ইচেঁপোকা এবং সে পর্ব-৮+৯+১০

0
652

#ইচেঁপোকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ০৮

হাতে এক কাপ চা নিয়ে, রাস্তার এক সাইডে বান্ধবীদের সাথে কথা বলছে ওরিন। ওরিন হাসতে হাসতে হঠাৎ কারো সাধে ধাক্কা খেলো। পেছন থেকে কারো মৃদু চিতকারের শব্দ ভেসে এলো। ওরিন পেছন ঘুরে তাকাতেই চমকে উঠলো। কারন ফরিদ যখন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো, ওরিন পেছনে না তাকিয়েই ভুলে হাই হিল দিয়ে ফরিদের পায়ে ভর দেয়।

ফরিদ ব্যথায় কুকড়ে উঠেছে, বেচারার মুখ খানা লাল হয়ে গেছে। ওরিন তাড়া হুড়ো করে বললো…

” আই এম সো সরি ভাইয়া। আমি ঠিক খেয়াল করি নি।এক্সট্রিমলি সরি…”

ফরিদের পেছন থেকে বাধন মৃদু ধমক দিয়ে বললো…

” কিসের সরি! চোখে দেখো না নাকি? পা টাকে তো আলুর দম বানিয়ে দিলেন। ”

তনু কিছুটা রাগ দেখি বললো…

” খেয়াল করো নি। ভুল তো হতেই পারে, তাই বলে এবাবে বলবেন। ”

” তো কি করবো?”

তনু আবারও ফোস করে বললো ” কি করবেন মানে? একটা মেয়ের সাথে এভাবে কথা বলতে হয়, ম্যানার শেখেন নি? ”

বাধন কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি, ফরিদ বাধনের কাধে চেপে ধরে বললো…

” প্লিজ থাম। খুব বেশি লাগে নি। ”

ফরিদ আস্তে আস্তে বাধনের সাথে চলে গেলো। ওরিনের দিকে আর পিছু ফিরে তাকালো না। ওরিনের ভিষণ মন খারাপ লাগছে, যদিও সে ফরিদ কে ইচ্ছা করে করে ব্যাথা দেয় নি। এক্সিডেন্টলি সব ঘটে গেলো। কিন্তু ওরিনের জন্য তো মানুষ টা ব্যাথা পেলো।

তনু ওরনের কাধে হাত দিয়ে বললো “কি হলো?”

” কিছু না। ”

“ঠিকাছে, চল স্টেজের কাছে যাই। আমাদের গানের ডাক আসতে পারে। ”

” হুম চল। ”

বলেই দুজন স্টেজের কাছে গিয়ে দাড়ালো। দূর থেকে ফরিদ ওরিন কে লক্ষ্য করলো। আজকে ওরিন কে বেশ সুন্দর লাগছে। লাল পারের সাদা শাড়ি, হালকা সাজে বেশ সুন্দর লাগছে।

কিছুক্ষন পরই একজন সিনিয়র ভাই মাইকে, ওরিনের নাম নিলেন। ওরিন মঞ্চে উঠলো। হারমোনিয়ামে, বাজিয়ে গাইতে শুরু করলো…

” কেনো মেঘ আসে হৃদয়ও আকাশে…

তোমারে দেখিতে দেয় না। মোহ মেঘে তোমারে অন্ধ করে রাখে তোমারে দেখিতে দেয় না…

মাঝে মাঝে তব দেখা পাই চিরো দিন কেনো পাই না…”

ফরিদ অবাক দৃষ্টিতে মারিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে, সবার হাত তালির শব্দে ফরিদের ধ্যান ভাংলো। এতো ক্ষন ফরিদ এক মনে ওরিনের গান শুনছিলো। ভাবতেই নিজের কাছে কিছুটা অবাক লাগছে।

বাধন ফরিদের কানের কাছে এসে ফিস ফিস করে বললো
“মেয়েটাকে যেমনটা ভেবেছিলাম তেমন টা না। কি ভালো গান গাইলো। ”

ফরিদ বাধনের দিকে তাকালো, আবারও সেই আগের মতো ফরিদের দৃষ্টি, ওরিনের মধ্যে আটকে গেলো।

