ইচ্ছে কথন পর্ব-১৭+১৮

0
755

#ইচ্ছে_কথন
#writer_falak_moni
#পর্ব_১৭

১৭.

তরুকে বোকা বানিয়ে প্রিয় তাকে কোলে তুলে নিয়ে গেল গাড়িতে বসানোর জন্য।তরু প্রিয়র মুখের দিকেই তাকিয়ে আছে। এটা কি সত্যিই নাকি কোনো স্বপ্ন দেখছে সে তরু হাত দুটো দিয়ে চোখ কচলাতে শুরু করলো। না তো এটা তো ঠিকই দেখছে সে। বৃষ্টি থেমেছে অনেকটাই।তরু এখনো কোনো শব্দ করছেনা। করবেই বা কিভাবে। সে যে এখন পুরোই স্টাচু হয়ে আছে। মিষ্টার প্রিয় চৌধুরি আজ নিজ থেকে চুমু দিল তার উপর আবার নিজ থেকে কোলে নিয়ে হাটছে। ব্যাপারটাকে তো ঠিক হজম হচ্ছে না। তরুকে গাড়িতে উঠিয়ে প্রিয় বলতে লাগলো,

এখন কোনো কথা নয়।আমার সাথে সোজা বাসায় যাবি। আই হোপ আমি তকে বুঝাতে পেরেছি।

তরু প্রিয়র হাবভাব কিছু বুঝতে পারছেনা। তবে রেগে আছে সেটা বেশ বুঝতে পেরেছে। কারন চেহারায় রাগের ছাপ স্পস্ট ভেসে আছে। ভেজা কাপড় চোপড় নিয়ে বসে থাকাটা খুবই ক্রিটিকাল সময়।কারন সমস্ত জামা কাপড় দুজনরই ভিজে আছে। তর বার বার প্রিয়কে একমনে দেখেই যাচ্ছে। যেন এ দেখার শেষটা কোথাও নেই এ দেখা যেন থমকে না থাকে। হঠাৎ তরুর ফোন বেজে উঠে ফোন বাজতেই তরু ধ্যান ভেঙ্গে ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে।ফোনের স্কিনে নীলিমার নামটা ভেসে আছে। তরুর সাথে সাথেই ফোনটা রিসিভ করলো।ওপাশে থেকে,

হ্যালো তরু?

হুম বল শুনছি।

তুই কি প্রিয় ভাইয়ার সাথে বাসায় চলে গেলি নাকি।

হ্যা। তবে রাতে ফিরছি তোর কাছে।

কথাটা বলতেই প্রিয় তরুর হাত থেকে ফোনটা টেনে নিয়ে নিলো।তারপর নীলিমাকে ঝাঝানো গলায় বলতে লাগলো,

তোমার বান্ধবী আর যাবেনা তোমার বাসায়। ওর বই খাতা জামা কাপড় সবগুলো পাঠিয়ে দিও।আর নেক্সটাইম যদি যায়ও ঘরে জায়গা দিবা না। বলেই ফোনটা কেটে দিল।

ওপাশ থেকে নীলিমা হাবলার মতো প্রিয়র কথাই শুনে গেল। হয়তো তরু আর প্রিয়র মধ্যে ঝগড়া হয়েছে। যার জন্য তরু তার বাড়িতে এসে উঠেছে। এটা ভেবেই নীলিমা তার কাজে মন দিল।

বাসায় ফিরে তরু ভেজা জামা নিয়েই খাটের উপর বসে আছে। প্রিয় তার গায়ের শার্ট প্যান্ট পাল্টে তরুকে বিচারিত করতে লাগলো। তরু তার রুমে বসে আছে ঠাই হয়ে। সব কিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে আজ। বিস্ময়কর ব্যাপার ঘটছে একের পর এক তার সাথে। প্রিয় তরুর রুমে এসে তরুকে বলতে লাগলো,

