ইস্ক সুফিয়ানা পর্ব-২+৩ এবং বোনাস পর্ব

0
549

#ইস্ক_সুফিয়ানা
#পর্ব – ০২+০৩
#লেখনীতে : #Aloñe_Asha (ছদ্ম নাম)
#Kazi_Meherin_Nesa

ভারাক্রান্ত মন আর একরাশ কষ্ট সাথে চোখের পানি নিয়ে মাথা অব্দি কম্বল মুড়ে শুয়ে আছি, শুধু শুধু নিজের চোখের পানি কারো সামনে ফেলতে চাইনা কারণ আমার কষ্ট তো আর কেউ বুঝবে না..দুপুরে খাইনি, আমার হবু শাশুড়ি গেছে পর এসে শুয়েছি আর উঠিনি, চাচী এসে ডেকে গেছে আমাকে খাওয়ার জন্য দুবার কিন্তু ঘুমের ভান ধরে পড়ে ছিলাম মটকা মেরে..কিছুক্ষণ বাদে আমার ক্লাস টেন পড়ুয়া চাচাতো বোন নয়না এলো, চাচী আমাকে যাই মনে করুক কিন্তু আমার চাচাতো ভাই বোনেরা আমাকে নিজের বড় বোনের মতোই ভালোবাসে..নয়না এসে আমাকে ডাকতে শুরু করলো…

“ঘুমাও নাকি আপু?”

“নাহ..! কিছু বলবি?”

“এই নাও, তোমার বিয়ের শাড়ি গয়না চুড়ি সবকিছু..আরো অনেককিছু আছে এর ভেতর..”

কথাটা বলেই নয়না বিছানায় উঠে বসলো, আমিও ওর কথার মানে বুঝতে না পেরে কম্বল সরিয়ে উঠে বসলাম আমি, দেখলাম একটা ছোটো সাইজের ট্রলি ব্যাগ আর তাতে অনেক জিনিস, বিয়ের তত্ত্বের মতো লাগছে কিন্তু বিয়ের তো এখনও সময় বাকি আছে..আমি দায়সারা ভাবে প্রশ্ন করলাম..

“এতো জিনিস? এগুলো কে দিলো নয়না?”

“ঐযে তোমার শাশুড়ি দিয়ে গেছেন, বিয়ের আগে ছেলের বাড়ি থেকে জিনিস দেয়না সেগুলো.. বিয়ের দিন এগুলো পড়েই সাজতে বলেছেন তোমাকে উনি..”

মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো আমার, কেনো যেনো মনে হচ্ছে মহিলাটি একটু বেশিই তাড়াহুড়ো করছেন বিয়েটা নিয়ে..দুদিন আগেই বিয়ের জিনিস পাঠিয়ে দিলেন? আমি আদুরে স্বরে নয়নাকে বললাম..

“ও বাড়ির মানুষ ভালো তাইনা? তোকে কতকিছু দিলো”

নয়নার কথায় মলিন একটা হাসি দিলাম আমি, মেয়েটা তো আর এতকিছু জানে না যে কেনো আমার জন্যে এত্তো আয়োজন হচ্ছে..

“এখানে তো দেখছি অনেক জিনিস কিন্তু আমার এতকিছু লাগবে না, তুই এক কাজ কর.. এখান থেকে নিজের পছন্দমত জিনিস বেছে নিয়ে যা”

নয়না আমার কথা শুনে খুশি হয়ে ব্যাগ থেকে কিছু নিতেই যাচ্ছিলো তখনই চাচী চলে আসে..

“একদম না, নয়না..ওগুলো রুহির জিনিস, একটাতেও হাত দিবি না..বাইরে যা তুই এখন”

নয়না চলে গেলো, চাচী আমার পাশে এসে বসে ব্যাগের জিনিসগুলো নাড়াচাড়া করে দেখতে দেখতে বললেন..

“চাচী নিতে দিলে না কেনো ওকে? ওর পছন্দ হয়েছিলো এগুলো”

” তাই বলে তোর জিনিস ওকে দিয়ে দিবি? এইসব তো শুধুমাত্র তোর জন্যে, তুই এইসব পড়ে বধূবেশে বিয়েতে বসবি”

“আমার এসবের কিছুই চাই না চাচী..কিন্তু ওনারা আমাকে এতকিছু কেনো দিচ্ছেন সেটাই তো বুঝত পারছি না”

“ওসব নিয়ে তোর এতো ভাবতে হবে না, ওনাদের তো ভালোই টাকা পয়সা আছে, দেখবি তোর জীবন আরাম আয়েশে ভরে যাবে আর আমাদেরও দরকার পড়লে সাহায্য করবেন”

আমি হতাশ হলাম চাচীর কথায়, উনি শুধু ওনাদের টাকা দেখছেন, আমার মনের অবস্থা বোঝার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করছেন না..

“চাচী, আমি শুধু তোমাদের কথা ভেবে এই বিয়েতে রাজি হয়েছি, ছেলেটাকে আমি চিনিনা অব্দি কিন্তু তুমি কি ওনাদের সাথে ঠিকমতো কথা বলেছো? সত্যিই বিয়েটা হয়ে গেলে এই বাড়িটা ছেড়ে দেবেন তো ওনারা? পরে আবার কোনো ঝামেলা…

” আরে না বাবা, কথা দিয়েছেন ওনারা আমাকে..তোর বদলে বাড়িটা ফিরিয়ে দেবে আমাদের..তার ওপর এই বিয়ের খরচের টাকাও বলেছেন ওনারাই দেবেন..তোকে ওনাদের ভারী পছন্দ হয়েছে কিনা”

এতক্ষণে বুঝলাম চাচীর এই গদগদ আনন্দের কারণ..ওনার এক টাকাও তো খরচ হচ্ছে না, পরের টাকায় বিদায় করতে পারছেন আমাকে..নিজেকে এমন এক দামী পণ্য মনে হচ্ছে যার বদলে এই বাড়িটা আমার চাচী আবার ফেরত পেয়ে যাবেন..উনি অত্যন্ত খুশি, হবেনাই বা কেনো? ওনার দু দুটো না না তিনটে সমস্যা দূর হচ্ছে..এক তো বাড়িটা বন্ধক থেকে ছাড়াতে পারছেন বিনা টাকায় আর দ্বিতীয়ত আমার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন, তাও আবার ওনার কোনো খরচ ছাড়াই…আমি আর কিছু বলতে চাইনা এসব নিয়ে, নিজের মনকে বুঝিয়ে নিয়েছি যে ভাগ্যে যা আছে তাই হবে..ওদিকে আরমান আজকে বাড়িতেই ছিলো, বাইরে যায়নি..কিছুদিন আগে নিজের অনুরাগীদের কথা দিয়েছিল ফেসবুক লাইভ করবে, সেটাই করলো বিগত ১ ঘণ্টা যাবত.. লাইভ শেষ হতেই সিফাতকে ফোন করেছিলো, খবর পেলো এখনও পুরো খবর জানতে পারেনি, জানলেই এসে জানাবে ওকে..আরমান আর কথা বাড়ায়নি, ফোন কেটে দিয়ে স্টাডি রুম নিজের রুমে চলে যায়, ওয়ার্ডরোব থেকে কিছু বের করার ছিলো, কিন্তু তার বদলে অন্যকিছু নজরে পড়ে যায়..ড্রয়ারের ভেতর এক কোণে থাকা একটা ডাইরি আর হাতঘড়ির বক্সটা দেখে মুচকি হাসে আরমান, হুট করেই মনে পড়ে যায় লাস্ট ইয়ার জন্মদিনে রুহি ওকে এগুলো দিয়েছিলো..

ফ্ল্যাশব্যাক…


আরমানের জন্মদিনের দুদিন পর একটা ইন্টারভিউ ছিলো, দুপুরের পর সেখানে যাওয়ার জন্যে বেরোচ্ছিল ও তখনই রুহির আগমন ঘটেছিলো ওর বাড়িতে..

“আপনি ইন্টারভিউতে যাচ্ছেন?”

