উপন্যাসের সারাংশ প্রহর পর্ব-০১

0
568

#উপন্যাসের_সারাংশ_প্রহর
#পর্ব ১
#sadiya_jannat_sormi (লেখিকা)

রোজ রাতের মতো আজও রাত দুটার দিকে স্ত্রী মেহেরের পাশ থেকে উঠে পড়লো লাবীব।তার জন্য যে অপেক্ষা করছে তার প্রেয়সী,প্রেয়সীর রুমে যাওয়ার জন্য বিছানা থেকে উঠে দরজার দিকে পা বাড়ালো লাবীব।

আমি আজ জেগেই ছিলাম লাবীব কে হাতে নাতে ধরবো বলে।প্রেগনেন্সির নয় মাস চলছে আমার, কিছুদিন ধরে পেটের চিনচিনে ব্যাথার কারনে রাতে ভালো ঘুম হয় না, হালকা একটু আওয়াজ হলেই ঘুম ভেঙ্গে যায়। কয়েক দিন আগে দরজা খুলার শব্দে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার, চোখ খুলে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি আমার স্বামী লাবীব ঠিক চোরের মতো এদিক ওদিক তাকিয়ে আস্তে করে দরজা খুলছে। আমি যে ঘুম থেকে উঠে পড়েছি এটা লাবীব খেয়াল করে নি, দরজা খুলে চুপচাপ বাইরে বেরিয়ে গেল। আমি ব্যাপার টা নিয়ে তেমন কিছু ভাবলাম না, ভাবলাম সে হয়তো সিগারেট খাওয়ার জন্য রুমের বাইরে গেছে। লাবীবের সিগারেট খাওয়ার বাজে অভ্যাস আছে কিন্তু আমি ওকে সিগারেট খেতে দেই না সেই জন্য ও লুকিয়ে লুকিয়ে সিগারেট খায়।এই মাঝরাতেও হয়তো সিগারেট খাওয়ার জন্যই বাইরে গিয়েছে। গেল সেই রাতের কথা, আমি ওই ব্যাপার টাকে একটুও পাত্তা দেই নি কিন্তু পরপর কয়েক রাতেও যখন আমার ঘুম ভাঙ্গে তখন লাবীব কে বিছানায় দেখতে পাই না আমি। একটু খটকা লাগলো আমার, সেই দিন রাতে নাহয় ও সিগারেট খেতে গিয়েছিল কিন্তু প্রতিদিন তো আর সিগারেট খাওয়ার জন্য রুমের বাইরে যাবে না ও।মাঝ রাতে ও রুমের বাইরে কোথায় যায় সেটা জানার জন্য আজ রাতে ঘুমের ভান করে জেগে রইলাম আমি, আস্তে আস্তে রাত বাড়তে লাগলো আমার চোখ একটু লেগে এসেছে মাত্র তখনি দরজা খুলার শব্দ পেলাম। চেয়ে দেখি লাবীব অতি সন্তর্পণে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে গেল। আমিও বিছানা থেকে উঠে পড়লাম,লাবীব রোজ কোথায় যায় সেটা যে আমাকে দেখতেই হবে। আস্তে করে বিছানা থেকে নেমে আমিও রুমের বাইরে বেরিয়ে এলাম, প্রেগনেন্সির কারণে তাড়াতাড়ি হাঁটতে পারি না তাই লাবীব রুম থেকে বের হয়ে কোথায় গেল তার হদিস পেলাম না। এই মাঝরাতে পুরো বাসা অন্ধকারে চুপচাপ হয়ে আছে।আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম, উদ্দেশ্য লাবীবের দেখা যদি পাওয়া যায়। একটু এগিয়ে যাওয়ার পর ছোট জায়ের রুমে আলো জ্বলতে দেখে অনেকটাই অবাক হলাম। আমার রুমের কয়েক রুম পরেই আমার ছোট জা মিথির রুম, এক বছর আগেই আমার ছোট দেবর রোড এক্সিডেন্টে মা’রা গেছে। ছোট দেবর মা’রা যাওয়ার পর ওর বাবার বাসার লোকজন ওকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আসলেও মিথি ওদের সাথে যায় নি।ও নাকি ওর বাকি জীবন টা ওর শশুর বাড়িতে ই কাটাতে চায় এই বলে ওর বাবার বাসার লোকজন কে ফিরিয়ে দিয়েছে। এতো রাতে মিথি রুমে আলো জ্বালিয়ে কি করছে তা দেখার জন্য ওর রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম।ওর রুমের ওখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে শুনতে পেলাম মিথি কাঁদছে, কেন কাঁদছে তা জানার জন্য দরজায় আড়ি পেতে রইলাম।আড়ি পাতা উচিত নয় জানি কিন্তু এই মাঝরাতে মিথি কেন কাঁদছে তা জানার ইচ্ছে হচ্ছে খুব,আড়ি পেতে যা শুনলাম তাতে মনে হলো আমার পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে গেল।মিথি কাঁদতে কাঁদতে বলছে,,,,

