ইচ্ছে কথন পর্ব-৩০ এবং শেষ পর্ব

0
1070

#ইচ্ছে_কথন
#writer_falak_moni
#পর্ব_৩০(শেষ)

৩০

বিয়ে রিসিপশনের সব কাজ সরঞ্জাম শেষ করে তরু মাথাটা হেলিয়ে একটু প্রিয়র পাশে বসলো। প্রিয় খুব আদর স্নেহের সাথে তরুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। তরু তখন প্রিয়র দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,

আচ্ছা তুমি আমাকে এত কেয়ারিং কর কেন?

কেন। তোমার খারাপ লাগে।

না সেটা নয়।তবে আমি যদি তোমার জীবন থেকে কখনো চলে যাই।তখন এই মায়া কাটিয়ে ওঠতে পারবে।

তরুর কথা শুনে প্রিয়র রাগ হতে লাগলো। কিন্তু রাগকে পরোয়া করে বলতে লাগলো,

শোনো মেয়ে জীবন কখনোই কারো জন্য থেমে থাকেনা। হয়তো আমার জীবনও থেমে থাকবেনা। তবে তুমি না থাকলে আমার জীবনটাকে আমি মরিচীকা বলে সম্বোধন করব। কয়লা ধুলে কখনো ময়লা যায়না। আফটার অল আমার জীবনটাও তেমন কয়লায় পরিনত হবে। যেখান থেকে তোমাকে ভুলার সাধ্যতা আমার ভেতর জাগবেনা। তোমার স্মৃতিগুলো কুড়ে কুড়ে আমাকে ময়লায় পরিনত করবে। আর সেই ময়লার খেসারত দিতে দিতে আমিও চলে যাব তোমার কাছে। নাও দেন অলসো সিরিয়াস। আর কিছু বলার থাকলে বলতে পারো।

তরু আর কিছুই বলল না প্রিয় ওঠে এসে তরুর হাত দুটো ধরে আবারো বলতে লাগলো,

এই কথা আর বলবেনা মায়াবতী। তুমি আমার সেই মায়াবতী যে আমার অনুভূতিকে সুগভীর ভাবনার প্রতিফলন থেকে বের করে আমার ভেতর ভালোবাসার অনুভূতি জাগ্রত করেছো। তুমি আমার সেই মায়াবতী যাকে দেখে দেখে আমি বাকিটা জীবন কাটিতে দিতে পারবো। আমার মায়াবতী শুধু আমারই থাকবে। আমার মায়াবতীর কিছু হতে দেবনা আমি। দরকার হয় ভয়কে করব জয়।আল্লাহ যেহেতু ঐরকম ক্রিটিকেল অবস্থা থেকে তোমাকে আমার করে দিয়েছে। আশা করি বাকি জীবনটাও আমারই হয়ে থাকবে। বড্ড ভালোবাসি যে তোমাকে এমন কথা বল্লে খারাপ লাগে খুব।

তরুর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো। প্রিয় যে এতটা কষ্ট পাবে সেটা সে খেয়াল করেনি। প্রিয় আস্তে করে তরুর চোখের পানি মুছে বলতে লাগলো,

কাঁদছো কেন তুমি। আমি তো কান্নার কিছু বলিনি।

তরু প্রিয়র বুকের উপর ঝাপিয়ে পড়লো।কেন এতটা ভালোবাসে। এক সময়তো দূরে দূরে রাখতো। তবে এভাবে ভালোবেসে চিরটা জীবন কাটাতে চায় প্রিয়র সাথে।

_______________

কেটে গেল কয়েকটি মাস। হসপিটালের দরজার সামনে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে কল্প। পাশে বসে আছে তরু প্রিয় আফজাল চৌধুরি। ওটির ভেতর নিয়ে যাওয়া হয়েছে নাতাশাকে। কল্প গালে হাত দিয়ে দেয়ালে মাথা লাগিয়ে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছে। আজ তার কারনেই নাতাশার এমন অবস্থা।

ফ্লাসব্যাক,,

নাতাশা রুমে বিছানা ঠিক করতে ব্যস্ত এমন সময় বালিশের নিচ থেকে প্রটেকশনের কাগজ পেল সাথে মোবাইল ফোনটাও রাখা । নাতাশা কাগজটাকে হাতে নিয়ে এপিঠ ওপিঠ দেখে ভাবতে লাগলো,

কল্পের কি অন্য কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্কে জরিয়ে আছে। আমার সাথে শারীরিক কোনো সম্পর্ক নেই বলে কি অন্য মেয়ের সাথে। যার কারনে এই প্রটেকশনের প্যাকেট নিয়ে ঘোরাফেরা করছে।

নাতাশার মাথায় এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খেতেই কল্পের ফোন টিং করে বেজে ওঠলো। তাকিয়ে দেখতে পেল এস এম এস এসেছে বাবু নাম্বারে। কল্প তো ওয়াস রুমে তার মানে এখন তো রুমে নেই তাহলে ফোনটা দেখাই যায়।

নাতাশা কল্পের ফোনটাকে হাতে নিয়ে ওপেন করে মেসেজ অ্যাপসে ডুকল।তারপর বাবু নামে অপশনটিতে ক্লিক করে দেখতে পেল। কল্প কিছুক্ষণ আগে মেসেজ দিয়ে রেখেছে বাবু কই তুমি। কল্পের রিপ্লাই লিখেছে।

এই তো হসপিটালে। কখন আসবে তুমি?

