#এই_মন_তোমারি [ মহা ধামাকা]
#পর্ব_৩৪
#লেখনীতে_নুজাইফা_নূন
-” সূরা মা’রা গিয়েছে শাফি।এটা তুই কেনো বুঝতে চায়ছিস না? তুই মানিস বা না মানিস এটাই চরম সত্যি।”
-“আর ইউ ক্রেজি বাবা? তুমি জানো তুমি কি বলছো?”
-” হ্যাঁ জানি।যেটা সত্যি সেটাই বলছি।সূরা আর এই পৃথিবীতে নেই।এই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে সে তার নিজের বাড়ি চলে গিয়েছে।”
-” এটা হতে পারে না।আমি মানি না।সব কিছু মিথ্যে। আমার সূরা আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে না।”
-” তাহলে কি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ , বাস এক্সিডেন্ট সবটা মিথ্যে।”
-” এমন ও তো হতে পারে ঐ বাসে সূরা ছিলো না।”
-” তাহলে কি তুই যেসব ভিডিও ক্লিপ জোগাড় করেছিস সেগুলো সব মিথ্যে ছিলো?প্রতিত্তরে শাফায়াত কি বলবে বুঝতে পারে না। সত্যিই তো সিসি ক্যামেরার ফুটেজে স্পষ্ট সূরা কে বাসে উঠতে দেখা গিয়েছে।যেই বাস বরিশাল যাওয়ার জন্য যাত্রীদের তুলেছিলো। কিন্তু মাঝপথে সেই বাসের এক্সিডেন্ট হয়। ঘটনাস্থল থেকে জানা যায় সেই বাসের যাত্রী থেকে শুরু করে ড্রাইভার হেল্পার কেউ’ই জীবিত নেই। শাফায়াত এ কয়টা দিন হন্যে হয়ে সূরা কে খুঁজেছে।তার বাড়ি থেকে শুরু করে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রতিটা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করেছে।সিসি ক্যামেরায় সূরা কে বাড়ি থেকে বের হতে দেখা গিয়েছে।আর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে বাসে উঠতে দেখা গিয়েছে।সূরা বোধহয় বস্তির রাস্তা ধরে বাসস্ট্যান্ড পৌঁছেছে । এজন্য তাকে সিসি ক্যামেরায় দেখা যায় নি। শাফায়াত খোঁজ নিয়ে জানতে পারে সেই বাসের কেউ আর জীবিত নেই।বাসের মধ্যে থাকা লাশ গুলোর এমন অবস্থা হয়েছিলো যে কাউকে চিহ্নিত করা কষ্টসাধ্য হয়ে গিয়েছিলো। এই কথা শোনার পর নাজমা দেওয়ান সেন্সলেস হয়ে যান।তাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়।এসব ঘটনায় মিলি হতভম্ব হয়ে যান।সূরা নাম শুনে বুক ধুক করে উঠে তার।তার ছোট্ট পরীটার চেহারা ভেসে ওঠে তার চোখের সামনে।তার পরীটার নাম ও যে সূরা ছিলো।নাইমা সূরার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে গিয়েও সবার এই অবস্থা দেখে আর সূরার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন না। নিজের মনের মনের মধ্যে চাপা কষ্ট রেখে দেন। শাফায়াতের দিকে তো তাকানোও যাচ্ছে না।সূরার মৃত্যুর খবর শুনে ছেলেটা মেয়েদের মতো হাউমাউ করে কান্না করেছে। নিজের রুমের সমস্ত জিনিস ভাংচুর করেছে। নিজেকে নিজে আঘাত করে রক্তাক্ত করে দিয়েছে।সে কিছুতেই মানতে চায়ছে না সূরা মারা গিয়েছে।সব মিলিয়ে নাজমা মঞ্জিলে শোকের কালো ছায়া নেমে এসেছে। নাজমা দেওয়ান একটু সুস্থ্য হলে তাকে হসপিটাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।রাতে নাজমা দেওয়ান নিজের ফোন থেকে সূরার ছবি বের করে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন এমন সময় নাইমা এসে ফোনের স্ক্রিনে পরিচিত একটা মুখ দেখে থমকে যান।তার যেনো পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যান।তিনি ভাবতেও পারেন নি এতো গুলো বছর তিনি তার পরীর দেখা পাবেন।সেটাও আবার যখন সে এই পৃথিবীতে থাকবে না।নাইমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠে পড়ে যাওয়ার আগেই শাফায়াত এসে নাইমা কে ধরে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বললো,
-“তুমি ঠিক আছো খালামনি? হঠাৎ তোমার আবার কি হলো?”
