#এই_মন_তোমারি
#পর্ব_২৬
#লেখনীতে_নুজাইফা_নূন
-“শাফায়াত রুমে প্রবেশ করতেই দেখে সূরা আরাবের সাথে হাসা হাসি করছে।যা দেখে বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব হয় শাফায়াতের।তার হৃদয় ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায়। মনে হয় যেনো কেউ কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছে।সে এক প্রকার জেদ করে শফিকুল দেওয়ান কে বললো,
-” বাবা আপনি তরী কে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসুন।আমি তরী কে বিয়ে করতে রাজি আছি।যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনি আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করুন।”
-” কথাটা সূরার বুকে একদম তীরের মতো আটকে গেল।সে তো তার সুন্দর ব্যাডা মানুষ কে অনেক বেশি ভালোবেসে।তাকে ছাড়া সে বাঁচবে কিভাবে?তার না হয় হাত পা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুলিশ কিভাবে পারলো দ্বিতীয় বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিতে? সূরা আর ভাবতে পারলো না কিছু।ভেতর থেকে কান্না দলা পাকিয়ে আসতে লাগলো।সূরা তড়িঘড়ি করে পড়া শেষ করে নাজমা দেওয়ান এর রুমে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।এক পর্যায়ে সূরা চোখের পানি মুছে শাফায়াতের গুটিগুটি পায়ে শাফায়াতের রুমে এলো। শাফায়াত তখন সবে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে। গাঁয়ে পানি মুক্ত দানার মতো চকচক করছে।সূরা এক পা দু পা করে শাফায়াতের দিকে এগিয়ে গেলো।সে শাফায়াতের দিকে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আগেই শাফায়াত খপ করে সূরার হাত ধরে বললো, ডোন্ট টাচ মি।আমাকে টাচ করার অধিকার তুমি হারিয়েছো। শাফায়াতের কথায় সূরার মধ্যে কোনো ভাবান্তর হলো না। বরং সূরা শাফায়াতের আরো কাছে এসে তার গালে চুমু দিয়ে বললো,
-” আইনত এখনো আমি আপনার স্ত্রী।তাই শুধু মাত্র আপনাকে টাচ করারি না আরো অনেক কিছু করার অধিকার আমার কাছে। এবং আমি সেটা করবো ও।ইজ দ্যাট ক্লিয়ার মাই ডেয়ার সুন্দর করে মানুষ বলে শাফায়াত কে চোখ টিপ মেরে দিলো সূরা।সূরার এহেন কাণ্ডে হকচকিয়ে গেল শাফায়াত।সে সূরার কোমর জড়িয়ে ধরে তাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এক হাত দিয়ে মুখে স্লাইড করতে করতে বললো, শুধু মাত্র আমার বিয়ে শুনে’ই এতো জ্বলছে তোমার,তাহলে আমার বিয়ের পর তোমার কি অবস্থা হবে মিসেস সূরা দেওয়ান?ভেবো না আমি তোমাকে ডিভোর্স দিবো বা এই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিবো। তুমি এই বাড়িতে’ই থাকবে।আমার আর তরীর সুখের সংসার দেখবে আর জ্বলবে।কেনো জানি তোমার জ্বলন দেখলে এখন আমার সুখ সুখ অনুভব হয়।আনন্দ লাগে আমার।আমাকে কষ্ট দেওয়ার পরিণতি কতো ভয়ংকর হবে তুমি ভাবতেও পারছো না।পারবে তো চোখের সামনে আমার আর তরীর রোমান্স দেখতে? রোজ সকালে তরীর ভেজা চুল দেখতে?”
-” আমি আপনাকে যতো দেখছি ততো অবাক হয়ে যাচ্ছি। একটা মানুষ এতো দ্রুত কিভাবে পাল্টে যেতে পারে পুলিশ?”
