#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৬০
তোড়া মাত্রই তার হোটেল রুমে ফিরেছে। আজ তার ইভেন্ট এর ট্রায়াল ছিল। লন্ডন এসেছিলো ইভেন্ট এর ওপেনিং করতে কিন্তু সেখানেও আজকে ক্লোজিং জন্য সিলেক্ট হয়ে গেছে। আজ কে সকালে লন্ডন এসে পৌঁছেছে। হোটেলে চেকিং করার তারপরই ট্রায়াল দিতে এসেছিলো। রেয়ান্স এর কাজ থাকার জন্য রেয়ান্স আসতে পারিনি তোড়ার সাথে । রাই কৃতীর সাথে লন্ডন এসেছে। আর তার সাথে এসেছে নিমেষ রয়। যেহেতু সে ওশিয়ান স্টার কোম্পানীর বস তাই সে তার কোম্পানির থ্রু দিয়ে এসেছে। হতে পারে এর পিছনে আরো হয়তো অনেক কারণ থাকতে পারে সেটা হয়তো পরে বোঝা যাবে।
সেই দিনের পর থেকেই নিমেষ আর কোনো অস্বাভাবিক আচরণ করেনি বা তোড়া কে এই ব্যাপার নিয়ে কোনো কথা বলিনি একদম স্বাভাবিক আচরণ করেছে। যেমন আগে তোড়ার সাথে কথা বলত ঠিক তেমনই। তবে তোড়া নিজেকে সতর্ক করে রেখেছে এই ব্যাপার নিয়ে সব সময়ে চোখ কান খোলা রেখেছে। তার নিমেষ এর আচরণ দেখে অস্বাভাবিক কিছু না লাগলে সব কিছু ঠিক মনে হয়নি। কিছু গণ্ডগোল আছে তাই সে সব সময়ে সতর্ক থাকে। আর তাছাড়া সে নিজের রক্ষা নিজে করতে পারে আর তার পিছনে চব্বিশ ঘণ্টা সিক্রেট বডি গার্ড আছে। আর ওই দিনের সব ঘটনা রেয়ান্স কে বলার পর সে আরো সিকিউরিটি টাইট করে দিয়েছে। শুধু নিমেষ কিছু আর করেনি বলে রেয়ান্স ও কোনও স্টেপ নেয়নি।
তোড়া রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানার উপর উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে রেয়ান্স কে ভিডিও কলে কানেক্ট করে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কল রিসিভ হয়ে যায়। স্ক্রিন এর উপরেই ভেসে ওঠে রেয়ান্স এর মুখ। তোড়া রেয়ান্স কোনো কথা না বলে চুপচাপ একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। রেয়ান্স অফিসে বসে আছে। এখন মুম্বাইতে সকাল।
-“কি ব্যাপার তুমি এখন সাওয়ার নিয়েছ? রেয়ান্স তাদের মধ্যে কার নিস্তব্ধতা ভেঙে বলে ওঠে।
-” হুম । বাইরের থেকে এসে একেবারে সাওয়ার নিয়ে নিলাম। তোড়া এক দৃষ্টিতে রেয়ান্স এর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে ।
-“মাথাটা ভালো করে মুছে নাও নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে। আর তাছাড়া আমিও ওখানে নেই যে তোমাকে গরম করব। রেয়ান্স শেষের কথা গুলো দুষ্টুমি করে বলে ওঠে।
-“অসভ্য। তোড়া বলে ওঠে ।
-“তোমার জন্য । রেয়ান্স দুষ্টু হেসে বলে ওঠে।
-” আচ্ছা শোনো না তোমাকে একটা নিউজ দেয়ার আছে। তোড়া বলে ওঠে ।
-” হ্যাঁ বলো না। আমি শুনছি তো। রেয়ান্স বলে ওঠে।
-“আমাকে ইভেন্ট থেকে ক্লোজিং করার জন্য সিলেক্ট করা হয়েছে। তোড়া বলে ওঠে ।
-“কংগ্রাচুলেশন মাই ওয়াইফি ।রেয়ান্স বলে ওঠে।
-“আচ্ছা ঠিক আছে এখন একটু রেস্ট নিয়ে নাও পরে কথা হবে। রেয়ান্স বলে ওঠে।
-“উম ঠিক আছে। তোড়া বলে ওঠে ।
-“আচ্ছা ঠিক আছে ফোন টা কে সাইটে রেখে ঘুমিয়ে পরও কাটার দরকার নেই। রেয়ান্স বলে ওঠে।
-“ওকে ।
তোড়া ফোনটা কে তার সমান সমান সেটিং করে রেখে রেয়ান্স এর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঘুমের দেশে ডুবে যায়। আর এদিকে রেয়ান্স তার ঘুমন্ত ওয়াইফি কে দেখতে থাকে আর নিজের মনে কাজ করতে থাকে।
————-
শাহীন রেয়ান্স এর কেবিনে বসে কিছু কাজ করছিলো আর মাঝে মাঝে তার বস কে দেখছিল। তোড়া ম্যাডাম এর জন্য কেমন অস্থির থাকেন এখন করে। সে বোঝে তার স্যার উৎকন্ঠা। আর এতক্ষণ সে দেখ ছিল তার স্যার কেমন এত দূর থেকেও তার ম্যাডাম এর খেয়াল রেখছিলো। শাহীন এর ভাবনার মাঝে হঠাৎ করেই তার ফোন বেজে ওঠে। ঘোর কেটে ফোন বের করে সামনে আনতে ফোনের দিকে দেখে তার মুখে একটা হাসি ফুটে যায়। কলার আইডি তে রাই এর নাম উঠে আছে। কিছুক্ষণ ফোনের দিকে তাকিয়ে নিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই দেখে রেয়ান্স তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। শাহীন বুঝতে পারে সে হ্যাবলার মত কাজ করে ফেলেছে। তাই রেয়ান্স এর দিকে তাকিয়ে সরি বলেই ফোন রিসিভ করে বেরিয়ে যায়।
-“হাই । রাই মৃদু আওয়াজে বলে ওঠে।
-” হাই । শাহীন মৃদু হেসে বলে ওঠে।
দু প্রান্তে চুপ করে আছে। একে অপরের সাথে কথা বলতে চাইছে কিন্তু কি দিয়ে শুরু করবে বুঝতে পারছে না। এর আগে তাদের দেখা হলেও চোখের ইশারা হলেও কথা তেমন হয়নি।আর এর আগেও রাই এর সাথে শাহীন এর ফোন কথা হলেও সেটা তোড়ার ব্যাপারে কথা বলার জন্য ছিলো। তাই তারা এখন চুপ করে রয়েছে।
-“কি করছো? শাহীন রাই স্বাভাবিক করতে বলে ওঠে।
-” কিছু না তোমার সাথে কথা বলছি। রাই বলে ওঠে।
-“দিন কেমন গেলো আজকে? শাহীন বলে ওঠে।
-” হুম বেশ ভালোই গেছে। ওহ তোমাকে তো একটা কথা বলাই হয়নি। রাই কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বলে ওঠে।
-“কি কথা?
