আর মাহা কেবিনের ভেতরে।”
“আপনি ঠিক আছেন কি-না সেটা আগে বলুন।”
“হুম ঠিক আছি, যাও এখন।”
বলেই ইরিনা মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। সাঈদ ঢোক গিলে কান্না থামিয়ে উঠে দাঁড়াল। তার দৃষ্টি এখনো ইরিনার দিকে।

ইর্তেজা কেবিন থেকে বের হয়ে দেখে সাঈদ এসেছে। সাঈদের নাম ধরে ডাকতেই সাঈদ ও ইরিনা ইর্তেজার দিকে তাকাল। সাঈদ নিজেকে সামলে দ্রুত গিয়ে ইর্তেজাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“তোরা ঠিক আছিস তো?”
“একদম ঠিক আছি। কিন্তু..”
সাঈদ ইর্তেজাকে ছেড়ে ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কিন্তু কি?”
ইর্তেজা সাঈদকে সব বলল। সাঈদ অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে শ্রাবণকে কোন কাতারে ফেলবে? ভালো মানুষ না-কি খারাপ মানুষ? ইর্তেজা লম্বা নিশ্বাস ফেলে শেষে বলল,
“শ্রাবণের অপারেশন চলছে। এখন বেঁচে গেলেও পুলিশের কাছ থেকে বাঁচতে পারবে না।”
“ওর স্ত্রী সাগরিকার কি খবর?”
“সাগরিকা ভেঙ্গে পরেছে একদম। জানিস, বিয়ে আপনার যেমন মানুষের সাথেই হোক। কবুল শব্দে এতোটাই শক্তি যে মনে ভালোবাসা জন্মেই যায়। সাগরিকা এখন দোটানায় ভুগছে। সে জানে না কোনটা সাপোর্ট করবে।”
“যেটা ওর মন বলবে।”
“আমিও এটাই ভাবছি। আচ্ছা একটা হেল্প করবি আমার প্লিজ।”
“হ্যাঁ বল”
“আমি আর মাহা সাগরিকাকে একা ছাড়তে পারবো না। আপু দুপুরে কিছু খায় নি। ঔষধও রয়েছে দুপুরের। তুই যদি আপুকে বাসায়…”
ইর্তেজা পুরো কথা বলার আগেই সাঈদ ইর্তেজার গাল ধরে টেনে বলল,
“শা*লা এত রিকুয়েষ্ট করার কি আছে? যাচ্ছি নিয়ে। সময়ের মতো খাবার ঔষধ সব খাইয়ে দেবো।”
ইর্তেজার নিজের গাল ছাড়িয়ে বলল,
“হারামি কোথাকার। তুই এতোটাই ভালো যে বদদোয়াও দিতে পারবো না গাল টানার জন্য।”
সাঈদ হাসলো। ইর্তেজা ইরিনার কাছে এসে বলল,
“আপু এখন কোনো বাহানা শুনবো না। তুমি এখন বাসায় যাবে। খাবার আর ঔষধ খেয়ে চুপচাপ ঘুমাবে। আমি ঝর্ণাকে কল দিচ্ছি কিন্তু ও ভয়ের কারণে মোবাইল এখনো বন্ধ করে রেখেছে।”
“ঝর্ণা খুব ছোটো। এসব ভয় পাওয়াই স্বাভাবিক। মাহা কোথায়? যাবে না?”
“মাহা আর আমি এখানেই আছি।”
“তো আমি কার সাথে যাব?”
“সাঈদের সাথে।”
ইরিনা কাচুমাচু খেয়ে গেল। সাঈদের সাথে যাবে সে? প্রচুর অস্বস্তি হচ্ছে এখনই। তখনই মাহা আসলো কেবিন থেকে বেরিয়ে। সাঈদকে দেখে সালাম দিয়ে ইর্তেজাকে বলল ডাক্তার ডাকছে তাকে। ইর্তেজা সাঈদকে ইরিনাকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে চলে গেল। ইরিনা এদিক সেদিক দেখছে। ইর্তেজাকে না করতে পারলো না। ইর্তেজা যদি সন্দেহ করে? সাঈদ বলল,
“আমি রিকশা নিয়ে আসি আপনি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন।”
বলেই সাঈদ চলে গেল। সাঈদের সাথে এক রিকশায় বসবে? ইরিনার অস্বস্তি বেড়েই চলেছে। কিছুক্ষণ পর সাঈদ আসলো। চারপাশে চোখ বুলিয়ে বলল,
“আপনার হুইলচেয়ার কোথায়?”
“জানি না”
সাঈদ এই সুযোগ হাতছাড়া করার কথা ভাবতেও পারে না। ঝুঁকে ইরিনার দিকে হাত বাড়াল। ইরিনার পিঠে ও হাঁটুর নিচে হাত দিতেই ইরিনা চমকে বলল,
“কি করছো?”
সাঈদ ইরিনার চোখে চোখ রেখে বলল,
“নিজের ভালোবাসার মানুষটার যত্ন নিচ্ছি।”
ইরিনা যেন আশে পাশে কি হচ্ছে সব ভুলে গেল। সাঈদ মুচকি হেসে ইরিনাকে কোলে তুলে নিলো। ইরিনার দৃষ্টি সাঈদের দিকে। এত কাছ থেকে দেখছে আজ ছেলেটাকে। লোভ সামলাতে কষ্ট হচ্ছে। একবার ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে। সাঈদ হাঁটা ধরলো। সে ইরিনার দিকে একবারো তাকাচ্ছে না। সে জানে ইরিনা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। বাহিরে গিয়ে সাঈদ অন্যকিছু ভাবলো। একবার তাকাল ইরিনার দিকে। ইরিনা দৃষ্টি সরাচ্ছে না। সাঈদ রিকশাওয়ালা মামাকে বলল,
“মাফ করবেন মামা। বেগম আমার রিকশা করে যাবে না।”
রিকশাওয়ালা মামা জবাবে দাঁত বের হেসে মাথা নাড়াল। ইরিনা সাঈদের কথা শুনতেই হুঁশ ফিরলো। আশে পাশে তাকিয়ে দেখে সে রাস্তায়। সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ভীষণ লজ্জা পেল সে। লজ্জা আরো বাড়লো যখন রিকশাওয়ালা মামা বলল,
“দোয়া করি তোমরা সারাজীবন সুখে থাকো। নিজের বউয়ের খেয়াল রাইখো বাবা।”
সাঈদ হেসে মাথা নাড়াল। বউ? কার বউ? ইরিনা এক নজর মামাকে দেখে আবার সাঈদের দিকে তাকাল। সাঈদ বাড়ি যাওয়ার জন্য হাঁটা ধরলো। ইরিনা নড়াচড়া করতে করতে বলল,
“নিচে নামাও আমায়। সাঈদ এখনই আমাকে নিচে নামাও।”
সাঈদ থামলো। ভ্রু কুঁচকে ইরিনার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার হিরোদের মতো বডি শডি নেই। তবুও ভালোবাসার খাতিরে আপনাকে কোলে নিয়েছি। বেশি বকবক করলে আমার থেকে খারাপ আর কেও হবে না।”
“তোমার সাহস তো কম না। তুমি আমাকে হুমকি দিচ্ছো?”
