ইচ্ছে কথন পর্ব-১৯+২০

0
769

#ইচ্ছে_কথন
#writer_falak_moni
#পর্ব_১৯

কল্প বাসায় ফিরে দেখতে পেল নাতাশার অবস্থা খুবই গুরুতর হয়ে আছে। মেয়েটা উঠে দাড়াবার মতো শক্তিও পাচ্ছেনা। কল্পকে দেখে ছোট একটা হাসি দিল।কল্প টেনশনে পড়ে মেয়েটার কি হল। মেয়েটা আগে যেমন চঞ্চল স্বভাবের ছিল এখন তেমনটা নেই। সারাদিন একা একা বসে থাকে।কোনো কথা বলে না যদিও কল্প কিছু বলতে যায়।হে হু হা বলে উড়িয়ে দেয়।মেয়েটার হয়েছে কি সেটাই ভেবে পাচ্ছেনা কল্প। নাতাশার মা হয়তো তিনি কিছু বুঝতে পেরেছে। মেয়ের এমন হাব ভাবের কারন। তাই তিনি কল্পের কাছে গেল।তারপর কল্পের হাত ধরে বলতে লাগলো,,

বাবা তুমি তো ডাক্তার। আশা করি তুমি নাতাশার অসুস্থ হওয়ার কারনটা বুঝতে পারছো। তাই আমি বলি কি একটা প্রেগন্যান্সি কিট এনে ওকে পরীক্ষা করে দেখতে তাহলে ভালো হতো।

নাতাশার মায়ের কথা শুনে কল্প কাশতে লাগলো।কিন্তু কি আর করার মায়ের মন তো বার বার খচ খচই করবে তাই কোনো উপায় না পেয়ে কল্প শাশুড়ি মায়ের কথা অনুযায়ী প্রেগন্যান্সি কিট এনে নাতাশার হাতে ধরিয়ে দিল। নাতাশা সেই কিট নিয়ে ওয়াস রুমে চলে যায়। সেখান থেকে কিছুক্ষণপর বের হয়ে এসে কিটটাকে মায়ের হাতে দেয়। মা সেটাকে দেখে তো খুশি হয়ে নাতাশাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে ফেলে। মায়ের এমন কান্নার আওয়াজ আফজাল চৌধুরি প্রিয় দৌড়ে রুমে আসে কল্প এখনো সেখানেই দাড়িয়ে আছে। নাতাশার মাকে এভাবে কাঁদতে দেখে আফজাল চৌধুরি বলতে লাগলো,

কি হলো বোন আপনি এভাবে কাঁদছেন কেন?

নাতাশার মা কান্না জরিত কন্ঠে বলতে লাগলো,

আপনি দাদু হতে চলেছেন ভাই সাহেব।

নাতাশার মায়ের কথা শুনে নাতাশা কল্পের দিকে তাকিয়ে আছে। কল্প চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে নাতাশার দিকে । যদিও নাতাশা ভেতরে ভেতরে অনেক খুশি হয়েছে।কারন এটাই তার মাতৃত্বের প্রথম অনুভূতি। যেই অনুভূতির ভাষা প্রকাশ করার মতো নয়।কল্প চোখ মুখ লাল করে সেখানেই দাড়িয়ে রইলো।প্রিয় এসে কল্পকে জরিয়ে ধরে কংগ্রেস জানিয়ে জরিয়ে ধরলো। আফজাল চৌধুরি তো খুশিতে আটখানা হতে লাগলো।বাড়িতে নতুন অথিতির আগমন হতে চলেছে। এর চেয়ে খুশির আর কি বা আছে। কল্প তাদের মাঝখান থেকে দ্রুত চলে গেল। নাতাশা অবাক হয়ে কল্পের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।সত্যিই কি কল্প এতে খুি নয়।সেটা ভেবে নাতাশা খাটের উপর শুয়ে পড়লো।