-” তোড়া কে ওপেনিং এর বদলে ক্লোজিং এর জন্য সিলেক্ট করা হয়েছে। রাই বলে ওঠে।
-“হ্যাঁ শুনেছি। ম্যাডাম স্যার কে ফোন করেছিলো। তখন শুনেছি। শাহীন বলে ওঠে।
-” ওহ । রাই কিছু টা নিভে যাওয়া আওয়াজ নিয়ে বলে ওঠে।
-” ঠিক আছে রাখছি তাহলে। বলেই রাই আর কোনো কথা না শুনেই ফোন কেটে দেয়।
রাই এর কিছুটা মন খারাপ হয়ে গেছে শাহীন এর সাথে কথা বলে। সে প্রথমে যতো টা উত্তেজনা নিয়ে ফোন করেছিলো শেষে ততটাই নিরাশ হয়ে ফোন রাখতে হয়েছে। আচ্ছা ওর বললে কি হতো আমার কথায় একটু তো উত্তেজিত হওয়া উচিত ছিল না তো নিরামিষ এর মত আমি শুনেছি বলে দিলো। উফ বাবা এই নিরামিষ কে কেনো যে মন দিতে গেলাম কে জানে। আর আমার মনটা ও তেমন হয়েছে একদম বিয়াড়া কোনো কথাই শুনতে চায়না। বলি কেনো রে তুই তো আমার মন তাহলে ওই আঁতেল টার জন্য কেনো ছটফট করবি। রাই নিজের মনে নিজেকেই খানিকক্ষণ বকা ঝকা করে নিলো।
এদিকে রাই ফোন কেটে দিতেই শাহীন কিছুক্ষণ ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার পর নিজেকেই গাল দিতে থাকে। সে বুঝতে পেরেছে তার কথার জন্য রাই মন খারাপ করে ফোন রেখে দিয়েছে। আরে বাবা তুই কি আর কিছু জিজ্ঞেস করতে পারলিনা শেষে কিনা কি করছো? দিন কেমন গেলো? আরে বাবা আর কোনো কথা ছিল না। আরে ভাই তুই তো এখন প্রেমের জুয়ারে ভেসে যাচ্ছ তা কোথায় একটু মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবে তা নয়তো যতো সব বোরিং। আরে বাবা মেয়েটা কে তখন একটু চেয়ারআপ করলেই বা কি ক্ষতি হতো। দিলি তো মনটা খারাপ করে। এখনও পর্যন্ত মুখ ফুটে ভালোবাসার কথা টাও বলতে পারলি না। বলি তুই কে ছেলে না মেয়ে হ্যাঁ? এত ভয় পাওয়ার কি আছে? তোর দিয়ে কিছুই হবে না ঢ়েড়শ মার্কেট ছেলে একটা। শাহীন নিজের মাথায় থাপ্পড় মেরে নিজের মনে বলে ওঠে।
————-
তোড়া ঘুম ভেঙ্গে যেতেই শুনতে পায় রেয়ান্স এর আওয়াজ । ঘুমের মধ্যেই চোখ না খুলেই পাশে হাত বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু পাশের জায়গা হাতড়ে কাউকে না পেয়ে চোখ খুলে তাকায়। পাশে কেউ নেই তাহলে রেয়ান্স এর আওয়াজ কোথায় থেকে এলো। তোড়া সামনে তাকাতে দেখে ফোনের স্ক্রিন এর উপর রেয়ান্স এর মুখ ভেসে আছে। দেখে রেয়ান্স বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে তার দিকে তাকিয়ে।
-“ঘুম হয়েছে তাহলে। রেয়ান্স বলে ওঠে।
-” হুম ।
-“ওকে ফ্রেশ হয়ে নাও। রেয়ান্স বলে ওঠে।
-” উম তুমিও এবার ঘুমিয়ে পড় রাত বেশ হয়েছে। আমি ওখানে নেই বলে আবার অনিয়ম শুরু করে দিও না। তোড়া বলে ওঠে ।
-“হুম ।রেয়ান্স মুচকি হেসে বলে ওঠে।
-” ওকে বাই ।
-” লাভ ইউ ওয়াইফি।
-“লাভ ইউ মিস্টার রাওয়াত।
————-
রেয়ান্স এর কেবিনের ভিতরে বেশ হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে শাহীন। তার হাতে রয়েছে কিছু ডকুমেন্ট। রেয়ান্স মুখ তুলে তাকাতে দেখে শাহীন বেশ হাপিয়ে গেছে। সে সামনের থেকে পানির গ্লাস তুলে শাহীন এর দিকে বাড়িয়ে দেয়। শাহীন পানি খেয়ে নিয়ে ডকুমেন্ট গুলো রেয়ান্স দিকে বাড়িয়ে দেয়।
-“স্যার মিস অনিতা শর্মার খোঁজ পাওয়া গেছে। শাহীন বলে ওঠে।
শাহীন এর কথা শুনতেই রেয়ান্স মাথা তুলে তাকায় শাহীন এর দিকে।
-” মিস অনিতা শর্মা বেঁচে আছে। তবে তিনি এখন মিসেস রয়। তিনি নিজের নাম পাল্টে এখন মিসেস অনামিকা রয় হয়েছে। শাহীন বলে ওঠে।
-“মিসেস অনামিকা রয়? রেয়ান্স কৌতুহল নিয়ে বলে ওঠে।
-“স্যার আরো একটা বড় খবর আছে?