“এমনই কিছু।”
বলেই আবার হাঁটা ধরলো। ইরিনা উঁচু স্বরে বলল,
“আমাকে তুমি না নামালে আমি চিৎকার করে মানুষ ডাকবো।”
“তাহলে আমিও সবাইকে বলবো তুমি আমার হবু বউ।”
“হবু বউ? আবার তুমি করেও বলছো?”
সাঈদ হাসলো। ইরিনা সাঈদের কপালে হাত রেখে বলল,
“তোমার জ্বর আসে নি তো?”
“না, যেদিন তোমাকে মন দিয়েছি সেদিন থেকে অসুস্থ আমি।”
ইরিনা মন খারাপ করে বলল,
“আমাদের সম্পর্ক কেও ভালো নজরে দেখবে না।”
সাঈদ থেমে ইরিনার চোখে চোখ রেখে বলল,
“আমার নজরে তুমি কি দেখতে পারছো?”
ইরিনা কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল। হঠাৎ করে মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেল, “ভালোবাসা”
কথাটা বলে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেল ইরিনা। সাঈদ মুচকি হেসে আবার হাঁটা ধরলো। হাঁটতে হাঁটতে বলল,
“তাহলে দুনিয়ার নজরের কথা বাদ দিয়ে শুধু আমার নজরের কথা ভাবো, কেমন?”
.
.
সাগরিকা ধীরে ধীরে চোখ খুলল। মাথা ভার ভার লাগছে তার। তাকিয়ে দেখে সূর্য তার পাশে বসে আছে। মাহা আর ইর্তেজা দাঁড়িয়ে কথা বলছে। সাগরিকা উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো। সূর্য তাকে দেখে আবার শুইয়ে দিয়ে বলল,
“বিশ্রাম করো, তুমি অসুস্থ।”
ইর্তেজা আর মাহা সাগরিকাকে দেখে এগিয়ে আসলো। সাগরিকা ইর্তেজার দিকে তাকিয়ে বলল,
“শ্রাবণ কোথায়?”
“ও-টি, শ্রাবণের অপারেশন চলছে।”
“বেঁচে ফিরবে তো?”
সূর্য রেগে গেল। মাটিতে দাঁড়িয়ে রাগী কন্ঠে বলল,
“তুমি কেন চিন্তা করছো ওর? ও ম*রে যাক। ও ম*রলেই আমরা সবাই শান্তি পাবো।”
সাগরিকা জবাব দিলো না। ধীরে ধীরে উঠে বসলো। সূর্য রাগে ফুঁসছে। সাগরিকা হেলান দিয়ে বসে বলল,
“সরি, ঠিক বললি আমি কেন চিন্তা করবো? আমি মন থেকে চাই ও..ও ম..ম*রে যাক।”
সাগরিকার চোখ গড়িয়ে পানি পরতেই মুছে ফেলল। মাহা সাগরিকার পাশে বসলো। সাগরিকা মাহাকে এক নজর দেখে ইর্তেজার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোমরা অনেক লাকি ইর্তেজা। তোমরা একে অপরের জন্য জন্মেছো। কয়জনেরই বা ভাগ্য এত ভালো হয়।”
মাহা সাগরিকার হাত ধরে বলল,
“সুখ-দুঃখ মিলেই জীবন গঠিত। তুমি আমার থেকে অনেক ছোটো সাগরিকা। এই বয়সে তুমি যা কিছু সহ্য করেছো আমি তোমার জায়গায় থাকলে আরো আগে ভেঙ্গে পরতাম।”
“আমার মতো জীবন যেন আল্লাহ আমার শত্রুকেও না দেয়। ইর্তেজার কাছ থেকে শুনেছি তোমার সম্পর্কে। আমরা হয়তো এক রকমেরই ভাগ্য নিয়ে জন্মেছি। কিন্তু..”
সাগরিকা ইর্তেজার দিকে তাকিয়ে বলল,
“কিন্তু তুমি অনেক ভাগ্যবতী। ইর্তেজার মতো জীবনসঙ্গী পেয়েছো।”
ইর্তেজা লম্বা নিশ্বাস ফেলে বলল,
“আপনিও খুব ভাগ্যবতী। শ্রাবণ আপনাকে অনেক ভালোবাসে। শুধু তার ভালোবাসা প্রকাশ করার নিয়মটা ভুল।”
সাগরিকা মাথা নিচু করে ফেলল। কান্না থামিয়ে রাখতে পারছে না সে। গলা ব্যাথা করছে তার। তখনই একজন নার্স আসলো। ইর্তেজাকে বলল,
“মিস্টার ইর্তেজা, ডাক্তার আপনাকে ডাকছে।”
“জি আসছি, শ্রাবণের অবস্থা কেমন জানতে পারি?”
“অপারেশন হয়ে গিয়েছে। এখন তো জ্ঞান ফেরার অপেক্ষা।”
নার্স চলে যেতে নিলো তখনই সূর্য বলল,
“এক্সকিউজ মি একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”
নার্স সূর্যের দিকে তাকাল। সূর্য বিরক্ত হয়ে বলল,
“ইনজেকশনের ভেতর বি*ষ ভরে শ্রাবণের ভেতর পুশ করা যাবে না?”
নার্স ভ্রু কুঁচকে ফেলল সূর্যের কথা শুনে। ইর্তেজা পরিস্থিতি সামলানোর জন্য বলল,
“আহা সূর্য, দুষ্টুমি করো না। এখন বিষয়টা খুব সিরিয়াস।”
নার্স বলল,
“উনার হয়তো ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন। কি আবল তাবল বলছেন।”
বলেই নার্স চলে গেল। মাহা সূর্যের দিকে তাকিয়ে বলল,
“বাহিরে পুলিশ আছে। এমন কিছু বলো না যাতে শ্রাবণ বাই চান্স ম*রে গেলে তোমার উপর দোষ আসবে।”
“বুঝলাম না, এত বড়ো ঝুমুর ওর উপর পড়ে গেল তবুও কিছু বলো না।”
সূর্যের কথা শুনে সবাই ভাবনায় ডুব দিলো। সূর্যের কথাটা ফেলে দেয়ার মতো না।

ইরিনা খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে। বাড়িতে আসার সময় রাস্তায় সবাই তাদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল। ভীষণ লজ্জার বিষয় এটা। সাঈদ এমন কাজ করবে সে কল্পনাও করেনি। কিন্তু মনের কোনো এক কোণায় ইরিনার ভালো লাগা অনুভূতি হচ্ছে। সাঈদ বাহিরে গিয়েছিল ইরিনার জন্য খাবার কিনতে। খাবার নিয়ে এসে রান্নাঘরে গেল। সে টুকটাক রান্না করতে পারে। কিন্তু এতে সময় লাগবে বলে দ্রুত বাহির থেকে নিয়ে আসলো। প্লেটে খাবার ঢেলে ইরিনার ঘরে আসলো। ইরিনা ভাবনার জগতে আছে। তার ঠোঁটের মুচকি হাসি দেখে সাঈদ নিচের ঠোঁট কামড় দিয়ে ধরে হাসলো। এগিয়ে এসে ইরিনার পাশে বসতেই ইরিনার হুঁশ ফিরলো। নড়েচড়ে বসে অন্যদিকে তাকাল৷ সাঈদ গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বলল,
“তোমার বিরিয়ানি খুব পছন্দ তাই না?”