এতটুকুই আর কিছু নেই।নাতাশা বিছানার মধ্যে ফোনটা রেখে ধপাস করে উপোর হয়ে ফ্লোরে পড়ে গেল।মাথাটা জিম জিম করে ওঠছে। শরীরটা বড্ড নিসতেজ হয়ে আসছে। হারগুলো ভেঙ্গে মনে হয় পেটে ব্যথার অতিক্রম শুরু হতে চলেছে। নাতাশার এতক্ষণ মনে ছিলনা যে তার পেটেও একজন মানুষ বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন। বেড়ে ওঠছে পেটের ভেতর তার অনাগত সন্তান। সন্তানের কথা মনে হতেই নাতাশা পেটে হাত দিয়ে জোরে কল্পকে ডাকতে লাগলো। নাতাশার এমন আওয়াজে কল্প ছুটে আসলো নাতাশার কাছে। এসে দেখতে পেল নাতাশা ফ্লোরে পরে পেটের উপর হাত দিয়ে অনবরত চোখের পানি ফেলে যাচ্ছে। কল্প বিছানা থেকে ফোনটা তুলে নাতাশাকে কোলে নিয়ে তাড়াতাড়ি করে নিচে নামলো।আফজাল চৌধুরি আর প্রিয় খাবার খাচ্ছিলো তখন তরু সার্ব করছে। নাতাশাকে এমন অবস্থায় দেখে ঘাবড়ে যায় সবায়।তারপর তাড়াতাড়ি করে হসপিটালে ভর্তি করায়।ডাক্তার জানায় রোগীর কন্ডিশন খুবই খারাপ।এই মুহুর্তে এ বি পজেটিভ ব্লাড লাগবে সির্জারের জন্য। কল্প রক্তের জন্য তার হসপিটালে ফোন দিবে এমন সময় দেখতে পেল।বাবুর নাম্বারের এসএমএস গুলো সেন্ডো করে রাখা। যা বুঝার বুঝে গেল কল্প।

ওটির আলো বন্ধ হতেই একজন নার্স এসে আফজাল চৌধুরির কোলে বাচ্চাকে দিয়ে বলতে লাগলো,,

কনগ্রাচুলেশন্স মেয়ে বাবু হয়েছে। তরু প্রিয় সবাই এগিয়ে এসে বাচ্চাটাকে দেখতে ব্যস্ত শুধু কল্প বাদে। কল্প নার্সের কাছে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে বলতে লাগলো,

আমার ওয়াইফ কেমন আছে। প্লিজ বলুন । আমি আমার ওয়াইফের কাছে যেতে চাই।

নার্স তখন কল্পকে বলতে লাগলো,

এত উত্তেজিত হওয়ার কিছুই নেই আপনার স্ত্রী সুস্থ্যই আছে। ওনাকে এখন আই সি ইউ তে নেওয়া হয়েছে । ১ঘন্টা পর গিয়ে দেখা করতে পারেন।

কল্প যেন নিশ্বাস ফিরে পেল।

এ ঘন্টা পর সবাই এক সাথে নাতাশাকে দেখার জন্য আই সি ইউর রুমে গেল। সেখানে নাতাশাকে আরো এক ঘন্টা রাখা হবে তারপর কেবিন ঠিক করা হবে। আফজাল চৌধুরি নাতনিকে পেয়ে খুশিতে আটখানা হয়ে আছে। আর কোনো দিকে হুস নেই । আফজাল চৌধুরির কোল থেকে তরু বাচ্চাটাকে কোলে এনে আদর করতে লাগলো।তখন প্রিয় তরুর কানে কানে বলতে লাগলো,

বাচ্চাকে কোলে নেওয়ায় তোমাকে একদম মা মা লাগছে। তাই আমি বলি কি আমরা আর দেরি করব কেন মিশন শুরু করে দেই।

প্রিয়র কথা শুনে তরুর চোখ কপালে। লোকটা লুচু হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। কখন কি বলে নিজেই জানেনা। পাবলিকপেসে এমন কথা বলে কেউ।কি আজব। তরু মুখটাকে লজ্জা নিচের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,

বাবা ভাইয়া দাড়িয়ে আছে চুপ একদম চুপ।

প্রিয় হাসতে লাগলো।

কল্প তাকিয়ে আছে নাতাশার দিকে। মেয়েটা যে এভাবে রিয়েক্ট করবে সে কি জানতো৷ প্রিয় কল্পের ফেইস দেখে বলতে লাগলো।

