#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৬৫
বাইরের অন্ধকারে ছেয়ে আছে। তবে এই লন্ডন এর বুকে বাইরে অন্ধকার কিনা সেটাই বোঝা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। লন্ডন এর রাস্তা চারিদিকে স্ট্রিট লাইট এর আলো তে আলোকিত হয়ে আছে। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে বাইরের এই দৃশ্য দেখতে ব্যস্ত তোড়া। তার দৃষ্টি বাইরের দিকে নিবন্ধ হলে সে আদেও কিছু দেখছে কি না সেটা বোঝা মুশকিল। সে অন্য পৃথিবীতে বিরাজ করছে।
রেয়ান্স স্টাডি রুমে থেকে রুমে ঢুকতেই দেখতে পায় ব্যালকনিতে দাঁড়ানো অন্যমনস্ক তোড়া কে । অনিতা কে নিয়ে যাওয়ার রেয়ান্স সবাই কে নিয়ে তার লন্ডন এর বাড়িতে নিয়ে চলে আসে। আগে সে এখানেই থাকতো। তার এমন বাড়ি প্রায় কয়েক জায়গায় আছে। রেয়ান্স এসে কিছু দরকারি কাজের জন্য স্টাডি রুমে চলে যায়। আর তোড়া ফ্রেশ হয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে যায়।
তোড়ার মনের মধ্যে এখনও সেই আগের মুহূর্ত গুলো ভেসে উঠছে। সেই ছোটো বেলার কিছু অভিশপ্ত নোংরা স্মৃতি যা সে এতদিন নিজের মনের গহিনে লুকিয়ে রেখেছিলো তা আজ এত বছর পর আবারো সবার সামনে উন্মোচন হয়ে গেছে। আজ তার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে তার প্রতি এতদিন এর অবহেলার কারণ। তার ড্যাড না হয় অনিতার প্রেমে অন্ধ হয়ে ছিল কিন্তু তার মা সে কি করে পারল নিজের মেয়ে কে অবিশ্বাস করে আর তার ওই বান্ধবী কে বিশ্বাস করতে। সে ভাবত সে হয়তো সত্যি কোনো অন্যায় করেছে যার জন্য তার মা ও তার বাবার মতো তাকে অস্বীকার করে। কিন্তু আজ তার কাছে কারণটা ও পরিষ্কার হয়ে গেছে। তার মায়ের প্রতি সামান্য পরিমাণ যে ভালোবাসা টুকু বেঁচে ছিল সেটাও আজ থেকে ঘৃণার পরিনত হয়েছে
রেয়ান্স তোড়ার মনের অবস্থা বুঝতে পারছে। তাই সে কিছু মুহূর্তের জন্য তোড়া কে একা ছেড়ে গেছিলো। কিন্তু আর নয় এবার তাকে তোড়া কে ঠিক করতে হবে। তোড়া কে আর ভেঙে পড়তে দিলে হবে না। তোড়া এখন তার। তাই তার সমস্ত ভালো মন্দের দায়িত্ব ও তার। তাই রেয়ান্স আসতে আসতে এগিয়ে যায় তোড়ার দিকে। তোড়ার পিছনে দাঁড়িয়ে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে নেয় তার বাহু বন্ধনে। তোড়ার মাথার উপর নিজের থুতনি রেখে তোড়া শক্ত করে জড়িয়ে নেয় নিজের বুকের সাথে।
তোড়া এতোটাই নিজের চিন্তার মাঝে ডুবে ছিল যে রেয়ান্স এর স্পর্শ পেয়ে হালকা কেঁপে ওঠে। সে নিজেকে রেয়ান্স বাহুবন্ধনে পেয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের পেটের উপরে থাকা রেয়ান্স এর হাত আকড়ে ধরে । রেয়ান্স তোড়ার অবস্থা বুঝতে পারে। তাই সে কোনো কথা না বলে নিজের ভালোবাসার চাদরে আরো ভালোভাবে মুড়ে নিয়ে তোড়া কে স্বাভাবিক হতে সময়ে দেয়। সব সময়ে শব্দের প্রয়োজন পড়ে না। ভালোবাসার উষ্ণতা দিয়েও তার সমস্ত দুঃখ কষ্ট দূর করে দেওয়া যায়।
————–
ড্রইং রুমের অবস্থা ও একদম স্তব্ধ। কারো মুখে কোনো কথা নেই। আজকে সবাই তোড়ার জন্য সম পরিমাণে ব্যথিত। শাহীন কৃতী তোড়ার জীবনের ব্যাপারে পুরোটা জানে না তার ছোটো থেকে একা বাঁচার লড়াই। বাবা মা থেকেও না থাকার কষ্ট আর তার সাথে ও প্রত্যেক টা ঘটনা রাই ওদের কে বলছে। রাই আর তোড়ারা প্রতিবেশী। ছোটো থেকেই তোড়ার সঙ্গী ছিল রাই। তবে তোড়াদের মত ওরা অত অবস্থা সম্পন্ন নয়। তবুও কম কিছু নয়। রাই ছোটো থেকেই ছোটো তোড়ার সমস্ত দুঃখ কষ্ট নিজের সাথে ভাগ করে নিয়েছে সেই ছিল তার ছায়া সঙ্গী। রাই এর বাবা মা ও তোড়া কে নিজেদের মেয়ের মত করে ভালোবাসা দিয়েছে। কারণ তারাও তোড়ার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতো। বাড়িতে তোড়া তার দাদু আর তার ভাই তামিম ছাড়া কারোর কাছে একটুও ভালোবাসা পাইনি। আর না কেউ তার জন্য একটু ও ভালোবাসা দেখিয়েছে। তামিম যখন হয়নি তখন রাই আর তার পরিবার আর তার সাথে ছিল তোড়ার দাদু । এই কয়েক জন তোড়া কে সামলে রাখত। তোড়ার মা কখনও ওকে মায়ের ভালোবাসা দিয়ে কাছে টেনে নেই নি বরং একটু কিছু ভুল হলেই তাকে পেটাত খাওয়া বন্ধ করে দিত। আর তার সাথে ছিল তানিয়া যে সব সময়ে তোড়ার জীবন নরক করার জন্য উঠে পড়ে লাগত। তানিয়া তার ড্যাড কাছে তোড়ার নামে উল্টো পাল্টা বলে তোড়া কে মার খাওয়াতো আর তোড়া ও সব কিছু চুপচাপ মেনে নিত। প্রায় সময়ে ওকে আমি জোর করে আমাদের বাড়ি নিয়ে আসতাম খাওয়ার জন্য। একটু বড় হওয়ার পর ও আর