একগুচ্ছ জারবেরা পর্ব-০২

0
263

#একগুচ্ছ_জারবেরা
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২

“প্রেয়শী দাড়া খেয়ে যা মা।”

আমি দ্রুত সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললাম,,,,
“আম্মু আজকে ক্যা’ন্টিন থেকে খেয়ে নি’বোনি এখন যাই দেরি হয়ে গিয়েছে।”

আমি হিয়াকে তা’ড়া দিয়ে বললাম,,,
“চল হিয়া এতো সময় তো নিজেই তাড়া দিচ্ছিলি তাহলে এখন কেনো দাঁড়িয়ে আছিস চল”

কথাটা বলেই হিয়াকে টা’নতে টা’নতে বের হলাম বাসা থেকে।রিকশা ঠিক করে চলে আসলাম ভার্সিটিতে।দেখতে দেখতে ৩টা বছর হয়ে গেলো।সেদিনের ঘটনা পর আমি আর আগের মতো নেই।কিন্তু কই আমি তো তাকে ভু*লতে পারিনি।আমি তো তাকে এখনো ভালোবাসি।খুব ভালোবাসি আমার আনফি ভাইয়াকে।তাকে ভু*লা স*ম্ভব না।

হিয়ার সাথে সাথে কথা বলতে বলতে ভার্সিটিতে ঢু*কতেছিলাম।হু’ট করে কারো সাথে ধা*ক্কা লেগে পরে যেতে নিলে কেউ হা’ত ধরে বাঁ’চিয়ে নিলো।সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সামনে দিকে তাকিয়ে দেখলাম একটা ছেলে ক্যা’বলা কা’ন্তে’র মতো হেসে দাঁড়িয়ে আছে।আমি বি*র*ক্তি নিয়ে বললাম,,,,
“স’রি আমি খেয়াল করিনি”

কথাটা বলে চলে আসতে নিলেই ছেলেটা সামনে এসে দাঁড়িয়ে দাঁ’ত কে’লিয়ে বলল,,,,
“হাই মিস আমি রাফিন আপনি”

বি*র*ক্তি*কর ক’ন্ঠে বললাম,,,
“স’রি আমি অপ’রিচিতদের সাথে কথাও বলি না”

“মিস প্লিজ প্লিজ আপনার নামটা বলুন”

“আপনার সমস্যাটা কি হ্যা বলুন তো বললাম না আপনায় আমি অপরিচিতদের সাথে কথা বলি না।”

ছেলেটাকে পা’শ কাটিয়ে চলে আসলাম।হিয়া বি’র’ক্তি নিয়ে বললল,,,
“এরা কোথা থেকে আসে য’ত্তসব ফা’উ’ল লোকজন”

ক্লাস করে ক্যা’ন্টিনে বসে আমি আর হিয়া গল্প করছিলাম।সাথে সকালের নাস্তাও করে নিলাম।গল্প করতে করতে হিয়া বলল,,,,
“আর কতো প্রেয়শী তুই কত দিন আর আনফি ভাইয়ার জন্য অ’পেক্ষা করবি।কম তো হলো না সময় ৩টা বছর কি কম। তোর কি এখনো মনে হয় আনফি ভাইয়া ফিরে আসবেন”

আমি মৃদু হেসে বললাম,,,,
“আমার ভালোবাসা সত্যি হলে অবশ্যই আনফি ভাইয়া আসবেন।আর মাত্র ৩টা বছরইতো হলো। বেশি তো না!আমি উনার জন্য আরো ৩বছর কেনো এ’কশো বছরও অ’পেক্ষা করতে পারি”

“এমন হয় না রে প্রেয় তুই বুঝতে পারছিস না।জীবনে চলার পথে কাউকে না কাউকে তো লাগে কেনো বুঝছিস না”

“হিয়া প্লিজ এইসব কথা বা’দ দে ভালো লাগছে না আমার”

ওখান থেকে বাসায় চলে আসি।কিছুই ভালো লাগে না আর।অ*স*য্য লাগে সব কিছু।আচ্ছা সে কি ভালো আছে আমায় ছা’ড়া।দীর্ঘ’শ্বাস ফেলে আপন মনে বিড়বিড় করে বললাম,,,,
“হয়তো!”

বাসায় আসতেই আরেক অ*শা*ন্তি বাবাই ও এখন আমায় বিয়ে দিতে চায়।উনারা কেনো বুঝতেছে না আমি আনফি ভাইয়া ছা’ড়া কারো হবো না আর হতেও চাই না।সবাইকে বলে এসেছি কেউ জো*ড় করলেই বাড়ি ছে’ড়ে চলে যাবো।সারাদিন রুম থেকে বে’র হলাম না।আম্মু বাবাই এসে খেতে ডেকে গেছ।আমি যাইনি!।বিকালের দিকে ছাদে আসলাম।সন্ধ্যা পর্যন্ত ছাদে বসে ছিলাম।বাসায় আসতেই আম্মু জো*র করে ভাত খাইয়ে দিলো। আম্মু আমাকে বলেছে তারা আর বিয়ে নিয়ে কিছু বলবে না।আজকেও আমি সেইদিনের মতো বেলকনিতে দাঁড়িয়ে।রাত অনেক হতে চললো কিন্তু আমার চো’খে ঘুম নেই।আমার প্রায় প্রতিটা রাতই র্নি*ঘুম কা’টে।নিজেকে সা’মলে নিয়েছি।লা’মপো’স্টের আলোতে একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে।চে’না যাচ্ছে না তাকে কে উনি!আমি ভালো করে দেখার চে’ষ্টা করলাম কিন্তু তার মুখ দেখতে পারলাম না।লোকটা উপরের দিকেই তাকিয়ে আছে।