“ইয়াহ..! আপাতত তোমার কোনো কাজ নেই এখন, ইউ ক্যান গো..দরকার পড়লে ডেকে নেবো তোমাকে”

উনি কিছুটা তাড়াহুড়োর মধ্যে ছিলেন, যাওয়ার জন্যে পা বাড়াতেই আমি কিছুটা দ্বিধা দ্বন্দ নিয়ে বলে উঠলাম..

“এক মিনিট একটু দাড়াবেন? একটা কথা আই মিন একটা জিনিষ দেবার ছিলো”

থেমে গেলেন উনি, ভ্রু কুচকে ঘুরে তাকালেন আমার দিকে..আমি বামহাতে আমার সাইড ব্যাগের বেল্টটা শক্ত করে মুঠোয় পুরে নিলাম..

“কি দেবে?”

প্রথমে কিছুটা ইতস্তত বোধ করছিলাম দেবো কি দেবো না? আবার এটাও মনে হয়েছিলো ওনার পছন্দ হবে তো? পরে এসব ভাবনা বাদ দিয়ে ব্যাগ থেকে একটা ছোটো বক্স আর একটা কালো রং এর ডায়রি বের করে ওনার হাতে দিলাম..উনি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে..আমি ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে বললাম..

“এগুলো আপনার জন্যে”

“আমার জন্যে..?”

“হুমম..! একটু খুলে দেখুন না পছন্দ হয় কিনা?”

উনি বক্সটা খুলে দেখলো সুন্দর একটা রিস্টওয়াচ, ডিপ কফি কালার ছিলো ঘড়ির বেল্টটা আর ওনার এই রংটা অনেক পছন্দের, আর ডায়রি টা তো এমনিই দিয়েছিলাম..জিনিসগুলো পছন্দ হয়েছিলো ওনার..উনি বাকা একটা হাসি দিয়ে বললেন..

“নাইস..! কিন্তু হঠাৎ এগুলো কেনো?”

আমি এবার কিছুটা বিচলিত বোধ করি, বলবো যে জন্মদিনের গিফট এনেছি তাও দুদিন পর তাহলে তো উনি হাসবেন..

“আরে তুমি চুপ করে থাকলে আমি জানবো কিভাবে যে এগুলো কেনো দেওয়া হলো আমাকে?”

এবার কিছুটা আমতা আমতা করে উত্তর দিয়েই দিলাম.. পরে উনি না হয় যা ভাবার ভাববেন..

“এগুলো আপনার জন্মদিন উপলক্ষ্যে আমার তরফ থেকে সামান্য কিছু উপহার”

কথাটা বলেই ওনার দিকে একটু তাকিয়ে দেখলাম, ওনার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে এখুনি হয়তো হেসে ফেলবেন..আমি এবার চোখ বন্ধ করে বলেই ফেললাম..

“শুভ জন্মদিন স্যার”

ব্যস..! আমার কথা শুনেই হো হো করে হেসে উঠলেন উনি..আমি চোখ খুলে ওনার হাসি দেখে চুপসে গেলাম তবে ওনার এই প্রাণখোলা হাসি দেখে ভালো লাগলো, সচারাচর তো ওনাকে হাসতে দেখার সৌভাগ্য হয় না আমার..অবশ্য আমার কোনো আফসোস নেই, দুদিন বাদে বার্থডে উইশ করছি..ওনার জায়গায় যে কেউ থাকলেই হাসতো..! কয়েক সেকেন্ড পর হাসি কিছুটা থামিয়ে উনি বললেন..

“রুহি, বার্থডে আরো দুদিন আগেই চলে গেছে আর তুমি আজকে আমাকে উইশ করছো, গিফট দিচ্ছো? সিরিয়াসলি?”

উত্তর দিলাম না আমি..উনি আবারও ব্যঙ্গাত্মক স্বরে বলে উঠলেন..

“তুমিই বোধহয় প্রথম যে কিনা বার্থডে বয়কে তার বার্থডে শেষ হবার ৪৮ ঘণ্টা বাদে উইশ করছো”

“আসলে সেদিন আপনাকে দেবার মতো কিছু ছিলো না আমার কাছে, হাতে টাকা ছিলো না, তাই শুভেচ্ছাও জানাইনি..আজকে সকালে সবে বেতন ট্রান্সফার হয়েছে আমার এক্যাউন্টে, দেরী না করে এগুলো কিনলাম..ভাবলাম আজকেই শুভেচ্ছা জানিয়ে দেই”

কথাগুলো বলে ওনার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম, উনিও কিছু সময় চুপ থাকলেন..তারপর হাসি পুরোপুরি থামিয়ে স্বাভাবিকভাবেই বললেন..

“ওয়েল, এগুলো দেবার কিন্তু খুব দরকার ছিলো না..এমনিতেই উইশ করলেই হতো”

আমি কিছুটা উত্তেজিত কণ্ঠে বললাম..

“তা কিভাবে হয়? আপনাকে আপনার ফ্যানরা কিছু না কিছু উপহার দিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, সেগুলো তো নিজের চোখেই দেখেছি.. সেখানে আমি কিভাবে খালি হাতেই শুভেচ্ছা জানাতাম?”

উনি চোখ দুটো ছোটো ছোটো করে দুষ্টু হেসে বললেন..

“ওহ, তারমানে তুমিও আমার ফ্যান..?”

এমন ধারার একটা প্রশ্ন করে বসলেন উনি যে আমি বিপদে পড়ে গেলাম, কি উত্তর দেবো এবার?

” না আসলে, আমার মডেলিং এর ব্যাপারে কোনো ইন্টারেস্ট নেই,”

আমার কথা শুনে উনি যেনো কিছুটা হতাশ হলেন, হয়তো আমার মুখ থেকে অন্য কিছু শুনতে চেয়েছিলেন..

“তাহলে প্রব্লেম কোথায়? আমাকে ওরা গিফট দিয়েছে দিক, তুমি তো আমার ফ্যান না যে গিফট দিয়ে উইশ করতে হবে”

“সে আপনার ফ্যান হই বা না হই, আমার মনে হলো আপনাকে উপহার দেওয়া উচিত তাই দিয়েছি, এমনিতেও দেখুন না আপনার স্ট্যান্ডার্ড এর উপহার আনতে পারিনি”

“স্ট্যান্ডার্ড এর সাথে গিফট এর সম্পর্ক আছে এটা তোমাকে কে বলেছে, কোত্থেকে এরকম কথা শুনেছ?”

কিছুটা ঝাঁঝালো স্বরেই কথাটা বললেন উনি যেটা শুনে আমি বেশ অবাক হলাম..আসলে ওনার হুট করে এমন বলার কারণটা ঠিক ধরতে পারিনি..চুপ রইলাম আমি..উনি আবারও বললেন..

“গিফট জিনিসটা কি সেটা কি আদৌ তুমি জানো রুহি? যদি জানতে তাহলে এই কথাটা বলতে পারতে না..”

এবার আগেরবারের থেকে দ্বিগুণ ঝাঁঝালো স্বরে বললেন যেটা শুনে আমি কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম, কি ভুল বললাম আমি আর উনিই বা রাগ কেনো করছেন? একটু বাদে ছোটো একটা নিঃশ্বাস ফেলে উনি আমাকে বললেন..

“তাকাও আমার দিকে..”

আমি তাকালাম ওনার দিকে, এবার উনি একদম নরম স্বরে বলতে শুরু করলেন..

“ভালোবেসে কেউ কাওকে যদি কিছু দেয় সেটাই গিফট, সেটা হতেও পারে একটা ১০ টাকার রেড রোজ বা ছোটো একটা লেটার অর অ্যা উইশ কার্ড..টাকাটা কিন্তু বড় নয়, গিফটের সাথে যে ভালোবাসা থাকে সেটা বড়..লাখ টাকা দিয়ে গিফট দিলেও তাতে যদি অ্যাফেকশন না থাকে, সেই গিফটের কিন্তু কোনো ভ্যালু নেই”

ওনার কথাগুলো শুনে অবাক হয়ে গেলাম আমি, ওনার ভাবনা যে এমন, ওনার পছন্দ যে এতটা সাদামাটা আর ভাবনাগুলো এত গভীর কোনোদিন বুঝেই উঠতে পারিনি.. মনের মধ্যে কেমন এক ভালো লাগা শুরু হলো..

