উমা পর্ব-১৭+১৮

0
356

#উমা [কপি করা নিষেধ]
#১৭তম_পর্ব

পরমুহূর্তেই চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো তার। শক্ত হাতে অভিনব সিংহের হাত সরিয়ে নিলো। তারপর তার চোখে চোখ রেখে বললো,
“সম্মান করি বলে আমাকে গোলাম ভেবো না। ভুলে যেও না এই রুদ্র সিংহ বাদে অভিনব সিংহ কিছুই না। সকল দৈত্যের একটা জানপাখি থাকে, পাখিকে টিপ দিলেই দৈত্যের পরাণ ফুর”

অভিনব সিংহের চোখে কালো ভয়ের ক্ষীন মেঘ জমলো। আতঙ্কিত কন্ঠে বললো,
“তুমি কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছো?”
“ভয় পাওয়া না পাওয়া আপনার ব্যাপার। আমি সত্যিটা বললাম। আর একটা কথা, আমার জীবনের সিদ্ধান্ত আমি নেবো আপনি নয়৷ আমার যদি কাউকে মাটিত গাড়তে ইচ্ছে হয় আমি গাড়বো। যদি বাঁচাতে ইচ্ছে করে তবে বাঁচাবো। বাবা, বাবার মতো থাকুন। এর পর থেকে আমার উপর কোনো হুকুম জারি করতে আসবেন না, নয়তো ওই কাস্টমস অফিসারের মতো আপনার হাল হতেও দু মিনিট লাগবে না”

দাঁতে দাঁত পিষে ধীর স্বরে কথাটা বললো রুদ্র। দৃষ্টি স্থির, দৃঢ়। অভিনব সিংহের পা নড়বড়ে। পুত্রের এমন পরিবর্তন যেনো হজম হচ্ছে না। যে ঘোড়ার লাগাম শুধু তার হাতে ছিলো আজ সেই ঘোড়া লাগাম ছাড়া হতে ছাড়া। লাগাম ছাড়া ঘোড়া যে কতটা মারাত্মক হতে পারে সেই ধারণা তার আছে। রুদ্র বহমান নদী কখনোই ছিলো না, সে ছিলো আগ্নেয়গিরির লাভা। অভিনব সিংহ নিজের স্বার্থপূ্তির জন্য এতকাল এই লাভাকে ব্যাবহার করে এসেছেন। কিন্তু আজ সেই আগ্নেগিরির লাভা তার বিরুদ্ধেই প্রবল বেগে প্রবাহ হচ্ছে। একবার স্পর্শ করলেই সম্পূর্ণ জ্বালিয়ে দিতে সক্ষম। রুদ্র অভিনব সিংহের ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। অভিনব সিংহ ধপ করে বসে পড়লেন। শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল রক্ত বয়ে গেলো। কপালে ঘাম জমছে। নিজেকে ধাতস্থ করতে সময় লাগলো কিন্ত হেরে যাবার পাত্র তিনিও নন। রুদ্র ঠিক ই বলেছে প্রতিটি দৈত্যের একটি প্রানপাখি থাকে। সেই প্রানপাখির গলা টিপলেই দৈত্যের পরাণ ফুরুত। আর রুদ্রের প্রানপাখি হলো উমা। মাথার চুল রোদে পাকে নি অভিনব সিংহের। কুকুরের লেজ সোজা কিভাবে করতে হয় তার খুব ভালো ভাবেই জানা। মুখে বিকৃত হাসি ফুটে উঠলো অভিনব সিংহের।

রাত আটটা,
খাবার টেবিলে সবাই খেতে বসেছে। অভিনব সিংহ, রুদ্র এবং শাশ্বতকে লক্ষী দেবী এবং উমা খাবার বেড়ে দিচ্ছে। মালিনী সর্বদাই আলাদা খাওয়া দাওয়া করে তাই তার খাবার খাওয়া অনেক পুর্বেই শেষ। উমা এই ক দিন রুদ্রের জন্য অপেক্ষা করেছে। ভেবেছে হয়তো রুদ্র ই নিজ থেকে তার কলেজের কথাটা পাড়বে। কিন্তু এই ক দিন রুদ্র একবার ও কলেজের কথা তুলে নি। তাই আজ এক রাশ সাহস নিয়ে নিজ থেকে কলেজের আর্জি নিয়ে কথা বলবে উমা। শ্বশুরকে খাবার বেড়ে দিতে দিতে আকুতির স্বরে বললো,
“বাবা, একটা কথা ছিলো।“

