আষাঢ়ে শ্রাবণের বর্ষণ পর্ব-২৯

0
2017

#আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ
#মাইশাতুল_মিহির

[পর্ব-২৯]

রজনীর শেষভাগে এক পলাশ বৃষ্টি শেষে প্রভাতের অন্তরিক্ষ এখন কোমল। সূর্যালোকের ঝলমলে রশ্মিতে ধরনী মুখরিত। ছোট ছোট পাখির কিচিরমিচির ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো দীবার। পিটপিট করে তাকাতেই বারান্দার এক ফালি সূর্যরশ্মি চোখে এসে পরলো। খুশিতে আমোদিত হয়ে আড়মোড় ভেঙ্গে শুয়া থেকে উঠে বসলো সে। পাশে তাকিয়ে দেখলো আবরার বিছানায় নেই। তার দেওয়া হুডিটা এক পাশে পরে আছে। ঘড়িতে দেখলো সময় আটটা দশ! সাড়ে আটটায় নাস্তা। শরিরটা গতকাল রাতের চেয়ে এখন অনেকটা সুস্থ। মনটাও ফুরফুরে। গতকাল রাতের কথা মনে পরতেই মুচকি হাসলো। বিছানা থেকে নেমে হুডিটা আলমারিতে রাখার জন্য আলমারির দরজা খুললো। পছন্দের জিনিস গুলো সবসময় নিদিষ্ট একটা ড্রয়ারে রাখে দীবা। হুডিটাও তার পছন্দের। তাই সেটা যত্নে রাখতে ড্রয়ার খুলে এক পাশে রাখলো। তখুনি ড্রয়ারের এক পাশে নজর গেলো তার। শ্যাওলা রঙ্গের একটা শার্ট। এই শার্টটা তার বাবার। বাবার স্মৃতি গুলো চোখের সামনে জ্বলজ্বলন্ত হয়ে উঠলো। বুকের ভেতরটা পাথরের ভারে আবারো চাপা পরলো। সকালটা সুন্দর, হাসিখুশি ভাবে শুরু হলেও বাবার প্রিয় শার্টটা চোখে পরতেই সব কিছু বিষাদগ্রস্ত হয়ে গেলো দীবার। চোখ হয়ে এলো ঝাপসা। কার্নিশ বেয়ে নোনাজলের বিন্দু কণা গড়িয়ে পরতে লাগলো আপনা-আপনি। নিঃশব্দে ড্রয়ার লাগিয়ে আলমারি বন্ধ করলো। ধীর পায়ে এগিয়ে এসে পড়ার টেবিলের একদম নিচের ড্রয়ারটা টেনে খুললো। ভিতর থেকে একটা ফটো এলবাম বের করেই ফ্লোরেই হাঁটু ভেঙ্গে বসলো দীবা। চোখের পানি মুছে এলবামের প্রথম পাতা উল্টালো। ভেসে উঠলো হাস্যউজ্জ্বল একটি ছোট পরিবারের ছবি। দীবার বাবা, রোহানা আর দীবা নিজে। ছবিটা অনেক বছর আগের। তখন দীবার বয়স মাত্র সাড়ে তিন ছিলো। পরের পৃষ্টা গুলো একের পর পাল্টাতে লাগলো দীবা। প্রতিটা পৃষ্টায় পরিবারের সবাই একত্রে কাটানো হাসিখুশি মুহূর্ত গুলো ফুটে উঠলো। প্রতিটা ছবিতে দীবা তার বাবাকে প্রাণোচ্ছল দেখে স্মিতি হাসলো। কি এমন ক্ষতি হতো যদি তার বাবা বেঁচে থাকতো? কান্না আটকানোর মতো সাধ্য তার নেই। এলবাম বুকে জড়িয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। হারিয়ে যাওয়া বাবার দুঃখে কেঁদে উঠা কান্নার ভড়াট শব্দ গুলো চার দেয়ালে বন্দি রইলো। তখুনি দরজা ধাক্কানোর শব্দ কানে আসলো দীবার। কান্না থামিয়ে নাক টেনে নিজেকে স্বাভাবিক করলো দীবা। ড্রয়ারে ফটো এলবাম টা রেখে উঠে দাঁড়ালো। দরজায় আবারো টোকা পরলো। এখন দরজার বাহির থেকে আবরারের কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো।

‘দীবা? দরজা লাগিয়েছো কেন? দীবা? ঠিক আছো তো?’