“আর তোমাকে কে বললো এগুলো আমার পছন্দ হয়নি? আমি কি একবারও বলেছি কিছু হুমম?”

কিছুটা শাসনের সুরে কথাটা বললেন উনি, আমি তখন প্রশ্ন করলাম..

“আপনার সত্যিই পছন্দ হয়েছে এগুলো?”

উনি মুখে মিষ্টি একটা হাসি ঝুলিয়ে বললেন..

“ইয়াহ, আই লাভ দিজ..! অবশ্য আমার ডায়েরি লেখার অভ্যাস নেই, তবে দিয়েছো যখন তোমার গিফট ওয়েস্ট হতে দেবো না”

“জ্বি..!”

“থ্যাংক ইউ সো মাচ, ইটস ভেরী প্রিসিয়াস ফর মি”

সস্তির হাসি হাসলাম আমি, মনটা আনন্দে ভরে উঠলো আমার কারণ ওনাকে খুশি করতে পেরেছি আমি


ফ্ল্যাশব্যাক শেষ…

পুরনো স্মৃতিচারণ করতেই নিজের অজান্তেই হেসে ফেললো আরমান..এরকম আরো ছোটো ছোটো অনেক মুহুর্ত আছে, যেগুলোর ভাবনায় আরমান তখন ডুবে থাকে যখন একা থাকে, কাজের চাপ থাকেনা..একরকম শান্তি লাগে ওর রুহির কথা ভাবলেই

“কিরে ভাইয়া, একা একা হাসছিস কেনো? কি ব্যাপার হুমম?”

ছোটো বোনের কথায় ঘোর ভেঙে যায় আরমানের, ছোটো একটা হাসি দিয়ে ফিরে তাকায় বোনের দিকে..ওর বোন ছুটে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে..আরমানের আদরের ছোটো বোন মিনাল শাহ্..সবে কলেজে উঠেছে আর আজকে ওর নবীনবরণ অনুষ্ঠান ছিলো কলেজে, মাকে সাথে নিয়ে গেছিলো..সেখান থেকেই ফিরলো

“তোর কলেজের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে কেমন এনজয় করলি?”

“খুব ভালো ছিলো রে ভাইয়া প্রোগ্রাম কিন্তু তোর এই মিটিমিটি হাসির কি রহস্য জলদি বল আমাকে”

“আসলে আজ সকালে স্বপ্ন দেখেছিলাম তোর বিয়ে দিয়ে তোকে বিদায় করছি আর তুই ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছিস, সেটা ভেবে হাসছিলাম”

কথাটা বলেই মিনালের গাল টেনে হেসে দেয় আরমান..মিনাল মুখ ভেংচিয়ে বলে…

“আমাকে তাড়ানোর খুব তাড়া তোর তাইনা? দেখবি তোর বিয়ের পরও যাবো না আমি কোথাও, শয়তান ননদ হয়ে তোকে আর তোর বউকে জ্বালাবো যেমন তুই অনেক জ্বালাস”

বোনের সাথে খুনসুটির এক পর্যায়ে বসার ঘর থেকে মিস্টার জুবায়ের শাহ্ মানে আরমানের বাবার ডাক পড়লো..আরমান জানে এখন ওকে লম্বা লেকচার শোনানোর জন্য ডাকছেন উনি..

“ভাইয়া, আজকেও বাবা তোর ক্লাশ নেবে মনে হচ্ছে.. অল দ্যা বেস্ট”

মিনালের কথায় উত্তর না দিয়ে আরমান বসার ঘরে আসে..এরপর শুরু হয় আরমানের বাবার লেকচার, আসলে উনি চান ওনার ছেলে ব্যবসা সামলাক, ছেলের এই মডেলিং এর একদম বিপক্ষে উনি কিন্তু ওনার কথায় আরমানের কোনো হেলদোল নেই..

“এতগুলো কথা যে বললাম তোকে, কি বুঝলি তুই? আমার কথা কি কানে তুলেছিস নাকি এক কানে ঢুকিয়ে আরেক কানে বের করে দিলি?”

“শুনেছি বাবা..”

“দেখ আরমান, আমার তোর কোনো কাজে বাধা দেবার ইচ্ছে নেই কিন্তু তোর এই মডেলিং এর প্রতি এতো প্যাষণ এর কারণ কিন্তু বুঝতে পারিনা আমি”

বাকা হাসে আরমান..

“বাবা তোমার যেমন ব্যবসা করতে ভালো লাগে, বিজনেস তোমার প্যাশন তেমনি আমারও মডেলিং ইস মাই প্যাশন..তাই এটাকেই আমার প্রফেশন হিসেবে নিয়েছি, এখানে দোষের কিছু তো নেই..নিজের ইচ্ছেমত কিছু করার মাঝে তো কোনো অন্যায় নেই আর যদি ব্যবসার কাজে হেলপের দরকার পড়ে তাহলে আমাকে বলো, অফ কোর্স আই উইল হেল্প ইউ”

আরমানের বাবা আর কিছু বললেন না, কারণ উনি জানেন উনি জানেন আরমান ভীষণ জেদি আর ওকে যাই বলা হোক নিজের যুক্তি দিয়ে বাবার সব যুক্তি কেটে দেবে..

চলবে….

[ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন..!!]

#ইস্ক_সুফিয়ানা
#পর্ব – ০৩
#লেখনীতে : #Aloñe_Asha (ছদ্ম নাম)
#Kazi_Meherin_Nesa

মেহেদী রাঙা হাতজোড়ার দিকে তাকিয়ে আছি আমি, গাল বেয়ে সরু হয়ে গড়িয়ে পড়ছে চোখের পানি..চাচীর জোরাজুরি তে একটা হলুদ শাড়ি গায়ে জড়িয়েছি কারণ একটু বাদেই গায়ে হলুদ আর কাল সন্ধ্যায় আমার বিয়ে..জানিনা কেনো তবে খুব কষ্ট হচ্ছে, ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতাম লাল টুকটুকে বউ সেজে বসে থাকবো আমি আর পঙ্খিরাজ ঘোড়ায় চেপে আমার রাজকুমার এসে ঘোড়ায় চাপিয়ে নিয়ে যাবে আমাকে কোনো এক সুন্দর রাজপ্রাসাদে..কিন্তু সে তো শুধু আমার স্বপ্ন হয়েই থেকে গেলো..একটু বাদেই চাচা আমার ঘরে এলেন, অনেক দেখে চোখ মুছে বিছানা থেকে উঠে দাড়ালাম আমি..সূক্ষ্ম একটা হাসি দিলাম

“আমাকে কেমন লাগছে?”

আমার কথায় চাচা অসহায় দৃষ্টিতে তাকালেন, তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে দেন

“খুব সুন্দর লাগছে রে মা, আজকে তোকে দেখে ভাবির কথা মনে পড়ে গেলো”

ঠোঁট চেপে ধরে আমি নিজের কান্না লুকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি কিন্তু পারছি না, আবারও একটু একটু করে অশ্রুধারা বইতে শুরু করলো আমার, চাচা তখন আমার দু হাত জোড় করে দাড়ালেন

“আমাকে ক্ষমা করে দিস মা, তোর চাচী যে কবে বাড়ির পেপারগুলো সিন্দুক থেকে নিয়ে এই কান্ড করেছিলো আমিও জানতে পারিনি,আগে জানলে ওকে আটকাতাম আমি”

সাথে সাথে চাচার হাত নামিয়ে দিলাম আমি

“চাচা এ তুমি কি করছো, আমার সামনে এভাবে হাত জোড় করাটা তোমাকে মানায়না, এরকম করো না”

“না রে মা, আমি তোকে বড় করেছি ঠিকই, তোর দায়িত্ব নিয়েছি কিন্তু আজ যখন সবথেকে বড় দায়িত্ব পালনের সময় এলো, আমি আর পারলাম না”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমি বললাম