আজ থেকে তুই আমার রুমে আমার সাথে থাকবি।

তরু প্রিয়র কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। বলে কি মাথা ঠিক আছে তো ওনার। প্রিয় হাতের মধ্যে তালা আর চাবি নিয়ে তরুকে দেখিয়ে বলতে লাগলো,

এই হলো তালা আর এই হলো চাবি। আজ থেকে এই রুম তালা বদ্ধ থাকবে। প্রিয় একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছে। তরুর যেন সব কিছু মাথার উপর দিয়েই যাচ্ছে। কিছুই বিশ্বাস হচ্ছেনা তার কাছে। এক রাতের মধ্যে কি এমন হলো যার জন্য প্রিয়র এতটা চেইঞ্জ।

তরুকে আবারও প্রিয় কোলে তুলে নিল।কোলে করে সোজা তার রুমে নিয়ে গেল।রুমে ডুকিয়ে দরজা লক করলো। কারন আফজাল চৌধুরি নিচে বসে আছে। প্রিয় চায় না তার আর তরুর মাঝে কোনো ঝামেলা বিষয় নিয়ে আফজাল চৌধুরি কষ্ট পাক। তাই প্রিয় তরুকে একটা শাড়ি হাতে দিয়ে বলতে লাগে,

এটা ধর। শরীররে ভেজা জামাগুলো পাল্টে এটা পড়ে আয়। নয়তো আবার ঠান্ডা লেগে যাবে।

তরু শাড়িটা নিয়ে ওয়াস রুমে চলে যায়।এখনো স্তব্ধ হয়ে আছে তরু। কি হচ্ছে তার সাথে এগুলো। তবে খারপ তো কিছু লাগছেনা। সব তো ভালোই হচ্ছে। প্রিয় তাকে চুমু দিল,তারপর আবার দুইবার কোলে নিল।আবার এখন শাড়িও পড়তে দিল।সব চেয়ে বড় কথা প্রিয় তাকে তার রুমেও থাকতে বলছে। হাউ স্ট্রেইঞ্জ। তবে ব্যপারটা তো তার ভালো লাগার কথা। কিন্তু এমন আনইজি লাগছে কেন। আচ্ছা নাতাশা আপুর কাছে গেলে কেমন হয়।

এসব ভেবেই তরু ফ্রেশ হয়ে বের হলো ওয়াসরুম থেকে। বের হয়ে দেখতে পেল প্রিয় বিছানার উপর বসে আছে তার দিকে তাকিয়ে। তরু ব্লু কালার একটা শাড়ি পড়েছে।যেটা প্রিয় তার রুমে কাবার্ড থেকে বের করে দিয়েছে। শাড়িটা অনেক আগের কিনা। যেটা সে নাতাশাকে দিবে বলে গিফ্ট হিসাবে কিনে রেখেছিলো।কিন্তু আজ তরুকেই সেটা দিল।ভাগ্যের কি নির্মাম পরিহাস। কার পরার কথা আর কেই বা পড়ছে এটা ভেবে প্রিয় নিজের অজান্তেই হাসতে লাগলো মনে মনে। তরু তোয়ালেটা খুলে চুল গুলো ঝাড়া দিল।প্রিয় না চাইতেও কেন যে তরুর দিকে বার বার চোখজোড়া লিপিবদ্ধ হচ্ছে সেটা সে জানেনা।

তবে মেয়েটা কি জানে এই শাড়িটাতে মেয়েটাকে আহামারি মায়বতী লাগছে। যেটা মানুষ কল্পনাতে দেখে থাকে। তবে তাকে বলা যাবেনা এই শাড়িটাতে তাকে কি পরিমান সুন্দর লাগছে। যদি বলি তাহলে এমনেতেই স্টাচু হয়ে আছে। পরে আরো স্টাচু হবে। তার ভালো যেই ভাবেই আছে সেই ভাবেই থাক।