-” কি? রেয়ান্স ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।
-“স্যার এই মিসেস অনামিকা রয় হলেন ওশিয়ান স্টার কোম্পানীর একজন শেয়ার হোল্ডার।
-“হোয়াট? রেয়ান্স বলে ওঠে।
-” ইয়েস স্যার। শুধু তাই নয় ইনি হলেন মিস্টার নিমেষ রয় এর স্টেপ মাদার। শাহীন বলে ওঠে।
-“ওহ মাই গড। এটা আমি কি করে মিস করে গেলাম। রেয়ান্স নিজের মনে বিড় বিড় করে বলে ওঠে।
রেয়ান্স কিছুক্ষণ এক মনে ভেবে যায়। তার পর শাহীন এর দিকে তাকিয়ে তার হাতে থাকা ডকুমেন্ট গুলো দেখতে থাকে।
-” উফ নিমেষ যদি মিসেস অনামিকা রয় এর স্টেপ সন হয় তাহলে বড় কিছু ঘটতে চলেছে। নিমেষ তোড়ার সাথে লন্ডন গেছে না? রেয়ান্স শাহীন এর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে ।
-” হ্যাঁ স্যার। আরো একটা কথা আছে মিসেস অনামিকা রয় কে ও লন্ডন দেখা গেছে।
-“শাহীন তুমি জলদি আমার যাওয়ার ব্যবস্থা করো। আমি কালকে নয় আজকে রাতেই যেতে চাই। আমার এখানের সব কাজ অঙ্কন কে ট্রান্সফার করো কুইক। রেয়ান্স কিছুটা জলদি বলে ওঠে।
-“ইয়েস স্যার। বলেই শাহীন বেরিয়ে যায়।
অনিতা শর্মা মিসেস অনামিকা রয় নিমেষ রয়। হুম । আমার তোড়া কে কিছু হতে দেবো না। এবার আমিও দেখতে চাই আমি থাকতে আমার তোড়ার গায়ে কে আচড় বসায়। এবার এই মিস অনিতা শর্মার থেকে পর্দা উঠে যাবে। আর আমিও দেখতে চাই এর পিছনে কি কি আছে। তবে আই সোয়ার আমি একটা কেও ছাড়বো না। যারা যারা আমার তোড়ার জীবন নিয়ে খেলতে চাইছে আমি তাদের নিয়ে এমন খেলব যে সারাজীবন এর জন্য আর খেলার নাম ও মুখে আনবে না। রেয়ান্স শেষের কথা গুলো মনে মনে বলতে বলতে তার চোখ মুখ ভয়ংকর হয়ে গেছে।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে…….
#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৬১
তোড়া নিজের মত রিহার্স করছে। যেহেতু সে একা নয় তাই তাকে আগে থেকেই একবার ট্রায়াল করে নিতে হচ্ছে। এই প্রোগ্রাম এক দম শেষে তার গ্র্যান্ড এন্ট্রি হবে। আর যেহেতু ও ক্লোজিং করছে তাই ওর সাথে একজন মেল পার্টনার থাকবে। শুরুতে আর শেষে মেল পার্টনার থাকে আর টোটাল কুড়ি জনের মধ্যে চারজন মেল পার্টনার প্রথমে ও শেষে আর মাঝে দুজন। তোড়া
তোড়া এখন তার সাথে থাকা মেল পার্টনার এর সাথে পায়ে পা মিলিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। ওদের সামনেই চেয়ার নিয়ে রাই ও কৃতী বসে আছে। আর ওদের থেকে কিছু দূরেই নিমেষ দাঁড়িয়ে আছে। তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তোড়ার উপর। আর তার পাশে থাকা ছেলেটার উপর। তার মনের মধ্যে যে এখন কি চলছে সেটা সে নিজে ছাড়া আর কেউ জানে না। নিমেষ কিছুক্ষণ তোড়া কে দেখে নিয়ে ওখানে থেকে বেরিয়ে যায়।
ওদের পিছনে ও যে কেউ ওদের ওপর নজর রাখ ছিলো সেটা কারোর নজরে এলো না। দূর থেকে তোড়ার প্রত্যেক টা মুভমেন্ট লক্ষ করে যাচ্ছে। সাথে মুখে ফুটে আছে বাঁকা হাসি।
তোড়া তার রিহার্স কম্পিলিট হয়ে যেতেই ওখান থেকে রাই ও কৃতীর সাথে বেরিয়ে যায়। তোড়া বেরিয়ে যেতেই তার সাথে থাকা এতক্ষণ এর মেল মডেল টা তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে কিছুক্ষণ পর নেমে এসে ওদের থেকে দূরে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের উপর নজর রাখা অজানা ব্যাক্তির কাছে এসে দাঁড়িয়ে যায়।
-“কাজ টা যেনো ঠিক ঠাক ভাবে হয়ে যায়। আমি কোনো ঝামেলা চাইনা। অজানা ব্যাক্তি টি বলে ওঠে।
-” দেখুন আমি আগেও বলেছি এতে কোনো সিউর বলতে পারছি না। তবে আমি আমার পুরোটা দিয়ে চেষ্টা করবো। মেল মডেল টা বলে ওঠে।
