#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya
পর্বঃ০৪
.
“এখন কয়টা বাজে? ”
জোর পূর্বক মুখে হাসির রেখে টেনে, আয়শা হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে, ম্যানেজার স্যার কে বলল..
” স্যার দশ টা পঁচিশ। ”
” এতো লেইট করে এসেছেন, স্যার আপনার জন্য ওয়েট করছেন। অফিসের সি.ই.ও কে অপেক্ষা করা নো টা কি ঠিক?”
” আই এম সো সরি স্যার। মাঝ রাস্তায় জ্যামে আটকে পড়েছিলাম। ”
” ঠিক আছে। এই এক্সকিউজ স্যারের কাছে গিয়ে বলবেন না।”
“ওকে স্যার। ”
” এবার চলুন। ”
আয়শা ম্যানেজার স্যারের পিছু পিছু নাছিমের কেবিনের ঢুকলো। চেয়ারে দুজন ক্লাইন্ট বসে আছে, এক জন পুরুষ আরেক জন মহিলা, মেয়েটার বাদামি রংয়ের ঝাকড়া চুল, ফর্সা হাত দেখা যাচ্ছে,তবে চেহারা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। খুব সম্ভব ফরেনার হবে হয় তো!
নাছিম এক নজর আয়শার মুখ পানে তাকিয়ে আবার ক্লাইন্ট দের সাথে কথায় মনোযোগ দিলো।
আয়শা ফিসফিস করে ম্যানেজার কে বলল…
” স্যার এরা কারা?”
” এনারা, রাশিয়ান। কোম্পানির সাথে ডিল করবেন, সে বিষয়ে কথা হচ্ছে।”
” ওহহ।”
প্রায় আধা ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর, ওনারা চলে গেলেন। নাছিম চেয়ার এদিক ওদিক ঘুরাচ্ছে। আর হাতের আঙুল দিয়ে কলম, ঘুরাচ্ছে। আয়শা তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো নাছিমের দিকে, নাছিমের মধ্যে ‘কেডি পাঠাক’ কের মতো লাগছে কিছুটা।
ম্যানেজার সাহেব, নাছিমের উদ্দেশ্য বললো…
” স্যার ডিল টা কি, হবে? ”
” আই ডোন্ট নো। দুপুর দুই টার পর চিফ ডিজাইনারস, মডেলস, আর ফটোগ্রাফারের সাথে মিটিং হবে। ”
” ওকে স্যার। স্যার নতুন ফটোগ্রাফা কে, আপনি আসতে বলে ছিলেন..”
“সো মিস আয়শা। ”
” ইয়াহ স্যার। ”
” প্রথম দিন লেট..? ”
” একচুয়ালি স্যার, রাস্তায়…”
” লেট কেন হয়েছে জানতে ,চাই নি। অফিসে লেট আসা আমি এক দম পছন্দ করি না। আমি বার বার সুযোগ দিবো না। ”
আয়শা নিচু স্বরে বললো.. “ওকে স্যার। ”
নাছিম ম্যানেজারের উদ্দেশ্য বললো..
” ম্যানেজার সাহেব, সামনের, কেবিনটায় ওনার ডেক্সটপ দেখিয়ে দিন। ”
” ওকে স্যার.. ”
বলেই ম্যানেজার সাহেব, দরজা খুলে চলে গেলেন। আয়শাও পিছু পিছু গেলো। আয়শার জন্য বরাদ্দ ডেক্সটায় আয়শা বসলো। আয়শার স্বপ্ন পূরণে হলো। কতো দিনের স্বপ্ন ছিলো আয়শা, একটা নামী কোম্পানির ফটোগ্রাফার হবে। আজ আয়শার, ছোট বেলার শখ টাই আজ তার প্রফেশন হলো। ভাবতেই আয়শার ভালো লাগছে।
আয়শা, কাজের ফাঁকে এদিক ওদিক তাকাতেই হঠাৎ আয়শার চোখ গেলো নাছিমের কেবিনের দিকে। আয়শা আর নাছিম বরাবর বসে আছে, শুধু মাঝে দুটো সচ্ছ কাঁচের দেয়াল মাত্র। আয়শা কিছুটা আফসোস নিয়ে, বললো…
” হায় আল্লাহ! এই ডেঞ্জারাস খারুস টাকে আমার চোখের সামনেই বসতে হলো।”
” চেহারাটা মাশাল্লাহ কিন্তু একটু হাসে না কেনো? চেহারা দেখো যেনো, একটা হনুমান। ”
বলেই আয়শা নাছিমের দিকে তাকিয়ে, মুখ ভেংচি দিলো, ঠিক তখনই হঠাৎ নাছিমের চোখ আয়শার দিকে চলে গেলো, আয়শা ভেংচি দেওয়া দেখে, নিলো। আয়শা থতমত খেয়ে গেলো, নিজেকে স্বাভাবিক করে কম্পিউটারে মনোযোগ দিলো।
নাছিম থুতনি ঘসে মনে মনে, হাসলো। কতো বড় সাহস মেয়েটার আমার সামনে বসে আমাকেই ভেংচি কাটছে। মিস আয়শা, তোমাকে দৌড়ের ওপর রাখার ব্যাবস্থা করছি। জাস্ট ওয়েইট আন্ড সি।
———————————
রিক্সা ভাড়া মিটিয়ে, ওরিন কলেজ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। একটু বাদের তার বান্ধবীরা আসবে, অপেক্ষায়। এর মধ্যেই একটা ছেলে ওরিনের সামনে এসে দাঁড়ালো। সাদা গেঞ্জি ওপর দিয়ে ব্রাউন রংয়ের জেকেট পড়া, হাতে দামি ঘড়ি। পোশাক, রুচি দেখেই মনে হচ্ছে, ছেলেটা বেশ স্মার্ট ।
ওরিন এক নজর তাকিয়ে আর তাকালো না। হাত ঘড়িটায় সময় দেখে, আবার অপেক্ষা করা শুরু করলো। সামনে দাড়িয়ে থাকা ছেলেটা হালকা হেসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো…
” আমি রাফিদ। মাস্টার্স করছি। ”
ওরিন ছেলেটাকে প্রতি উত্তরে কিছু বললো না। হেন্ড সেক করার জন্য বাড়িয়ে দেওয়া হাত টা গুটিয়ে নিলো। ছেলে ওরিনে কে বললো…
” তোমার নাম বললে না?”