প্রিয় কথাগুলো ভেবে আরেকটু হাসি দিল। তরুর চুলগুলো নিয়ে পড়েছে এক মহা জামেলায়। এগুলো বাজ করতে পারছেনা। জট লেগে যাচ্ছে। সেটা দেখে প্রিয় বিছানা ছেড়ে নেমে আসলো।তারপর ডয়ার থেকে হেয়ার ড্রে টা বের করে তরুর হাতে দরিয়ে দিল।তরু চুল গুলো শুকিয়ে চিরনি দিয়ে আচড়ে নিয়ে মুখে একটু ক্রিম লাগালো। ব্যাস এতটুকুই তার প্রতিদিনের সাজ। প্রিয়র দিকে ফিরে তাকালো প্রিয় এখনো তরুকে দেখে যাচ্ছে। তরুর এবার একটু লজ্জা লাগছে। এই লোকটা কেন এভাবে তাকিয়ে থাকে বার বার। এতে যে তার লজ্জা লাগে সেটা কি সে বুঝে না। এসব ভেবেই তরু দরজার লক খুলতে যাবে। তখন প্রিয় বিছানা থেকে নেমে তরুর হাতটা চেপে ধরলো।তরুর হাত ধরায় তর কাপতে লাগলো।এই বুঝি প্রিয় তাকে মেরে ফেলবে।

তুই কি ভেবেছিস। আমার থেকে পালিয়ে যাবি।

তরু কাপা কাপা কন্ঠে বলতে লাগলো,

তোমার থেকে পালাতে যাব কেন?

তাহলে তুই তোর বান্ধবীর বাড়িতে চলে গেলি কেন । আমাকে কি একটা বার বলার প্রয়োজন মনে করতে পারিস নি। আমি তো তোর হাজবেন্ড হই।

তরু প্রিয়র দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর বলতে লাগলো,

তুমি বুঝি আমার হাজবেন্ড হও।

কেন? কোনো সন্দেহ আছে।

সন্দেহ থাকবে কেন? যদি স্ত্রী হিসাবে আমাকে মানতে তাহলে তো এতদিনে আমার বাচ্চা থাকতো কোলে,

তরুর কথা শুনে প্রিয় কোমায় যাবার অবস্থা। বলে কি এ মেয়ে, বাড়িতে এসেছে মাত্র কয়দিন হলো। এর মধ্যে নাকি স্ত্রী হিসাবে তাকে শিকৃত দিলে এতদিনে বাচ্চা থাকতো তার কোলে।

এই তুই এসব আজাইরা কথা কই পাস?

কেন খারাপ কিছু বল্লাম নাকি?

তুই নিজেই ভেবে দেখতো কি বলেছিস।তকে তো আমি আজ পর্যন্ত সে রুকুম ছোয়েও দেখনি। তাহলে বাচ্চা আসবে কি ভাবে।

তরু মাথাটা নিচু করে আবার কি যেন মনে হল,সেটা মনে করেই বলতে লাগলো।

আসলেই তো তুমি তো আমাকে ছোয়েও দেখনি। তবে হে তুমি তো আমাকে চুমু দিয়েছ। তাহলে নিশ্চয়ই আমার বাচ্চা হবে।

হিপ হিপ হুররে। আমার বাচ্চা হবে। সোনা আপুকে খবরটা দিয়ে আসি। কি মজা কি মজা।

এই চুপ একদম চুপ। এখান থেকে এক পা এগুলে তোর ঠেং ভেঙে কলা গাছের সাথে জুলিয়ে রাখবো৷ বেয়াদপ মেয়ে এমনেতেই কাল রাত থেকে এক বিন্দু ঘুমাতে দেয় নাই। তারপর উপর আসছে বাচ্চা বাচ্চা কথা নিয়ে।যে নিজেই কি না একটা বাচ্চা। তার কোলে নাকি আবারও আরেকটা বাচ্চা থাকার কথা।

এই আমাকে বাচ্চা বলবা না। কারন আমি বাচ্চা নই। বাচ্চা বল্লে আমার ইগুতে লাগে বলে দিলাম।