এইসব নিয়ে থাকতো না নিজের কাজ নিজেই করত সব সময়ে ওদের থেকে দূরে থাকতো। তখন তোড়ার একমাত্র লক্ষ্য ছিল তার নিজের ক্যারিয়ার তৈরী করা। এর পরে তোড়া নিজের পড়াশোনার সাথে পার্টটাইম জব করত আর এছাড়া ও তোড়া খুব সুন্দর ক্রাফ্ট বানাতে পারতো ওর ওই হাতের কাজ আর জব এর টাকা জমিয়ে রাখত। ছোটো থেকেই এইসব করে টাকা জমিয়ে আর তার সাথে ওর দাদু কিছু টাকা দিয়েছিলো যেটা তোড়া ধার হিসাবে নিয়েছিলো। সেই টাকা জমা করে একটু একটু করে ও স্টার অকেশন গ্রুপ টা তৈরী করে। ওর বাড়ি থেকে এর জন্য কোনো সাহায্য পায়নি তোড়া। আমরা বন্ধুরা সবাই মিলে তোড়ার সাথে হাতে হাত লাগিয়ে সমস্ত কাজ করতাম। কিন্তু এতেও বাঁধ সাধলো তানিয়া সে কৌশল করে বাড়িতে তার নিজের ফ্যাশন ডিজাইনার ও মডেলিং নিয়ে ক্যারিয়ার গড়ার কথা বলতেই সেটা এসে পড়ে তোড়ার উপর তখন তোড়ার লাস্ট ইয়ার চলছিল। তাকে পড়া ছেড়ে দেয়ার জন্য রীতিমত প্রেশার করা হয়। বাড়িতে সে ছেড়ে দিয়েছে বললেও সে পরীক্ষা দেয় কিন্তু ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেনা। আর তার পরেই আসে অভি তোড়ার সাথে বিয়ে দেয়ার জন্য ফ্যামিলি থেকে ঠিক করে। সেই সাথে অভির নজর পড়ে তোড়ার কোম্পানির দিকে। এটাতে ও তানিয়ার হাত ছিল কারণ সে ততদিনে অভি কে নিজের জালে ফাসিয়ে নিয়েছিলো। বাড়িতে থেকে তোড়ার কোম্পানির সব দায়িত্ব অভি কে দেয়ার জন্য বলা হয় এতে প্রচুর অশান্তি ও হয়েছিলো। যেহেতু তোড়ার সাথে বিয়ে হচ্ছে সেই ভেবে আর বাড়ির জন্য কোম্পানী অভি কে হ্যান্ড ওভার করে। কোম্পানী তে আমাদের যতো গুলো ফ্রেন্ড ছিল তাদের প্রায় সবাই কে বের করে দিয়েছিলো এটা যদি ও তোড়া জানে না। আর তারপরেই পায় ধোঁকা।
-” এরপরে খবর তো তোমরা নিশ্চয়ই জানো। রাই বলে ওঠে।
রাই এর বলা কথা গুলো শুনে শাহীন আর কৃতী কোনো কথা বলার অবস্থায় নেই। তারা পুরো স্তব্ধ হয়ে গেছে। কোনো পরিবার এমন ও হতে পারে বলে তাদের জানা ছিলো। নিজের মা বাবা হয়েও কি করে পারে নিজের মেয়ের সাথে এমনি করতে তোড়ার কষ্ট টা উপলব্ধি করে কৃতী আর শাহীন চুপ হয়ে যায়। আর এতক্ষণ থেকে ছোটো বেলার স্মৃতি হাতড়াতে গিয়ে রাই এর চোখে থেকে ও পানির বিন্দু বিন্দু গড়িয়ে পড়ছে। সেই একমাত্র যে তোড়ার এই কষ্টের জীবনে সঙ্গী।
————–
ব্যালকনিতে একে অপরের বাহু বন্ধনে থাকতে থাকতে কতক্ষণ যে সময় পার হয়ে গেছে তাদের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। হালকা হালকা ঠান্ডা অনুভূতি হতে রেয়ান্স তোড়া কে কোলে নিয়ে রুমে চলে আসে। রুমের আলো আধারির মধ্যে তোড়ার মুখের দিকে তাকাতেই রেয়ান্স মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে তোড়ার দিকে। তোড়া রেয়ান্স মুখের দিকে তাকিয়ে রেয়ান্স এর চোখের দিকে তাকাতেই কেঁপে ওঠে। কারণ রেয়ান্স এর চোখের ভাষা পড়তে তোড়ার কোনো অসুবিধা হয়না। তোড়া মাথা নিচু করে নিতেই রেয়ান্স তোড়ার মুখ দু হাতে তুলে নিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর কপালে উষ্ণ স্পর্শ বুলিয়ে দেয়। তারপর আসতে আসতে নেমে আসে তোড়ার কম্পনরত ঠোঁটের উপরে। তোড়ার ঠোঁটের মাঝে নিজের জায়গা করে নেয়। তোড়া রেয়ান্স এর মাথার চুল আকড়ে ধরে একদম রেয়ান্স এর সাথে মিশে যায়। শুষে নিতে থাকে একে অপরের অধরসুধা। নেশাগ্রস্তের মত পুরো জোশ এর সাথে একে অপরের ঠোঁটের মধ্যে ডুবে যায়। গভীর থেকে গভীর হতে থাকে জিভের স্পর্শ। দুজন এর শ্বাস আটকে আসলে রেয়ান্স তোড়ার ঠোঁট ছেড়ে। গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়। আলতো আলতো করে ঠোঁটের স্পর্শ বুলিয়ে দিতে থাকে সাথে মাঝে মাঝে বাইট বসাতে থাকে। ঘাড়ে থেকে গলায় প্রতি টি অংশে লিক করতে থাকে। তোড়া রেয়ান্স এর প্রতি টা স্পর্শে কেঁপে কেঁপে উঠতে থাকে। রেয়ান্স শার্ট খামছে ধরে। রেয়ান্স তোড়ার শার্ট এর উপরের বাটন খুলে কাঁধের থেকে কিছুটা নামিয়ে দেয়। প্রতিটা অংশে বুলিয়ে দিতে তার ঠোঁটের স্পর্শ। তোড়ার হাত ততক্ষণে রেয়ান্স এর শার্ট এর বাটনে এসে থেমে যায়। তোড়া আসতে আসতে রেয়ান্স এর শার্ট খুলে শরীর থেকে আলাদা করে দেয়। দুজন দুজন এর তাকিয়ে দেখে। দুজন এর চোখে নেশা। রেয়ান্স তোড়ার চোখের দিকে তাকিয়ে এক এক করে তোড়ার শার্ট এর বাটন খুলে গায়ের থেকে খুলে ফেলে দেয়। তোড়া কে আলতো ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়। রেয়ান্স তোড়ার পা নিজের হাতে তুলে নিয়ে নিজের ঠোঁট ছুয়ে দিতে থাকে তোড়া সরিয়ে নিতে চাইলেও পারে না। ঠোঁটের স্পর্শ ভরিয়ে দিতে দিতে উপরের দিকে উঠে আসে। তোড়ার উপরে উঠে আসে তোড়ার কপাল থেকে শুরু করে পুরো মুখ জুড়ে তার ঠোঁটের স্পর্শ বুলিয়ে দিতে থাকে। গলায় থেকে নেমে বিভাজিকায় মুখ ডুবিয়ে দেয়। আসতে আসতে দুজন একে অপরের মাঝে ডুবে যায়। ভেসে যায় একে অপরের ভালোবাসার সমুদ্রে । মুড়ে নেয় একে অপরের ভালোবাসার চাদরে।