ইরিনা আড়চোখে সাঈদের দিকে তাকাল। সাঈদ ইরিনার দিকে তাকাতেই চোখ সরিয়ে ফেলল। সাঈদ বিষয়টা লক্ষ্য করেছে। কিন্তু কিছু বলল না। বোতল টেবিলের উপর রেখে বলল,
“তারাতাড়ি খেয়ে নেও ঔষধ খেতে হবে।”
“খাবো না”
সাঈদ দুষ্টুমি করে বলল,
“আমার মনে হচ্ছে তুমি আমার হাতে খেতে চাও।”
ইরিনা হা হয়ে গেল সাঈদের কথা শুনে। জবাব দেয়ার আগেই সাঈদ আবার বলল,
“লজ্জা পেতে হবে না। যা বলার আমায় মুখের উপর বলবে। আমি তো তোমার সবচেয়ে কাছের মানুষ তাই না?”
ইরিনার মাথা কাজ করছে না। সাঈদ কি যা তা বলছে। সাঈদ মুচকি হেসে প্লেট হাতে নিলো। খাবারের লোকমা ইরিনার মুখের সামনে তুলে ধরলো। ইরিনার দৃষ্টি সাঈদের দিকে। সাঈদ বলল,
“আমি জানি তুমি ভাবছো আমি হঠাৎ করে এমন আজব ব্যবহার কেন করছি। বাসায় গিয়ে অনেকক্ষণ ভেবেছি কি করা যায়৷ আমি তো তোমাকে ছাড়া জীবন কাটানোর কথা ভাবতেও পারি না। হঠাৎ একটা কথা মনে আসলো, ‘ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ’ আমি এটাকে উল্টো করে দিলাম, ‘ত্যাগে নয়, ভোগেই মনের সুখ’।”
ইরিনা ফিক করে হেসে দিলো। মুখে হাত দিয়ে সে হাসছে। সাঈদ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে ইরিনার দিকে। ইরিনা সাঈদের চাহনি দেখে হাসি থামালো। লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলো।
.
.
অবাক হওয়ার সীমা অতিক্রম হয়ে গেল। সূর্য দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শ্রাবণের জ্ঞান ফিরেছে। কিছুই হয়নি তার। শুধু চেহারা ও শরীরের কয়েক জায়গায় সেলাই হয়েছে। আর হার্ট দুর্বল। কিন্তু তার মৃ*ত্যুর কোনো চান্স নেই। সূর্য শ্রাবণের দিকে তাকাল। শ্রাবণ শুয়ে চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে৷ তাকে কয়েকজন পুলিশ ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। ইর্তেজা ডাক্তারের সাথে কথা বলে কেবিনে আসলো। ইর্তেজাকে দেখে শ্রাবণ ধীরে ধীরে বলল,
“সাগরিকা কেমন আছে? ওকে খুব জোরে ধাক্কা দিয়েছিলাম আমি। ও ঠিক আছে ইর্তেজা?”
“হুম”
শ্রাবণ সূর্যের দিকে তাকাল। সূর্য বিরক্ত হয়ে অন্য দিকে তাকাল। শ্রাবণ আবার ইর্তেজার দিকে তাকিয়ে বলল,
“সাগরিকাকে ডাকবে? কিছু কথা বলতে চাই ওকে।”
সূর্য হেলান ছেড়ে দাঁড়িয়ে রাগী কন্ঠে বলল,
“আমার বোনের সাথে আপনার আর কোনো সম্পর্ক নেই। আমি তার সাথে দেখা করার পারমিশন দিচ্ছি না।”
“শেষবারের জন্য, ওয়াদা করছি আর কখনো দেখা করতে চাইবো না।”
সূর্য ভ্রু কুঁচকালো শ্রাবণের কথা শুনে।

সাগরিকাকে ধরে নিয়ে আসলো মাহা। শ্রাবণের দৃষ্টি দরজার দিকে ছিল। সাগরিকাকে দেখে মুচকি হাসলো। সাগরিকার চোখের কোণায় পানি জমে গেল শ্রাবণকে দেখে। চেহারার অবস্থা বেশ বাজে। সাগরিকার পা চলছে না। তার মনে ঘৃণা কাজ করছে শ্রাবণের জন্য কিন্তু মায়াও হচ্ছে খুব। শ্রাবণ ইশারায় সাগরিকাকে কাছে ডাকলো। সাগরিকার ইচ্ছে করছে না কাছে যেতে। মাহা বলল,
“আমরা আছি, চলো।”
সাগরিকাকে কাছে নিয়ে গেল। সাগরিকা শ্রাবণের দিকে তাকাতে পারছে না। বার বার দৃষ্টি সরিয়ে নিচ্ছে। শ্রাবণ সাগরিকার দিকে হাত এগিয়ে দিলো। সাগরিকা একবার হাতের দিকে তাকিয়ে আবার শ্রাবণের দিকে তাকাল।
ঢোক গিলে বলল,
“যা বলবে মুখে বলো”
শ্রাবণ হাত নামিয়ে নিলো। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
“গালে ব্যাথা হয় কথা বললে।”
সাগরিকার কলিজা ছিঁড়ে আসছে। শ্রাবণ আবার বলল,
“আচ্ছা সমস্যা নেই, বিয়ের আংটিটা খুলে ফেলো।”
শ্রাবণের কথা শুনে সাগরিকা তার বাম হাত তুলে অনামিকা আঙুলে থাকা আংটির দিকে তাকাল। আবার শ্রাবণের দিকে তাকাল। শ্রাবণ লম্বা নিশ্বাস ফেলল। কান্না আসছে তার। কিভাবে বলবে সাগরিকাকে এই কথাটা। বেশ কিছুক্ষণ পর বলল,
“তোমার জীবন নষ্ট করার জন্য মাফ চাইবো না। আমি এটার যোগ্য না। বলেছিলাম না একবার আজমাইন অনেক ভাগ্যবান সে তোমার ভালোবাসা পেয়েছে। এমনই ভাগ্যবান হতে চেয়েছিলাম। পারি নি। পরিবর্তন হতে বলেছিলে আমাকে। চেষ্টা করেছি। সেটাও পারি নি। আমার পক্ষে পারফেক্ট হওয়া সম্ভব না সাগরিকা। আমি তোমার আজমাইনের মতো হতে পারবো না। আমি মৃ*ত্যুকে ভয় পাই। তবুও চেষ্টা করেছি তোমার জন্য প্রাণ দেয়ার। জানি না বেঁচে গেলাম কেন। হয়তো এত সহজ মৃ*ত্যু উপর ওয়ালা আমাকে দিতে চান না। আমার কর্মের ফল আমি এই দুনিয়া ওই দুনিয়া। দুই দুনিয়াতেই ভোগ করবো।”
সাগরিকা থমকে তাকিয়ে আছে শ্রাবণের দিকে। শ্রাবণ পুলিশদের দিকে তাকিয়ে বলল,