-” তুমি যেভাবে পাল্টে গেলে আমি ও সেই একই ভাবে পাল্টে গিয়েছি।হিসাব বরাবর।”
-” আপনি কি সত্যিই আমাকে ভালোবাসেন পুলিশ? আমার মনে হয় না।ভালোবাসলে দ্বিতীয় বিয়ে করার কথা আপনি কল্পনাও করতে পারতেন না।যাই হোক আজ আমি আপনাকে একটা কথা বলি। আমি যা করেছি আপনার আমার আমাদের সবার ভালোর জন্য করেছি।তবে আমার নিজের ইচ্ছায় আমি সেটা করি নি।আমাকে দিয়ে করানো হয়েছে। আমি এমন টা কেনো করেছি, আমাকে দিয়ে কে করিয়েছে এসব ,সবটা খুঁজে বের করার দায়িত্ব আপনার পুলিশ।সব টা জানার পর ও আপনি যদি আমাকে না চান আমি থাকবো না আপনার জীবনে।তবে আমার মন আপনার ছিলো আর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আপনারি থাকবে বলে সূরা চোখের পানি মুছতে মুছতে শাফায়াতের রুম থেকে বেরিয়ে যায়।সূরার যাওয়ার পানে তাকিয়ে শাফায়াত বললো, তুমি ভাবলে কি করে লজ্জাবতী ললিতা আমি তোমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে আমার মনের মালকিন করবো? এসব করা তোমাকে জ্বালানোর জন্য। তুমি যাতে সেচ্ছায় সুড়সুড় করে সবটা আমাকে বলে দিয়ে সব মান অভিমান শেষ করে আমার কাছে ফিরে আসো তার’ই নিজ্জা টেকনিক এটা। তোমাকে ছেড়ে আর কোথাও শান্তি খুঁজে পাবো না আমি। #এই_মন_তোমারি যে পাখি।মনটা তুমি ছাড়া আর কাউকে বুঝতে চায় না।”
__________________________________
-” শাফায়াত হসপিটালে এসেছে মিলির সাথে দেখা করার জন্য।মিলি এখন মোটামুটি সুস্থ্য হয়ে গিয়েছে। চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ করা হবে।মিলির চিকিৎসার সমস্ত খরচ শাফায়াত বহন করেছে। শাফায়াত ডক্টরের সাথে কথা বলে মিলির কেবিনে আসে। শাফায়াত কে দেখা মাত্র মিলি উঠে বসার চেষ্টা করে দেখে শাফায়াত এগিয়ে গিয়ে মিলি কে উঠে বসতে সাহায্য করে। শাফায়াত কে দেখে মিলির চোখ থেকে আপনা আপনি পানি গড়িয়ে পড়ে।যা দেখে শাফায়াত বললো,
-” একি আন্টি আপনি কান্না করেছেন কেনো?”
-” এটা দুঃখের কান্না নয় বাবা।এটা যে সুখের কান্না।জানি না তুমি কোন মায়ের সন্তান।তবে তোমার মা অনেক ভাগ্যবতী ।সে তোমার মতো একটা সন্তান তার গর্ভে ধারণ করেছে। তোমার মা নিশ্চয় অনেক ভালো মনের মানুষ?”
-” মায়েরা কখনো খারাপ হয় না আন্টি। পৃথিবীর সব মায়েরা ভালো।”
-” সব মায়েরা ভালো হলেও আমি ভালো মা হতে পারি না।আমি পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট মা, নিকৃষ্ট স্ত্রী। যে মা স্বেচ্ছায় তার থেকে নিজের মেয়েকে তার থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, তার থেকে মায়ের আদর ভালোবাসা কেড়ে নেয় , সে কখনো ভালো মা হতে পারে না বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো মিলি।”
-” আপনি প্লিজ শান্ত হোন আন্টি। আপনি এখনো পুরোপুরি সুস্থ্য হন নি।কোনো কারণে উত্তেজিত হয়ে পড়া আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।আমি কথা দিচ্ছি আমি আপনার মেয়েকে খুঁজে বের করে আপনার কাছে নিয়ে আসবো।”
-” তুমি সত্যি বলছো বাবা?”
-” হ্যাঁ আন্টি।”
-” মিলি শাফায়াতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, জীবনে অনেক সুখী হও বাবা। সুখে শান্তিতে তোমার সংসার পরিপূর্ণ হয়ে উঠুক।”
-” শাফায়াত কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার ফোন বেজে ওঠে। শাফায়াত প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে স্কিনে বাবা নামটা জ্বলজ্বল করছে। শফিকুল দেওয়ান এর কল দেখে শাফায়াত একটু অবাক হয়ে যায়।তিনি সচারচর শাফায়াত কে কল করেন না। শাফায়াতের ভাবনার মাঝে একবার কল কেটে যায়।তিনি পুনরায় কল করেন। শাফায়াত এবার আর দেরি করে না।কল রিসিভ করে তাকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-” বাসায় সব ঠিক আছে তো বাবা? কারো কোনো সমস্যা হয় নি তো?”