ওরিন সৌজন্যেতার খাতিরে বললো…
” ওরিন। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি । ”
” ভালো। তুমি তাহলে আমার চার বছরের জুনিয়ার।”
“জ্বি। ”
” ওরি৷ আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি? ”
ওরিক অবাক চোখে তাকালো। ওরিনের চাহুনি দেখে ছেলেটাও বিব্রত হয়ে গেলো। ফরিনের বান্ধবীরা চলে এলো, ওরিন ও বান্ধবীদের সাথে ক্লাসের উদ্দেশ্য চলে গেলো। ছেলেটা বোকার মতো দাড়িয়ে রইলো। ওরিনের উত্তর না দেওয়া টা ছেলেটার আত্ন সম্মানে লাগলো।
” মেয়েটার দেমাগ দেখেছিস। স্মার্ট ডেসিং ছেলেটাকে কি ভাবে রিজেক্ট করে দিলো? ‘
ফরিদের কথায় বাধন ফোনের স্ক্রিন ছেরে মাথা উঁচু করে তাকালো। ফরিদের উদ্দেশ্য বললো…
” বুঝলাম না রাফিদ নামে ছেলেটা কে কেনো ভাড়া করে পাঠালি? ”
ফরিদ সান গ্লাস টা পড়ে বললো…
” তোকে বুঝতে হবে না। ”
” কেনো দোস্ত আমি বুঝবো না কেনো? দোস্ত ওই মাইয়া টার প্রেমে টেমে পড়েছিস নাকি মামা। ”
ফরিদ ঠোঁট টিপে, হেসে বললো..আপাতত প্রধান উদ্দেশ্য হলো মেয়েটা কে জ্বালাতন করা। একটু হেরেস্ট করবো। মানুষিক শান্তিএ জন্য। বলেই গাড়ির ভেতর ঢুকে ড্রাইভ শুরু করলো ফরিদ। বাধন কিছুটা অবাক হয়ে ফরিদের দিকে তাকিয়ে আছে, বাধন তুষার কে ছোট বেলা থেকেই চেনে। ফরিদের নিশানা কখনো সরে, না। সেটাও বাধনের ভালো মতোই জানা আছে।
পার্কিং প্লেসে গাড়ি রেখে, ফরিদ আর বাধন ক্লাস করতে গেলো। ক্লাস চলছে, বোর্ডে স্যার অংক করছে। ফরিদ মুখে চুইংগাম ঢুকিয়ে ধীরে ধীরে চিবুচ্ছে। বাম হাতে খাতা থাকলেও ইচ্ছা করেই কছু নোট করছে না।
ঠিক তখনই ফরিদের চোখ গেলো জানালার দিকে, বাইরে সবুজ ঘাস গুলো তে ওরিন বসে আছে। বান্ধবীদের সাথে ঠাট্টা করছে। ঠিক তখনি উচ্চ স্বরে কেউ ফরিদের নাম ধরে ডাক দিলো। ফরিদ সামনে তাকিয়ে দেখলো, তার সামনে প্রফেসর দাঁড়িয়ে আছেন।
ফরিদ থত মত খেয়ে দাড়ালো, প্রফেসার বললেন..
” হুয়াট ইজ ডিভাইস ম্যাথ?”
ফরিদ উত্তর দিতে পারলো না। চুপ করে দাড়িয়ে রইলো। প্রফেসার গলা ছেড়ে খেকারি, দিয়ে বললো…
” কোন দিকে মন থাকে?”
” সরি স্যার। ”
” বাইরে না দেখে ক্লাসে মন দাও..। বলেই স্যার চলে গেলেন। ”
ফরিদের দিকে ক্লাসের সবাই তাকিয়ে, আছে। ফরিদ চুপ করে বসে পরলো, তার চোখ বার বার, নরম ঘাসে বসে থাকা তরুণীর দিকে যাচ্ছে কেনো?
ফরিদ নিজের চুল নিজেই চেপে ধরলো।
।
।
দুপুর দুই টা বাজে…………….
মিটিং রুমে সুদর্শন ছেলে মডেল এবং সুন্দরী মেয়ে মডেল বসে আছে। টেবিলের এক পাশে আয়শা ও বসে আছে। সি.ই.ও নাছিম হোসাইনের অপেক্ষায় আয়শা বোরিং ফোন ঘাটছে।
ঠিক তখনি, একটা ছেলে আয়শার উদ্দেশ্য বললো…
” আপনি নিউ ফটোগ্রাফার রাইট? ”
আয়শা ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে, বললো…
” জ্বি। ”
” লেডি, ফটোগ্রাফার ইন্টারেস্টিং। ”
আয়শা ভ্রু কুচকিয়ে বললো…
” ইন্টারেস্টিং কেনো?মেয়েরা কি ফটোগ্রাফি প্রফেশনে কাজ করতে পারে না?”
ছেলেটা হালকা হেসে বললো..
