আড়ালে আবডালে পর্ব-২২+২৩

0
4446

#আড়ালে_আবডালে
#পর্ব_২২
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
___________________

“এত ভয়ংকরভাবে আপনি কেন ভালোবাসেন?”
“এত ভয়ংকরভাবে আপনি কেন মায়ায় ফেলেছেন?” নিহির প্রশ্নের বদলে পাল্টা প্রশ্ন করে আমান।
নিহির কাছে এই প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। একটা মানুষ কীভাবে ভয়ংকর রকম ভালোবাসতে পারে তা নিহির জানা নেই। কেন এরকমভাবে মায়ায় জড়িয়ে পড়েছে সেটাও নিহির জানা নেই। তাই অগত্যা নিহি নিশ্চুপ থাকে। আমান নিহির হাতে মেহেদী দিয়ে দেয়। হাতের এক সাইডে ছোট করে নিজের নামের অক্ষর লিখে দেয়। নিহি দেখেও কিছু বলে না। আমান বলে,
“এই মেহেদীর সঙ্গে নামের অক্ষরও যখন মুছে যাবে, তখন কি আপনিও আমায় আপনার মন থেকে মুছে ফেলবেন?”
“আমি চাইলেও কি পারব?”
“হয়তো পারবেন।”
“আপনি যা ভাবেন।”

আমানের ভীষণ রকম কষ্ট হচ্ছে এই বিরহ মেনে নিতে। তবুও সে সইবে। ভালোবাসার জন্য মানুষ কতকিছুই না করে? আর এ-তো ক্ষণিকের বিরহ মাত্র। যত দূরেই যাক, মন থেকে কখনো দূরে যেতে পারবে না।

দুই হাতেই মেহেদী পড়িয়ে দেয় আমান। নিহি শীতে কিঞ্চিৎ কেঁপেছে, আমান আড়চোখে খেয়াল করেছে। শালটা সুন্দর করে নিহির গায়ে জড়িয়ে দিয়ে দু’হাতে ফুঁ দেয়। নিহি হাসে। জিজ্ঞেস করে,
“ফুঁ দিচ্ছেন কেন?”
“মেহেদী শুকানোর জন্য।”
“শুকাবে?”
“কিছুটা।”

নিহি চুপ করে থাকে। আমান নিহির হাতে ফুঁ দেয়। টুকটুকি আর আবুল ঘরে আসে। টুকটুকি অবাক হয়ে বলে,
“ওমা! আপাজান কী সুন্দর কইরা মেন্দী দিছে।”
নিহি বলে,
“তোমাদের ভাইজান দিয়ে দিয়েছে। আমি এত সুন্দর করে দিতে পারি না।”
টুকটুকি আরো অবাক হয়। সঙ্গে আবুলও। টুকটুকি বলে,
“আল্লাহ্ গো! ভাইজান মেন্দীও দিয়া দিতে পারে?”
“ও ভাইজান, আমারেও শিখাইবেন? বিয়ার পর আমিও বউরে দিয়া দিমু।” বলে আবুল।

আমান মুচকি হেসে বলে,
“যখন বউয়ের প্রেমে পড়বি তখন আর শিখিয়ে দেওয়া লাগবে না।”
আবুল লজ্জায় পায়। নিহি আবুল আর টুকটুকিকে বলে,
“আমাকে একটা গল্প শোনাও তো দুজনে।”
আবুল মাথা চুলকে বলে,
“আপামুনি ছুডুবেলায় মা গল্প হুনাইতো। কিন্তু আমার তো মনে নাই। মনে থাকলে আপনেরে হুনাইতাম।”
“তাহলে তুমি শোনাও।” নিহি টুকটুকিকে বলে।
টুকটুকি এক গাল হেসে বলে,
“আমি একটু একটু পারতাম। কিন্তু মনে নাই কা আপাজান।”

নিহি হতাশ হয়ে বলে,
“তাহলে এখন কী নিয়ে গল্প করব? কাল তো চলেই যাব।”
“চইলা যাইবেন মানে?” আবুল আর টুকটুকি দুজনই অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।
আমান ব্যথিতস্বরে বলে,
“আজই তো চলে যেত রে। আমি বললাম বলেই তো আজ আছে। তোদের আপা খুব স্বার্থপর।”
নিহি মায়াময় দৃষ্টিতে আমানের মুখেরপানে তাকায়। আবুল আর টুকটুকি কাঁদো কাঁদো হয়ে নিহিকে যেতে বারণ করে। নিহি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে নিজাম ইসলামের কথা বলে। বিয়ের শুরু থেকে সবটা ওদের বলে। এতকিছুর পরও বাবা মেনে নিয়েছে। একটা সুযোগ দিয়েছে। এই সুযোগ নিহি কিছুতেই হাতছাড়া করবে না। করতে পারবে না। তাই নিহিকে যেতেই হবে। সবার মন ব্যথিত হয়। আবুল আর টুকটুকি ঘুমের বাহানা দিয়ে চলে যায়। নিহি আবুলকে গেস্ট রুমে আর টুকটুকিকে নিহির রুমে ঘুমাতে বলে। নিহি ওয়াশরুমে গিয়ে হাত ধুয়ে আসে। মেহেদী শুকাতে অনেক সময় লেগে যাবে। গরম হলে অবশ্য এত সময় লাগত না। হাত ধুয়ে এসে নিহি হাত দুটো আমানের সামনে রেখে বলে,
“রং সুন্দর হয়েছে না?”
“সুন্দর মানুষের হাতে মেহেদীর রং সুন্দর না হয়ে যাবে কোথায়?”
“আপনি সবসময় বেশি বেশি বলেন।”
“অথচ আরো বলা উচিত আমার।”
“হয়েছে। ঘুমাবেন না?”
“ঘুম তো কেড়েই নিয়েছেন।”
“সবসময় এমন করবেন না তো! ঘুমান। আমি যাচ্ছি।”

নিহি চলে যাওয়ার সময় আমান হাত টেনে ধরে। নিহি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। আমান অনুরোধেরস্বরে বলে,
“থেকে যান না!”
“সম্ভব না।”
“আজকের রাতটা।”
“মানে?”
“কিচ্ছু করব না।”
“আপনি কি বেশিই করছেন না? এমন বাচ্চাদের মতোন করছেন কেন?”
“প্লিজ!”
“কী?”
“আজ রাতটা আমার ঘরেই থাকুন।”
“হাত ছাড়ুন।”
“প্লিজ!” কাতর হয়ে বলে আমান।
“হাত না ছাড়লে ঘুমাব কীভাবে? নাকি ঘুমাতেও দিবেন না?”
আমান নিহির কথা বুঝতে পারে না। জিজ্ঞেস করে,
“মানে? থাকবেন?”
“থাকব।”
প্রাণখোলা হাসি দেয় আমান। নিহি বিছানা ঝেড়ে একপাশে শুয়ে পড়ে। আমান চেয়ারে বসে থাকে। কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে নিহি পিছনে ফিরে তাকায়। আমানকে চেয়ারে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে,
“ঘুমাবেন না?”
“আপনি ঘুমান। আমার ঘুম আসবে না। আর আসলেও পরে ড্রয়িংরুমের সোফায় নয়তো আবুলের সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ব।”
“তার কোনো দরকার হবে না। এখানেই শুয়ে পড়ুন।”
“উঁহু।”
“তাহলে কী করবেন? সারা রাত বসে বসে মশা মারবেন?”
“না। দেখব।”
“এ্যা?”
“এ্যা নয় হ্যাঁ। আপনাকে দেখব।”
“আমার অস্বস্তি লাগবে। ঘুম আসবে না।”
“তাহলে পাশে শোয়ার পারমিশন দিচ্ছেন?”
“দিচ্ছি।”
“লাইট?”
“অন থাকুক।”

