ইচ্ছের উল্টোপিঠ পর্ব-০১

0
2056

গল্পের নাম- #ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
ক্যাটাগরি-# থ্রিলার + রোমান্টিক
পর্ব-#০১
লেখনীতে – #আভা_ইসলাম_রাত্রি

(১)
মধ্যরাত এখন। ” নিস্তব্ধ কুঠির ” নামক সুবিশাল বাড়ির এক রূমে দুজন যুবক- যুবতী আদিম খেলায় মগ্ন হয়ে আছে। রাতের কতগুলো প্রহর কেটে যাওয়া পর তারা দুজনই ক্লান্ত হয়ে ফিনফিনে সাদা রংয়ের ব্লেনকেট গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়ে। কিন্তু যুবকটার চোখে এই মুহূর্তে ঘুমের রেশ মাত্র নেই। সে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আনমনে কি যেনো ভেবে যাচ্ছে। কিছুসময় পর পাশ ফিরে তার পাশে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকা মেয়েটাকে একপলক দেখলো। তৎক্ষণাৎ ঘৃণায় তার সারা শরীর ” রি রি” করে উঠলো। বিদেশি এই মেয়েকে দেখে সম্পূর্ণ মেয়েজাতির উপর এক অদ্ভুত বিতৃষ্ণা জন্মাচ্ছে তার । ওর এতকালের জং পড়া মনে কি সব অদ্ভুত অদ্ভুত ভাবনা আসছে। আচ্ছা সব মেয়েরাই কি টাকার কাঙাল ? বস্তা ভরা টাকা পেলে এরা সবাই যেকোনো ছেলের সাথে শুতে দ্বিধাবোধ করেনা। এতোটা সস্তা এই মেয়েগুলো। ছি। মানুষ বলে মেয়েরা নাকি মায়ের জাত। তারা যদি মায়ের জাতই হতো তাহলে তাদের কি এই অধঃপতন হতো ? বরং ওরা থাকত সূর্যের মতো তেজস্বী। আত্মসম্মান হতো উত্তপ্ত লোহার ন্যায়। জুভান এসব উলটপালট ভেবেই নাক কুচকালো। রাতের আধার অনেকটাই কেটে গেছে। সাদা রঙের আকাশে একটু আকটু লালাভ আভা ছিটকে পড়ছে। আলো ফুটলেই জুভানের আবার স্টুডিওর উদ্দেশ্যে বেরোতে হবে। ফটোশুট আছে একটা। জুভান বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো। পাশের ঘুমিয়ে থাকা মেয়েটাকে ঘুম থেকে উঠার তাগাদা দিয়ে হাঁটু অব্দি সাদা রঙের টাওয়েল জড়িয়ে সাওয়ার নিতে ওয়াস রুমে চলে গেলো।

প্রায় ঘণ্টাখানেক পর জুভান ওয়াশরুম থেকে বের হয়। ভিজে স্নিগ্ধ শরীর তার। অগোছালো চুলগুলোও থেকে টিপটপ পানি পড়ছে। পানির ফোঁটাগুলো তার গলা বেয়ে ক্রমশ নিচে গড়িয়ে পড়ছে। ফ্লোরে থাকা কালো রংয়ের কার্পেট একটু আকটু ভিজে গেছে তার শরীরের পানির ছিটের কারণে।

জুভান চুল ঝাড়তে ঝাড়তে চোখ মেলে বিছানার দিকে তাকায়। এখনো ওই বিদেশি মেয়েটা ঘুমিয়ে আছে। জুভান রেগে গেলো। কাজ শেষ হওয়া সত্বেও এসব বাজারি মেয়েদের নিজের বিছানার ঘুমিয়ে থাকা তার মোটেও পছন্দ না। জুভান রেগে এগিয়ে গিয়ে মেয়েটার গায়ে থেকে চট করে ব্ল্যাঙ্কেট টা সরিয়ে দিলো। সাথেসাথে মেয়েটা এক লাফ দিয়ে উঠে বসে আবার ব্ল্যাঙ্কেট টা নিজের গায়ে আবার জরিয়ে নেয়। খানিকটা ভরকে গিয়ে জুভানের দিকে অসহায় নজরে তাকালে জুভান সেসব তোয়াক্কা করে না। বরং সে আরো বেশি রেগে গিয়ে বলে,

