এই মন তোমারি পর্ব-৩০+৩১

0
246

#এই_মন_তোমারি

#পর্ব_৩০

#লেখনীতে_নুজাইফা_নূন

-” সূরা একটা চিরকুট লিখে টেবিলের উপর রেখে আলমারি থেকে কিছু টাকা নিজের হ্যান্ডপার্সে নিয়ে রাতের আঁধারে চুপিচুপি নাজমা মঞ্জিল থেকে বেরিয়ে পড়ে। দরজা খট শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় রেণুর।সে বাইরে এসে দেখে মেইন ডোর খোলা রয়েছে। রেণু অনেক রাত পর্যন্ত জেগে সিরিয়াল দেখে।তাই রেণু ভাবলো হয়তো তারি ভুল হয়েছে।সে হয়তো সিরিয়াল দেখার নেশায় দরজা বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছে।এমনটা সে প্রায়ই করে থাকে। তাই আর রেণু এই ব্যাপারে মাথা না ঘামিয়ে দরজা বন্ধ করে নিজের মতো গিয়ে শুয়ে পড়ে। ”

-” ফজরের আযান শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায় শাফায়াতের। শাফায়াত তড়িঘড়ি করে উঠে অযু করে মসজিদে চলে যায় ফজরের সালাত আদায় করার জন্য।সালাত আদায় করে মসজিদ থেকে ফেরার সময় শাফায়াত মনে মনে বললো, তোমার জন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে আমার লজ্জাবতী ললিতা। আমি জানি আমার প্রতি তোমার অনেক রাগ , ক্ষোভ, অভিমানের সৃষ্টি হয়েছে।আজ সব রাগ ক্ষোভ অভিমানের অবসান ঘটিয়ে তোমাকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিবো।অন্য এক সুখের রাজ্যে নিয়ে যাবো তোমাকে। আজকের রাত একান্তই আমাদের দুজনের রাত।আজ রাতে তোমাকে আপন করে নিবো। ঠিক ততোটা আপন যতোটা আপন হলে কেউ কারো থেকে দূরে যেতে পারবে না।তোমাকে আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশিয়ে নিবো ললিতা।আজ আবার তুমি নতুন করে ব‌উ সাজবে ।আর আমি সাজবো বর। শাফায়াত খুশি মনে বাড়িতে ফিরে কিচেনে উকি দেয়। কিন্তু সূরা কে পায় না। রেণু চা করছে দেখে শাফায়াত বললো, তুই চা করছিস কেনো? তোর ব‌উমনি কোথায়? ও কি এখনো ঘুম থেকে উঠেনি?”

-” আমি ক‌ইবার পারুম না ভাইজান।ভাবি তো হগ্গলের আগে উঠে সব কাম একা হাতে করে।আমারে তো কিচ্ছুটি করবার দেয় না। কিন্তু আজ তো তার কোনো খোঁজ খবর নেই। আমি ভাবছি হয়তো ভাবির গতর খারাপ করছে।তাই আর তারে বিরক্ত করি নি।”

-” ঠিক আছে তুই কাজ কর।আমি গিয়ে দেখছি মহারানীর কি হয়েছে? বাবাগো তার যে রাগ! আমাকে সামনে পেলে কাঁচা চিবিয়ে না খেয়ে ফেলে আবার।”

-” আপনে পুলিশ হয়েও ব‌উ রে ডরান ভাইজান ভাবা যায়।”