কল্প যদি এখন এই বাচ্চাকে নেগেটিভ নিতে চায় তাহলে কি করব আমি । বাচ্চাটা তো তারই।ওর কিছু মনে নাই বা থাকুক। আমার তো মনে আছে সব। এসব ভেবেই নাতাশা চোখের কোনে আসা পানিগুলো মুছতে লাগলো।

________________

বিকালে তরু বাসায় ফিরলো।রুমের ভেতর প্রিয় বিছানার উপর বসে বসে ল্যাপটব টিপতে ব্যস্ত।ওমনি তরু রুমের ভেতরে ঢুকেই গলায় পেচানো উরনাটা ঠাস করে প্রিয়র উপর ফেলল। প্রিয় তরুর উরনাটা হাতে নিয়ে বলতে লাগলো,,

এটা কেমন বেয়াদপি তরু।

তরু হঠাৎ প্রিয়র কন্ঠ শুনে পেছনে ফিরে তাকালো তাকাতেই আৎকে উঠলো।কারন প্রিয় তো এখন অফিস থাকার কথা সে এখানে কিভাবে আসলো।

প্রিয় তরুকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তরু মাথা ঘুরে নিচে পরে যেতে নেয়।সেটা দেখে প্রিয় তরুকে দৌড়ে গিয়ে জরিয়ে ধরে সামলে নেয়। প্রিয় চোখে মুখে অনেক চিন্তার ছাপ দেখা যাচ্ছে। তরু এমন সিচুয়েশনেও একটু মুচকি হাসলো। কারন যে ছেলেটা তার প্রতি কোনো অনুভূতি নেই সে তাকে এমন ভাবে জরিয়ে ধরেছে। যেন ছাড়লেই না শেষ হয়ে যায়। তরু প্রিয়র বুকের উপর মাথা রেখে বলল,

আমি ঠিক আছি ছাড়ো।

প্রিয় তরুকে দমক দিয়ে নিয়ে কাটের উপর বসালো। তারপর ম্লানমুখে তরুর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,

সারাটা দিন কই ছিলি?

আসলে নীলিমার বাসায় গিয়েছিলাম। সেখান থেকে সে ফিরতে দেয়নি। অনেক জোরাজোরি করার পর ছুটে এসেছি।

তোমার বান্ধবীর সাহস তো কম না। আমি তো সেদিন বলে দিয়েছিলাম যদি তুই তার বাসায় যাও তাহলে যেন তোকে ডুকতে না দেয়।

প্রিয়র কথা শুনে তরু ডুকরে হাসতে হাসতে বলে।

আপনি বলেছে প্রায় ১মাস আগে এই মাসে আমি ওর বাসায় কতবার গিয়েছি তার কোনো হিসাব নেই।আর আপনি ঐআগের কথা নিয়েই পড়ে আছেন ।

প্রিয় আর কিছু বলল না। নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,

রেজাল্ট তো ভালোই করলে।

আপনি জানেন (অবাক হয়ে)

হুম, সেজন্যই তো আজ তাড়াতাড়ি চলে এসেছি অফিস থেকে।

বল কি চাস।আজ তুই যা চাইবি তাই পাবি।

তরু নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,

সত্যিই যা চাই তাই দিবে??

হুম।

এই তো তরু সুযোগ বুঝে ছোবল মারার। যা চাওয়ার চেয়েনে। এখনি, জলদি কুইক।

তরু প্রিয়র দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,

আমাকে এখন লিপ কিস করতে হবে??

তরুর এমন প্রশ্ন শুনে প্রিয়র পুরো শরীর অজস্রতা ঘামতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।এমন একটা সময় এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে কখনোই আশা করেনি প্রিয়।

কি হল, তুমি তো বলেছো যা চাই তাই দেবে। তাহলে এমন ভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

এটা বাদে যা চাইবি তাই পাবি?

তাহলে আমাকে বাচ্চা দাও?

তরুর এমন সব প্রশ্ন শুনে প্রিয়র হার্ট বেড়ে যাওয়ার অবস্থা। বলে কি এ মেয়ে। এগুলো ছাড়া কি আর কিছু চাওয়ার নাই নাকি?

