একটি নির্জন প্রহর চাই পর্ব-১+২

0
789

#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই
১+২
#writer_Mousumi_Akter

বাসর ঘরে নিজের বরের রূপে একাউন্টিং এর প্রফেসর রোশান সিদ্দিকী কে দেখে ভড়কে গেলাম আমি। না মানে এটাই কি হওয়ার ছিলো।জীবনে কি এমন পাপ করেছিলাম যে এই হিংস্র দা’ন’ব টার সাথে বিয়ে হলো আমার।তাও আবার আমার ই টিচার।ছিঃ ভাবতেই শরীর রিরি করে উঠছে। সারাজীবন স্কুল কলেজে যারা প্রাইভেট টিচার দের সাথে রিলেশন করে তাদের নিয়ে কটুক্তি করে এসেছি আর আজ আমার সাথেই তাই ঘটলো।ছিঃ ভাবা যায় যে ওনার সাথে আমার কোনদিন রোমান্স টোমান্স কিচ্ছু হবে।এটলিস্ট একটা চুমু সেটাও আশা করা যায় না।
কলেজের সব থেকে রাগী,গম্ভীর, থমথমে, হিংস্র স্যার ওনি।তবে খুব হ্যান্ডসাম,গায়ের রং কিছুটা চাপা, কালো ও নন তবে দেখতে ভয়ানক রকমের সুন্দর ওনার মুখের অদল।কলেজের প্রায় মেয়েরাই উনার প্রতি ফিদা, উনার মুড আর এটিটিউড এ নাকি মেয়েদের হার্টবিট বেড়ে যায়। উনি যখন ক্লাসে প্রবেশ করেন খুব গম্ভীর আর থমথমে মুডে প্রবেশ করেন।প্রয়োজনের বেশী কথা ও বলেন না।রুলস এর ব্যাপারে ভীষণ সিরিয়াস উনি।একাউন্টিং ডিপার্টমেন্ট এর রং বদলে গিয়েছে উনি কলেজে আসার পর থেকে।ডিপার্টমেন্ট হেড উনি।আগে টেস্ট বা ইনকোর্স পরীক্ষা না দিয়ে টাকা দিয়ে দিলেও হতো কিন্তু এখন সে সুযোগ আর নেই।ইনকোর্স পরীক্ষা না দিলে উনি ফেল করিয়ে দিচ্ছেন।এক প্রকার আতঙ্কের নাম রোশান সিদ্দিকী।আমার কুক্ষণে উনার সাথে পরিচয় হয়েছিলো।সেদিন থেকে উনি মানেই আমার কাছে এক আতঙ্কের নাম,তাও ভয়ানক আতঙ্ক।উনার সাথে অামার কলেজে খুব বাজে একটা ঘটনা ঘটেছিলো সেখান থেকেই ঘটনার শুরু আর উনি আমাকে আড় নজরে দ্যাখেন।দু’মাস আগের ঘটনা। রোশান স্যার কিছু ম্যাথ করতে দিয়েছিলেন।আমি ফোনে ছবি তুলে নিয়ে গিয়েছিলাম আর লাস্ট বেঞ্চে বসে ব্যাগের ভেতর ফোন রেখে দেখে দেখে খাতায় তুলছিলাম।ক্লাসে উপস্হিত ১৫০ জনের মাঝে উনার চোখ আমার দিকেই পড়েছিলো। রোশান স্যারের পরণে ছিলো ফরমাল পোশাক।ব্ল্যাকবোর্ড এর সামনে থেকে সোজা উনার দৃষ্টি আমার দিকে নিক্ষেপ করেছিলেন।দৃষ্টি স্হির রেখে এগিয়ে এসছিলেন আমার দিকে।উনি কাছে আসাতেই আমি তড়িঘড়ি করে ব্যাগের ভেতর ফোন রেখে খাতায় লেখায় মনোযোগ স্হির করলাম।স্যার আমার সামনে এসে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গম্ভীর মুডে বলেছিলেন,