-” শাফায়াতের কথা শুনে নাইমা শাফায়াত কে জড়িয়ে ধরে বললো, আমার মেয়েটাকে আমি পেয়েও হারিয়ে ফেললাম শাফি। মেয়েটা কে শেষ বারের মতো আমার বুকে টেনে নিতে পারলাম না। আমার মতো এমন অভাগী হয়তো এই দুনিয়াতে দ্বিতীয় কেউ নেই।”
-” নাজমা তখন চোখের পানি মুছে বললো, তুই ঠিক কি বলতে চায়ছিস নাজমা?”
-” সূরা আর কেউ নয় আপা সূরা আমার মেয়ে।আমার সেই ছোট্ট পরীটা যাকে ছেড়ে আমি আমার নিজের সুখের খোঁজে বেড়িয়েছিলাম।”
-” তুমি শিওর খালামনি সূরা তোমারি মেয়ে?”
-” মা হয়ে মেয়েকে চিনতে পারবো না এটা কি করে হয় বল তো?আমি যখন সূরা কে ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম তখন সূরা ছোট ছিলো।এখন সে পরিপূর্ণ যুবতী হয়ে উঠেছে। তবু ও সেই আগের চোখ আগের নাক আগের চেহারা সব একই রয়েছে।আমার মেয়েটা এইভাবে আমাকে ছেড়ে চলে গেলো।একটা বার তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার ও জন্য সুযোগ দিলো না বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন নাইমা।”
-” এতোক্ষণ যাবৎ দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবটা শুনছিলো শফিকুল দেওয়ান।সবটা শোনার পর তিনি যেন পাথর হয়ে গিয়েছেন। নাইমা কে তিনি অনেক ভালোবাসতেন ।সূরা তার প্রিয়তমার মেয়ে।তার থেকে বড় কথা সূরা তার ভাগ্নি। যাকে সে প্রতিনিয়ত অপমান অবহেলা করেছে।তার জন্য এই নাজমা মঞ্জিল ছেড়েছে।আজ তার মৃত্যুর জন্য শফিকুল দেওয়ান নিজে দায়ী।এই প্রথম শফিকুল দেওয়ান সূরা কে ফিল করছে।সূরার আব্বা ডাক মিস করছে।তার ইচ্ছে করছে সূরা কে একবার বুকে জড়িয়ে নিতে। কিন্তু তার ইচ্ছা যে পূরন হওয়া সম্ভব নয়। সে যে এখন মৃতদের তালিকায় রয়েছে। এজন্যই হয়তো আসিফ আকবর তার কণ্ঠে গেয়েছেন ” মানুষ মইয়া গেলে কদর বাইড়া যায়।ও মানুষ মইরা গেলে কদর বাইড়া যায়।বাইচা থাকতে নিকৃষ্ট কয় , মরলে শ্রেষ্ঠ পদক পায়।ভবে বাইচা থাকতে নিকৃষ্ট কয়, মরলে শ্রেষ্ঠ পদক পায়।ও মানুষ মইরা গেলে কদর বাইড়া যায়।”
___________________________________
-” শাফায়াত গ্ৰামে এসেছে সূরার কাকা কে খবর দেওয়ার জন্য। সূরার মারা যাওয়ার কথা শুনে তিনি ও ভেঙ্গে পড়েন। কি কপাল তার। তার মেয়ের জামাই এই প্রথম তার বাড়িতে এসেছে সেটাও তার মেয়ের মৃত্যুর সংবাদ দিতে।এই খবরে সূরার চাচি কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বললো,
-“আমার সংসারে থাকতে মেয়েটা কে কম কষ্ট দেই নি আমি।আমার সংসারের সমস্ত কাজ ওকে দিয়ে করিয়েছি।দু বেলা দু মুঠো খাবার খেতে দেই নি। তবুও মেয়েটা টু শব্দটি করে নি।মুখ বুজে সবটা সহ্য করেছে।জানো বাবা মেয়েটা একদিন আমার কাছে রাজহাঁসের গোশত খেতে চেয়েছিলো।সেদিন আমি বিরক্ত হয়ে মেয়েটাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছিলাম।মেয়েটার চুলের মুঠি ধরে মেরেছিলাম।তখন একটু ও মায়া হয়নি আমার। কিন্তু বিয়ের পর আমি সূরার শূন্যতা অনুভব করতে পেরেছি। বুঝতে পেরেছি সূরা আমার জন্য কতোটা করেছে। কিছু দিন আগে আমি তোমার নানু বাড়ি কাজ কিছু টাকা জমিয়ে একটা রাজহাঁস কিনেছি।আমার সূরা কে নারকেল দিয়ে রান্না করে নিজে হাতে খাওয়াবো বলে। কিন্তু এসে এ কি সংবাদ দিলে বাবা?শেষ বারের মতো সূরার কাছে ক্ষমা ও চাইতেও পারলাম না।আমি যে আমার নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।”