“তোমার কোনো ব্যর্থতা নেই চাচা, আর চাচী হয়তো কোনো দরকারেই টাকাগুলো নিয়েছিলো, পরে খোঁজ নিয়ে দেখলে হয়তো জানবে তোমাদের ভালোর জন্যেই..আমার আর কি, একদিন না একদিন তো এই বাড়ি ছেড়ে যেতেই হতো আমাকে”

“এভাবে আমি তোকে বিদায় করতে চাইনি রে, চেয়েছিলাম ধুমধাম করে তোর বিয়ের আয়োজন করবো, একটা ভালো ছেলের হাতে তুলে দেবো তোকে কিন্তু তার কিছুই হলো না”

চাচার বিলাপ শুনে নিজের থেকে বেশি কষ্ট ওনার জন্যে হচ্ছে, চাচী ওনার কথার কোনো দাম দেয়না, উনি আমাকে সাপোর্ট করেন সেটাও সহ্য করতে পারেন না, আমার জন্যে ওনাকেও অনেক কথা শুনতে হয়েছে তাই ওনার এই অসহায় কথাগুলো বুঝতে কষ্ট হয়নি আমার

” আমি ব্যর্থ হয়ে গেছি রে রুহি, ক্ষমা করে দিস আমাকে”

আমি কিছু না বলে চাচাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম, উনিও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করলেন আমাকে, সত্যিই আজ অনুভব হচ্ছে যাদের মা বাবা নেই তাদের মতো দুঃখী আর এই জগতে দুটি নেই তবে নিজেকে এই ভেবেই শান্তনা দিয়েছি আমি তাদের জন্যে এই ত্যাগ করছি যারা আমাকে জীবনের এতগুলো বছর লালন পালন করেছেন..ওদিকে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলেও আরমান কোনো খবর পাচ্ছে না, সিফাত সেই যে গেছে এখনও ফেরেনি, আরমানের ফোন ও ধরছে না বিধায় মারাত্মক রেগে আছে ছেলেটা..সকাল থেকে কম করে দশবার ফোন করেছে কিন্তু সিফাতের ফোন সেই বন্ধ..কিছুটা বিরক্ত হয়ে এবার বিছানার ওপর ফোন ছুড়ে মারে ও

“ড্যাম ইট! ইডিয়টটা কাজের টাইমে ফোন বন্ধ করে রেখেছে কেনো? তাহলে আমি জানবো কিভাবে কি হচ্ছে? তার ওপর এই রুহি ও ফোন বন্ধ করে রেখেছে..বিয়ে বলে ফোন বন্ধ রাখতে হয় নাকি?”

ক্রমশ চিন্তা বেড়ে যাচ্ছে আরমানের, বারবার মনে হচ্ছে মেয়েটা ঠিক আছে তো, ওর বাড়িতে সব ঠিক আছে তো? ওর কোনো গুরুতর সমস্যা হলো না তো? এরকম নানান চিন্তা মাথায় নিয়ে রুমের মধ্যে পায়চারি করছে ছেলেটা..একটু বাদে আবারও ফোন নিয়ে সিফাত আর রুহি দুজনকেই ফোন করে কিন্তু ওপাশ থেকে আবারও উত্তর এলো “সরি, দ্যা ইউ হ্যাভ ডায়ালড ইজ কারেন্টলি সুইচ অফ”..মাথা গরম হয়ে যায় আরমানের

“এই সিফাতকে ১২ ঘণ্টা হলো একটা খবর নিতে পাঠিয়েছি আর তাতে এতো টাইম লাগে? এর থেকে আমি নিজে গেলেই বেটার হতো, যদি সত্যিই কোনো সিরিয়াস ব্যাপার থেকে থাকে তাহলে অ্যাট লিস্ট হেল্প তো করতে পারতাম”

বিকেলে ড্রইং রুমে বসে টিভি দেখছিল আরমান, মিনাল ওর পাশে বসে ভিডিও গেমস খেলছে..আরমানের মা টেবিলে কফি কাপ দেখে বসলেন, কিন্তু উনি দেখলেন টিভির চ্যানেল চেঞ্জ করছে ঠিকই আরমান অন্যদিকে তাকিয়ে কিছু ভাবছে

“কি হয়েছে তোর? খাচ্ছিস না কেনো?”

মায়ের কথা শুনে ধ্যান ভাঙ্গে আরমানের, টিভি বন্ধ করে দিয়ে কফি কাপ হাতে নিয়ে থমথমে গলায় বলে ওঠে

“আমার ম্যানেজার, আই মিন রুহির বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, কালকে এসেছিলো নিউজটা জানাতে, তোমরা বাড়িতে ছিলে না”

আরমানের মা খুশি হয়ে যান খবরটা শুনে কারণ রুহিকে উনি অনেক ভালো জানেন, মিনাল ও অনেক ভালোবাসে ওকে..

“সে কি? কবে ঠিক হলো? বললি না তো কিছু..কবে বিয়ে বল, আমি আর মিনাল না হয় যাবো রুহির বিয়েতে”

“হ্যা ভাইয়া, আমি তো আগে থেকেই ঠিক করেও রেখেছিলাম রুহি আপুর বিয়েতে কি দেবো, কত্তো ভালো রুহি আপু তাইনা মা?”

“সে আর বলতে? মেয়েটা বেশ নম্রভদ্র আর আরমানকেও তো সবসময় সাহায্য করেছে, মেয়েটার এই খুশির দিনে সামিল হবো না আমরা সেটা হয়?”

যেখানে রুহির বিয়ের কথা শুনে নিজে চিন্তায় মরছে সেখানে মা আর বোনের এক্সাইটমেন্ট দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছে আরমান, কিছুটা বিরক্তি নিয়ে ও বলে

“তোমরা এতো এক্সসাইটেড কেনো হচ্ছো ওর বিয়ের কথা শুনে? তাছাড়া ও তো আমাকে ইনভাইট ও করেনি”

মিনাল মুখ ভেংচিয়ে বলে

“তোকে করেনি তাতে আমাদের কি? আমাদের তো আর বলেনি যেতে পারবো না, কিন্তু তোকে এতো ডিস্টার্ব লাগছে কেনো বলতো?”

“তোকে জ্যোতিষগিরি করতে হবে না, চুপ করে বসে থাক”

“এই, কি এখনও কথায় কথায় ঝগড়া করিস তোরা? শান্ত হয়ে থাক..আমি একটু রান্নাঘর থেকে আসছি”

আরমানের মা উঠে গেলেন, তখনই সিফাতের ফোন এলো, আরমান দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে ফোন রিসিভ করে ইশারায় মিনালকে ওখান থেকে যেতে বললো, মিনাল ও আর কথা না বাড়িয়ে উঠে গেলো

“ফোন বন্ধ করে রেখেছিলি কেনো তুই ইডিয়ট? জানিস না আমি ওকে নিয়ে কতোটা চিন্তায় আছি, তোকে কি আমি বলেছি ইনফরমেশন আনতে গিয়ে ফোন বন্ধ করে রাখবি?”

“ব্রো! আমাকে বকাবকি পড়ে করিস আগে পুরো কথা শোন..কেসটা অনেক গুরুতর, আর এই সবকিছুর মুলে আছে রুহির চাচী..ওনার জন্যেই সব হচ্ছে”

সিফাত এর কথায় শান্ত হয় আরমান

“রুহির চাচী ওকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছে?”

“তাই ধরে নে..উনি নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে রুহানির জীবন নষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছে”

“খুলে বল সবকিছু”

সিফাত আরমানকে জানায় সবকিছু, সবশেষে আরমান বুঝতে পারে রুহির চাচী নিজের লোভে বশবর্তী হয়ে ভুল করেছে আর তারই প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ রুহির জীবন শুলে ছড়াচ্ছেন..সবটা শোনার পর কিছুক্ষণ চুপ থাকে আরমান তারপর গম্ভীর স্বরে বলে..