“স্টেটমেন্ট লিখুন, আমি শ্রাবণ আহমেদ। কবুল করছি আমিই ১৬ বছর ধরে অবৈধ ব্যবসা চালাচ্ছিলাম। সাগরিকাকে তার বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করেছি। আর আজমাইনের মৃ*ত্যু আমার কারণেই হয়েছে।”
চারপাশ নিরবতা ছেয়ে গেল। সবার দৃষ্টি শ্রাবণের দিকে। পুলিশ স্টেটমেন্ট পুরো লিখে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনার সব গুনাহ কবুল করার বিভক্তিতে আমরা আপনাদের এরেস্ট করছি। আপনি সুস্থ না হওয়ার পর্যন্ত আমাদের নজরে থাকবেন। সুস্থ হলে আপনাকে আমরা কোর্টে নিয়ে যাবো।”
শ্রাবণ লম্বা নিশ্বাস ফেলল। ইর্তেজা মাহা একে অপরের দিকে তাকাল। তারা এই সময় কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। সাগরিকা শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সূর্য সাগরিকার কাছে এসে বলল,
“আপু, আংটি খুলে দিয়ে দে। আমি উকিলের সাথে যোগাযোগ করে ডিভোর্সের ব্যবস্থা করছি।”
শ্রাবণ মুখ ঘুরিয়ে ফেলল সূর্যের কথা শুনে। রাগে ইচ্ছে করছে চারপাশে আগুন লাগিয়ে দিতে। সাগরিকা কেন যাবে তার থেকে দূর? সাগরিকা তো একমাত্র তার। আদৌও কি তার? শ্রাবণ সাগরিকার দিকে তাকাল। সাগরিকা সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছে। সূর্য সাগরিকার হাত ধরে আংটি খুলে ফেলল। শ্রাবণের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“নেন আপনার আমানত। আর আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমার বোনকে মুক্ত করার জন্য।”
শ্রাবণ আংটি হাতে নিয়ে বলল,
“খেয়াল রেখো ওর।”
“আপনি চিন্তা করবেন না। আপনি আপুর জীবনে না থাকলে আপু খুব ভালো থাকবে।”
শ্রাবণ হাতমুঠো শক্ত করে ফেলল। সাগরিকাকে এক নজর দেখে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। সূর্য সাগরিকার উদ্দেশ্যে বলল,
“বাসায় চলো, তুমিও অসুস্থ খুব। ডাক্তার বলেছে তোমাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া যাবে।”
সাগরিকার গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না। চলে যাবে শ্রাবণকে ছেড়ে? না-কি আর একটিবার সুযোগ দেবে? তাকে পাবার জন্যে শ্রাবণ এত বাজে বাজে কাজ করেছে। হয়তো সে চলে গেলে শ্রাবণ ভালো হয়ে যাবে। হ্যাঁ, চলে যাওয়াই উত্তম। সূর্যের হাত ধরে সাগরিকা হাঁটা ধরলো। শ্রাবণ তাকাল সাগরিকার দিকে। সাগরিকা সত্যি চলে যাচ্ছে? সাগরিকা একবার ভাবলো শ্রাবণকে শেষ দেখা দেখে যাক। কিন্তু মন বলছে তাকে দেখলে যেতে পারবে না। তাই সাগরিকা তাকাল না। বেরিয়ে গেল কেবিন থেকে। সাগরিকা যেতেই শ্রাবণ দ্রুত উঠে দাঁড়াল। ইর্তেজা দৌড়ে গিয়ে শ্রাবণকে ধরে বলল,
“কি করছো শুয়ে থাকো সেলাই ছিঁড়ে যাবে পেটের।”
শ্রাবণ ইর্তেজাকে বলল,
“ইর্তেজা..ইর্তেজা ও চলে গেল।”
“শ্রাবণ তুমি শান্ত হও।”
“আবার চলে গেল। আমার সাগরিকা আমাকে ছেড়ে চলে গেল।”
“তুমি প্লিজ শান্ত হও তুমি এখন অসুস্থ বুঝতে পারছো না কেন?”
শ্রাবণ ইর্তেজাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। ইর্তেজা থমকে গেল। আজব এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হলো সে। শ্রাবণ কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“চলে গেল আমাকে ছেড়ে। আর ফিরবে না আমার কাছে। ঘৃণা করে আমায়। আমি পারলাম না ওর মনের মতো হতে। ওকে বলো চলে যাওয়ার আগে আমাকে নিজের হাতে মে*রে যেতে।”
ইর্তেজা শ্রাবণকে শান্ত করার চেষ্টায় লেগে গেল। মাহা শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে আছে। পাগলের মতো কাঁদছে শ্রাবণ। মাহা দৌড়ে বাহিরে গেল। এদিক সেদিক চোখ বুলালো। না, সাগরিকা নেই৷ সত্যি চলে গিয়েছে শ্রাবণকে ছেড়ে।

চলবে……..

#আর_একটিবার
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_২৫

সাঈদ চেয়ার লাগিয়ে খাটের পাশেই বসে মোবাইল টিপছে। আড়চোখে ইরিনাকে দেখে আবার মোবাইলের দিকে তাকাল। ইরিনা চুলে হাত খোঁপা করছে। সাঈদ গান ধরলো,
“কন্যা রে, কন্যা রে-
বাঁকা চুলেতে খোঁপা,
আর বাঁইধো না রে।
ঐ চুলেতে জাদু আছে রে,
আমার ঘুম আসেনা রাতে
একলা ঘরে রে।”
ইরিনা থেমে গেল। চোখ ঘুরিয়ে সাঈদকে দেখলো। সে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে গান গাইছে। ইরিনা আর খোঁপা করলো না। খোলা চুল রেখে খাটের সাথে হেলান দিলো। সাঈদ ইরিনার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি তো এইভাবেই গান গাইছিলাম। তুমি তো সিরিয়াস হয়ে গেলে।”
ইরিনা চোখ ছোটো ছোটো করলো। সাঈদ হেসে আবার বলল,
“সরি, দুষ্টুমি করছিলাম।”
“তোমার কি মনে হচ্ছে না আজ একটু বেশিই দুষ্টুমি করছো?”
