উপন্যাসের সারাংশ প্রহর পর্ব-০৬

0
270

#উপন্যাসের_সারাংশ_প্রহর [৬]
#sadiya_jannat_sormi (লেখিকা)

কেবিন থেকে বের হয়ে মেঘা একটা আই সি ইউ এর সামনে লিরা কে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়ে গেল। লিরা হসপিটালে কেন, ওর কিছু হয়েছে না কি আবার তা জানার জন্য লিরার দিকে মেঘা আর অহনা দু’জনেই এগিয়ে গেল।মেঘা শান্ত কন্ঠে লিরা কে জিজ্ঞেস করল,,,,,

লিরা কি হয়েছে তোমার? তুমি হসপিটালে কেন, শরীর খারাপ তোমার?
লিরা মাথা নিচু করে বিশ্রাম চেয়ারে বসে ছিল,মেঘার কথা শুনে ভেজা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো। তারপর হঠাৎই মেঘা কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করল লিরা।ওর এমন হঠাৎ করে কান্না করার ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারলো না মেঘা আর অহনা,তাই অহনা বলল,,,,,

এই লিরা, তুই শুধু শুধু কাদছিস কেন? কি হয়েছে বল আমাদের।

আমার বাবার এক্সিডেন্ট হয়েছে অহনা।ডক্টর বলেছে তিনি আর বেশি দিন বাঁচবেন না, এক্সিডেন্ট এ মারাত্মক ভাবে আহত হয়েছেন তিনি, প্রচুর পরিমাণে রক্ত বেরিয়ে গেছে ওনার। বেঁচে থাকার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত ওনার শরীরে নেই, কমপক্ষে চার ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন কিন্তু আমি এতো রক্ত কোথায় পাব? বাবার ব্লাড গ্রুপ এ নেগেটিভ আর আমার বি পজিটিভ, আমি ও তো ওনাকে রক্ত দিতে পারবো না।(লিরা)
লিরার কথা শুনে অহনা হুট করে বলে উঠলো, মেঘুর ব্লাড গ্রুপ এ নেগেটিভ।মেঘু তুই দিবি আঙ্কেল কে দুই ব্যাগ রক্ত?

হুম দিবো। একজনের বিপদে আরেক জনের এগিয়ে আসা টা আমাদের দায়িত্ব।চলো লিরা,ডক্টরের সাথে কথা বলি।(মেঘা)
লিরা চোখ মুছে মেঘা কে নিয়ে ডক্টরের কাছে গেল,মেঘা যাওয়ার সময় ওর রিপোর্ট টা অহনার হাতে দিয়ে বলল এই রিপোর্ট টা তোর কাছে রাখ, আমি রক্ত দিয়ে আসছি। ওরা চলে যাওয়ার পর পরই ইশতিয়াক এইদিকে ই এগিয়ে আসছিল।লাবীব রহমানের রিপোর্ট টার জন্য এতক্ষণ ধরে বসেছিল ও,আর ডক্টরের নার্স টা বলছে সে নাকি রিপোর্ট টা আই সি ইউ এর সামনে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ওর কাছে দিয়ে দিয়েছে। এখানে এসে দেখে সত্যিই একটা মেয়ে রিপোর্ট এর মতো কিছু একটা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে, তাই ও অহনার কাছে এসে বললো,, তোমার হাতের রিপোর্ট টা আমাকে দাও তো, এতোক্ষণ ধরে আমি রিপোর্টের জন্য ওয়েট করছি আর সে তোমার হাতে রিপোর্ট তুলে দিয়েছে।