‘ফোন দাও তোমার?’
কথাটা শুনেই হৃদপিন্ড কেঁপে উঠল আমার।স্যার বুঝে গিয়েছেন আমার কাছে ফোন আছে।আমি ভ’য় ভ’য় চোখে স্যারের দিকে তাকালাম।স্যার এবার বললেন,
‘স্ট্যান্ড আপ।’
স্যারের দিকে তাকিয়েই ভ’য়ে ভ’য়ে উঠে দাঁড়ালাম।স্যার তখন ও গম্ভীর মুডেই তাকিয়ে আছেন আর এমন ভাবে তাকিয়ে আছেন কথা না বলে বোঝাচ্ছেন যে ফোন দাও তোমার।উনি স্টীল তাকিয়েই আছেন আমার দিকে।ফোন দিলে তো ধরা খেয়ে যাবো। ফোন ব্যাগ থেকে উঠিয়ে টিপাটিপি করে গ্যালারি থেকে বেরোনোর চেষ্টা করতেই স্যার আমার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে ডেস্কের সামনে চলে গেলেন।স্যার যেতে যেতে ফোন আবার লক হয়ে গিয়েছে।ক্লাস শেষ হলে সবাই বেরিয়ে গেলে আমি স্যারের কাছে গেলাম ফোন আনতে।স্যার আমাকে বললেন,
‘পিন টা বলো।’
খুব অস্বস্ত্বিতে পড়ে গেলাম।তাছাড়া যে পিন দেওয়া স্যার কে কিভাবে বলি।কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত পোহায়।স্যার ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।এর মানে পিন টা কি?
আমি মিহি কন্ঠে বললাম, ‘স্যার আমার কাছে দিন খুলে দিচ্ছি।’
‘তুমি মুখে বলো আমি খুলে নিচ্ছি।’
”K’U’T’T’A’R B’A’S’S’A”
স্যার মুহুর্তের মাঝে অবাকের চরম পর্যায়ে গিয়ে উচ্চারণ করলেণ,
‘হোয়াট।’
‘সরি স্যার এটা আপনাকে বলিনি।আমার ফোনের পাসওয়ার্ড।’
‘আই নো তুমি আমাকে বলোনি,বাট এটা কোনো সুস্থ মানুষের ফোনের পাসওয়ার্ড।’
‘ছোট বোন যেনো গেইস করতে না পারে তাই এই উপায় স্যার।’
স্যার আমার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে ফোনের পিন খুললেন।তখন ই আমার আরেক টেনশন ছিলো।কারণ ফোনের ওয়াল পেপারে স্যারের ছবি দেওয়া।এটা গতকাল ই বন্ধুরা ডেয়ার দিয়েছিলো।৪৮ ঘন্টা রাখতে হবে।স্যার ফোনের ওয়াল পেপার দেখে আড়চোখে তাকালেন আমার দিকে।লজ্জায় আমার কি অবস্থা হয়ে যাচ্ছে তা আমি ছাড়া আর কেউ জানেনা।এইদিকে ফোনের নেট ও অন করা ছিলো।বন্ধুদের নিয়ে করা আড্ডা প্যানেলে কত অসভ্য কথা বলাবলি করেছি, এখানে রোশান স্যার কে নিয়েও অনেক কথা হয়েছে।ঠিক তখন ই আড্ডা প্যানেলে মেসেজ এসছে ছোঁয়া মেসেজ দিয়েছে,