উমার জড়তাময় কন্ঠে খাবার মুখে তুলতে তুলতেও থেমে গেলেন অভিনব সিংহ। শাশ্বত অবাক নয়নে উমার দিকে তাকালো। তার বড় কৌতুহল হচ্ছে। মেয়েটি ঠিক কি বলতে চায়। রুদ্রের ভাবমূর্তির পরিবর্তন হল না। সে তার মত আয়েশেই খাবার খেতে লাগলো। অভিনব সিংহ ভ্রু কুঞ্চিত করে উমার দিকে তাকালেন, ধীর কন্ঠে বললেন,
“কি বলবে?”
“বাবা, আমি কলেজে ভর্তি হতে চাই। আমার মেট্রিকের ফলাফল ভালো। আমি খুব ভালো কলেজেই চাইলে পড়তে পারব।“

লক্ষী দেবী সুর টানলেন,
“কলেজে গিয়ে কি বিদ্যাবতী হয়ে যাবে?”
“মা, আমার পড়ালেখা করার ইচ্ছে আছে। আমি ডাক্তার হতে চাই।“
“কেনো গো, আমরা তো এতো পড়ালেখা করি নি,। আমাদের কি দিন চলতেছে না?”
“আমি সেটা বলি নি মা, আমি শুধু বলতে চাচ্ছি আমার পড়ার খুব ইচ্ছে। আগে আপনাদের সময়ের ব্যাপার আর এখন অনেক পার্থক্য। এখন মেয়েরা পড়ালেখা করছে। ডাক্তার হচ্ছে, উকিল হচ্ছে, ব্যারিস্টার। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও নারী। হেসেল একজন নারীর জীবন হতে পারে না মা। একজন নারী প্রকৃতির সৃজন করে, সেই নারী সময় এলে অসুর ও বধ করে। তাহলে আমরা নারীরা কেনো নিজেদের এই ঘরের চার দেওয়ালে নিজেকে আটকে রাখবো। মা, এই গ্রামে একটা ভালো ডাক্তার নেই, আমি যদি সেই স্থানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি তবে চেয়ারম্যান বাড়ির সম্মান হানি হবে না বরং বাড়বে।“

উমার এক দমে বলা কথাগুলো শুনে মুখে প্রসারিত হাসি ফুটে উঠলো শাশ্বতে্র। অভিনব সিংহ গলা খাকারি দিয়ে উঠলেন। গম্ভীর স্বরে বললেন,
“বউ মা, আমার মনে হয় না চেয়ারম্যান বাড়ির সম্মান বাড়ানোর দায়ভার তোমার। মে্যেদের কাজ বাড়িতে, হাসপাতালে নয়। তোমার পড়ার ইচ্ছে, বাড়ি থেকে পড়। আমি মানা করব না। অহেতুক কলেজে পড়ে কি করবে?’

অভিনব সিংহের কথায় দমে গেলো উমা। শাশ্বত কিছু বলতে গেলো, কিন্তু অভিনব সিংহ তাতে বাধ সাধলেন,
“শাশ্বত, এটা আমার ঘরের ব্যাপার। তাই থেমে যাও।“

শাশ্বত হাত মুষ্টিবদ্ধ দাঁত চেপে বসে থাকে। ঠিক সেই সময় রুদ্র বলে উঠে,
“আমি উপজেলা যেতে চাই বাবা, এবার পার্টির নির্বাচনে আমিও পদ চাই। কতদিন আপনার ছায়ায় থাকবো বাবা?”
“মানে?”
“মানে টা স্পষ্ট, আমি একটা পোস্ট চাই। গ্রামের গুদামে বসতে আমার আর ভালো লাগে না। এমনি তেও আমার সপ্তাহে দুবার সেখানে যেতেই হয়। আমার টেন্ডরের কাজটাও শুরু হবে। গ্রামে বসে আপনার মুখ ডুবানোর থেকে সেখানে নিজের কিছু করা কি খুব খারাপ হবে? কেনোনো আমি আর উমা সেখানেই চলে যাই। উমার যদি কলেজে ভর্তি হবার ইচ্ছাই থাকে ক্ষতি কি? ওখানে তো সারাদিন হেসেল টানতে হবে না”