————
তোড়ার ইন্টারন্যাশনাল টপ মডেল হওয়ার পর থেকে লন্ডনেই একের পর এক ইভেন্ট শো করতে থাকে। এখন এই মুহূর্তে এই গুলো তার জন্য খুবই জরুরী তার ক্যারিয়ার আর জন্য। এই গুলো তাকে এগিয়ে দেবে টপ মডেল অ্যাওয়ার্ড পর্যন্ত।
সেদিনের পর অনিতা কে রেয়ান্স এর সিক্রেট বেস নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে একে পর এক টর্চার করে। অনিতার থেকে সমস্ত স্বীকারোক্তি নিয়ে নেয়। সাথেই অনিতা কে রেয়ান্স তার গার্ড দ্বারা ইন্ডিয়া পাঠিয়ে দেয় তার ওখানে সিক্রেট বেসে। রেয়ান্স এর টার্গেট এবার মানান পরিবার। যে পরিবার তার তোড়া কষ্ট দিয়েছে সে তাদের কিছুতেই রেহাই দেবে না তিল তিল করে সব কিছু কেড়ে নেবে। যেটা সে তোড়ার নামে প্রতিজ্ঞা করেছে।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে…….
#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৬৬
লন্ডন থেকে ফেরার পর থেকেই তোড়ার কাজ লেগেই আছে। এই সময়ে কোনো ছুটি নিলে চলবে না এটাই তার উচু তে পৌঁছানোর রাস্তা এক অংশ মাত্র। এখন সে ইন্টারন্যাশনাল টপ মডেল এর স্থান পেয়েছে তবে তাকে ইন্টারন্যাশনাল নাম্বার ওয়ান মডেল হিসাবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। এমনিতেও তাদের বিয়ের অ্যানাউন্স এর আর বেশি বাকি নেই প্রায় দেড় মাস মত সময় আছে আর তার উপর সামনেই ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড শো একমাস পরেই যেখানে তার লক্ষ একটাই ইন্টারন্যাশনাল নাম্বার ওয়ান টপ মডেল এর অ্যাওয়ার্ড হাসিল করা। আর তারপরেই তাদের বিয়ের অ্যানাউন্স করা। তাই লন্ডন থেকে ফিরেই সে তার লক্ষে পৌঁছানোর জন্য কাজে লেগে আছে।
রেয়ান্স ও তার কাজে ব্যস্ত তার ও অনেক কাজ পড়ে আছে। সে প্রায় পনেরো দিন মত তোড়ার সাথেই লন্ডন ছিল তাই তার কাজ পড়ে আছে যদি সে ওখান থেকে তার অফিসের কাজ করেছে আর সেই সাথে লন্ডন এর অফিসে ও কাজ দেখেছে। এগুলো ছাড়া ও তার অনেক কাজ যেগুলো তাকে আগে করতে হবে। তার অফিসের কাজ ডিলে হলেও কোনও চাপ নেই কিন্তু এই কাজ গুলো তো তাকে করতেই হবে। এগুলোর সাথে যে তোড়া জুড়ে আছে। এমনিতেও তার অনেক হিসেবে বাকি আছে। তার তোড়া কে যারা কষ্ট দিয়েছে তাদের কে তিল তিল করে কষ্টে দেখতে চায় তার জন্য যা করতে হয় সে কোনো পিছপা হবে না। মুম্বাই ফিরেই আগে তার সিক্রেট বেসে গিয়ে অনিতা শর্মা এর সাথে দেখা করে এসেছে সাথে আরেক ডোজ ক্লাস ও নিয়েছে তবে সে নিজে নয় অন্য ফিমেল গার্ড দিয়ে।
রেয়ান্স এই মুহূর্তে অফিসের কাজ করছে। তার সময়ে টেবিলের উপর সারি সারি ফাইল রাখা আছে এগুলোতে তার সাইন করতে হবে সাথে কিছু ডকুমেন্ট ও তাকে দেখতে হবে। তার এই মুহূর্তে নিঃশ্বাস নেয়ার ও সময় নেই। এই সবের মাঝে শাহীন কেবিনে এসে ঢোকে। কিন্তু রেয়ান্স নিজের কাজে ব্যস্ত থাকার জন্য সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে কারণ কাজের সময়ে তাকে ডিসট্রাব করলে তার আর রক্ষা নেই রেয়ান্স হাত থেকে। তাই চুপ করে আছে।
-“দাঁড়িয়ে আছো কেনো কি বলতে এসেছিলে বলে ফেলো। রেয়ান্স মাথা না তুলে বলে ওঠে।
-” স্যার আপনি যে গুলো বলে ছিলেন সব হয়ে গেছে। শাহীন বলে ওঠে।
রেয়ান্স শাহীন এর কথা শুনে ফাইল থেকে মুখ তুলে শাহীন এর দিকে তাকায়। হাতের ফাইল নামিয়ে রাখে। শাহীন তার স্যার কে তার দিকে তাকাতে দেখেই আবারো বলে ওঠে।
-” স্যার এতে অনিতা শর্মার সমস্ত কনফেশন আছে সেদিনের ম্যাডাম এর অনিতার সমস্ত কথোপকথন আছে। বলেই একটা পেনড্রাইভ রেয়ান্স এর দিকে এগিয়ে দেয়।
-” আর এই ফাইল এর মধ্যে অনিতার সমস্ত প্রমাণ আছে। এখানে ওদের দুজন এর রেজিস্ট্রি পেপার ও ডিভোর্স পেপার আছে। সাথে আছে আরো বাকি ডকুমেন্ট। শাহীন বলে ওঠে।
রেয়ান্স শাহীন এর হাতের থেকে ফাইল নিয়ে চেক করতে থাকে। এর পরে পেনড্রাইভ নিয়ে ল্যাপটপে কানেক্ট করে ভিডিও গুলো দেখতে থাকে। আর শাহীন চুপচাপ দাঁড়িয়ে তার স্যার এর মতিগতি বোঝার চেষ্টা করছে।
