ইচ্ছের উল্টোপিঠ পর্ব-০৭

0
939

#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_৭
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

” যা না। নিয়ে যা ওকে। ”

জুভান ভাবলেশহীনভাবে কথাটা বলে ধীরে ধীরে ছেলেগুলোর দিকে এগুলো। ছেলেগুলো চোখ পিটপিট করে তাকালো জুভানের দিকে। সন্দেহ গলায় বললো,

” তুই এরে বাঁচাইতে আহস নাই ? ”

জুভান জিন্সের পকেটে দুহাত গুঁজে সোজা হয়ে দাড়াল। চারপাশটায় চোখ বুলিয়ে লম্বা করে শ্বাস নিয়ে বললো,

” না। ”

ছেলে তিনটা সস্থির নিঃশ্বাস ফেলে ঐশীর দিকে এগোলো। ঐশী ততক্ষণে চোখ মেলে জুভানের দিকে তাকিয়েছে। এই মির্জা না চলে গিয়েছেন ? আবার আসলেন কখন ? আর এখন এসব কথা শুনে ওর বিশ্বাস হচ্ছে না এই মির্জা এতটা খারাপ ! ওকে এই মাতাল ছেলেগুলোর হাতে এত সহজে তুলে দিচ্ছে ? ঐশী কঠিন চোখে জুভানের দিকে তাকালো। জুভান ঐশীর চাহনি পাত্তা না দিয়ে শিস বাজিয়ে আবারও সামনে পা বাড়ালো। অদূরে গাড়ি দেখা যাচ্ছে ওর। সেদিকেই যাচ্ছে। ছেলেগুলো ঐশীর বিশ্রী হেসে ঐশীর শরীর থেকে ওড়না নিয়ে নিল। ঐশী থমকে উঠে চোখ বন্ধ করে আবারও ছটফট করতে লাগলো। এতে মনে হয় ওই মাতাল ছেলেপুলে খুব মজা পেলো। বাঁকা হেসে এবার তারা ঐশীর জামায় হাত বাড়ালো। ঐশীর চোখের জল নাকের জল মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। আজ কি ওর বাঁচার কোনো উপায় নেই ? ঐশী দূরে তাকিয়ে দেখলো জুভান গাড়িতে উঠে যাচ্ছে।এবার ও জোরে চিৎকার দিয়ে বললো

” গায়ক সাহেব… ”

জুভান ফিরে তাকালো ঐশীর দিকে। ছেলেগুলো ঐশীর চিৎকারে হাত গুটিয়ে নিয়ে জুভানের দিকে তাকালো। জুভান ভ্রু বাকা করে বললো,

” সব জারিজুরি শেষ ? ”

ঐশী অসহায় নজরে তাকালো জুভানের দিকে। জুভান হাসলো। দুনো হাত উচু করে আড়মোড়া ভাঙলো। সঙ্গেসঙ্গে ওর শরীর থেকে ” মরমর” শব্দ ভেসে এলো। জুভান গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে ঐশীর কাছে এসে দাড়ালো। ঐশীকে একটু লক্ষ্য করে আবারও ছেলেগুলোর দিকে তাকালো। তাচ্ছিল্য করে বললো,

” এতসময়ে জাস্ট ওড়না হাতিয়েছিস ? শেম অন ইউ গাইস ।”

ছেলেগুলো কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। যেনো নিজেদের অক্ষমতায় নিজেরাই লজ্জিত। আর ঐশী ? সে তো শুধু অবাক চোখে জুভানের দিকে তাকিয়ে আছে। মাথা ঘুরছে তার। এই গায়ক সাহেব কে এতটাও খারাপ ভাবে নি ও। জুভান সজীবের হাত থেকে ওড়না টা ফট করে নিয়ে নিল। ওরা এতে বোকার মত জুভানের দিকে তাকালো। জুভান বললো,

” মেয়েটার হাত ছাড়। আর আমার দিকে তাকা। দেখ আমি কিভাবে দু মিনিটে কাজ হাসিল করি। ওকে ? ”

ছেলেগুলো অবুঝ হয়ে মাথা নাড়ালো। জুভান এগিয়ে এসে ঐশীর গায়ে ওড়না জড়িয়ে দিয়ে সরে এলো।

” নাও আই উইল প্লে দা গেম। রেডি গাইস ? ”

ছেলেগুলো যেনো তুমুল উৎসাহ পেলো। সম্মতি জানাতে হুরহুর করে মাথা নাড়ল ওরা। ঐশী এসব দেখে ভরকে গেলো। জলদি মাথা নেড়ে কাদো কাদো গলায় বললো,

” প্লিজ… ”

জুভান শুনে বাঁকা হাসলো। এগিয়ে এসে ঐশীর গায়ের ওড়না নিতে এলে হুট করে হাত ঘুরিয়ে সজীবের নাক বরাবর ঘুষি দিল। আচমকা আক্রমণে সজীব নাকে হাত দিয়ে খানিক পিছিয়ে গেলো। এবার জুভান ধীরে ধীরে নিজের রাগী রূপে এলো। একে একে তিনটাকেই মারতে লাগলো এলোপাতাড়ি। ছেলেগুলো হঠাৎ জুভানের এমন রূপ বদলানো দেখে থতমত খেয়ে গেলো। আকাশ নাকের রক্ত দেখে জুভানের দিকে তেড়ে আসলে জুভান ওর পায়ে লাথি দিয়ে রাস্তায় শুইয়ে দেয়। রাগে কাপতে কাপতে বলে,