মাঝখানে কোলবালিশ রেখে আমানও একপাশে শুয়ে পড়ে। একসময় নিহির চোখে ঘুম চলে আসলেও আমানের চোখে ঘুম ধরা দেয় না। কিছুক্ষণ এপাশ, ওপাশ করে বিছানায় বসে। উঁকি দিয়ে একবার নিহির মুখের দিকে তাকায়। তারপর বিছানা থেকে উঠে চেয়ার নিয়ে নিহির সামনে বসে। হঠাৎ মাথায় আসে নিহির ঘুমন্ত মুখের ছবি তোলার কথা। তাই ফোন দিয়ে ঝটপট নিহির কয়টা ছবি তুলে নেয়। তারপর একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। নিহির মুখের সামনে একটু ঝুঁকে আলতো করে নিহির কপালে একটা চুমু এঁকে দেয়। পরে নিজেই মুচকি মুচকি হাসে। এক সময় বসে থাকতে থাকতে দেয়ালের সঙ্গে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে নিজেও।
.
.
নিহি রেডি হচ্ছে যাওয়ার জন্য। আমান বসে আছে রেডি হয়ে। আমান, আবুল, টুকটুকি সবারই মন খারাপ। রেডি হয়ে সকালের নাস্তাও সবাই একসাথে করে। যাওয়ার সময়ে নিহি আবুল আর টুকটুকির হাত ধরে বলে,
“তোমাদের অনেক মিস করব। ঝগড়া করার জন্য হয়তো মাঝে মাঝে একটু বকেছি, এরজন্য তোমরা কিছু মনে কোরো না।”
টুকটুকি বলে,
“আমরা তো আপনের এই বকা সবসময়ই খাইতে চাই আপাজান। আপনে যাইয়েন না।”
আবুলও বলে,
“হ, আপামুনি থাইকা যান। এইহানেই কুনো কলেজে পড়েন।”
উত্তরে তখন নিহি বলে,
“আমি তো সবই বলেছি কাল। সম্ভব নয় আমার পক্ষে। শোনো,তোমাদের ভাইজানের খেয়াল রেখো কেমন। ঠিকমতো যেন খায়। আর তোমরাও ঠিকমতো খাবে। ঝগড়া করবে না একদম। মনে থাকবে?”

নিহির চোখে পানি চিকচিক করছে। এত অল্পসময়েই মানুষ দুটো এতো আপন হয়ে গেছে যে, ছেড়ে যেতেই খুব কষ্ট হচ্ছে। আবুল আর টুকটুকি বাচ্চাদের মতো করে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে। নিহিও আর কান্নাগুলোকে আটকে রাখতে পারে না। ওদের জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে। ওরা কেঁদে কেঁদে বলে,
“আমরা আপনের অপেক্ষায় থাকুম আপা। আপনে কিন্তু পরীক্ষা দিয়া চইলা আসবেন।”
নিহি দু’হাতে দুজনের পিঠে বুলিয়ে দেয়। আমান গাড়িতে অপেক্ষা করছে। ওদের থেকে বিদায় নিয়ে আপু আর দুলাভাইর থেকেও বিদায় নিয়ে নেয় নিহি। তারপর গাড়িতে গিয়ে বসে। আমান তাকাচ্ছে না নিহির দিকে। নিহি গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। সারাটা রাস্তাই দুজন চুপচাপ থাকে। একসময় দুজনেই পৌঁছে যায় গন্তব্যে। নিহি গাড়ি থেকে নেমে বলে,
“আসুন।”
“কোথায় যাব?” প্রশ্ন করে আমান।
“বাড়িতে।”
“না। প্রথমবার শ্বশুরবাড়িতে যাব তাও খালি হাতে? এই বাড়িতে সেদিনই প্রবেশ করব, যেদিন আপনাকে স্ব-সম্মানে ঢাকঢোল পিটিয়ে বউ করে নিজের বাড়িতে তুলব। আব্বু-আম্মুকে আমার সালাম দিয়েন। অফিসে গিয়ে আমি ফোন করে তাদের সঙ্গে কথা বলে নেব। আপনি ভালো থাকবেন। নিজের খেয়াল রাখবেন।”

একরকম অগোছালো কথা বলে এবং নিহিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চোখের পলকে গাড়ি নিয়ে উধাও হয়ে যায় আমান। যতক্ষণ দূর থেকে গাড়িটা দেখা যায়, ততক্ষণ নিহি দাঁড়িয়ে থাকে। গাড়িটা চোখের আড়াল হতেই নিরবে বেড়িয়ে আসে একটা দীর্ঘশ্বাস। অদ্ভুত মানুষ একটা! নিহি উপরে চলে যায়। দরজায় নক করতেই তমা দরজা খুলে দেয়। নিহিকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“কেমন আছো?”
“ভালো আছি ভাবি। তুমি কেমন আছো?”
“ভালো। আমান কোথায়?”
“আমায় বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেছে।”
“সেকি! ভেতরে আসতে বলোনি?”
“বলেছি। আসেনি।”
“কেন?”
“বলল খালি হাতে প্রথমবার শ্বশুরবাড়িতে আসবে না। ছাড়ো, আব্বু কোথায়?”
“ঘরে।”

নিহি নিজাম ইসলামের রুমে যান। তিনি ফোনে কারো সঙ্গে কথা বলছেন। নিহি গিয়ে বিছানার ওপর বসে। কথা শেষ করে নিজাম ইসলাম নিজেই বলেন,
“আমান ফোন দিয়েছিল।”
“ওহ্। কলেজে কবে যাবে টিসি আনতে?”
“আজই।”
“আচ্ছা। তাহলে রেডি হয়ে নাও।”
“তুই খেয়েছিস সকালে?”
“হ্যাঁ, খেয়েই এসেছি।”
“তাহলে আমি কাপড়টা পাল্টে নিচ্ছি।”
“আচ্ছা।”