‘ সারাহর সাথে কি স্যার প্রেম করছে ক্লাস রুমে দাঁড়িয়ে।’
তন্ময় মেসেজ করেছে,
‘ এমনি সারাহ স্যার কে দেখে ফিট হয় আজ কাছাকাছি দাঁড়িয়ে শুভ দৃষ্টি বোধহয় হয়েই যাচ্ছে।’
দ্বীপ মেসেজ করেছে,’ এমনিতেই সারাহ বলে রোশান স্যার মানেই হট,আর এই হট টমেটো সস এখন সারাহর সাথে একান্তে সময় কাটাচ্ছে। বাণীতে সারা।’
স্যার প্যানেলে প্রবেশ করলেন।যাবতীয় মেসেজ দেখে স্যার এর রাগ আকাশ এ উঠেছে।উপরেই আমার করা মেসেজ আছে ‘রোশান হলো হট টমেটো সস।ওয়াও কি লুকিং, কি জোস,উনি শুধু আমার।একবার কলেজ থেকে বের হই স্যার এর সাথে ফেইক আইডি দিয়ে প্রেম করব,দেন বলব স্যার আমি।’
স্যার অদ্ভুত এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন।তার জীবনে বোধহয় এমন অভিজ্ঞতা আগে হয় নি।এর আগে কোনো স্টুডেন্ট এর থেকে এমন কিছু হয়ত পায়নি।স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘তোমার ফোনের ডিসপ্লেতে কার ছবি?’
‘জি স্যার আপনার।’
স্যার ভ্রু কুচকালেন আর বিরক্তিমিশ্রিত কন্ঠে বললেন,
‘বাট হুয়াই?’
‘স্যার ফ্রেন্ড রা ডেয়ার গেম দিয়েছিলো আর বলেছিলো আপনার ছবি ফোনের ডিস্পেলে তে দিয়ে স্ক্রিনশট দেওয়ার জন্য।’
‘স্যার রা কি গেম খেলার পারসন।’
‘না সার ভুল হয়ে গিয়েছে,আর হবেনা।’
‘অন্যায় কয়েক ধাপে করেছো তুমি,এক ফোনে পিকচার তুলে এনে নকল করে ধরা খেয়েছো,দুই টিচার দের নিয়ে বন্ধুদের সাথে কটুক্তি করেছো।আমার পারমিশন ছাড়া আমার ফেসবুক প্রফাইল থেকে ছবি নিয়েছো ক্যানো?কলেজে কি এসব করতে আসো।আর আড্ডা প্যানেলে তোমরা যা বলাবলি করো আর যেসব ভিডিও আদান প্রদান করো, টিচার দের নিয়ে মিমস তৈরি করো তোমাদের কলেজ থেকে বহিঃষ্কার করা উচিত।’
‘স্যার আর এমন হবেনা।’
‘এসো অধ্যাক্ষ স্যারের রুমে এসো।’
রোশান স্যার অধ্যক্ষ স্যার কে কি বলেছেন জানিনা।অধ্যক্ষ স্যার বাড়িতে ফোন করে নালিশ দিলেন, সাথে আমাকে ওয়ার্নিং ও দিয়ে দিলেন।’
রোশান স্যার থমথমে মুডে আমাকে বললেন, ‘তুমি আমার নজরে থাকবে এখন থেকে।’