-“চেষ্টা নয় আমার কাজ চাই। এটা নাও এতে অর্ধেক টাকা আছে বাকিটা কাজ শেষ হওয়ার পর পাবে। অজানা ব্যাক্তি টি বলে ওঠে।
-“আমি আপনার কথা মতো ওকে ফেলে দেবো। কিন্তু বলতেই হবে মেয়েটা বেশ আছে। একদম সেক্সি।
মেল মডেল টা বলতে না বলতেই তার মুখের উপর একটা ঘুষি এসে পড়ে। কিছু বলে ওঠার আগেই সে শুনতে পায়।
-” তোমাকে যেটুকু বলা হয়েছে তুমি সেটুকু করবে অযথা ওর দিকে নজর দিতে যাবে না তাহলে তোমার চোখ আমি উপড়ে নেবো।
-” ওকে ওকে হয়ে যাবে। বলেই মেল মডেল টা ওখান থেকে চলে যায়।
-“ওকে না মারলে ও পারতে। অজানা ব্যাক্তি টি বলে ওঠে।
-” ওহ প্লিজ ।আমি কি করব না করব সেটা আমি তোমার কাছে থেকে জানতে চাইনি। হ্যাঁ মানছি তুমি আমাকে প্ল্যান দিয়েছ তার মানে এই নয় যে আমি সব আপনার কথা শুনে চলবো। বলেই আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে নিমেষ।
-“আমি কি বললাম তোমাকে আমার সব কথা শুনতে। আমি তো শুধু তোমাকে হেল্প করছি তোড়া কে পাওয়ার জন্য। অজানা ব্যাক্তি টি বলে ওঠে।
-” হুম সেই জন্য শুধু তোমার সাথে কথা বলছি আর তোমার কথা শুনছি আপাততঃ। নিমেষ বলে ওঠে।
তার পর একটা তাচ্ছিল্য ভরা দৃষ্টি দিয়ে তার সামনে দাঁড়ানো অজানা ব্যাক্তি কে দেখে বেরিয়ে যায়। এতক্ষণ নিমেষ এর বলা কথা গুলো দাঁতে দাঁত চেপে ধরে শুনলে ও নিমেষ চলে যেতেই অজানা ব্যাক্তি টি রাগে ফেটে পড়ে। হাত দুটো মুঠো করে নেয়।
-“শুধু একবার শুধু একবার ওই তোড়া কে হাতের সামনে পাই। একবার শুধু আমার হাতে আসতে দাও তারপর দেখো ওর কি হাল করি সাথে তোমার ও। অজানা ব্যাক্তি টি নিমেষ এর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিজের মনে বলে ওঠেন।
————-
সন্ধে সাতটা ইভেন্ট শুরু হয়ে গেছে। একে একে সবাই স্টেজে উঠে তাদের পারফরম্যান্স দিতে আছে। তোড়ার সবার শেষে তাই তার আগে কুড়ি জন আছে। তাদের হয়ে গেলে শেষে তোড়া ও ওই মেল মডেল এন্ট্রি নেবে। তোড়া তার মেকআপ নিতে বসে আছে। তাকে মেকআপ করিয়ে দিচ্ছে আর সে চুপচাপ বসে আছে। ওর পাশেই রাই কৃতী বসে বসে তোড়ার রেডি হওয়া দেখছে।
তোড়ার একটু মন খারাপ হয়ে আছে। আজ তার প্রোগ্রাম অথচ রেয়ান্স নেই। সে জানে রেয়ান্স তার কাজের চাপের জন্য আসতে পারেনি। কিন্তু তাও আজ তার একটু হলেও মন খারাপ করছে। আর সকাল থেকেই তার সাথে কথা হয় নি রেয়ান্স। সেটা নিয়ে আরো একটু বেশি মন খারাপ। তবে এইসব কিছু তার মুখে ফুটে উঠছে না সে এখন ধীর শান্ত হয়ে বসে আছে দেখলে মনে হবে তার প্রোগ্রাম এর দিকে ফোকাস করছে।
তোড়ার কেনো জানি আজকে নিজেকে কোনো ভাবেই স্থির করতে পারছে না উপর উপর নিজেকে শান্ত রাখলেও ভিতরে ভিতরে তার একটা চাপা অনুভূতি হচ্ছে কিন্তু সেটা কেমন সে বুঝতে পারছে না। সে কিছুতেই তার প্রোগ্রাম এর দিকে ফোকাস করতে পারছে না।
রেডি হয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর তার স্টেজে ওঠার টাইম হয়ে যেতেই একজন স্টাফ তাকে ডাকতে আসে। আর তারপরেই নিজকে যথা সম্ভব ঠিক করে উঠে যায়।
—————
-“স্যার সব কাজ হয়ে গেছে। শাহীন এসে রেয়ান্স এর কানে কানে বলে ওঠে।
-” তুমি সব চেক করে নিয়েছ তো? কোনো প্রবলেম নেই তো? রেয়ান্স আরো একবার সিউর হওয়ার জন্য বলে ওঠে।
-“না স্যার সব কিছু ঠিক আছে। আমি নিজে চেক করে নিয়েছি। এবার শুধু শিকার এর অপেক্ষা। শাহীন বলে ওঠে।
রেয়ান্স শাহীন এর দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলতে যাবে কিন্তু ওদিকে তোড়ার নাম অ্যানাউন্স করতে সামনের দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে থাকে। আর তার কিছু সেকেন্ডের পর তার চোখ মুখে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
