#আড়ালে_আবডালে
#পর্ব_৩৪
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
____________________
মানুষজনের চলাফেরা বাড়ছে। গলি দিয়ে আরো গাড়ি আসছে। আমানের গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখার জন্য ছোটোখাটো জ্যাম বেঁধে গেছে। গাড়ির বিরক্তিকরি হর্ণের শব্দ কানে আসতেই নিহি ভাবনা থেকে ছিটকে পড়ে। বড় বড় ঢোক গিলে। আমান তাকে একপাশে দাঁড় করিয়ে বলে,
“এখানে দাঁড়াও একটু। আমি গাড়ি সাইড করে আসি।”
উত্তরের অপেক্ষা না করে সে ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে। নিহি কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না। চিঠিটা হুট করে দেখানো কী ঠিক হবে? নাকি লুকিয়ে ফেলবে? পরে যদি জিজ্ঞেস করে চিঠিটা কোথায় তখন কী বলবে? নিহির মাথা কাজ করছে না। এরমাঝেই গাড়ি সাইড করে আমান ফিরে আসে। কিছু না বলেই নিহির ডান হাতটা টেনে নিজের হাতের ওপর রাখে। কনুয়ের দু’আঙুল নিচে চোখের ইশারায় তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“কাটলো কীভাবে?”
সঙ্গে সঙ্গে হাতের চিঠিটা মুঠোবন্দি করে ফেলে নিহি। তার মানে আমান তখন চিঠি নয় বরং কাটা জায়গার দিকে তাকিয়েছিল! আল্লাহ্! এদিকে নিহি ভয়ে জড়োসড়ো। কখন যে কেটেছে ঘোরে সেটা খেয়ালও নেই। হুট করেই তখন মনে হলো, ছেলেটার পেছনে দৌঁড়াতে গিয়ে রাস্তার পাশে তারকাঁটার বেড়ার সাথে শাড়ির আঁচল আটকে গেছিল। আঁচল টেনে ছুটাতে গিয়ে তারকাঁটার বেড়ার সাথে ডান হাতে টান লেগে হাত কেটে যায়। উত্তেজনায় নিহি সেটা খেয়ালও করেনি।
নিহিকে চুপ থাকতে দেখে আমান আবারও জিজ্ঞেস করে,
“কী করে কাটলো? কথা বলছো না কেন?”
কথাগুলো যেন একটু ধমকের স্বরেই বলল আমান। নিহি হকচকিয়ে যায়। মিথ্যে বলার এত ভালো অভ্যাসও নেই তার। নিহির উত্তরের প্রতিক্ষা করছে না আর আমান। নিহির হাত ধরে নিয়ে গাড়িতে বসায়। তারপর ডাক্তারের দোকান থেকে স্যাভলন, তুলা আর ব্যান্ডেজ নিয়ে আসে। পাশের সিটে বসে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দেয়। আমানের চোখে-মুখে রাগ। এদিকে নিহি গল্প সাজিয়ে নিয়েছে মনে মনে।
“দৌঁড়াচ্ছিলে কেন?” আমানের প্রশ্ন করার সাথে সাথে মুখস্ত বিদ্যার মতো নিহি বলল,
“হাওয়াই মিঠাইওয়ালাকে ধরার জন্য।”
আমান অবাক হয়ে তাকায় নিহির দিকে। নিহি হাসার ব্যর্থ চেষ্টা করে। মনে মনে ভয়ও হচ্ছে। যদি বিশ্বাস না করে উল্টো সন্দেহ করে? আমানের প্রখর দৃষ্টির সামনে নিহির আত্মা উড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। মিথ্যা বলাটা উচিত হয়নি। আমার স্বামী সে। এবং প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশিই ভালো। তাকে আমার সবটা জানানো উচিত। হতে পারে আমায় সাহায্যও করতে পারবে। নিহি সত্যটা বলার জন্য উদ্যত হতেই আমান বলে,
“তোমাকে আমার অনেককিছু বলার আছে নিহু!”
নিহি থেমে যায়। সে আবার বলে,
“অনেক কথাই তোমার অজানা আছে। আমি তোমায় সব বলতে চাই। তবে এখন নয়। যখন তুমি আমার সারাজীবনের জন্য আমার সঙ্গে থাকতে আসবে তখন।”
আমানের কথায় কেমন যেন রহস্য রহস্য গন্ধ! এমন কী কথা যেটা নিহি জানে না? এখন বললেই বা সমস্যাটা কোথায়? নিহি জিজ্ঞেস করে,
“এখন বলবেন না কেন?”