তরুকে প্রিয় একটা দমক দিল।সাথে সাথে তরু চুপ হয়ে গেল। প্রিয় এবার বলতে শুরু করলো,

কাল রাতটা পাড় করেছি শুধুই তোর কথা ভেবে৷ জানিনা কেন যেন তকে ছাড়া রুমে ভেতরটা ফাকা ফাঁকা লাগছিলো। পরে যখন তর রুমে গেলাম গিয়ে দেখতে পেলাম তুই নেই।বাবা বলল তুই নাকি তোর বান্ধবীর বাসায় চলে গিয়েছিস। সেখান থেকে নাকি একেবারে এক্সাম শেষ করে বাসায় ফিরবি। বিশ্বাস কর তখন আমার এতোটাই খারাপ লেগেছে তকে বলে বুঝাতে পারবোনা। আজ আমার জন্য তুই বাড়ি ছেড়ে বান্ধবীর বাসায় যেতে বাধ্য হয়েছিস।

কথাগুলো বলে প্রিয় থামলো। তরু হাসতে হাসতে বলতে লাগলো,

আরে তোমার জন্য আমি বাড়ি ছাড়িনি। আসলে ঐখান থেকে নীলিমার সাথে এক্সামের পিপারেশন নিতে চাইছিলাম। দুইদিন বাদে ফাইনাল পরীক্ষা। আর আমি তো তোমার ছবি দেখে দেখে দিন রাত পাড় করেছি এত বছর পড়ালেখা বাদ দিয়ে। তাই জন্য এই বার এখনো সিলেবাস শেষ করতে পারিনি। আর সব চেয়ে বড় কথা এখানে থাকলে প্রতিটি মুহূর্তে আমার তোমার কথা মনে পড়বে। তোমাকে চোখের সামনে দেখতে পাব তারপর আবার পড়ালেখা মাথা দিয়ে গুলিয়ে যাবে। সেজন্যই এমন ডিসিশন।

তরুকে থামিয়ে প্রিয় বলতে লাগলো,

তরু আমাকে অত বোকা ভাবিস না। কারন আমরা যা দেখি তার বাহিরেও কিন্তু একটা সত্য লুকিয়ে থাকে যেটা আমাদের আড়ালে। তুই তোর বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিস ঠিক আছে, তবে বুকে হাত দিয়ে সত্যি করে বলতে পারবি।যে ঐ রাতটার মধ্যে আমার কথা তর একবারের জন্যও মনে পড়ে নাই।

তরু কিছু বলল না। চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রিয় বলতে লাগলো,

জানিস তো নাতাশাকে প্রতি আমি আসক্ত ছিলাম। কারন মেয়েটার সাথে আমার দুই বছর রিলেশন ছিল।যদিও মেয়েটাই আগে প্রপোজ করেছিল। কিন্তু মেয়েটার চলা ফেরা কথা বলার স্টাইল। সব মিলিয়ে ওকে রিজেক্ট করতে পারিনি। তার আগে কিন্তু অনেক মেয়ের প্রপোজালই রিজেক্ট করি। যেই দুইটা বছর নাতাশার সাথে কাটিয়েছি সেই দুইটা বছর একটা স্বপ্নের মতো ছিল আমার কাছে। যখন সে আমার বিয়ের কথা শুনে তখন কিন্তু অনেক কেঁদেছিল।পরে যখন জানতে পারলো তুই।তারপর সে স্বাভাবিক হয়ে যায়। কিন্তু জানিস আমি স্বাভাবিক হতে পারিনি। কারন তর বয়স আমার হাটুর সমান। তার উপর তুই একটা বাচ্চা মেয়ে। তবে এখন নাতাশাকে নিয়ে আমার ভেতর যেমন কোনো অনুভূতি কাজ করেনা তকে নিয়েও ঠিক তেমনই।অনুভূতি গুলো তখনই দাফন হয়ে যায় আমার জীবন থেকে যখন কিনা নাতাশাকে ভুলে তকে বিয়ে করতে হয়।