কি হল প্রিয় ভাইয়া দাও বাচ্চা দাও।

আরে বাচ্চা কি মুরির মুয়া নাকি যে চাইবি মাত্রই দেব।

আমি এত কিছু বুঝিনা। তোমার কাছে দুটো অপশন এক হলো,লিপ কিছ দিবা নয়তো বাচ্চা দিবা এখন কোনটা করবা তুমিই ভেবে দেখো,

প্রিয় পড়লো দুটা না’র মধ্যে। দুইটা অপশন দিল।অথচ দুইটাই কি কড়া কড়া ভাব। যেটা সে করার জন্য প্রস্তুত না এই মুহূর্তে। প্রিয় কিছু একটা ভাবলো।তারপর তরুর দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতে নিলো।তরু যেতে যেতে একদম দেয়ালের সাথে লেগে গেল। প্রিয়র চোখে এক ঘোর লাগা লেগে আছে তরুর প্রতি মেয়েটার প্রিতি আলাদা একটা ভালো লাগা তার মনের ভেতর জায়গা করে নিয়েছে সেটা সে বেশ বুঝতে পেরেছে। কিন্তু ভালো লাগা আর ভালোবাসা এত নয়। তরু প্রিয়র এমন এগিয়ে যাওয়ার রিয়েকশন দেখে হাপাতে লাগলো।যতই মুখে পটর পটর করুক। ভেতরে ভেতরে কিন্তু আজও এই লোকটাকে সেই আগের মতোই ভয় পায়। প্রিয় তরুকে দেয়ালের সাথে ঠ্যাশ দিয়ে দাড় করিয়ে। বাম হাতটা তরুর মাথার এক সাইটে এনে ঠোঁটগুলো ক্রমশই এগুতে লাগলো।তরু চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলল সাথে সাথে। লিপ কিস দেওয়ার অভিজ্ঞতা নেই তার। টিভিতে মুভিতে যা দেখে তাই। কিন্তু এই মুহূর্তে এমন কেন লাগছে যেন সারা শরীর নিযুক্ত হয়ে আসছে। হাড়গুঁড়া কেমন কাপতে লাগলো। তর প্রিয় কে এতটা কাছে দেখতে পেয়ে। চোখ দুটো আবারও বন্ধ করে ফেলল।

প্রিয় এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে তরুর দিকে। এই মায়াবী মনকরা চেহারায় যে কেউই মায়াজালে পড়তে বাধ্য। প্রিয়রও ঠিকই একই অবস্থা। মেয়েটাকে মুখে না বলতে পারলেও মনে হয়তো কিছুটা জায়গা করে নিয়েছে। যেটা প্রিয় খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে। মেয়েটাকে যে বড্ড ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। কিন্তু কোথাও যেন একটা দেয়াল রয়েছে যেই দেয়াল ভেঙ্গে আসার সাধ্য তার নেই।তরু এখনো চোখ দুটো বন্ধ করেই দাড়িয়ে আছে। প্রিয় আস্তে করে তরুর ঠোঁট জোড়া নিজের করে নিলো। তরু চোখজোড়া আরও শক্ত ভাবে গুজে নিল। কেমন অদ্ভুত রকমের শিহরণ বইতে লাগলো পুরো শরীর জুরে। এক ভূমি কম্পন দিতে লাগলো বুকের ভেতর। তরু প্রিয়র সাথে তেমন রেসপন্স দিতে পারছেনা। পারবেই বা কিভাবে সে তো প্রথম। তবে প্রিয় যেভাবে আকড়ে ধরে আছে যেন খুবই নিখুত।

২মিনিট পর তরু নিজেই প্রিয়র থেকে ছিটকে দাড়ালো। এই মুহূ্তে প্রিয়র সামনে দাড়াতেও খুব লজ্জা লাগছে। প্রিয় নিচের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। তরু বিছানার উপর থেকে উরনাটা নিয়ে সামনে থাকা চুলগুলো কানের এক সাইডে গুঁজে আমতা আমতা করে বলতে লাগলো,