উনি কে!আচ্ছা আনফি ভাইয়া না তো।উনি কি এসেছেন সত্যি। আমি ভালোকরে দেখার চে’ষ্টা করলাম। কিন্তু এখান থেকে দেখা যাচ্ছে না।আমি দৌড়ে নিচে নামতে লাগলাম।নিচে নামতে নামতে লোকটা হাওয়া।আচ্ছা আমি কি ভু*ল দেখেছি!এখানে কি আসলেই কেউ ছিলো না!মা*থা ব্যা’থা করছে এখন না ঘুমালে কালকে ভার্সিটি যেতে পারবো না।

____________

ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে নিচে নামতেই প্রিয়ম ভাইয়া বলল,,,,
“বনু খেয়ে নে তাড়াতাড়ি আমি এগিয়ে দিচ্ছি তোকে।”

আমি মা*থা নাড়ালাম। ভাইয়া বাইরে চলে গেলো।আমিও খেয়ে বাইরে আসলাম।ভাইয়া বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। আমি পেছনে বসতেই গাড়ি চালানো শুরু করলো।ভার্সিটির সামনে আমাকে নামিয়ে দিয়ে বলল,,,
“সাবধানে থাকিস বনু।”

ভাইয়ু চলে যেতেই হিয়া আমার কাছে এসে বলল,,,
“প্রিয়ম আসলো যে আজকে”

“আগে বল তুই আজকে ডাকতে গেলি না কেনো?”

“আরে আব্বু আমাকে দিয়ে গিছে তাই ডাকতে যেতে পারিনি সরিরে”

❝ইট’স ওকে। শোন প্রিয়ম ভাইয়াকে বলে দে যে তুই ভাইয়াকে ভালোবাসিস নাহলে শে’ষ পর্যন্ত না আমার মতো হয় তোর অবস্থা।আমি চাই না কেউ আমার মতো পরিস্থিতিতে পরুক❞

“হুম ভাবছি বলবো কিন্তু প্রিয়ম যে কি করবে তাই ভাবছি”

“যাই বলুক না কেনো তুই তাড়াতাড়ি বলবি কিন্তু”

কথা শে’ষ করে আমি আর হিয়া মাঠের দিকে যেতেই কালকের সেই ছেলেটা সামনে এসে দাঁড়ালো।মে*জা*জটা গ’র’ম হয়ে গেলো।আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললাম,,,,
“স’ম’স্যা কি আপনার”

“আমার স’ম’স্যা আপনি মিস প্রেয়শী আহসান”

বি*র*ক্তি নিয়ে বললাম,,,
❝আপনি আমার নাম জানলেন কীভাবে?❞

“জেনেছি মিস প্রিয় এবার বলুন ফ্রেন্ড হবেন”

রা*গ লাগলো প্র’চন্ড এই ছেলের সা’হস কতো আমাকে প্রিয় বলে!প্রিয় বলার অ’ধি’কার মাত্র তার আর কারো না।থা*প্প*ড় মে*রে বললাম,,,
❝সা’হস দেখে অবাক হচ্ছি আমি!আমি আপনাকে প্রিয় বলার অ’ধি’কার দিয়েছি হ্যা। আপনি বুজতে পারতিছেন না আমি বি*র*ক্ত হচ্ছি তাও কেনো কথা বলতে আসছেন❞

রা*গে ফো’সফা’স করতে করতে রাফিন নামক ছেলেটাকে কথাগুলো বললাম।রাফিন হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।ভার্সিটির প্রায় অনেকেই জ*ড়ো হয়ে গিয়েছে।হিয়া আমাকে শা*ন্ত করার চে’ষ্টা করছে।
আবারও রে*গে চি’ল্লি’য়ে বললাম,,,,
❝আর যদি আপনাকে আমার আশেপাশে দেখি তাহলে কিন্তু ভালো হবে না বলে দিলাম❞

হিয়া আমাকে টেনে ক্যান্টিনে নিয়ে আসলো।ফা’ল’তু ছেলে মেয়ে দেখলেই কথা বলতে ইচ্ছা করে।হিয়া আমার মা*থায় হাত বুলিয়ে বলল,,,
❝শা’ন্ত হ প্রেয়শী❞

❝আমি কি করে শা’ন্ত হবো বল ওই বেটার কতো সা’হস আমাকে প্রিয় বলে।প্রিয় বলবে শুধু আমার আনফি ভাইয়া❞

“ওকে ওকে শুধু শা’ন্ত হ”

“হুম।”