ইশতিয়াকের কথা শুনে অহনা ভাবলো মেঘু হয়তো এই ছেলেটা কে ওর রিপোর্ট টা দিতে চেয়েছিলো কিন্তু লিরার জন্য আর দেওয়া হয়ে উঠলো না।তাই ও বিনা বাক্য ব্যয়ে ইশতিয়াকের হাতে মেঘার রিপোর্ট টা তুলে দিলো সাথে রিপোর্টের ভিতরে থাকা একরাশ ভালোবাসা নিয়ে লিখা মাহদীর চিরকুট টাও। ইশতিয়াক রিপোর্ট টা নিয়ে ওখান থেকে চলে গেল,যাওয়ার সময় মুচকি হেসে বলল থ্যাংকস এ লট। অহনা ইশতিয়াকের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল, ওর এই হাসিতেই ও ফিদা হয়ে গেছে। গালে হাত দিয়ে অহনা ওখানে বসে পড়ল, মনে মনে নেচে উঠছে বারবার।হাসি হাসি মুখ করে ওদের ফিরে আসার অপেক্ষা করতে লাগলো অহনা।

🍁

বাসায় এসে কাউচে বসে ইশতিয়াক রিপোর্ট টা দেখতে বসলো। যদিও এই রিপোর্টের আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারবে না সে তার পরেও মনের শান্তির জন্য দেখা আর কি। রিপোর্টে একটা পাতা উল্টিয়ে দেখতেই একটা ছোট্ট চিরকুট নিচে পড়ে গেল, চিরকুট টা দেখে ইশতিয়াক অবাক হয়ে গেল। চিরকুট টা হাতে তুলে নেওয়ার সময় রিপোর্ট টা কার সেটা যেখানে লিখা থাকে সেখানে চোখ পড়ল ওর।দেখে রিপোর্ট টা লাবীব রহমানের নয় বরং মেঘা নামে কোনো একটা মেয়ের,ও কি তাহলে অন্য কারো রিপোর্ট নিয়ে চলে এসেছে এটা ভাবতেই ও জীভে কামড় দিয়ে বসলো। একবার জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল মেয়েটাকে যে এই রিপোর্ট টা আসলে লাবীব রহমানের ছিলো কি না? কিন্তু এখন তো যা হবার তা হয়েই গেছে, ভেবে কি হবে আর।তার চেয়ে বরং এই চিরকুট টাতে কি আছে সেটা দেখা যাক, ইশতিয়াক চিরকুট টা খুলে পড়তে শুরু করলো।

কি ভাবছো তুমি, চিরকুট টা হাতে পেয়ে বুঝি তুমি অবাক হয়ে গেছো তাই না? জানি অবাক হয়ে যাবে তুমি, অবাক হবার কথাই তো। রিপোর্টের ভিতরে একটা চিরকুট ভাবা যায় কি ব্যাপার টা বলো তো? আসলে এই রিপোর্ট টা শুধু মাত্র একটা বাহানা ছিল প্রিয়, আমার মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে তোমাকে এই চিরকুট টা দেওয়ার। মুখে তো তোমাকে বলতে পারবো না যে আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি,কারণ তোমার যেই মেজাজ। আমার কথা শুনে তুমি হয়তো আমাকে থা’প্প’র মেরে বসতে তাই এই বাহানা করে চিরকুটের সাহায্য নিয়ে বলতে হলো।

প্রিয়, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি খুব। জানি না তোমার প্রেমে কি করে পড়ে গেলাম আমি, এতো তাড়াতাড়ি যে কেউ কারো প্রেমে পড়তে পারে সেটা আমি বুঝতে পারতাম না যদি আমি তোমার প্রেমে না পড়তাম। তোমাকে আমি পাগলের মতো ভালোবাসি প্রিয়,হ্যা তুমি বলতেই পারো এটা আমার আবেগ। কিন্তু বিশ্বাস করো এটা আমার আবেগ নয়, এটা আমার ভালোবাসা। আবেগে পড়লে মানুষ কাউকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখে না, সবসময় তার কথা ভাবে না।তার রাগ দেখে সে খুশি হয় না,তাকে রাগাতে ভালোবাসে না, এমন টা শুধু মাত্র কেউ সত্যি ই ভালোবাসলে করে। পয়েন্ট হচ্ছে যে তুমি বলবে আমি তোমাকে আবার কখন রাগিয়েছি, এবার আমি বলি ভেবে দেখো তুমি একটু হলেও আমার জন্য রেগে গিয়েছিলে। আচ্ছা তুমি এখন আমার কথা ভাবতে থাকো ওকে,টাটা।
আমি ভালো করে গুছিয়ে লিখতে পারি না প্রিয়, কিছু ভুল হয়ে গেলে মুখে একটু হাসির রেখা টেনে ক্ষমা করে দিও, তোমার উত্তরের অপেক্ষায় থাকবো আমি।