আ আমি ফ্রেশ হবো। বলেই ওয়াস রুমে চলে গেল তরু। প্রিয় এখনো ঠায় হয়ে দাড়িয়ে রইলো। কি হল তার সাথে। সে তো নিজেকে যথেষ্ট কন্ট্রোল রাখতে চায়। কিন্তু মেয়েটা তো তাকে কন্ট্রোল থাকতে দেয় না। মেয়েটার হাটা, চলা, ঘুমন্ত মুখ সব কিছুর ভেতরে এক অজানা ঘোর লুকিয়ে আছে। যে অজানা ঘোর থেকে প্রিয় চাইলেও সরে যেতে পারছে না। এক অদ্ভুত মায়ায়।

তরু ওয়াস রুম থেকে বের হতেই প্রিয় তরুর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,

একটা গুড নিউজ আছে?

তরু প্রিয়র দিকে তাকাতে লজ্জা পাচ্ছে এই মুহূর্তে। তাই নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,

কি,

নাতাশা মা হতে চলেছে।

তরু এই মুহূর্তে ঠিক কি বলবে বুঝতে পারছেনা। তাই সে দৌড়ে এসে প্রিয়কে জরিয়ে ধরে কান্না করে বলতে রাগলো,

সত্যিই বলছো তুমি,

প্রিয় তরুর এমন কান্নার রহস্য বুঝতে পারলো। কারন এটা কোনো কষ্টের কান্না নয়। এটা কেবলই আনন্দের কান্না। তাই সে তরুকে শক্তভাবে আকড়ে ধরলো। মেয়েটাকে ঠিক এভাবেই জরিয়ে ধরে রাখতে ইচ্ছে করে তার। কিন্তু বিবেক যে সেটা দেয় না।

রাতে সবাই ডিনার করে যে যার রুমে চলে যায়। কল্প কোথায় গেছে এখনো ফিরে নি। নাতাশা দেয়ালের সাথে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে কল্পের অপেক্ষায়। কিন্তু সেই যে সকালে বের হয়েছে এখনো আসার কোনো নামই নেই। কিছুক্ষণ পর তরু নাতাশার রুমে আসলো,

এসে দেখতে পেল নাতাশা খুবই চিন্তিত হয়ে বসে আছে। তাই তরু বলতে লাগলো,

কি হয়েছে সোনা আপু, তোমাকে খুব আপসেট দেখাচ্ছে। এনি প্রবলেম।

না রে তরু কিছু না।

শুনলাম, নতুন অতিথি আসতে চলেছে আমাদের ঘরে।

নাতাশা একটু মৃদু হাসলো। তরুর নাতাশাকে জরিয়ে ধরে বলতে লাগলো,

জানো সোনা আমি অনেক খুশি হয়েছি শুনে। ফাইনালি কল্প ভাইয়া আর তোমার বেবি আসতে চলেছে। ইউ আর বেরি লাকি।

নাতাশা একটু হাসলো।

প্রিয় নাতাশার রুমে সামনে দিয়ে বাহিরে যেতে নেয়। তখনই শুনতে পায় তরুর গলা তাই সে দাড়িয়ে যায়।তরু নাতাশাকে বলছে,

সোনা আপু জানো আজকে প্রিয় ভাইয়া আমাকে লিপ

বাকিটুকু আর বলতে পারলো না। প্রিয় এসে নাতাশার মুখ চাপা দিয়ে কোলে করে নিয়ে গেল রুমের ভেতর। নাতাশা তাদের এমন বিহেপের আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছে না। কিন্তু হাসি পাচ্ছি সাথে শান্তিও লাগছে। যাক অবশেষে প্রিয় তাহলে তরুকে মেনে নিতে পারলো সেটা ভেবে।

#চলবে

#ইচ্ছে_কথন
#writer_falak_moni
#পর্ব_২০

২০.