তরু প্রিয়র দিকে তাকিয়ে চোখের জলগুলো ফেলেই যাচ্ছে। একটা লোক এতটা কষ্ট বুকের ভেতর পাথর বেঁধে রেখে ছিল এতদিন যাবত। ভাবতেই চোখের পানিগুলো ডোকরে উঠছে। প্রিয় আবারও বলতে লাগলো,

তবে এখন আমি অনেক খুশি। কারন নাতাশা আমাকে ভুলে আমার ভাইকে আপন করতে পেরেছে। যেটা আজ আমি বুঝতে পেরেছি এবং অনেক খুশিও হয়েছি। নাতাশাকে আমার ভাইয়ের পাশেই বেশি মানায়।

তুমি বুঝলে কিভাবে??

কারন তকে নিয়ে রুমে আসার সময় কল্পের দরজার ভেতর চোখ যেতেই দেখতে পেলাম নাতাশা কল্পকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।

তরু একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে বলতে লাগলো,

তুমি তো কখনো আমাকে জরিয়েও ধরো নি।

প্রিয় তরুর দিকে তাকিয়ে বলল,

ধরলে বুঝি শান্তি পেতি?

কি জানে।

তরু লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। সেটা দেখে প্রিয় বলতে লাগলো,

আমি তকে ভালোবাসতে পারবো কিনা জানিনা। কারন তুই নিজেই ভেবে দেখ তর এখনো সবে মাত্র ১৮ বছর আর আমার ৩০সেখানে ১৮বছরের একটা মেয়ের সাথে ৩০বছরের ছেলে ডিজার্ব হয় কিভাবে।

তরু প্রিয় দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলল,

যেটা হওয়ার সেটা হয়ে গেছে। আমি তো তোমাকে কখনো স্বামী হিসাবে অস্বীকার করিনি। কখনো তোমার বয়সের তুলনা করিনি। তাহলে কেন তোমার এত সমস্যা। তবে একটা কথা বলি।ভালো তুমি আমাকে না বাসো। আমাকে অন্তত বাসতে দিও এতেই হবে।

তরুর কথা শুনে প্রিয় কি বলবে বুঝতে পারছেনা। সত্যিই কি তরুর দিকটা একবার ভেবে দেখার উচিত।

#চলবে

#ইচ্ছে_কথন
#writer_falak_moni
#পর্ব_১৮

সকালে ঘুম ভাঙতেই কল্প নাতাশাকে জরানো অবস্থায় পেল। নাতাশা এখনো ঘুমিয়ে আছে। এ যেন কোনো ঘুমন্ত পরী ঘুমিয়ে আছে তার সামনে। কল্প ঘুমন্ত পরীটাকে দেখে যাচ্ছে। দেখতে দেখতে চোখজোড়া আবার কখন যে লেগে আসলো টেরই পেল না। নাতাশা ঘুম থেকে উঠে ঘরির দিকে তাকালো। তাকিয়ে দেখতে পেল ৮বাজে। তাই সে তাড়াতাড়ি ওঠে ওয়াস রুমে চলে যায়। ওয়াস রুম থেকে একেবারে শাওয়ার নিয়ে বের হয়। বের হয়ে হলুদ রঙের একটা থ্রিপিছ পড়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ায়। আয়নার সামনে দাড়াতে চোখ তার কপালে। কারন নাতাশার ফর্সা শরীরের কল্পের লাভ বিটগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ভালোবাসার জোয়ারে এতটাই মগ্ন ছিল কখন যে কিস করার পাশাপাশি কামড় মেরেছে সেগুলো খেয়ালই করেনি। নাতাশা পড়লো মহা বিপাকে এখন কি করে নিচে যাবে। কিভাবে বাবাকে চা বানিয়ে দিবে।