” জানোয়ারের বাচ্চা , কুত্তার বাচ্চা , মেয়ে দেখলেই শয়তানি করতে মন চায়। তাইনা ? আজ তোদের সবগুলোর ওই মিশনটাই নষ্ট করে দিবো। কুত্তার বাচ্চা।”

বলেই আবারও এলপাথারি লাথি দিতে থাকে ওই মাতালদের। ঐশী একপাশে কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে। বেশ ভয় পেয়েছে মেয়েটা।

ছেলেপুলে যখন মাটিতে কাতরাতে ব্যস্ত তখন জুভান ঐশীর দিকে তাকিয়ে কটমট গলায় বললো,

” ঢাকা একা যেতে পারবে তো। ওকে তাহলে। আমি চলে যাচ্ছি। একা একা হেঁটে ছয় কিলোমিটার পাড়ি দিও। যত্তসব পাগলের দল। ”

বলেই জুভান হেঁটে গিয়ে গাড়িতে উঠে গেলো। ঐশী যা ভয় পেয়েছে তাতে একা একা যাওয়ার সব শখ মিটে গেছে ওর। তাই চুপচাপ নিজের সাইড ব্যাগ আকড়ে ধরে গাড়ির কাছে এসে দাড়ালো।

জুভান ঐশীকে দেখে কিছু বলল না। এক তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে দরজা খুলে সামনের সিটে এসে বসলো। ঐশী চুপচাপ পিছন সিটে বসে দরজা আটকে দিল।

গাড়ি চলছে। জুভানের রাগ এখনো সপ্তমে চড়ে আছে। তাই তো এক হাত জানালায় রেখে বাইরে তাকিয়ে আছে। দৃষ্টি শূন্যে ভাসছে। চোখের নজর কঠিন। ঐশী নিজের ওড়নার শেষাংশ ধরে মাথা নিচু করে বসে আছে। একটু পর ঐশী মনে হলো ওর স্প্রে ত ওই মির্জার কাছে। তাই ও মাথা তুলে জুভানের দিকে তাকিয়ে বলল,

” আমার স্প্রে ? ”

জুভান হিংস্র চোখে পিছন ফিরলো। ঐশীর দিকে তাকিয়ে কঠিন সুরে বলল,

” আমার উপর এপ্লাই করার জন্যে ? ”

ঐশী এক ঢোক গিলল। আসলেই তো। যে ওকে এই ভয়ঙ্কর বিপদ থেকে রক্ষা করেছে তাকেই এখন ঠিকমত ভরসা করতে পারছে না। কেনো ? ঐশী কাচুমাচু গলায় বললো,

” আসলে আমি ইয়ে মানে.. ”

” আমি কোনো মেয়ের সম্মতি ছাড়া তাকে ছুঁয়ে অব্দি দেখিনা। আমি কখনো কাউকে নিজের কাজের কৈফিয়ত দেইনা। কিন্তু আমার সামনে বসে থাকা এক মাথা মোটার জন্যে বলতে বাধ্য হলাম। রিডিকিউলাস । ”

ঐশী সব শুনে উত্তর দিল না। আবারো জানালার দিকে তাকিয়ে তারা গুনতে মগ্ন হয়ে গেলো। জুভান এক উষ্ণ নিঃশ্বাস ফেলে ব্যাগ থেকে মরিচ স্প্রেটা নিয়ে সেটা ঐশীর দিকে বাড়িয়ে বলল,

” নাও। ”

ঐশী জানালার থেকে মুখ সরিয়ে ঝট করে জুভানের হাত থেকে স্প্রে টা নিয়ে নিজের ব্যাগে রেখে দিল।

জুভান অবিশ্বাস্য নয়নে ঐশীর দিকে তাকিয়ে আবারও সামনে তাকালো। এই মেয়েটা কিসের তৈরি ? খোদা ! এত অবিশ্বাস কোথা থেকে আমদানি হয় !

______________________

ফজরের আজান দিচ্ছে। গাড়ি জুভানের বাড়ির সামনে এসে থামল। জুভান গাড়ি থেকে নামতে নামতে ড্রাইভারকে বললো,

” চাচা , আপনি এই মেয়েকে সেফলি ওর বাসায় পৌছে দিয়েন। ”

বলেই ঐশীর দিকে ফিরল। ঐশী ততক্ষণে ঘুমে কাহিল। জুভানের রাগ লাগলো। সারারাত ওকে এত চিন্তায় ফেলে এখন নিশ্চিন্তে ঘুমানো হচ্ছে ! জুভান গাড়ির সিট থেকে পানির বোতল নিয়ে এক আজলা পানি ছিটিয়ে দিল ঐশীর চোখে মুখে। ঐশী ঠান্ডা পানির স্পর্শ পেয়ে হুড়মুড় করে উঠে বসলো। আদো আদো চোখে তাকালো জুভানের দিকে। জুভান হাত ঘড়ি দেখতে দেখতে বললো,

” অ্যাড্রেস বলো তোমার। ড্রাইভার চাচা পৌঁছে দিবেন। ”

ঐশী কি বলবে এখন ? কোনো উত্তর যে নাই ওর কাছে। ঐশী কাচুমাচু গলায় বলল,

” আ.আমার ঢাকায় কোনো ঠিকানা নেই। ”

” হোয়াট ? ”

জুভান তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বললো।

#চলবে…