নিহি তমার ঘরে চলে যায়। নীলম অফিসে চলে গেছে। তিতির ফোনে কার্টুন দেখছে। তিতিরকে কোলে নিয়ে নিহি বলে,
“স্কুলে যেতে হবে না?”
“আজ তো তুমি আসবে। তাই যাইনি।”
নিহি তিতিরের কোমরে সুড়সুড়ি দিয়ে বলে,
“ফাঁকিবাজি না?”
তিতির খিলখিল করে হাসে। তমা ঘরে এসে আলমারি থেকে দুটো খাম বের করে। খামটা এখন পরিচিত নিহির। এবার খুব রাগ লাগে। সঙ্গে বিরক্তও হয়। জিজ্ঞেস করে,
“আবারও?”
“হুম। কালকের আর আজকের চিঠি।”
“ধুর! তুমি আর নিও না এইসব চিঠি। কে না কে ফাইজলামি শুরু করেছে।”
“সাধে কি আর নিই? যদি বাবার হাতে পড়ে যায় কখনো? সেই ভয়েই তো নিই।”
“এরপর আর চিঠি দিতে আসলে তাকে বলে দেবে আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আমি আর এসব ফালতু টেনশন নিতে পারছি না।”
“তাহলে এই চিঠিগুলো কী করব?”
“রেখে দাও। পরে ইচ্ছে হলে পড়ব।”

ড্রয়িংরুম থেকে নিজাম ইসলাম ডাকেন। কলেজে যেতে হবে। নিহি তিতিরকে চুমু দিয়ে বাবার সঙ্গে কলেজে চলে যায়।
.
.
অফিসে মনমরা হয়ে বসে আছে আমান। কতগুলো ফাইল সামনে পড়ে আছে। একটাও চেক করতে ইচ্ছে করছে না। নিরব তিনবার এসেছে এর আগে। আমানকে একইভাবে বসে থাকতে দেখেছে। চতুর্থবারের মতো এসে প্রশ্নই করে ফেলে,
“কোনো সমস্যা স্যার?”
আমান দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে,
“ভালো লাগছে না নিরব।”
“কী হয়েছে স্যার? আমায় বলুন।”
“বলে আর কী হবে?”
“মন হালকা হবে।”
“নিহি চলে যাবে।”
“ম্যাম কোথায় চলে যাবে?”
“সিলেটে। পড়াশোনার জন্য।”
“তো ঢাকা থেকে সিলেটে কেন?”
“ওর বাবার ইচ্ছে।”
“ম্যাম যাবে?”
“অলরেডি চলেও গেছে।”
“সিলেট?”
“না। ওর বাবার বাসায়।”
“মন খারাপ করবেন না স্যার। আমি তো আপনাদের বিয়ের কথা কমবেশি সবই জানি। ম্যামের বাবা যখন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তখন কিছু না কিছু ভেবেই নিয়েছেন। পড়াশোনা শেষ করে তো আবার চলেই আসবে।”
“আসবে নাকি তাও বলেনি। তবুও অপেক্ষা করব আমি।”

নিরবের নিজেরও খুব খারাপ লাগে। নিহি আমানের জীবনে আসার পর থেকেই অফিসে এসে আমান ছটফট করত। বাসায় তাড়াতাড়ি যেত। নিরব জানে, আমান কতটা ভালোবাসে নিহিকে। তাই কষ্টটাও কিছু হলেও আন্দাজ করতে পারে।
.
কলেজের মাঠে হাঁটতে হাঁটতে নিহি বাবাকে প্রশ্ন করে,
“টিসি কি সঙ্গে সঙ্গেই দিয়ে দেবে?”
“হ্যাঁ। কাল আমি কলেজে ফোন করে বলেছি। তোর মামাকেও ফোন করেছি। উনি ওখানকার কলেজে তোর ভর্তির জন্য কথা বলে রেখেছেন।”
“তাহলে আমি কবে যাচ্ছি সিলেট?”
“কালই।”
“কালই!”
“হুম।”
“আচ্ছা আব্বু, আমি ফিরে এসে যদি তোমার কাছে কিছু চাই, তুমি আমায় দেবে?”
তিনি হেসে বলেন,
“এখনই চা। দেবো।”
“না, এখন নয়। আমি ফিরে এসেই চাইব। দেবে তো?”
“দেবো রে মা।”
“মনে থাকে যেন।”
“থাকবে।”

নিহি কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে অনলকে দেখেছে। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে। সাকিব সবার আগে নিহিকে দেখতে পায়। অনলের কাঁধে হাত রেখে বলে,
“দোস্ত! নিহি এসেছে।”
সবাই একসঙ্গে পিছনে তাকায়। নিহি একবার ওদের দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়। সরাসরি নিজাম ইসলামের সঙ্গে অফিস রুমে চলে যায়। মিলন বলে,
“কাহিনী কী দোস্ত? এতদিন পর কলেজে আসলো! তাও ক্লাসে না গিয়ে আবার অফিস রুমে।”
অনল বিরক্ত নিয়ে বলে,
“আমি কী জানি?”

নিজাম ইসলাম প্রিন্সিপ্যালের সঙ্গে কথা বলছেন। বাবার থেকে অনুমতি নিয়ে নিহি উপমা আর দীপ্তর সঙ্গে দেখা করতে যায়। এখন ক্লাস নিচ্ছেন অনামিকা ম্যাম। নিহিকে দেখে তিনি ভেতরে আসতে বলেন। নিহি ভেতরে যায়। ম্যামের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
“আমি কি সবার উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলতে পারি ম্যাম?”
“শিওর।”
ম্যাম সরে দাঁড়িয়ে নিহিকে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দেয়। নিহি মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলে,
“আসসালামু আলাইকুম। আশা করছি, তোমরা সবাই ভালো আছো। তোমাদের সঙ্গে আমার পরিচয়টা খুব বেশিদিনের না। এমন অনেক স্টুডেন্টও আছো, যাদের এখনো আমি চিনি না। তবে আমি ড্যাম শিওর, আমাকে সবাই চেনো। আর কেনো চেনো সেটাও সবাই জানো। হয়তো সবার পরিচিত মুখ আমি হতে পারতাম না। হয়েছি কার জন্য? কলেজের সব মেয়ের ক্রাশ, অনামিকা ম্যামের ছেলে অনলের জন্য। হ্যাঁ, অনেকের চোখেই হয়তো আমি খারাপ। তবে, আমি জানি আমি কেমন। তোমরাও অনেকে জানো আসল সত্যটা কী! যাই হোক, সত্য-মিথ্যা বা আমাকে জাজ করার আল্লাহ্-র পরে একমাত্র অধিকার আছে আমার পরিবারের। এখন যে যা খুশি ভাবতে পারো তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। যে কথা বলার জন্য সবার সামনে এসেছি তা হলো, আমি আজ কলেজে এসেছি টিসি নিতে। হ্যাঁ, তোমরা ঠিকই শুনেছ। আমি টিসি নিতেই এসেছি। তোমরা হয়তো ভাবছ,যেখানে এই কলেজে পড়ার জন্য হাজারও স্টুডেন্টস পাগল সেখানে আমি কেন স্বেচ্ছায় টিসি নিতে এসেছি? তার কারণ একটাই, এটা আমার মায়ের আদেশ। তোমাদের অনেকের সাথেই হয়তো খারাপ ব্যবহার করেছি। মনে কিছু নিও না তারা। ভুল করে থাকলে সকলের কাছেই আমি ক্ষমাপ্রার্থী। ভালো থেকো সবাই।”