-“ডোন্ট টেক এ টেনশন। এভরিথিং ইজ ওকে।”
-” আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আপনি তো আমাকে তেমন কল করেন না। হুট করে আপনার কল দেখে ভাবলাম হয়তো বাসায় কারো কোনো বিপদ হয়েছে।”
-” সবাই ঠিক আছে। কিন্তু বেটা তুমি কোথায় এখন?”
-” আমি একটু হসপিটালে এসেছি বাবা?”
-” হসপিটালে কেনো?”
-” আপনাকে সবটা পরে আমি বুঝিয়ে বলবো বাবা।”
-” ইটস্ ওকে।তোমাকে এক্ষুনি একটু বাসায় আসতে হবে।”
-” কেনো বাবা?”
-” বাসায় এলে’ই দেখতে পারে। ইটস্ এ বিগ সারপ্রাইজ।”
-” ঠিক আছে বাবা ।আসছি আমি।”
-” আচ্ছা রাখছি তাহলে। তাড়াতাড়ি চলো এসো বাসায়।”
-“শফিকুল দেওয়ান এর সাথে কথা বলে শাফায়াত মিলির থেকে বিদায় নিয়ে সোজা বাসায় চলে আসে। বাসায় এসে কলিং বেল দিতে’ই শর্ট ড্রেস পরা একটা মেয়ে দরজা খুলে দেয়।যেনো সে কলিং বেল বাজার অপেক্ষায় বসে ছিলো। দরজা খোলা পেয়ে শাফায়াত রুমে প্রবেশ করা মাত্রই মেয়েটা কালবিলম্ব না করে শাফায়াত কে জড়িয়ে ধরলো।”
চলবে ইনশাআল্লাহ।।
#এই_মন_তোমারি
#পর্ব_২৭
#লেখনীতে_নুজাইফা_নূন
-” বাইরের একটা বাজে মেয়ে এসে নির্লজ্জের মতো তোমার বর কে জড়িয়ে ধরে রেখেছে ,আর তুমি এখানে পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছো ভাবি মনি? কথাটা কর্ণপাত হতে’ই ঘুম হালকা হয়ে যায় সূরার। মেয়েটা গতরাতে শাফায়াতের রুম থেকে এসে না খেয়ে নাজমা দেওয়ান এর কোলে মাথা রেখে অনেক রাত পর্যন্ত কান্নাকাটি করেছে।যার দরুন প্রচন্ড মাথা হয়েছে।রাতে ঘুমোতে পারে নি।সারা রাত বিছানায় ছটফট করেছে মেয়েটা। শেষ রাতে যখন দুচোখের পাতা এক হয়েছে তখনি ফজরের আযানের ধ্বনি শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেছে। সূরা তড়িঘড়ি করে উঠে রোজকার মতো ওযু করে নামাজ পড়ে বই খাতা নিয়ে পড়তে বসে যায়। কিন্তু ঘুমের কারণে পড়ায় মনোযোগ দিতে পারে না।যা দেখে নাজমা দেওয়ান বইখাতা রেখে তাকে ঘুমোতে বলে।সূরা ও যেনো এই সুযোগ টায় খুঁজছিলো।সে নাজমা দেওয়ান কে জড়িয়ে ধরে বললো , আপনি আমার সব কথা কিভাবে বুঝতে পারেন মা?”
-” কারণ আমি যে মা। সন্তানদের কিছু হলে কেউ বুঝতে পারুক বা না পারুক একজন মা ঠিকই বুঝতে পারে।এই যেমন আমি বুঝতে পারছি কিছুদিন থেকে তোর মনের মধ্যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছিস তুই। তুই এখন যথেষ্ট নিজের ভালো বুঝতে শিখেছিস।যায় হয়ে যাক না কেন কখনো নিজের স্বামী, নিজের সংসার ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাববি না মা। নিজেকে শক্ত কর। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শিখতে হবে তোকে।মনে রাখিস বাঙ্গালী মেয়েদের কিন্তু একবার’ই বিয়ে হয়।বিয়ের পর স্বামীর সাথে আপোষ করে চলতে না পারলে, ডির্ভোস এর পর পুরো পৃথিবীর সাথে আপোষ করে চলতে হয়।তাই স্বামী, সংসার যেমনি হোক মানিয়ে চলতে হয়। ঠিক যেমন টা আমি করে চলছি।”
-” মানে টা কি মা? আপনার এতো টাকা পয়সা ধন দৌলত থাকার পর ও আপনি সুখি নন?”