বারবার ডাক শুনে কিছুটা বিরক্তবোধ করলো দীবা। ওড়না দিয়ে মুখ মুছে দরজা খুলে দিলো। আড়ষ্টতার সঙ্গে আবরারের দিকে তাকালো। দীবার চেহারার এমতাবস্থা দেখে বিস্মিত হলো আবরার। হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো শুধু। লাল হয়ে যাওয়া চোখ দুটোতে এখনো পানির কণা চিকচিক করছে। নাকটা গাঢ় লাল হয়ে আছে। আবরার অনায়াসে বুঝে ফেললো দীবা এতোক্ষণ কেঁদেছে। কিন্তু কেন? শরির কি বেশি খারাপ লাগছে? এইসব ভেবে অস্থির হলো আবরারের মন। বিচলিত কন্ঠে দীবার গাল, কপাল ছুঁয়ে দিয়ে বলে উঠলো, ‘কি হয়েছে? শরির বেশি খারাপ লাগছে? কেঁদেছ কেন? ডক্টর দেখাবো?’

নিরবে আবরার হাত দুটো সরিয়ে দিলো দীবা। মলিন চেহারায় তাকিয়ে বলল, ‘কিছু হয়নি। আমার ভালো লাগছে।’

‘নাস্তার জন্য এসেছিলাম। নিচে গিয়ে খেতে পারবে নাকি এখানে নিয়ে আসবো?’

আবরারের কথা গুলো এই মুহূর্তে দীবার অতিরিক্ত ন্যাকামি লাগলো। বিরক্ত হয়ে অপ্রসন্ন চোখেমুখে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘আমাকে নিয়ে আপনার এতো না ভাবলেও চলবে। বিরক্ত করবেন না প্লিজ।’

আবরারকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মুখের উপরে দরজা টা লাগিয়ে দিলো দীবা। তার এমন প্রতিক্রিয়ায় আবরার স্তম্ভিত হয়ে গেলো। বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলো দরজার দিকে। হঠাৎ কি হলো মেয়েটার? কাল রাতেও তো ভালো ছিলো। তাহলে এখন এমন ব্যবহারের কারণ কি? রাগ হলো আবরারের। মুখের উপরে দরজা লাগিয়ে দেওয়ায় অপমানিত হলো সে। ইগো তে লাগলো তার। ‘বিরক্ত করবেন না প্লিজ!’ কথাটা বারবার কানে বাজতে লাগলো। আসলেই সে দীবাকে বিরক্ত করে? ক্রোধান্তিত হলো মন। চোয়াল শক্ত করে চলে গেলো রুমে। মনে মনে ভেবে নিলো দীবাকে আর কখনোই ডাকবে না সে। যতোক্ষণ না দীবা তার কাছে আসবে ততোক্ষণ সে দীবার কাছে যাবে না!
.

দরজাটা লাগিয়ে অপ্রসন্ন বিরূপ চেহারায় বিছানায় বসলো দীবা। দুই হাতে মুখ ঢেকে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলো। হঠাৎ-ই মন খারাপের মাঝে রাগ উঠলো কেন? মন খারাপের সময় নাকি মানুষের তার প্রিয় জনের প্রয়োজন পরে। আবরার তো তার প্রিয়জন। আবরারকে কাছে পেয়ে মন ভালো হবার কথা ছিল। কিন্তু উলটো রাগ হলো কেন সে? এবার নিজের উপর নিজেই বিরক্ত হলো দীবা। তখুনি মাথায় আসলো একটা কথা। মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দেওয়ায় রেগে গেলো নাকি লোকটা? নিজের এই অহেতুক এহেন কান্ডে বিরক্ত হয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালি ছুড়লো একটা। অতঃপর জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলে নিজেকে স্বাভাবিক করলো। দ্রুত পা চালিয়ে দরজার কাছে এসে দরজা খুলে বাহিরে তাকালো। আবরারকে দেখতে না পেয়ে নিজে নিজে বিড়বিড় করে বলল, ‘বাহ্ দীবা! দরজা লাগিয়ে দেবার পরেও তুই তাকে এখানেই এক্সপেক্ট করছিস? তুই কি আসলেই গাধা?’