বাবা আমার মনে হয় এখন এখান থেকে আমাদের চলে যাওয়া উচিত ওদের কিছুটা সময় মিন করতে দেওয়াটা বেটার হবে। আফজাল চৌধুরি প্রিয় তরু বাচ্চাটাকে দোলনায় শুয়িয়ে চলে গেল। কল্প নাতাশার পাশে এসে বসে নাতাশার হাতটা ধরে। নাতাশা চোখ খুলে কল্পকে দেখে অভাক হয়ে যায়। কারন কল্পের চোখগুলো লাল হয়ে আছে মাথার চুলগুলো কেমন এলোমেলো। নাতাশার বাবুর কথা মনে হতেই কল্পের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। অন্যদিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,

তোমাকে এখানে আসতে বলছে কে।যাও না তোমার বাবুর কাছে যাও। সে তো তোমার অপেক্ষায় বসে আছে হসপিটালে।

কল্প তখন ধরাগ্রস্ত গলায় বলতে লাগলো,

এই বুঝি তুমি আমাকে চিনলে। কলেজ জীবন ভার্সিটি জীবন শেষ করলাম তোমার পেছন ঘুরে আর তুমি কোথাকার কোন বাবুর জন্য আমার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছোনা। এই তোমার ভালোবাসা আমার প্রতি।

নাতাশা কল্পের কথার মানে বুঝলোনা। কল্পের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,

কি বলতে চাও তুমি?

এই যে আমার হসপিটালের সিকিউরিটি বাবু ভাইয়ের জন্য তোমার ডেলিবারি নয় দিন আগে হয়ে গেল।

নাতাশা যেন বোকা বনে গেল। কিন্তু প্রটেকশন। এটা কি মিথ্যা নাকি।

নাতাশা কল্পের দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বলতে লাগলো,

তাহলে প্রটেকশন নিয়া ঘুরাফেরা করো কেন। তোমার বালিশের নিচে এগুলো পাইলাম কেন কল্প।

কল্প নাতাশার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলল,

বোকা মেয়ে এটা অনেক প্রিয় ভাইয়ের বিয়ের দিন তাকে গিফ্ট হিসাবে দেওয়ার জন্য রাখছিলাম। আমি কি জানতাম প্রিয় ভাই সে বক্স নিবেনা। আর তুমি তা হাতে পাইবা তারপর এই কান্ড ঘটাবা।

নাতাশা যেন আহামক হতে লাগলো। কল্প নাতাশার হাতটি ধরে বলতে লাগলো,

পাগলি মেয়ে এত সন্দেহ কেন করো। আমি তো তোমারই।

তাহলে ঐ দিন তুলিকে আমাদের বাসায় আসায় তুমি বল্লাকে কেন তুলি খুব সুন্দর।

তোমাকে জেলাস ফিল করাতে।

নাতাশা আর কিছুই বললনা । হঠাৎ বাচ্চাটা কান্না করে ওঠলো। কল্প দোলনা থেকে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে বলতে লাগলো,

নাতাশা এটা বুঝি আমাদের মেয়ে। ভাবতে পারছো। বলেই চোখের জল ফেলতে লাগলো কল্প বাবা হওয়ার অনুভূতিটা যে কি সে কল্প বুঝতে পারছে। ছোট ছোট গাল হাত পায়ে চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিচ্ছে নাতাশা বাপ মেয়ের কান্ডে হাসতে লাগলো।

তখনই আফজাল চৌধুরি প্রিয় তরু রুমে ডুকে। আফজাল চৌধুরি নাতনিকে কোরে নিয়ে বলতে লাগলেন,

আমার দাদুমনির নাম রাখলাম কল্পনা। কেউ ভুলেও অন্য নামে ডাকবা না সাবধান করে দিলাম। কল্পনা বলেই ডাকবে সবাই।
কল্প নাতামার নামের স্থে মিলিয়ে নাম রাখা হয়েছে। বাবার এমন পাগলামি দেখে হাসতে লাগলো সবাই। অতএব সবাই সুখে দুঃখে দিন কাটাতে লাগলো।

#সমাপ্ত

গল্পটাকে ঠিক কতটুকু সুন্দর করে লিখতে পারছি জানিনা। তবে আপনাদের ভালোবাসায় অনেকটাই সুন্দর করে লিখার চেষ্টা করেছি। গল্পটার সমাপ্ত এভাবে দিতে চাইনি। আরো প্লট নিয়ে মোড় ঘোরানোর চিন্তা ভাবনা ছিল।কিন্তু শরীর অসুস্থতার জন্য লিখে উঠতে পারছিনা। তবে এই গল্পের সিজন টু খুব তাড়াতাড়িই বের হবে যদি আপনারা ভোট দিন তাহলে।লিখার অনুপ্রেরনা আছে। ধন্যাদ সবাইকে এভাবে পাশে থেকে সাপোর্ট করার জন্য। ভালো থাকুন সুস্থ্য থাকুন।