“আব্বুকে প্রায়ই দেখি আম্মুর সাথে এমন দুষ্টুমি করে। শুনেছি এটা না-কি ভালোবাসা প্রকাশ করার নিয়ম।”
“ভালোবাসা প্রকাশ করার আরো অনেক নিয়ম আছে।”
“তুমি কিভাবে প্রকাশ করবে তোমার ভালোবাসা?”
“আমি ভালোবাসা টালোবাসা বুঝি না।”
সাঈদ হেসে উঠে গিয়ে ইরিনার পায়ের কাছে বসলো। ইরিনা তা দেখে চেষ্টা করছে পা সরানোর। কিন্তু পারছে না। সাঈদ ইরিনার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি তোমাকে ভালোবাসার আগে তোমার সম্মান করি। একবার নিজের মনের কথা বলে তো দেখো। কসম খেয়ে বলছি পুরো দুনিয়ার বিরুদ্ধে গিয়ে তোমার পাশে দাঁড়াব।”
ইরিনা তাকিয়ে রইল সাঈদের দিকে। সে কি বলবে এই ছেলেটাকে? পুরো দুনিয়ার আগে তো তার মা বাবা এই সম্পর্কের বিরুদ্ধে চলে যাবে। সাঈদ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোমার তো পা মালিশের সময় হয়েছে। আমি তেল গরম করে নিয়ে আসি।”
বলেই সাঈদ উঠে দাঁড়াল। ইরিনা থতমত খেয়ে বলল,
“লাগবে না, বসো চুপচাপ।”
“তুমি চুপচাপ বসো। ভবিষ্যতে আমাদের বিয়ে হলে আমারই তো করতে হবে এসব।”
“আর যদি না হয়?”
“আমি এমনটা ভাবছি না।”
বলেই সাঈদ ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে তেলের বোতল নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। ইরিনা বসে নখ কামড়াতে লাগলো। সাঈদের কান্ড দেখে তার মাথা কাজ করছে না। এই ছেলেটা বিপদ ডেকে আনবে তার মন বলছে।
.
.
ইর্তেজা মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। শ্রাবণকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়াতে হয়েছে। মাহা ইর্তেজার জন্য চা নিয়ে আসলো। ইর্তেজার পাশে বসতেই ইর্তেজা মাহার দিকে তাকাল। মেয়েটাকে দেখে তার ক্লান্তি কিছুটা দূর হলো। মাহা কাপ এগিয়ে দিলো ইর্তেজার দিকে। ইর্তেজা কাপ নিয়ে বলল,
“আমার কারণে তুমি কত কিছু সহ্য করছো।”
“তুমি আর আমি কি আলাদা? আমাদের দেহ আলাদা হলেও প্রাণ একই।”
“তুমি আর তোমার মুগ্ধকর ফিল্মি ডায়লগ। ঘায়াল হয়ে গেলাম।”
মাহা হেসে ইর্তেজার গালে হাত দিয়ে কপালে চুমু দিলো। ইর্তেজার ইচ্ছে করছে সব ভুলে মাহার বাহুডোরে কিছুক্ষণ আবদ্ধ হয়ে থাকতে। মাহা ইর্তেজা কপালে থাকা চুল গুলো ছুঁয়ে বলল,
“তুমি এত ভালো কেন ইর্তেজা? আমাকে সবাই জিজ্ঞেস করতো আমি কেন তোমাকেই বেছে নিয়েছিলাম নিজের জন্য। আমি জবাব দিতে পারতাম না। কারণটাই তো জানতাম না। আজ বুঝলাম কেন আমি তোমাকে ছাড়া আর কাওকে ভালোবাসতে পারি নি।”
ইর্তেজা মাহাকে ধরে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলল,
“তোমাকে ভালোবাসার শত কারণ আছে। জানো, তুমি না ফিরে আসলে আমি হয়তো এতদিনে সাগরিকাকে মন দিয়ে বসতাম।”
মাহা ভ্রু কুঁচকে সোজা হয়ে বসে ইর্তেজার দিকে তাকাল। ইর্তেজা জানতো মাহা এমনই রিয়্যাকশন দেবে। ইর্তেজা হেসে চায়ের কাপে চুমুক বসালো। মাহা ভ্রু কুঁচকে বলল,
“এর মানে কি?”
ইর্তেজা মাহাকে সব বলল। সাগরিকার প্রতি মায়া, তার প্রতি হঠাৎ করে ভালো লাগা কাজ করা মনে। কিছু বাদ রাখলো না। মাহা ভেংচি কেটে বলল,
“তোকেও সেই ছেলেদের কাতারে ফেলা দরকার।”
“এই! আমি বাজে মানুষ না কিন্তু। সাগরিকার প্রতি শুধু ভালো লাগা কাজ করে। তুমি তো আমার ভালোবাসা।”
“ওহো তাই? প্রমাণ দেখাও যে আমি ছাড়া আর কেও নেই তোমার মনে।”
“হসপিটালে আছি আমরা। তুমি বললে এখনই ডাক্তারকে ডেকে আমার হৃদয় অপারেশন করে বের করে দেখাই। আমার মনে শুধুমাত্র তোমার বসবাস।”
“হয়েছে হয়েছে, ফ্লপ মুভির সস্তা ডায়ালগ দিয়ে লাভ নেই।”
ইর্তেজা শব্দ করে হেসে উঠল।
.
.
সাগরিকা খাটের বসে হাঁটুতে মুখ গুঁজে রেখেছে। পুরো ঘর অন্ধকার৷ পুরো শরীর তার কাঁপছে। ভয় করছে খুব। তার জীবন এত কঠিন কেন হয়ে গেল বুঝতে পারছে না। সূর্য দরজার খুলে দেখে সাগরিকা এখনো বসে আছে আগের মতো। সূর্য এগিয়ে গেল। সাগরিকার পাশে বসতেই সাগরিকা চমকে মাথা তুলে তাকাল। সূর্যকে দেখে সাগরিকা লম্বা নিশ্বাস ফেলল।
“কি হয়েছে তোমার? এমন করছো কেন? খাবারও খাওনি এখনো।”
“ক্ষু..ক্ষুদা নেই”
“তুমি কি না খেয়ে নিজেকে মা*রার প্ল্যান করছো? আত্ম*হ*ত্যা করলে কি সব সমাধান হয়ে যাবে?”
“আ..আমাকে কি পাগ..পাগল কুকুর কামড়িয়েছে? আমি কেন আত..আত্ম*হ*ত্যা করবো?”