_____________________

মিটিং শেষে কেবিনে ঢুকার পর নাছিম, অবাকের চরম সীমায় পোছে গেলো। মিস.আয়শা চেয়ারে পা ভাজ করে কফি খাচ্ছে। আর ফোন স্ক্রিনে তাকিয়ে কিছুক্ষণ পরই হো হো করে হাসছে।

নাছিম কয়েক সেকেন্ড স্থির হয়ে দাড়ালো। নাহ, আয়শার কোন হুশই নেই। চারি দিকের কোন খেয়াল নেই। সে কিছুক্ষণ পর পর হেসেই যাচ্ছে৷ নাছিম ধীরে ধীরে হেটে আয়শার পিছনে দাড়ালো৷ আয়শার ফোনের স্ক্রিনে উঁকি দিলো।

আয়শার ফোনে অগি ‘এন্ড দ্যা কক্রোচেস ‘কার্টুন দেখছে। নাছিম হাসবে নাকি রাগ হবে বুঝতে পারছে না। এত বড় একটা মেয়ে এই বয়সে কার্টুন দেখে।
নাছিম আয়শা বলে ঝাড়ি মারলো। আয়শা দ্রুত উঠে দাড়াতে গিয়ে নাছিমের সাথে ধাক্কা খেয়ে, নাছিমের বুকে গরম কফি ঢেলে দিলো

নাছিম আউউউউউ করে শব্দ করলো। আয়শা মুখে দু হাত চেপে দাড়িয়ে আছে, ভয়ে তাকাতেও পারছে না। আয়শা দু আঙ্গুল ফাঁকা করে নাছিমের দিকে তাকালো। নাছিমের সাদা শার্ট কফির দাগ লেগে গেছে, নাছিম টিস্যু দিয়ে শার্ট পরিষ্কার করার চেষ্টা করছে।

আয়শার কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো…

” স্যার আপনার কি খুব লেগেছে?”

” নাহ, আরাম লাগছে। ইডিয়ট মেয়ে।”

” আপনি পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, আমি কি ভাবে জানবো। ”

” জাস্ট শাট আপ। ”

আয়শা ভয়ে ঢোক গিললো। নাছিম ধমক দিয়ে বললো…

” দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?আমার শার্ট মুছতে হেল্প করুন। ”

” আয়শা হাতে টিস্যু নিয়ে, নাছিমের শার্ট পরিষ্কার করতে গেলো। ”

মনে মনে মুখ ভেংচি দিয়ে বলল ‘ খাটাস কোথাকার। লম্বু, খুটি একটা। দু তলা বিল্ডিং। ‘

” কি করছেন টা কি। আপনার হাত আমার কাধ পর্যন্ত আসছে না। ”

আয়শা নাছিমের আরেকটু কাছে গেলো। বিড় বিড় করে বললো ‘ আসবে কি ভাবে, ভয়ংকর লোক একটা খালি বকে। ‘

নাছিম হালকা কাশি দিয়ে বললো…
” কিছু বললেন? ”

“কোথায়, কিছু না তো! ”

” ঠিক আছে এখন আপনি আসতে পারেন। ”

কফির ফ্লাক্স টা ভুলে, কেবিনে রেখেই আয়শা বেড়িয়ে গেলো। ডেক্সে গিয়ে চুপ করে বসে রইলো। ধুর ধুর কি হচ্ছে এসব। অফিসের সি ই ওর শার্টে কফি ঢেলে দিয়েছে আয়শা। এখন যদি আয়শা কে বরখাস্ত করে দেয়?

মাথার ভেতর চাপা টেনশন হচ্ছে আয়শার খুব। আয়শা উঠে দাড়ালো। ধীর পায়ে হেটে নাছিমের কেবিনে গেলো আবার। বাইর থেকে

” স্যার আসবো বলতেই নাছিম, দ্রুত কফির ফ্লাক্স টা সরিয়ে ফেললো..

” জ্বি আসুন। ”

” একচুয়ালি, স্যার। সরি। ”

” কেনো?”

