ইচ্ছে কথন পর্ব-১৩+১৪

0
740

#ইচ্ছে_কথন
#writer_falak_moni
#পর্ব_১৩

রাত ১১টা বাজতে চলল তরু নাতাশা নীলিমা সাথী বসে আছে গুটিসুটি মেরে । সাথী তখন নাতাশাকে বলতে লাগলো,

নাতাশা তোমাকে তো আমি চিনি না ইনফেক্ট তোমাদের কেউ আমার পরিচিত নয়।তবে আকাশের মুখে তোমাদের কথা অনেক শুনি বিশেষ করে প্রিয় আর তোমার কথা।

সাথীর কথা শুনে নাতাশা একটু হাসলো। সাথি তরুর দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে। তখনই আকাশ আর সিধু হাতে ড্রিংস এর বোতল নিয়ে হাজির হলো। আকাশ বলতে লাগলো,

এটেনশন প্লিজ, প্রিয়, কল্প তোরা কোথায় বলতেই কল্প নাতাশার শালটা মাথায় পেচিয়ে বলতে লাগলো,

দেবরজি আমি এখানে।

কল্পের কথা শুনে প্রিয় পেছন থেকে থাপ্পর দিয়ে বলতে লাগলো,,

নাতাশাকে জব্দ করতে যাস নাকি।

কল্প হো হো করে হাসতে লাগলো।এদিকে নাতাশা হাতে লাঠি নিয়ে তেরে আসছে কল্পের দিকে।কল্প নাতাশার এমন বিমোহিত রাগালো ফেইস দেখে সিধুকে ডাকতে লাগলো,

সিধু ভাই কই তুমি। সিধু আসার আগেই নাতাশা লাঠি দিয়ে পেটাতে লাগলো। কল্প মাইর খেয়ে বলতে লাগলো,

তোমাগো মাইয়া মানসে পারো বটে। এত জোর আহে কই থেইক্কা। বাল আমার

বলেই নাতাশার গায়ের উরনা দিয়ে দিল দৌড়। নাতাশা ওখানেই দাড়িয়ে রইলো।তরু তার শালটাকে নাতাশার গায়ে জরিয়ে দিয়ে আকাশের পাশে গিয়ে দাড়ালো।দাড়িয়ে বলতে লাগলো,

আচ্ছা আকাশ ভাইয়া এগুলো কি?

কেন খাবা।

খাব কিন্তু কি?

এগুলো ড্রিংস বলতে বলতেই কল্প এসে হোট করে গ্লাস থেকে কয়েক ডোগ গদ গদ করে খেয়ে ফেলল। কল্প যতই ড্রিংস করে না কেন ড্রিংসে সে মাতাল হয় না। কল্প ড্রিংস করে একটা টেবিলের উপর বসে বসে ফোনের গ্যালারি থেকে পিক দেখছে। ঐদিকে তরু আর নাতাশা তার পেছনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখতে যাবে যে কল্প ফোনে কি দেখছে এত মনোযোগী হয়ে তার আগেই কল্প হোট করে ফোনের লক বাটানে চাপ দিয়ে ফোনটাকে লক করে ফেলল।পেছনে নাতাশা আর তরুকে দেখে দাড়িয়ে বলতে লাগলো,

বাল আমার তগো মাইয়া মানষের জ্বালায় মনে হয় সন্নাসীর নিস্পৃহ হইতে হইবো আমায়। শান্তি আর দিলি না। বলেই কল্প এখান থেকে চলে গেল। নাতাশা বুঝতে পারছে কল্প খুব রেগে আছে যার কারনে এমন বরিশালের ভাষায় কথা বলছে। কল্প চলে যেতেই তরু নাতাশা টেবিলে বসলো সেখানে কিছু ড্রিংসের গ্লাস রয়েছে। তরু একটা হাতে নিয়ে বলতে লাগলো,,

সোনা আপু কল্প ভাইয়ার কেসটা কিন্তু এখনো বুঝলাম না। কার ছবি দেখছিলো ফোনে এত নিখুত ভাবে।