“কালকে বিয়ের আগেই ওই বাড়ির পেপারস যেভাবেই হোক হাতে চাই, রুহিকে যাতে বিয়ে না করতে হয় তার জন্যে বাড়ির পেপারস গুলো দরকার, বুঝেছিস? একটু দেরি হলেই কিন্তু রুহির লাইফ স্পয়েল হয়ে যাবে”

“হোয়াট? একটা অন্য লোকের বাড়ি থেকে রুহির চাচার বাড়ির পেপারস কালেক্ট করা তো ভীষণ রিস্কি ব্যাপার! এসব কেনো করবো আমরা? দেখ ভাই ফেঁসে গেলে কিন্তু বিপদ হয়ে যাবে”

“তুই না পারলে বলে দে, আমি কোনো ওয়েতে কাজটা করিয়ে নেবো কিন্তু করবো..রুহির বিয়ে ওই ছেলের সাথে হতে দেবো না”

সিফাত এর কোনো ইচ্ছেই নেই এসব জড়ানোর, আরমান কেনো এসব ঝামেলায় জড়াতে চাইছে বুঝতে পারছে না ও তবে বন্ধুকে একা ছাড়তে চায় না তাই সাহায্য করতে রাজি হয়ে যায় ও

রাতে অনেক কষ্টে চোখ দুটো জোর করে চেপে ধরে রেখেছিলাম, ঘুম আসছিলো না..অনেক চেষ্টার পর যেই চোখে একটু ঘুম ধরেছে অমনি আমার জানালায় মৃদু ঠকঠক শব্দ শুনতে পেলাম..হকচকিয়ে উঠে বসলাম আমি, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রাত ১২ টার বেশি বাজে দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম, এতো রাতে আমার জানালায় আওয়াজ কিসের? আমার রুমটা আবার পেছনের দিকে বিধায় ওদিকে বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার, বিকেলেই জানালা বন্ধ করে রাখি আমি..আওয়াজটা যেনো থামছেই না, বারবার হচ্ছে, ভয়ে আমি ঢোক গিললাম, মনে মনে ভাবলাম..

“এখন এরকম আওয়াজ কেনো হচ্ছে? ভূত, না না ভুত বলে কিছু হয় না, তাহলে কি চোর এলো? হায় আল্লাহ এ আবার নতুন কোন বিপদে ফেললে তুমি!”

হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে তো কাজ হবেনা, তাই সাহস করে উঠলাম বিছানা থেকে, ঘরে একটা ফুলদানি ছিলো ওইটা হাতে নিয়ে আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে পা টিপে টিপে জানালার কাছে গেলাম, আজকে চোর ব্যটার মাথা এই ফুলদানি দিয়ে ফাটিয়ে দেবো, কিন্তু বন্ধ জানালার সামনে দাড়াতেই আওয়াজটা ভালোভাবে উপলব্ধি করে চমকে উঠলাম..পরপর ৩ বার ঠকঠক হচ্ছে, তারপর একটু থেমে আবারো ৩ বার ঠকঠক হচ্ছে..কম না আবার বেশিও না..হুট করে আমার মনে পড়লো এটা তো আরমান স্যারের স্বভাব! উনিও টেবিলে আঙ্গুল দিয়ে এরকম করে..অনেকদিন ওনার সাথে কাজ করেছি বিধায় ওনার এই স্বভাব সম্পর্কে অবগত,তবুও দ্বিধা ছিলো যে আমার ভাবনা ভুল হতে পারে..আরমান স্যার এতো রাতে এখানে কেনো আসতে যাবে? কিন্তু জানালা খুলে সত্যিই যখন ওনাকে দেখলাম আমার ধারণা সত্যতায় পর্যবসিত হলো, সত্যিই উনি এসেছেন..আমি কাপা কাপা কণ্ঠে বলে উঠলাম

“আ..আরমান স্যার!!”

“এত্তো ঘুম তোমার জানা ছিলো না তো, ঠুকতে ঠুকতে আঙ্গুলের হাড় ব্যাথা হয়ে গেছে আমার”

আমি নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষন ওনার দিকে, বিশ্বাস করতে পারছি না এখনও যে উনি সত্যিই এসেছেন এখানে? কিন্তু কেনো? আমার জানালা একটু ছোটো তবে শিক নেই, উনি জানালা টপকে আমার রুমের মধ্য চলে এলেন, এবার আরো ঘাবড়ে গেলাম আমি..জলদি গিয়ে আমার রুমের দরজা বন্ধ করে দিলাম, কেউ দেখে ফেললে তো বিপদ! উনি আমার বালিশের পাশে থাকা ফোনটা হাতে তুলে অন করে দিলেন! আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে

“ফোন নিজের কাছে রেখে দিয়েছো তাও আবার বন্ধ করে,? দুদিন ধরে ফোন করছি, বন্ধ করে রেখেছো কেনো তুমি?”

আমি কিছু ভীতসতস্ত হয়ে আলতো করে ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে বলে উঠলাম..

“আ..আপনি এতো রাতে এখানে কি করছেন? আর সোজা আমার রুমে ঢুকে এলেন? চলে যান প্লিজ!”

আমার কথায় উনি ভ্রু কুঁচকে তাকালেন, তারপর বাঁকা একটা হাসি দিয়ে হুডির পকেটে দু হাত গুজে আমার রুমের মধ্য দুটো চক্কর দিলেন!

“কি করছেন আপনি? যেতে বললাম তো!”

“একদিন হলো জব ছেড়ে এসেছো আর এখনি এতো অসম্মান করছো? বস ছিলাম আমি তোমার, ডোন্ট ফরগেট দ্যাট!”

আমি উত্তর দিলাম না, উনি রুমটা দেখে বললেন

“নাইস রুম!! একচুয়ালী এতদিন ধরে তুমি আমার বাড়িতে যাওয়া আসা করছো কিন্তু একবারও আমাকে নিজের বাড়িতে আসতে বলনি, ইন ফ্যাক্ট বিয়েতে অব্দি ইনভাইট করলে না তাই নিজেই দেখতে চলে এলাম”

অন্ধকারে উনি আমার রুমের কি দেখলেন কে জানে? তবে সেসব জানার ইচ্ছে নেই আমার

“আপনি দয়া করে যান এখান থেকে”

“আমি তো অচেনা কেউ নই, এতদিন ধরে চেনো আমাকে তারপরও এতো ভয় কেনো?”

“চেনাজানা বড় কথা নয়, কালকে আমার বিয়ে আর আজকে যদি এখানে আমাকে আপনার সাথে কেউ দেখে ফেলে তাহলে আপনার তো ক্ষতি হবে না, তবে আমার বদনাম রটে যাবে”

উনি এবার এসে আমার মুখোমুখি দাড়ালেন, আমার দিকে কিছুটা ঝুকলেন

“তোমার কি মনে হয় রাত ১২.১০ এ এই এলাকার কেউ জেগে বসে আছে আমি তোমার বাড়ি এসেছি সেটা দেখার জন্যে?”

আমি একটু পিছিয়ে এলাম, তারপর ওনার চোখে চোখ রেখেই থমথমে গলায় বললাম

“অঘটন কিন্তু অসময়েই ঘটে”

আমার কথায় উনি সরু একটা হাসি দিলেন, জানালা খোলা থাকায় সেই হাসিটার আবছা অবয়ব আমার নজরে পড়েছে, ওনার দিক থেকে চোখ সরিয়ে জানালার কাছে এসে দাড়ালাম আমি

“ফিরে যান, আর আমার যা বলার কালকেই বলে এসেছি, এর বাইরে কিছু জিজ্ঞাসা করলে আমি উত্তর দেবো না”

“কিছু জিজ্ঞাসা করতে আসিনি, জাস্ট ইনফর্ম করতে এসেছি বিয়েটা কালকে তুমি করছ না”

চমকে উঠলাম আমি, উনি টুপ করে কথাটা বলেই জানলা টপকে আবার বাইরে বেরিয়ে এলেন আমার রুম থেকে, আমি হন্তদন্ত হয়ে বলে উঠলাম

“বিয়ে করবো না মানে? দেখুন, এটা সম্পূর্ণ আমার নিজস্ব ও ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, এখানে আপনার কিছু বলার অধিকার আছে বলে আমার মনে হয় না”