রুদ্রের এমন কথায় খানিকটা স্তব্ধ হয়ে যায় অভিনব সিংহ। উমার অবাক নয়নে তার স্বামীর দিকে তাকিয়ে থাকলো। মনের আঙিনায় এক মৃদু কল্লোল বয়ে যাচ্ছে। এক প্রশান্তির ঢেউ। চোখের কোন চিকচিক করছে উমার। বহুদিন বাদে কা্রোর স্নেহছায়া পেলো যেনো উমা। তার মাতাল, নিষ্ঠুর মানুষটা তার জন্য কথা বলবে এ যেনো নিছক কল্পনা। এর মাঝেই…………

চলবে

#উমা [কপি করা নিষেধ]
#১৮তম_পর্ব

বহুদিন বাদে কারোর স্নেহছায়া পেলো যেনো উমা। তার মাতাল, নিষ্ঠুর মানুষটা তার জন্য কথা বলবে এ যেনো নিছক কল্পনা। এর মাঝেই লক্ষীরাণীর হিনহিনে কন্ঠ কানে আসে,
“বাড়ির বউ হবে ডাক্তার। এ তো বাপের জন্মে শুনি নি। মা শ্বাশুড়ির মুখে শুনেছি মেয়েদের কাজ স্বামীর সেবা করা, বাচ্চাদের পালা। পরিবারের সবার মন জয় করাই তাদের কাজ। কিন্তু এই যুগের মেয়েরা সব উচ্ছ্বঙ্গে গেছে। শুধু শুধু বলি, এখন কলি যুগ। মেয়েরা ঘরের বাহুরে যেয়ে ধেই ধেই করবে, ব্যাটা ছেলের সাথে ল্যাটকা ল্যাটকি করবে! অবশ্য মেয়েদের কি দোষ! আমার ছেলেটাই তো নষ্টের গোড়ায় পানি দিচ্ছে”

লক্ষী রাণীর কথার মাত্রা ছাড়াচ্ছে। উমা মাটি কামড়ে দাঁড়িয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। রুদ্র তার মার কথাকে কানে না তুলেই নির্বিকার ভাবে বললো,
“বাবা তো কিছুই বললে না”
“আমাকে ভাবতে দাও। রাতারাতি কিছু বলা সম্ভব নয়।”

অনেকক্ষন ধরে চুপ করে থেকে ধীর কন্ঠে উত্তর দিলেন অভিনব সিংহ। তারপর হাত ধুয়ে উঠে পড়লেন খাবার টেবিল থেকে উঠে যান। রুদ্রের তাতে ভ্রুক্ষেপ হলো না, সে আয়েশ করে খেতে লাগলো। শাশ্বত অবাক চোখে কিচ্ছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো রুদ্রের দিকে। এই ছেলেটার মন কখনোই বুঝতে পারে না সে। তার মস্তিষ্কে কখন কি চলে সেটা আন্দাজ করাটা দূর্বিসহ ব্যাপার৷ উমা রুমে চলে এসেছে। লক্ষীদেবীর তীক্ষ্ণ কন্ঠ এখনো কানে আসছে। মাথা ব্যাথা করছে উমার। তবুও কেনো যেনো খারাপ লাগছে না তার। চিত্তে রংধনু মিললে শরীরের বেদনাও নজরে পড়ে না। আজ উমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। উমার মনের ব্যালকনিতে রংধনু উঠেছে। রঙ্গের মেলায় রঞ্জিত মনের আঙ্গিনা। এর কারণ রুদ্রের পরিবর্তন। উমা ভাবে নি তার মাতাল, নিষ্ঠুর স্বামীটি আজ তার হয়ে কথা বলবে। লোকটার তল পাওয়া সত্যি ই ভার। মাঝে মাঝে রুদ্রকে বড্ড অচেনা লাগে উমার। আজ প্রথম লোকটাকে রজানতে ইচ্ছে করছে তার। বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো উমা। শীতল বাতাস বইছে, আমপাতা গুলো পতপত করে উড়ছে। আকাশের কোনে মেঘ জমেছে, হয়তো বৃষ্টি হবে, তার মাঝে রুপালি চাঁদ উঁকি দিচ্ছে। ঝিরিঝিরি হাওয়ায় অবাধ্য চুলগুলো উড়ছে। উমার মনে বহুদিন বাদে সন্তোষের ছাপ। প্রকৃতির ছোয়া এসে যেনো কানে গুনগুন করছে কর্নকুহরে,
” দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ও পারে–
আমার সুরগুলি পায় চরণ, আমি পাই নে তোমারে ॥
বাতাস বহে মরি মরি, আর বেঁধে রেখো না তরী–
এসো এসো পার হয়ে মোর হৃদয়মাঝারে ॥
তোমার সাথে গানের খেলা দূরের খেলা যে,
বেদনাতে বাঁশি বাজায় সকল বেলা যে।
কবে নিয়ে আমার বাঁশি বাজাবে গো আপনি আসি
আনন্দময় নীরব রাতের নিবিড় আঁধারে ॥”