-“এগুলো কে আলাদা আলাদা পার্ট ভাগ করে মিডিয়া যে দিয়ে দাও এর এই ডকুমেন্ট গুলো রেখে দাও প্রমাণ হিসাবে পরে কাজে লাগে। আর সব থেকে তোমাকে যেটা করতে হবে আগে। অনিতা শর্মার জীবিত থাকার নিউজ মিডিয়া কে দিয়ে দাও সাথে তার কিছু ছবি ও যেগুলো তার বেঁচে থাকার প্রমাণ করবে। আর সেই সাথে যেনো মিসেস অনামিকা রয় খোলস ও বেরিয়ে আসে সবার সামনে। রেয়ান্স বলে ওঠে।
-“ওকে স্যার। শাহীন বলে ওঠে।
-” হুম আর এই টা রিলিজ হওয়ার পর বাকি গুলো টাইম নিয়ে পোস্ট করতে ইন্সট্রাকশন দেবে। রেয়ান্স বলে ওঠে।
-” ইয়েস স্যার।
-” আচ্ছা স্টেট মিনিষ্টার মিস্টার এহসান মানান এর কি খবর? রেয়ান্স কলম ঘোরাতে ঘোরাতে বলে ওঠে।
-“স্যার আশা করছি উনি আর বেশি দিন এই পদে থাকতে পারবেন না সেই ব্যবস্থা ও হয়ে গেছে। শাহীন বলে ওঠে।
-” গুড জব। রেয়ান্স বলে ওঠে।
————–
লর্ড রেজেন্সি বাড়ির ভিতরে ড্রয়িং রুমে দৃশ্য কিছুটা আলাদা। এখানের বাতাসে এখন কিছুটা রোমান্টিক এর হওয়া বইছে। সোফায় মুখোমুখি হয়ে বসে আছে দু প্রান্তে রাই ও শাহীন। রাই তোড়ার সাথে কাজ শেষে এখানে চলে এসেছে। আর শাহীন কিছু ইনফরমেশন কালেকশন করার জন্য তোড়ার কাছে এসেছিল। তবে তোড়া এখন নিজের রুমে আছে ফ্রেশ হতে গেছে। তাই এখনও ড্রয়িং রুমে দুজনের মনে মনে ভালোবাসার উষ্ণতা ছড়িয়ে আছে।
রাই কোনা চোখে শাহীন এর দিকে তাকিয়ে আছে আর শাহীন একবার নিজের ফোনের থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে রাই এর দিকে দেখে তো আবার নিজের ফোন দেখে। শাহীন রাই এর দিকে তাকাতে দেখে রাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। এটা দেখেই শাহীন সোফায় থেকে উঠে এসে রাই এর পাশে বসে পড়ে। রাই তার পাশে শাহীন কে বসে পড়তে দেখে রাই চমকে ওঠে। একবার শাহীন এর মুখের দিকে তাকিয়ে আবারো ঘুরে বসে। রাই এর গাল দুটো লাল হয়ে ওঠে । শাহীন রাই এর লজ্জা পেয়ে রক্তিম গাল দুটো দেখেই মুচকি মুচকি হাসতে থাকে। শাহীন রাই এর একটা হাত টেনে এনে নিজের পায়ের উপর রাখে। এদিকে রাই শাহীন এর স্পর্শ পেয়ে কেঁপে ওঠে। শাহীন আরেক হাত দিয়ে রাই এর কোমরে রেখে তার দিকে টেনে আনে। রাই কে নিজের বুকে ফেলে নিজের মুখ এগিয়ে নিয়ে গিয়ে নিজের ঠোঁট রাই এর গালে স্পর্শ করায়। সাথে সাথে রাই কেঁপে ওঠে নিজের গালে শাহীন এর স্পর্শ পেয়ে। তারা দুজন এতটাই নিজেদের মধ্যে ডুবে গেছে যে তারা কোথায় আছে সেটাও ভুলে গেছে। শাহীন রাই এর গালে হাত দিয়ে স্লাইড করতে রাই কেঁপে উঠে একবার শাহীন এর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় শাহীন এর চোখের নেশা। সে সাথে সাথেই শাহীন এর বুকে মুখ গুঁজে দেয়। শাহীন ও পরম আদরে রাই কে তার বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়। এতদিন তাদের চোখে চোখে ভালোবাসার ছোঁয়া পেলেও আজ তারা অনেক কাছে চলে এসেছে। তারা একে অপরকে মুখে ভালোবাসি না বললেও তাদের নিজেদের মধ্যে থাকা ভালোবাসার কথা জানিয়ে দিয়েছে নিজেদের এই উষ্ণ স্পর্শ ও উষ্ণ আলিঙ্গন এর মধ্যে দিয়ে। তারা দুজন চোখ বন্ধ করে একে অপরকে অনুভব করতে থাকে।
এদিকে ওদেরকে যে কেউ দূরে থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে সেদিকে ওদের কোনো হুস নেই। উপর থেকে সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে তোড়া ওদের কে দেখছে। তার মুখেও হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। সে নিচে আসতে গিয়ে ওদের কে একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে। তখনই সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে যে কি করতে পারে এরা। তোড়া প্রথম থেকেই রাই আর শাহীন কে দেখেছিলো তাই ও জানতো এদের মধ্যে কিছু একটা হতে চলেছে।
————–
এদিকে দৃশ্য টা কিছুটা অন্য রকম। ইউনিভার্সিটি গ্রাউন্ডে দুজন দুজন এর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে তামিম ও লেখা। এদের মধ্যে ঝগড়া হতে থাকে। তবে সেটা আর আগের মত নয়। এখনকার ঝগড়া কিছুটা দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া। এখন বেশিরভাগ সময় তামিম লেখার পিছনে লাগে আর তারপরেই শুরু হয় তাদের তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ। তবে তামিম লেখার এই ঝগড়া টা বেশ এনজয় করে। আর লেখা ও তামিম কে নিয়ে মনের মধ্যে যে অনুভূতি টা থাক না কেনো সে সেই সব ভুলে তামিম এর ঝগড়া তে মেতে ওঠে।
তবে লেখার এইসব যুদ্ধ কিন্তু তামিম এর জন্য। লেখা তামিম কে অন্য কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখলেই রেগে যায়। তবে এর বিশেষ কারণ ও সে জানে না। তবে সে রেগে যায় এটাই জানে।
