একজোড়া পায়রা পর্ব-১০

0
442

#একজোড়া_পায়রা
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট১০

ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু আমি।সবাই কেমন আড়চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে।বিশেষ করে মেয়েরা।ভীষণ অসস্থি লাগছে আমার।ভাবতে পারিনি কখনো এভাবে মানুষের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হবো।শান্ত ফোনের পর ফোন করছে।দেখেছে বোধহয় রিলেশন শীপ স্ট্যাটাসটা।আব্বু আম্মু দাদিকে কি কানপরা দেয় আল্লাহই জানেন।ক্লাসে ঢুকতেই ক্লাসের মেয়েরা আমায় ঘিরে ধরে।বিভিন্ন জন বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করছে আমায় নিয়ে।অনেকেই আমায় শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।আমার কাছে ট্রিট চাচ্ছে।কিন্তু বুশরা আর ওর ফ্রেন্ডরা আমায় নিয়ে নেগেটিভ কমেন্টই বেশি করছে।আমায় টেনে বাহিরে নিয়ে যায় ওরা।

-সত্যি করে বলো এটা ডেয়ার পোস্ট!

কড়া গলায় আমায় বলে বুশরা।মেয়েটাকে আমার একটুও সহ্য হয় না।বেশি ভাব দেখায়। আর সব কিছুকে নিজের বাপ দাদার সম্পত্তি মনে করে।যখন যা চায় তাই করবে।অন্যায় করলে কেউ কিছু বলতে পারবে না।বিরক্তিকর একটা মেয়ে!সব টাকা দিয়ে বিচার করে।আমি কখনো একে পাত্তা দিই নি।এবারও দেবো না।বুশরার কথাকে গায়ে না লাগিয়ে গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলি,,,

-উহু।এটা সিরিয়াস পোস্ট।
-তুমি জানো তুমি কার জিনিসে হাত দিয়েছো?শেখ শুভ্র শুধু আমার।
-কিভাবে?বাপের টাকায় কিনে নিয়েছো নাকি উনাকে?তুমি তো আবার সব টাকা দিয়ে বিচার করো
-শাট আপ।আমার বাবাকে নিয়ে কথা বলার কোনো রাইট নাই তোমার।
-বলিও নাই তোমার বাবাকে নিয়ে কথা।তোমার বাবার টাকা নিয়ে বলছি কথা।তুমি একটু বেশি শুনে ফেলছো।
-বেয়াদব মেয়ে!মুখে মুখে তর্ক করো।

কথাটা বলেই বুশরা আমায় চড় মারার জন্য হাত উঠায়।আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি।কিন্তু এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া না পাওয়ায় চোখ খুলে ফেলি।দেখি আমার পাশে শুভ্র।অগ্নি চোখে বুশরার দিকে তাকিয়ে ওর হাত ধরে আছে।

-তোমায় রিজেক্ট করেছিলাম বলে তার প্রতিশোধ মেঘের ওপর নিতে যাচ্ছো?টাকা দিয়ে না এই শুভ্রকে কেনা যায় না।

রিজেক্ট মানে?এই মেয়ে শুভ্রকে প্রপোজ করেছিলো নাকি?আল্লাহ কি সাহস মেয়ের!মন চাচ্ছে এখনই ঠাস করে লাগিয়ে গাল দুটো লাল টমেটো করে ফেলি।

– And listen! আমি শুধু মেঘের অন্য কারও নই।Understand? নেক্সট টাইম যেন মেঘের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে না দেখি।

তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে শুভ্র।শুভ্রের কথা পুরো আমার কলিজায় লাগলো।হায়!ছেলেটা এত কিউট কেন?সরি আমি তো একে দেখিই নাই।তো কিভাবে বললাম ছেলেটা কিউট?ধ্যাত!কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে!