“কারো ভালোর জন্যে কিছু করতে অধিকারের দরকার পড়ে না, আর আমিও কোনো অধিকার নিয়ে তোমার ভালো করতে চাইছি না”

“বিয়েটা না হলে কি ভালো হবে আমার? আমার পরিবারের ক্ষতি হবে তাতে, আর সেটা আমারও ক্ষতি! আপনি দয়া করে এসব বিষয়ে নাক গলাবেন না”

“আমি সেটাই করি যেটা আমার মন চায় আর যেটা ঠিক, এবারও একটা ভুলকে ঠিক করবো আমি তুমি চাও বা না চাও..কালকে তোমার বিয়ে হচ্ছে না সেটা ভালোভাবে মাথায় ঢুকিয়ে নাও”

তারপর উনি হুট করেই চলে গেলেন, রাত হওয়ায় আমি যে জোরে ডেকে ওনাকে জিজ্ঞাসা করবো সেটাও করতে পারলাম না..আমাকে এত্তোগুলো প্রশ্নের মুখে ফেলে যেনো রীতিমত উধাও হয়ে গেলেন উনি..ইতিমধ্য ওনার কথাগুলো বারবার মাথায় ঘুরতে শুরু করেছে, চিন্তা আর ভয় ঘিরে ধরেছে আমাকে.. কালকে উনি কি এমন করবেন যাতে বিয়েটা হবেনা?

চলবে..

#ইস্ক_সুফিয়ানা
#বোনাস_পর্ব
#লেখনীতে : #Aloñe_Asha (ছদ্ম নাম)
#Kazi_Meherin_Nesa

গত রাতের আরমান স্যার ওই কথাগুলো বলে যাওয়ার পর এক মুহূর্তের জন্যেও শান্তিতে বসতে পারিনি আমি, ভীষন চিন্তা হচ্ছে, উনি কি এমন করবেন যাতে বিয়েটা হবেনা আর কেনোই বা উনি আমার ব্যাপারে এতো ইন্টারফেয়ার করছেন? নাহ! ভাবতে পারছি না আর..দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে, এখনও অব্দি সব ঠিকঠাক আছে তবুও শান্ত হয়ে বসতে পারছি না আমি, জানিনা কি করতে চলেছেন উনি..ভাবলাম একটা ফোন করি ওনাকে, ফোনটা হাতে তুলেছি তখনই আমার বান্ধবী তুলি এলো

“রুহি চল! তোকে সাজাতে পার্লার থেকে মেয়েরা চলে এসেছে, তৈরি হয়ে নিতে হবে এবার”

“হ্যা তুই যা আমার একটা ফোন করার আছে, করেই আসছি”

তুলি আমার থেকে ফোন নিয়ে বিছানার ওপর রেখে আমার হাতটা ধরলো

“ফোনে যা কাজ করার আছে সব বিয়ের পর করবি, এখন চল তো নাহলে দেরি হয়ে যাবে..চাচী তাড়া দিচ্ছে”

“তুলি, দুমিনিট সময় দে এই ফোনটা করা অনেক জরুরী”

“তোর বিয়ের থেকে তো আর জরুরি নয় তাইনা? তাছাড়া তুই তো চাকরি ও ছেড়ে দিয়েছিস বিশেষ আর কোনো দরকার তো নেই ফোন করার তাইনা? চল চল”

আমার কথা তোয়াক্কা না করে তুলি টেনে নিয়ে গেলো, আমার আর আরমান স্যারের সাথে কথা বলা হলো না.. ওদিকে আরমানের বাবা সবে অফিস থেকে ফিরলো, মিসেস শাহ্ পানি এনে দেন ওনাকে, মিনাল ও মায়ের সাথেই দাড়িয়ে আছে

“কলেজে কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো তোর? পড়াশুনা ঠিকঠাক চলছে তো?”

“ইয়েস বাবা এভরিথিং ইজ পারফেক্ট”

“গুড, মন দিয়ে পড়বি যাতে ভালো রেজাল্ট করতে পারিস..ইন্টারে ভালো রেজাল্ট করলে তোর থাইল্যান্ড ট্যুরের ইচ্ছা পূরণ করবো, মনে আছে তো?”

“অবশ্যই মনে আছে, এন্ড আই প্রমিজ রেজাল্ট খুব ভালো হবে আমার”

মিস্টার শাহ্ সোফা থেকে উঠে দাড়িয়ে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন, তারপর মিসেস শাহ্ কে উদ্দেশ্য করে বললেন

“আচ্ছা শোনো আজকে একটা বিজনেস পার্টি আছে, ভাবছি আরমানকে নিয়ে যাবো, সন্ধ্যায় তৈরি থাকতে বলো ওকে”

“কিন্তু ও তো সকালেই বেরিয়ে গেছে তারপর আর বাড়ি আসেনি, কখন ফিরবে বলেও যায়নি”

“সেদিন তোমার ছেলে কতো বড় বড় কথা বললো, যখন আমার ওকে দরকার পড়বে তখনই নাকি ওকে পাবো.. কই? আজকে ওকে দরকার আর ও তো নেই”

“আরমানও তো ব্যস্ত থাকে, হয়তো কোনো কাজে বাইরে গেছে..এমনিতে তো আমাকে বলে যায় আজকে বলেনি কিছু”

“জানিনা আমার এই বিজনেস ছেলেটার আদৌ সামলানোর ইচ্ছা আছে কি না, যাই হোক আমি ওকে ফোন করে বলে দেবো”

মিসেস শাহ্ আর কিছু বললেন না,কথা শেষে মিস্টার শাহ্ ওপরে চলে যান..সন্ধ্যায় পার্টিতে যাবে বলে অফিস থেকে বিকেলেই ফিরে এসেছেন, উনি যাওয়ার পরপরই মিনাল ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বলে

“আমার কেমন ডাউট হচ্ছে, ভাইয়া আবার রুহি আপুর বিয়েতে যায়নি তো? আজকেই তো বিয়ে ছিলো তাইনা মা?”

“ওখানে কেনো যেতে হবে? দেখলি না গতকাল রুহির বিয়ের কথা তুলতেই কেমন রেগে গেলো? অন্যকোথাও গেছে হয়তো ওর কাজে”

দুষ্টু হাসি দিয়ে দু হাতে মায়ের গাল আলতো করে টেনে দেয় মিনাল

“উফ! আমার ইনোসেন্ট মা, তুমি শুধু তোমার ছেলের বাহ্যিক রাগটাই দেখলে? তার পেছনে লুকিয়ে থাকা গভীর রহস্য তোমার নজরে পড়লো না?”

“এখানে আবার রহস্যের কি আছে?”

“আছে আছে, আমি যেটা বুঝতে পারছি সেটা তুমি পারছো না, অনেক বড় ঘাপলা আছে এখানে”

মেয়ের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলো না মিসেস শাহ্ তবে মিনাল আরমানের যেকোনো ব্যাপার খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করে, আর এই রুহির ব্যাপারটাও ওর নজর এড়াতে পারেনি

লাল বেনারসিতে বধূবেশে তৈরি হয়েছি আমি, খবর পেলাম আমার বরের বাড়ির মানুষ নাকি এক – দেড় ঘন্টার মধ্যে চলে আসবেন..এদিকে আমি এখনও চিন্তামুক্ত হতে পারিনি, আরমান স্যারকে ফোন করেছিলাম কিন্তু উনি ধরলেন না..গতকাল দুদিন আমার ফোন বন্ধ ছিলো কিনা, হয়তো আজ তার শোধ তুলছেন..ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেললাম আমি ওদিকে আরমান আর সিফাত হাজির হয়ে গেছে বিয়ে বাড়িতে, সিফাত নরমালি এসেছে, ওকে দেখলে সেভাবে সমস্যা হবেনা কিন্তু আরমান এখুনি কারো সম্মুখে আসতে চায় না, কারণ ও জানে মিডিয়ার লোকেরা কেমন, রুহির বিয়েটা ভেঙে যাওয়ার সময় ও এখানে উপস্থিত আছে জানলে সবাই ওর সাথে রুহির নাম জড়িয়ে ভুলভাল নিউজ করবে আর সেটা আরমান একেবারেই চায় না, তাই ন্যাভি ব্লু হুডি পড়ে একেবারে মাথা ঢেকে এসেছে, মুখেও কালো মাস্ক, এভাবে দেখলে কেউ হুট করেই চিনবে না যে ও আরমান শাহ্ বা রুহির বস্!