আমার নাম সারা আনাম।মা-বাবার ছোট মেয়ে।অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি বিবিএ অনার্স।আমার ফ্যামিলি আর পাঁচ টা ফ্যামিলির মতো নয়।আমার দাদু পুরণো রিতী আজ ও ধরে রেখেছেন।আর এ ব্যাপারে সে ভীষণ স্ট্রং।আগেকার দিনের মতো বিয়ের আগে ছেলে মেয়ে দেখাশুনা তিনি পছন্দ করেন না।তাছাড়া আমার বাবার প্রতি আমার অগাধ আস্হা আছে।বাবা এসে আমাকে বললেন, ‘ছেলে দেখতে শুনতে খুব ভালো মা।আমার পছন্দ হয়েছে।’
বাবার পছন্দ মানেই আমার পছন্দ।তাছাড়া বিয়ের দুই দিন আগে কথাবার্তা হয়ে হুট করেই বিয়ে তাই আর দেখার ও সুযোগ হয়নি।
আজ থেকে যে জীবন টা যে জা-হা-ন্না-মে পরিণত হতে চলেছে তার আর বুঝতে বাকি নেই আমার।

উনি ঘরে প্রবেশ করেই দরজার সিটকিনী লাগিয়ে দিলেন তাতে খট করে শব্দ হয়ে উঠল।সেই শব্দে কেঁপে উঠল আমার অন্তরআত্মা।ঘরে প্রবেশ করে আমার দিকে আড়চোখে একবার তাকালেন আর বললেন,

‘আপনি শাড়িটা চেঞ্জ করে নিন
ওয়াশরুমে গিয়ে।আমি বুঝতে পারছি আপনার অস্বস্তি হচ্ছে।বিকজ এইভাবে অচেনা অজানা একটা মানুষের সাথে বিয়ে হয়েছে আপনার হঠাত করে।খারাপ লাগা বা অস্বস্তি ফিল হওয়াটাই স্বাভাবিক।কি করব আমার দাদুও আপনার দাদুর মতোই সেই সেকালের নিয়ম ধরে রেখেছেন।বাট আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম যার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে সে কি এইভাবে আমাকে মেনে নিতে পারবে।আপনার আপু জানিয়েছেন যে আপনার কোনো আপত্তি নেই।যায় হোক আমার দ্বারা আপনার কোনো অস্বস্তি ফিল হয় এমন কিছুই পাবেন না।’

ইয়া মাবুদ উনি তো আমার মুখ না দেখেই সুন্দর করে কথা বলছেন।মুখ দেখার পর কি বলবেন আল্লাহ ভাল জানেন।কতক্ষণ ই বা মুখ ঢেকে রাখতে পারব।সারা রে তুই ফেঁসে গেছিস।এ জন্মের মতো ফেঁসে গেছিস।রোশান স্যার যতক্ষণ না মুখ দেখেন ততক্ষণ ই শান্তি তোর।

এর ই মাঝে পাশের রুম থেকে মাগো মরলাম বলে কেউ চিৎকার দিয়ে উঠল।কন্ঠটা একটা মেয়ের।আমার কানে ভেষে আসছে পুরুষালি কন্ঠ দাঁত কিড়মিড় করে বলছে, ‘বা’ ন্দী’র বা-চ্চা আজ তোকে মে’রে’ই ফে’ল’ব।বেশী সাহস বেড়েছে তাইনা তোর।আমার সব কিছুতে তোর বাড়াবাড়ি।’
বলেই কারো গায়ে আঘাত করছে।আর সেই আঘাতে চিৎকার করে উঠছে মেয়েটি।

রোশান স্যার দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।আমিও বিছানা ছেড়ে দরজায় এসে উঁকি দিয়ে দেখলাম বারান্দায় একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে।মেয়েটির নাম তরী।শুনেছি আমার জা হয়।রোশান স্যার এর ছোট ভাই এর বউ।উনার ছোট ভাই নাকি আগে বিয়ে করেছিলেন।যদিও ছোট ভাই কে আমি এখনো দেখিনি।এরই মাঝে রোশান স্যার এর ছোট ভাই বেরিয়ে এলেন রুম থেকে।উনার ছোট ভাইকে দেখে আমার মাথায় যেনো বজ্রপাত হলো।ওহ নো! এটা তো ওশান।দ্যাটস মিনস ওশান ম্যারেড।