-ক্লাসে যাও।আর কোনো প্রবলেম হলে জানিও।

উনার কথায় আমার ধ্যান ভাঙে।আমি আর কিছু বলি না।চুপচাপ মাথা নিচু করে ক্লাসে যাই।ক্লাসে যাওয়ার সময় হঠাৎ করেই খেয়াল করি ব্যাগে থাকা ফোনটা কাঁপছে।বের করে দেখি ভাইয়া পাঁচ বারের মতো মিসড কল দিয়েছে।আজ আমার হচ্ছে!বাড়ি থেকে সবাই কল দিচ্ছে রিলেশনশীপ স্ট্যাটাসটা নিয়ে।ভাইয়াও দেখেছে হয়তো তাই এতবার কল দিচ্ছে।ভাইয়ার ফোন রিসিভ করাই যায়।পুরো বাড়িতে সে ই একটা মানুষ যে আমায় বুঝে।তাও কেমন ভয় ভয় লাগছে!কাঁপা হাতে কল রিসিভ করি,,,

-হ্যালো ভাইয়া আসসালামু আলাইকুম
-ওয়ালাইকুম আস সালাম।ফেসবুকে কি স্ট্যাটাস দিয়েছিস।আর কে ই বা এই শেখ শুভ্র?কি করে এই ছেলে?আব্বা আম্মা যদি দেখে এসব কি হবে ভাবতে পারছিস?
-ভাইয়া আমার ক্লাস আছে।ক্লাস শেষে ফোন দিয়ে সব বলছি।

কেটে দেইই ভাইয়ার ফোন।কথা বলতে বলতে কখন ক্লাসে গিয়েছি টেরই পাই নি।ফুল মেয়েটা ভালোই আছে। আমার জন্য সীট ধরে রাখে মেয়েটা।আমায় ছাড়া নাকি তার ভাল্লাগে না।পাশে আবির বলেছে বাঁদরটা খালি আমায় মিসেস শেখ শুভ্র বলে ক্ষেপাচ্ছে।কেমন একটা অদ্ভুত ফিলিং আসছে!কোনো রকমে ক্লাস শেষ করে শুভ্রর ডিপার্টমেন্টে যাই।কিন্তু গিয়ে শুনি সে হোটেলে গেছে খাবারের তদারকি করতে।সন্ধ্যায় নাকি খাবার দেবে মানুষকে।তার বন্ধুরা আমায় বলে শুভ্রকে কল দিতে।কিন্তু আমার কাছে উনার নাম্বার নেই।আমি তাদের বিষয়টা জানালে তারা অট্টহাসিতে হেসে উঠে। বলে,,

-রিলেশনশীপ স্ট্যাটাস দিলে আর এখন বলো ফোন নাম্বার জানো না?

আমি কোনো প্রতিউত্তর দিই না।ইমন ফোন করে শুভ্রকে ডাকে।সে ডিরেক্ট না করে দেয়।ব্যস্ত উনি।আসতে পারবেন না।ইমন ভাইয়া আমায় ফোন হাতে দেন।

-সরি মেঘ।আমি ব্যস্ত আছি।
-ইমার্জেন্সি দরকার আপনাকে।প্লিজ আসুন

আবার আমার কথা শুনে সবাই অট্টহাসিতে হেসে উঠে।আসিফ ভাইয়া হাসতে হাসতে বলে,,,

-ভাইরে ভাই।এই যুগে কে বয়ফ্রেন্ডকে আপনি বলে ডাকে।আগের যুগেও ত দেখ কেউ বয়ফ্রেন্ডকে আপনি বলে ডাকে নাই আর এই যুগে…!
-আমি ডিফ্রেন্ড

মুচকী হেসে বলি আমি।

-আচ্ছা আসতেছি।ইমনকে বের হতে বলো।ও তদারকি করবে নি।

ফোন কেটে দেন উনি।আমি ইমন ভাইয়াকে বলি শুভ্র যা নির্দেশ দিয়েছেন।ইমন ভাইয়া বেরিয়ে যান।মিনিট পনেরো পর শুভ্র আসেন।হাতা ফোল্ড করতে করতে বলেন,,,

-কী দরকার?

আমি উনার কথার কোনো উত্তর দিই না।এখানে ওই ব্যাপারে কথা বললে আরও ক্ষেপাবে উনার বানর বন্ধুগুলা।সোজা হাত টেনে ধরে বাইরে নিয়ে যাই।

-আজব!এমন করে বাইরে নিয়ে আসলে কেন?
-দরকার আছে?
-কী দরকার?