“তখন এক্সিডেন্টলি কফিটা পরে গেলো..”

” ইটস ওকে। বাট আপনাকে, ছোট্ট একটা শাস্তি পেতে হবে। ”

আয়শার মুখটা চুপসে গেলো, চাকরি থেকে সত্যিই বরখাস্ত করে দেবে না তো?
কত শখের ছিলো চাকরিটা। নিজের টেলেন্ট প্রকাশ করার। আয়শা ভিষন্ন মনে বললো…

” কি শাস্তি স্যার?”

” তা বরং কালকেই বুঝবেন।”

আয়শা গুটি গুটি পায়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো। টেনশনে মাথা ভার হয়ে যাচ্ছে, এক কাপ কফি খাওয়া দরকার।
এ মা.. কফির ফ্লাক্স তো ওই ভয়ংকর লোকটার রুমে। এখন কি আবার যাবে, নাহ এখন আর যাওয়া যাবে না৷ গেলেই কথা শুনিয়ে দিবে। আয়শা নিজের ডেক্সেই বসে বসে কম্পিউটার ঘাটাঘাটি শুরু করলো। বছরের সব গুলো কালেকশন গুলোর ফটো সংগ্রহ করায় মন দিলো।

সচ্ছ কাঁচ ভেদ করে একজোড়া তিক্ষ্ণ চোখ আয়শার দিকে তাকিয়ে আছে। নাছিম কফির কাপে, চুমুক দিচ্ছে, চেয়ার ঘুরিয়ে আয়শাকে দেখছে।
মেয়েটা বেশ ভালো কফি বানায়। ডার্ক কফি নাছিমের পছন্দ। ফ্লাক্সের বাকি অংশের কফি নাছিম একাই শেষ করে ফেললো৷

আগামীকাল আয়শা কে কি সাজা দেওয়া যায় সেটা ভাবতেই নাছিম একটু হাসলো। সুদর্শন মুখে এক গাল হাসে যেন এক ফালি উজ্জ্বল চাঁদের মতো।
এই হাসিতে মন বিলিন হতে পারে।

হঠাৎ নাছিমের মুখে হালকা হাসি দেখে আয়শা বেশ অবাক হলো, বেশ কিছু দিন হয়েছে আয়শা অফিসে জয়েন করেছে কিন্তু আয়শা নাছিম কে হাসতে দেখেনি৷ আয়শা ভেংচি কেটে বললো ‘বেটা খারুস একটা ভয়ংকর লোক। ‘



চলবে?

#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ ০৯

সন্ধ্যার পর পর সময়, চারিদিকে থেকে বাতাস বইছে। মনে হচ্ছে বৈশাখী ঝড় নামবে। নামুক অসহনীয় গরমের থেকে ঝড় বৃষ্টি ঢের ভালো। নাছিমের ঘরের আকাশী রংয়ের পর্দা গুলো বাতাসে দুলছে।

কিছুক্ষণ আগেই নাছিম অফিস থেকে ফিরেছে। রুমে ঢুকেই অফিস ব্যাগ টা ফেলে বিছানায় শুয়ে পড়েছে। শক্ত পোক্ত শরিরটাকে বিছানা টা আকড়ে ধরতে চাইছে যেমন। নাছিম বেশি ক্ষন শুয়ে থাকলো না। রাশিয়ান প্রজেক্টের অনেক কাজ বাকি আছে।

নাছিম উঠে ওয়াশ রুমে গেলো। গোসল শেষে একটা টাওয়াল পড়ে বের হলো। আয়নার সামনে দাড়াতেই নাছিম খেয়াল করলো তার বুকের বা পাশে একটা পোড়া দাগ। নাছিম দাগ টা ছুঁতেই চিন চিন জ্বলুনি অনুভব করলো। এই দাগ যে সাধারণ দাগ নয়, এটা আয়শার দেওয়া দাগ। নাছিম আবাও দাগটায় স্পর্শ করলো, এখন মোটেও জ্বালা হচ্ছে বরং অন্য রকম কিছু অনুভব করছে।