নাতাশা ওড়না দিয়ে পুড়ো মাথা পেচিয়ে নিল।যাক এবার তো গলার দাগগুলো তেমন দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু গালে যে একটা দাগ স্পষ্ট ভেসে আছে সেটাকে কি করে ঢাকবে। নাতাশা বেশি করে ফাউন্ডেশন লাগালো দাগের উপর। তবুও দাগটা হালকা হালকা দেখা যাচ্ছে। নাতামা এবার বেরিয়ে পড়লো সকালের নাস্তা রেডি করার জন্য। কিন্তু কিচেনে গিয়ে সে অবাক হয়ে রইলো।কারন নাস্তা অলরেডি সব বানানো শেষ। বেসিনের কাছে দেখা যাচ্ছে তরু কমোরে শাড়ি পেচিয়ে থালা বাসন পরিষ্কার করায় ব্যস্ত। নাতাশা তরুকে দেখে অবাক হয়ে রইলো।কারন তরু তো তার বান্ধুবীর বাসায়। তাহলে এখানে এত সকালে এল কিভাবে। তরু নাতাশে দেখে দৌড়ে এসে জরিয়ে ধরে বলতে লাগলো,

সোনা আপু আমি আজ অনেক খুশি।

তরুর মুখের হাসি দেখে নাতাশার মনেও এক প্রকার শান্তি অনুভব করতে পারলো। তরু নাতাশার কাছে এসে নাতাশাকে জরিয়ে ধরে বলতে লাগলো,

আপু চলনা ছাদে যাই।নাস্তা তো সব রেডিই ওরা উঠলেই সার্ব করতে পারবো। নাতাশা তরুর এমন হাসি মাখা মুখ আগে দেখলেও এখন অনেকটাই ভিন্ন বলে মনে হচ্ছে। মেয়েটা খুশিতে আটখানা হয়ে আছে। তরু নাতাশাকে নিয়ে ছাদের উপর চলে গেল।ছাদে বিভিন্ন ধরনের ফুলগাছ লাগানো।ছাদের পাশেই একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। তার পাশে রাধাচূড়া, শিউলিফুল গাছ,গোলাপের চারা আরো বিভিন্নরকম ফুলের চারা লাগানো। তরু সেখান থেকে একটা গোলাপ ছিড়লো। তারপর মাথায় গোজে নাতাশার দিকে তাকিয়ে বলল,

সোনা আপু আমাকে কেমন দেখাচ্ছে?

নাতাশা তার চোখের কাজল তরুর গলায় লাগিয়ে বলতে লাগলো,

কারো নজর যেন না লাগে।

জানো তো সোনা আপু, কাল প্রিয় ভাইয়া আমার কপালে চুমু দিছে। তারপর আমাকে কোলে নিয়েছে। আর সবচেয়ে অবাক হওয়ার কথা কি জানো?

কি?

প্রিয় ভাইয়া আমাকে তার রুমে থাকার আদেশ দিয়েছে।

নাতাশা তরুর কথা শুনে অবাক হয়ে রইলো।তবে ভালোই লাগছে মেয়েটার মুখে এত আনন্দ দেখে। তবে কাল রাতে তো কল্প আর নাতাশার সম্পর্কটা অন্য দিকে মোড় নিয়েছিলো। যেখানে কল্প তাকে তার প্রাপ্য মর্যাদা বীরোচিত করে। এই দিনটাতেই প্রিয় তরুকে তার ঘরে থাকার আদেশ দিল।ব্যাপারটা একটু কেমন যেন মনে হচ্ছে। তবে নাতাশা এসব ছাইপাশ এক সাইটে রেখে তরুকে জরিয়ে বলতে লাগলো,

সত্যিই বলছিস?

হুম সত্যি।

তাহলে তো ভালোই।

তরুকে জরিয়ে ধরার সময় নাতাশার গালে তরুর মাথাটা একটু স্পর্শ লাগে। তরু নাতাশার দিকে ফিরতেই চোখ গেল নাতাশার গালে কামড়ের আচঁড়ে যাওয়ার ক্ষত স্থানের দিকে। তরু দাগটা দেখে বলতে লাগলে,,

সোনা আপু তোমার গালে কি হয়েছে।

তরুর কথার কি জবাব দেবে নাতাশা। কোনো উপায় না পেয়ে বলল,,

লাভ বিট।

এটা আবার কি?