“সবসময় সব কথা বলা যায় না। কিছু কথা বলার জন্য উপযুক্ত সময় ও সুযোগ লাগে।”
মনের মধ্যে আকুপাকু শুরু হয়েছে। কবে আসবে সেই সময় আর সুযোগ তা নিহির জানা নেই। তবে এতটুকু জানে, চিঠির বিষয়ে এখন আমানকে কিছুই বলবে না। এই রহস্য সে একাই বের করবে। এমনও তো হতে পারে এই চিঠির সাথে আমানই ইনভলভ্!
“আমি জানি, আমার নিহুর ধৈর্য সম্পর্কে। সে পারবে অপেক্ষা করতে। কী পারবে না?”
“পারব।” মৃদু হেসে উত্তর দিল নিহি।
আমান ড্রাইভ করতে শুরু করে। মিনিট দশেক পর বাজারে গিয়ে হাওয়াই মিঠাই নিয়ে আসে। নিহি মুখ ফসকে বলে ফেলে,
“আবার হাওয়াই মিঠাই আনলেন কেন?”
“এই হাওয়াই মিঠাইর জন্যই হাত কেটে এতকিছু! না খাইয়ে ছাড়ব?”
নিহি হেসে ফেলে। হুট করেই চোখে-মুখে কাঠিন্য এনে আমান বলে,
“কিন্তু এভাবে দৌঁড়ানো উচিত হয়নি তোমার। কতখানি হাত কেটে গেছে দেখেছ? নিজের প্রতি যত্নশীল হও।”
“পারব না হুহ!”
“কেন পারবে না?”
“আমি নিজের যত্ন নিলে আপনি কী করবেন?”
“তুমি তো এখন আমার কাছে থাকো না। যখন থেকে আমার কাছে থাকবে তখন থেকে তোমার যত্নের কথা ভাবতে হবে না। কিন্তু যতদিন পর্যন্ত একা থাকছো প্লিজ নিজের যত্ন নিও। সতর্ক থেকো।”
“আচ্ছা,আচ্ছা ঠিকাছে! কিন্তু এই সময়ে আপনি কোথা থেকে আসলেন?”
“অফিস থেকে। কাজ শেষ তাই বাড়ি ফিরছিলাম।”
নিহি মনে মনে আফসোস করে বলে,
“ধ্যাত! আজ যদি এত তাড়াতাড়ি আপনার কাজ শেষ না হতো তাহলে ঠিকই ছেলেটাকে ধরতো পারতাম। পোড়া কপাল!”
.
.
নিহিকে বাড়ির সামনে পৌঁছে দিয়ে আমান নিজের বাড়িতে চলে গেছে। নিহি এতবার করে বলার পরও ভেতরে আসেনি। তার একটাই কারণ! যেদিন নিহিকে একেবারে নিতে আসবে সেদিনই নাকি বাড়ির ভেতর যাবে। কী রকম অদ্ভুত জেদ! নিহি ভেতরে যেতেই তমা এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,
“এতক্ষণ কোথায় ছিলে তুমি? ওভাবে দৌঁড় দিলে কেন?”
উত্তর না দিয়ে নিহি পানি চাইল।
“এক গ্লাস পানি দেবে ভাবি?”
তমা দ্রুত গিয়ে পানি নিয়ে আসলো। নিহি ঢকঢক করে পানিটুকু শেষ করে সোফায় গা এলিয়ে দেয়। ভাবি গিয়ে বসল পাশে। নিহির চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“ক্লান্ত?”
“হু। দৌঁড়িয়েছি তো!”
“জানতে পারলে কিছু?”
“না। একটুর জন্য হাত ফসকে গেছে।”
নিহির হাতের দিকে খেয়াল করতেই তমা চমকে যায়। অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে,
“হাত কাটলো কীভাবে?”