এই মেয়েটাকে না দেখলে নাছিম বুঝতোই না দুনিয়াতেও অনেক মানুষ রুপি এলিয়েন আছে। ভাবতেই নাছিমের ঠোঁট জোড়া প্রশারিত হলো, ঠোঁটের কোনে হাসির চিহ্ন পাওয়া গেলো। নাছিম ট্রাউজার, আর টিশার্ট পরে, কাজে মন দিলো।

ব্যাগ থেকে ল্যাপটপ বের করার আগের কফির ফ্লাক্স বেরিয়ে গেলো। এটা আয়শার কফির ফ্লাক্স, নাছিম সারা দিন এখান থেকেই কফি খেয়েছে, লুকিয়ে। আয়শাকে বুঝতেও দেয় নি। নাছিম আবারও ফ্লাক্সের কাপে কফিতে চুমুক দিলো, সাথে নিজের কাজ শুরু করলো।

_________________

সন্ধ্যা থেকেই ওরিনের মন বড্ড অসস্থি লাগছে৷ কেনো এমটা লাগছে তা নিজেও বুঝতে পারছে না। বার বার পড়ায় মন দেওয়ার চেষ্ট করছে তাও পারছে না। হাতে থাকা কলম টা ঠাস করে টেবিলের রাখলো। ওরিন হাতে কিঞ্চিৎ ব্যাথা অনুভব করলো।

তবুও মুখে প্রকাশ করলো না। বিছানা থেকে আয়শা ওরিনের কান্ড দেখছিলো। আয়শা কখনো ওরিন কে অমনোযোগী দেখে নি, ওরিন বরাবর ভালো স্টুডেন্ট। আজ কি এমন হলো? আয়াশা ওরিন কে উদ্দেশ্য করে বললো

” কি হয়েছে? এনি প্রবলেম?”

ওরিন বিষন্ন মনে জবাব দিলো

” কিছু না আপু। ভালো লাগছে না।”

“সেটা কেনো?”

” জানি নাহ ”

আয়শা সিরিয়াস গলায় বললো

” তুই কোন বিষয় নিয়ে, চিন্তত?”

ওরিন জোড়ে শ্বাস ছেরে চুপ করে রইলো। সত্যি মনে হয় ওরিন কোন বিষ্য নিয়ে চিন্তিত। বলেন বিষয়টা ফরিদ না তো?

ভাবতেই ওরিনের মাথা ভার হয়ে এলো। ওরিন মাথা ঝাকি দিলো। তার কোন বিষয় বিয়ে চিন্তা করা উচিত নয়!
কোন বিষয়ই না, ফরিদের বিষয় তো নয় ই।

আয়শা আবারও প্রশ্ন করলো

“কি হলো?”

” কিছু না আপু। মাথা ভার ভার লাগছে! কফি খাবে?”

” হুম। তা খাওয়াই যায়। ”

” তুমি বসো। আমি বানিয়ে আনছি। ”

ওরিন পড়ার টেবিল থেকে উঠে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো। আয়শার কফির ফ্লাক্স টার কথা মনে পরলো। ওই খারুস টার কেবিনে কফির ফ্লাক্স মনের ভুলে রেখে এসেছে। এতো গুলা কফি নষ্ট হয়ে গেলো! ধুর!

কিছুক্ষণ পরেই ওরিন ঘরে এলো দু কাপ কফি নিয়ে। আয়শা আনমনে কফি মুখে নিয়ে ‘আউউউ’ বলে চিতকার দিলো। অতিরিক্ত গরম কফি লেগেছে।

” আপা! তুমি ঠিক আছো?”