-” টাকা পয়সা কি আর সর্বসুখ দিতে পারে রে মা? পুরুষ মানুষ যদি খারাপ হয় টাকার পাহাড় থাকলেও সুখি হওয়া যায় না।আর পুরুষ মানুষ যদি ভালো হয় কুঁড়ে ঘরে সারাজীবন সুখে শান্তিতে বসবাস করা যায়। শফিকুল কখনো আমাকে ভালোবাসে নি।ও ভালোবাসতো আমার ছোট বোন নাইমা কে। এমনকি বাবা নাইমার সাথে শফিকুল এর বিয়ে ঠিক করে। কিন্তু বিয়ের দিন নাইমা বাবার মুখে চুলকানি মেখে অন্য ছেলের হাত ধরে চলে যায়।বাবার মানসম্মানের কথা চিন্তা করে সবাই মিলে শফিকুলের সাথে আমার বিয়ে দেয়।”
-” আপনার আরো একটা বোন আছে? সে কোথায় এখন?”
-” জানি না। সেদিন বিয়ের আসর ছেড়ে চলে যাওয়ার পর নাইমার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি। জানি ও না সে এখন কোথায় কিভাবে আছে?তবে শফিকুলের মনে প্রাণে এখনো নাইমা রয়ে গেছে।যায় হোক অনেক কথা বলে ফেলেছি। সারারাত ঘুমোস নি তুই। এখন একটু ঘুমো।দেখবি ভালো লাগবে।”
-” ঠিক আছে মা।তবে আমাকে নাস্তা করার জন্য ডাকার দরকার নেই। আমার ঘুম ভাঙ্গলে আমি উঠে খেয়ে নিবো।”
-” ঠিক আছে ডাকবো না । সেই তখন মেয়েটা ঘুমিয়েছে আর বেলা এগারোটা বাজে নুজাইফার ডাকে তার ঘুম ভাঙ্গে। সূরা অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে বললো, কে এসেছে নুজাইফা?”
-” তুমি চলো নিজের চোখে’ই গিয়ে দেখো।”
-” সূরা আর এক মুহূর্ত দেরি না করে নিচে চলে আসে।নিচে এসে যেনো সূরার চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায়। প্রায় পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি লম্বা একটা মেয়ে।যার দুধে আলতা গায়ের রং,সরু নাক,হরিনীর মতো টানা টানা চোখ,ঘাড় অবধি লেয়ার কাট করা খয়েরী রঙের চুল,পরনে কালো কালারের হাতা কাটা ছোট একটা টপস। মেয়েটা শাফায়াত কে দুহাতে আকড়ে ধরে রেখেছে।যা দেখে মনের মধ্যে ঝড় বয়ে যায় সূরার। দুচোখ দেখে আপনা আপনি পানি গড়িয়ে পড়ে।মেয়েরা প্রসব বেদনার যন্ত্রণা সহ্য করতে পারলেও তার শখের পুরুষের সাথে অন্য কোনো নারী কে সহ্য করতে পারে না। সেইখানে শাফায়াত তো সূরার প্রাণভোমরা।সে কিভাবে পারবে তার সুন্দর ব্যাডা মানুষের পাশে অন্য মেয়েকে সহ্য করতে? ”
___________________________________
-” মেয়েটা শাফায়াত কে জড়িয়ে ধরলেও শাফায়াত মেয়েটা কে জড়িয়ে ধরে না।সে বিরক্তি নিয়ে নিজেকে মেয়েটার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চায়। কিন্তু যখন তার লাল চোখ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সূরার দিকে নজর যায় তখন সে সূরার হৃদয় আরো ক্ষত বিক্ষত করে দিতে মেয়েটাকে নিজে থেকে জড়িয়ে ধরে বললো, তরী বেইবি তুমি এইখানে?হোয়াট এ প্রেজেন্ট সারপ্রাইজ?”
-” তুমি খুশি হও নি বেইবি?”
-” শাফায়াত দাঁতে দাঁত চেপে বললো, হ্যাঁ বেইবি খুব খুশি হয়েছি। তোমাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে বেইবি।যাও গিয়ে রেস্ট করো।”
-” ইশ্ বিয়ের আগেই আমার বাবুটা আমার কত্তো খেয়াল রাখছে। লাভ ইউ বাবু।”
-” শাফায়াত তরীর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, তুমি সোফায় গিয়ে বসো।বাসার সবার সাথে গল্প করো। আমার একটু কাজ আছে ।আসছি আমি।”
-” আসছি আমি মানে কি হ্যাঁ? ড্যাড বলেছে এই সপ্তাহের মধ্যে আমাদের বিয়ে দিয়ে চার হাত এক করে দিবে।এখন আমাদের কতো প্ল্যানিং রয়েছে।আর তুমি কি না কাজ কাজ করে বেড়াচ্ছো বেইবি?”