আমি প্রেগন্যান্ট লাবীব, তোমার বাচ্চা আমার পেটে। এখন আমি কি করবো বলো? মৃত্যু ছাড়া তো আর কোনো উপায় নেই আমার কাছে,এক বছর আগে যার স্বামী মা’রা গেছে তার প্রেগন্যান্ট হওয়া মানুষ ভালো চোখে নেবে না।

তুমি, তুমি শান্ত হও মিথি। তুমি প্রেগন্যান্ট হয়েছো এতো আনন্দের কথা মিথি তাহলে তুমি এতো কাঁদছ কেন? একবার ভাবো তোমার আর আমার ভালোবাসার চিহ্ন হচ্ছে এই অনাগত সন্তান। তাতে তুমি খুশি না হয়ে কাঁদছো?(লাবীব)

তোমার জ্ঞান বুদ্ধি কি লোপ পেয়েছে লাবীব? আমি একজন বিধবা নারী,সমাজ কি আমার এই অনাগত সন্তান কে মেনে নেবে নাকি?কে দেবে ওর বাবার স্বীকৃতি বলো, এটা যে তোমার সন্তান তারপরেও তুমিই কি দেবে ওর বাবার স্বীকৃতি? তোমার তো নিজের বউ আছে যে কি আর কয়েক দিনের মধ্যেই মা হতে চলেছে।তাকে রেখে তো তুমি আর আমার আর আমার এই অনাগত সন্তানের দায়িত্ব নেবে না।(মিথি)

হুসস,আর একটুও কান্না নয় ওকে? এটা আমার বাচ্চা আর আমিই দেবো তার বাবার পরিচয়,বুঝেছো?(লাবীব)

কিন্তু কিভাবে সম্ভব সেটা? আমি তো তোমার বিয়ে করা বউ নই যে তুমি বলবে এটা তোমার বাচ্চা আর সবাই সেটা মেনে নেবে। তাছাড়াও তোমার বউ সেও তো এটা মেনে নিবে না, উল্টো আমাকেই অপমান করবে। আমি এই বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলবো লাবীব, ওকে আমি পৃথিবীর আলো দেখাতে চাই না।(মিথি)

মিথি তুমি একটু শান্ত হও, তুমি আমার বিয়ে করা বউ নয় বলেই বাচ্চা টা নষ্ট করে ফেলতে চাইছো তাইতো।তো ঠিক আছে, আমি কালকের মধ্যেই তোমাকে বিয়ে করবো তখন তো তোমার আমাদের বাচ্চা টাকে নিয়ে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।(লাবীব)

তুমি বিয়ে করবে আমাকে? তোমার বউ আছে আর সেও প্রেগন্যান্ট লাবীব, তুমি সেটা ভুলে যাচ্ছো কেন?এক বউ থাকা সত্ত্বেও তুমি আমাকে বিয়ে করলে লোকে কি বলবে ভাবতে পারছো একবার?(মিথি)