উপমা আর দীপ্ত অবাক হয়ে এতক্ষণ নিহির কথা শুনছিল। নিহি মাইক্রোফোন রাখার পর অনামিকা ম্যাম প্রশ্ন করেন,
“টিসি না নিলে হয় না?”
“স্যরি ম্যাম।”
বেল বাজার শব্দ হয়। ম্যামের ক্লাশ শেষ। ম্যাম ক্লাসের সবাইকে অবাক করে দিয়ে নিহিকে জড়িয়ে ধরেন। পিঠে হাত বুলিয়ে বলেন,
“ভালো থেকো। নিজের ক্যারিয়ার গড়ো।”

ম্যাম ক্লাস থেকে চলে যান। তখন উপমা আর দীপ্ত হুড়মুড় করে নিহির কাছে আসে। নিহিকে টেনে বারান্দায় নিয়ে যায়। তখন নিজাম ইসলাম ফোন করেন। নিহি ওদের চুপ থাকতে বলে ফোন রিসিভ করে। নিহি বলে,
“বলো আব্বু।”
“কথা শেষ হয়নি?”
“তুমি বাইরে গিয়ে দাঁড়াও। আমি আসছি।”
“তাড়াতাড়ি আসিস।”
“আচ্ছা।”

ফোন রাখার পরই উপমা বাঘিনীর মতো ক্ষেপে যায়। শাসিয়ে শাসিয়ে বলে,
“এসব কী? তুই চলে যাবি মানে? আমাদের আগে তো বলিসনি?”
“মন খারাপ করবি, তাই বলিনি।”
“এখন কি আমাদের খুব খুশি লাগছে? তুই কোথাও যাবি না। আঙ্কেল কোথায়? আমি আঙ্কেলের সঙ্গে কথা বলব।”
“পাগলামি করিস না উপু।”
উপমা কোনো কথা শোনে না।দীপ্তকে নিয়ে নিচে নামে। পেছন পেছন নিহিও দৌঁড়ে আসে। মাঠের কাছে এসে দুজনের হাত ধরে বলে,
“প্লিজ! আব্বুকে বলে কোনো লাভ নেই। এই কলেজে থাকা আর সম্ভব নয় আমার। একটু বোঝার চেষ্টা কর।”
“কী বুঝব বলো? তোমাকে ছাড়া আমরা থাকব কীভাবে?” রাগ দেখিয়ে বলে দীপ্ত।
নিহি বলে,
“দূরে যাওয়া মানেই কি সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়া? আমাদের প্রতিদিন ফোনে কথা হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগাযোগ থাকবে। তারপর বন্ধ পেলে তো আমি ঢাকাতে আসব। তখন আমাদের দেখা হবে।”
“তুই ভুলে যাবি আমাদের।” কেঁদে কেঁদে বলে উপমা।
নিহি উপমাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“প্লিজ কাঁদিস না উপু! আমি আসব তো আবার।”

“আরে এখানে এত কান্নাকাটি হচ্ছে কেন?”
নিহি পাশে তাকিয়ে দেখে অনল। মুখ ফিরিয়ে নেয় তখনই। উপমা অনলকে দেখে আরো রেগে যায়। এইসব কিছুর জন্য তো অনলই দায়ী। উপমা নিহির হাত ধরে বলে,
“চল। কলেজ ছুটির পর তোর বাসায় যাব”
“কেমন আছো নিহি?” জিজ্ঞেস করে অনল।
নিহি নিশ্চুপ। অনল জিজ্ঞেস করে,
“কথা বলবে না?”
“আমি কেমন আছি তা জানা কি খুব জরুরী আপনার?”
“একদম না। এতদিন পর আসলে তাই জিজ্ঞেস করলাম। অসুস্থ ছিলে নাকি?”
“আপনার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না আমার।”
“তাহলে কী ইচ্ছে করছে?”
“আর কিছু বলবেন?”
“তেমনকিছুই বলার নেই। একটু খোঁজ-খবর নিতে আসলাম। চলো ক্যান্টিনে যাই। কফি খাই।”
“নো, থ্যাঙ্কস।”
অনল এবার হেসে হেসে বলে,
“কেন? পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে যায়?”
“আপনি এখনো শোধরাননি। তবে শোধরাবেন। খুব শীঘ্রই। সময় এসেছে বলে!”
“তাই? অপেক্ষায় রইলাম। আমাকে কেউ শোধরাতে পারেনি। আর সেখানে তুমি! হাহা হাসালে। তবে যাই বলো,তোমার এই তেজী তেজী কথা, রাগ, জেদ আমার ভীষণ ভালো লাগে। কারণ তুমিই তো একমাত্র মেয়ে যে আমায় থাপ্পড় মেরেছিলে। সেই হিসেবে, আমি অপেক্ষা তো করতেই পারি তাই না সুন্দরী?”
“আপনার অপেক্ষার প্রতিদান আমি অবশ্যই দেবো। থাপ্পড়টা এখনো মনে আছে তাহলে? এরপরের আঘাত হাতে নয়, ঠিক এই বুকে করব।” অনলের বুকে ধাক্কা দিয়ে বলে নিহি। অনল জায়গা থেকে নড়ে না তবে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। হালকা মৃদু বাতাসে অনলের কিছুটা চুল কপালে পড়ে। নিহি রহস্যহনকভাবে হাসে। অনলের মুখে ফুঁ দিয়ে বলে,
“জানেন তো, আল্লাহ্ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। আমি ফলাফলও পেয়েছি। এবার আপনার পাওয়ার অপেক্ষা। প্রতিদান তো দেবোই। বাই, বাই।”

উপমা আর দীপ্তর থেকে বিদায় নিয়ে নিহি কলেজ থেকে চলে যায়। অনল নিহির কথার মানে বুঝতে না পেরে তাকিয়ে থাকে। উপমা অনলকে বলে,
“নিহি একেবারের জন্য এই কলেজ থেকে চলে যাচ্ছে। আপনি খুশি তো এবার?”
অনলের উত্তরের জন্যও অপেক্ষা করে না উপমা। ক্লাসে চলে যায়।
__________________

সকাল নয়টা বাজে। বাস স্ট্যান্ডে এসে বসে আছে নিহি। রাতে ফোন করে বলেছে এখানে আসতে। আজই সিলেটে চলে যাবে। নয়টা বিশে নিহি বাস স্ট্যান্ডে আসে। নিহির সঙ্গে বাড়ির সবাই এসেছে। আমানকে দেখে নিহির মনটা খারাপ হয়ে যায়। মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে। এলোমেলো লাগছে খুব। তবুও মুখটায় কত মায়া। বাস ছাড়বে ৯:৩০-এ। আর মাত্র দশ মিনিট আছে। নিহির সঙ্গে সিলেটে যাবে ওর বাবা আর ভাই। ব্যাগ নিয়ে ওরা বাসে ওঠে। নিহি আমানের কাছে যায়। আমানের চোখের কোণে পানি। কতকিছু বলার আকুতি! নিহি জিজ্ঞেস করে,
“মন খারাপ?”
“নাহ্! ঠিক আছি আমি।”
নিহি সাদা ওড়নার আড়াল থেকে একটা মেহেদী বের করে। আমান প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকায়। নিহি বলে,
“মেহেদী নিয়ে যাচ্ছি। আপনার নামের অক্ষরটা আমি মুছতে দেবো না।”