“শসস! আস্তে বলো। আব্বু-আম্মু শুনলে খবর আছে।”
তমা আশেপাশে একবার তাকিয়ে দেখল কেউ আছে নাকি। নিহিও তাকিয়ে শুরু থেকে সবটা বলতে শুরু করে। সব শুনে তমারও আফসোস হচ্ছে। আজ ছেলেটাকে ধরতে পারলেই কেল্লাফতে হয়ে যেত! আফসোস করে তো আর লাভও নেই। নিহিকে তাড়া দিয়ে বলল,
“যাও ফ্রেশ হয়ে নাও তুমি।”
নিহিও ঘরে চলে গেল। এই অবস্থায় অন্য কেউ দেখলে প্রশ্ন করতে করতে মেরে ফেলবে। ফুল হাতার একটা কামিজ আর প্লাজু নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় গোসল করতে। শাড়ি খুলতে গিয়ে কোমরে খেয়াল হয়। চিঠিটা লুকিয়ে কোমরে যে গুঁজে রেখেছিল সেটা মনেই নেই। চিঠিটা হাতে নিয়ে ভাঁজ খুলে পড়তে শুরু করল,
‘এলোকেশী,
চন্দ্রাবতী! চন্দ্রের নয়, আমার চন্দ্রাবতী। চন্দ্রের দীপ্তিকিরণ তোমায় ছুঁয়ে দিলে আমার রাগ হয়। ভীষণ রাগ হয়। তোমায় ছোঁয়ার বাসনা, ইচ্ছে শুধু তো আমার! তুমি বুঝবে আমার ভালোবাসা? নাকি বোঝো? আমায় কি কখনো খোঁজো? দেখেও কি দেখোনি আমায়? আমি তোমায় দেখি! মনের তৃপ্তি মেটাই তোমার হাস্যজ্জ্বল মায়াময়ী মুখখানা দেখে।’
নিহি স্তব্ধ হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল চিঠি হাতে। এত ঘোর, এত মায়া এই চিঠিতে। চিঠির লেখাতে! পড়লে মুগ্ধ হতে হয়। কে সে? ভাবনা-চিন্তা করতে ভালো লাগছে না তার। তাই চিঠিটা আবার ভাঁজ করে থ্রি-পিছের ওড়নার সঙ্গে গিঁট দিয়ে রাখে। শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে মাথায় পানি দেয়। মাথা ঠান্ডা করা দরকার আগে।
গোসল করে বেরিয়ে এসে দেখে তিতির আর তরু শুয়ে শুয়ে কার্টুন দেখছে। তরুর মুখের ভাব দেখে মনে হচ্ছে ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর করে তিতির ওকে কার্টুন দেখাচ্ছে। নিহি হেসে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বারান্দায় চলে যায়। দুপুরে সূর্যের দীপ্তিময় আলো বারান্দায় জেঁকে সাজিয়ে দিয়েছে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে রুমে চলে আসে। তরু অসহায় ভঙ্গিতে বলে,
“ওর সঙ্গে একটু কার্টুন দেখ না রে নিহি! শিশির ফোন দিতে দিতে পাগল বানিয়ে ফেলতেছে।”
“কপাল করে পেয়েছিস একটা বয়ফ্রেন্ড। এত চোখে হারায়?”
“হুহ! তোর জাম..”
পুরো কথা বলার আগে নিহি তরুর মুখ চেপে ধরে বলে, ‘চুপ। তিতির আছে।’
এরপর তিতিরকে কোলে নিয়ে বলে,
“আসো আম্মু আমরা কার্টুন দেখি।”
তরু ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে যায়। কিছুক্ষণ পর ঘরে আসে সালেহা বেগম। এসেই জিজ্ঞেস করেন,
“সকাল থেকে তোর কোনো খোঁজখবর নেই দেখি! সিলেট গিয়ে আমাদের একদম ভুলেই গেছিস? নিজের বাড়ি এসেও মনে হয় আমরা নেই তাই না!”
নিহি তাকালো না। মটু-পাতলু দেখতে দেখতে বলল,
“এমন কিছুই না মা।”
“বুঝি তো কেমনকিছু! একবার মায়ের মুখের দিকেও তাকাতে ইচ্ছে করে না এখন।”
মায়ের কণ্ঠে অভিমান স্পষ্ট। নিহি মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। তিতিরকে শোয়ায় নিজের হাতের ওপর। মায়ের এক হাত নিজের গায়ের ওপর রেখে বলে,
“তুমি এখনো আগের মতোই আছো!”
তিনি পরম আদরে নিহির গায়ে, মুখে, চুলে হাত বুলিয়ে দেন। আবেগমিশ্রিতস্বরে বলেন,
“তোরে ছাড়া ভালো লাগে না রে মা। বাড়িটা আমার ফাঁকা হয়ে থাকে। কবে যে তোর পড়া শেষ হবে! আমার তো সময়ই কাটে না।”
নিহির বুকটা ধক করে ওঠে। মায়ের কোমর জড়িয়ে ধরে বলে,
“আমি নিজেও ভালো নেই মা। ওখানে মামা-মামি,লিমন ভাইয়া,তরু সবাই আমায় খুব আদর করে। ভালোবাসে। তবুও নিজ পরিবারকে তো আর ভুলে থাকা যায় না। আমি নিজেও সময় গুনি কবে পরীক্ষা দেবো আর কবে আসব!”