-” শাফায়াত কোনো মতো তাদের কে বুঝিয়ে তার নানা নানু কে নিয়ে শহরের দিকে রওনা হলেন।তারা নিজের মেয়েকে ফিরে পেয়ে যতটা খুশি হয়েছেন তার থেকে বেশি কষ্ট পেয়েছেন সূরার মৃত্যুর খবর শুনে। মেয়েটা তাদের এতো কাছে থাকতে ও তারা চিনতে পারে নি। শাফায়াত ড্রাইভার এর পাশের সিটে বসে সূরার সাথে কাটানো মূহুর্তের কথা ভাবছে হঠাৎ সে রাস্তার পাশে মাজেদা খালা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ড্রাইভার কে গাড়ি থামাতে বলে। ড্রাইভার গাড়ি থামালে শাফায়াত গাড়ি থেকে বেরিয়ে মাজেদা খালা বলে ডাক দিতে’ই মাজেদা শাফায়াত কে জড়িয়ে ধরে চোখের সামনে ছেড়ে দিয়ে বললো, তুমি কেমন আছো বাবা? তোমার এই অবস্থা হয়েছে কেনো?সবাই ঠিক আছে তো? আমার সূরা পাগলি টা কেমন আছে? সে কি এখনো আগের মতো তোমাকে জ্বালিয়ে মারে? মেয়েটা আমাকে ভুলে গেছে তাই না।”
-” সবার কথা যদি এতোটায় ভাবো তাহলে কেনো ছেড়ে এসেছিলে আমাদের? আমাদের সাথে তুমি দশ বছর ছিলে।আমরা কেউ তোমাকে আমাদের বাড়ির কাজের লোক মনে করি নি। তোমাকে আমাদের পরিবারের একজন সদস্য মনে করেছি। তবু ও তুমি কেনো আমাদের ছেড়ে চলে এসেছিলে? এমনকি তোমার সিম কার্ড টা পরিবর্তন করে ফেলেছো? কেনো খালা? কিসে কম ছিলো তোমার? আমরা তোমাকে যে টাকা দিতাম সেটা যদি তোমার জন্য কম হয়ে যেতো , তুমি আমাদের বলতে পারতে। কাউকে না বললে ও আমাকে বলতে পারতে। আমি তোমার বেতন বাড়িয়ে দিতাম।”
-” আমি তোমাদের ছেড়ে আসতে চাই নি বাজান।আমাকে নাজমা মঞ্জিল ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিলো।।”
চলবে ইনশাআল্লাহ।।।
#এই_মন_তোমারি [ মুখোশ উন্মোচন]
#পর্ব_৩৫
#লেখনীতে_নুজাইফা_নূন
-” আমি তোমাদের ছেড়ে আসতে চাইনি বাজান।আমাকে নাজমা মঞ্জিল ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিলো।তোমরা যেমন আমাকে তোমাদের পরিবারের একজন সদস্য মনে করতে, তেমনি আমিও তোমাদের কে আমার পরিবার মনে করতাম।দশ টা বছর তোমাদের নূন খেয়েছি। সবসময় মনে হয়েছে বাড়িটা আমার নিজের।যখন যা মন চেয়েছে তাই করেছি।আমি চেয়েছিলাম বাকি জীবন টাও তোমাদের সাথে কাটিয়ে দিবো। কিন্তু আমার ভাগ্যে জোটে নি। তোমাদের বাড়ি থেকে এসে আমার সংসারে অভাব অনটন শুরু হয়েছে।গ্ৰামে কাজের লোকদের কেউ দাম দেয় না বাজান।তারা শুধু মাত্র নামমাত্র বড়লোক। কিন্তু তাদের ব্যবহার ছোটলোকের মতো। তাদের বাড়ির সব কাজ করে দিলেও মাস শেষে এক হাজার টাকা ও দিতে চায় না। এ কয়টা মাস যে আমার সংসার কতো কষ্টে চলছে শুধু মাত্র আমি জানি। সেসব বাদ দাও বাজান।যা হবার তা হয়ে গেছে।এখন আর সেসব বলে লাভ নেই। আমার সূরা পাগলি টা কেমন আছে বললে না তো বাজান?”
-“সূরা আর বেঁচে নেই খালা।আমি সূরার কাকাকে সূরার মৃত্যুর খবর জানতে এসেছিলাম।”
-“এসব কি বলছো তুমি? আমাকে মিথ্যে বলছো তাই না?”