“অফ কজ পারে। বাই দা ওয়ে। ”
“দিস ইজ মডেল আকাশ মাহমুদ। ”
” আয়শা। ”
ছেলেটা হাসি মুখে, আয়শার সাথে আলাপ করছে ঠিক তখনি নাছিম রুমে প্রবেশ করলো। সবাই দাড়িয়ে নাছিম কে সম্মান জানালো। নাছিম, আয়শার আর আকাশের দিকে আড় দৃষ্টিতে তাকালো। সবাইকে বসতে বলে নাছিম মিটিং শুরু করলো।
টেবিলে আধো ঝুকি দিয়ে বললো…
” রাশিয়ার নাম কড়া ব্রেন্ড আমাদের সাথে ডিল করতে যাচ্ছে। আমি কিছু নতুন ফ্যাশন কালেকশন লঞ্চ করতে যাচ্ছি। পোশাক যত ফ্যাশনেবাল হবে, ততই স্মার্ট লাগবে।
দু দিনের মধ্যেই নতুন কালেশনে ছবি চাই। মডেলদের,বেস্ট লুকে। ”
।
।
চলবে
#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya
পর্বঃ–০৫
চারিদিকের উজ্জ্বল আলোয়, আর সুন্দর সজ্জায় জায়গা টা কৃত্রিম সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে। রুম টা বেশ বড়, অনেকে এখনো লাইটিং ঠিক করতে ব্যাস্ত। এসির বাতাসে আয়শার হালকা ঠান্ডা লাগছে। আয়শা ক্যামেরাটা টেবিলে রেখে গাঁয়ে ওরনা পেঁচালো।
সারা দিনের ক্লান্তি নিয়ে আয়শা স্টুডিও রুমে বসে আছে। আজই ব্রেন্ডের পোশাকের ফটোগ্রাফি হবে। ছবির ওপরই পোশাকে সৌন্দর্য প্রকাশ পায়। আয়শা বসে আছে, মডেলদের ছবি তোলার জন্য। কিন্তু তারা এখনো মেক আপ রুমে রেডি হচ্ছে। আয়শা বসে বসে বোর হচ্ছে। এদিক ওদিক তাকিয়ে লাইটিং দেখছে। ”
দরজা খোলার শব্দ শুনে আয়শা দরজার দিকে, তাকালো। নাছিম দাঁড়িয়ে আছে, ম্যানেজার স্যারের সাথে কোন বিষয়ে কথা বলছেন হয়তো। নাছিমের কথা বলার স্টাইল এটিটিউড সবাটাই অন্য রকম। অনেক টাই ঘোর লেগে যায়, নাছিমের ইউনিক পারসোনালিটি দেখে। আয়শা এক দৃষ্টিতে নাছিমের দিকে তাকিয়ে আছে। নাছিমের কথা বলার গতি মন দিয়ে দেখছে।
কথা বলতে বলতে নাছিম হঠাৎ আয়শার দিকে তাকালো, সারা দিনের ক্লান্তির ছাপ চেহারার স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। হালকা লাল রংয়ের চুল গুলো উঁচু করে খোপা করা, আকাশি রংয়ের কুরতি, আর জিন্স পড়া। মুখে ক্লান্তির ছাপ থাকলেও সুন্দর আলোর সজ্জায়, আয়শা কে বড্ড স্নিগ্ধ লাগছে। শ্যামবর্ণ মুখে উজ্জ্বলতা ছেঁয়ে আছে, সাথে মিশে আছে কিঞ্চিৎ ক্লান্তি।
নাছিম পকেটে হাত ঢুকিয়ে ধীরে ধীরে আয়শার কাছে হেটে আসছে, আয়শা দ্রুত চোখ নামিয়ে নিলো। এতো ক্ষন এক ধ্যানে নাছিম স্যার কে দেখছিলো সে, এখন তার কাছে ব্যাপারটা খুবই বিব্রতকর কর লাগছে। আয়শা এখন এসির নিচে বসেও ঘামছে। চোখ দুটো পিট পিট করছে, স্যার কি মনে করলো? ইসস নিশ্চয়ই আয়শা কে ছ্যাচড়া ভাববে, ভাবলে ভাবুক তাতে আয়শার কি। হুহ…’
নাছিম আয়শার কাছে, আসলো আয়শা ভদ্রতার খাতিরে উঠে দাড়ালো। তখনি নাছিম বলল…
“বসুন মিস আয়শা।”
আয়শা বসে পরলো। নাছিম তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আয়শা কে দেখছে। আয়শা নার্ভাসনেসের চোটে ঘামছে, এই ভয়ংকর লোকটা কিছু বলবে না তো! এবারে চোখ রস গোল্লার মতো করে তাকিয়ে আছে কেনো?
নাছিম ঠোঁট টিপে চাপা হাসলো, আয়শা কে বুঝতে দিলো না। নাছিম গম্ভীর কন্ঠে বললো…
“তখন কি দেখছিলেন মিস আয়শা?”
” ক ক কখন স্যার? ”
” যখন আমি ম্যানেজার সাহেবের সাথে কথা বলছিলাম তখন আপনার মন কোথায় ছিলো? শুনি?”
আয়শা কিছু বললো না। বাম হাত দিয়ে টেবিল খুঁটিতে শুরু করলো। নাছিম হালকা কাঁশি দিয়ে বললো..
” সুন্দর ছেলের দিকে তাকাবেন স্বাভাবিক। আপনি চুপ করে আছেন কেনো? লজ্জা তো আমার পাওয়ার কথা। ”
আয়শা অবাক চোখে গোল গোল করে তাকিয়ে রইলো। নাছিম ভাব নিয়ে বললো…
” এবাবে তাকাবেন না, এবার আমি সত্যি লজ্জা পাচ্ছি। ”
বলেই নাছিম হালকা হাসলো। আয়শা মাথা নিচু করে ঠোঁট বিক্রিতি করে ভেংচি কাটলো। ‘ ব্যাটা ধড়িবাজ একটা।
আয়শার বিড় বিড় করে কথা বলা,নাছিম শুনতে পেলো। নাছিম অবুঝ ভাব নিয়ে বললো..