রুমের ভেতর ডুকেই তরুকে কোল থেকে ধপাস করে বিছানার উপর ফেলল।

ওমা গো কোমড়টা গেল গো।আর একটু হলে মরে যেতাম গো। ও আল্লাহ গো এটা কার পাল্লায় পড়লাম গো।

এই স্টুপিড মেয়ে তোর এই আজাইরা মরা কান্না বন্ধ কর বলছি।

আমি মরা কান্না করি?

তাহলে এগুলো কি, ও মা গো, ই মা গো, এগুলো আবার কি কান্না?

এটা তরুর স্টাইলিশ কান্না

বাবা এটা যদি স্টাইলিশ হয়। তাহলে মানুষ যে মারা যায় ওগুলো কি স্টাইলিশ কান্না?

আরে আপনি এত বোকা কেন? ওগুলো তো রকমারি কান্না। শুনেন কান্নাকে আমার পদে আমি তিন ভাগ করেছি। একটা হলো স্টাইলিশ কান্না, আরেকটা হল,রকমারি কান্না, আরেকটা হলো বহুরুপি কা,

থাম থাম থাম , তোর থেকে এখন আমি কান্নার কোনো প্রকারভেদ শুনতে যাচ্ছিনা ওকে। এবার আমার প্রশ্নের উত্তর দে।

তরু প্রিয় দিকে ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে রইলো,কারন প্রিয় এখন রেগে আছে। রাগের প্রতিচ্ছবি তার ফেইসে ভেসে আছে।তরু ডোগ গিলে বলতে লাগলো,

হুম ব বলেন,

এই তুই আমাকে আপনি আপনি করে বলছিস কেন। সেই কখন থেকে শুনে আসছি আপনি আপনি করে বলছিস ব্যপারটা কী?

না কিছুনা এমনেই।

তাহলে শুন।তর পেটে কি কোনো কথা হজম হয়না?

কেন আমি আবার কি করলাম (সাহস দেখি)

চোরের মায়ের আবার বড় গলা।

কি বললে তুমি, মুখ সামলে কথা বল(রেগে)

এই তো লাইনে আসছোস। যাক অবশেষে তুমি তো বললি

তরু মুখটাকে কাচুমাচু করে রইলো।প্রিয় আবারও তরুর দিকে তাকিয়ে শান্তভাবে বলতে লাগলো,

তরু তুই হয়তো জানিস না স্বামী স্ত্রীর মধ্যে অনেক কিছুই হয়।যা প্যাকটিকেলি কাউকে বলা যায় না। আর তুই, তুই পুরো কুমড়া নাতাশার কাছে গিয়ে বসে বসে এগুলো বলতে যাস। তোর কি লজ্জাবোধ নেই নাকি। ছি…..

তরু চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। আসলেই তো সে এগুলো কি বলতে যাচ্ছিলো।প্রিয় আবারও বলতে লাগলো,

সামনের দিকে এমন কিছু যেন আর বলতে না শুনি।

তরু আচমকা লাফ দিয়ে প্রিয়র চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,

তাহলে এমন লিপ কিস আরো সামনের দিকে পাচ্ছি। তাই তো? ইয়েহহহহ

তরু কথা প্রিয় নিজেই বোকা হয়ে রইলো।কি বলতে কি বলে ফেলল সে। কিন্তু মেয়েটাকে এমন আনন্দ দেখে ভীষন ভালো লাগছে তার। নিজে নিজেই হাসতে লাগলো।
_________________