তপ্ত শ্বাস ফেলে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। দ্রুত পা চালিয়ে ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে রিমির পাশের চেয়ার টেনে বসে পরলো। তাকে বসতে দেখেই রিমি সকলের অগোচরে দীবার কপালে এক হাতে রেখে ফিশফিশ কন্ঠে অস্থির হয়ে প্রশ্ন করলো, ‘ইয়ার শরির ঠিক আছে তো তোর?’

দীবা রিমির হাত নিজের কপাল থেকে সরিয়ে বললো, ‘আমি কি অসুস্থ নাকি আশ্চর্য।’

দীবার কপালে হাত রেখে শরিরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক বুঝলো রিমি। তাই দুশ্চিন্তা মুক্ত হলো সে। দুশ্চিন্তা গেলেও শ’য়’তা’নি কমলো না। দীবার বাহুতে নিজের বাহু ধাক্কা দিয়ে ভ্রুঁ জোড়া নাচিয়ে নাচিয়ে বলল, ‘রাতে রোমান্টিক কিছুমিছু হয়েছে তো? আমরা ফুফু ডাক শুনতে পাবো?’

রাগে গিজগিজ করতে করতে রিমির বাহুতে জোরে একখান চা’পড় বসিয়ে দিলো দীবা। কিড়মিড় করে বললো, ‘অ’সভ্য মাইয়া।’

চা’পড়টা জোরেই পরলো রিমির গায়ে। ব্যা’থায় আর্তনাদ করে উঠলো। টেবিলে উপস্থিত থাকা সকলের দৃষ্টি দুজনের দিকে নিবদ্ধ হলো। একইসঙ্গে সবার অদ্ভুত চাহনীতে হকচকিয়ে গেলো দীবা। রাইমা শাসনের ভঙ্গিতে কপাট রাগ দেখিয়ে বললো, ‘খাবার খাওয়ার সময়ও ঝ’গ’ড়া করছিস তোরা?’

আরিয়ান বললো, ‘ঝ’গ’ড়া এক পাশে রেখে খাবার খা। আজকের ব্রেকফাস্টের সব আইটেম দারুণ হয়েছে।’

দীবা রিমি কেউ প্রত্যুত্তর করলো না। তবে রিমি দীবার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো একবার। অর্থাৎ তাকে মা’রার কারণে দীবাকে পরে পস্তাতে হবে। তার এমন চাহনীতে পাত্তা দিলো না দীবা। নির্বিকার ভাবে খেতে লাগলো।

আয়েশা পানির জগ টেবিলের উপর রেখে কমলাকে ডাকলো, ‘আবরারকে ডাকো নি? খেতে আসলো না যে।’

কমলা প্রত্যুত্তরে জানালো, ‘হ্ ডাকি আইস্যি। ইতে বলে ন হাইবু। জ্বালাইতু মানা গইজ্যি। হোন হারণে গরম অই আছে ফানলার। তাই আর ন ডাকি।’ (হ্যাঁ ডেকে এসেছি। সে নাকি খাবে না। বিরক্ত করতে বারণ করেছে। হয়তো কোনো কারণে রেগে আছে প্রচুর। তাই আর দ্বিতীয়বার ডাকি নি।)

আবরারের নাম উঠতেই সজীব হলো দীবার মস্তিষ্ক। এতোক্ষণে খেয়ালে আসলো আবরার। আসলেই তো! লোকটা এলো না কেন? মনে পরলো কিছু সময় পূর্বের কথা। তখন আবরার দীবাকে নাস্তার জন্য ডাকতে এসেছিলো। নিচে না আসার সম্পূর্ণ কারণ ধরতে পেরে বিস্মিত হলো দীবা। এক হাত মাথায় চা’পড়ে হতাশা হলো বেশ। নিজেকে নিজেই শ’খানেক গালি দিলো। কেন সে তখন রাগ দেখালো? কেন তখন মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিলো? বিরক্তিতে দাঁতে দাঁত পিষে চুপচাপ বসে রইলো। কোনো মতে কয়েক লোকমা মুখে তুলে উঠে দাঁড়ালো। রান্না ঘরে চুপি গিয়ে দেখলো কমলা আর আয়েশা সেখানে কাজ করছে। দুই পাশে দুইজন। দীবা পানি খাবার ভান করে কমলার পাশে দাঁড়ালো। তারপর ফিশফিশ গলায় বললো, ‘দাদী? একটা প্লেটে খাবার সাজিয়ে দিয়েন তো।’