-” শাফায়াত প্রতিত্তরে কিছু না বলে নাজমা দেওয়ান এর রুমে এসে দরজা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়।যার কারণে শাফায়াত একটু অবাক হয়ে যায়।সে মনে মনে বললো, আশ্চর্য ! দরজা খোলা রয়েছে অথচ সূরা নিচে যায় নি কেনো? শাফায়াত তৎক্ষণাৎ রুমের ভেতরে প্রবেশ করে। কিন্তু ভেতরে গিয়ে সূরা কে পেয়ে আরেক দফা চমকে উঠে। শাফায়াত ওয়াশরুম , বেলকনি সব জায়গায় দেখে বাট কোথাও সূরা কে পায় নি। শাফায়াত হতাশ হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসতে যাবে ,তখনি টেবিলের উপর রাখা চিরকুটের দিকে তার নজর যায়। শাফায়াত কালবিলম্ব না করে চিরকুট পড়তে শুরু করে ।চিরকুটে লেখা ছিলো,

-” আমি জানি যখন আপনি আমার এই লেখাটা হাতে পাবেন তখন আমি কোথায় থাকবো আমি নিজেও জানি না।কারণ আমার যে নির্দিষ্ট কোনো থাকার জায়গা নেই।বাবা মাকে হারোনোর পর ছোটবেলা থেকে চাচির সংসারে নির্যাতিত হয়ে বড় হয়েছি। এরপর আপনাদের সংসারে গিয়ে মায়ের , বোনের ভালোবাসা পেয়েছি। কিছু সময়ের জন্য বরের ভালোবাসা ও পেয়েছি।জানেন সুন্দর ব্যাডা মানুষ আপনি যখন আমার আশেপাশে থাকতেন , আমাকে ছুঁয়ে দিতেন ,তখন নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ব্যক্তি মনে হতো। কিন্তু আমি যে অনেক লোভী। অতটুকু সুখে আমার পোষায় নি‌। আমি আরো সুখের নাগাল পেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেই মূহূর্তে একটা দমকা হাওয়া এসে আমার জীবন টা পাল্টে দিলো। আমার থেকে আমার সব টুকু সুখ কেড়ে নিলো।আপনি হয়তো ভেবেছিলেন আরাব ভাই কে আমি পছন্দ করি। কিন্তু আপনি বিশ্বাস করেন পুলিশ আমি আরাব ভাই কে পছন্দ করা তো দূরের কথা , তার চেহারার দিকেও তাকিয়ে দেখি নি সে দেখতে কেমন।কারণ আমার মনটা যে সবসময় আমার সুন্দর ব্যাডা মানুষের কাছে পড়ে থাকতো। আমার মনটা যে আপনারি । আপনার মন আপনার অনুমতি ছাড়া অন্য কাউকে দেওয়ার কোনো অধিকার যে আমার নেই।বড্ড ভালোবাসি আপনাকে।আর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আপনাকে’ই ভালোবেসে যাবো। আমার ভালোবাসার গভীরতা অনেক বেশি ছিলো পুলিশ। আমি আপনার পাশে কাজের মেয়ে রেণু কেও সহ্য করতে পারতাম না। সেইখানে তরীর আপু কে কিভাবে সহ্য করতাম বলুন।আপনি চিরদিনের জন্য অন্য কারো হবেন এটা আমি সহ্য করতে পারতাম না পুলিশ।আমি হয়তো হার্ট অ্যাটাক করে মারা যেতাম।তাই তো আমি আপনার থেকে দূরে চলে এলাম।আমি না হয় আপনাকে দূর থেকে আপনাকে ভালোবেসে যাবো।ভালো থাকবেন পুলিশ। নিজের শরীরের যত্ন নিবেন।মা , নুজাইফা , আব্বা সবার খেয়াল রাখবেন।আপনারা ভালো থাকলেই যে আমি ভালো থাকবো।”