“ব্রো, আরেকবার ভেবে দেখ! বাড়ির পেপারস না হয় তুই ওই বাড়ির কাজের লোককে টাকা খাইয়ে চুরি করিয়ে আনিয়েছিস..এরপর যদি কোনো ঝামেলা হয়?”

“ঝামেলা হওয়ার হলে না এই পেপার আমাদের হাতেই আসতো না, ওই লোকটা নিজের বাড়ির মধ্যে পেপারস রেখে দিয়েছিলো বলে পেয়েছি নাহলে পেতাম? চুপ থাক এখন”

ওরা ভেতরে ঢোকে, বাড়িতে মোটামুটি ভালোই আত্মীয় স্বজন এসেছে, তাদের মাঝেই আরমান আর সিফাত মিশে যায়..একসময় সিফাত দেখলো আরমান অন্যদিকে যাচ্ছে

“ওদিকে কোথায় যাচ্ছিস?”

“রুহির ঘরে যাচ্ছি, তুই গিয়ে ওর আঙ্কেলকে খোঁজ, এই বাড়ির পেপারস আমি সরাসরি ওনার হাতেই দিতে চাই”

“ওকে বাট তুই কিভাবে জানলি ওদিকে রুহির ঘর? তুই তো আগে আসিসনি এখানে”

“কে বললো আসিনি? আমি আগেও ঢু মেরেছি এখানে, অবশ্য মিস রুহি আমাকে দুর দুর করে তাড়িয়ে দিয়েছিলো.. এনিওয়ে যা নিজের কাজ কর”

সিফাত অবাক হয়ে যায় আরমানের কথা শুনে, এখানে আগেও এসেছিল আর ওকে বলেনি? মনে মনে কিছুক্ষণ দুঃখ করলো ছেলেটা তারপর গেলো রুহির চাচা কে খুঁজতে ওদিকে আরমান যখন রুহির ঘরের দিকে যাচ্ছিল তখনই ওর চাচীর মুখোমুখি হয়, অচেনা ছেলে দেখে ওর চাচী আটকে দেয়

“এক মিনিট, এই ছেলে তুমি কে? তোমাকে তো আগে দেখিনি”

আরমান দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিয়ে দেয় কারণ আগে থেকেই ও আর সিফাত ঠিক করে রেখেছিলো কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলে কি উত্তর দেবে

“জ্বি আমি..আমি ছেলে আই মিন রাকিবের বাড়ি থেকে এসছি, ভাবির জন্যে ও কিছু গিফট দিয়েছে, তাই আমাকে আগে পাঠিয়ে দিয়েছে ওনাকে দেওয়ার জন্যে”

উপহারের কথা শুনেই রুহির চাচীর চোখমুখ চকচক করে উঠলো, অতি লোভী মানুষের লক্ষণ আর কি, উনি বিশাল একটা হাসি দিয়ে পথ ছেড়ে আরমানের পথ ছেড়ে দাড়ান

“ওহ আচ্ছা উপহার দিয়েছে, বেশ তো! ঐযে শেষের ঘরটা রুহির, যাও ওখানেই আছে”

উপহারের কথা শুনেই রুহির চাচীর চোখমুখ চকচক করে উঠলো, অতি লোভী মানুষের লক্ষণ আর কি, উনি বিশাল একটা হাসি দিয়ে পথ ছেড়ে আরমানের পথ ছেড়ে দাড়ান

“ওহ আচ্ছা উপহার দিয়েছে, বেশ তো! ঐযে শেষের ঘরটা রুহির, যাও ওখানেই আছে”

“আপনি কি একটু খুলে দেখতে চান অ্যান্টি?”

“না না, এখন আর দেখে কি করবো? পরে তো এগুলো আমিই ..”

“জ্বি? কি বললেন?”

“ন..না না কিছুনা বাবা! তুমি যাও! দিয়ে এসো রুহিকে..যাওয়ার সময় না হয় দেখা করে যেও আমার সাথে”

আরমান বেশ বুঝেছে এই মহিলা বেশ লোভী, রুহির বিয়ের গিফট ও নিজে হাতানোর প্ল্যান করছে..এই মহিলাকে তো ও পরে দেখে নেবে..কিন্তু এখন আর সময় নষ্ট না করে ও চলে গেলো রুহির রুমে, ওর সাথে তখন এক বান্ধবী আর চাচাতো বোন ছিলো..রুমে ঢুকতেই আরমানের চোখ আটকে যায় ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে থাকা রুহির দিকে, আয়নার সামনে বসে নিচু হয়ে কিছু একটা ভাবছে মেয়েটা, আর আরমান আয়নায় দেখছে ওকে..কি অপরূপ সুন্দরী লাগছে ওকে!! তুলি এগিয়ে এসে আরমানকে জিজ্ঞাসা করে

“কাকে চাই আপনার?”

ধ্যান ভেঙে যায় আরমানের, হাল্কা কাশি দিয়ে বলে

“আমি ছেলের বাড়ি থেকে এসেছি, একটা ছোট্ট গিফট দেবার ছিলো সেটাই কণেকে দেবার ছিলো”

ওনার কথায় মাথা তুলে তাকালাম, আয়নার দিকে চেয়ে দেখলাম দরজার সামনে একজন লোক দাড়িয়ে আছে..আমি উঠলাম টুল থেকে, তুলি দুষ্টুমি করে বললো

“আচ্ছা? শুধু রুহির জন্যেই পাঠিয়েছে? আমাদের শালীদের জন্যে বুঝি কিছু পাঠায়নি? আমরাও কিন্তু অর্ধেক জিনিসের ভাগীদার”

আরমান ও ওদের তালে তাল মিলিয়ে বলে

“অবশ্যই পাবে, কিন্তু এখন না পরে..তোমরা যদি এখন এখান থেকে যাও তাহলে আমি তোমাদের দুলাভাইকে বলবো তোমাদের জন্যে গিফট পাঠাতে”

“কেনো? আমরা থাকলে কি সমস্যা?”

“আসলে কিছু কথা আছে তোমাদের বোনের সাথে, তাছাড়া গিফট টাও স্পেশাল, কারো সামনে দেওয়া বারণ আছে”

“ওহ আচ্ছা আচ্ছা, রুহি..তোরা তাহলে কথা বল, দেখ দুলাভাই কি গিফট্ পাঠিয়েছে, আমরা বাইরে আছি”

তুলি নয়না কে নিয়ে বেরিয়ে গেলো, আমি বাম হাতে ওড়না ধরে এগিয়ে এলাম ওনার সামনে

“জ্বি বলুন”

“ইউ আর লুকিং ডেডলি বিউটিফুল”

কেমন এক ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন উনি আমার দিকে, প্রথমে ওনাকে ছেলে পক্ষের বন্ধু তালিকার কোনো ছ্যাচড়া ছেলে ভেবে চোখ সরিয়ে নিলাম দিক থেকে, বিরক্তি নিয়ে বললাম

“কি বলবেন জলদি বলুন”

“বলতে বসলে তো রাত ফুরিয়ে যাবে, কিন্তু আমার বলা যে শেষ হবে না”

ভ্রু কুঁচকে তাকালাম আমি, কি বলে চলেছেন উনি এসব? ছেলেদের এ ধরনের কথাবার্তা শুনলেই গা জ্বলে যায় আমার.. নেহাৎ উনি ছেলে পক্ষ থেকে এসেছেন নাহলে আচ্ছা করে ক্লাস নিতাম!

“শুনুন, হেয়ালি মার্কা কথা শোনার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই আমার, যা বলার পরিষ্কার ভাবে বলুন নাহলে দরজা খোলা আছে, যেতে পারেন”

” আহা, এতো ক্রোধিত কেনো হচ্ছো! সবসময় তো অতি সাধারণ রূপে তোমাকে দেখেই মুগ্ধ হয়েছি, কিন্তু আজ এই প্রথম অন্য রুপে দেখছি..কনের সাজে যে তোমাকে এতোটা সুন্দর লাগবে ভাবিনি, একটু প্রশংসা তো করতে দাও..”