আমান নিষ্পলকভাবে তাকিয়ে থাকে। কিছু বলতেও পারছে না। জবান আটকে গেছে যেন! নিহি বলে,
“আমার একটা কথা রাখবেন?”
“হুম।”
নিহি ডান হাত সামনে বাড়িয়ে বলে,
“যতদিন না আমি কাউকে আমাদের বিয়ের কথা জানাতে বলব, আপনি ততদিন কাউকে জানাবেন না। অথবা, আপনি চাইলে জানাতে পারেন। কিন্তু কাউকে আমার নাম বলবেন না। আমার ছবিও দেখাবেন না। এমনকি আপনার পরিবারের কাউকেও না।”
“কিন্তু কেন?”
“কথা দিন আপনি। সময় নেই। বাস ছেড়ে দিবে।”
আমান নিহির হাতে হাত রেখে বলে,
“কথা দিলাম।”
নিহির ঠোঁটে হাসি ফুঁটে ওঠে। সবাইকে উপেক্ষা করে এবং আমানকে অবাক করে দিয়ে পা দুটো একটু উঁচু করে আমানের দু’গালে হাত রাখে। আমানের মাথাটা কিঞ্চিৎ নিচু করে কপালে চুমু এঁকে দেয়। আমানের পুরো শরীর যেন বরফের মতো জমে গেল। নিহি মুচকি মুচকি হেসে বলে,
“কালকে রাতের চুমুটা ফিরিয়ে দিলাম।”
“তার মানে কাল রাতে…”
“রাতে তখনো ঘুমাইনি আমি। আসছি।”

দু’পা এগিয়ে গিয়ে আবার পিছু ফিরে তাকায়। আমানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
“নিজের খেয়াল রাখবেন প্লিজ। দৃষ্টির দূরত্বই বড় দূরত্ব নয়। মনের দূরত্ব না হলেই হয়। আমি থেকে যাব আড়ালে-আবডালে।”

চলবে…

#আড়ালে_আবডালে
#পর্ব_২৩
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
___________________

নিহির চলে যাওয়া দেখছে আমান। বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। না কিছু বলতে পারছে আর না কিছু উপলব্ধি করতে পারছে। শুধু মনের মাঝে গেঁথে আছে নিহির ভালোবাসার পরশ। নিহি জানালার পাশে বসেছে। বাস ছাড়ার মুহুর্তে হাত নাড়িয়ে বাড়ির সবাই ও আমানকে টাটা দেয়। আমান যেন ঘোর থেকে বেরই হতে পারছে না। তিতির দৌঁড়ে আমানের কাছে যায়। আমানের হাত টেনে বলে,
“এই তুমি আমার পঁচা ছেলে। ফুপি টাটা দিচ্ছে। তুমি দিচ্ছ না কেন?”

আমানের হুশ ফিরে। বাস অনেক দূর এগিয়ে গেছে। নিহি জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে তাকিয়ে আছে। আমান এবার হাত নাড়িয়ে বিদায় দেয়। চোখের পলকে আস্তে আস্তে করে বাসটি দৃষ্টির বাইরে চলে যায়। নিহি সিটের সাথে হেলান দিয়ে বসে। নিজাম ইসলামের দিকে তাকিয়ে দেখে পত্রিকা পড়ছেন। মানুষটা পারেও বটে! বাসেও পত্রিকা নিয়ে এসেছে। নিহি হাসে। বাবার ডান হাত জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রাখে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। একটার পর একটা বাড়ি-ঘর, দোকান, গাছপালাকে পেছনে ফেলে বাসটি এগিয়ে চলেছে। ছোটবেলার একটা মজার ঘটনা মনে পড়ে গেল। ছোট থাকতে যখন বাসে করে কোথাও যেতাম, তখন আমি ভাবতাম গাছগুলোও বাসের সঙ্গে সঙ্গে যাচ্ছে। তখন এত ভেবেও এটা বুঝতে পারতাম না যে, গাছ হাঁটে কীভাবে? গাছের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে তখন তো হাঁটে না, দৌঁড়ায় না। তাহলে শুধু বাসের সঙ্গেই দৌঁড়ায় কেন? ছোট মাথায় এই প্রশ্নের উত্তর কখনোই আসেনি। বিষয়টি মাথা থেকেও বের করতে পারতাম না। তখন একদিন আব্বুর কাছেই জিজ্ঞেস করে ফেললাম। আব্বু পুরো বিষয়টি আমায় সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলেও আমার বাচ্চা মন সেই ব্যাখা মানতে চায়নি।

“জানালাটা লাগিয়ে দে। বাতাস আসছে।”

নিজামের ইসলামের কথায় ছোটবেলার অতীত থেকে বের হয়ে আসে নিহি। তবে চোখে-মুখে এখনো হাসি বিদ্যমান। নিহি জানালা লাগায় না। বাতাস আসায় একটু শীতটা বেশিই লাগছে এটা সত্যি। তবে ভালো লাগছে। অতীতের স্মৃতিচারণ করায় বোধ হয় ভালোলাগা তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাসের একসঙ্গে তিন সিট যে থাকে সেই সিটেই ওরা বসেছে। কিনারে বসেছে নীলম। সিটের সঙ্গে হেলান দিয়ে কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনছে। কী রকম বোরিং ভাই আর আব্বু ভাবা যায়? একজন পত্রিকায় মুখ গুঁজে বসে আছে আর অন্যজন কানে হেডফোন গুঁজে! নিহি পত্রিকা টেনে নিয়ে বলে,
“সারাক্ষণ এত কীসের পত্রিকা হু?”

নিজাম ইসলাম হকচকিয়ে যান। অনুরোধ করে বলেন,
“দে মা। সকালে পড়তে পারিনি। তাই নিয়ে এসেছি।”
“না। দেবো না।”
“আমার লক্ষী মা।” বাচ্চাদের মতো করে বলেন তিনি।
নিহি হেসে ফেলে। বাবার গালে চুমু দিয়ে পত্রিকা দিয়ে দেয়। বাবা নিহির মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
“আমার পাগলী মেয়ে!”