-” চিরকুট টা পড়ে শাফায়াত ড্রেসিং টেবিলে ঘুষি মেরে দেয়।যার ফলস্বরূপ ড্রেসিং টেবিল ভেঙ্গে গুড়িয়ে যায়। মূহুর্তের মধ্যে শাফায়াতের হাত থেকে গলগল করে তাজা রক্ত বেরিয়ে আসে। কিন্তু সেদিকে কোনো খেয়াল নেই শাফায়াতের। শাফায়াত চিৎকার করে বললো, এটা তুই কি করলি সূরা? তোকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে দেখি তুই নিজেই আমার জন্য সারপ্রাইজ রেখেছিস।তোর সুন্দর ব্যাডা মানুষ কে এই চিনতে পেরেছিস তুই? আমার উপর একটুও বিশ্বাস ছিলো না তোর? কিভাবে পারলি আমার ছেড়ে চলে যাওয়ার মতো দুঃসাহস দেখাতে? কিভাবে পারলি বলে পাগলের মতো আচরণ করতে থাকে শাফায়াত। শাফায়াতের চিৎকার শুনে সবাই দৌড়ে রুমে এসে শাফায়াতের এই অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায়। শফিকুল দেওয়ান এর সাহস হয় না শাফায়াতের কাছে যাওয়ার।কারণ সে খুব ভালো করে জানে সূরা শুধু মাত্র তার জন্য এই বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। শফিকুল দেওয়ান নিজের কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বললো, আমার আম ও গেলো আর সাথে বস্তাও গেলো। ভেবেছিলাম তরীর সাথে শাফির বিয়ে দিয়ে আমি কোটি কোটি টাকার মালিক হবো। কিন্তু ঐ বেয়াদব মেয়ে আমার পাকা ধানে ম‌ই দিয়ে রাতে তার বয়ফ্রেন্ড তাসিনের সাথে পালিয়ে গিয়ে তাকে বিয়ে করে নিয়েছে। এদিকে আবার গাইয়া মেয়েটা বোকামি করে বাড়ি ছেড়ে চলে গেলো। নাজমা রাগারাগী করে গ্ৰামের বাড়িতে চলে গেলো।আমি টাকা দিয়ে সেলিমের এক্সিডেন্ট করালাম। নিজের ‌স্বার্থে কখন যে এতো গুলো অপরাধের সাথে জড়িত হয়ে পড়েছি নিজেও বুঝতে পারি নি।শাফি যখন জানতে পারবে সবকিছুর পেছনে আমি রয়েছে বাবা বলে সে আমাকে ছেড়ে কথা বলবে না।আমার জেলের ঘানি টানতে হবে।জেলে পচে মরতে হবে আমাকে।না ,না আমি কিছুতেই এটা হতে দিতে পারি না।আমাকে অন্য কোনো চাল চালতে হবে।যাতে সাপ ও মরে আর লাঠি ও না ভাঙ্গে। শফিকুল দেওয়ান শাফায়াত কে অনেক বুঝিয়ে নুজাইফার সাথে নিচে পাঠিয়ে দিয়ে নাজমা দেওয়ান এর লকার থেকে সমস্ত টাকা, পয়সা গয়না খুব সাবধানে অন্যত্র সরিয়ে নিচে এসে বললো, সর্বনাশ হয়ে গেছে রে শাফি।”

-” কেনো বাবা কি হয়েছে।”

-” ঐ গাইয়া মেয়েটা তো পাক্কা একটা চোর রে। মেয়েটা নাজমার লকার থেকে সমস্ত টাকা, পয়সা,গহনা চুরি করে নিয়ে পালিয়েছে।আমি আগেই জানতাম মেয়েটা এমন কিছু একটা করবে।সবাই তো মাথায় করে রাখতো মেয়েটাকে।কত্তো ভালোবাসাতো।তোদের সেই ভালোবাসার প্রতিদান স্বরূপ মেয়েটা সবকিছু চুরি করে নিয়ে রাতের আঁধারে পালিয়ে গেলো।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