তোড়া স্টেজে উঠে সামনের দিকে তাকাতেই তার এতক্ষণ এর মন খারাপ ভালো হয়ে যায়। তার মুখে ফুটে ওঠে এক চিলতে হাসি। স্টেজ এর একদম সামনে রেয়ান্স বসে আছে তার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে। সে জানত না রেয়ান্স কে আসবে। সত্যি এটা তার কাছে বিশাল বড় একটা সারপ্রাইজ। তোড়া এবার নিজের পারফরম্যান্স এর দিকে ফোকাস করে সামনের দিকে এগিয়ে আসে।
রেয়ান্স বসে বসে সবটাই লক্ষ করেছিলো। সে তোড়া কে সারপ্রাইজ করার জন্য কিছু জানায় নি। তবে তোড়া ছাড়া বাকি সবাই জানতো যে রেয়ান্স আসছে। তাকে দেখেই যে তার ওয়াইফির মুখে হাসি ফুটে উঠেছে এটা দেখেই তার মন শান্তিতে ভরে যায়। তবুও কিছু চিন্তা করে একটা ভয় কাজ করতে থাকে তার মধ্যে। তোড়ার পাশে মেল মডেল টা এসে দাঁড়াতে সে এক দৃষ্টিতে তে তোড়ার দিকে তাকিয়ে নজর রাখে।
এদিকে তোড়া স্টেজে উঠতেই চারিদিকে থেকে সমস্ত অ্যাটেনশন নিজের দিকে টেনে নেয় তোড়া। সবাই তোড়া কে দেখে মুগ্ধ। এশিয়ান মডেল ও যে এত সুন্দর হয় তা বিদেশীদের জানা ছিল না। তোড়া একটা ব্ল্যাক ফ্লোর টাচ গ্রাউন পরেছে। কাঁধের থেকে হাত পর্যন্ত লেস ঝুলছে। আর বাম পায়ের দিকে এক সাইটে কাটা। মেসি হেয়ার। এক সাইটে কিছু চুল হাই লাইট করা। তোড়ার হাঁটার স্টাইল। প্রত্যেক টা মুভমেন্ট লুক এক্সপ্রেশন সবাই কে ঘায়েল করে দিয়েছে। সবার মুখে মুখে এখন একটাই নাম এশিয়ান মডেল তোড়া।
এদিকে তোড়া সাবলীল ভাবে সামনের দিকে হেঁটে আসলে ও তার পাশে থাকা মেল মডেল তার কোমরে হাত রেখে কেমন জড়োসড়ো হয়ে তার সাথে এগিয়ে আসছে। রেয়ান্স তোড়ার সাথে এই মডেল টা কে দেখে চিন্তায় আছে। তোড়ার না কোনো ক্ষতি হয়ে যায় এই ভেবে। কারণ সে জানে তোড়া কে স্টেজ থেকে ফেলে দেওয়ার প্ল্যান হয়েছে। আর তাই রেয়ান্স এটা নিয়েই চিন্তিত। সে এক দৃষ্টিতে তোড়ার দিকে তাকিয়ে আছে ।
তোড়া একদম স্টেজ এর সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায় তার সামনে বসে থাকা রেয়ান্স এর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ওঠে। তারপরেই ঘুরে তাদের নিজেদের পজিশন চেঞ্জ করে। শেষে ফিরে যাওয়ার সময়ে তোড়া একবার পিছনে ফিরে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে দেয় আর সাথে সাথে চিৎকারে ভরে ওঠে পুরো জায়গা টা। তোড়ার পাশের মডেল টা আরো একবার চান্স পেয়েছিলো তোড়া কে ফেলে দেয়ার কিন্তু সে তার নিজেকে নিয়ে চিন্তায় আছে সে না কখন পড়ে যায়।
তোড়া স্টেজ থেকে নেমে যেতেই পুরো জায়গা জুড়ে হাত তালি তে ফেটে পড়ে আর রেয়ান্স ও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে কিছু টা। তবে সে এখনও পুরো পুরি নিশ্চিত হতে পারিনি।
এদিকে তোড়া স্টেজ থেকে নেমে যেতেই দূরে দাঁড়িয়ে থাকা দুজন ব্যাক্তির চোখে আগুন জ্বলে ওঠে তাদের প্ল্যান ফেল হয়ে গেছে। পকেট থেকে ফোন বের করে কানে ধরে বলে ওঠে।
-“প্ল্যান বি।
আসলে রেয়ান্স যখন জানতে পেরেছে যে তোড়া কে ফেলে দেয়ার প্ল্যান চলছে স্টেজ থেকে তখনই রেয়ান্স রাই এর সাথে কথা বলে। আর রাই ও সুযোগ বুঝে ওই মেল মডেল এর ড্রেস এর মধ্যে ইচিং পাউডার ও জুতোর মধ্যে কাকর দিয়ে দিয়েছিলো। তাই জন্য স্টেজ এর উপরে অমন আজিব দেখতে লাগছিলো সাথে সে তোড়া কে ফেলবে কি নিজেকে রক্ষা করতে ব্যস্ত ছিল।