“হুম। হঠাৎ করে লেগে গেলো। ”

“খেয়াল করে খাবা না! ”

” কুল কুল বেশি লাগে নি। ”

—— পরদিন সকালে ——–

ওরিন কলেজ গেটে নামা মাত্রই খেয়াল করলো, রোডের অপর প্রান্তে ফরিদ গাড়িতে বসে চা খাচ্ছে। গত কালের ঘটনার জন্য ওরিনে মন নাড়া দিয়ে উঠলো। উঁচু জুতোর চাপ খেয়ে ফরিদ ব্যাথা পেয়েছিলো।

ওরিন কি একবার যাবে? ফরিদের কাছে, ওরিনের মন সায় দিচ্ছি না। তবুও ওরিন কি মনে করে যেনো ফরিদ কে ডাক দিলো। ফরিদ শুনতে পেলো না। তাই ওরিন আবারো ডাক দিলো।

” ফরিদ ভাইয়া…”

হঠাৎ করে, নিজের নাম শুনে একটু অবাক হলো ফরিদ, গাড়ির জানালায় তাকায়েই দেখলো ওরিন দাঁড়িয়ে আছে। ফরিদ চমকে গেলো, ওরিন তাকে ডাক দিয়েছে নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারছে না ফরিদ। হা করে তাকিয়ে রইলো।

ওরিন হালকা হাসলো, রাস্তা পার হয়ে ফরিদের কাছে যাবে, তখন ঘটলো আরেক বিপত্তি কোত্থেকে যেন একটা গাড়ি সামনে চলে এলো। ফরিদ দৌড়ে ওরিন কে ধাক্কা মারলো, সাথে নিজেও পরে গেলো। ওরিনের অনেক ক্ষানি হাত ছুলে গেছে, টপ টপ করে রক্ত বের হচ্ছে।

” কেউ এভাবে রাস্তা পার হয়? চোখে দেখো না? ”

” আপনি আমাকে বকছেন কেনো ভাইয়া? আপনার কাছেই তো যাচ্ছিলাম আমি।”

” কেনো?”

” আগে আমাকে উঠতে সাহায্য করুন তার পর বলছি। ”

ফরিদ ওরিনের কাছে হাত বাড়িয়ে দিলো। ওরিন ফরিদের হাত ধরে উঠে দাড়ালো।

” তুমি ঠিক আছো?”

” হাত টা জ্বলছে। ”

বলেই ওরিন হাতে ফু দিতে শুএউ করলো। ফরিদ কপালে হাত দিয়ে, রাগী কন্ঠে বললো..

” হাত টা ছুলে গেছে ফু দিলে সেরে যাবে না। ”

ওরিন মুখ ভেংচি কেটে বললো ” আমার হাত আমি বুঝবো। ”

” আমার সাথে হস্পিটালে চলো এক্ষুনি ”

বলেই ওরিনের হাত ধরে ফরিদ হাটা শুরু করলো। ওরিন কিছু বলতে পারছে না। কিছু বলতে ইচ্ছেও করছে না। যা হচ্ছে হোক না। হঠাৎ করে নিজের সিদ্ধান্তে পরিবর্তন দেখে, ওরিনের নিজেরই অবাক লাগছে। কিন্তু তবুও নিজের মধ্যে এক প্রকার ভালোলাগা কাজ করছে।

ওরিন কে নিয়ে ফরিদ একটা ক্লিনিকে আসলো। একটা রুমে ওরিন বসে আছে তার পাশে ফরিদ দাড়িয়ে আছে। এক জন নার্স রুমে আসলো। তুলোয় ওষুধ লাগাতে নিলেই, ওরিন মৃদু চিতকার দিয়ে উঠলো।

” প্লিজ এটা লাগাবেন না। আমার হাত জ্বলবে। ”

নার্স মহিলা বিরক্তি নিয়ে বললেন, ” বেশি জ্বলবে না হাতটা দিন। এটা না লাগালে ঘা শুকাবে না। ”

ওরিন কাঁদো কাঁদো মুখে ফরিদের দিকে তাকালো। ফরিদ চোখ ইশারা করে ভরসা দিলো। ওরিন চোখ বন্ধ করে, কাপা কাপা হাত বারিয়ে দিলো। কিছুক্ষন পর চোখ খুলেই ওরিন দেখলো, ড্রেসিং করা প্রায় শেষ হয়ে গেছে। ওরিন কিছুটা হাসি দিয়ে বললো..