ওটা তুই বুঝবিনা যা বাগ। বলেই নাতাশা লজ্জা পেয়ে নিচে নেমে আসলো। তরু বোকার মতো করে তাকিয়েই রইলো।

প্রিয়র জন্য ব্লাক কফি নিয়ে রুমে গেল তরু।দরজার পাশে দাড়িয়ে তরু ভাবতে লাগলো,

আচ্ছা লাভ বিটটা আবার কী? লাভ অর্থ ভালোবাসা আর বিট অর্থ কামড়। সব মিলিয়ে তো ভালোবাসার কামড়। কিন্তু ভালোবাসায় তো থাকে শুধু ভালোবাসা। সেখানে আবার কামড় আসবে কোথায় থেকে।

কথাগুলো বলতে বলতে তরু কফির মগটা টেবিলের উপর রাখলো। ওয়াস রুম থেকে পানির আওয়াজ ভেসে আসছে কানে।

প্রিয় ভাইয়া মেবি শাওয়ার নিচ্ছে। কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তরটা নিয়েই আমি রুম ছাড়ব তার আগে না। তরু ঠায় হয়ে দাড়িয়ে রইলো দরজার পাশে। ওয়াস রুম থেকে বের হতেই প্রিয় তরুকে দেখে হঠাৎ বরকে গেল।প্রিয় বুকের উপর থু থু দিয়ে বলতে লাগলো,

এই মেয়ে আর ইউ ম্যাড। এখানে এভাবে দাড়িয়ে আছিস কেন?

তার আগে বলো লাভ বিট কি?

তরুর এমন প্রশ্নে প্রিয় ব্যবাচ্যাকা খাওয়ার মতো অবস্থা। বলে কি এ মেয়ে লাভ বিট কি সেটা এখনো বোঝেনা। তাহলে আবার ভালোবাসি ভলোবাসি বলে কেম্নে।
তরু মুখটাকে বাঁকা করে ঠোঁট দুটো উল্টে আবারও বলতে লাগলো,

বলো না লাভ বিট কি?

কেন তকে বলতে যাব কেন?

আরে সোনা আপুর গালে যখন আমি দাগ দেখতে পেলাম। আপুকে বলায় আপু বলে এটা নাকি লাভ বিট। এখন তুমিই বলো লাভ অর্থ যদি ভালোবাসা হয় তাহলে বিট অর্থ তো কামড়। সব মিলিয়ে ভালোবাসার কামড়। এখন মোট কথা হচ্ছে এই ভালোবাসার কামড়টা দেয় কিভাবে?

প্রিয় তরুর কথা শুনে লজ্জায় এখান থেকে চলে যেতে নিতেই তরু প্রিয়র হাত ধরে ফেলে।তারপর দাড় করিয়ে বলতে লাগে,

কি হল তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই চলে যাচ্ছো।

কিছু বলার ভাষা কি আমার আছে। তুই যেই প্রশ্ন করেছিস আমাকে?

না তোমাকে বলতেই হবে।

আরে কিভাবে বলব।

আমি জানিনা।

তাহলে রাস্তা ছাড়?

না বলতেই হবে।

প্রিয় কোনো উপায় না পেয়ে তরুর গলায় একটা কামড় বসালো।তরু আহ করে উঠলো।প্রিয় তরুর থেকে কিছুদূর দাড়িয়ে বলতে লাগলো,

এটাই লাভ বিট। এবার রাস্তা ছাড়। আমার কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। বলেই প্রিয় চলে গেল।তরু এখনো স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে রইলো।এটা যদি লাভ বিট হয় তাহলে এটাতে এতো ব্যথা কেন? সব কিছু তরুর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

কল্প ঘুম থেকে উঠে দেখতে পেল নাতাশাকে অন্যরকম লাগছে।চেহাড়ায় খুশির ছাপ ভেসে আছে স্পষ্ট। কল্প তার দৃষ্টিভঙ্গি কিছুই বুঝলো না। এগিয়ে গিয়ে নাতাশাকে বলতে লাগলো,

নাতাশা তোমার এত খুশির কারনটা কি জানতে পারি?