সূর্য সাগরিকার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,
“শ্রাবণ তোমাকে অনেক ভালোবাসে আমি জানি। কিন্তু আপু, তুমি ওর সাথে থাকতে পারবে না। তুমি মানসিক অশান্তিতে ভুগবে।”
“আমি জানি, তাই তো তাকে ছেড়ে চলে এসেছি।”
“শ্রাবণ সুস্থ হলে ওকে কোর্টে নিয়ে যাওয়া হবে। তার শা*স্তি খুব ভয়ংকর হতে পারে। তুমি নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করো। আমি চাই না আমার বোন তার শা*স্তির সম্পর্কে জানার পর ভেঙ্গে পরুক।”
“ফাঁ*সি হয়ে যাক। আমার কি? আমি আর ওর কথা ভাবছি না।”
“তাই? তাহলে তাকে ছেড়ে আসার পর থেকে নিজেকে বন্দী করে রেখেছো কেন?”
“তোর থেকে লুকাবো না। আমার সত্যি খুব কষ্ট হচ্ছে। বুঝতে পারছি না কিভাবে নিজেকে এই কষ্ট থেকে মুক্ত করবো। আত্ম*হ*ত্যা মহাপাপ না হলে এক মুহূর্তের জন্যও ভাবতাম না।”
“আপু, আমার জন্য হলেও তোমাকে বাঁচতে হবে।”
সাগরিকা সূর্যের দিকে তাকাল। এই মানুষটা ছাড়া আর কেও নেই এখন তার জীবনে। ছোটো ভাইকে নিজের সন্তানের মতো বড়ো করেছে। নিজে ভেঙ্গে পরলে ওকে কে সামলাবে। সাগরিকা চোখের পানি মুছে সূর্যের হাত ধরে বলল,
“আমার কিছু হবে না। আমার বেঁচে থাকার কারণ তো এখন শুধুমাত্র তুই।”
“তাহলে আমার কথা শোনো। কিছু খেয়ে নাও। ডাক্তার কিছু লিখে দিয়েছে কিনে নিয়ে এসেছি আমি। সেগুলোও তো খেতে হবে।”
সাগরিকা মাথা নাড়াল সূর্যের কথা শুনে। সূর্য মুচকি হেসে সাগরিকার হাতে চুমু দিয়ে বিছানা থেকে নেমে ঘর থেকে বের হলো। সাগরিকা ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে। এত কষ্ট সে আগে কখনো অনুভব করেনি। মনে হচ্ছে ম*রে গেলে এই কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে পারতো।
.
.
মাহা আর ইর্তেজা বাসায় ফিরে আসলো। বাহিরের দরজা খোলাই ছিল। ইর্তেজা ভ্রু কুঁচকে মাহার দিকে তাকিয়ে বলল,
“সাঈদ হয়তো চলে গিয়েছে। শা*লা দরজাটাও বন্ধ করেনি। আপু হয়তো একা ঘরে।”
“আচ্ছা তুমি শান্ত হও। ইন শাহ আল্লাহ আপু ঠিক আছে।”
মাহা আর ইর্তেজা ইরিনার ঘরে গেল। গিয়ে দুজনই থমকে গেল। ইরিনা খাটে ঘুমিয়ে আছে। আর সাঈদ মাটিতে বসে ইরিনার হাত মুঠোয় নিয়ে মুঠোর উপর গাল ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। দৃশ্যটা দেখে ইর্তেজার ভালো লাগলো না। মাহা ইর্তেজার দিকে তাকাল। ইর্তেজার চাহনি দেখেই মাহা আন্দাজ করতে লাগলো ইর্তেজার মনে কি চলছে৷ মাহা ইর্তেজার হাত ধরে টেনে বাহিরে নিয়ে গিয়ে বলল,
“কি হয়েছে তোমার? রাগ হচ্ছো কেন?”
“সাঈদ এভাবে আপুর হাত ধরে রেখেছে কেন?”
“আসো কল্পনা করি, আমি খুব অসুস্থ। তুমি সারাদিন আমার সেবা করলে। আমি শুয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পরলাম। তুমি চুপচাপ মাটিতে বসে আমার হাত ধরে আমার দিকে তাকিয়ে রইলে। তাকিয়ে থাকতে থাকতে তুমিও ঘুমিয়ে পরলে। হাও রোমান্টিক না?”
ইর্তেজা বিরক্ত হয়ে বলল,
“মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে তোমার? কি আজে বাজে বলছো বলো তো?”
“ইর্তেজা, একটা কথা বলার আছে তোমায়।”
“কি কথা?”
মাহা অপ্রস্তুত হলো। বলবে ইর্তেজাকে? এমনিতেই সে খুব টেনশনে আছে সাগরিকা আর শ্রাবণের বিষয় নিয়ে। মাহার ভাবসাব দেখে ইর্তেজা মাহার হাত ধরে বলল,
“আমাকে বিশ্বাস করিস তো?”
মাহা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। ইর্তেজা মুচকি হেসে মাহার কপাল ছোঁয়া চুল সরিয়ে বলল,
“তাহলে বলে ফেল যা বলতে চাচ্ছিস।”
“আগে ওয়াদা কর, শোনার পর বাজে ব্যবহার করবি না সাঈদ ভাইয়ার সাথে।”
“মাহা, বলবি কি না?”
“বলছি বলছি, আসলে.. আসলে ইর্তেজা, সাঈদ ভাইয়া আর আপু একে অপরকে ভালোবাসে।”
এক নিশ্বাসে কথাটা বলে মাহা লম্বা নিশ্বাস ফেলল। মাহার কথা শুনে ইর্তেজার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল। কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বলল,
“তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে? সাঈদ আপুকে নিজের বড়ো বোনের নজরে দেখে।”
“আস্তাগফিরুল্লাহ্ বল, দুজন ভালোবাসার মানুষকে তুই ভাই বোন বানাচ্ছিস।”
“মাহা দেখ, আমি জানি তুই মজা করছিস। কিন্তু আমার মোটেও ভালো লাগছে না।”
“আমাকে দেখে কি পাগল মনে হয় তোর? আমি এই বিষয় নিয়ে মজা করবো কেন?”
“আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।”
তখনই দরজার পাশ থেকে সাঈদের কন্ঠ ভেসে আসলো,
“এটাই সত্যি ইর্তেজা”
ইর্তেজা আর মাহা দরজার দিকে তাকাল। সাঈদ ইরিনার ঘর থেকে ধীরপায়ে বের হয়ো এসে ইর্তেজার সামনে দাঁড়াল। ইর্তেজার রাগ হচ্ছে খুব। সে এই বিষয়টা ভালো নজরে দেখতে পারছে না। সাঈদ মাহার দিকে তাকিয়ে বলল,
“মাহা যা বলছে সব সত্যি। আমি সত্যি উনাকে খুব ভালোবাসি।”
বলেই সাঈদ ইর্তেজার দিকে তাকাল। ইর্তেজা রাগে গজগজ করছে। সাঈদ ইর্তেজার চেহারা দেখে মাথা নিচু করে বলল,
“তোর বন্ধুত্ব হারানোর ভয়ে বলি নি তোকে।”
ইর্তেজা কিছুটা শান্ত হলো। তবুও তার ভালো লাগছে না। সাঈদ ইর্তেজার দিকে আবার তাকাল। ইর্তেজা বলল,
“আপু তোর বন্ধুর বড়ো বোন। এটা জানার পরও কেন?”