“এইতো আর একটা বছর মা! এখন চল খাবি। তরু কোথায়?”
“বারান্দায় আছে। আব্বু বাসায় না?”
“আসছে একটু আগে। গোসল করে। তরুকে নিয়ে তাড়াতাড়ি আয়।”
“তুমি খাবার রেডি করো। আমরা আসছি।”
“আচ্ছা।”
তিনি তিতিরের চুলে হাত বু্লিয়ে বলেন,
“দাদুভাই! খেতে হবে না? চলো।”
তিতির আর কার্টুন দেখল না। সালেহা বেগমের কোলে চড়ে ডাইনিং রুমে চলে গেল। নিহি গেল বারান্দায়। তরু শিশিরের সঙ্গে ফিসফিস করে কথা বলছে। নিহি বারান্দার গ্রিল ধরে পেছনদিকে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে বলে,
“এই গরু খেতে চল।”
তরু চোখ পাকিয়ে তাকায়। জিজ্ঞেস করে,
“কী বললি?”
“বললাম তরু খেতে চল।” হাসি চাপিয়ে বলে নিহি।
তার চাপা হাসি তরুর দৃষ্টি এড়িয়ে যায় না। ফোন কেটে কোমরে হাত রেখে বলে,
“মিথ্যা বলবি না। তুই আমায় গরু বলছিস।”
“গরু বললাম নাকি? তাহলে হয়তো মিস্টেক করে বলে ফেলছি। মানে ‘ত’ এর জায়গায় ‘গ’ বলে ফেলছি।”
“তুই ইচ্ছে করেই বলছিস।”
“বললে বলেছি। তাতে কী? তুই তো গরুর চেয়ে কম না। সারাক্ষণ ফোনটা কানে নিয়ে বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে হাম্বা হাম্বা করতেই থাকিস।”
“তবে রে….”
নিহি দৌঁড়ে পালায়। পেছন পেছন আসে তরুও। ডাইনিং রুমে গিয়ে নিহি নিজাম ইসলামের পিছনে লুকায়। এই দুটোকে থামাতে থামাতে তার নিজের অবস্থাই দফারফা। এই দৃশ্য নয়নভরে দেখেন সাহেলা বেগম। চঞ্চল মেয়েটার দুষ্টুমিতে বাড়িটা যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
_________________
সকাল তখন দশটা। নীলম বাদে বাড়ির সবাই তৈরি হয়ে নিয়েছে। আজ মিহির বাসায় সবার দাওয়াত। উপলক্ষটা অবশ্য নিহি। এতদিন পর বোন বাড়িতে এসেছে। একটু আদরযত্ন করার জন্য মন ছুটে গেছে। নীলমের অফিস আছে তাই ওদের সাথে যেতে পারবে না। সকাল সকাল অফিসে চলে গেছে। তবে লাঞ্চ টাইমে বাসায় পৌঁছে যাবে বলে মিহিকে কথা দিয়েছে। নিহি তো খুশিতে বাকবাকুম! মিহির বাসায় যাওয়া মানেই আমানের সঙ্গে দেখা করার সূবর্ণ সুযোগ। সৈকত ফোন করে জানিয়েছে, আমানকেও দাওয়াত করা হয়েছে। তখনও দেখা হবে। পরেও লুকিয়ে দেখা হবে। আহা! ভাবতেই আনন্দে পেটের মধ্যে দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। নিহি আজ কালো একটা থ্রি পিছ পরেছে। সঙ্গে হিজাব। চোখে গাঢ় কালো কাজল। হাতে আমানের কিনে দেওয়া কালো চুড়ি। তরু মেকি কাঁশি দিয়ে বলে,
“এহেম! এহেম! এত সাজগোজ কার জন্য?”
চুড়িগুলোর ওপর হাত বুলিয়ে দিতে দিতে নিহি হেসে বলে,
“তোর জামাইর জন্য।”
“ফাজিল!”
দুজনে একসঙ্গে হেসে ফেলে। তারপর সবাই মিলে একসঙ্গে বের হয়। বাড়ি থেকে রিক্সায় করে বাস-স্ট্যান্ডে যায় আগে। সেখান থেকে বাসে ওঠে। তরু আর নিহি বসেছে পাশাপাশি সিটে। দুজনে গল্প করছে। গল্পের টপিক দুজনেরই প্রিয় মানুষ। কথা বলতে বলতে জানালার দিকে তাকাতেই নিহি থমকে যায়। একটু নড়েচড়ে জানালার আরো ধারে ঘেঁষে বসে বাইরে তাকায়। অনলকে দেখতে পায়। বাইকে করে যাচ্ছে। আর পেছন সেই পিচ্চি ছেলেটা যে চিঠি নিয়ে আসে। এই পিচ্চির সঙ্গে অনলের সম্পর্ক কী? তবে কি চিঠিগুলো অনল দেয়?