আর এখন তাদের এই ঝগড়া কারণ হলো তামিম মাঠের মাঝে দাঁড়িয়ে দুজন মেয়ের সাথে কথা বলছিলো। আর এটা লেখা দূর থেকে দেখেই রেগে যায়। হু তার সাথে কথা বলতে গেলে তামিম এর বাচ্চা মাথায় উইপোকা ঘুরে বেড়ায় আর এদিকে দেখো কি সুন্দর সুন্দরী ললনাদের মেতে আছে গল্পে। লেখা দূর থেকে দাঁড়িয়ে নিজের মনে বিড় বিড় করে ওঠে।
তামিম আর মেয়ে গুলো কে হেসে গড়াগড়ি খেতে দেখে সে রাগে তাদের দিকেই এগিয়ে আসে কিন্তু তার আগেই ঘটে যায় অঘটন। অন্য দিকে থেকে একটা মেয়ে এসে ধাক্কা মারে আর লেখাও এসে পড়ে তামিম এর গায়ে। আর তারপরেই লেগে এই যুদ্ধ।
তবে এই যুদ্ধ থেকে যে কবে তাদের ভালোবাসার সূচনা হয় সেটাই দেখার। তাদের দুজন এর মনের মধ্যে একে অপরের জন্য অনুভূতি তৈরী হয়ে গেছে তবে সেটা এখন ভালোবাসার রূপ নেয়ার অপেক্ষা।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে……
#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৬৭
ব্রেকিং নিউজ মিস অনিতা শর্মা যার উনিশ বছর আগে মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায় যে সবাই এর কাছে মৃত। হঠাৎ করেই সেই মৃত মানুষটি সবার সামনে উঠে এসেছে জীবিত অবস্থায়। কি আছে এর পিছনের রহস্য? আচ্ছা মৃত মানুষ কি আবার বেঁচে ফিরতে পারে যে মানুষটা মরে গেছে সে আবার কি করে সবার মাঝে ফিরতে পারে এটা কি ভৌতিক কিছু নাকি অন্য কিছু হতে পারে?
এখন আমরা সেটাই তুলে ধরবো জনগণ এর সামনে । অনিতা শর্মা । যিনি শর্মা কর্পোরেট এর একজন উত্তরাধিকারী। প্রায় উনিশ বছর আগে একটা অ্যাক্সিডেন্টে তার মৃত্যু হয়। যে মৃত্যু টা এখনও সবার কাছে রহস্য জনক বলে মনে হয়। সেই সময়ে ইনভেস্টিগেশন করে ও কোনও রকম প্রমাণ পাওয়া যায়নি যার জন্য মৃত্যু টা একটা রহস্য হয়ে থেকে গেছে। অনিতা শর্মা এর পাহাড় থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে। ওনার লাশ পাওয়া গেছিলো পাহাড়ের নিচে চেহারা কোনো ভাবে শনাক্ত করা যায়নি কিন্তু তার শরীরে কয়েকটা চিহ্ন দেখেই চিহ্নিত করা হয়েছিল এটাই অনিতা শর্মা। ওই সময়ে ওখানে উপস্থিত ছিল তার বান্ধবী মিসেস নিকিতা মানান ও এখন কার স্টেট মিনিষ্টার এহসান মানান ও তার পরিবার। ওখানে ওদের কে দেখা গেছিলো। এর আগেও খবর সূত্রে জানা গেছিলো যে মিস অনিতা শর্মা এর সাথে মানান পরিবারের একটা সম্পর্ক আছে বিশেষ করে এহসান মানান এর সাথে কিন্তু এর কোনো সদ উত্তর পাওয়া যায়নি। পুলিশ অফিসাররা কোনো রকম প্রমাণ না পাওয়ায় তখন কেস ক্লোজ করে দেয়। কিন্তু এই কেস টা আবার রি ওপেন করা হয়েছে। আর তার সাথেও উঠে এসেছে কিছু তথ্য।
মিস অনিতা শর্মা যিনি মারা গেছিলেন বলে জানা যায়। তিনি আসলেই মারা যান নি বেঁচে আছেন। এবং এখন তিনি মিসেস অনামিকা রয় নামে পরিচিত। ওশিয়ান স্টার গ্রুপ একজন শেয়ার হোল্ডার। মরা মানুষ কি কখনো ফিরে আসতে পারে? কিন্তু মিস অনিতা শর্মা ফিরে এসেছে কারণ উনি মারা যাননি শুধু মরার অভিনয় করেছিলেন। কি অবাক হচ্ছেন তো সবাই? আসলেই এটা অবাক হওয়ার মতই খবর। তবে এর সাথে ওতপ্রতঃ ভাবে জড়িয়ে আছে মানান পরিবার। মিসেস অনামিকা রয় ও মিস অনিতা শর্মার উনিশ বছর আগের ছবি ও তারপর থেকে একে একে তার ছবি এখানে দেওয়া হলো। এবার আপনারা নিজেরাই বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই কিছু একটা ঘাপলা কেস আছে। অবশ্যই এই কেস এর সাথে জড়িয়ে আছে মানান পরিবার। মিস অনিতা শর্মা তার নকল মৃত্যুর আগে সমাজের কাছে তিনি ছিলেন একজন সিঙ্গেল ওম্যেন কিন্তু আমাদের কাছে তথ্য থেকে জানা যায় তিনি বিবাহিত এবং ডিভোর্সি। তিনি তার এই ছল কৌশল দিয়ে ছোট্ট একটা পাঁচ বছরের শিশুর কাছে থেকে তার বাবা এবং মা কে আলাদা করে দিয়েছে। আর সেই বাচ্চা মেয়েটি হল তাথই মানান। সব থেকে ইন্টারেস্টিং হল অনিতা শর্মা এর সাথে বিয়ে হয়েছিলো এহসান মানান এর গোপনে। তার দরকার ছিল মানান পরিবারে প্রোপার্টি তাই সেই কৌশলে নিজের বয়ফ্রেন্ড এর সাথে মিলে এহসান মানান কে তার প্রেমের জালে ফাসিয়ে বিয়ে করে। আর তাদের কে একত্রে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে নেয় তাথই। তার পর থেকেই ঝামেলা শুরু হয়েছিলো। যে সম্পত্তির জন্য সে এহসান কে বিয়ে করেছিলো সেটা সফল হয়নি বরং উল্টো ফলে গেছিলো। আর সেই জন্য তারপরেই অভিনীত হয় অনিতা শর্মা এর মৃত্যু কাহিনি। আপনাদের সবার সামনে তুলে ধরা হলো কিছু ভিডিও কিছু