#এই_মন_তোমারি

#পর্ব_৩১

#লেখনীতে_নুজাইফা_নূন

-” ঐ গাইয়া মেয়েটা তো পাক্কা একটা চোর রে। মেয়েটা নাজমার লকার থেকে সমস্ত টাকা পয়সা গহনা চুরি করে নিয়ে পালিয়েছে। আমি আগেই জানতাম মেয়েটা এমন কিছু একটা করবে।সবাই তো মাথায় করে রাখতো মেয়েটাকে।কত্তো ভালোবাসতো। তোদের সেই ভালোবাসার প্রতিদান স্বরূপ মেয়েটা সবকিছু চুরি করে নিয়ে রাতের আঁধারে পালিয়ে গেলো।”

-“সূরা গরীব হতে পারে বাবা কিন্তু লোভী নয়।”

-” তার মানে তুই কি বলতে চায়ছিস আমি মিথ্যা কথা বলছি? ঠিক আছে তোর যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে তুই নিজে গিয়ে দেখ লকার একদম খালি পড়ে আছে।”

-” আমি বলছি না যে তুমি মিথ্যা কথা বলছো।সূরা আম্মির রুমে থাকলে ও লকারের চাবি কোথায় থাকে এটা কিন্তু সূরা জানতো না।লকারের চাবির ব্যাপারে একমাত্র তুমি আর আম্মি জানো।”

-” তুই কি আমার দিকে আঙ্গুল তুলছিস শাফি? তোর কি মনে হয় আমি লকার থেকে সমস্ত কিছু চুরি করেছি? তুই আমার ছেলে হয়ে আমাকে চোরের অপবাদ দিচ্ছিস শাফি?”

-” তুমি এতো হাইপার হচ্ছো কেনো বাবা? আমি কি একবারও বলেছি তুমি সব কিছু চুরি করেছো? আমি তোমাকে বিশ্বাস করি বাবা।তবে সূরা কেও অবিশ্বাস ‌করি না। আমি জানি সূরা কখনো চুরির মতো এমন জঘন্য একটা কাজ করতে পারে না। ”

-” তুমি একদম ঠিক কথা বলছো ভাইয়া।ভাবিমনি কখনো চুরি করতে পারে না নুজাইফা শাফায়াতের হাতে ল্যাপটপ দিয়ে বললো, এই দেখো তার প্রমাণ।বাড়ির বাইরের সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ।লকারে অনেক টাকা , গহনা ছিলো। যেগুলো ক্যারি করার জন্য বড়ো কোনো ব্যাগের প্রয়োজন হবে। কিন্তু দেখো ভাবিমনির হাতে শুধু মাত্র একটা হ্যান্ডপার্স।যার মধ্যে সামান্য কয়টা টাকা ক্যারি করা যায়।তার মানে ভাবিমনি চুরি করে পালিয়ে যায় নি। আবার লকার ও ফাঁকা রয়েছে।তাহলে এতো‌গুলো টাকা পয়সা গহনা গেলো কোথায়?”

-“লকার হয়তো ফাঁকা রয়েছে।তবে টাকা , গহনা বাড়ির বাইরে যায় নি। সবকিছু বাড়ির ভেতরেই রয়েছে। তুই হয়তো ভুলে গিয়েছিস আমি পেশায় একজন পুলিশ।চোর ধরা আমার বা হাতের খেল। কিন্তু এখন আমি চোরের পিছনে ছুটতে চাইছি না। আমার যে সূরা কে খুঁজতে হবে। মেয়েটা আমার উপর অভিমান করে আমার থেকে দূরে চলে গেলো। মেয়েটা যে আমার রন্ধ্রে মিশে গেছে। আমি কিভাবে পারবো তাকে ছাড়া বাঁচতে বলে পাগলের মতো চিৎকার করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো শাফায়াত।

-” সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ঘামতে শুরু করে শফিকুল দেওয়ান।সিসি ক্যামেরার কথাটা তার মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো।সে কি করবে বুঝতে না পেরে গহনা টাকা পয়সা সবকিছু নিয়ে তার গুপ্ত কুঠুরি তে লুকিয়ে রাখলো।”