” এতক্ষণ ধরে ঘুম থেকে উঠো নি কেনো ? আমার বাড়ী তোমার কাছে ঘুমানোর জায়গা লাগছে ? জাস্ট গেট লস্ট ফ্রম হেয়ার নাও। ”

মেয়েটা জুভানের এতো রাগ দেখে একটু ভরকে গেলো। তবুও নিজের আহ্লাদী গলায় বললো,

” ওহ। কাম অন জুভান বেবস। লেটস এনজয় । হোয়াই শুড আই লিভ নাও ? সি, ইটস টু আর্লি। ”

বলেই মেয়েটা থাই গ্লাসের দিকে ইশারা করল। থাই গ্লাস থেকে দেখা যাচ্ছে এখন ভোরের রং ফুটতে দেরি আছে। কিন্তু জুভান সেদিকে তাকালো না। কারন সে যেহেতু বলেছে তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে মানে এক্ষণি বেরিয়ে যেতে হবে। এই নিয়ে আর কোনো অতিরিক্ত কথা সে মোটেও পছন্দ করবে না। জুভান তাই রেগে গেলো। চোখ কঠিন করে মেয়েটার কাছে গিয়ে ওর চুলের মুঠি শক্ত করে ধরলো। সঙ্গেসঙ্গে চুলের গুড়ির ব্যাথায় মেয়েটা ” ওহ ” করে উঠলো। জুভাণ সেসব পাত্তা না দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

” আমি যখন বলেছি চলে যেতে , তখন তোর সাহস কি করে হয় আমার মুখের উপর না বলার। বল ? কথা শুনাস আমাকে ? এই ইজহার জুভান মির্জা কে ? জানিস না আমি তোর কি হাল করতে পারি ? ”

মেয়েটা ভয় পেয়ে গেল জুভানের এইরূপ দেখে। এইরকম কঠোর মানুষ সে এ জন্মে দুটো দেখেনি। কিন্তু যতটা ও জানতো জুভান একজন নরম মনের মানুষ। মিডিয়া আর নিউজ পেপারে এই ইজহার জুভান মির্জার উদারতা এর খুব প্রশংসা। তাহলে এই কোন লোক কে দেখছে ও ? জুভান আবার চুলের মুটি ধরে জোড়ে টান দিলে মেয়েটা ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে। বিদেশি ওই মেয়ে বারবার হাত জোড় করে ক্ষমা চাইতে লাগলো। জুভান একটু পর নিজেই মেয়েটার চুল ছেড়ে দিল। মেয়েটা ওর থেকে ছাড়া পেয়ে চটজলদি কাপড় গায়ে দিয়ে জুভানের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়।

জুভান মেয়েটার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বললো,

” সকল মিডিয়া সব গণমাধ্যম জানে আমি একজন হিরো। যার মনখুব বিশাল। কিন্তু কেউ টা জানে না যে সত্যিকার অর্থে আমি একজন ভিলেন। আর না তারা কখনো জানতে পারবে। কারন এই মির্জা যা লুকোতে চায় তা প্রকাশ করার সাধ্য কারোর নেই। কারোর না। ” ”

বলেই বাম হাতের দুই আঙ্গুল দিয়ে নিজের কপাল চুলকালো জুভান।

_________________

” তারপর ? ”