রাত দেড়টা বাজতে চলেছে। কল্প এখনো ঘরে ফেরার কোনো নাম নেই। নাতাশা বিছানার এক কোনে বসে আছে। লোকটা সারা দিন কিছু খায়নি। এসব ভাবতে ভাবতে নাতাশা খাট থেকে উঠতে যাবে। তখনই ধপাস করে কিছু একটা পড়ার শব্দ পেল।নাতাশা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখতে পেল কল্প ফ্লোরে পড়ে আছে। এমন দৃশ্য দেখে নাতাশার ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। কি হল কল্পের। অসুস্থ শরীর নিয়ে যে দৌড় দিয়ে গিয়ে৷ কল্পকে ধরবে সেই শক্তিটুকুও নেই।মাও চলে গেছে। কি করবে এখন সে। নাতাশা কল্প বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো।কল্পের নিযতেজ দেহ এখনো ফ্লোরে পড়ে আছে। নাতাশা শাড়ির আচঁলটা ঠিক না করেই দৌড় দিতে যাবে তখনই পা স্লিপ খেয়ে নিচে পড়ে গেল।ভাগ্যিস এক হাত দিয়ে দেয়ালে ধরে ফেলেছে। নাতাশা আবারো কল্প বলে চিৎকার করে কল্পের কাছে গেল। কল্পের শার্ট খামচে ধরে কান্না জরিত গলায় বলতে লাগল,

আমি জানি কল্প তুমি হয়তো ভাবছো এই সন্তান তোমার না এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তুমি তো জানো না সেদিন সন্ধ্যায় আমি তোমার কাছে নিজেকে তোমার করে বিলিয়ে দিয়েছিলাম। কারন আমি যে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। মুখে সেটা না বলতে পারলেও অন্তরে সেটাকেই বিশ্বাস করে নিজেকে সপে দিয়েছি তোমার কাছে। তোমার একটু স্পর্শ পাওয়ার লোভে নেশা অবস্থাতেই তোমার হই। প্লিজ স্পর্শ চোখ খুলো। আমি কথা দিচ্ছি আমি কখনো আর তোমার সামনে দাড়বো না। এই মুখ কখনো দেখাব না তোমাকে। আমার অনাগত সন্তানকে নিয়ে আমি চলে যাব বহুদূর যেখান থেকে কেউ খুজে পাবে না আমার অস্তিত্ব। প্লিজ কল্প ওপের ইউর’স আই।

নাতাশা কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলে যাচ্ছে। এই ছেলেটার কিছু হলে যে সে নিজেই মরে যাবে। কারন প্রিয়কে ভুলে তাকে আপন করেছে অনেক কষ্টে। যেই কষ্টটা কেবল সেই অনুভব করতে পেরেছে। প্রিয়র বিয়ে হওয়ার পর ভেবেছিল সে বাকি জীবনটা একাই কেটে দেবে। কারন যার সাথে জীবনের পথ চলার কল্পনা করতো দিন রাত স্বপ্ন বুনতো তাকেই যেহেতু আপন করতে পারলোনা। তাই বিয়ে নামক প্যারার সাথে আর জরিয়েও বা লাভ কি। তাই বাকি ৫টা বছর এভাবেই কাটিয়েছিলো।কিন্তু এমন সিচুয়েশনে পরে যখন তাকে বিয়েটা করতেই হলো।তখন মনে প্রানে কল্পকেই স্বামী হিসাবে উপস্থাপন করাটা খারাপ মনে হয়নি।কারন কল্পের ব্যপারে সে সব জানে। কল্পও নাতাশার ব্যপারে সব জানে। দুজনেই দুজনের ব্যপারে জানে তাই নাতাশা তাতে অমত করেনি। কিন্তু আজ নাতাশার একটা ভুলের জন্য এমন একটা সিচুয়েশন দাড়াবে সে ভাবতেও পারেনি। নাতাশা কাদতে কাদতে এক সময় হেচকি উঠতে লাগলো।রাত দেড়টা বাজে কাউকে ডাক দেওয়াটা এখন ঠিক হবেনা। কারন সবাই এখন ঘুমে মগ্নতা হয়ে আছে। কি করবে নাতাশা ভেবে পাচ্ছেনা। শরীরটা আর সায় দিচ্ছে না। মনে হচ্ছে এই বুঝি ডলে পড়ে যাবে। কিন্তু কল্পের এমন অবস্থায় তো তাকে শক্ত হতে হবে। যেই করেই হোক কল্পের জ্ঞান ফেরাতে হবে। দেখে তো মনে হচ্ছে স্যান্সলেস হয়ে আছে। নাতাশা কল্পের মাথাটাকে বুকের সাথে জরিয়ে বলতে লাগলো,

