এই কেমন ভালোবাসা পর্ব-১৩

0
794

#এই_কেমন_ভালোবাসা🌺🌿
#নূর_নাফিসা_খুশি
#পার্ট_১৩

“তুই তো অনেক ভালো গান পারিস।একটা গান বল তো শুনি।”(মাহির খুশির দিকে তাকিয়ে বলে)

” আমি গান পারি না।এমনেই গুন গুন করতে পারি শুধু। একা থাকি যখন।তুমি গান গাও,আমি শুনি।এই চাঁদনি রাত আর তোমার গান জোস হবে।”

“শুনবি তুই?”

” এটা আবার বলতে হয়! শুরু করো তুমি।”

মাহির খুশির দিকে এক পলকে তাকিয়ে গান শুরু করে।(গান টা পুরো টা পড়ার অনুরোধ রইল)

🌹তুমি না ডাকলে আসবো না
কাছে না এসে ভালোবাসবো না
দুরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়?
নাকি চলে যাওয়ার বাহানা বানায়?

দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পটা পুরনো,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি।

(মাহিরের গান এর মানে বুঝে খুশি চমকে উঠে। বুকে মোচর দিয়ে উঠে। কেন এমন হচ্ছে খুশি বুঝতে পারছে না।খুশি মাহিরের চোখের দিকে তাকায়)

এটা কি ছেলেখেলা আমার এই স্বপ্ন নিয়ে
চাইলে ভেঙে দেবে,গড়ে দেবে ইচ্ছে হলে,
আমি গোপনে ভালোবেসেছি,
বাড়ি ফেরা পিছিয়েছে
তোমায় নিয়ে যাবো বলে।
একবার এসে দেখো,
এসে বুকে মাথা রেখো
বলে দেবো চুলে রেখে হাত।

দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পটা পুরোনো,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি।

(খুশি মাহিরের আরও একটু কাছে গিয়ে অজান্তেই মাহিরের বুকে মাথা রাখে। এতে মাহির অবাক হলেও কিছু বলে না। গান গাইতে থাকে মাহিরের একটা হাত খুশির মাথায় রেখে)

ভোর না হতে হতে তোমাকেই দেখার আশায়
শেষ ছবিটা দেখি বারে বারে আহা! দেখি,
আমি গোপনে ভালোবেসেছি,
বাড়ি ফেরা পিছিয়েছে
তোমায় নিয়ে যাবো বলে।
একবার এসে দেখো,
এসে বুকে মাথা রেখো
বলে দেবো চুলে রেখে হাত…

দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পটা পুরনো,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি।🌹

গান শেষ হতেই চারিদিকে এক নিরবতা বিরাজ করে। খুশি কিছু বলে মাহির ও না। তবে মাহিরের অনেক ভালো লাগছে খুশি তার বুকে মাথা রেখে আছে। এই দিকে খুশির মন এলোমেলো হয়ে গেছে। খুশি মাহিরের চোখে তার জন্য অসীম ভালোবাসা দেখেছে। কিন্তু সে নিজে বুঝতে পারছে না সে কি মাহিরকে ভালোবাসে?খুশির কান্না পায়,খুব করে কান্না পায়।সে নিজের মনের কথা বুঝতে পারছে না। মাহিরের সঙ্গে সময় কাটাতে খুশির ভালো লাগে।ঝগড়া করতে ভালো লাগে। সারাক্ষণ দেখতে মন চায়।তাহলে এটাই কি ভালোবাসা? খুশি ভাবে এই নিয়ে তার আম্মুর সঙ্গে কথা বলবে এর আগে কিছু না।

মাহিরের বুক টা ভেজা ভেজা লাগে তাই মাহির খুশিকে বুক থেকে তুলে দেখে খুশির চোখে পানি। মাহির ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করে,

“এই খুশি কি হয়েছে তোর? তুই কান্না করছিস কেন? তোর কি শরীর খারাপ লাগছে? চল এখনি বাড়িতে নিয়ে যাই।”

খুশি চোখের পানি মুছে মাহিরকে বলে,

” আমি ঠিক আছি ভাইয়া।”

“সত্যি তো? তবুও চল বাড়িতে যাই। অনেক রাত হচ্ছে।”

” আরেকটু থাকি না।আমার অনেক ভালো লাগছে এখানে।”

মাহির আর কিছু বলে না।খুশি আবার মাহিরের বুকে মাথা রাখে।মাহির খুশির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। খুশি মনে মনে বলে,