” কিছু বললেন..”
আয়শা মুখে জোর করে হাসি ফুটিয়ে বললো…
” কোথায়? নাহ তো স্যার। ”
তখনই, আকাশ নাছিম এবং আয়শার সামনে এলো, গাল ভর্তি হাসি দিয়ে, বলল…
” হুয়াট্স আপ গাইজ?”
নাছিম হালকা হেসে উত্তর দিলো..
” গুড। ”
” তোমার কি খবর আয়শা?”
আয়শা সৌজন্যেতার হাসি দিয়ে বললো…
“ভালো। ”
নাছিম আড় দৃষ্টিতে তাকালো, আকাশ কে আর আয়শার সাথে কথা বলার সুযোগ দিতে চাইলো না। নাছিম, আকাশে উদ্দেশ্য বললো…
” শর্টের জন্য রেডি?আকাশ।”
” ইয়েস নাছিম। ”
” সো হুয়াই ইউ লেট? লেটস গো ম্যান৷ ”
আকাশ একের পর এক পোজ দিচ্ছে, আয়শা ছবি তুলছে, আয়শা কিছুটা মনোযোগ দিয়ে, আকাশের তোলা ছবি গুলো দেখলো, আয়শা আকাশের উদ্দেশ্য বললো…
” মিস্টার আকাশ আপনার শার্ট টা ঠিক করুন। ”
” কোথায় ঠিক করবো?”
” কোমরের দিকে, শার্ট টা নিচে নামান। ”
আকাশ নিজের শার্ট টা ঠিক করতে পারলো, না। অগত্যা আয়শা গিয়ে, আকাশের শার্ট টা ঠিক করে, দিলো। দূর থেকে এই দৃশ্য টা দেখতেই নাছিম হাত দুটো মুঠো করে করে নি লো। নাছিমের গা শির শির করছে। রাগ টা হুট করেই বেরে গেছে। তবুও নাছিম ধৈর্য নিয়ে বসে রইলো।
আয়শা আকাশের ছবি তুললো, তাছাড়া আরো মডেল’স দের লেডি পোশাক, ওয়েস্টার্ন সহ নানা রকম ছবি তুললো…
।
।
রাত নয় টায় আয়শা বাড়ি ফিরলো। ওরিন দরজা খুলেই অবাক হয়ে গেলো। আয়শা কে বড্ড ক্লান্ত লাগছে, ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিলো। ওরিন রাতের খাবার খাবার খাওয়ার জন্য ডাক দিলো, কিন্তু আয়শা ডিনার করতে গেলো না। কর্ম জীবন বড্ড কঠিন, সারা দিন কাজ শেষে যে, তৃপ্তি পাওয়া যায়, তাই তো মানুষ কে দ্বায়িত্ব পালন করার শুখ দেয়।
বালিশে জরিয়ে আয়শা জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছি। ভাতে প্লেট হাতে নিয়ে রুমে ঢুকলো ওরিন। আয়শা কে ডাক দিলো, আয়শা উঠতে চাইলো না। ওরিনের জোরা জুরি তে আধো শোয়া হয়ে বসলো। ভাতের লোকমা আয়শার মুখে পুরে দিয়ে ওরিন বললো…
” আপু তোমার বস, কেমন ধারা লোক? একটা মেয়ে কে এতো রাত পর্যন্ত কাজ করালো? ”
” ফটোশুটে ছিলো, তাই দেরি হয়েছে। আগামীকাল আর লেট হবে না। ”
” হুম। তোমাকে ক্লান্ত লাগছে আপা। ”
আয়শা খাবার চিবিয়ে খেতে খেতে বললো..
” ঘুমালে, ঠিক হয়ে, যাবে। ”
খাওয়া শেষে ওরিন, আয়শার উদ্দেশ্য বললো..
” ড্রেস চেঞ্জ করে শুয়ে পড়ো আপা। ”
আয়শা বিছানা থেকে নামলো না। বাইরের পোশাক পড়েই শুয়ে পড়লো। ওরিন আয়শার কান্ড দেখে নিঃশ্বাস ছেরে বললো,
” তুমি জীবনেও শুধরাবে না আপা। ”
বলেই ওরিন আয়শার ওপর, পাতলা কম্বল মুড়ি দিয়ে দিয়ে দিলো, ওরিন। আবার পড়তে বসলো।
রাত জেগে পড়া শোনা করার অভ্যাস হয়ে গেছে ওরিনের। কিছুদিনের মধ্যেই ওরিনের কেমিস্ট্রি সাবজেক্ট ক্লাস টেস্ট হবে। ওরিন চাপ্টার গুলো, বার বার রিভাইস দিচ্ছে।
।
।
রাতে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হওয়ার কারনে রাস্তায় বেশ কাঁদা জমেছে। আয়শা সাবধানে সাবধানে পা এগুচ্ছে। পিছল খেয়ে পড়লেই সর্বনাশ। রাস্তার মোড় পর্যন্ত আয়শা হেটে গেলো। মোর থেকে, আয়শা রিক্সায় করে অফিসে পৌছালো।
আজ ঠিক সময় মতো, আয়শা অফিসে পৌছে গেছে। নিজের ডেক্সে বসতেই, আয়শার চোখ, গেলো নাছিমের কেবিনে। সচ্ছ কাঁচের ওপাশে চেয়ারটা খালি। আয়শা হাত ঘড়ির দিকে তাকালো।
‘নাছিম স্যার তো খুব পানচ্যুয়াল মানুষ। সে দিন এতো বড় বড় ডায়লগ দিয়ে আজ নিজেই লেট। হুহ। ‘ আয়শা নিজের কাজে মন দিলো। গত কাল তোলা ছবি গুলো চেক করে এডিট করা শুরু করলো। এক ধ্যানে কাজ করার পর আয়শা, চা খাবার জন্য উঠতেই অবাক হলো।
দুপুর বারো টা বাজে অথচ নাছিম এখনো আসলো না। কেবিন ফাঁকা। হুট করেই আয়শার মনে প্রশ্ন জাগলো নাছিমের ব্যাপারে। নাছিমের না আসার কারন টা কি?