নিহি এবার একটু উঁচু হয়ে নীলমের হেডফোন টান দিয়ে খুলে ফেলে। নীলম চোখ মেলে তাকায়। মেকি ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“কী হয়েছে?”
“কিছু না।”
“হেডফোন দে।”
“দেবো না।”
“সারাক্ষণ শুধু দুষ্টুমি না? দে বলছি।”
“না, না, না।”
“দেন না আপা।”
নিহি হেসে বলে,
“সুন্দর করে বলো।”
“আমার টিয়া,ময়না, তোতাপাখি, চড়ুইপাখি হেডফোন দিয়ে দেন।”

নিহি খিলখিল করে হেসে ফেলে। হেডফোন ফিরিয়ে দেয়। তারপর আগের ন্যায় সিটে হেলান দিয়ে বসে। আমানের কথা মনে পড়ছে। চুমু দেওয়ার পর আমানের মুখটা দেখার মতো ছিল। নিহি আপনমনেই হাসে। চোখ বন্ধ করে ফেলে। সকালে ঘুম হয়নি। তাই খুব সহজেই ঘুমেরা চোখে ধরা দিয়ে দেয়। নিহি ঘুমিয়ে যাওয়ার পর নিজাম ইসলাম বাসের জানালা লাগিয়ে দেন। কিন্তু তবুও বাতাস আছে। তার কারণ হচ্ছে সামনের সিটে যারা বসেছে তারা জানালা খুলে রেখেছে। অন্যের স্বাধীনতায় তো আর বাঁধা হওয়া যায় না। তাই নীলম বলে,
“আব্বু তুমি একটু বের হও। নিহিকে মাঝখানে দেই।”
“হ্যাঁ, তাই কর। মেয়েটার শীত লাগছে।”

নীলম বের হওয়ার পর নিজাম ইসলাম বের হন। তারপর নীলম নিহিকে কোলে করে মাঝখানে বসায় আর নিজে জানালার কাছে বসে। নিজাম ইসলামকে বলে,
“তুমি আমার জায়গায় বসো।”
উত্তরে তিনি বলেন,
“তুই ওখানে বসলি কেন? তোর ঠান্ডা লাগবে তো।”
“সমস্যা নেই। আমার গায়ে মোটা জ্যাকেট আছে। তুমি ওখানে বসো।”

তিনি নীলমের জায়গায় বসেন। নীলমের উদ্দেশ্যে বলেন,
“নিহির শাল দিয়ে দিয়েছিল না তোর মা? বের কর তো।”
“করছি। তোমার মেয়ের তো ঢং। সুয়েটার পরে আবার শাল নিতে নাকি বিরক্ত লাকে।”
নিজাম ইসলাম হাসেন। নীলম ব্যাগ থেকে শাল বের করে নিহির গায়ে ভালো করে জড়িয়ে দেয়। তারপর নিহির মাথা নিজের কাঁধে রেখে এক হাতে নিহিকে জড়িয়ে রাখে। এতক্ষণে নিহিও বোধ হয় আরাম পেলো। তাই গুটিসুটি হয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে। নিহির হাত নীলমের হাতে ছোঁয়া লাগতেই নীলম চেঁচিয়ে বলে,
“বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে আছে হাত।”
নিজাম ইসলাম বলেন,
“এ আর নতুন কী? ওর হাত দুটো তোর জ্যাকেটের পকেটে রাখ।”
নীলম তাই করল। কষ্ট হচ্ছে, আদরের বোনটাকে এভাবে আবার কবে কাছে পাবে কে জানে!
.
.
নিহির মা, ভাবি আর তিতিরকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আমান অফিসে এসেছে। মনটা ভীষণ ফুরফুরে লাগছে। অদ্ভুত না? নিহি চলে গেছে অথচ মনটা খুশিতে বাকবাকুম করছে। করবেই না বা কেন? নিহি যে আজ ভালোবাসার পরশ দিয়েছে! চেয়ারে বসে বসে দুলছে আর মিটিমিটি হাসছে। নিরব দশ মিনিট ধরে সামনের চেয়ারে বসে আছে আর আমানের কীর্তি দেখছে। ক্লায়েন্ট মিটিং নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করতে এসে আমানের এই অবস্থা দেখে নিরবের মাথা হ্যাং। যখনই কিছু বলতে যায় আমান থামিয়ে দিয়ে বলে, ‘আহা! এত ব্যস্ত হচ্ছো কেন? কথা বলব। একটু বসো।’

নিরব স্যারের আদেশই পালন করছে। কিন্তু কতক্ষণ এভাবে চুপ করে বসে থাকা যায় বলেন? ঐদিকে নিরবের আরো কাজ আছে। একবার চলে যেতে চেয়েছে। আমান যেতেও দেয়নি। পুতুলের মতোন সামনে বসিয়ে রেখেছে। নিরব এবার বলে,
“স্যার আমি থাকব নাকি চলে যাব?”

নিরবের কথা বলায় আমান বিরক্ত হলো। বিরক্তিকর চাহনীতে নিরবের দিকে তাকিয়ে নড়েচড়ে সোজা হয়ে বসল। জিজ্ঞেস করল,
“তুমি না ইদানীং খুব বিরক্ত করছ! আমার থেকেও অফিসের কাজ নিয়ে তোমার বেশি মাথা ব্যথা। বলো কী বলবে?”

নিরবের মুখটা হা হয়ে যায়। কবে বিরক্ত করল নিরবের ঠিক মনে পড়ে না। আর এমন কী ভাবনা-চিন্তা তিনি করছেন যে সামান্য কথা বলায় এত বড় কথা! নিরবের ইগোতে লাগল। আমানকে জিজ্ঞেস করল,
“কাজের কথা পরে হবে স্যার। আগে আপনি বলুন আমি কবে আপনাকে বিরক্ত করেছি?”
“মাত্রই তো করলে।”

নিরবের মুখটা অন্ধকারে ছেঁয়ে যায়। এভাবে মুখের ওপর বলে দিল মাত্রই বিরক্ত করেছে? অভিমান নিয়ে নিরব বলে,
“স্যরি স্যার।”
আমান হেসে ফেলে। হেসে হেসে বলে,
“রাগ করলে নাকি? রাগ কোরো না। আজ আমি অনেক খুশি। খুশিতে পাগল পাগল লাগছে। তাই উল্টা-পাল্টা বলে ফেলেছি।”
নিরবের মন শান্ত হয়। শান্তি লাগে। জিজ্ঞেস করে,
“কারণ কী স্যার? ম্যাম কি সিলেটে যাবে না?”
“সকালেই চলে গেছে তো। ও’কে বাসে উঠিয়েই তো অফিসে এসেছি।”
নিরব এবার বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করে,
“ম্যাম চলে গেছে তাও এত খুশি? কারণটা কী স্যার?”
আমান লজ্জামিশ্রিত হাসি দিয়ে বলে,
“কিছু কষ্ট যেন কষ্ট নয়, সুখমিশ্রিত কষ্ট। এইরকম কষ্ট সারাজীবন পেতেও আমি রাজি।”

নিরব মাথা চুলকায়। আমানের কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারে না। আমান ঘোর থেকে বের হয়। বলে,
“বাদ দাও এসব। এখন বলো কী যেন বলতে এসেছিলে?”
“জি স্যার, মিটিং এর বিষয়ে। নতুন ক্লায়েন্টদের সঙ্গে মিটিং এর সময়টা ফিক্সড করতে কথা বলতে এসেছি। কখন করবেন?”
“আজ বিকেলেই। মনটা ভালো আছে। খুব ভালোভাবেই সব হ্যান্ডেল করতে পারব।”
“ঠিকাছে স্যার।”

_______________________

সিলেট গিয়ে পৌঁছাতে প্রায় বিকেল হয়ে যায়। বাস স্ট্যান্ডে ওদেরকে নিতে এসেছে নিহির মামা লিয়াকত শিকদার এবং তার বড় ছেলে লিমন। নিহি বাস থেকে নেমে আগে মামাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“কেমন আছেন মামা?”
“ভালো আছি আম্মা। তুমি ভালো আছো?”
“আলহামদুলিল্লাহ্‌।”
নিহি এবার লিমনকে জিজ্ঞেস করে,
“ভালো আছো ভাইয়া?”
“আমি খারাপ থাকি কবে বল?”
“তোমার বাঁকা উত্তর দেওয়ার স্বভাব আর গেল না, না?”