স্তব্ধ হয়ে গেলাম আমি, কথাগুলো শুনে নয় বরং ওনার গলার আওয়াজ শুনে.. নাহ! ভুল করিনি আমি, স্বয়ং আমার বস আমার সামনে দাড়িয়ে আছেন, নিমিষেই ভয়ের কালোমেঘে ছেয়ে গেলো আমার মুখ, উনি মাস্ক খুলে তাকালেন, ঠোঁটের কোণে চিরচেনা সেই বাকা হাসি..দেখেই বোঝা যাচ্ছে পুরো আটঘাট বেঁধেই এসেছেন আজকে

“আ..আপনি, আপনি সত্যিই চলে এলেন?”

“এতো অবাক হবার কি আছে? কাল রাতেই তো বলে গেলাম যে বিয়েটা হবেনা, আমি না এলে সেটা কিভাবে হবে? আমাকে তো আসতেই হতো”

“স্যার, আমি জানিনা আপনি কি করতে চাইছেন, আমি অনুরোধ করছি দয়া করে কোনো ঝামেলার সৃষ্টি করবেন না”

“আরে বাবা এত ভয় কেনো পাচ্ছো? আমি কিছুই করবো না, যা করবে সব তোমার চাচাই করবে..আমি শুধু ওনার আঁকাবাঁকা রাস্তাটা ঠিকঠাক করে দেবো আর কি”

ঠোঁট আকড়ে দাড়িয়ে আছি আমি, ওনার মুখে কেমন এক খুশির চমক দেখা যাচ্ছে, বিয়েটা যে আজ ভাঙিয়ে ছাড়বে ভালোই বোঝা যাচ্ছে, আমার হুস উড়ে যাওয়া মুখটা দেখে হাসির মাত্রাটা আরেকটু বাড়ালেন উনি, আমার দিকে ঝুঁকে এলেন, আমি পেছনে সরে যাচ্ছিলাম উনি আমাকে দু হাতে ধরে যে জায়গায় ছিলাম ওখানেই দাড় করিয়ে দিলেন, আজ কেনো যেনো ওনাকে একটু ভয় লাগছে আমার..উনি ঝুঁকে আমার কানের কাছে মুখটা এনে ফিসফিসিয়ে বললেন

“তুমি তো অনেক জেদী মেয়ে, কালকে এতবার বলে গেলাম তারপরো বিয়ের সাজে তৈরি হয়ে বসে আছো? বিয়ের জন্যে এতো তাড়া তোমার?”

নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে আমার, উনি কি করতে চাইছেন কি বোঝাতে চাইছেন সব আমার মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে, উনি ওইভাবেই আবার বলে উঠলেন

“এতো সহজেই হার মানবে না তুমি বুঝেছো? আর ওই ছেলেকে তো একদমই বিয়ে করবে না, শুধু ওই ছেলে কেনো কাউকেই বিয়ে করবে না..যদি করো এভাবেই একটা না একটা ওয়ে বের করে ভেঙে দেবো বিয়ে”

ওনার বলা প্রত্যেকটা কথা আজ অন্যান্য দিনের তুলনায় সম্পূর্ন আলাদা লাগছে, কেমন যেনো অন্যরকম! আচ্ছা লোকটার মধ্যে আবার দ্বৈত সত্তার আবির্ভাব ঘটলো নাকি? দুইদিন আগে একরকম ছিলেন আজকে আবার সম্পূর্ন অন্যরকম, কি হলো ওনার কে জানে..এতোক্ষণ এক ঘোরের মধ্যে ছিলাম তারমধ্যে উনি আরেক ঝটকা দিলেন..আলতো করে নিজের গালটা আমার গালে ছুইয়ে দিলেন, শাড়ি মুঠোয় চেপে ধরে কেপে উঠলাম আমি, দু কদম পিছিয়ে গিয়ে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে রেগে বলে উঠলাম

“কি করছেন আপনি এসব! দূরত্ব বজায় রাখুন.. পরিচিত বলেই আপনি একটা মেয়ের কাছে তার বিনা অনুমতিতে এভাবে আসতে পারেন না”

“কিন্তু আমি যখন তোমার কাছে এলাম, তুমি তো না করলে না আমাকে, এখন রাগ দেখিয়ে লাভ কি”

ওনার কথায় বোকা বনে গেলাম আমি, সত্যিই তো আমি ওনাকে বাধা দিলাম না..আমার উচিত ছিলো ওনাকে একটা শিক্ষা দেওয়া কিন্তু সেটা করতে পারলাম না..কেনো?

“দেখুন আপনাকে আমি যথেষ্ট সম্মান করি! দয়া করে এমন কাজ করবেন না যাতে সেটা শেষ হয়ে যায়”

“আমি এমন কিছুই করবো না যাতে তুমি আমাকে হেইট করো, এই বিষয়ে টেনশন ফ্রি থাকতে পারো”

আমি ওনার কথার প্রতিউত্তরে বলতে যাচ্ছিলাম কিছু তখনই উনি পকেট থেকে একটা খাম বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন.. খামটা চিনতে আমার খুব একটা সমস্যা হয়নি

“এটা তো আমার রেজিগ্নেশন লেটার, ফেরত কেনো দিচ্ছেন?”

“জব কন্টিনিউ করা অবস্থায় এটা দেওয়ার কোনো মানেই হয় না”

“কিন্তু আমি তো..

“আগামীকাল থেকে ঠিক সময়মতো নিজের ওয়ার্ক প্লেসে পৌঁছে যাবে, ২ দিনের কাজ পেন্ডিং আছে..সব করাবো তোমাকে দিয়ে, মাইন্ড ইট”

উনি চলে যাচ্ছেন, আমি ফ্যালফ্যাল করে একবার ওনার দিকে তাকাচ্ছি আরেকবার রিজাইন লেটারের দিকে..ভেবে কোনো উত্তরই পাচ্ছিনা লোকটা কি করতে চাইছে? কেনো করছে এসব? আমার ভাবনার মাঝেই উনি ঘুরে আমার দিকে তাকিয়ে একটু এগিয়ে এসে বললেন

“আরেকটা কথা, রুহি তুমি এই বাড়ির কথা, বাড়ির মানুষের কথা না ভেবে নিজের কথা ভাবো.. তুমি নিজেই শুধু নিজের আপন, বাকিদের জন্যে যতোই করো দিনশেষে তারাই তোমাকে ধোঁকা দেবে কিন্তু তুমি নিজে নিজেকে কখনো ধোঁকা দিতে পারবে না, মনে রেখো কথাটা”

কথাটা বলে আর এক মুহুর্ত দাড়াননি উনি, চলে গেলেন..আমিও আর জিজ্ঞাসা করে উঠতে পারলাম না যে ওনার মাথায় এই বিয়ে ভাঙার ব্যাপারে কি চলছে? তবে সত্যি বলতে ভালো লাগলো কথাগুলো শুনে, সবাই তো শেখায় পরিবারের জন্যে বাঁচার জন্যে, তাদের নিয়ে ভাবার জন্যে কিন্তু কজনই বা নিজেকে নিয়ে ভাবার আর বাঁচার ইন্সপিরিশন দেয়? আজ প্রথমবার যেনো মনে হলো আমার জন্যেও হয়তো কেউ আছে যে একটু হলেও ভাবে আমাকে নিয়ে আর আজকের পর সেই একজন নিঃসন্দেহে আরমান স্যার!

চলবে….

[আরমানের বোনের “মিনাল” নামটা ছেলেদের বলে মন্তব্য করা হয়েছিলো, তবে আমি এটা ক্লিয়ার করে দেই যে মিনাল নামটা ছেলে মেয়ে উভয়েই আছে ইভেন উর্দুতেও ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের ক্ষেত্রেই এই নাম বেশি ইউজ করা হয় তো,আশা করি এবার নামটা নিয়ে সমস্যা থাকবে না..! ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন..!!]