ইচ্ছের উল্টোপিঠ পর্ব-০৩

0
1108

#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_৩
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

” আন্টি , ঐশি কোথায় ? ”

জান্নাতের প্রশ্নে ঐশীর মা চায়ের পাতিল টা চুলা থেকে নামিয়ে লিকার কাপে ঢেলে নেন। কাপ হাতে নিয়ে জান্নাতের দিকে ফিরে বললেন,

” রুমেই আছে। তোমাদের মধ্যে কিছু কি হয়েছে ? ভালো মনেই তো গেলো গানের শো তে। এরকম কান্না করতে করতে ফিরে এলো কেন জানিনা। ”

” না আন্টি। আমার সাথে তো কোনো প্রবলেম হয়নি। ফোনও কেটে দিয়েছে আমার। ভাব বেড়ে গেছে উনার। ”

বলেই রেগে দাত কাটলো জান্নাত। ঐশীর মা হেসে চায়ের কাপটা নিয়ে স্বামীর রুমে যেতে যেতে আবারও ফিরে তাকালেন। মৃদু হেসে বললেন,

” তোমাদের ব্যাপার তোমারই জানো। রুমেই আছে। দেখো রুম থেকে বের করতে পারো কিনা।”

বলেই তিনি রুমে চলে গেলেন। জান্নাত ঐশীর মা’র যাওয়ার পথপানে তাকিয়ে আবারও উষ্ণ নিঃশ্বাস ফেললো। এই ঐশী মেয়েটাকে এত বছরেও সে বুঝে উঠতে পারেনি। কখন একদম শান্ত ,মাটির মত। আবার কখন রণমূর্তি রোদ্রের ন্যায়। ভাবনার মধ্যে আবারও শুনা গেলো এক দীর্ঘশ্বাসের শব্দ। সাথে শুনা গেল কতগুলো পদধ্বনির শব্দ। জান্নাত গটগট পায়ে এগিয়ে গেলো ঐশীর রূমের দিকে।

রুমে প্রবেশ করতেই বাথরুম থেকে পানির আওয়াজ কানে আসলো জান্নাতের। এই মেয়েটা কি এই আসরের সময় গোসল করছে ? জান্নাত এগিয়ে গিয়ে বিছানায় বসলো। ঐশীর ফোনটা নিয়ে নড়াচড়া করতে করতে বারবার বাথরুমের দিকে তাকাতে লাগলো। না। আজ একটা বোঝাপড়া করতে হবে। ঐশীর জন্যেই তো শো এর পরিচালক ক্ষেপে গেছে ওর উপর। যা নয় তাই বলে বকেছে ওকে।

একটু পর ঐশী টাওয়েল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বাথরুম থেকে বের হলো। বিছানার উপর জান্নাত কে বসে থাকতে দেখে বিন্দুমাত্র বিচলিত হয়না ঐশী। পরোয়া না করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে মুখ ক্রিম দিলো। হাত পায়েও দিলো। অতঃপর শরীরে বডি মিস্ট দিয়ে ফিরলো জান্নাতের দিকে। চুলে বিদেশিদের মতো টাওয়েল পেচিয়ে জান্নাতের পাশে এসে বসলো। জান্নাত এখনও বেটে চোখে তাকিয়ে আছে ঐশীর দিকে। ঐশী জোড়ে এক হাফ ছেরে দিয়ে বললো,

” আমি শো তে কমফোর্ট ফিল করছিলাম না তাই চলে এসেছি। এছাড়া আর কিছু না। ”

জান্নাত কিছুক্ষণ ঠোঁট কামড়ে ওর দিকে খানিক তাকিয়ে ধুম করে এক কিল বসিয়ে দিলো ঐশির পিঠে। ঐশী একটু পিছিয়ে গিয়ে নিজেকে সামলে নিলো। জান্নাত আরো গুটিকয়েক থাপ্পর বসিয়ে দিয়ে বললো,

” কুত্তা , হারামি , শয়তান ছেরি। তোর জন্যে ওই খাটাশ ব্যাটা আমারে যা নয় তাই বলেছে। আমি আনস্মার্ট , ক্ষেত। এসব মিডিয়া , শো আমার জন্যে নয়। আরো কত কি। সব তোর জন্যে। ”

” আরে। আজব। আমার জন্যে তোকে বকতে যাবে কেন ? ”

” আমি বলেছিলাম তুই আমার বেস্টি। তাই ফেঁসে গেছি ইয়ার । ”

ঐশী জবাব দিল না। মাথা নীচু করে বসে রইল নীরব। জান্নাতের ঐশীর এই শান্ত রুপ সহ্য হলো না। হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বললো,

” কি হয়েছে তোর ? এত নীরব কেনো ? সত্যি করে বলতো শো’তে তোর সাথে আসলে কি হয়েছিল। ”

ঐশী মন ভার করে মাথা ডানে বামে নাড়ল। যার উত্তর ” কিছু হয়নি। ” জান্নাত ঐশীর গালে হাত রাখলো। আদুরে গলায় বলল,

” কি হয়েছে বান্ধুপি। বল তো। ”

ঐশী আর যায় হোক জান্নাতের কাছে কিছুই লুকায় না। এখন তো ওর মনে হয় ওর বাসর রাতের দিন যা যা হবে সবই এই অপদার্থ কে বলবে।আর রাখতে পারলো না। ঐশী পেটের মধ্যে গুজে রাখা কথাগুলো এক এক করে বললো জান্নাতকে।