লিমন ওদের ব্যাগ হাতে নিয়ে হেসে হেসে বলে,
“ভালো আছিরে ময়না। বাড়িতে চল এখন।”
সবাই একসঙ্গে বাড়িতে যায়। নিহিকে দেখে মামি জড়িয়ে ধরেন। গালে হাত বুলিয়ে বলেন,
“মুখটা এমন শুকিয়ে গেছে কেন মা?”

পাশ থেকে মামার মেয়ে তরু বলে,
“মা নিহি জার্নি করে এসেছে। মুখ তো শুকনো লাগবেই।”
নিহি হেসে বলে,
“একদম। ফ্রেশ হয়ে খেলেই দেখবে তাজা হয়ে গেছি।”
“তাহলে তাড়াতাড়ি আগে ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি খাবার দিচ্ছি।”
লিমন তখন পিঞ্চ মেরে বলে,
“এত খাস তবুও তো মোটা হস না।”
নিহি চিৎকার করে বলে,
“মামী! কিছু বলবে?”

মামী তখন লিমনের কান মলে দিয়ে বলে,
“আমার মাকে নিয়ে খাওয়ার খোঁটা দিবি না।”
লিমন ব্যথা পেয়ে ‘আহ্’ শব্দ করে বলে,
“মা ছাড়ো।”
তারপর তরুর উদ্দেশ্যে বলে,
“দেখ, নিহি কিন্তু তোর ভাগ নিতে চলে এসেছে।”
তরু ভেংচি কেঁটে বলে,
“তুমি একদম প্যাঁচ লাগানোর চেষ্টা করবা না।”
তারপর নিহির দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমার সঙ্গে চল। ফ্রেশ হবি।”

নিহি লিমনকে ভেংচি কেটে চলে যায়। নীলম হেসে লিমনের পিঠে চাপড় দিয়ে বলে,
“আহারে! বেচারা। পাত্তা পেলি না কোথাও।”
“ভাই মজা নিও না।” মন খারাপের অভিনয় করে বলে লিমন।
ওদের খুনসুটি দেখে সবাই হাসে। হ্যাঁ, সবাইকে যেমন হাসিখুশি দেখছেন ওরা তেমনই হাসিখুশি। এবং নিহির মামা-মামী, মামাতো ভাই-বোন সবাই ভাবনার চেয়েও বেশি ভালো। তরু নিহির ব্যাচমেট। এবং তরুর কলেজেই নিহিকে ভর্তি করানো হবে।

সবাই ফ্রেশ হয়ে এসে এক সঙ্গে খেয়ে নেয়। খাওয়া শেষ করে নিহি তরুর ঘরে যায়। এখন থেকে নিহি তরুর সঙ্গেই থাকবে। সাড়ে চারটার দিকে তরু প্রাইভেট পড়তে চলে যায়। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর নিহিকেও নিয়ম করে প্রাইভেট পড়তে হবে। তবে এখন তো মুক্তি! তরু চলে যাওয়ার নিহি ব্যাগ থেকে ফোন বের করে। মামার বাড়িতে আসার পর ভাইয়া বাড়িতে ফোন করে সবার পৌঁছানোর কথা বলে দিয়েছে। আমানকেও ফোন করে বলেছে। কিন্তু নিহির সঙ্গে আমানের কথা হয়নি। আমানকে ফোন দিতে ইচ্ছে করছে। আমানের নাম্বারে কল দিতে গেলেও আবার ব্যাকে চলে আসে। বুকের হার্টবিট বেড়ে যায় ফোন দিতে গেলে। শেষমেশ আর ফোন দেওয়াই হয় না। নিহি উপমাকে কল করে। দু’বার রিং হওয়ার পর উপমা ফোন রিসিভ করে বলে,

“হ্যালো নিহি।”
“কী করছিস?”
“আমি তো প্রাইভেটে এখন। তুই কোথায় আছিস?”
“মামার বাসায় চলে এসেছি একটু আগে। আমি কি তোকে পরে ফোন করব?”
“না। অনামিকা ম্যামের পারমিশন নিয়েই রিসিভ করেছি।”

অনামিকা ম্যাম নিহির সাথে কথা বলতে চান। উপমা ফোনটা ম্যামের কাছে দেয়। ম্যাম জিজ্ঞেস করেন,
“কেমন আছো নিহি?”
নিহি সালাম দিয়ে বলে,
“ভালো আছি ম্যাম। আপনি?”
“আলহামদুলিল্লাহ্‌। ভালোমতো পৌঁছিয়েছ তো?”
“জি ম্যাম।”
নিহি আরো কিছুক্ষণ কথা বলে তার সঙ্গে। বুক ধুকপুক করে। কারণ তিনি যে শুধু ম্যাম-ই নয়। নিহির শ্বাশুরীও। আচ্ছা যখন উনি জানতে পারবেন, নিহি উনার বড় ছেলের বউ তখন উনি কী করবেন? মেনে নিবেন নিহিকে? এখন যেমন ভালোবাসেন, তখনও কি সেরকমভাবে ভালোবাসবেন?

অনল ঘরে বসেই অনামিকা ম্যামের কথা শুনছিল। নিহির কথা না শুনলেও মায়ের কথা শুনে বুঝতে পারছিল নিহি যে সিলেটে চলে গেছে। তার মানে আর কখনো নিহিকে দেখতে পারবে না। কেমন এক শূন্যতা বুকের ভেতর। কেমন যেন হাহাকার করছে। আচ্ছা অনল তো এটাই চেয়েছিল। নিহিকে কলেজ থেকে বের করতে চেয়েছিল। নিহি চলেও গেছে কলেজ ছেড়ে। সেই অনুযায়ী অনলের খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু অনল খুশি হতে পারছে না। অস্থিরতায় শরীর কাঁপছে। তবে কি নিহির প্রতি ভালোবাসা…! অনল বসা থেকে উঠে ধারায়। নিজেই নিজের মনকে মানানোর চেষ্টা করে বলে, ‘না, অসম্ভব। আমি কখনোই নিহিকে ভালোবাসিনি। নিহির প্রতি আমার কোনো ভালোবাসা থাকতে পারে না। কখনোই না!’