ডকুমেন্ট কিছু ছবি যেগুলো দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যাবে সব কনফিউশন। এই ভিডিও তে অনিতা শর্মা নিজেই তার সমস্ত দোষ স্বীকার করে নিচ্ছে। আর নেক্সট এই ভিডিও টার মধ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি একটা মেয়ে কে চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে আর তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মিস অনিতা শর্মা। এখন আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি মেয়েটার চেহারা। কি অবাক হলেন হ্যাঁ এখন কার টপ মডেল তোড়া দেওয়ান কে দেখা যাচ্ছে। যিনি এই কয়েকদিন আগেই লন্ডন একটা ইভেন্ট শো তে ইন্টারন্যাশনাল টপ মডেল হিসাবে চিহ্নিত হয়েছেন। আর এটা সেই দিনের ভিডিও। ওখানে টাইম ও ডেট দেওয়া আছে।
কিন্তু প্রশ্ন একটাই তোড়া দেওয়ান এর সাথে অনিতা শর্মা এর কি শত্রুতা? আসলেই আমরা যাকে তোড়া দেওয়ান হিসাবে চিনি তার আসল পরিচয় হলো তাথই মানান। যাকে একসময় কার মুম্বাই এর টপ মডেল ও তাথই এর বোন তানিয়া মানান মেরে ফেলেছিল। কিন্তু তখন তিনি উপরওয়ালার ইচ্ছা বেঁচে যান কিন্তু তার মুখের অর্ধ ভাগ নষ্ট হয়ে যায়। তিনি লন্ডন থেকেই প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে আবার নিজের মুখ ফিরে পান তবে তার কপালে জরুল টা সরে যায়। একটা ভিন্ন লুক নিয়ে তিনি আবারও ফিরে আসেন মুম্বাই এবং নিজে কে প্রমাণ করেন।
কিন্তু এখানেও শেষ নয়। এই মেয়েটা ছোটো থেকে মা বাবা থাকা সত্ত্বেও একা বড় হয়েছে তারপরেও তার কাছে থেকে সব কিছু কেড়ে নেওয়া হয়েছে তাই সে রুদ্র রূপ নিয়ে এসেছে যাতে তার উপর হওয়া সমস্ত অন্যায়ের উপর থেকে পর্দা সরাতে পারে। কিন্তু মিস অনিতা তোড়া কে দেখার পর তার পরিকল্পনা ভাটা পড়ে যাওয়ার ক্ষোভ নিয়ে লন্ডন ইভেন্ট শো এর পর তুলে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলতে চেয়ে ছিলেন। এখানেই রয়েছে তার সমস্ত প্রমাণ।
————–
মানান পরিবার….
টিভিতে এতক্ষণ বসে নিউজ দেখ ছিল যেখানে উপস্থিত মিস্টার এহসান মানান। মিসেস নিকিতা মানান ও তোড়ার দাদু বোন ও তামিম উপস্থিত ছিল। টিভির চলতে থাকা নিউজ দেখেই মিস্টার এহসান মানান এর হাত থেকে রিমোট পড়ে যায়। পুরো রুম জুড়ে নিস্তব্ধতায় ভরে যায়। কারোর মুখে কোনো কথা নেই সব স্তব্ধ হয়ে গেছে খবর দেখে। এখানে বসে থাকা তোড়ার দাদু একমাত্র সব কিছু জানতেন। আর তোড়ার বাবা মা তারা তো নিজেদের ভ্রম নিয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন এতদিন কিন্তু এখন চোখের সামনে সব কিছু আসতেই তারা দুজন পাথরে পরিনত হয়ে যায়। আর তামিম ও তাহা সব কিছু দেখে স্তব্ধ হয়ে গেছে তারা এই সবের কিছু জানতো না। এতদিন পরে তাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় তাদের দিভাই এর উপর অবহেলার কারণ। তাদের দিভাই কষ্ট গুলো কে অনুভব করেই দুজনের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। তামিম ছোট্ট থেকেই তার দিভাই এর আদরের ছিল সে তার দিভাই খুব ভালোবাসতো কিন্তু তাহা সে ছোটো থেকেই নিজের মত করে বড় হয়েছে সে কখনোই তোড়ার কোনো ব্যাপারে মাথা দেয়নি। কিন্তু এখন সব কিছু জানার পর থেকেই তার কষ্ট হচ্ছে তার দি এর জন্য।
এহসান মানান পাথরের মত বসে আছে। এক সময়ে তিনি যাকে ভালোবেসে ছিলেন সেই তাকে ধোঁকা দিয়েছে। তাদের সম্পর্কের সব কিছু ছিল মিথ্যা। যার জন্য এখনও তার মনের এক কোণে ভালোবাসা জমে আছে সেই কিনা তাকে নিয়ে খেলা করলো শুধু সম্পত্তির জন্য। তার কাছে থেকে কেড়ে নিলো তার মেয়ে কে। তার চোখের সামনে এত বছর পর ভেসে ওঠে সেই দিনের দৃশ্য যখন তার ছোট্ট তাথই রক্তাক্ত হয়ে ফ্লোরে পড়েছিলো কিন্তু তিনি তখন শুধু অনিতা কে নিয়ে মেতে ছিল। তার মেয়ের দিকে নজর দেই নি। যে মেয়ের জন্য তিনি পাগল ছিলেন যার জন্য নিজের স্ত্রী কে ধোঁকা দিতেও বাঁধে নি নিজের মেয়ে কে মেরে ফেলতে ও হাত কাপে নি সেই অনিতা তাকে নিয়ে গেম খেলেছে। তিনি ওই মেয়েটার জন্য এতদিন পর্যন্ত নিজের মেয়েকে ও অবহেলা করে গেছে কত অপমান করেছে। এগুলো মনে পড়তে এহসান মানান অনুতাপে ভেঙে পড়ে।