সব শুনে জান্নাত খুব বেশি আফসোস করলো না। সে খুব স্বাভাবিক গলায় বললো,

” এটাই স্বাভাবিক। এসব নামিদামি লোকেরা বাইরে এক , আর ভিতরে এক। এরা কখনোই মিডিয়াতে নিজের আসল সত্য প্রকাশ করে না। আর তুই এটা নিয়ে এত মন খারাপ করিস না তো । আমি তোরে আমার বিটিএস এর মোস্ট হ্যান্ডসাম ” ভি ” কে তোরে দিয়া দিলাম। তুই এরে নিয়ে সুখে থাক। তাও ওই ক্যারেক্টারলেস মির্জা রে ভুইলা যা। ”

ঐশী চোখ টিপে তাকালো জান্নাতের দিকে। জান্নাত ঐশীর তাকানো দেখে আমতা আমতা করে বলল,

” আচ্ছা। বাদ দে। ” ভি ” এর হাফ আমার। হাফ তোর। পুরোটা দেওয়া যাবে না কিন্তু। ”

ঐশী জান্নাতের কথা শুনে এক হাফ ছেড়ে দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল। কি করবে ও ? এই মীর্জা ছাড়া ওর আর কারো কাছে মন বসে না। ঐ সাদা চামড়ার ছেলেদের কাছেও না। মন টা বারবার সেই গায়ক মহাশয়ের কাছেই আহত হয়। কি করবে ও ?

___________________

” আরে কেমন আছেন মিস্টার ? দিনকাল কেমন যাচ্ছে আপনার ? সব ঠিক আছে তো ? ”

আজ হুট করে নিজের মুঠোফোনে মন্ত্রী সাহেদুল হকের কল দেখে চোখে মুখে খানিক বিস্ময় খেলে গেলো ঐশীর বাবা আশরাফুল হাবিবের। পেশায় তিনি একজন পুলিশ অফিসার। তবে আজ মন্ত্রীর কল করার ব্যাপারটা তার আন্দাজ করতে মোটেও কষ্ট হয়নি। তাই তিনিও ধারালো গলায় বললেন,

” হঠাৎ আমার ভালোমন্দ জানার আপনার এত ইচ্ছে হওয়ার কারণ জানতে পারি। ”

সাহেদুল হক মুখের পানের লাল রঙা থুতু গাড়ির জানালা দিয়ে রাস্তায় ছুড়ে ফেললেন। মেকি হাসি হেসে বললেন,

” কি আর করার। আজকাল আপনার একেক কাজ আমাকে আপনার কথা স্মরণ করতে বাধ্য করে। আমার আর কি দোষ বলেন। ”

আশরাফুল অতিমাত্রায় তেতে উঠলেন। তবে মুখে মধু রেখেই বললেন,

” এসব কথা বাদ দিয়ে মোদ্দাকথায় আসেন। ”

” ঠিক বলেছেন। এসব ঘোরাফেরা কথা না বলাই ভালো। আপনার কাছে একটা মেমোরি আছে না ? ওটা আমার চাই যে। আসলে কি বলেন তো। আমার বিরুদ্ধে কারো কাছে কোনো প্রমাণ আছে। তাহলে আমি সেটা অক্ষত থাকতে দেই কিভাবে বলুন ত। দায়িত্ব আছে না একটা। ”

আশরাফুল কঠিন গলায় বললেন,

” আপনি ভুল জায়গায় কল দিয়েছেন। আমি ঐ মেমোরি কার্ড কখনোই আপনাকে দিবো না। মরে গেলেও না। ”

” আরে আপনি তো আমাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছেন মশাই। তা মেমোরি দিবেন না যেহেতু তাহলে তো আপনার মরেই যাওয়াই ভালো। আর আপনার একটা যুবতী মেয়েও আছে শুনেছি। ওকেও একটু টেস্ট করা যাবে সেই সুবাদে। কি বলেন। ”

সাহেদুল হকের কণ্ঠ কেমন হিংস্র শুনালো। আশরাফুল এতে একটু বিচলিত হলেন। তবুও অভয় গলায় বললেন,

” এসব ভয় অন্য জায়গায় দেখান। আমাকে না। ”

” তাহলে। ওই কথাই রইলো। কাল তো হবে না। তাই পরশু আমরা আসছি আপনার বাসায়। দশ বারোজন হবে কিন্তু। খাতিরদারি যাতে ভালো হয়। নাহলে কিন্তু ঘেচাং। ঠিক আছে। ”

আশরাফুল কিছু বলার আগেই ফোন কেটে গেলো। এসব কথা শুনে তিনি যে ভয় পাননি তা কিন্তু না। বেশ গায়েই লেগেছে কথাগুলো। নিজের জন্যে ভয় পাননা তিনি। কিন্তু জোয়ান মেয়ে তার। এসব কুৎসিত মানুষদের কোনো ভরসা নেই। যদি তার পবিত্র মেয়ের গায়ে আঁচড় লেগে যায় ? আতকে উঠলেন আশরাফুল। এসব ভাবতে ভাবতেই চায়ের কাপটা হাতে তুলে নেন তিনি। কিন্তু লক্ষ করেন চায়ের কাপটা মৃদু কাপছে। কিন্তু তার পরপরই উপলব্ধি করলেন চায়ের কাপ নয় বরং তার দুহাত মৃদুমন্দ কাপছে। তিনি আবারও কাপটা টেবিলে রেখে দিলেন। কপাল দুহাত দিয়ে ধরে চিন্তায় মগ্ন হলেন। মেয়েকে তার শহর থেকে দূরে কোথাও পাঠিয়ে দিতে হবে। খুব দূরে। এসব অমানুষদের হাতের নাগালের বাইরে। আর সেটা খুব শীঘ্রই।

#চলবে…