-” মিথ্যা না।এটাই সত্যি যে সূরা আর বেঁচে নেই।একটা বাস এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছে।আমরা তার লাশ টাও পাই নি।”
-” বাস এক্সিডেন্ট মানে? সূরা কি কোথাও গিয়েছিলো?”
-” হ্যাঁ বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলো।এসব হয়েছে আমার জন্য খালা। তুমি আসার আগ পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে চলছিলো। তুমি তো জানো আরাব সূরা কে পড়াতে এসেছিলো।আরাবের সাথে সূরা কে দেখে আমার জেলাস ফিল হয়।সূরা কে হারানোর ভয় জেঁকে বসে।আমি বুঝতে পারছিলাম না আমার ভয়ের কারণ টা কি। এরপর আমি উপলব্ধি করতে পারলাম যে আমি সূরা কে ভালোবাসি। এজন্য সূরা অন্য কারো সাথে হেসে হেসে কথা বলছে এটা আমার সহ্য হচ্ছিলো না।আমি সূরা কে আমার মনের কথা জানিয়ে দেই। তারপর থেকে সূরা আমাকে ইগনোর করতে শুরু করে।আমার সাথে ঠিকমতো কথা বলতো না, আমার রুমে আসতো না।সব দেখে আশাহত হয়ে যায় আমি।এর মধ্যে আবার বাবা তরীর সাথে আমার বিয়ের জন্য উঠেপড়ে লাগে।তরী আমার ফ্রেন্ড ছিলো। আমরা আগে থেকেই পরিচিত ছিলাম।আমরা দুজনে মিলে আমাদের বিয়ের নাটক করি।আমরা চেয়েছিলাম সূরা আম্মি সবাই কে সারপ্রাইজ দিতে। আমাদের প্ল্যান ছিলো বিয়ের দিন আমি সূরা কে বিয়ে করবো।আর তরী তার বয়ফ্রেন্ড তাসিন কে বিয়ে করবে। কিন্তু সূরা ভাবে আমি সত্যি সত্যিই তরী কে ভালোবেসে বিয়ে করছি।বোকা মেয়ে আমাদের নাটক কে সত্যি মনে করে বৃহস্পতিবার রাতে সবাই ঘুমোনোর পর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।সেই বেরিয়েছে সূরা আর ফিরে আসে নি।এসেছে সূরার মৃত্যুর খবর।”
-” সব কিছু শুনে মাজেদা স্তব্ধ হয়ে রাস্তায় বসে পড়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে পড়লো, এসব হয়েছে আমার জন্য।আমি যদি সেদিন সবটা বলে দিতাম তাহলে আজ হয়তো সূরা বেঁচে থাকতো।সূরার মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী।”
-” এসব তুমি কি বলছো খালা?”
-” আমি ঠিকই বলছি। আমাদের সবার একটাই পরিচয় আমরা মানুষ। কিন্তু আমাদের সমাজে মানুষের মুখোশ পরে অনেক অমানুষ ঘুরে বেড়ায়।সেই অমানুষের মধ্যে একজন হলো তোমার বাবা শফিকুল দেওয়ান।যে নিজের স্বার্থের জন্য সব করতে পারে।”
-” খালা তুমি কার সর্ম্পকে কি বলছো জানো? শফিকুল দেওয়ান বাবা হয় আমার। হ্যাঁ আমি জানি আমার বাবা খারাপ তাই বলে এতোটাও খারাপ না যতোটা তুমি বলছো।তোমাকে ভালোবাসি , সম্মান করি তার মানে এই নয় যে তুমি আমার বাবার সম্পর্কে যা নয় তাই বলবে।”
-” আমি জানতাম তুমি তোমার বাবার নামে অপবাদ সহ্য করতে পারবে না। তোমার বাবার নামে কিছু বললে বিশ্বাস করতে পারবে না। অতঃপর মাজেদা শাফায়াতের হাতে একটা ভিডিও প্লে করে দিয়ে বললো, এজন্য আমি প্রমাণ স্বরূপ এই ভিডিও টা করে রেখেছিলাম। ভেবেছিলাম তুমি হয়তো সত্যটা যাচাই করতে আমার কাছে আসবে। কিন্তু তুমি তো তোমার বাবা কে অন্ধের মতো বিশ্বাস করো। ভিডিও ও টা দেখে শাফায়াত বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।চোখের কার্ণিশ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।সে ভাবতেও পারে নি তারা বাবা এতোটা নিচু মানসিকতার লোক। তৎক্ষণাৎ শাফায়াতের সূরার বলা কথাটা মনে পড়ে গেল।সূরা বলেছিলো আমি নিজের ইচ্ছায় কিছু করছি না।আমাকে বাধ্য করা হয়েছে। অথচ শাফায়াত ভেবেছিলো সূরা মিথ্যা এক্সকিউজ দিচ্ছে। শাফায়াতের ভাবনার মাঝে মাজেদা বললো,