বউ আছে কিন্তু এক মাস পরে আর তুমি ছাড়া অন্য কোনো মেয়ে আমার বউ হিসেবে থাকবে না।(লাবীব)

মানে, কি বলতে চাইছো তুমি?(মিথি)

মানে এটাই যে আমি মেহের কে ডিভোর্স দিয়ে দেবো আর তোমাকে বিয়ে করবো। তোমাকে আমি সেই কবে থেকেই ভালোবেসেছি কিন্তু পরিস্থিতি আমাকে তোমার থেকে আলাদা করে রেখেছিল এতো দিন।মেহের কে তো আমি কোনোদিন ভালোই বাসিনি, আমি তো ভালোবাসি শুধু তোমাকে।(লাবীব)

ওদের কথাবার্তা শুনে আমার মাথা ঘুরতে লাগলো প্রচুর। আমি মেহের কে ডিভোর্স দিয়ে দেবো এই কথা টা মাথায় বাজতে লাগলো আমার, ওদের আর কোনো কথা আমার কানে এসে পৌঁছালো না,জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লাম আমি।
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমি নিজেকে হাসপাতালে দেখলাম। দাঁড়ানো অবস্থায় মাটিতে পড়ে যাওয়ার কারণে পেটে প্রচণ্ড আঘাত লেগেছিল আমার, দুই সপ্তাহ হাসপাতালে থাকার পর আমার সিজার অপারেশন করে বাচ্চা ডেলিভারি করানো হয়। একটা মেয়ে সন্তান হয়েছে আমার,নার্স যখন আমার মেয়ে টাকে আমার কোলে এনে দিয়েছিল ঠিক তখনই লাবীব এসে আমার হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলল এই কাগজ টায় সই করে দাও তাড়াতাড়ি। কাগজ টার দিকে তাকিয়ে বুঝলাম এটা ডির্ভোসের কাগজ, কাগজ টা দেখে লাবীবের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম আমি। নিজের সন্তান কে দেখেও না দেখার ভান করে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে সে, কোলে আমার সদ্য জন্ম নেয়া মেয়ে আর হাতে স্বামীর দেওয়া ডির্ভোসের কাগজ। ভাগ্য আজ হাসছে আমার উপর, আমাকে আবারো তাড়া দিল লাবীব, কি হলো তাড়াতাড়ি সই টা করো। আমি কোনোরকমে কলম টা ধরে সই করলাম, আমার সই হওয়ার পরপরই লাবীব চলে গেল। আমি আমার মেয়ের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেললাম, জন্ম নেওয়ার সাথে সাথেই বাবা বলে ডাকার সুযোগ হারিয়ে ফেললো আমার মেয়ে টা। এই মেয়ে টা এখন শুধু আমার একার, আমার একার পরিচয়ে বড় হবে আমার মেয়ে।চোখ মুছে নিয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম তোর নাম আমি রাখলাম অনুমেঘা রহমান। তুই এখন শুধু ই আমার একার সন্তান,আর কারো নয়।

মেহের রহমান

____________________________________________________

কি ব্যাপার মেঘা,তুই এখনো রেডি হস নি কেন?আজ ভার্সিটির নবীন বরণ অনুষ্ঠান তুই কি সেটা ভুলে গিয়েছিস না কি বলতো?

বেস্ট ফ্রেন্ড অহনার ডাকে সম্বিত ফিরে এলো মেঘার।চোখ মুছে ডায়েরি টা বন্ধ করে বললো, না ভুলে যাবো কেন? এইতো রেডি হতে যাচ্ছিলাম আমি আর তুই চলে এলি। অহনা মেঘার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, তুই কোথায় রেডি হতে যাচ্ছিলি? আমি তো নিজের চোখে দেখলাম তুই কিছু একটা পড়ছিলি।কি পড়ছিলি দেখা তো,বলেই অহনা মেঘার হাত থেকে ছো মেরে ডায়েরি টা নিয়ে নিলো।ডায়েরি টার দিকে তাকিয়ে বলল তুই আবার আন্টির ডায়েরি পড়তে বসেছিলি তাই না?

চলবে।