কিছুক্ষণ পরেই ব্যাক স্টেজ থেকে হোস্ট এর হাত ধরে তোড়া আবারো স্টেজে উঠে আসে। আর সাথে আরেক প্রস্তু হাততালির ফোয়ারা বয়ে যায়। তোড়া আসতে জাজরা এসে তার হাতে ট্রফি তুলে দেয় সাথে ইন্টারন্যাশনাল টপ মডেল এর জন্য ব্যাচ ও পরিয়ে দেয় সাথে মাথায় একটা ক্রাউন। রেয়ান্স সামনে বসে তার ওয়াইফির সাকসেস দেখছে মুগ্ধ হয়ে। তোড়া দূরে থেকে রেয়ান্স এর দিকে তাকিয়ে আছে ।তার চোখ ছলছল করছে। আজ সে পেরেছে তার উড়ান ছুতে। সে তার লক্ষে পৌঁছে গেছে। আজ সে ইন্টারন্যাশনাল টপ মডেল এর খেতাব পেয়ে গেছে। এবার শুধু বেস্ট মডেল এর অ্যাওয়ার্ড টাই বাকি আছে। রেয়ান্স তোড়ার তাকানো দেখে বুঝতে পারে সে কি ভাবছে। তাই সে তোড়ার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় তাকে চেয়ার আপ করে।
রেয়ান্স এখানে এসেছে কেউ জানে না তাকে কেউ চিনতে পারেনি। তাকে চিনতে পারলেই চারিদিকে থেকে তাকে ঘিরে ধরবে। যেহেতু সে ওয়ার্ল্ড টপ ওয়ান বিজনেস সবার উপরে আছে তাই তাকে সবাই এক নামে চেনে। রেয়ান্স মুখ ঢাকা আছে। আর তাই শান্তিতে সে তার ওয়াইফির প্রোগ্রাম দেখতে পাচ্ছে।
তোড়া স্টেজ থেকে নেমে আসতেই বেশ কিছুক্ষণ তাকে পাবলিক ও মিডিয়ার লোক ঘিরে থাকে। আর তারপর সবার থেকে ছাড়া পেয়ে ভিড় কাটিয়ে ব্যাক স্টেজ এর দিকে হাঁটা দেয়। মেকআপ রুমে ঢুকতেই হটাৎ করে পিছন থেকে কেউ তার মুখ চেপে ধরে। তোড়া ছটফট করে উঠে নিজেকে ছাড়তে চেয়ে ও পারে না শেষে আসতে আসতে ঢোলে পড়ে যায়। আর তার সাথেই তোড়া কে কাঁধে তুলে নিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে যায়।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে…..
#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৬২
রাই ও কৃতী দুজনেই ব্যাক স্টেজ ও মেকআপ রুম খুঁজে নিয়েছে কিন্তু কোথাও তোড়ার চিহ্ন পর্যন্ত নেই। দুজনেই খুব ভয় পেয়ে গেছে। ওরা তোড়া কে কোথাও খুঁজে না পেয়ে বাইরে রেয়ান্স এর কাছে চলে আসে। রেয়ান্স শাহীন এর সাথে কথা বলছে। রাই রেয়ান্স এর কাছে আসতেই রেয়ান্স রাই এর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে ওঠে।
-“তোড়া কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাই তো?
-” ওকে কোথাও খুঁজে পেলাম না? কিন্তু আপনি কি করে জানেন? রাই কিছুটা অবাক হয়ে বলে ওঠে।
রেয়ান্স কোনো কথা না বলেই বাঁকা হেসে ওঠে। রাই ও কৃতী অবাক হয়ে রেয়ান্স এর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। একবার রেয়ান্স এর দিকে দেখে তো একবার শাহীন এর দিকে দেখে। রেয়ান্স এর দেখে বোঝা যাচ্ছে না যে কিছু হয়েছে বলে।তোড়া কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আর এদিকে রেয়ান্স এর তাতে কোনো চাপ নেই দেখে একদম স্বাভাবিক লাগছে মনে হচ্ছে যেনো এটাই হওয়ার ছিল। শাহীন ওদের মুখ দেখে বুঝতে পারছে ওদের অবস্থা তবে ও এখন কিছু বলার মত মুডে নেই । হটাৎ করে ওদের নিস্তবদ্ধতার মাঝে রেয়ান্স এর ফোন বেজে ওঠে। ফোনের দিকে একবার তাকিয়ে আর পাশে থাকা সবার মুখের দিকে তাকিয়ে নিয়ে ফোন কানে ধরে।
-“হ্যালো স্যার ম্যাডাম কে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।
-” হুম । তোমরা শুধু ফলো করতে থাকো। এক সেকেন্ড এর জন্য ও চোখের আড়াল করবে না। আর আমাকে মিনিট মিনিটে আপডেট দিতে থাকো। রেয়ান্স বলে ওঠে।
-“ইয়েস স্যার।
-” কার কথা বললেন বস? তোড়া কোথায় সেটা কি আপনি জানেন? রাই বলে ওঠে।
-” তোমরা দুজন হোটেল ফিরে যাও। তোড়া কে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না ঠিক সময়ে ও ফিরে আসবে। রেয়ান্স বলে ওঠে।
-” না না আমরা কোথাও যাবো না স্যার প্লিজ বলুন না তোড়া কোথায়? কৃতী বলে ওঠে।