তোড়ার মা মিসেস নিকিতা নিজের দোষে নিজের মেয়েকে হারিয়েছে। সে তার নিজের রক্ত নিজের মেয়েকে ছেড়ে তার বান্ধবী কে বিশ্বাস করে গেছে এতদিন তার শিশু বাচ্চাটা কে দিনের পর দিন অবহেলা করে গেছে। আজ সেই বান্ধবীর মুখোশ খুলে যেতেই এখন নিজেকেই ধিক্কার জানাতে ইচ্ছা করছে তার। আর তার স্বামী যাকে সে এত বিশ্বাস করলো সেই কিনা তাকে ধোঁকা দিলো তার মেয়ে তার জন্য লড়াই করে রক্তাক্ত হল আর সেই কিনা তার মেয়ে কে দূরে সরিয়ে রাখল এত বছর। কিন্তু তার স্বামী এটা কি করে করতে পারলো তার সাথে কি করে আর সেই বা কি করে তার মেয়ে কি অবিশ্বাস করতে পারলো। এগুলো মনে হতে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে।
তামিম এতক্ষণ স্তব্ধ হয়েছিলো কিন্তু তার মায়ের কান্না শুনে সে স্বাভাবিক হয়ে যায়। তার এখন প্রচণ্ড ঘৃণা লাগছে তার সামনে বসা এই দুটো মানুষ কে এদের কে এখন তার আর নিজের বাবা মা বলতেও ইচ্ছা করছে না।
-“ছিঃ। তোমাদের কে আমার নিজের বাবা মা ভাবতেই আমার গা গুলিয়ে আসছে ঘৃণা তে। তোমরা বাবা মা নামের কলঙ্ক। তোমাদের মত কিছু বাবা মা দের জন্য আজ পুরো সমাজ দূষিত হয়ে আছে যারা শুধু নিজেদের স্বার্থ বোঝে আর কিছু নয়। কি করে পারলে তোমরা আমার দি এর সাথে এমন করতে। তুমি তো নিজের বাবা ছিলে না আমার দি এর তারপরেও কি করে আমার দি কে ওইরকম নৃশংস ভাবে মারতে পারলে কি করে এখন আমার নিজের উপর ঘৃণা আসছে এটা ভেবে যে তোমাদের রক্ত আমার গায়ে বইছে বলে। তামিম প্রচণ্ড ঘৃণা ও ক্রোধে বলে ওঠে।
-, আর মা তুমি? তুমি কি করে পারলে তোমার ওই ছোটো মেয়েটা কে কষ্ট দিতে তোমার একবারও বুকে বাধলো না একটুও কষ্ট হল না?
এতটা পাষান তুমি? তুমি তো নিজে ওকে দশ মাস পেটে রেখেছিল তুমি ওকে জন্ম দিয়েছিলে তাহলে কি করে ওকে এতটা কষ্ট দিতে পারলে? উত্তর দাও? আমার দি কে এতটা অমানবিক অত্যাচার কেনো করলে তোমরা। তোমার নিজের রক্ত নিজের মেয়েকে বিশ্বাস করতে পারলে না একটা বাইরের মেয়ে ছেলের কথা বিশ্বাস করে নিলে যেই কিনা তোমার ঘর ভেঙে ছিল। আরে আমার দি তো তোমার জন্য সেদিন ওতো লড়াই করেছিলো তখন কি একবার ও আমার দি এর রক্তাক্ত মুখের কথা মনে পড়েনি একটু ও কি দয়া হয়নি? ও তো তোমার মেয়ে ছিল? কি করে পারলে এতটা নিষ্ঠুর হতে। ঘৃণা করি তোমাকে। তোমাকে নিজের মা বলতেও আমার ঘৃণা লাগছে। জন্ম দিলেই কিন্তু মা হওয়া যায়না। মায়ের কর্তব্য ও কিন্তু কিছু কম নয়। তাই তুমি আমাদের মা হওয়ার যোগ্য নও। ঘৃণা করি তোমাদের। আমি আর কিছুতেই এখানে থাকবো না যেখানে আমার দি এর সাথে এতটা অমানবিক আচরণ করা হয়েছে সেখানে আমি কিছুতেই থাকতে পারবো না কিছুতেই না। তামিম চিৎকার করে বলে ওঠে।
এতক্ষণ তামিম তার বাবা মায়ের উপর চিৎকার করলেও তার গলা ভেঙে আসছিলো তার দি এর জন্য কষ্টে। তার চোখ দিয়ে অবিরাম পানি গড়িয়ে পড়েছিলো। তামিম এর কথায় তোড়ার মা আরো জোরে জোরে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। তার এই কান্নার মধ্যে দিয়ে হাহাকার ছাড়া কিছু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আজ সে নিজের কাজে তার শাস্তি পেয়ে গেছে তবে এটাতো কিছুই না এখনও অনেক বাকি। এহসান মানান আর কিছু বলার মত অবস্থায় নেই তার চোখ থেকেও পানির ধারা বয়ে চলেছে। তামিম এর কথা গুলি তার বুকে এসে লেগেছে। তামিম সব সত্যি কথাই বলেছে তার কথার মধ্যে কোনো ভুল নেই সব একদম ঠিক ছিল।
তামিম উপর থেকে তার ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে নিচে নেমে আসে। তার বাবা মায়ের দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে বেরিয়ে যেতে লাগে।
-“দাড়া দাদু ভাই। আমিও যাব তোর সাথে। আমি এতদিন ছিলাম আমার দিদি ভাই এর জন্য কিন্তু আমার দিদি ভাই যখন এখানে নেই তাই আমি ও এখানে এই পাপীদের মাঝে থাকবো না। নিয়ে চল আমাকে আমার দিদি ভাই এর কাছে। তোড়ার দাদু বলে ওঠে।
-“ভাইয়া আমিও যাবো। পিছন থেকে তাহা ও বলে ওঠে কাঁদতে কাঁদতে।
তামিম এক পলক তার এই বোন কে দেখে যে সব সময়ে নিশ্চুপ হয়ে ছিল আজ সে কাঁদছে। তামিম কিছু না বলেই ইশারা আসতে বলে বেরিয়ে যেতে থাকে।
-” তামিম আমার মেয়ে কোথায় আছে আমিও যাব তার কাছে। তোড়ার মা বলে ওঠে।
-“আপনার মেয়ে আজ থেকে উনিশ বছর আগে মারা গেছে। আর যে এতদিন আপনাদের অবহেলার মাঝে ছিল সে একটা লাশ যার ও মৃত্যু হয়েছে আপনাদের প্রিয় মেয়ে তানিয়ার হাতে। এখন সে শুধু মাত্র আমার দিভাই তোড়া দেওয়ান । আপনাদের কেউ নয়। তামিম দৃঢ় অথচ শান্ত ভাবে বলে ওঠে বেরিয়ে যায়।
তামিম বেরিয়ে যেতেই তোড়ার মা হাঁটু ভেঙে বসে কান্নায় ভেঙে পড়ে। আর এহসান মানান ও পাথরের মত বসে থাকে। কিছুক্ষণ পর তিনি নিজে উঠে দাঁড়িয়ে তার স্ত্রী এর হাত ধরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
————-
লর্ড রেজেন্সি….