-” তুমি টেনশন করো না। শহরের নামকরা
বিজনেস ম্যান শফিকুল দেওয়ান এর একমাত্র ছেলে শাফায়াত দেওয়ান এর বিয়ে বলে কথা।সারা শহরের মানুষ জানবে। হলুদ হবে, মেহেন্দী হবে নাচ,গান হৈ হুল্লোড় সব হবে।”
-” আমি তো মনে মনে এমনটাই প্ল্যান করে রেখেছি। তুমি কিভাবে আমার মনের কথা বুঝতে পারলে বেইবি?”
-” কারণ মনটা যে আমারি।”
-” হাউ সুইট! তুমি আমাকে এত্তো ভালোবাসো বাবু? শাফায়াত প্রতিত্তরে কিছু বলে না।যার জন্য বেশ অপমান বোধ করে তরী ।সে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে কেউ তার কথা শুনেছে নাকি? আর তখনি তার চোখ যায় দূরে দাঁড়িয়ে থাকা সূরার দিকে।সে তৎক্ষণাৎ শাফায়াত কে জিজ্ঞেস করলো, বাবু এর আগে আমি তোমাদের বাসায় কয়েক বার এসেছি। কিন্তু এই মেয়েটা কে তো এর আগে কখনো দেখিনি। মেয়েটা কি তোমাদের বাসার নতুন সার্ভেন্ট?বাই দ্যা ওয়ে মেয়েটা দেখতে কিন্তু অনেক কিউট আছে।লুক লাইক রসগোল্লা। সাধারণত শহরে সার্ভেন্ট পাওয়া খুবই ডিফিকাল্ট ব্যাপার। সেখানে তুমি এতো রসগোল্লা টাইপের সার্ভেন্ট কোথা থেকে জোগাড় করলে বাবু?”
-” সূরার নামে এমন আজে বাজে কথা শুনে মাথা গরম হয়ে যায় শাফায়াতের।সে একপ্রকার চিৎকার করে বলে উঠলো, স্টপ অল দিস ননসেন্স । আমি কি একবারও বলেছি মেয়েটা আমাদের বাসার সার্ভেন্ট?”
-” শাফায়াতের এহেন ব্যবহারে অনেক টা ঘাবড়ে যায় তরী।সে আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলো, সার্ভেন্ট নয় তো কে?”
-” ও আমার ব ..।
-” ব মানে?”
-” আম্মির বোনের মেয়ে।আই মিন আমার কাজিন।”
-” ওহ্ তাই বলো আরকি। অতঃপর তরী সূরাকে উদ্দেশ্য করো বললো, এই মেয়ে এইদিকে এসো।কাম অন।”
-” তরীর অপমানজনক কথাবার্তা শুনে সূরার খুব খারাপ লাগছিলো। কিন্তু যখন সে তার সুন্দর ব্যাডা মানুষ তার হয়ে কথা বলছে এক নিমিষে’ই তার খারাপ লাগা দূর হয়ে গেল।সূরা গুটি গুটি পায়ে তরীর দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো, জ্বি বলুন।”
-” নাম কি তোমার?”
-” সূরা।”
-” ওয়াও নাইস নেইম।তো আমার শ্বশুর বাড়ি কি শুধু বসে বসে অন্ন ধংস করা হয় নাকি কোনো কাজ কর্ম ও করা হয়?আর যদি বসে বসে খেয়েও থাকো , আজকের পর থেকে সেটা হবে না। এখন যাও কিচেনে গিয়ে আমার জন্য এক কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে এসো।কাম ফার্স্ট।”
-” সূরা যায় না। বরং ঠাঁই সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে।যা দেখে শাফায়াত বললো, কি হলো শুনতে পাও নি তরী কি বলেছে? ও আমার হবু বউ।আজ থেকে বিয়ের আগ পর্যন্ত ওর সব দায়িত্ব তোমার।ওর কখন কি প্রয়োজন সবটা দেখবে তুমি। আফটার অল শাফায়াত দেওয়ানের হবু বউ বলে কথা বলে শাফায়াত সূরা কে চোখ টিপ মেরে দিলো।”
-” ও আমার হবু বউ। কথাটা বারংবার কানে বাজতে লাগলো সূরার।”
চলবে ইনশাআল্লাহ।।