🍁

চিরকুট টা দেখে ইশতিয়াকের চোখ কপালে উঠে গেল। এইসব কি লেখা আছে এই চিরকুট টাতে, মেয়ে টা কি ওকে? ভাবতে বসলো ইশতিয়াক, এতো ভালোবাসা নিয়ে মেঘা নামের মেয়েটি ওকে একটা চিরকুট দিয়েছে কিন্তু ও এই মেঘা কেই চিনেনা।কি লজ্জার ব্যাপার একটা, কিন্তু ও যার কাছ থেকে রিপোর্ট টা নিলো সেই কি মেঘা নাকি অন্য কেউ? অন্য কেউ ই হবে হয়তো নাহলে ও যদি ওখানেই রিপোর্ট টা খুলে দেখতো তাহলে তো মেয়েটার বিপদে পড়তে হতো। একটা ব্যাপার তো পরিষ্কার,ও ভুল করে একটা মেয়ের কাছ থেকে ভুল রিপোর্ট নিয়েছে যেটা আসলে ওর জন্যই ছিল।ও না চাইলেও ওকে মেয়েটা রিপোর্ট টা দিতো, এতে ওর কোনো দোষ নেই এই বিষয় টা ইশতিয়াকের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে।

একটু মুচকি হাসি হাসলো ইশতিয়াক, না চাইতেও চিরকুটের ব্যাপার টা নিয়ে ভাবতে ওর ভালো লাগছে। কোনো মেয়ে ওকে লুকিয়ে লুকিয়ে এতো ভালোবাসে এটা ভাবতেই ওর ভালো লাগছে, কিন্তু ও তো জীবনে অনেক মেয়ের জন্য রেগে গেছে, তাদের মধ্যে এটা কোন মেয়ে খুঁজে বের করা টা খুব কষ্টকর হয়ে যাবে। আরেক টা বিষয়, মেয়েটা বললো যে ও খুব তাড়াতাড়ি ওর প্রেমে পড়ে গেছে তার মানে এই দুই তিন দিনের মধ্যে যেই মেয়ের জন্য ও রেগেছে সেই মেয়েটাই ও। হঠাৎ করেই ওর মনে পড়লো, ভার্সিটি তে ও একটা মেয়ের সাথে ওর আধো আধো ঝগড়া হয়েছে, ধাক্কা খাওয়ার পর ও রেগে গিয়েছিলো ওই মেয়েটির উপরে। তাহলে কি ওই মেয়েটাই এই চিরকুট টা দিলো? ইশতিয়াকের মাথায় বিদ্যুতের মতো বুদ্ধি খেলে গেল,ওই মেয়েটাই ওকে চিরকুট টা দিয়েছে কারণ ওই মেয়েটার সাথে ওর হসপিটালে ও দেখা হয়েছে।তার মানে হচ্ছে মেয়ে টা ওকে চিরকুট টা দেওয়ার জন্যই হসপিটালে গিয়েছিল,ও যাতে ওর দিকে খেয়াল করে তার জন্য ওর পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় বিড়বিড় করে কিছু একটা বলেছিল। ওহ শিট, মেয়ে টা তাহলে আমাকে ভালোবাসে?

চলবে ইনশাআল্লাহ