“মাহির ভাইয়া আমাকে সত্যি ভালোবাসে? হ্যাঁ সত্যি ভালোবাসে। আমি ভাইয়ার চোখে আমার জন্য অনেক ভালবাসা দেখেছি। কিন্তু ভাইয়া আমার সঙ্গে সেই প্রথম থেকে রেগে রেগে কথা কেন বলে? কখনো ভালোবাসা দেখায় কখনো রাগ দেখায় কখনো কেয়ার করে। ” এই কেমন ভালোবাসা”।যে ভালবাসা মুখ ফুটে বলে না, দেখায় না। আমিও যদি তোমায় ভালোবাসি ভাইয়া তাহলে আমিও বলবো না। দেখি তুমি কতো দিন চুপ করে থাকো।”(মেয়েরা এক লাইন বেশি বুঝে হ্যাঁ আমিও মেয়ে আর আমিও বেশিই বুঝি দুই লাইন। আর লেডিস ফাস্ট প্রথা কে তৈরি করেছিল কে জানে–
লেখিকা)

মনে মনে কথা গুলো ভেবে মাহিরকে বলে।

“এই ভাইয়া আমি আজ আমাদের বাড়িতে থাকি প্লিজ?”

” কেন?”

“কেন আবার কি আমার আব্বু আম্মু আছে। আমি কতদিন পরে বাড়িতে এসেছি একদিন আব্বু আম্মুর সঙ্গে সময় কাটাবো না?তুমি চাইলে তুমিও আসো আমাদের বাড়ি। ওটা তো তোমারও খালামনির বাড়ি।”

” আমি যাবো না তুই যেতে চাইলে যা।তবে কাল বিকেলেই নানু বাড়িতে চলে আসবি।প্রমিজ কর?”

“আচ্ছা ঠিক আছে চলে আসব।”

মাহির খুশি উঠে দাঁড়ায়। দুই জনে পাশাপাশি হাঁটতে লাগে।মাহিরের মনে একটাই ভয়,যদি খালামনি খুশিকে উল্টাপাল্টা কিছু বুঝায়!খুশি যদি তার থেকে দূরে চলে যায়! এই ভয়ই করছে মাহির। তাই খুশিকে নিজের বাড়ি যেতে দেয় না। তবে এখানে খুশির আম্মু ওদের ভালো চায় খারাপ না। শুধু সম্পর্কের মানে না জেনে খুশিকে কোন সম্পর্কে জড়াতে দিতে চাচ্ছে না।

মাহির খুশিকে তার নিজের বাড়িতে রেখে সে নিজেও নানু বাড়ি চলে যায়। খুশি এসে রুমে চলে যায় এখন অনেক রাত তাই। খুশি এখানে আসতে চায়নি কিন্তু তার আম্মুর সঙ্গে কথা বলা জরুরি ছিলো তাই এসেছে।মাহিরের ব্যাপারে কথা বলবে তাই। নয়তো মাহিরের সঙ্গেই চলে যেতো।

সকালে।

সকালে উঠে খুশির আম্মু মুনতাহার ছাদে গিয়ে ফুল গাছে পানি দেওয়ার অভ্যাস।রোজ কার রুটিন এটা। খুশি জানে সকালে তার আম্মু কে ছাদে পাওয়া যাবে। তাই রান্না ঘরে গিয়ে দুই কাপ কফি বানিয়ে ছাদে চলে আসে খুশি। খুশির আম্মু গাছে পানি দিচ্ছে তখনই পাশে গিয়ে দাঁড়ায় খুশি আর বলে,

” গুড মর্নিং আম্মু। এই দেখো তোমার জন্য গরম গরম ধোঁয়া উঠা কফি এনেছি নিজের হাতে বানিয়ে।

আম্মু খুশির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,

“বাহ অনেকদিন পরে আবার তোমার কফি খেতে পারছি তাহলে।”

মুনতাহা খুশিকে নিয়ে দোলনায় বসে। খুশি এক কাপ কফি তার আম্মুকে দেয়। দুই জনেই চুপচাপ কফি খাচ্ছে। কেউ কিছু বলে না। ৫মিনিট মতো চুপ থেকে খুশিই নিরবতা ভেঙ্গে বলে,

” আম্মু তুমি আব্বুকে খুব ভালোবাসো। তাই না?”