নাতাশা অন্যদিকে ফিরে বললো

হয়তো তুলির। কারন কল্প তো তাকে অনেক ভালোবাসতো।

তরু হাতের গ্লাসে একটু চুমুক দিয়ে বলতে লাগলো আপু আমার কিন্তু সেটা মনে হচ্ছে না।

নাতাশা উঠে যেতেই তরু হাতটা ধরে বলল,

সোনা আপু ইউ আর ইন লাভ।

নাতাশা কিছুই বলল না। তবে মনের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠছে বার বার।

তুলির ছবি দেখো না কোনো নায়িকার ছবি দেখোক আমার কি। আমার ভেতর কেন এত কষ্ট হচ্ছে।

কথাগুলো বলেই নাতাশা চলে গেল।এদিকে তরু একের পর এক ড্রিংস করেই যাচ্ছে। প্রিয় দূর থেকে সেটা দেখে দৌড়ে আসলো তরুর দিকে এসে বলতে লাগলো।

তরু তুই ড্রিংক করছিস?

তরু ঠোঁট উল্টে বলতে লাগলো,

চৌধুরি সাহেব বেশি ভাব নিবেন না। আপনি আমার জীবনটাকে পলিথিন বানিয়ে ফেলছেন। ভালোবাসি আপনাকে সেটা বুঝেও আপনি বুঝেন না। কষ্ট আমারও হয় দুঃখ আমারও হয়। কেন বুঝেন না আপনি?

প্রিয় বুঝতে পেরেছে এই মেয়েকে সামলানো অনেক কঠিন হবে। তাই সে কোলে তুলে নিল।কোলে তুলে সোজা রুমের দিকে হাটা ধরলো। রুমের ভেতর নিয়ে ধপাস করে নিচে ফেলল,

তরু কমরে হাত দিয়ে ডুলতে লাগলো। তারপর দাড়িয়ে প্রিয়র শার্টের কলার ধরে বলতে লাগলো,

কেন এত অবহেলা কর আমায়।আমি কি তোমার একটু ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না?

প্রিয় তরুর কথার কোনো জবাব দিল কারন সে তো রেগে একাকার হয়ে আছে। কিভাবে পারলো একটা মেয়ে এতগুলো ড্রিংসের গ্লাস শেষ করতে।

তরু এবার আস্তে আস্তে প্রিয়র মুখের দিকে এগিয়ে আসলো। প্রিয় অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। তরু প্রিয়র থুতনি ধরে তার দিকে ফিরিয়ে লিপ কিস করতে লাগলো।

এক উষ্ণ আর্দ্র হয়ে আছে প্রিয়র ঠোঁট জোড়া যা তরুকে ক্রমশই টেনে যাচ্ছিলো বার বার। ভালোবাসা নামক চাকত পাখিটা বইতে লাগলো ভেতরের ঝড়ের বেগে। তরু প্রিয় ঠোঁটের স্বাদ নিচ্ছিলো ঠিকই। কিন্তু প্রিয় তাতে অনেকা নার্ভাস হতে লাগে। কারন এ সময় তরু এমনটা করবে সেটা কখনো ভাবেনি প্রিয়। কিন্তু ড্রিংস করলে এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। প্রিয় যতই তরুর থেকে ছোটতে চাইছে তরু যেন ততোই তাকে নিজের দিকে টানছে। প্রিয় তরুর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে অথচ তাকে ছাড়ছে না। এ কেমন ভালোবাসার প্রতিক্ষা।তাহলে কি মেয়েটা হোস থেকেই এসব করছে। প্রিয় এসব ভাবতেই তরুকে তার কাছ থেকে ছাড়িয়ে বলতে লাগলো,

আমি জানি তরু তুই নিজের মধ্যেই আছিস। তবে তর এই পাগলামিগুলো আমার ভালো লাগেনা। কতবার বলব তর জন্য আমার ভেতর কোনো অনুভূতি নেই। আর আসবেও না। কেন তুই হেয়ালিপানা করিস। তকে আমি কখনো ভালোবাসতে পারবো না আজ বলে দিলাম।