তাসনীম দেওয়ান এর বুকে মুখ গুঁজে বসে আছে তোড়া সে নিজেও কান্নায় ভেঙে পড়েছে আজ। এতদিন ধরে জমিয়ে রাখা কষ্ট গুলো আজ যেনো ঠেলে বেরিয়ে আসতে চলেছে। তোড়ার মম বাপি দাদু আগের দিন মুম্বাই এসেছে তার এত বড় একটা অ্যাচিভমেন্ট এর সেলিব্রেট করতে। আজকে তাদের আনন্দের দিনেই এমন একটা খবর তাদের সামনে বেরিয়ে এলো। তাসনীম দেওয়ান তোড়ার ব্যাপার এত কিছু জানতো না সে শুধু তার বাড়ির লোকের অবহেলার কথা জানতো কিন্তু তার পিছনের এত কাহিনী জানতো না। নিউজ টা দেখার পর থেকে তোড়ার বাপি ও মম তাকে নিজেদের সাথে জড়িয়ে রেখেছে। তারা নিজেরাও কষ্টে ভেঙে পড়েছে। কোনো বাবা মা যে এমন হতে পারে তাদের জানা ছিল না। লেখা তার দাদু রাগিব রাওয়াত এর পাশে বসে আছে। তাদের ও চোখে জল। রাই শাহীন সবাই বসে আছে রাই তোড়ার সাথে ছোটো থেকে থাকলেও সেও জানতো না এতকিছু। তবে তারা আগের দিন থেকে এগুলো জানতো তাই আর তারা অবাক হইনি কিন্তু তোড়ার এই কষ্টে তাদের ও বুক ফেটে যাচ্ছে। রেয়ান্স একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। তোড়ার কান্না তার সহ্য হচ্ছে না কিন্তু সে আজ মেনে নিচ্ছে বুকে পাথর রেখে। আজ যতোটা কষ্ট তোড়া পাচ্ছে তার দ্বিগুণ সে ফিরিয়ে সবাই কে।
-“দিভাই ।
তোড়া তামিম এর কান্না ভরা গলা পেয়ে তার মম এর বুক থেকে মাথা তুলে সামনে তাকিয়ে দেখে তামিম ও তার পাশে তার ছোটো বোন তাহা দাঁড়িয়ে আছে আর তাদের পিছনে তাদের দাদু। তোড়া এই অবস্থায় দেখে তামিম এর চোখ দিয়ে আবারো পানি গড়িয়ে পড়ে। তোড়া উঠে দাঁড়াতে তামিম দৌড়ে এসে তোড়া কে জড়িয়ে কেঁদে ফেলে। কথায় আছে পুরুষ মানুষের চোখ দিয়ে সহজে পানি পড়ে না আর আজ সেটা দেখা গেলো সব সময়ে এর হাসি খুশিতে মেতে থাকা প্রানোচ্ছল ছেলে টা আজ কাঁদছে যন্ত্রণা এতটাই গভীর যে তার মত ছেলের চোখ দিয়েও পানি গড়িয়ে পড়ছে। তোড়া ও তার ভাই কে জড়িয়ে কেঁদে ফেলে।
-“দিয়া…. । কাঁদো কাঁদো ভাবে ডেকে ওঠে তাহা।
তোড়া তামিম কে ছেড়ে পাশে তাকায় তার ছোটো পুতুল এর আওয়াজ শুনে। তাহার দিকে তাকাতে দেখে সে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছে। তোড়া হাত বাড়িয়ে দিতে ছুটে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তোড়া কে। তার পুতুল বোন টা কে কাঁদতে দেখে তোড়ার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। তার এই পুতুল টা সব সময়ে চুপচাপ থাকতো কোনো কথা বলত না। সে সব সময়ে নিজের মত থাকতো দেখতে গেলে একদম তার মত জীবন যাপন করত। এই মেয়েটা কে তোড়া ছোটো থেকেই কোলে পিঠে করে বড় করেছে। একটু বড় হতে সে নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকল আর যখন তার বাবা মা তার উপর প্রহার করত তখন মেয়েটা দরজা বন্ধ করে বসে থাকতো সেদিন সে আর কিছু খেত না এইসব কেউ না জানলেও তোড়া জানতো এই মেয়েটা তাকে কতটা ভালোবাসে। তার কষ্ট দেখে সে ছোটো থেকে তার মত করে বড় হয়ে উঠেছে। নিজের কষ্ট সব সময়ে নিজের চেপে রাখত যেমনটা তোড়া নিজে করত।
তিন ভাই বোন একসাথে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। তোড়া এদের দুজনের কান্না দেখে নিজেকে সামলে নেয়। এদের কে থামাতে হলে তাকে স্বাভাবিক হতে হবে। তাছাড়া তার এই দু ভাই বোন তো আছে তাছাড়া তার এই পরিবার তো আছে যারা তাকে ভালোবাসে আগলে রাখে। তোড়া নিজের চোখ মুছে দুজন কে ছাড়িয়ে ওদের কেউ ও শান্ত করে।
কিন্তু হঠাৎ করে পিছন থেকে কেউ ডেকে উঠতেই তোড়ার চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে। সাথে বাকিদের ও।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে……
ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…..।