“হুমম এখন বাসি।অনেক বেশি।”

” এখন বাসি মানে?”(অবাক হয়ে বলে খুশি)

খুশির আম্মু একটু চুপ থেকে বলে,

“আমাদের যখন বিয়ে হয় তখন এই বিয়েতে আমার মত ছিলো না। আমি আরও পড়াশোনা করতে চেয়েছিলাম।কিন্তু তোমার নানু আমার মত না জেনেই বিয়ে ঠিক করেন তোমার আব্বুর সঙ্গে। আমি আমার আব্বু আম্মুর কথার ওপর কথা বলতে পারি নি। বিয়ে করে নিয়েছিলাম।কিন্তু তোমার আব্বুকে মন থেকে মেনে নিতে পারিনি।কোন ভালোবাসা ভালোলাগা ছিলো না। কিন্তু তোমার আব্বু অনেক ভালো মানুষ। আমাকে কখনো ভুল বুঝেননি।এমন কি আমার ওপর কোনো জোর খাটায় নি। আমাকে বুঝতে সময় দিয়েছিল। আমিও আস্তে আস্তে তার প্রতি দূর্বল হয়ে পরি। বিয়ের দুই বছর পরে তুমি এলে আমাদের কোল জুরে। তার কিছুদিন পরেই তোমার আব্বুর এক্সিডেন্ট হয় তখন আমি তোমার আব্বুকে হারাতে বসে বুঝেছিলাম আমি তাকে কতটা ভালোবাসি। সেই যাত্রায় তোমার আব্বু বেঁচে যায়। তারপরে থেকেই তোমার আব্বুই আমার প্রান। বেঁচে থাকার কারণ। অনেক ভালোবাসি আমি তোমার আব্বুকে।”

খুশি তার আম্মুর কথা শুনে চুপ করে রইলো। খুশিকে চুপ থাকতে দেখে খুশির আম্মু বলে,

“ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যা বলে কয়ে আসে না।হঠাৎ হয়ে যায়।”(খুশির আম্মু বুঝতে পেরেছে খুশি কেন এসেছে তার কাছে)

“আম্মু আমি কি করে বুঝব এটা ভালোবাসা, ভালোলাগা না?”

“ভালোলাগা এক অনুভূতি,ভালোবাসা আরেক অনুভূতি। যেমন-ওই যে ফুল গাছটা দেখতে পাচ্ছো। ওটায় কতো সুন্দর ফুল ফুটে আছে। তোমার ফুলটা দেখে কি মনে হচ্ছে?”

খুশি চট করেই উত্তর দিল,

“আমার মন চাইছে এখনই তুলে এনে নিজের কাছে রাখি।”

“শুকিয়ে গেলে কি করবে?”

“ফেলে দিব।শুকনো ফুল আর কি করবো?”

খুশির আম্মু মুচকি হেসে বলে,

” এটা তোমার ফুলটার প্রতি ভালোলাগা ছিলো। ভালো লাগলো, তুলে নিলাম।শুকিয়ে গেলো,ফেলে দিলাম।এতে কোন ভালোবাসা নেই।”

খুশি তার আম্মুর দিকে দিকে এক পলকে তাকিয়ে কথা গুলো শুনছে। আম্মু আবার বলে,

“ফুল না ছিড়ে ফুল গাছের পরিচর্যা করে তাতে আরও ফুল ফোঁটানো হচ্ছে ভালোবাসা। ভালোলাগায় বিশ্বাসের ওতো প্রয়োজন নেই।কিন্তু ভালোবাসায় বিশ্বাস সব কিছু।আর এই বিশ্বাস থেকেই সম্পর্ক তৈরি।”

” কেউ যদি আমাকে খুব বেশি ভালোবাসে?তাকে আমার কি করা উচিত?মেনে নিব?”(খুশি)

“তার ভালোবাসা যদি সত্যি হয়। আর তোমার মনে অন্য কেউ না থাকে তো আমার মনে হয় তাকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিত। তুমি তাকে বুঝার চেষ্টা করো। সে কেমন,তুমি তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে কি।’

“হুম।”

“আমি রান্না বসাই গিয়ে।তুমি আসো নিচে।”

এই বলে খুশির আম্মু চলে যায়।খুশি আরও ধাঁধার মধ্যে পরে যায়।কিন্তু এসব বাদ দিয়ে খুশি ভাবে আগে মাহির তাকে সত্যি ভালোবাসে কিনা সেটা জানতে হবে।কারণ মাহির তো স্বীকারই করে না।খুশি উঠে নিচে চলে যায়।

চলবে?

(বানান ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি।)