প্লিজ কল্প চোখ খোল।তোমার কিছু হলে আমি বাঁচবো না। প্লিজ চোখ খুলল।

বলেই নাতাশা ডুকরে কাঁদতে লাগলো।।তখনই কল্প চোখ মেলে বলতে লাগলো,

এত হাইপার অইতেছো ক্যালা। মোর তো কিছুই অয় নাই।

নাতাশা কান্না থামিয়ে স্তব্ধ হয়ে রইলো।এই তো সে কল্পের গলার আওয়াজ শুনলো।তাড়াতাড়ি করে কল্পের মাথা বুকের উপর থেকে নামিয়ে পাশে রাখলো । নাতাশা তাকাতেই কল্প চোখ মেরে দিল নাতাশাকে। তার মানে এতক্ষণ যেটা ছিল সেটা কেবল একটিং। যেখানে কল্প হিরো আর হিরোইন নাতাশা। নাতাশা চোখ মুখ মুছে ধরাগ্রস্ত গলায় বলতে লাগলো,

কল্প তুমি ঠিক আছো??

হুম আমি ঠিক আছি?

তাহলে এতক্ষণ যেটা ছিল সেটা কি?

কেন? অভিনয়।

হোয়াট।

এত অবাক হওয়ার কি আছে। যদি অভিনয়টা না করতাম তাহলে কি তুমি কখনো আমাকে প্রকাশ করতে যে আমাকে ভালোবাস। আর আমি বেচারা এতদিন বিন্দাস হইয়া তোমার লগে একই খাট শেয়ার করাতাম। একই কম্বল গায়ে লাগাতাম। অথচ তোমাকে স্পর্শ করতে পারতাম না ভয়ে।

ভয়ে মানে?

কারন তোমার পেটে যে অনাগত সন্তান আসতে চলেছে যেটা আমার আমি নিজের ইচ্ছেতেই দিয়েছি।

হোয়াট। কি বলো এসব।

নাতাশা কল্পের কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা। বলে কি এই ছেলে ভয়ে নাকি তাকে স্পর্শ করতো না। কল্প নাতাশার দিকে তাকিয়ে খুব আদুরে মাখা কন্ঠে বলতে লাগলো,

সেদিন সন্ধ্যায় হয়তো আমি ড্রিংস করি ঠিকই।তুমি মেবি জানো না আমি হাজারও যদি ড্রিংস করি নেশা কখনো আমাকে ঘিরতে পারেনা। তবে তোমার মধ্যে এমন একটা অনুশোচন আনাবার জন্য এই নাটক। জানো তো তোমাকে নিজের করে পেতে অনেক ইচ্ছে করতো। কারন ভালো তো তোমাকে অনেক বছর ধরে বাসি। ভালোবাসার মানুষটার সাথে একই বিছানায় থাকি একই ছাদের নিচে একই রুমে অথচ তাকে ছুতে পারিনা অজানা ভয়ে। তোমাকে হারানোর অনেক ভয় ছিলো মনের ভেতর যদি আমাকে ছেড়ে চলে যাও। তাই নেশার অভিনয় করে সেদিন তোমাকে আমার করে নেই। নয়তো তা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। কারন সেদিন তোমার ইচ্ছেতেই কিন্তু তোমার শরীরে স্পর্শ করি। তোমার অনুমতি নিয়ে।কিন্তু তবুও আমার মনের ভেতর ভয় জাগতে লাগলো যদি তুমি পরে স্বীকার না করো৷ তাই পরেদিন আমার দেয়া লাভ বিটগুলোর দাগ জেনেও না জানার ভান ধরে তোমাকে বলেছিলাম। নাতাশা এগুলো কিসের দাগ। কিন্তু তুমি এমন বোকা তুমি আমাকে আমার কথাগুলো না বলে তুমি আমাকে মশা বানাই ফেলছো। শালি তখন আমার কান্না করার মতো অবস্থা।