___________________________________

-” দেখতে দেখতে অতিবাহিত হয়ে গেল সাত দিন।এই সাত দিনে প্রায় পাগল হয়ে গেছে শাফায়াত।মুখ ভর্তি দাড়ি , চুল বড় বড় হয়ে গিয়েছে। চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গিয়েছে। শাফায়াত নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে দিন নেই রাত নেই সূরা কে খুঁজে চলেছে। প্রত্যেক থানায় থানায় মিসিং ডায়েরী করা হয়েছে। কিন্তু ফলাফল শূন্য । সূরার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।সূরার নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ শুনে নাজমা দেওয়ান ও বাপের বাড়ি থেকে চলে এসেছেন। তিনি সবটা শোনার পর শাফায়াত কে সূরার নিখোঁজ হওয়ার জন্য দায়ী করছেন। অভিমানে শাফায়াত কে তাকে আম্মি ডাকতে নিষেধ করে দিয়েছেন। শাফায়াত তার সাধ্য মতো চেষ্টা করছে সূরা কে খুঁজে বের করার। সারাদিন দৌড়ঝাঁপের পর রাতে শাফায়াত বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিয়ে শান্তি পায় না।বিছানার অপাশ , ওপাশ করতে হবে।মনে হয় যেন তার দামি জিনিস টা তার থেকে হারিয়ে গিয়েছে। শাফায়াত অনেকক্ষণ যাবৎ ঘুমোনোর চেষ্টা করেও ঘুমোতে পারলো না।সে উঠে সূরা ছবি বের করে ফোনের স্ক্রিনে সূরার ছবিতে অসংখ্য চুমু দিয়ে বললো,

-” তুই আসলেই ছলনাময়ী। তুই আমার সাথে ছলনা করেছিস। আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়ে নিজে দিব্যি শান্তিতে ঘুমোচ্ছিস তাই না? আমাকে যদি তোর ছেড়ে যাওয়ার’ই ছিলো কেনো আমার হৃদয়ে প্রেমের জোয়ার নিয়ে এসেছিলি? কেনো সূরা কেনো বলে দেয়ালে ঘুসি মেরে দেয় ‌শাফায়াত।যার ফলস্বরূপ পুরোনো ক্ষত তাজা হয়ে সেখান থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সেদিকে কোনো খেয়াল নেই শাফায়াতের।সে রাতে ও শাফায়াতের নির্ঘুমে কেটে যায়। পরেরদিন সকালে শাফায়াত রেডি হয়ে বের হবে এমন সময় তার ফোন বেজে উঠে। শাফায়াত দেখলো ফোনের স্ক্রিনে ডক্টর নাম টা জ্বলজ্বল করছে।ডক্টর নাম টা দেখেই শাফায়াতের মিলির কথা স্বরন হলো।এ কয়দিন সূরার পেছনে ছুটতে গিয়ে মিলির কথা টা মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো শাফায়াতের। শাফায়াত আর এক মুহূর্ত দেরি না করে হসপিটালে ছুটে যায়। সেখানে গিয়ে শাফায়াত মিলির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,

-“আন্টি আপনি বোধহয় ভাবছেন আমি আর আপনাকে নিতে আসবো না তাই না?”

-“আমি জানতাম তুমি আসবে বাবা। তোমার প্রতি বিশ্বাস ছিলো আমার। কেনো জানি তোমাকে দেখার পর আমার আপন মনে হয়েছিলো। মনে হচ্ছিলো যেন তুমি আমার রক্তের কেউ। তাছাড়া তুমি যদি নাও আসতে আমার কোনো আফসোস ছিলো না বাবা। এমনিতেই আমার জন্য তুমি অনেক ত্যাগ স্বীকার করছো। কতো গুলো টাকা খরচা হয়ে গেলো তোমার। আমার তোমার কাছে সারাজীবন ঋণী হয়ে থাকবো বাবা। কিন্তু তোমার এই অবস্থা হয়েছে কেনো বাবা? তোমাকে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে? কেমন বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে? সবকিছু ঠিক আছে তো?”