#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই
২.
#writer_Mousumi_Akter

নিজের দেবরের স্হানে ওশান কে দেখে যতটা আশ্চর্য হয়েছি ততটা আশ্চর্য আমি নিজের বরের স্হানে রোশান স্যার কে দেখেও হইনি।জীবন সিনেমার থেকেও ভয়াবহ,কঠিন,মর্মান্তিক,নাটকীয়।একটা মানুষ এর ভাল মানুষের আড়ালে এতটা কুৎসিত রুপ ও থাকতে পারে বুঝি।অতিচেনা মানুষের কুৎসিৎ রুপ সামনে আসার থেকে বোধহয় না আসাটাই বেটার তাহলে মিথ্যা করে হলেও ভাল থাকাতো যায়।সমস্ত শরীর আমার অসড়, অবস হয়ে আসছে।বুকের মাঝে দুরুম দুরুম করছে।কখনো কি ভেবেছিলাম ওশান কে কখনো বিবাহিত রুপে বাচ্চাসহ দেখব।সমস্ত শরীর আমার কেমন অস্হির হয়ে উঠেছে।ইচ্ছা করছে এখনি গিয়ে ওশানের কলার চেপে ধরে পায়ের স্যান্ডেল খুলে মন মতো জু’তাপি’টা করি।পৃথিবীর কোনো শাস্তিই কম নয় ওশানের জন্য।আমি ভাবনার গভীর অতলে হারিয়ে গিয়েছি।

এরই মাঝে রোশান স্যার গম্ভীর আর রাগী কন্ঠে ওনার আম্মাকে ডাকলেন, ‘আম্মা।’

রোশান স্যারের ডাকটা এতটাই ভয়াবহ ছিলো যে রওশন সিদ্দিকী ভীলার প্রতিটা ইট পাথর ও যেনো কেঁপে উঠল।

আতিয়া পারভীন ছেলের হুংকারে ছুটে এসে ভ’য় ভ’য় মুখে এসে বললেন,

‘কি হয়েছে বাবা।তুমি ঘর ছেড়ে বাইরে কেনো?’

রোশান স্যার অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে উনার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘আম্মা তোমার ছেলেকে লাস্ট বারের মতো একটা কথা ক্লিয়ার এন্ড ক্লিয়ারলি জানিয়ে দাও ওকে তরির সঙ্গেই ঘর সংসার করতে হবে।তা না হলে যেনো ও এই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যায় আর না হলে আমি এই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাবো।তরীর সাথে কোনো অন্যায় আমি মেনে নিবো না।আর এটা আমার ফাইনাল কথা।’

ওশান কে দেখে ওশানের আম্মাকে দেখে মনে হচ্ছে রোশান স্যার কে সবাই ভ’য় পায়।কেউ চোখ তুলে তাকাতে সাহস পাচ্ছেনা।ওশান মাথা নিচু দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ভাইয়া জোর করে আর কত ওই মেয়েটার সাথে আমাকে থাকতে বাধ্য করবে।ও একটা আনকালচার,অশিক্ষিত।ওর সাথে আমার কোনো কিছুই ম্যাচ করেনা।’

রোশান স্যার থমথমে মুডেই বললেন,

‘আর কত মানে?যতক্ষণ তোমার দেহে প্রাণ আছে ততক্ষণ।বিয়েকে কি ছেলেখেলা পেয়েছো তুমি।আর তোমার ওয়াইফ অশিক্ষিত কেনো?আনসার মি! তোমার কি স্বামি হিসাবে দায়িত্ব ছিলো না তোমার ওয়াইফ কে শিক্ষিত করা।’

‘কেউ শিখতে না চাইলে আমি কিভাবে শেখাবো।ওই অশিক্ষিতর সাথে আমার পক্ষে কোনো ভাবেই থাকা সম্ভব নয়।’

‘তরী কেনো লেখাপড়া শিখতে চায়নি গড নোজ।বাট তুমি কি নিজেকে শিক্ষিত দাবি করো।মিনিমাম কোনো শিক্ষা আছে তোমার।নেক্সট যদি আমার সামনে কখনো পড়ে তুমি তরীর সাথে কোনরুপ বাজে ব্যাবহার করেছো ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স এর কেস তরীর হয়ে আমি দিবো।’

‘ভাইয়া আজ কিন্তু আমার কোনো দোষ ছিলো না।আমি সারাদিন কোথায় ছিলাম,কেনো তোমার বিয়েতে উপস্হিত হতে পারিনি সেটা নিয়ে জেরা করছিলো।আমি তো বলেই ছিলাম এক বন্ধুর মা মারা গিয়েছে।’