প্রতিটা কথা তরু আগের বারও শুনেছিল।তবে লাস্ট ওয়ার্ডগুলো কখনো শুনেনি। সত্যিই তো ভালোবাসা কি এতটাই সস্তা যে চাইবে মাত্রই পাওয়া যাবে। কিন্তু তার কি দোষ। যেখানে বার বার বেহায়াপানা হচ্ছে কেবল একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য সেখানে সে প্রতিটা বারই এমন এমন কথা শুনে এসেছে লোকটার কাছ থেকে। তরু প্রিয়র কথার কোনো জবাব দিলনা। সোজা বেডে শুয়ে পড়লো। প্রিয়ও শুয়ে পড়লো। তরু এপাশ ফিরে চাপা কান্না করতে লাগলো।সত্যিই তো তার দোষটা ঠিক কোন জায়গায় যার কারনে সে কখনো স্বামীর ভালোবাসা পাবে না। কিন্তু লোকটাকে তো সে কবে থেকেই মনের ভেতর গেথে নিয়েছে। যেদিন থেকে সে বুঝতে পেরেছে স্বামী কি ভালোবাসা কি। তাহলে সে ভালোবাসাটা কি সব সময় ভালোবাসা হয়েই থেকে যাবে। লোকটা কি তার অনুভূতিগুলো কখনো বুঝবেনা।এসব ভেবেই তরু চাপা কান্না করে যাচ্ছে।

#চলবে

ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ❣️

#ইচ্ছে_কথন
#writer_falak_moni
#পর্ব_১৪

১৪.

রাত ২টা বাজতে চলল।নাতাশা কল্পের উল্টোদিক ঘুরে কেঁদেই যাচ্ছে। তবে এ কান্না কিসের কান্না সেটা ব্যাখ্যা দেওয়ার মতো চিন্তা চেতনা কোনোটাই তার মাঝে নেই এখন। কেন এতটা খারাপ লাগছে কল্পের ফোনের স্কিনে ঐ মেয়ের ছবি থাকার কথা ভেবে। নাতাশা চোখের পানিগুলো মুছে কল্পের দিকে ফিরলো। কল্পের মায়াময় চেহারায় দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো।

ছেলেটা তেমন সুন্দর নয়।গায়ের রঙটা তেমন কালোও না আবার তেমন ফর্সাও না। কিন্তু কপালে থাকা ভ্রুজোড়া খুবই সুন্দর। নাতাশা কল্পের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে নিজে নিজেই আনমনা হয়ে বলতে লাগলো,

আমি তোমার প্রেমে পড়েছি কল্প। আই এম ইন লাভ কথাটা বলেই নাতাশা ওপিট ফিরে হাসতে লাগলো।

হাসতে হাসতে এক পর্যায়ে কখন ঘুমিয়ে পড়লো সেটা টেরই পেল না।

সকালে প্রিয় ব্রেকফাস্ট করে বসে আছে। তরু এখনো মুখে কিছুই তুলছে না। প্রিয় যতবারই খাবারের কথা বলেছে সে ততোবারই খিদে নেই বলে কাটিয়ে দিয়েছে। প্রিয় বুঝতে পেরেছে তরু তার উপর রাগ করে আছে। কিন্তু তার কি করার আছে। যদি এখন সে বলে তরু তর প্রতি আমার ভেতর অনুভূতি কাজ করছে তাহলে তরুর মনে হবে প্রিয় স্বার্থপর ছাড়া আর কিছুই না । প্রিয় কি করবে বুঝে উঠতে পারছেনা। এই মেয়ে কেন এত রাগ দেখায়।রাগ দেখালে দেখাবে কিন্তু তার এত অস্থির লাগে কেন সেটাই বুঝতে পারছেনা প্রিয়। প্রিয় বাধ্য হয়ে তরুর সামনে কানে ধরে বসলো। তরু প্রথম সেটা খেয়াল করেনি। কিন্তু পরে যখন দেখতে পেল তখন স্তব্ধ হয়ে রইলো। তরুর দিকে তাকিয়ে প্রিয় কান ধরে বলতে লাগলো,

সরি তরু মাফ করে দে আর তকে বকবো না প্লিজ খাবারটা খেয়ে নে।

তরু বসা থেকে তাড়াতাড়ি ওঠে আসলো। এসে প্রিয়র সামনে বসে বলতে লাগলো ,

এটা কি করছো তুমি। আমার সামনে কেন এভাবে কানে হাত দিয়েছ।তুমি তো ভুল কিছু বলনি। সত্যিই তো বলেছো। জোর করে আর যাই করা যায় ভালোবাসা পাওয়া যায় না। হয়তো আমাকে তোমার ভালো লাগেনি তাতে কি হয়েছে। কত মেয়েই আছে। আর আমি তো তোমার জন্য পারফেক্ট না। প্রথমে নেই যোগ্যতা। তার উপর আন ম্যাচিউর। কোনো দিক থেকে আমি তোমার যোগ্য না। এই দেখো আমি খাবার খাচ্ছি।