চলবে…
#আড়ালে_আবডালে
#পর্ব_৩৫
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
__________________
আকাশ মেঘলা। ঘনকালো অন্ধকার আকাশের অনেকটা জুড়ে আছে। যেকোনো মুহূর্তেই শুরু হবে ঘন বর্ষণ। ওরা মিহির বাসায় এসেছে মাত্র। মিহি ব্যস্ত হয়ে সবাইকে খাবার দিচ্ছে। তমা নিজেও মিহিকে কাজে সাহায্য করছে। সৈকতও টুকটাক কাজ করে দিচ্ছে। মাহির নিজাম ইসলামের কোলে বসে খেলছে। তরু সোফার এক কোণে বসে ফোন চাপছে। হয়তো শিশিরের সাথে চ্যাটিং করছে। নিহি দাঁড়িয়ে আছে মিহির রুমের বারান্দায়। এখান থেকে সরাসরি আমানের ঘরের বারান্দা দেখা যায়। বারান্দার দরজা আটকানো। আমান বাড়িতে নেই ফোন করে জানিয়েছে। তবে অফিস থেকে বের হয়েছে। গাড়িতে আছে এখন। নিহির মন পড়ে আছে অন্যদিকে। কোনোদিকেই হিসাব মিলাতে পারছে না।
প্রবলবেগে বাতাসও বইতে শুরু করেছে। নিহির মন ঘুরে যায় এবার। ব্যস্ত হয়ে পড়ে আমানের জন্য। মানুষটা বৃষ্টিতে ভিজেই আসবে নাকি কে জানে!
“আরে নিহিমনি যে! বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমানের অপেক্ষা করছো নাকি?”
নিহি পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে সৈকত দাঁড়িয়ে আছে। মুখে চাপা হাসি। নিহি নিজেও হেসে বলে,
“না দুলাভাই।”
“বুঝি, বুঝি। হয়, হয় এমন হয়। আগে অফিস থেকে আসার সময় হলে তোমার আপাও আমার জন্য বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতো।”
“কিন্তু আমি করছি না।”
“মিথ্যা বলে লাভ নেই শালীকা। আর ভয় নেই। কথা হয়েছে মাত্রই। এসে পড়বে প্রায়। তুমি খাবে চলো।”
“উনি আসুক!”
সৈকত বুকের ওপর হাত রেখে বলে,
“আহা! উনি আসুক। কী ভালোবাসা।”
“দুলাভাই!” লজ্জা পেয়ে নিহি সৈকতের পিঠে কিল বসায়। সৈকত শব্দ করে হেসে ফেলে। তারপর বলে,
“আচ্ছা অপেক্ষা করো। কিন্তু সবার সাথে বসে কথা তো বলবে।”
“আচ্ছা চলেন।”
ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসতেই ঝুপ ঝুপ করে বৃষ্টি নামা শুরু করে। নিহির মনটা আনচান করছে। নিশ্চয়ই ভিজে আসবে আজ। আমান আসলো বৃষ্টি আসারও ১০ মিনিট পর। মাথা ভিজেছে। আর শার্টে অল্প অল্প পানির ছাঁট। বাম হাতে চুলগুলো ঝাড়তে ঝাড়তে নিজাম ইসলাম ও সালেহা বেগমকে সালাম দিয়ে সৈকতের পাশে বসে। সালেহা বেগম ব্যস্ত হয়ে বলেন,
“তুমি তো ভিজে গেছ বাবা।”
“গাড়ি থেকে নামার সময় একটু বৃষ্টির পানি পড়েছে।”
“তাড়াতাড়ি মাথা মুছে নাও। নয়তো ঠান্ডা লাগবে।”
এরপর মিহিকে ডেকে বলেন,
“মিহি রে আমানকে তোয়ালে দিয়ে যা।”
মিহি রান্নাঘরে ছিল। সৈকত বলে,
“ও তো রান্না করছে মা। নিহি যাক।”
নিহির দিকে তাকিয়ে বলে,
“যাও তো নিহি।”
নিহি একবার বাবা-মায়ের দিকে তাকালো। তারা নিজেদের মাঝে কথা বলছেন। সৈকতের দিকে তাকাতেই সৈকত চোখ টিপ দেয়। নিহি ভ্রু কুঁচকে তাকায়। সৈকত মুচকি মুচকি হেসে বলে,
“যাও, যাও।”
নিহি কিছু না বলে সৈকত আর মিহির ঘরে যায়। পেছন পেছন আমানও আসে। ওয়ারড্রব থেকে একটা নতুন তোয়ালে বের করে তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“গাড়ি থেকে নামার সময় ছাতা নিয়ে বের হওয়া যায় না? নাকি ছাতাও নেই? এত এত টাকা ইনকাম করে কী করেন? একটা ছাতা কিনতে পারেন না?”