” তারপর আমি আর আপনি একসাথে হাঁটবো নদীর তীর ধরে। বাতাসে আমার চুল আপনার মুখের উপর পড়তেই আপনি মুগ্ধ হয়ে তাকাবেন। আর আমি সেই ভয়ংকর চাহনি উপেক্ষা করে আনমনে হাঁটতেই থাকবো। কখনোই থামবে না আমার এই পথচলা। কারণ আপনার এই ভয়ঙ্কর চাহনি আর যায় হোক আমি সহ্য করতে পারবো না কখনও। কখনোই না। বুঝলেন গায়ক মহাশয়? ”

বলেই ঐশী খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। হাসির প্রভাবে চঞ্চল হয়ে উঠলো ঐশীর ওই দু নয়ন।

” এই ঐশী , এই ? কি হয়েছে তোর ? এই ঐশী ? ”

কারো হাকডাক শুনে ঐশী পিটপিট করে চোখ খুলল। ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে ও দেখলো ওর মুখের উপর ঝুঁকে আছেন ঐশীর মা কাঞ্চনা আক্তার। মাকে এভাবে ডাকতে দেখে ঐশী যারপরনাই বিরক্ত হলো। ও নাক মুখ কুঁচকে বললো,

” ডাকলে কেনো ? কি সুন্দর স্বপ্ন দেখছিলাম। আমি শান্তিতে ঘুমালে তোমার ভালো লাগে না , তাইনা আম্মি ? ”

ঐশীর মা রাগে ড্রয়ারের দিকে এগিয়ে গেলেন। কাপড় কয়েকটা হাতে নিয়ে ভাজ করতে করতে বললেন,

” না। ভালো লাগে না আমার। ঘুমিয়ে এরকম ফিসফিস করে হাসলে সেটা দেখতে কারোরই দেখতে ভালো লাগেনা। প্রতিদিন কি এমন স্বপ্ন দেখিস তুই যে এত হাসতে হয় তোকে ? বলতো একবার। ”

ঐশী উত্তর দিলো না। কারন ওর মনটাই খারাপ হয়ে গেছ। এতক্ষণ যা দেখছিল সব স্বপ্ন ছিল ? ইসস বাস্তব হলে কি হতো তবে ? কি খুশি হতো তখন ঐশী। ভাবতেই রোমাঞ্চকর লাগছে ওর কাছে।

ঐশী মুখ গোমড়া করে ওয়াসরুমে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখে ওর ফোনে পাঁচটা কল। সব ওর সবচেয়ে কাছের বন্ধু জান্নাতের। ঐশী বিছানার উপর থেকে ফোন নিয়ে কল ঘুরালো। ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ হলে ঐশী বলে,

” আজ হুট করে এত কল ? কিছু কি হইসে ? ”

জান্নাত উচ্ছসিত গলায় বললো,

” আরে দোস্ত, একটা খুশির খবর আছে। শুনবি। ”

ঐশী ফুস করে এক নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,

” না, বললেও তো তুই বলবিই। ”

” আচ্ছা বাদ দে। শুন। একটা গানের রিয়েলিটি শো আছে। শুনছি সেই শোতে জাজ হিসেবে নাকি জুভান মির্জাও থাকবে। তোর তো গানের গলা ভালো। যাবি ওই শো তে ? ”

ঐশী অবাক হলো। মির্জা !! ঐশী ঠোঁট কামড় বেশ কিছুক্ষন ভাবলো। অতঃপর বললো,

” বাবা রাজি হবে ? ”

” তুই রাজি কিনা বল। তুই রাজি হলে আঙ্কেল এমনিই রাজি হয়ে যাবে। ”

ঐশী বেশ খানিকটা ভেবে বললো,

” ঠিক আছে। ”

জান্নাত শো এর ডিটেইলস বলে ফোন রেখে দিল। ঐশী ফোনটা বিছানার উপর রেখে দিয়ে ভাবলো , ও কি ঠিক কাজ করছে ? এভাবে একটা শো তে পার্টিসিপেট করা কি ওর উচিত হচ্ছে ?

কিন্তু কে জানত ঐশীর জীবন এই গানের রিয়েলিটি শো এর কারণে অন্য দিকে মোড় নিবে।

#চলবে কি ?