তরু কথাগুলো বলছে আর চোখ থেকে বিষাক্ত নোনা জমাটবদ্ধ হয়ে থাকা পানি গুলো ঝড়ে ফালাচ্ছে। কেন এত কান্না পায় তার। যে লোকটা কিনা তার অনুভূতি বুঝে না। তরু এক হাতে চোখের জল মুছে নিচ্ছে আরেক হাতে খাবারের প্লেট থেকে জ্যাম্প আর পাউরুটি খাচ্ছে। গলা দিয়ে খাবারগুলো নামছে না। এযেন সবার খাবার গলায় আটকে আছে। কিন্তু কি করার খাবার তো খেতে হবে। নয়তো প্রিয় এমন কান ধরে বসে থাকবে। আর তরু সেটা হজম করতে পারবেনা। এদিকে প্রিয় দাড়িয়ে দাড়িয়ে মেয়েটার এমন রূপ দেখে যাচ্ছে। সত্যিই না চাইতেও সে মেয়েটাকে এত কষ্ট দিয়ে ফেলেছে।

আজ সন্ধ্যায় সবায় চলে যাবে বাড়িতে। অনেক ঘুরাঘুরি করা হয়েছে । এবার বাড়িতে যেতে পারলেই শান্তি। সবায় ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিয়েছে। সন্ধ্যা ৫টায় বাস আসায় যে যার ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিয়ে বাসে ওঠে গেল।গন্তব্য ফিরতে পরের দিন সকাল দশটা বাজলো। বাড়িতে ফিরে সবাই টায়ার্ড হয়ে আছে। প্রিয় এতদিন তাদের বিজনেস দেখাশোনা করে নি। তাই সে ঠিক করেছে আগামীকাল থেকেই ব্যবসার সব দায়িত্ব সামলাবে। এদিকে তরুর আর কিছুদিন পর এক্সাম। তাই সে ডিসাইড নিয়েছে যে কয়টা এক্সাম আছে সে কয়টা দিন এখানে থাকবেনা। নীলিমার বাসা থেকে এক্সাম শেষ করে বাসায় ফিরবে। এখন নাতাশা হুকুম দিলেই হয়।এসব ভেবে নাতাশার রুমে গেল তরু। রুমের সামনে গিয়ে দেখতে পেল নাতাশা বসে বসে গান শুনছে। শুনো গো দক্ষিণো হাওয়া প্রেমে পড়েছি আমি। এই গানটা। তরু বুঝতে পারছে নাতাশার ভেতর এখন প্রেমের হাওয়া বইছে।

কত সুন্দর ভাবে সোনা আপু স্বাভাবিক হয়ে গেল।কিন্তু প্রিয় ভাইয়া কি কখনো এমন স্বাভাবিক হবে না। দুরু আমি কি ভাবছি ওনার সাথে কি আমাকে মানায় নাকি। আমি তো কালো। তরু বেশি স্বপ্ন দেখিস না। বলেই তরু নাতাশার গলা জরিয়ে বলতে লাগলো,

সোনা আপু আজ তোমার কাছে একটা জিনিস চাইবো প্লিজ নিষেধ করোনা।

আচ্ছা বল কি চাস। আমি নিষেধ করবো না। কারন আজ আমি খুব খুশি তরু।

তরু সুযোগ বুঝে নাতাশার গলা জরিয়ে বলতে লাগলো,

আসলে আপু কিছু দিন পর আমার এইচএসসি ফাইনাল এক্সাম। তাই আমি বলছি কি যে কয়টা দিন এক্সাম থাকবে সে কয়টা দিন নীলিমার বাসা থেকে পড়া লেখা করব।একেবারে এক্সাম শেষ হলে বাসায় আসবো।

তরুর কথা শুনে নাতাশা কিছু একটা ভাবলো। তারপর বলতে লাগলো,,

আচ্ছা ঠিক আছে তর যা ভালো মনে হয়।

#চলবে,