সাঈদ জবাব দিতে পারছে না। মাহা এক মাঝে বলল,
“ইর্তেজা, ভালোবাসা অনুভূতির উপর রাজত্ব চালানো যায়? তুমি কি ইচ্ছে করে আমাকে ভালোবেসেছো? ভালোবাসা তো হঠাৎ করেই হয়ে যায়।”
ইর্তেজা মাহার দিকে তাকিয়ে আছে রাগে চিল্লিয়ে বলল,
“তাই বলে কি নিজের বন্ধুর বড়ো বোনকে ভালোবেসে বসবে?”
হঠাৎ চিৎকার শুনে ইরিনার ঘুম ভেঙ্গে গেল। ধরফরিয়ে উঠে বসলো সে। বাহিরে কি হচ্ছে বুঝতে পারছে না। সে ইর্তেজাকে ডাকলো। ইরিনার ডাক শুনে ইর্তেজা একবার রাগী দৃষ্টিতে সাঈদকে দেখে ঘরে গেল। মাহা সাঈদকে বলল,
“চিন্তা করবেন না। হঠাৎ শুনেছে তো তাই তার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। আপুও আপনাকে ভালোবাসে এটা জানার পর ঠিক রাজি হয়ে যাবে।”
সাঈদ মাথা নিচু করে ফেলল। মাহাও গেল ইর্তেজার পেছন। ইরিনাকে দেখে ইর্তেজা শান্ত হওয়ার চেষ্টা করলো৷ মাহাও আসলো। ইর্তেজা আর মাহাকে দেখে ইরিনা বলল,
“তোরা ঝগড়া করছিলি? মাহা, কিছু বলেছে ও তোমায়?”
মাহা কি বলবে বুঝতে পারছে না। ইর্তেজা কিছু কদম এগিয়ে গিয়ে বলল,
“আপু একটা কথা জিজ্ঞেস করি তোমায়?”
“হ্যাঁ কর”
“তুমি সাঈদকে ভালোবাসো?”
হঠাৎ এই প্রশ্ন শুনে ইরিনার মাথা শূন্য হয়ে গেল। ওড়না চেপে ধরে মাথা নিচু করে ফেলল। অস্থিরতা হচ্ছে ভেতরে। ইর্তেজা এগিয়ে গিয়ে ইরিনার পাশে বসে বলল,
“আপু, সত্যি বলো আমায়।”
ইরিনা মাথা তুলে ইর্তেজার দিকে তাকাল। কিছু বলতে পারছে না। কেও যেন গলা চেপে ধরে রেখেছে৷ সাঈদ আসলো ভেতরে। সাঈদকে দেখে ইরিনা আরো এলোমেলো হয়ে গেল। কি বলবে সে এখন? ইর্তেজা আবার বলল,
“আপু তুমি বলছো না কেন?”
ইরিনা ইর্তেজার দিকে তাকিয়ে বলল,
“সাঈদ আমার ছোটো ভাইয়ের বন্ধু আমি কিভাবে ওকে ভালোবাসতে পারি?”
সাঈদ হাতমুঠো শক্ত করে মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। মাহা অবাক হয়ে গেল ইরিনার কথা শুনে। ইর্তেজা দাঁড়িয়ে মাহার দিকে তাকিয়ে বলল,
“মিথ্যে বললি কেন তুই আমায়?”
মাহা ইরিনার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপু আপনি সত্যিটা কেন লুকাচ্ছেন?”
“চুপ থাক মাহা। আমার বোন আমাকে কখনো মিথ্যে কথা বলে না।”
বলেই সাঈদের দিকে তাকাল। সাঈদ মুখ ঘুরিয়ে ইর্তেজাকে দেখে আবার ইরিনার দিকে তাকাল। ইরিনা সাঈদের চাহনি দেখে মাথা নিচু করে ফেলল। সাঈদ লম্বা নিশ্বাস ফেলে ঘর থেকে বের হতে নিলো। ইর্তেজা গিয়ে সাঈদের পথ আটকে বলল,
“কোথায় যাচ্ছিস তুই?”
সাঈদ মাথা নিচু রেখেই বলল,
“চলে যাচ্ছি”
“তোর সাহস কি করে হলো আমার বোনের দিকে নজর দেয়ার?”
ইর্তেজার রাগ দেখে ইরিনার বুক কাঁপছে। ঠিক এই ভয়ের কারণেই সে ইর্তেজাকে আগে বলেনি। সাঈদ বলল,
“মাফ করে দিস। ওয়াদা করছি আর কখনো এই বাসায় আসবো না।”
ইর্তেজা সাঈদের কলার ধরে বলল,
“তোর জান টেনে নিয়ে নেবো আবার আমার চোখের সামনে আসলে।”
ইর্তেজার চিৎকার করে ইরিনা বলল,
“ইর্তেজা ছাড় সাঈদকে।”
“আপু থামাবে না খবরদার। ওর সাহস কি করে হলো তোমার দিকে বাজে নজরে দেখার?”
“বাজে নজর? সাঈদ কখনো আমাকে বাজে নজরে দেখেনি ইর্তেজা। সে তো সবসময় আমাকে সম্মান করেছে। আমরা অনেক সময় একা ঘরে বসে আলাপ করেছি। সবসময় মাথা নিচু করে আমার সাথে কথা বলতো।” তোর পর যদি আমি সবচেয়ে বেশি কাওকে বিশ্বাস করতে পারি সে হলো সাঈদ।”
ইর্তেজা সাঈদের কলার ছেড়ে বলল,
“আমাকে কি নিজের শত্রু মনে করো তুমি? আর তোমার কি মনে হয় আমি বুঝতে পারি না আমার বোন আমাকে সত্যি বলছে না-কি মিথ্যে?”