” ঔষধ লাগানো শেষ। আমি তো টেরই পেলাম না। ”

ওরিনের কান্ড দেখে ফরিদ মুখে আঙুল দিয়ে ঢেকে হাসছে। এতো টুকু মলমে মেয়েটা ভয় পায়৷ আর আমি ওর রাগ দেখে ভেবেছিলাম ভেবেছিলাম সাউথ আফ্রিকার জংগলের বাঘিনী।

হস্পিটাল থেকে বের হয়ে, হো হো করে ফরিদ হেসে দিলো, ফরিদের হাসি দেখে ওরিন ভ্রু কুচকিয়ে তাকালো।

” হাসছেন কেনো?”

” আপনাকে ভেবেছিলাম আমি বাঘিনী আর আপনি বেড়ালের মতো ভিতু। ”

বলেই আবারও ফরিদ হেসে দিলো ফরিদের হাসি দেখে, ওরিন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। রাগে ওরিন দ্রুত হাটা শুরু করলো। এক সময় কলেজে চলে এলো।


চলবে

#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ- ১০

সকাল দশ কি সারে দশটা বাজে, সবাই কাজে ব্যাস্ত। কারো দিকে চোখ ফেরানোর ও সময় নেই। চারিদিকে পিন পতন নিরবতা৷
আয়শা একবার এদিক ও দিক তাকিয়ে, আয়শা উঠে দাড়ালো, ধীর পায়ে নাছিমের কেবিনের ঢুকলো। ফ্লাক্স টা খোঁজার জন্য। চারিদিকে একবার চোখ বুলালো কিন্তু কোথাও দেখতে পেলো না।

” কি খুঁজছেন মিস.আয়শা?”

ভয়ে আয়শা ঢোক গিললো, নাছিম কেবিনে চলে এসেছে। আয়শা জোরপূর্বক ঠোঁট টেনে হাসার চেষ্টা করলো।

” ইয়ে মানে স্যার..”

“হুম বলুন। ”

আয়শার ভেতর থেকে কান্না পাচ্ছে। মনে মনে নিজেকেই নিজে গালি দিচ্ছে। কি দরকার ছিলো, স্যারের কেবিনে ঢুকার। নিজের চুল নিজেরই ছিঁড়তে মন চাচ্ছে…

নাছিম খোঁচা মেরে বললো

“চুড়ি করতে এসেছিলেন নাকি?”

“কি বলছেন স্যার? ”

“তাছাড়া আমার কেবিনে ঢুকার আর কি কারন থাকতে পারে?”

” আমি তো আমার কফির ফ্লাক্স খুঁজতে এসেছি? ”

“সত্যি বলছেন? নাকি চুরি করার ধান্দা?”

” চুরি করা আমার পেশা না স্যার। আমি একজন ফটোগ্রাফার। ”

” আপনার ফ্লাক্স কেন্টিনে। ওখান থেকে নিয়ে নিন। ”

” আচ্ছা স্যার।”

বলেই আয়শা কেবিন থেকে বের হয়ে কেন্টিনের দিকে চলে গেলো। নাছিম ফ্লাক্সটা টেবিলে রাখলো। আসলে মেয়েটা কে নাছিম যতোটা অবুঝ ভেবেছে মেয়েটা ততোটাও অবুঝ না, বেশ বিচক্ষণ জবাব দেয়। নাছিমের ভাবনায় ছেদ পরলো। আয়শা উঁকি দিয়ে বললো…

” স্যার আসবো?”

“আসুন। ”

” স্যার ফ্লাক্স টা তো পেলাম না। আরে এখানে আমার ফ্লাক্স। আগে বলে নি কেনো?”

” এখানেই তো রাখা ছিলো, আপনি আগে দেখেন নি কেনো?”

” এটা তো এখানে ছিলো না। এদিক ওদিক করতে করতে আমার পা ব্যাথা হয়ে গেলো?”