-” ম্যাডাম কে কিডন্যাপ করা হয়েছে। শাহীন বলে ওঠে।
-” মানে কে করলো আচ্ছা ওই নিমেষ টা কে ও তো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাহলে কি ওই তোড়া কে তুলে নিয়ে গেছে? রাই হড়বড়ি করে বলে ওঠে।
-“চিন্তা নেই ম্যাডাম সেফ আছে। শাহীন রাই কে শান্ত করতে বলে ওঠে।
-” ওই নিমেষ তারকাটা মালটাকে তো আমি দেখো নেবো একবার শুধু ওকে সামনে পাই। আগের থেকেই আমার সন্দেহ ছিল ওই হারামি কে নিয়ে। । শালা ভালো সাজার অভিনয় করে এখন পগার পার হয়ে গেছে। রাই তেড়ে উঠে বলে ওঠে।
-“আমি প্রথম দিন থেকেই বুঝতে পেরেছিলাম শালা মালটা এমন ঢ্যামনা বেরোবে তোড়া কে ও বলেছিলাম কিন্তু আমাকেই বলে শান্ত হ।আর এখন দেখো শালা তুলে নিয়ে গেছে । রাই রেগে গিয়ে বলে ওঠে।
রাই এর কথা শুনে শাহীন মুখ টিপে টিপে হাসছে। জোরে হাসতে পারছে না কারণ সামনে রেয়ান্স দাঁড়িয়ে আছে। কৃতী চোখ দুটো বড় বড় করে রাই এর দিকে তাকিয়ে আছে ।রাই এর মুখে কাঁচা গালাগাল শুনেই কৃতী হা হয়ে গেছে। আর রেয়ান্স ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে রাই এর দিকে। রেয়ান্স এর তাকানো দেখে শাহীন এগিয়ে আসে।
-” আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে চলো আমাদের কে বেরোতে হবে। শাহীন নিজের হাসি চেপে বলে ওঠে।
—————
তোড়া পিট পিট করে চোখ খুলতেই চোখের সামনে পুরোই অন্ধকার দেখতে পায়। তার সাথে তার পুরো মাথা ভারী হয়ে আছে যন্ত্রণায় ছেড়ে যাচ্ছে। চারিদিকে তাকিয়ে অন্ধকার দেখতে দেখতে নড়তে গেলে বাধা পায়। চোখ ঘুরিয়ে দেখে নিজের অবস্থান। কিছুক্ষণ অন্ধকার এর মধ্যে চোখ সয়ে যেতেই দেখতে পায় রুমের মধ্যে হালকা আলো আসছে বাইরের থেকে। নাড়াচাড়া করতে গেলেই বুঝতে পারে তার হাত পা বাঁধা আছে। তার আস্তে আস্তে মনে পড়ে সে কোথায় ছিল আর তারপর কি হয়েছিলো। কিন্তু তাকে এখানে কে নিয়ে আসলো? কে হতে পারে যে তাকে সবার সামনে থেকে নিয়ে আসার সাহস দেখিয়েছে। কে ছিল ওটা পিছনে? আর রেয়ান্স? রেয়ান্স নিশ্চয়ই এতক্ষণে জেনে গেছে আমাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
তোড়া চেয়ারে বসা অবস্থায় হাত ছুটাতে চাইছে এতে বাধা দড়ির সাথে ঘষা খেয়ে হাত লাল হয়ে যাচ্ছে কিন্তু সেদিকে তোড়ার কোনো খেয়াল নেই। সে নিজের মত কাজ করে যাচ্ছে। তোড়া অন্য সব মেয়েদের মত নয় যে এই অবস্থায় নিজেকে দেখে ভয় পেয়ে ছেড়ে দেয়ার জন্য চিৎকার করবে। তোড়া নিজের কৌশলে প্রায় দড়ি খুলে ফেলেছে।
হঠাৎ বাইরে থেকে দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে তোড়া থেমে যায়। সে আগের মতই প্রায় তার খুলে যাওয়া হাত টা কে পেঁচিয়ে নেয়। তার মুখ চোখ একদম স্বাভাবিক করে নিয়ে তাকিয়ে থাকে দরজার দিকে। আলতো হাতে দরজা ঠেলে ঢোকে একটা অবয়ব। মুখ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না তবে চেহারা দেখে বোঝায় যাচ্ছে যে তার সামনে দাঁড়ানো ব্যাক্তি টি একটা ছেলে। দরজা ছেড়ে ভিতরে ঢুকতেই বাইরের থেকে আলো ভিতরে ঢুকতে অন্ধকার রুমের মধ্যে প্রবেশ কিছু আলোর ছটা তাতেই ঘর টা আলো আধারিতে পরিনত হয়ে যায়। তোড়া এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে তার সামনে দাঁড়ানো ব্যাক্তি টি কে হতে পারে। তবে হঠাৎ তাকে ডেকে উঠতে চমকে ওঠে তোড়া।
-“হাই তোড়া ।
চেনা পরিচিত গলার আওয়াজ পেয়েই তোড়ার চোয়াল শক্ত হয়ে যায় তবু ও যথাসম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে। তার মুখ থেকে অস্পষ্ট ভাবে রুক্ষ ভাবে বেরিয়ে আসে।
-” নিমেষ!