‘ স্যার কোন সমস্যায় জরিয়ে গেলো না তো? ‘
।
।
চলবে
#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya
পর্বঃ০৬
আয়নার সামনে, সাজগোছ করছে মারিয়া, গোলাপি রঙের জামদানীতে তাকে খুব মানিয়েছে। চোখে কাজল পড়ার সময় মারিয়া দেখলো পিছনে নাছিম দাঁড়িয়ে আছে। মারিয়া হালকা হেসে বললো…
” কেমন লাগছে ভাইয়া, আমাকে?”
” ভালো। ”
মারিয়া ঠোঁট উল্টিয়ে বললো,
” শুধু ভালো? ”
নাছিম, বোনের কপট রাগ দেখে হালকা হাসলো, মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো…
” খুব ভালো লাগছে, গোলাপি রানী। ”
মারিয়া, দাঁত বের করে হাসলো, ফরিদ রুমে ঢুকে বললো…
” ভাইয়া পাত্র পক্ষ চলে এসেছে। ”
” তাই নাকি? চল ড্রইং রুমে যাই। ”
নাছিম রুম থেকে বের হলো, সাথে ফরিদ ও মারিয়া ফরিদ কে পিছু ডাক দিয়ে বললো…
” এই ছোট ভাইয়া? ”
ফরিদ ব্যাস্ত ভঙ্গিতে বললো..
” কি বল?”
“আমাকে কেমন লাগছে, বললে না যে?”
ফরিদ মুখ বাকিয়ে বললো…
” রাক্ষসী রাণী কট কটির মতো। ”
বলেই ফরিদ হো হো করে হাসলো, মারিয়া রাগে, বিড় বিড় করছে। ওরিন হাসি থামিয়ে বললো…
” তুষার তোর বিটকেল হবু বর চলে এসেছে। ”
বলেই আবারও ফরিদ গা দুলিয়ে হাসতে হাসতে রুম থেকে প্রস্থান করলো৷
ড্রইং রুমে, তুষার এবং তার পরিবার মারিয়াকে দেখতে এসেছেন। তুষারে এখনো বিশ্বাস হচ্ছে, না সে মারিয়া কে দেখতে এসেছে। মারিয়ার দু ভাই কে মানানো তা বড্ড কষ্ট করছিলো। এট লাস্ট তারা দুজন পেরেছে। সবার সম্মতিতে মারিয়া, তুষারের বিয়ে হবে শুধু কিছু দিনের পালা।
মনে এক গামলা টেনশন নিয়ে, তুষার এদিকে সেদিন তাকাচ্ছে। মারিকে দেখার চাপা উত্তেজনা কাজ করছে তার মনে। ওরিদ বুকে হাত দুটো ভাজ করে, তুষার কে ফিস ফিস করে, বললো…
” মারিয়া কে দেখবে? ”
তুষার আন মনে বললো…” হুম। ”
ফরিদ মুখ ফুলিলে চাপা হাসলো। তুষার ফরিদ কে দেখে থতমত খেয়ে গেলো। ফরিদ তুষারে পিঠে হালকা চাপর মেরে বললো…
” কুল ব্রো! কিছুক্ষণ পরই আমাদের বোন আসবে। ”
———-
মারিয়া ধীরে ধীরে করিডোর পেরিয়ে ড্রইংরুমে এলো। সবাই এক নজরে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আবার কেউ প্রিয়তমা কে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে, মুগ্ধ হচ্ছে। মারিয়ে, তুষারের চোখ পানে এক নজর তাকিয়ে, চোঁখ নামিয়ে ফেললো। তুষার প্রসন্নতার হাসি দিলো।
মারিয়া সবাইকে, সালাম দিলো। মাঝ বয়ষী একজন ভদ্রমহিলা বলেন,
” বসো মা। ”
মারিয়া মহিলার পাশে গিয়ে বসলো। মহিলা মারিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন…
” মাশাল্লাহ। আমার ছেলের পছন্দ ভালো, বলতেই হয়। ”
মারিয়া, লজ্জা পেলো। এক জন ভদ্রলোক বললেন।
” নাছিম তোমার বোন কে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে। মারিয়া কে, ছেলের বউ হিসেবে পাওয়া আমাদের সৌভাগ্যবই কি! আমরা কি কোন ভালো ডিসিশনে যেতে পারি? ”
নাছিম বিনয়ের সাথে হাসি দিয়ে বললোন…
” অবশ্যই আংকেল। তবে আমার দাদির মতা মত টাও জরুরি। ”
এতোক্ষণ নাছিমের, দাদি শেহতাজ বেগম চুপ করেই ছিলেন৷ এখন কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন। সবাই তার মতামতের অপেক্ষায় আকুল হয়ে আছে !
শেহতাজ বেগম, ক্ষানিকটা ভাব নিয়ে, বললো…
” এই পোলা, উমাইন্না মুরগীর মতো বসে আছো ক্যা?”