একদমে কথাগুলো বলল সে। তোয়ালে ধরে দাঁড়িয়ে রইল আমান। এরপর ফিক করে হেসে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বলে,
“আরে পাগলী গাড়ি থেকে তো বাড়ির সামনেই নেমেছি। এইটুকুতেও ছাতা লাগে নাকি?”
“না। ঘেচু লাগে। আপনি ফ্রেশ হয়ে আসেন। আমি যাই।”
নিহি চলে যাওয়ার জন্য পেছনে ফিরে দাঁড়ায়। এক কদম এগোতেই তোয়ালে দিয়ে পেছন থেকে নিহিকে আটকে ধরে আমান। নিহিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“এত রাগ কেন হয়েছে?”
“জ্বর আসলে তখন?”
“আসবে না।”
“মিথ্যা বলবেন না। আমি জানি আপনি বৃষ্টিতে ভিজতে পারেন না।”
“তাই? তা কে বলল শুনি?”
“টুকটুকি আর আবুল ভাই।”
“একটু ভিজলে কিছু হয় না।”
“মানে কী? আপনি কি চান জ্বর আসুক?”
“উম! আগে চাইতাম না। কিন্তু এখন চাই।”
“কেন?” অবাক হয়ে জানতে চায় নিহি।
“আগে তো তুমি ছিলে না। এখন তুমি আছো।”
“আমার সঙ্গে জ্বরের কী সম্পর্ক?”
“বোকা মেয়ে! বোঝে না।”
“না বুঝি না। বুঝান।”
“জ্বর আসলে তুমি সেবা করবে। কাছে কাছে থাকবে। তাই চাই জ্বর আসুক।”
“ইশ! ঠেকা আমার। করব না সেবা।”
“সত্যিই করবে না?”
“না।”
“তাহলে যাই বৃষ্টিতে ভিজি। তারপর জ্বর আসুক। দেখি কেউ আমার সেবা করে কি না!”
“মেরে ফেলব একদম।”
তিতির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তখন জিজ্ঞেস করে,
“তোমরা কী করো?”
সঙ্গে সঙ্গে দুজন তখন দু’দিকে ছিটকে সরে যায়। আমান কী করবে না করবে বুঝতে না পেরে ওয়াশরুমে চলে যায়। নিহি থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জোরপূর্বক হেসে বলে,
“কিছু না আম্মু। তুমি এখানে কেন? কিছু লাগবে?”
“ফুপি মনি খেতে ডাকে।”
“আচ্ছা চলো।”
যাওয়ার আগে ওয়াশরুমের দরজায় নক করে বলে,
“আমি ডাইনিং রুমে গেলাম। আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন।”
ভেতর থেকে আমান উত্তর করে,
“যাও।”
তিতির ডেকেই চলে গেছে। মিহি টেবিলে খাবার গুছাতে গুছাতে জিজ্ঞেস করে,
“কী হলো? আসেনি?”
“আসতেছে!”
“কী যে করে! আমান অফিস থেকে আসছে। আগে খেয়ে নিবে। তা না!” বিরক্তির স্বরে বিড়বিড় করে বলে মিহি। তিতিরের কানে কথাটা যায়। চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলে,
“আমি গিয়ে দেখি আঙ্কেল ফুপিকে তোয়ালে দিয়ে বেঁধে রেখেছে!”
নিহি ড্রয়িংরুমে পা রাখতেই তিতিরের কথাটা কানে আসে। উপস্থিত সকলেই অবাক হয়। মিহি জিজ্ঞেস করে,
“তোয়ালে দিয়ে বেঁধে রেখেছে মানে?”