চোখ বুঝে প্রকৃতি নীরবতাকে উপলদ্ধি করতে ব্যাস্ত উমা। তখন কোমড়ে কারোর নিবিড় স্পর্শ হিম ধরে আছে পার্থিব শরীরে। শিরদাঁড়া বেয়ে এক উষ্ণ রক্ত ছলকে উঠে। উমা পেছনে না ফিরেই অনুভব করতে পারছে মানুষটি কে। আজ নিজেকে ছাড়ানোর ব্যার্থ চেষ্টা করলো না। বরং স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে রইলো। মনের কোনে এক প্রশান্তি কাজ করছে। অজানা আপন ছোয়ায় মন গদগদ হয়ে উঠছে। ভালোবাসার ভিক্ষুক মনটা যেনো ভালোবাসা, স্নেহ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। রুদ্রের স্পর্শ গভীর হলো। থুতনী পরম আদরে ঠেকালো তার কাধে। অবাধ্য চুলগুলো মুখ ছুয়ে যাচ্ছে। উমার নীরবতা আজ অন্য কথা বলছে। রুদ্র চোখ বুঝে মুখ ডুবিয়ে বললো,
“খুশি তো?”
“……”
“আমাকে এক আনার বিশ্বাসটি কি করা যায়?”
“…….”

উমার নীরবতা ভাঙলো না। এবার রুদ্র শীতল কন্ঠে বললো,
“আমি মানুষটা অমানুষ, প্রচন্ড খারাপ৷ একটা মানুষের মাঝে যে যে খারাপ গুন আছে আমার মাঝেও একই গুনগুলো বিদ্যমান। কিন্তু আমার এই দাম্ভিকতা, নিষ্ঠুরতা শুধু একজনের কাছেই টিকে না জানো তো। সে তুমি। আমার কাঠিন্য বরফের ন্যায় গলে যায়। তোমার শুভ্রতা আমার অন্তরাত্মার রুক্ষ্ণতা, আধারকেও গ্রাস করতে চায়। তোমার পবিত্রতা আমার অপবিত্র চিত্তকে বিশুদ্ধতার স্পর্শ দেয়। মাঝে মাঝে মনে হয় আমিও ভালো হয়ে যাই।”
“ভালো হতে পয়সা লাগে না। এই দাপটের দুনিয়ায় আপনাকে সবাই ভয় তো পাবে৷ কিন্তু সেই ভয়ে ভালোবাসা নেই।”
“এই পৃথিবী খুব খারাপ উমা। এখানে মিথ্যের রাজ, সত্যকে গলা টিপে মারা হয়। ছোট তো তুমি বুঝবে না।”
“বুঝালেই বুঝবো।”
“বেশ তবে বলো, আমি যদি কাউকে খুন করি কিংবা মৃত্যুর সাথে লড়াই এর জন্য ছেড়ে দেই তবে আমি কি ভালো নাকি মন্দ?”

উমার মুখোভাব বদলে যায়। মূহুর্তেই শ্বেত মুখটা রক্তশূন্যতায় ফ্যাকাসে হয়ে উঠে। শীতল চোখজোড়ায় নিগাঢ় কালো ভয় জমা হয়। উমার মুখোভাবের ক্রমশ পরিবর্তন দেখে স্মিত হাসি দেয় রুদ্র। ললাটে চুমু একে বলে,
“ভয় পেও না, আমি এরুপ কিছুই করি নি। শুধু ক্রোধ সংবরণ করতে পারি না। বাজে স্বভাব তো ছেড়েই দিয়েছি। এবারো এটাও শিখে যাবো। শুধু একটাই আবদার, তোমার ভাবনার গহীনে যেনো আমার ই রাজত্ব থাকে। সর্বদা।”

রুদ্রের কথার মর্মার্থ বোধগম্য হলো না উমার। তবে লোকটিকে এই প্রথম বার কিঞ্চিত বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হচ্ছে। ইচ্ছে হচ্ছে তার জন্য হৃদয় সপতে। হৃদয় বলছে,
“বিশ্বাস করলে দোষ কি?”