তুষার ক্ষানিকটা ঘাবড়ে গেলো। শুকনো ঢোক গিলে তুষার দাদির কথা মনোযোগ দিলো, দাদি কর্কশ ভাষায় বললেন…
” তুমি উমাইন্না মুরগী হইলে, আমার পুতি পুতনি, উমাইন্না ওইবো!”
তুষার অবাক হয়ে তাকিয়ে, রইলো। মারিয়া তুষারের রিয়েকশন দেখে, মুখ টিপে হাসলো।
” আমার নাতিনের লগে বহো (বসো) বহো দিহি? কেমন লাগে দিহি.. ”
তুষার হালকা হেসে, দাদির কথা মতো, মারিয়ার পাশে এসে বসলো। দাদী খুশি হয়ে বললেন..
” বাহ বাহ ভালা মানাইছে। ”
শেহতাজ বেগমের, কথা শুনে সবার মুখে হাসি ফুটলো। তুষারের পরিবার আংটি পড়িয়ে, এবং ঠিক বিশ দিন পর বিয়ের ডেট দিয়ে বিদায় নিলেন সবাই।
।
মনে মনে প্রশান্তি নিয়ে বিছানায়, মারিয়া শুয়ে আছে। ঠুক ঠুক লাঠির শব্দ পেয়ে, বুঝতে পারলো, দাদী রুমে আসছেন। মারিয়া চোখ বুজে শুয়েই রইলো। শেহতাজ বেগম বিছানার, পাশে বসে মারিয়ার চুল গুলোয় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন…
” ঘুমাইয়া গেছিস নাকি?”
” নাহ.. দাদী। তোমার সাথে একটু ঝগড়া করতে, মন চাইছে। ”
শেহতাজ বেগম, ছোট ছোট করে বললেন..
” আমি কি করছি? ”
” এমন একটা সিনক্রিয়েট না করলেই পারতে। ”
” তলে তলে ফিরিত (প্রেম) করছ। আমি জানি! ”
মারিয়া জিব্বাহ কাটলো, দাদিও জেনে গেছে। শেহতাজ বেগম মারিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে কন্ঠে বললেন…
” তোদের বাবা মার এক্সিডেন্ট যখন হয়েছিলো তখন নাছিমের বয়স ষোল বছর। তুই, তুষার তখন ছোট ছিলি, কত কষ্ট করে তোদের বড় করেছি। যার তার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য নাকি? ”
মারিয়া স্তব্ধ হয়ে শুয়ে দাদির কথা শুনতে লাগলো, চোখ দিয়ে, কয়েক ফোটা জল গরিয়ে বিছানার চাদরের সাথে মিলিয়ে গেলো। মারিয়া দাদির হাত পেঁচিয়ে ধরে বললো…
” তুষার খুব ভালো ছেলে দাদি। ”
দাদি মারিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো…
” জানি রে মেয়ে। ” মোরগটা উমাইন্নার মতো হলেও খুব ভালো মোরগ। ”
মারিয়া দাদীর কোলে মাথা রেখে , ঠোঁট দুটো প্রশারিত করে হাসলো।
।
।
” স্যার, আসবো?”
নাছিম মুখ তুলে তাকিয়ে, দেখলো। আয়শা এসেছে,
” আসুন। ”
বলেই আবার নাছিম নিজের কাজে মন দিলো। আয়শা ভেতরে ঢুকলো, নাছিম কে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করলো। নাছিম হালকা কাঁশি দিয়ে বললো…
” মিস আয়শা…আই নো আমি খুব হ্যান্সাম । এভাবে তাকাবেন না প্লিজ৷ ”
আয়শা নাছিমের কথা শুনে, বিষম খেলো। আয়শার হুট করেই কাঁশি শুরু হলো…
নাছিম তাড়া দিয়ে বললো…
” বসুন প্লিজ…”
” আয়শা বসলো। ”
নাছিম পানির গ্লাস টা এগিয়ে দিলো। আয়শা দু ঢোক পানি গিলে, গ্লাস টা রেখে দিলো।
নাছিম, চেয়ার ঘুরিয়ে, বুক ম্যাট টা নাড়তে নাড়তে বললো…
” আমার কেবিনে আসার কারন?”
আয়শা মনে মনে, বললো ‘ লুঙ্গি ডান্স দিতে আসি নাই স্যার। হুহ…
” কি ভাবছেন? ”
” স্যার ফটো শ্যুটের ছবি গুলো। ”
” হুঁ??”
” এডিটিং শেষ। আপনি বললেই প্রিন্ট আউট করবো। তার আগে ছবি গুলো দেখবেন প্লিজ ”
” শিওর। দেখান।”
আয়শা নাছিম কে ছবি দেখাচ্ছে, নাছিম আয়শাকে থামিয়ে দিয়ে বললো…
” সরি, ক্লিয়ার হচ্ছে না। ”
আয়শা ট্যাব টা নিয়ে নাছিমের একটু কাছে গেলো। উবু হয়ে, ছবি গুলো নাছিম কে দেখাচ্ছে। নাছিম ছবি, দেখার ভান করে আয়শাকে আড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
ছবি গুলো, দেখানোর পর আয়শা বললো…
” স্যার ঠিক বলেছি তো?”
নাছিম, আয়শার মুখ পানে তাকিয়ে, আন মনে বললো…
” ইয়েস। ”
আয়শা খুশি হয়ে, বললো…
” দেখেছেন তো স্যার। আয়শার কামাল। আমার মতো ফটো গ্রাফার পাওয়াই মুশকিল। ”
নাছিম আয়শার কথা শুনে অবাক হলো মেয়েটা নিজেই নিজের প্রশংসা করছে। কি অদ্ভুত!