“চোখের সামনে স্পষ্ট থাকা সত্বেও যদি না দেখে, তাহলে আমি এক্সপ্লেইন করতে পারবো না।
ফ্লাক্স এখানেই ছিলো। আপনি কফি খাওয়ার জন্য বিভোর হয়ে গেছিলেন। তাই খেয়াল করেন নি, হয়তো। ”

আয়শা দাঁড়িয়ে বাম হাত দিয়ে মাথা চুলকাচ্ছে। কি থেকে কি হয়ে গেলো৷

” খাম খেয়ালি আমি এক দম পছন্দ করি না। সো বি কেয়ার ফুলো। ”

” ওকে স্যার ”

বলেই আয়শা ফ্লাক্স নিয়ে বেরিয়ে গেলো কেবি থেকে। নিজের ডেক্সে গিয়ে ফ্লাক্স খোলা মাত্রই আয়শা অবাক হয়ে গেলো। ফ্লাক্সে এক ফোটা কফি নেই। কফি কে খেলো ভুতে?

ভাবতেই আয়শার গাঁ জ্বলে যাচ্ছে। লোকটা ইচ্ছা করে এতো গুলো হয়রানি করলো। পুরো অফিস চক্কর দিয়ে পায়ের ছাল -চামড়া উঠে গেলো। ব্যাটা খারুস একা হুহ’

আয়শা কম্পিউটার অন করে নিজের কাজে মন দিলো। ছবি এডিটিং করা শুরু করলো আর মনে মনে নাছিমের গুষ্টি উদ্ধার করলো। লাঞ্চ টাইমের পর আয়শা বসে কফি খাচ্ছে, ব্যাগের ভেতর ফোন খুঁজছে কিন্তু পাচ্ছে না। কলিগের ফোন দয়ে নিজের নম্বরের ডায়েল করার পর ও ফোনটা খুঁজে পাচ্ছে না। আয়শা আবারো কেন্টিনে গেলো, খুঁজে পেলো না।

অনেক বার খোঁজার পর ও ফোন না পেয়ে আয়শা হতাশ হয়ে,নিজের ডেক্সে বসে রইলো। ঠিক তখনই পিয়ন এসে বললো…

” আয়শা আফা, আন্নেরে (আপনাকে) নাছিম স্যার যাতি কয়েছে (যেতে বলেছে)।”

এই খরুস টা আবার তাকে কেনো ডাক দিচ্ছে। আবার নতুন করে আমাকে বোকা বানানোর প্লান না তো?

আয়শা পিয়নের উদ্দেশ্য বললো “যাচ্ছি। ”

আয়শা কফিটা শেষ করে নাছিমের কেবিনে গেলো। আয়শা নাছিমের অনুমতি নিয়ে কেবিনে ঢুকলো।

” আমাকে ডেকেছিলেন স্যার?”

“জ্বি। ”

বলেই নাছিম কম্পিউটারের স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে। আয়শা কিছু বুঝতে পারছে না। বেশ কিছুক্ষণ পর কম্পিউটার ঘাটাঘাটি করে নাছিম আয়শার দিকে তাকালো।

আয়শা ফোন খুঁজে না পাওয়ার টেনশনে এসি রুমে বসে বিন্দু বিন্দু ঘামছে। নাছিম বললো…

” এনি প্রব্লেম? ”

” ফোনটা খুজে পাচ্ছি না৷ ”

নাছিম মনে মনে হাসলো। ক্ষানিকটা সিরিয়াস হয়ে বলো

” আই থিংক আপনার ডাক্তার দেখানো দরকার। কিছু দিন পর নিজের বাড়ির ঠিকানা টাও হারিয়ে ফেলতে পারেন। ”

বলেই নাছিম হাসলো। আয়শার গাঁ জ্বলে যাচ্ছে, নাছিম কে কফির কাপে চুবাতে মন চাচ্ছে আয়শার। খালি আয়শা কে অপদস্ত করার মতলব।

” স্যার আমায় কেনো ডেকেছিলেন?”

নাছিম হাসি থামিয়ে স্বাভাবিক গলায় বললো..