অপরদিকে মস্তিষ্ক ভেটু দিচ্ছে। বারবার সতর্কীকরণ বার্তা জানাচ্ছে। উমা ঠিক করলো একবার মনের কথা শুনতে ক্ষতি কি! জীবন থেকে নতুন করে হারাবার কিছুই নেই। যদি বিশ্বাস করে ঝুলিতে সুখের দেখা মিলে ক্ষতি কি!

১২.
সকাল হতে না হতেই শাশ্বত রওনা হলো উপজেলার দিকে। হুট করেই শাশ্বতের প্রস্থান কারোর মনে প্রশ্ন না জাগালেও মালিনীর মন কু ডাকছে। ছেলেটা বিগত চার পাঁচদিন বেশ অন্যমনস্ক। ইংরেজী কাগজ পত্র নিয়ে খুব ঘাটাঘাটি করে সে। সারাক্ষন কিছু একটা খুজতে থাকে। সেদিন মাঝ রাতে ঘরের বাতি জ্বলছিলো৷ মালিনী উঁকি দিয়ে দেখে সে নেই। বারান্দা থেকে বাহিরের দিকে দেখতেই নজরে পড়ে সে সদর দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। পনেরো দিন হয়ে গেছে ছেলেটা এই বাড়িতেই পড়ে আছে। কেনো জিজ্ঞেস করলেই উত্তরে বলে, সে নাকি ছুটি কাটাচ্ছে। এতো কিসের ছুটি ভেবে পায় না মালিনী। উপরন্তু উমার পড়াশোনার ঘটনায় ঘরে দক্ষযজ্ঞ লেগেছে। বৌদি বারেবারে উমাকে ঠেস করছেন। রুদ্রের এতে কোনো মাথা ব্যাথা নেই। সে মোট কথা উপজেলাতে চলে যাবে। এবার আসছে নির্বাচনে সে পদে দাঁড়াবে। ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হিসেবে তার যাত্রা শুরু করবে। রুদ্রকে অশিক্ষিত মনে হলেও সে চিটাগং ইউনিভার্সিটি থেকে পলিটিকাল সাইন্সে স্নাতক ডিগ্রী নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতেই এই রাজনীতিতে হাতে খড়ি হয় তার। সে চাইলেই বাবার থেকে এগিয়ে যেতে পারতো কিন্তু শুধু বাবার প্রতি অন্ধবিশ্বাস এবং শ্রদ্ধার কারণে কখনোই এই ক্ষমতা নিজ হস্তে আনার কথা চিন্তা করে নি সে। তবে এখন রুদ্র আর অভিনব সিংহের হাতের পুতুল থাকবে না। নিজের ভাগ্যের রচয়িতা নিজেই হবে৷ এতে যদি তাকে বাবার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হয় তাও সে দাঁড়াবে। রুদ্রের এই জেদ নিয়ে ঘরে বিবাদের সূচনা হয়েছে। মালিনীর চিন্তা শাশ্বতকে নিয়ে। কেঁচো খুড়তে না সাপ বেড়িয়ে পড়ে।

উমার স্কুল থেকে কাগজপত্র জোগাড় করেছে রুদ্র। তাদের উপজেলায় একটি এক তালা বাড়ি আছে৷ সে ঠিক করেছে সেখানেই থাকবে। কিন্তু গোল বেঁধে অপর জায়গায় অভিনব সিংহ এখনো তার মতামত দেয় নি। ছেলেকে রাজনীতিতে আনার ইচ্ছে তার নেই। এতোকাল তার ব্যবসার অনেক কিছু রুদ্র সামলাতো। কিন্তু এখন রুদ্র নিজের ব্যবসা চালাতে চাইছে। নিজের ক্ষমতার প্রাচীর গড়তে চাইছে। যা অভিনব সিংহের এতোদিনের প্রাসাদের ফটকে চির ধরাবে। আবার ছেলেকে চটাতেও পারছে না সে। ছেলেকে চটালেও কোনঠাসা হতে হবে তাকে। দ্বিধাদ্বন্দে প্রতিনিয়ত পিসছেন অভিনব সিংহ। নিজ ঘরের বারান্দায় আরাম কেদারায় বসে এই ঘোর চিন্তাই করছিলেন তিনি। সামনে রাখা দাবার ছকে তার রাজাকে দুপাশ থেকে গিলার প্রচেষ্টা চলছে। তখনই ফুলির মা ছুটে আসে। হাপাতে হাপাতে বলে,
“কত্তা, পুলিশ আইছে। আপনার লগে কথা কইবার চায়…..”

চলবে।