কমলা বিস্মিত হয়ে বলে উঠলো, ‘অবাজি! তুই ন টেবিলত বইস্যু! হানা ন হাও?’ (ওমা! তুমি না টেবিলে বসছিলা? খাবার খাও নাই?’)

দীবা ফিশফিশ করে বললেও কমলা কণ্ঠস্বর বড় করে বললো। আয়েশার কান পর্যন্ত পৌছালো। এই খাবার যে দীবার জন্য নয় সেটা কমলা না বুঝলেও আয়েশা অনায়াসে বুঝে গেলো। তাই কার জন্য জানতে চাইলো, ‘খাবার কার জন্য?’

দীবা ইতস্ততবোধ করতে লাগলো। প্রথমে বলতে না চাইলেও আয়েশার চোখ পাকানো দেখে সত্যি বলে দিলো। আমতা আমতা করে বললো, ‘আসলে উনার জন্য নিয়ে যেতে চাইছিলাম। আমার উপর রেগে আছে তাই নিচে আসে নি।’

দীবার প্রত্যুত্তর শুনে মুচকি হাসলো আয়েশা। কমলা প্লেট সাজিয়ে দিলে দীবা দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেলো রান্না ঘর থেকে। আয়েশা আমোদিত হয়ে হাসলো। মনে মনে দোয়া করলো যেন আবরার আর দীবার সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে যায়।
.
প্লেট হাতে হাঁটতে হাঁটতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো দীবা। কি ভয়ানক লজ্জায় পরেছিলো সে। ওই লোকের জন্য আর কি কি দেখতে হবে আল্লাহ জানে। ভাবতে ভাবতে আবরারের রুমের সামনে চলে আসলো দীবা। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ভাবলো। ডাক দিবে? কিন্তু কি বলে ডাকবে? ঠোঁট কামড়ালো প্রথমে। পরোক্ষনে ভাবলো স্যার ডেকে দিবে নাহয়। ভেবে চিন্তে হাত উঠালো নক করতে। দরজায় টোকা দিতে যাবে তখুনি রুমের দরজা খুললো আবরার। চোখাচোখি হলো দুজনের। দীবা মিষ্টি করে একটা মুচকি হাসি দিলো। কিন্তু আবরার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। দীবা ঠোঁটে হাসি রেখে বললো, ‘নাস্তা করতে আসেন নি কেন? আপনার জন্য নাস্তা নিয়ে এসেছি। ঝটপট খেয়ে নিন।’

প্রত্যুত্তর করলো না আবরার। নিরবে উপেক্ষা করে রুম থেকে বেরুলো। দীবা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আবরারকে দেখতে লাগলো। আবরার রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমের দরজাখানা বাহির থেকে লাগিয়ে দিলো। তারপর দীবার দিকে না তাকিয়েই নিচে যাবার জন্য পা বাড়ালো। হতভম্ব হয়ে গেলো দীবা। অবাক হয়ে আবরারের চলে যাবার দিকে তাকিয়ে রইলো। আবরার যে তার উপর রেগে আছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ঠোঁট উল্টালো দীবা। মন খারাপ হলো। ইশ! তখন কেন দরজা লাগিয়ে দিয়েছিলো সে? যদি না দরজা লাগাতো ; আবরার রাগ করতো না। নিজের উপর রাগ হলো প্রচুর। মন খারাপ নিয়ে প্লেটটা রান্না ঘরেই রেখে আসলো।