-” সেদিন সূরা তোমার রুম থেকে বের হওয়ার পর তোমার বাবার মুখোমুখি হয়।আমি তখন নুজাইফার রুম থেকে বের হচ্ছিলাম , আর তখনি সূরা আর তোমার বাবার কথা শুনে সাইডে দাঁড়িয়ে সবটা ভিডিও করছিলাম।তোমার বাবা নিজের স্বার্থের জন্য তরীর সাথে তোমার বিয়ে দিতে চেয়েছিলো।সেলিম কে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে সূরা কে তোমার থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছিলো। ভিডিও তে নিশ্চয় দেখেছো মেয়েটা কিভাবে তোমার বাবার পা জড়িয়ে ধরে আকুতি মিনতি করছিলো । তবুও তোমার পাষাণ বাবার হৃদয় গলে নি।এক পর্যায়ে ভাইজান আমাকে দরজায় দাঁড়িয়ে তাদের কথা শুনতে দেখে ফেলে।ভাগ্য ভালো যে ভাইজান ভিডিও করতে দেখে নি। ভাইজান কে দেখে তখন আমার ঘৃণা হচ্ছিলো।সে আমার মালিক ভুলে গিয়ে বলেছিলাম,
-” ছিঃ ভাইজান ছিঃ আপনি নিজের স্বার্থের জন্য এতোটা নিচে নামতে পারেন? আমি এই নিষ্পাপ মেয়ের সাথে কোনো অন্যায় হতে দিবো না। আমি নিচে গিয়ে সবাইকে সব সত্যি টা বলে দিবো।”
-” তুই যখন সবটা জেনে গিয়েছিস তখন আর তোর থেকে কিছু লুকিয়ে লাভ নেই।একটা খু’ন করলে ও যে শাস্তি দশটা খু’নে’র ও সেই শাস্তি। তোর একটা মাত্র ছেলে তাই না? নিজের ছেলের ভালো যদি চাস তাহলে আজ এক্ষুনি এই মুহূর্তে নাজমা মঞ্জিল ছেড়ে চলে যাবি।নাজমা কে বলবি তোর আর এই বাড়িতে কাজ করতে ভালো লাগছে না ।ব্যাস তোকে যেনো এই বাড়িতে আর কখনো না দেখি।তাহলে তোকে মা ডাকার মতো আর কেউ থাকবে না।”
-” নিজের ছেলের ভালো কে না চায় বলো তো বাজান। ভাইজান কে নিয়ে আমার বিশ্বাস ছিলো না।সে আমার ছেলের সাথে যা নয় তাই করতে পারতো। আমার ছেলেটার কথা ভেবে আমি নাজমা মঞ্জিল ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়। পাপ যেমন বাপকেও ছাড়ে না। তেমনি ভাইজান কে ও ছাড়বে না। ভাইজান তার কর্মের ফল অবশ্যই ভোগ করবে।কারণ আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না।”
_________________________________
-” শফিকুল দেওয়ান প্ল্যান করেছে সেই চুরি করা গহনা , টাকা নিয়ে চুপিচুপি রেণুর রুমে রেখে এসে রেণুর ঘাড়ে সমস্ত চুরির দায় দিবেন। বাড়িতে শাফায়াতের নানা নানু সবাই এসেছেন। নিজের মেয়েকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ আর নাতনির মৃত্যুর খবরে তাদের মধ্যে শোকের কালো ছায়া নেমে এসেছে।নিচে সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছেন।এই সুযোগে শফিকুল দেওয়ান তার গুপ্ত কুঠুরি তে এসেছেন টাকা , গহনা নিতে। কিন্তু এইখানে এসে তার চক্ষু চড়কগাছ। কোথাও সেই টাকা , গহনা নেই। শফিকুল দেওয়ান মনে মনে বললো , টাকা গহনার ব্যাপারে তো আমি ছাড়া আর কেউ জানে না।তাহলে কোথায় গেলো এতো গুলো টাকা গহনা? শফিকুল দেওয়ান এর ভাবনার মাঝে রুমের লাইট জ্বলে উঠলো। শফিকুল ঘাবড়ে গিয়ে বললো , কে আছে রুমে?”
-” ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট মিষ্টার শফিকুল দেওয়ান।”
চলবে ইনশাআল্লাহ।।