নাছিম কিঞ্চিৎ গম্ভীরতা নিয়ে বললো…
” খুব আহামরি ভালো কাজ করেন নি। ইটস ইউজুয়াল! ”
আয়শার মুখটা শুকিয়ে গেলো। আয়শা নাছিম কে মনে মনে ভেংচি কাটলো। প্রশংসা করতে জানে না। একটু প্রশংসা করলে কি এমন মহাভারত অসুদ্ধ হতো?
ব্যাটা খারুস, উজবুক একটা!
।
।
চলবে
#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya
পর্বঃ০৭
চারিদিকে সন্ধ্যার আবির্ভাব ঘটেছে। সূর্যে ঢলে পরেছে, আকাশ টা ক্ষানিক কমলা রং ধারণ করেছে। রিক্সা ছুটছে শাহবাগের উদ্দেশ্য। কিছুক্ষণের মধ্যেই আয়শা তার বাসায় পৌঁছে গেলো, ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিল্ডিংয়ে ঢুকলো। চার তলায় এসে কলিং বেল চাপতেই, আয়শার বাবা আফজাল সাহেব দরজা খুলে দিলেন।
মূহুর্তেই ক্লান্তি ভাবটা আয়শার মুখ থেকে সরে গেলো। বাবা কে দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো। বাসায় ঢুকে ধপাস করে আয়শা সোফায় বসে পরলো। আফজাল সাহেব তাড়া দিয়ে বললেন…
” কি করছিস মা। ফ্রেশ হয়ে তারপর রেস্ট নে…”
আয়শা হালকা হেসে বললো…
” তুমিও না বাবা। একদম মায়ের মতো করো। ”
আফজাল সাহেব আয়শার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন…
” হ্যাঁ। আমি এখন তোর মা আমি তোর বাবা। যা ফ্রেশ হয়ে আয়। ”
আয়শা উঠে রুমের দিকে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে বারান্দায় এসে দাড়ালো। ঠিক তখনই আফজাল সাহেব বললেন…
” আয়শা….”
” হ্যাঁ বাবা। ”
আফজাল সাহেব কফির কাপ টা এগিয়ে দিয়ে দিলেন। আয়শা কফির কাপে চুমুক দিয়ে, হালকা হেসে বললো…
“বাবা…তোমার মতো বেস্ট কফি কেউ বানাতে পারবে না। ”
মেয়ের মুখে প্রশংসা শুনে আফজাল সাহেব মনে মনে খুশি হলেন।
” সারা দিন তুই অফিসে থাকিস ওরিন চলে যায় কলেজে আমার একা একা ভালো লাগে না। করার মতো কোন কাজ পাই না। বোরিং লাগে সারা দিন। আমাদের ছাদে কিছু গাছ লাগিয়েছি। ”
” তাই নাকি বাবা?”
“হুম। তোর সাব্বির আংকেল কে দিয়ে কিছু আনকমন ফুল গাছের বীজ আনিয়েছি। ”
” ওয়াও বাবা, আমাদের ছাদের গেট আপ তাহলে পুরো চেঞ্জড। ”
” হ্যাঁ। ছাদে গিয়ে একবার দেখে আসিস। ”
” ঠিক আছে বাবা। ”
।
।
কফি খাওয়া শেষ করে আয়শা রুমে ঢুকতেই এক ঝটকা খেলো। বিছানা ভর্তি শাড়ি দিয়ে ওরিন অগোছালো করে রেখেছে। গালে হাত দিয়ে বিছানার এক কোনে বসে আছে ওরিন।
আয়শা মৃদু চিতকার দিয়ে বললো..
” এগুলো তুই কি করেছিস?”
ওরিন বিষন্ন মনে বললো “আগামীকাল কলেজে রবিন্দ্র জয়ন্তীর অনুষ্ঠান। আমি পার্ফমেন্স করবো। ”
” সেটা তো ভালো কথা। কিন্তু তুই মন খারাপ করছিস কেনো?”
” আমি শাড়ি ঠিক মতো পরতে পারি না, আপু। আর এতো গুলো শাড়ির মধ্যে কোনটা সিলেক্ট করবো তাও বুঝতে পারছি না। ”
আয়শা লাল পারের সাদা শাড়িটা ওরিনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো..
” কুল কুল আমি আছি তো। এই শাড়িটা তোকে অনেক সুন্দর মানাবে। ”
ওরিনের মুখে হালকা হাসির আভা ফুটে উঠলো। পরক্ষনেই হাসি মিইয়ে গেলো।
” আপু কিন্তু শাড়ি পরবো কি ভাবে?”
” আমি তোকে পড়িয়ে দিবো?”
” তুমি শাড়ি পড়াতে পারো? ”
” পারি না৷ বাট ইউটিউব আছে না? ”
বলেই আয়শা হাসার চেষ্টা করলো।
” আপু তুমিও ইউটিউবের ভরসায় আছো?”