-“ইয়েস সুইটহার্ট । নিমেষ । চিনতে পেরেছ তাহলে। নিমেষ হেসে বলে ওঠে।
সামনের দিকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে সুইচ অন করতেই রুমের লাইট জ্বলে ওঠে। সাথে সাথে একে অপরের মুখ দৃশ্যমান হয়ে যায়। তবে নিমেষ তোড়ার মুখের দিকে তাকিয়ে কোনো রকম ভয়ের ছাপ লক্ষ করিনি। তোড়া কে একদম স্বাভাবিক লাগছে। যেনো তার সাথে কিছুই হয়নি। এটা দেখে নিমেষ কিছুটা অবাক হলেও অত মাথা ঘামায় না ওই দিকে। সে এক দৃষ্টিতে তোড়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। তোড়া এখনও সেই প্রোগ্রাম এর ড্রেসেই আছে। তোড়া কে এই আলো আধারির মধ্যে দেখতে একদম মায়াবী লাগছে নিমেষ এর কাছে ।
-“এই সব এর মানে কি মিস্টার রয়? তোড়া রুক্ষ ভাবে বলে ওঠে।
-” কোন সবের মানে? নিমেষ অবাক হওয়ার ভান করে বলে ওঠে।
-“আমাকে এখানে তুলে নিয়ে এসেছেন কেনো? আর আমাকে বেঁধে রেখেছেন বা কেনো? তোড়া ঝাঝিয়ে বলে ওঠে।
-” আরে বেবি এতো হাইপার হয়ে যাচ্ছ কেনো? আরে দেখো এত টানাটানি করেনা হাত কেটে যাবে তো। নিমেষ বলে ওঠে।
-” ওহ জাস্ট সাট ইউর ফাকিং কেয়ার । আমাকে এখানে কেনো এনেছেন সেটা বলুন। তোড়া বলে ওঠে ।
-“কি করবো বলো আমি যে তোমাকে ভালোবাসি তাই তোমাকে নিজের কাছে নিয়ে আসলাম। আমি যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম সেদিন তোমার প্রেমে পড়ে গেছিলাম তারপরেই তোমার খোঁজ নিয়ে জানলাম তুমি স্টার অকেশন গ্রুপ জয়েন করেছো। কি আর করার। তারপরেই হঠাৎ করেই স্টার অকেশন গ্রুপ ধুলো তে মিশে গেলো তাই আমি আবারও তোমাকে পাওয়ার জন্য তোমাকে আমার কোম্পানী জয়েন করার লেটার দিলাম আর তুমিও অ্যাক্সেপ্ট করে নিলে। আর তারপর থেকে তোমাকে প্রতিদিন দেখে দেখে আমি আরো তোমার প্রেমে পাগল হতে ছিলাম কিন্তু শেষে তুমি কি করলে? নিমেষ শেষের কথাটা দাঁত খিচে বলে ওঠে।
-” কি করেছি আমি? তোড়া এতক্ষণ নিমেষ এর কথা গুলো শুনছিলো ।
তোড়া এই অফিসে জয়েন করার পর থেকেই দেখেছে নিমেষ তার সাথে একটু অন্য রকম ভাবে কথা বলে। পরে যদিও বুঝতে পেরে ছিল যে নিমেষ তার প্রতি দুর্বল। তবে তোড়া সব সময়ে নিমেষ কে এড়িয়ে চলেছে। কাজের কথা ছাড়া কোনো কথায় হয়নি তাদের মধ্যে। সে এমনিতেই বাইরে কারোর সাথে কথা বলেনা নিজের কাজ এর ব্যাপারে ছাড়া আর সেখানে এইসব ব্যাপার তোড়া সব সময়ে এড়িয়ে চলে।
-“তুমি জানো না তুমি কি করেছো? তুমি বলোনি তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো? যেদিন আমি তোমাকে আমার মনের কথা জানাতে চেয়েছিলাম সেদিন তুমি আমার মন ভেঙে দিয়েছ। আর তাই তোমাকে নিজের কাছে রাখার জন্য তোমাকে আমি তুলে নিয়ে এসেছি। নিমেষ বলে ওঠে।
তোড়া এক দৃষ্টিতে নিমেষ এর দিকে তাকিয়ে আছে ।আর বোঝার চেষ্টা করছে নিমেষ কে। তবে নিমেষ কে এই মুহূর্তে দেখে মনে হচ্ছে না যে নিমেষ স্বাভাবিক আছে। আর নিমেষ এই সব কি বলে যাচ্ছে আবোল তাবোল।
-“তোমাকে আমি এই ভাবে আনতে চাইনি। তোমাকে অন্য ভাবে নিজের করে নিতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু ওই শালা হারামিটার জন্য তোমাকে তুলে আনতে হলো। ও যদি ঠিকঠাক কাজ করত তাহলে তুমি এতক্ষণ হসপিটাল এর বিছানায় থাকতে আর আমি তোমার পাশে বসে তোমার হাতে হাত রেখে তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতাম। নিমেষ তোড়ার কাছে আসতে আসতে বলে ওঠে।
-“হসপিটাল মানে কি বলতে চাইছ তুমি? আর একদম আমার কাছে আসবে না দূরে থাকো। তোড়া বলে ওঠে ।
-” কি করতাম বলো আমি তো তোমাকে ভালোবাসি তাই এমন টা করেছি। আমাকে ভুল বুঝো না প্লিজ। আসলে তোমার সাথে যে মেল মডেল টা ছিলো ওকে টাকা দিয়ে তোমাকে স্টেজ থেকে ফেলে দেয়ার প্ল্যান করেছিলাম আর তারপর ওখান থেকে আমি তোমাকে হসপিটাল নিয়ে যেতাম। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে ওই হারামি টা পাল্টে গেলো। আমি যদি ও তোমাকে ফেলতে চাইনি কিন্তু ওই মহিলা বললেন এমনটা করতে। এতে নাকি তুমি আমাকে ভালোবেসে ফেলবে। নিমেষ তোড়ার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে।
তোড়ার ভ্রু কুঁচকে যায় নিমেষ এর কথা শুনে। কি বললো এটা নিমেষ তাকে ফেলে দেয়ার প্ল্যান করেছিলো শেষ মুহূর্তে প্ল্যান চেঞ্জ তাহলে কি কোনো ভাবে রেয়ান্স এর মধ্যে আছে। কিন্তু ওই মহিলা কে ওই মহিলা যার কথায় নিমেষ এমন প্ল্যান করেছে। তোড়া নিজের মনে ভেবে যাচ্ছে। হটাৎ মৃদু চিৎকারে তোড়া চমকে নিমেষ এর দিকে তাকায় । নিমেষ ঘাড়ে হাত উল্টো দিকে কিছুটা বেঁকে গেছে। হাতের আঙুল এর ফাঁক দিয়ে দেখা সিরিঞ্জ। আসতে আসতে নিমেষ নিচে হেলে পড়ে যেতেই তার সামনে স্পষ্ট হয় নিমেষ এর পিছনে থাকা ব্যাক্তি টি।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে……
ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…… ।