প্রথম ক্লাসটা মিস হলো ওই ফা’ল’তু লোকটার জন্য।আমি আর হিয়া পরের ক্লাসগুলো করে বাসায় চলে আসলাম।
এভাবে সাতদিন পারহলো।আজকে ভার্সিটিতে এসে জানতে পারলাম নতুন স্যার আসছেন।উনি নাকি বিদেশ থেকে পড়ালেখা করেছেন।আমার তাতে কিছু যায় আসে।আজকে প্রিয়ম ভাইয়া আসবে আমাকে নিতে।আমিই আসতে বলেছি।আজকে নাকি হিয়া নিজের ম’নের কথা বলবে ভাইয়াকে।
ক্লাস শেষে ভার্সিটি থেকে বের হয়েই দেখি ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে।আমি ভাইয়াকে দেখে ভাইয়ার কাছে গিয়ে বললাম,,,
❝ভাইয়া ঘুরতে নিয়ে যাবে।❞

প্রিয়ম প্রেয়শীর কথায় খুব অবাক হলো।সেই ৩বছর আগের ঘটনার পর থেকে প্রেয়শী কারো সাথে ঠিকভাবে কথা তো বলে না।আর আজকে তার কাছে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলছে।সে কি করে ফেলতে পারে তাই বলল,,,
“কোথায় যাবি বল আমি এখনি নিয়ে যাচ্ছি”

“ওকে চলো নদীর পাড়ে যাই”

ভাইয়া আমি আর হিয়া নদীর পাড়ে আসলাম।আমি ভাইয়াকে আইসক্রিম আনতে পাঠিয়ে হিয়াকে বললাম,,,
❝ভাইয়া আসলেই বলবি❞

“হুম”

ভাইয়া আসতেই আমি হিয়াকে চো’খের ইশারায় বলতে বললাম।ও ভাইয়াকে বলল,,,
“প্রিয়ম ভাই আপনাকে কিছু বলতে চাই”

“কিরে হিয়া তুই আবার কবে থেকে অ’নুম’তি নেয়া শুরু করলি কথা বলার জন্য”

হিয়া আ’মতা আ’মতা করে বলল,,,
‘প্রিয়ম ভাই আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি বি’শ্বাস করুন।আমাকে প্লিজ ফেরাবেন না”

ভাইয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,,,
“দেখ হিয়া তোকে আমার ভালোলাগে কিন্তু কখনো আমি তোকে নিয়ে কখনো ভাবিনি।”

আমি ভাইয়াকে বললাম,,,
❝তুমি তো বললেই ভাইয়া ভালো লাগে ওকে তোমার। প্লিজ ফিরিয়ে দিও না।তোমার বনের মতো আর কোনো প্রেয়শী বানিও না প্লিজ❞

প্রিয়ম প্রেয়শীর চো’খের পানি দেখে থ’মকে গেলো।সে অ’স্থি’র হয়ে প্রেয়শীকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,
❝তুই কাঁদিস না প্রিয় আমি ওকে একসেপ্ট করবো কিন্তু আমার তোর জন্য সবার আগে একটা শ’র্ত আছে❞

“কি শ’র্ত ভাইয়া”

❝তুই এখন থেকে সবার সাথে আগের মতো হওয়ার চে’ষ্টা করবি।ফুফি এখনো তোর জন্য কাঁ’দে!আম্মু বাবাইও তোর জন্য ম*ন খা’রাপ করে তুই বুঝতে পারছিস তুই তাদের একমাত্র মেয়ে প্রিয়❞

আমি মা*থা নাড়িয়ে বললাম,,,
“আমি বুঝেছি ভাইয়া”

“আর হিয়া শোন তোকে আমার ভালো কিন্তু আমি তোকে ভালোবাসি না!কিন্তু ভালোবাসতে চাই।”

“আমি রাজি”

_____________

সেদিনের মত বাসায় চলে গেছিলাম।আজকে ভার্সিটিতে এসে মোটেও থাকতে পারছি সব মেয়েদের মুখে সেই নতুন স্যার কেমন এই কথা।গবেষণা করেই চলেছে।স্যার অবিবাহিত বলেই এতো গবেষণা করছে মেয়েরা।খুব হাসি পেলো আমার।এইতো কিছু দিন আগেই একটা স্যার নতুন জয়েন করেছিলেন।স্যারটাকে নিয়ে প্রথমে মা’তা’মা’তি করলেও পরে যখন সবাই জানতে পারলো যে স্যার বিবাহিত তখন আর কেউ স্যারের নামও উ’চ্চা’রণ করেনি।সেদিন আমি আর হিয়া প্রচুর হেসেছিলাম।
আজকে একটু তাড়াতাড়িই চলে এসেছি।

ক্লাস ঢুকতেই নতুন স্যারের কথা শুনতে শুনতে বোরিং হয়ে গেলাম।এর মাঝেই একটা লোক ক্লাসে ঢুকলো।মুখ দেখা যাচ্ছে না মাস্ক পরার কারণে।লোকটা মাস্ক খুলতেই আমার মা*থা ঘু’রতে লাগলো…….

চলবে,,,,,,?