দীবা রান্না ঘরে প্লেট রেখে যাওয়ায় বিস্মিত হলো আয়েশা। মেয়েটার মন খারাপ, আর প্লেটের খাবার দেখে অনায়াসে বুঝে গেল যে আবরারের রাগ ভাঙ্গে নি। কি এমন হয়েছে দুজনের মাঝে যে ছেলেটা এতো রেগে আছে? চিন্তিত হলেও পরে হেসে ফেললো। সম্পর্কের মাঝে ভালোবাসা খুনসুটি না থাকতে সম্পর্ক প্রগাঢ় হয় না। স্বামি স্ত্রীর ব্যাপার। ওরাই মিটমাট করে নিবে নাহয়।
________________

দিবার শেষ প্রহরে অম্বর ঘন কালো মেঘে আচ্ছন্ন। থোকায় থোকায় মেঘেদের আনাগোনা চলছে। প্রভঞ্জনের বেগ জানান দিচ্ছে আজকের পরিবেশটা সবচেয়ে সুশ্রী। তবে মন ভালো থাকার পারিপার্শ্বিক অবস্থায় ভালোবাসার মানুষটা যদি অভিমান করে থাকে তাহলে মন কি করে প্রফুল্লিত হতে পারে? যেমনটা দীবার। মনটা তার ব্যাকুল হয়ে আছে। পুরোটা দিন আবরারের অপেক্ষায় ছিলো দীবা। সকালে অনাহারে বেরিয়েছে লোকটা। বিকেল গড়িয়ে রাত হলো। কিন্তু এখনো বাড়ি ফিরে নি। ভেবে ভেবেই মহা চিন্তিত দীবা। সন্ধ্যার পর আড্ডা জমেছে লিভিং রুমে। কিন্তু এই আড্ডায় মনোযোগ দিতে পারছে না সে। আবরারের চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে মন। বারবার চোখ দুটো সদর দরজার দিকে চলে যাচ্ছে। মন বলছে এই বুঝি আবরার আসছে। কিন্তু তাকে আশাহত করে দিয়ে আবরার এখনো ফিরে নি।

দীবার এই দুটানা, অস্বস্তি দেখে রাইমা জিজ্ঞেস করে বসলো, ‘কিরে দীবা? আজ এতো চুপচাপ কেন তুই? কিছু হয়েছে কি?’

রাইমার এমন উদ্ভট কথা শুনে সবাই দীবার দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকালো। সবার এমন চাহনীতে কিছুটা বিব্রতবোধ করলো দীবা। কোনো রকমে প্রত্যুত্তর করলো, ‘এমনি! কিছু হয়নি।’

দীবার কথায় এতোটাও গুরুত্ব দেয় নি কেউ। বিশ্বাস করলো সবাই। যে যার মতো আড্ডায় আবারো মশগুল হলো। দীবা প্রথমের ন্যায় বারবার দরজার দিকে তাকাতে লাগলো। বেশ কিছুসময় পর আগমন ঘটলো আবরারের। পকেটে এক হাত রেখে অপর হাতে মোবাইল টিপতে টিপতে সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করলো আবরার। তাকে দেখে দীবার অস্থির মন কিছুটা শান্ত হলেও স্বস্তি পেলো না। আগ্রহাতিশয় চেহারায় তাকিয়ে রইলো আবরারের দিকে।

আবরারকে আসতে দেখে আরিয়ান ডেকে উঠলো, ‘হ্যালো ব্রাদার? কোথায় ছিলে এতোক্ষণ? এদিকে আসো। আড্ডায় জয়েন করো।’

আরিয়ানের ডাক কর্ণপাত হতেই সিঁড়ি অব্ধি গিয়েও দাঁড়িয়ে পরলো আবরার। পিছু ফিরে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘আমার কারণে তো মানুষ বিরক্তবোধ করে। এখানে থাকলেও করবে। তোরা-ই আড্ডা দে। আমি গেলাম।’

বলেই নির্বিকার ভাবে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো। আবরারের এমন প্রত্যুত্তর শুনে তব্দা খেলো সবাই। কেউ না বুঝলেও দীবা ঠিকই বুঝতে পেরেছে। খোঁচাটা মূলত তাকেই দিয়েছে আবরার। লোকটা যে তার উপরেই রেগে আছে এটা শতভাগ নিশ্চিত হলো দীবা। দীর্ঘশ্বাস ফেললো নিরবে। আরো কিছুসময় বসে থেকে নিজেও উঠে উপরে চলে আসলো।

চলমান..