অনলের ফোন বাজছে। ফোনের স্ক্রিনে ইরার নাম লেখা। সেদিন কলেজে ঐরকম ব্যবহার করার পর ইরা নিজেই স্যরি বলেছে। মাফ চেয়েছে। কিন্তু অনল কোনো রেসপন্স করেনি। আরো শাস্তি পেতে হবে ইরাকে। তবেই অনলের শান্তি। বেয়াদবি অনলের সহ্য হয় না। একদম না!
.
.
উপমা আর ম্যামের সঙ্গে কথা বলা শেষ করে নিহি দীপ্তকে ফোন করে। দীপ্তর সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা হওয়ার পর ফোন হাতে নিয়ে বসে থাকে। ঘুম পাচ্ছে খুব। ঐদিকে আমানের সঙ্গেও কথা বলতে ইচ্ছে করছে। ফোন করবে কী করবে না ভেবে সময় অতিবাহিত হয়। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। অবশেষে ফোন দিয়েই ফেলে। রিং হচ্ছে, কিন্তু রিসিভ করছে না। এইদিকে বুক ধুকধুকানি বেড়েই চলেছে। একটু, আরেকটু, আরো বেশি এভাবে হার্টবিট বেড়েই চলেছে। ঐদিকে এখনো ফোন রিসিভ করছে না।রিং হতে হতে কল কেটে যায়। নিহি আবার ফোন দেয়। ফোন নিরবের কাছে। আমান ক্লায়েন্টদের সঙ্গে মিটিং করছে। ফোন নিয়ে নিরব বাইরে বের হয়। ফোনের স্ক্রিনে লেখা, ‘নিহু পাখি’। নিজের অজান্তেই মুচকি হাসে নিরব। ফোন রিসিভ করে নিরম সালাম দেয়। নিহি সালামের উত্তর নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“কে?”
নিরব হেসে বলে,
“আমি সবার কাছে নিরব ম্যাম। কিন্তু আপনার কাছে ক্যাবলাকান্ত।”
নিহি শব্দ করে হেসে ফেলে। জিজ্ঞেস করে,
“কেমন আছেন ক্যাবলাকান্ত?”
“আলহামদুলিল্লাহ্‌ ম্যাম। আপনি কেমন আছেন?”
“আমিও আলহামদুলিল্লাহ্‌। আপনার স্যার কোথায়?”
“স্যার তো মিটিং-এ। স্যারের কাছে ফোন দেবো?”
“মিটিং-এ আছে! না, থাক। তাহলে দরকার নেই। আপনার সঙ্গেই কথা বলি। আপনার স্যারের কী অবস্থা? মন খারাপ করে থাকে?”
“সত্যি বলব ম্যাম?”
“অবশ্যই।”
“স্যারের কী হয়েছে কে জানে! অফিসে আসার পর থেকেই দেখছি মিটিমিটি হাসে শুধু। আর কী যেন ভাবে। ভূতেও ধরতে পারে।”
নিহি হাসে। আমানের এত ভাবনা আর মিটিমিটি হাসার কারণও নিহির কাছে পরিষ্কার। নিহি বলে,
“বউয়ের ভূত ধরলে স্বামী এমনই করে। যাই হোক, এখন রাখছি ভাই। মিটিং শেষ হলে আপনার স্যারকে বলিয়েন, আমি ফোন করেছিলাম।”
“ঠিকাছে ম্যাম।”
“ভালো থাকবেন। আল্লাহ্ হাফেজ।”
“আপনিও ভালো থাকবেন ম্যাম। আল্লাহ্ হাফেজ।”

নিহি ফোন রেখে শুয়ে পড়ে। আমান যে মন খারাপ করে থাকছে না সেটা শুনে এখন শান্তি লাগছে। আরামসে ঘুমও দেওয়া যাবে এখন। লেপ, কম্বল জড়িয়ে নিহি ঘুমিয়ে পড়ে।
.
মিটিং শেষ করে আমান নিজের ক্যাবিনে আসে। নিরব আসে মিনিট পাঁচেক পর। ফোনটা আমানের টেবিলের ওপর রেখে বলে,
“স্যার, ম্যাম ফোন করেছিল।”
আমান অবাক হয়ে বলে,
“কী? কে ফোন করেছিল?!
নিরব মুচকি হেসে বলে,
“আপনার নিহু পাখি।”
আমান কেঁশে বলে,
“এহেম! এহেম! ফোন করেছিল, আমায় দাওনি কেন?”
“ম্যাম বারণ করেছিল।”
“তোমার ম্যাম বললেই শুনতে হবে? বেতন কি আমি দেই নাকি তোমার ম্যাম? এখন থেকে মা আর নিহু ফোন দিলে আমি যত জরুরী মিটিং-য়েই থাকি না কেন, আমার কাছে ফোন দেবে।”
“ঠিকাছে স্যার।”

আমান কল লিস্ট চেক করে বলে,
“পাঁচ মিনিট তিন সেকেন্ড কথা বলেছ! ওহ গড! তুমি কল কেটে ব্যাক করোনি কেন? আমার বউয়ের টাকা খেয়েছ।”
নিরব ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে থাকে। আমান আবার বলে,
“নিহু কি চাকরী করে? বাবার টাকায় চলে। এখন থেকে ফোন করলে কেটে ব্যাক করবে।”
“জি স্যার।”!
“আচ্ছা নিরব…”
“জি স্যার?”
“আমি কি একবার ফোন দেবো?”
“দিন স্যার।”
“কী ভাববে ও? যদি কিছু মনে করে?”
“এখানে মনে করার কী আছে স্যার? আপনি ফোন করুন।”
“করব? আচ্ছা তোমার সঙ্গে এতক্ষণ কী কথা হলো?”
“সাক্ষাৎ বিনিময়, তারপর আপনার কথা জিজ্ঞেস করল। আপনার মন খারাপ থাকে নাকি জানতে চাইল।”
“তুমি কী বললে?”
“যা সত্যি তাই-ই। আপনি কী কী যেন ভাবেন আর মিটিমিটি হাসেন এটাই বলেছি।”
আমান এবার উত্তেজিত হয়ে বলে,
“নিহু কী বলল?”
“কিছু বলেনি স্যার। হেসেছে।”
“হেসেছে?”
“জি স্যার।”
আমান এবার চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে বসে। ভাবে, কিছু বলল না কেন! আর হাসলোই বা কেন!
নিরব জিজ্ঞেস করে,
“আমি কি যাব স্যার?”
“যাও।”
নিরব চলে যাওয়ার পর আমান আবারও ভাবনার গহীনে হারিয়ে যায়। নিহির কথা মনে পড়ে। বুকের ভেতর ভালোবাসার উথালপাতাল জোয়ার আসে। বিশাল বিশাল ঢেউ বলে যায়, ‘ভালোবাসি নিহু পাখি। ভীষণ ভালোবাসি।’

চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]