নিহির কান দিয়ে মনে হচ্ছে ধোঁয়া বের হচ্ছে। সবাই ওর দিকে তাকাচ্ছে। ইচ্ছে করছে মাটির ভেতর ঢুকে যেতে। আল্লাহ্ গো! এমন পাকনা মেয়ে কাউরে দিও না। সৈকত নিচে গিয়েছিল নীলমকে আনতে। ভেতরে এসে মিহির কথা শুনে নিহির দিকে তাকায়। নিহির লজ্জায় লাল হওয়া মুখটা দেখেই সৈকত আন্দাজ করতে পেরে বলে,
“আরে ধুর! তুমিও ওর কথায় নাচা বন্ধ করো। খাবার দাও তাড়াতাড়ি।”
এরপর চোখের ইশারায় বিড়বিড় করে। মিহি বুঝল কী না জানা নেই। তবে এটা নিয়ে আর কথা বাড়ালো না। এর মাঝে আমানও চলে আসে। নিহির কাছে এসে বলে,
“দাঁড়িয়ে আছো কেন? চলো।”
নিহি জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলে,
“চলো।”
নিজাম ইসলাম আমানকে নিজের পাশের চেয়ারে বসতে বলেন। আমান চেয়ার টেনে বসতে যাবে তখন তিতির চেঁচিয়ে বলে,
“ফুপা তুমি আমার কথা বিশ্বাস করলে না, না? আমান আঙ্কেলকে জিজ্ঞেস করো। আঙ্কেল ফুপিকে তোয়ালে দিয়ে বেঁধেছিল নাকি!”
আমানের আর বসা হলো না। সোজা দাঁড়িয়ে পড়ে। সবার দিকে তাকিয়ে নিহির দিকে তাকায়। নিহির ইচ্ছে করছে লজ্জায় মরে যেতে এখন। তিতির দমে যাওয়ার পাত্রী নয়। আবার বলে,
“বলো আমান আঙ্কেল বলো তুমি। আমি ঠিক বলছি না?”
আমানের এখন পড়ি কী মরি অবস্থা! এইটুকুন বাচ্চা কাকে কী বোঝাচ্ছে। আল্লাহ্ দড়ি ফেলো, উপরে উঠে যাই আমি। পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেবে এখন। সৈকতও বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছে না। পুরো বিষয়টাকে এড়িয়ে যেতে সাহায্য করে তমা। নীলমকে জিজ্ঞেস করে,
“তুমি কি আবার অফিসে যাবে?”
“হ্যাঁ। দু’ঘণ্টার ছুটি নিয়ে এসেছি।” নীলমের উত্তর।
সালেহা বেগম এবার তাড়া দিয়ে মিহিকে বলেন,
“মিহি দেড়ি করিস না আর। খাবার বাড়।”
“দাঁড়িয়ে আছো কেন? বসো তুমি।” আমানকে বলেন নিজাম ইসলাম।
আমানের মুখের অবস্থা লজ্জামিশ্রিত ফ্যাকাসে। এমন লজ্জার মুখে পড়তে হবে ভাবেনি। কিছু না বলে পাশের চেয়ারে বসে। নিহি বসে নীলমের পাশের চেয়ারে। খেতে বসে মনে মনে একশোটা গালি দিচ্ছে আমানকে। সবসময় এত কীসের রোমান্স! এখন কী একটা লজ্জাকর কাহিনী হয়ে গেল। মাবুদ!
_________________
খাওয়ার পর্ব শেষ করে সকলে মিলে গল্পগুজব করে কিছুক্ষণ । নিহি আর তরু বাদে বাকি সবাই নীলমের সঙ্গে চলে যায়। সবাইকে এগিয়ে দিয়ে আমান যায় নিজের বাড়িতে। নিহি কোমরে ওড়না বেঁধে আমানের ফ্ল্যাটে আসে। দরজা খুলে দেয় আবুল। নিহিকে দেখে একগাল হেসে সালাম দিয়ে বলে,
“কেমন আছেন আপামুনি?”
“আলহামদুলিল্লাহ্ ভাই। পরে কথা বলি।” সালামের উত্তর নিয়ে এইটুকু বলেই আমানের রুমে যায়। দরজা লক করে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ। আমান বিছানায় পা ঝুলিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে।
নিহির উপস্থিতি টের পেয়ে আমান বলে,
“সাপের মতো হিসহিস করছো কেন?”
তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে নিহি বিছানার উপর উঠে আমানের গলা চেপে ধরে বলে,
“কী বললেন? কী বললেন আপনি? আমি সাপের মতো হিসহিস করি?”
আমান নিহির হাত ধরে হাসতে হাসতে বলে,
“যেভাবে নিঃশ্বাস নিচ্ছিলে ওমনই মনে হচ্ছিল।”
“আমি সাপ হলে আপনি কী হ্যাঁ?”