” কি আর করবো বল? যার কেউ নাই তার ইউটিউব আছে। ”
বলেই আয়শা হো হো করে হেসে দিলো। ওরিন ও আয়শার সাথে সমান তালে হাসতে শুরু করলো৷
————– পর দিন———-
সকালে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ কফি খেয়ে আয়শা রান্না বসিয়ে দিলো। মা মারা যাওয়ার পর থেকেই আয়শা রান্না করে। বাবা রান্না লোক রাখতে চাইলেও আয়শা রাজি হয় নি, রান্নাটাকে নিত্য দিনের কাজ হিসেবে না রেখে প্রতিটি দিনে শুরুর নিয়ম বানিয়ে ফেলেছে।
বাবা কে কফি দিয়ে, আয়শা ওরিন কে ডাক দিতে গেলো। আয়শার ডাকে ওরিন আড়মোড়া হয়ে উঠে বসলো। ওরিন ওয়াশ্ররুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। ওরিন কে শাড়ি পরিয়ে দিয়ে, কোন রকমের নাস্তা খেয়ে অফিসে জন্য আয়শা বেরিয়ে গেলো।
আয়নার সামনে বসে ওরিন হালকা সাজ গোছ করে নিলো। আপুর চয়েজ আছে বলতেই হবে। কি সুন্দর শাড়িটা সিলেক্ট করে দিলো। ওরিন রেডি হয়ে কলেজের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরলো।
সকাল দশ টা………
আয়শা অফিসে ঢুকে হাফ ছেড়ে বাঁচলো। আজকে ঠিক সময় অফিসে পৌছাতে পেরেছে সে। রিসিপশনে বসা মিলি নামে মেয়েটা মুখ বাকিয়ে বললো…
” আজও আগে আসতে পারলে না? ”
আয়শা জোরে নিশ্বাস নিয়ে বললো…
” লেট ও তো হয় নি। ”
” ওই খারুস টা কি চলে এসেছে?”
” আয়শা ”
” হুম বলো। ওই খারুস টাকি এসেছে?”
মিলি চোখ ইশারা করে বললো,” পিছনে তাকাও।”
” পিছনে খারুস টা দাড়িয়ে আছে নাকি?”
বলেই পিছনে তাকালো আয়শা। আয়শার হাসি হাসি মুখটা ভয়ে শুকিয়ে গেলো আস্ত একটা ঢোক গিললো। নাছিম পিছনেই দাঁড়িয়ে আছে। আয়শা কেঁশে উঠলো, মুখে কৃত্রিম হাসি জুটিয়ে বললো…
” গুউ গুউ গুড মর্নিং স্যার ”
নাছিম কে দেখে বেশ মনে হচ্ছে সে, রেগে আছে। তবুও নিজেকে কান্ট্রোল করে নাছিম বললো…
” মিস আয়শা আপনি তো বেশ ভালো নাম রাখতে জানেন?”
আয়শা জোর করে হাসার চেস্টা করে বললো…
” ইয়ে মানে হ্যাঁ স্যার। ”
নাছিম দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে আছে। আয়শার উদ্দেশ্য করে বললো…
” কয়েক মাস আগের ফটো শ্যুটের ছবির ফাইল গুলো, ম্যানেজারের কাছ থেকে নিয়ে আমার কেবিনে আসুন।”
বলেই হন হন করে নাছিম নিজের কেবিনের দিকে চলে গেলো।
আয়শা বিড় বিড় করে নাছিম কে গালি দিচ্ছে। মিলি খোঁচা মেরে বললো…
” আজ বোধহয় তোমার কপালে শনি আছে। স্যারের রুমে যাবার আগে দোয়া দুরুদ পরে যেও। ”
আয়শা মেনেজার স্যারের রুমে থেকে, ফটো শ্যুটের ছবির ফাইল গুলো নিয়ে নাছিমের রুমে দিকে এগুলো। এই মোটা মোটা ফাইল গুলো দিয়ে খারুস টা কি করবে আল্লাহ পাকই জানেন।
দরজাটা আধা ফাঁকা করে রুমে উঁকি দিয়ে, আয়শা বললো…
“স্যার আসবো? ”
” আসুন। ”
আয়শা রুমে ঢুকলো, নাছিম ল্যাপটপে কাজ করছে এ দিকে আয়শা বেশ কিছুক্ষণ ধরে আয়শা দাঁড়িয়ে আছে। এই খারুস টা বসতেও বলছে না। আয়শার মাথায় রাহে আগুন ধরে যাচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ পর, নাছিম ল্যাপটপ থেকে চোখ ফিরিয়ে বললো…
” বসুন মিস আয়শা। ”
আয়শা ফাইল গুলো রেখে বসলো।নাছিম বলতে শুরু করলো…
” এক মাসের মধ্যেই রাশিয়ায় আমাদের ব্রেন্ডের ডিল হবে। এই বছরের সব গুলো কালেশন্সসের ছবি। রেডি রাখবেন।”
” ওকে স্যার। ”
” আবার নতুন নাম রাখা শুরু করে দেবেন না আবার। ”
আয়শা লজ্জা পেলো। নাছিম উঠে দাঁড়ালো, আবার বলতে শুরু করলো..
” এক ঘন্টা পর মিটিং থেকে যেন এসে দেখি আপনি কাজ করছেন। ”
বলেই নাছিম তার কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেলো। আয়শা জোরে শ্বাস ছারলো। ফাইল থেকে ফটো শ্যুটের ছবি গুলো নিয়ে আয়শা ঘাটা ঘাটি শুরু করলো। ফ্লাক্স থেকে কফি বের করে আয়শা কফির কাপে চুমুক দিলো। বড্ড ক্লান্ত লাগছে আয়শায়। চুলের খোপা ছেরে রিলাক্সে টেবিলে বসে কফি খাওয়ায় মন দিলো আয়শা।
সকাল সারে দশটা বাজে,
ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে তরুণ-তরুণীদের নানা রকম সাজে বেশ জাকজমক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। কেউ গিটার বাজিয়ে গানের সুর তুলছে, তো কেউ সাজ গোছ ঠিক করতে ব্যাস্ত।
হাতে এক কাপ চা নিয়ে বান্ধবীদের সাথে কথা বলছে ওরিন। ওরিন হাসতে হাসতে হঠাৎ কারো সাধে ধাক্কা খেলো। পেছন থেকে কারো মৃদু চিতকারের শব্দ ভেসে এলো। ওরিন পেছন ঘুরে তাকাতেই চমকে উঠলো। কারন…
।
।
চলবে।