কল্পের এমন প্রশ্নে নাতাশার ভেতরটা কেমন যেন খটকা লাগতে শুরু করলো।তার মানে কি কাল সন্ধ্যায় বেশি ড্রিংস করায়।নেশাটা বেশি ধরেছে তার। এসব ভেবেই নাতাশা ঘামতে লাগলো। মাথা থেকে উরনাটা টান মেরে খুলে বুকের উপর রাখলো।কল্প এবার নাতাশার গলায় আর গালে নজর গেল।যেতেই বলতে লাগলো,

নাতাশা তোমার গলায় গালে কি হয়েছে?

কল্পের এমন প্রশ্ন শুনে নাতাশা এবার ধপাস করে খাটেই বসে পড়লো।তার মানে সে যা ভেবেছে সেটাই ঠিক। নেশার কারনের কল্পের মনে আসছেনা কালকের ঘটনা। নাতাশাকে এভাবে ঘামতে দেখে কল্প বলতে লাগলো,

নাতাশা তুমি ঠিক আছো?

হ হুম ঠিক আছি।

তাহলে তোমার গলায় এগুলো কিসের দাগ?

আসলে মশা হয়তো কামড় দিয়েছে তাই এমন ফুলে আছে।

কল্প কি যেন মনে করে একটা রহস্যময়ী হাসি দিল। তারপর এখান থেকে চলে গেল ওয়াস রুমে ফ্রেশ হতে।

______________

এভাবে কেটে গেল ১টি মাস। আজ তরুর রেজাল্ট দিবে। তাই সে কাউকে না জানিয়ে কলেজে চলে যায়। সকাল থেকে নাতাশার শরীরটা বেশ ভার ভার লাগছে। মাথা শুধু ঘোরপাক খাচ্ছে। নিযতেজ হয়ে আসছে পুরো শরীর যেন এই বুঝি ডলে পড়ে যাবে। সকাল থেকে এই নিয়ে ৬বার বমি করেছে। সারাদিন বমি করে মেয়েটা হালাক হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। পাশে বসে আছে তার মা আর ভাই। তরু পুরোটা সকাল নাতামার পাশে বসে ছিল।এখন কোনো উপায় না পেয়ে তাকে ওঠে যেতে হল। আফজাল চৌধুরি বেশ চিন্তিত হয়ে বসে আছে। মেয়েটা হলোটা কি হঠাৎ। আজ বেশ কিছুদিন ধরে মেয়েটার হাব ভাব কেমন যেন লাগছে তার কাছে। কিন্তু কল্প কি সেটা খেয়াল করে না।

এসব ভাবতেই কল্প বাড়ি ফিরে সাথে প্রিয়ও।প্রিয় তরুকে খুজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো৷ কারন তরুর রেজাল্ট নিয়ে সে বাড়ি ফিরেছে। তরু সব বিষয়ের এ+ পেয়েছে। প্রতিটি সাবজেক্টে ৮০,৯০রয়েছেই। প্রিয় তরুর রেজাল্ট হাতে নিয়ে একটা সস্ত্রীক নিঃশ্বাস ফেলে। কারন আজ যদি তরু খারাপ রেজাল্ট হতো তাহলে সে নিজেকেই দোষারোপ করতো। কারন মেয়েটা তো বলেছেই পড়াশোনা বাদ দিয়ে দিনরাত তাকে নিয়েই ভেবে গেছে। তাহলে এখন যদি রেজাল্ট খারাপ আসতো তাহলে নিশ্চয়ই রেজাল্টের জন্য সে নিজেই নিজেকে দোষী করতো।

#চলবে।

ভুলক্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।