“সাপুড়ে। আমি বীণ বাজাবো। তুমি নাচবে আর গান গাইবে,’মে তেরি দুশমন, দুশমন তু মেরি। মে নাগিন তু সাপুড়ে.. মে নাগিন তু সাপুড়ে!”
নিহি আরো রেগে গিয়ে বলে,
“এখানে আমি নাগিন নাগিন খেলতে আসিনি কুত্তা!”
“ছিঃ! পঁচা মেয়ে। জামাইকে কেউ কুত্তা বলে? জান ডাকবা।”
“হ্যাঁ, ঐ আশাতেই থাকেন। আসছি জান কবজ করতে।”
নিহিকে এবার বালিশে শুইয়ে দিয়ে নিজে নিহির পাশে উপুড় হয়ে শোয় আমান। একহাতে নিহির দু’হাত ধরে রেখেছে। রাগে নিহি জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। আমান জিজ্ঞেস করে,
“হয়েছে কী? এত রেগে কেন আছো বলো।”
“আবার জিজ্ঞেস করেন! আপনার জন্য আজ সবার সামনে লজ্জা পেতে হলো আমার।”
“আমার কী দোষ? আমি কি জানতাম নাকি তিতির তখন চলে আসবে!”
“জানা উচিত ছিল। আচ্ছা জানেন না ভালো কথা। আপনার অত রোমান্টিক হওয়া লাগবে কেন তখন? দরজা খোলা ছিল দেখেননি?”
“ওহ! তাইতো। আচ্ছা স্যরি। এরপর থেকে দরজা লাগিয়ে নেব।”
আমানের পিঞ্চ মেরে বলা কথায় নিহি আরো রেগে যায়। উঠে বসার চেষ্টা করে বলে,
“এই সরেন তো আপনি। অসহ্য!”
“ওমা! এখন রাগ করো কেন? আমি তো তোমার কথাই মেনে নিলাম। এই ওয়েট, দরজা লাগিয়ে আসি।”
এরপর পেছনে তাকিয়ে আবার নিহির দিকে তাকিয়ে বলে,
“ওলে বাবা! তুমি দরজা লাগিয়েই এসেছো দেখি। মানে প্রিপারেশন নিয়েই এসেছো।”
নিহিকে ক্ষেপাতে আমানের ভালো লাগছে। নিহি যত রাগ করছে আমানের তত ভালো লাগছে আর হাসছে। ঐদিকে রাগে ইচ্ছে করছে আমানকে মেরে ফেলতে। দাঁত কটমট করে নিহি বলে,
“একবার শুধু হাত দুটো ছেড়ে দেখেন কী করি!”
“জানি তো আদর করবে।”
“আদর? মেরে ফেলব আমি আপনাকে। সত্যিই মেরে ফেলব।”
আমান এবার হাত ছেড়ে দিয়ে বলে,
“মারো তো দেখি!”
নিহি বিছানা থেকে নামতে যাবে তখন আমান আবার টেনে নিহিকে শুইয়ে দেয়। হাত চেপে ধরে বলে,
“আমায় মেরে ফেলার কথা ছিল। চলে যাওয়ার কথা নয়।”
“ধুর! মারবই তো। অস্ত্র নিয়ে আসি।”
“আমায় মারার জন্য তোমার আবার অস্ত্র লাগবে নাকি? তুমি নিজেই তো যথেষ্ট। একটা চুমু দিয়ে দাও। আমি মরে যাই।”
“ধ্যাত!”
“বিশ্বাস হচ্ছে না? এই দেখো…” বলে নিহির ওষ্ঠদ্বয় নিজের ওষ্ঠাগত অধীনে নিয়ে নেয়। ঘটনার আকস্মিকতায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায় নিহি। নিহিকে ছেড়ে দিয়ে আমান হাত ছড়িয়ে বালিশে শুয়ে পড়ে বলে,
“এই দেখো আমি মরে গেলাম।”
নিহি ক্ষেপে বলে,
“ইউ রাবিশ!”
আমান এবার একহাতের ওপর মাথায় ভর দিয়ে শুয়ে নিহির গাল টেনে দিয়ে বলে,
“একটা চুমুর বিনিময়ে যদি রাবিশ ডাক শুনতে হয়, তাহলে আমি হাজারবার রাবিশ ডাক শুনতে চাই।”
আমানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিহি দরজা খুলে বাইরে চলে যায়। আমান হাসতে থাকে অনবরত।
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]