-” একটা সময় সব কিছু ঠিক ছিলো আন্টি। হঠাৎ একটা ঝড় এসে আমার সাজানো গোছানো জীবন টা এলোমেলো করে দিয়ে গেলো। অত্যন্ত দামি জিনিস জীবন থেকে হারিয়ে গেলো । আমার বেঁচে থাকার সম্বল টুকু কেড়ে নিয়ে গেলো বলে চোখের পানি মুছলো শাফায়াত।”

-” কি হারিয়েছে বাবা?”

-” মেয়েরা এমন কেনো হয় আন্টি? কেনো পুরুষ মানুষের মান অভিমান ভালোবাসা তারা বুঝতে পারে না।ও আমার ব‌উ ছিলো।আমি ভালোবাসতাম তাকে। তবুও সে আমার উপর অভিমান করে আমাকে ছেড়ে চলে গেলো।”

-” মেয়েটা অনেক ভাগ্যবতী। এমন ভাগ্য কটা মেয়ের হয়? যে মেয়ের অনুপস্থিতি তে তার স্বামীর চোখ থেকে পানি পড়ে সেই মেয়ের মতো ভাগ্যবতী দ্বিতীয় কেউ হতে পারে না।জানো বাবা মেয়েটার সাথে আমার সাদৃশ্য রয়েছে।আমি ও এমন ভুল করেছিলাম।আমি নিজের সুখের জন্য স্বামী , সংসার, সন্তান ছেড়ে চলে এসেছিলাম। কিন্তু আল্লাহ ছাড় দেন ছেড়ে দেন না। আমার পাপের শাস্তি আমি পেয়েছি। কিন্তু মেয়েটার সাথে যেনো এমন কিছু না হয়।”

-” মেয়েটা নিজের সুখের জন্য নয় বরং আমার সুখের কথা ভেবে আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে।মিলি শাফায়াতের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো , কাঁদে না বাবা।দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে। অতঃপর শাফায়াতের হসপিটালের সমস্ত ফর্মালিটি পূরণ করে মিলি করে নিজের গাড়িতে করে নাজমা মঞ্জিলের উদ্দেশ্য র‌ওনা হয়।”

-” শফিকুল দেওয়ান চায়ে চুমুক দিচ্ছেন আর ভাবছেন তার পরবর্তী প্ল্যান কি করবেন।চুরির ব্যাপার টা কিভাবে ধামাচাপা দিবেন। হঠাৎ কিছু একটা ভেবে তিনি বললেন, এই ব্যাপার টা তো আমি আগে ভেবে দেখি নি।আমি তো গহনা টাকা রেণুর ঘরে রেখে এসে চুরির দোষ রেণুর ঘাড়েও চাপিয়ে দিতে পারি।আর এতে কেউ কোনো সন্দেহ ও করবে না।সবাই ভাববে কাজের মেয়ে টাকার প্রয়োজন ছিলো তাই চুরি করেছে ।ব্যাস হয়ে গেলো। এসব ভেবে পৌশাচিক হাসিতে মেতে উঠেন শফিকুল দেওয়ান।আর তখনি কলিং বেল বেজে উঠে।নিচে তখন শফিকুল দেওয়ান বাদে কেউ ছিলো না।তাই শফিকুল দেওয়ান চায়ে চুমুক দিতে দিতে দরজা খুলে দেন। কিন্তু দরজা খুলে তিনি যেনো ভূত দেখার মতো চমকে উঠেন।তার হাত থেকে আপনা আপনি চায়ের কাপ ফ্লোরে পড়ে ভেঙ্গে গুড়িয়ে যায়।তিনি অনেক টা অবাক হ‌ওয়া কন্ঠে বলে উঠলো, তুই এইখানে??”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।