আমি সব খুলে বলি উনাকে।উনি শান্ত গলায় বলেন,,,

-ভাইয়াকে কল দাও।

আমি ভাইয়াকে কল দিই।ভাইয়া সাথে সাথে কল রিসিভ করে।আমি সালাম দিলে ভাইয়া সালামের উত্তর দেয়।

-ভাইয়া যা বলার শুভ্র বলবে।

শুভ্র সালাম দিয়ে বলা শুরু করে।আমি শুভ্রকে লাউড স্পিকারে কথা বলতে বলি। উনি তাই ই করেন।ভাইয়া শুভ্রকে যাবতীয় প্রশ্ন করে যা জানার জেনে নেয়।শান্ত আর আমার ব্যাপারটাও ভাইয়া শুভ্রকে জানায়।পুরো বাড়িতে আমার পরে ভাইয়াই একমাত্র মানুষ যে শান্তকে দুই চোখে সহ্য করতে পারে না।শুভ্রর সাথে কথা শেষ হলে ভাইয়া আমার সাথে কথা বলে,,,

-দেখ এমনিতে ছেলেটাকে ভালোই মনে হলো।কিন্তু একেবারে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে বসিস না যেন!আর শান্ত তোকে না পেয়ে আমায় বারবার কল দিচ্ছে।
-আমায় কি করতে বলো এখন?
-রিসিভ করিস কলটা।দেখ কি বলে।
-আমি পারবো না ভাইয়া।এমনিতেই যেভাবে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তাতে এই বিষয় নিয়ে যে খারাপ ব্যবহার করবে না তার গ্যারান্টি নেই।
-বেশি ঝামেলা করলে শুভ্রকে দিস।ও ম্যানেজ করবে আমার বিশ্বাস।

ভাইয়ার ফোন রাখতে না রাখতেই শান্তের কল।কাঁপা হাতে রিসিভ করি ওর ফোন।শুভ্রের কথা মতো লাউড স্পিকারে রিসিভ করি কল।ফোন রিসিভ করতেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে লাগে।

-বলেছিলাম না শহরে গিয়ে নষ্ট হবি।আমার সাথে তোর বিয়ে ঠিক।তারপরেও তুই কিভাবে অন্য ছেলের সাথে সম্পর্কে যাস।বে* বাড়িতে আয় খালি।তোর বে*মি বের করছি।নষ্টা মেয়ে।কত নেস এক রাতের জন্য?
-আমি যদি নষ্টা মেয়েই হই তাহলে কেন আমায় বিয়ে করতে চাচ্ছেন?
-চুপ মা* চুপ!

আমি কোনো কথা বলতে পারি না।নীরবে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলি।আমায় কাঁদতে দেখে শুভ্র হ্যাঁচকা টানে আমার হাত থেকে ফোন নিয়ে যায়।শান্ত গলায় শান্তকে বলে,,

-কাকে কি বলছেন আপনার কোনো ধারণা আছে?
-কে তুই?
-শেখ শুভ্র

তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে শুভ্র।

-ওমা ভয় পাইছি!তা এক রাতের জন্য কত দেস মা*কে?
-মাইন্ড ইউর লেংগুয়েজ।ব্যবহারে বংশের পরিচয়।
-তোর বংশের মায়েরে বাপ।ফোন দে শা*কে
-লাস্ট বারের মতো বলছি!মেঘকে নিয়ে আর একটা খারাপ কথা বললে….!
-কি করবি?মারবি?আরেহ শালা খাসই তো পাব্লিকের টাকা মেরে।এত ভাব আসে কিভাবে?
-মানলাম আমি পাব্লিকের টাকা মেরে খাই।তাও তো কিছু করে খাই!আর তুই?বাপের হোটেলে বসে খাচ্ছিসই তো আবার বাপেরই টাকায় মদ,গাঁজা,হিরোইন,ইয়াবা খাচ্ছিস।এটা কি খুব ভালো?আজ থেকে তোর স্থান মেঘের ব্লক লিস্টে।পারলে নিজেকে শুধরে নিস।আল্লাহ হাফেজ

কথাটা বলেই শুভ্র ফোন কেটে দেন।আমি তখন অশ্রুভেজা চোখে তাজ্জব দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি একে একে সব জায়গায় শান্তকে ফেলে আমার দিকে ঝুঁকে আমার চোখের পানি মুছিয়ে বলেন,,,

-ডোন্ট ওয়ারি মাই কুইন!

এইবারও উনার বুকের তিল দেখা যাচ্ছে।আমি হাসি আটকে রাখতে পারি না।ফিক করে হেসে দিই।উনি আমার এমন ব্যবহারে আবুল হয়ে যান।আমি হাসতে হাসতে বলি,,,

-আপনার বুকের তিল দেখা যাচ্ছে।
-প্রবলেম নাই।যার সম্পদ সে ই তো দেখছে!

আমরা দুজনেই হেসে দিইই।

চলবে,,ইনশাআল্লাহ