মাহা আর সাঈদ অবাক হয়ে ইর্তেজার দিকে তাকাল। ইরিনা কিছুই বুঝতে পারছে না। ইর্তেজা সাঈদের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ছোটোবেলা থেকে সাঈদকে চিনি। ও তোমাকে কেন, কোনো মেয়েকেই বাজে নজরে দেখতে পারে না।”
সাঈদের গলায় কান্না আটকে গেল। ইর্তেজা ইরিনার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমাদের মা বাবা নেই। একে অপরের সাথেই নিজের সুখদুঃখ শেয়ার করতে হয়। আমি সবসময় আমার মনের কথা তোমাকে বলেছি। তোমার মনের কথা আমাকে কেন বলো নি আপু? আমি কি তোমার ভাই না।”
ইরিনা মাথা নিচু করে কেঁদে উঠল। ইর্তেজা গিয়ে ইরিনার পাশে বসে বলল,
“সরি সরি অতিরিক্ত ইমোশনাল স্পিচ দেয়ার জন্য। আচ্ছা এখন কান্না বন্ধ করো, নাহলে আমিও কান্না করে দেবো।”
ইরিনা মাথা তুলে ইর্তেজার কান ধরে টেনে বলল
“অসভ্য কোথাকার। তোর কারণে কান্না করতে হলো আমার।”
“আউচ! আপু ব্যাথা পাচ্ছি।”
ইরিনা ছেড়ে দিলো। ইর্তেজা কান ডলতেদ ডলতে বলল,
“আমি জানতাম আমি হাজারবার জিজ্ঞেস করলেও তুমি সত্যিটা বলতে না। তাই ছোট্টখাট্টো ফিল্ম করতে হলো।”
বলেই ইর্তেজা সাঈদের দিকে তাকাল। সাঈদ ধীরপায়ে হেটে এসে ইর্তেজার সামনে দাঁড়াল। ইর্তেজার কলার ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে বলল,
“শা*লা তোর লজ্জা করে না হবু দুলাভাইয়ের কলার ধরতে?”
ইর্তেজা সাঈদের গালে আস্তে করে চড় মে*রে বলল,
“কি বললি আবার বল।”
সাঈদ হা হয়ে গেল ইর্তেজার কান্ড দেখে। ইর্তেজা হেসে বলল,
“এই থাপ্পড়টা তোকে সবসময় মনে করাবে তুই কার বোনকে বিয়ে করতে চলেছিস।”
সাঈদ হেসে ইর্তেজাকে জড়িয়ে ধরলো। ইরিনা মুগ্ধ হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। মাহা দ্রুত এসে ইরিনাকে জড়িয়ে ধরলো। ইরিনার লজ্জা লাগছে। সত্যি কি তার বিয়ে হবে সাঈদের সাথে? তার যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। সাঈদ ইর্তেজাকে ছেড়ে ইরিনার দিকে তাকাল। ইরিনা লজ্জায় চোখ ফিরিয়ে নিলো। মাহা চিন্তিত হয়ে বলল,
“ভাইয়া, আপনার আম্মু আব্বু?”
সবাই মাহার কথা শুনে সাঈদের দিকে তাকাল। সাঈদ সবার চাহনি দেখে বলল,
“উনাদের একমাত্র ছেলে আমি। আমি জানি উনারা মানবেন।”
ইরিনা বলল,
“তাহলে উনারা যত পর্যন্ত না মানবেন তুমি এই বাসায় আসবে না।”
“হোয়াট? এটা ঠিক না।”
ইর্তেজা বলল,
“কি ঠিক না? আমার বোন যা বলবে তোর তাই করতে হবে।”
সাঈদ মায়া মায়া চেহারা বানিয়ে ইরিনার দিকে তাকাল। ইরিনা হেসে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। সাঈদ লম্বা নিশ্বাস ফেলল।

————

সময় ঘনিয়ে যাচ্ছে নিজের মতো। শ্রাবণ এখন সুস্থ। সেদিন পর থেকে সাগরিকাকে একবারো দেখেনি। শরীর সুস্থ হলেও মন খুব অসুস্থ। একবার সাগরিকাকে দেখতে পেলে শান্তি অনুভব করতো। বাথরুম থেকে বেরিয়ে শ্রাবণ বিছানায় বসলো। ইর্তেজা ডাক্তারের সাথে কথা বলছে। ডাক্তার চলে যেতেই ইর্তেজা শ্রাবণের দিকে তাকাল। মানুষটা আর আগের মতো নেই। খুব চুপচাপ থাকে। ইর্তেজা শ্রাবণের কাছে এসে বলল,
“আজ শেষ চেকআপ হবে। তারপর তোমাকে ডিসচার্জ করে দিবে।”
“হুম থানায় নিয়ে যাবে।”
ইর্তেজা জবাব দিলো না। শ্রাবণ ইর্তেজার দিকে তাকাল। ইর্তেজা এই কয় মাস তার অনেক খেয়াল রেখেছে। শ্রাবণ দাঁড়িয়ে ইর্তেজার কাঁধে হাত রেখে বলল,
“তোমাকে যত ধন্যবাদ দেবো তত কম।”
“ধন্যবাদ দিয়ে আমাকে ছোটো করবেন না বস।”
শ্রাবণ ইর্তেজাকে জড়িয়ে ধরলো। শ্রাবণের চোখ গড়িয়ে পানি পরলো। ইর্তেজাকে ছেড়ে চোখ মুছে বলল,
“আমি যখন শুনেছিলাম তোমার ভালোবাসার মানুষটাকে ফিরে পেয়েছো ভেবেছিলাম তোমার বিয়ের সব ব্যবস্থা আমি করাবো। হয়তো আর সম্ভব না।”
ইর্তেজা এই কথার কি জবাব দেবে বুঝতে পারছে না। তখনই ডাক্তার এসে বলল শ্রাবণের চেকআপের সময় হয়েছে। ইর্তেজা বাহিরে যাওয়ার জন্য হাঁটা ধরলো। শ্রাবণের ডাকে ইর্তেজা থামলো। শ্রাবণ মুচকি হেসে বলল,
“আমাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার আমার সাথে দেখা করতে যাবে তো?”
ইর্তেজা জবাবে শুধু হাসলো।

চেকআপ, রিটেস্ট সব কমপ্লিট। শ্রাবণ পুরোপুরি সুস্থ। পুলিশের জিপ হসপিটালের বাহিরে দাঁড় করানো। শ্রাবণ বসে শার্টের বোতাম পরছে। ইর্তেজা চুপচাপ একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। শ্রাবণ তৈরী হয়ে দাঁড়াল। ইর্তেজাকে দেখে বলল,
“যদি সম্ভব হয় সাগরিকাকে মানিয়ে নিয়ে এসো। আমি একবার তাকে দেখতে চাই।”
ইর্তেজা মাথা নাড়াল। একজন পুলিশ এসে শ্রাবণের হাতে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে দিলো। শ্রাবণ তার হাতের দিকে তাকাল। সেদিন থেকেই সে নিজেকে প্রস্তুত রেখেছিল এই দিনটার জন্য। আজ সত্যি এসে পরলো দিনটা৷ কষ্ট হচ্ছে তার। তার শা*স্তি কি হতে পারে? আজীবন কারাদণ্ড না-কি ফাঁ*সি?

চলবে…….