” সাত দিন পর আমার বোনের বিয়ে৷ আমি চাচ্ছি, আপনি ওয়েডিং শ্যুটা করুন৷ মেহেদী, গায় হলুদ সব গুলো অনুষ্ঠানের দিন ফটোগ্রাফি করবেন, এবং ওয়েডিং শর্ট ফিল্ম তৈরি করুন। আপনাকে এর জন্য এক্সট্রা পেমেন্ট কররা হবে৷ ”

” ওকে স্যার। ”

” এখন আপনি আসতে পারেন।”

আয়শা উঠে দাড়ালো বের হবার জন্য।

“মিস আয়শা৷ ”

” জ্বি স্যার। ”

” আমার একজন পরিচিত ডাক্তার আছেন, জিনি মাথ্যার ব্যামো সারান৷ আপনি চাইলে তার সাথে দেখা করতে পারেন৷ ”

বলেই নাছিম হাসলো। আয়শা নিজের রাগ টাকে কন্ট্রোল করে ভেংচি মেরে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।


সন্ধ্যা বেলা নাছিম বিছানায় বসে টিভি দেখছে হঠাৎ একটা কার্টুনের চ্যান্সেলর সামনে এলো, মটু পাতলু দেখাচ্ছে টিভিতে। আয়শার কথা মনে পরতেই নাছিম হালকা হাসলো। নাছিম ফোন টা হাতে নিয়ে আয়শার নম্বরে কল করলো..

বিছানায় বসে আয়শা ফটো শ্যুটের ছবি এডিট করছে ঠিক তখনই আয়শা পরিচিত রিং আওয়াজ কানে আসলো। এটা তো তার নিজের ফোনের শব্দ। সাইড ব্যাগ থেকে শব্দ আসছে, আয়শা দ্রুতো সাইড ব্যাগ খুলতেই ফোন টা পেলো।

অপরিচিত নম্বর স্ক্রিনে ভাসছে। আয়শা ফোন টা রিসিভ করে বললো….

” হ্যালো… ”

” ফোন পেয়েছেন, মিস আয়শা? ”

বলেই নাছিম নিঃশব্দে হাসলো।

আয়শা অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে বললো…

“স্যার আপনি?”

” হ্যাব আ গুড ডে ”

বলেই ফোন কেটে দিলো।নাছিম দাঁত কেলিয়ে হাসছে।’আমার অফিস থেকে আমাকেই বের করে দেয়া, বুঝো মিস আয়শা শাস্তি কাকে বলে।

আয়শা শকড হয়ে বসে আছে এটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। আমাকে আমাকে বোকা বানিয়ে টর্চার করার প্লান। একটা মাসুম ভদ্র লক্ষী মেয়ে কে টর্চার করলে, আল্লাহ ছারবো না ওই খারুস টা কে।

বিছানায় শুয়ে বক বক করছে আয়াশা
” ভাইয়া আসছো কেনো?”

ফরিদের দিকে নাছিম তাকালো,

“কোথায় না তো?”

ফরিদ সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো..

” আমি শিউর তুমি আসছিলে। প্রেমে পড়েছো নাকি?”

বলেই ফিক করে হাসি দিলো ফরিদ। নাছিম এবার একটু সিরিয়াস কন্ঠে বললো

” কি যে বলিস তুই?”

” কার্টুন দেখো কেনো?”

“কার্টুন তো আয়..”

” থামলে কেনো ভাইয়া, কার যেনো নাম নিচ্ছিলে বলো বলো..”

” এমনিতেই কার্টুন দেখছিলাম৷ আর তোর মাথায় কি প্রেম ছাড়া আর কোন টপিক নেই? ”

“আছে ভাইয়া।”

বলেই ফরিদ জোরে একটা নিঃশ্বাস ছারলো, তার চোখের সামনে ওরিনের মুখ খানা ভেসে উঠলো। তখনি ফরিদের মনে পরলো, ওরিন হাতে চোট পেয়েছিলো। কি জানি কি অবস্থা এখন মেয়েটার।

নাছিমের সাথে ফরিদ কিছুক্ষণ কথা বলে নিজের রুমে চলে এলো। মাথা ব্যাথার চোটে ফরিদ মাথা চেপে ধরলো, চোখ বন্ধ করলেই ফরিদ ওরিন কে দেখতে পাচ্ছে। কেনো? কেনো?

চলবে
কেমন হয়েছে জানাবেন সবাই ❤️

[ রি-চেইক করা হয় নি। প্লিজ কেউ ভুল ধরবেন না।🙏 ]