নাতাশা কল্পের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে রইলো। কল্প আবারও বলতে লাগলো,

তুমি হয়তো অবাক হবে শুনে যে আমি তোমাকে আমার কলেজ লাইফ থেকে পছন্দ করতাম। কিন্তু কখনো প্রকাশ করতে পারিনি। পরে জানতে পারলাম তুমি প্রিয় ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড। তখন কনেক কষ্ট হয়েছে কথাটাকে হজম করতে কিন্তু মানিয়ে নিয়েছি। ভাই বলে কথা যত ঝড়ই আসুক ভাইয়ের জন্য প্রানটা বিলিয়ে দিতে পারি। আর তুমি তো কেবল আমার কল্পনার রানী ছিলে। ফানুসের মতো। যেটা একতরফা ভাবে আমিই জানতাম। তাই কখনো তোমাকে বলিনি। তোমার পরে তুলির সাথে সম্পর্কে জরাই কিন্তু মেয়েটা আমাকে বুঝলো না লোভের কারনে ছেড়ে চলে গেল।কিন্তু বিশ্বাস করো কষ্ট হয়তো পেয়েছি। কারন মন থেকে তো ভালোবেসে ছিলাম। তারপর ঘটলো তরু আর ভাইয়ের ব্যাপারটা সেটা তো তোমার চোখের সামনেই।

এতটুকু বলে কল্প থামলো। নাতাশা এখনো শুনেই যাচ্ছে। কি বলছে এগুলো।কল্প আবারো বলতে লাগলো,

ভাইয়ের সাথে তরুর বিয়ে হওয়ায় একটা আশ্বাস পেলাম তোমাকে পাওয়ার। কিন্তু তখন তুমি অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছিলে।যেটা কেউ না বুঝলেও আমার চোখ এড়াতে পারে নি। আমি আস্তে আস্তে অনেকদিন লাগিয়ে তোমাকে স্বাভাবিক করি৷ কিন্তু তখনও মুখ ফোটে বলিনি যে নাতাশা আমি তোমাকে ভালোবাসি। এক তরফা ভাবেই ভালোবেসে গিয়েছি। কিন্তু দেখ ভাগ্যের কি লীলাখেলা আল্লাহ তায়ালা কেমন একটা সিচুয়েশনে তোমাকে আমার করে দিয়েছে। তবে এটা ঠিক যে আমি এই বিয়েটাকে এভাবে মেনে নিতে পারিনি। কারন আমার ইচ্ছেটা ছিল অন্যরকম। তোমাকে ভালোবেসে নিজের করে ডাক ডোল বাজিয়ে বিয়ে করে ঘরে তুলবো। তোমার মত না নিয়ে এমন একটা পবিত্র কাজে আবদ্ধ হওয়া আমার বিবেক বলে নি। পরে যখন দেখলাম তুমি সবটা মেনে নিতে পেরেছো তখন আর আমি তাতে কোনো রকম অমত করিনি। কারন তোমাতেই পূর্ন হতে চাই আমি।

কল্প কথাগুলো বলে থামলো। নাতাশা এখনো নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। আজ এতগুলো বছর ধরে কল্প তাকে এক তরফা ভাবে ভালোবেসে আসছে। আর তাকে কিছুই বুঝতে দেয়নি ব্যপারটা যেন এক কাকতালীয়। নাতাশার চোখ দিয়ে এখনো ঝল ঝল করে পানি গড়িয়ে পড়ছে। নাতাশা চোখের পানি মুছে শক্ত করে জরিয়ে কল্পের উপর ঝাপিয়ে পড়লো।এই ছেলেটা তাকে এত ভালোবাসতো অথচ প্রকাশ করতো না। ভাবতেই বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উছে নাতাশার। কল্প শক্ত করে নাতাশাকে জরিয়ে ধরলো। এতক্ষণ যাবতো অনেক কষ্ট দিয়েছে মেয়েটাকে আর নয়।

#চলবে