‘তোমার ওয়াইফ হিসাবে সে রাইট ওর আছে।আর যদি একটা সাউন্ড শুনি আমি এ বাড়ির মানুষ সহ সব কিছুতে আগুন জ্বা’লি’য়ে দি’বো।আমি ক্লান্ত ঘুমোবো।’

আতীয়া পারভীন ওশান কে ফিসফিস করে বলছে, ‘আজ না কতবার নিষেধ করেছি, বাড়িতে যেনো টু শব্দ হয়না।আজ তোমার ভাইয়ার বিয়ের দিন।অনেক কষ্টে বিয়েতে রাজি করিয়েছি।দিন টা নষ্ট না করলে হচ্ছিলো না।’

‘আম্মা যা বলার তরীকে বলো। ‘

আতিয়া পারভীন তরীর কাছে গিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলল, ‘আর তুমিও আছো তরী।সব কিছুতে বাড়াবাড়ি না করলে হয়না।’

রোশান স্যার ওনার আম্মার দিকে তাক করে বললেন, ‘আম্মা তরীকে কিছু বলবে না। ‘

এতক্ষণ তাদের পারিবারিক নাটক দেখে মনে পড়ল রোশান স্যার এর যে মুড নিজের ভাইয়ের সাথে নাটক করলে তো আমার সাথে পূর্ণদৈর্ঘ বাংলা ছায়াছবি করবেন।আল্লাহ এই বেটা বুইড়া খাটাস তো কলেজের থেকে তিনগুন তেজী নিজের বাড়িতে।সারাহ তোকে ভেঙে পড়লে হবেনা।তোকে বাংলা সিনেমার মিনমিন করা নায়িকাদের মতো অভিনয় করলে হবেনা।এই তেজী মানুষ কে তুই ভ’য় পেলে আরো পেয়ে বসবে।সে যদি বুনো ওল হয় তোকে বাঘা তেতুল হতে হবে।মনে মনে কি কি বলব কিভাবে ওনার সাথে তর্ক করব কিভাবে ঝগড়া করব সব কিছু প্রাক্টিস করে নিলাম।শুধু আমাকে একবার কিছু বলুক আমিও শুনিয়ে দিবো আগেকার যুগের শিক্ষক রা ছিলেন পিতার বয়সী আর এখনের শিক্ষক রা লুচু নাম্বার ওয়ান যুগ আপডেট হয়ে তারা হয়ে গিয়েছে বরের মতো।ওশান স্যার দরজার কাছে এগিয়ে আসতেই আমি হুড়মুড়িয়ে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করতে যেতেই পায়ের নিচে শাড়ি পড়ে হুমড়ি খেয়ে পড়লাম।মানে কি! এসব কি হচ্ছে আমার সাথে।বাসর ঘরে নিজের বরের সামনে কোনদিন কোনো মেয়ে আছাড় খেয়েছে!না খায় নি তো তাইনা?এই অসাধ্য সাধন করে আছাড় টা আমাকেই খেতে হলো।দুনিয়ার যতসব উদ্ভট কাজ আমার দ্বারাই সম্ভব।রোশান স্যার দ্রুত এগিয়ে এসে বললেন, ‘একি পড়লেন কিভাবে?ইস কি সর্বনাশ।লাগেনিতো কোথাও।’

আমি মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে আছি, একদম ই উঠছিনা। জাস্ট ইমেইজিন আপনি বাসর ঘরে বরের সামনে আছাড় খেয়েছেন।দেখবেন এর থেকে বাজে লজ্জাকর অবস্থা আর নেই।

রোশান স্যার আমার হাত ধরে টেনে তোলার চেষ্টা করলেন।আমি মুখে হাত দিয়ে উঠলাম।মুখ ঢেকে রেখেছি কিভাবে উনাকে ফেস করব বুঝতে পারছিনা।রোশান স্যার আমার মুখে হাত দেওয়া দেখে বললেন,
‘দেখি নাকে ব্যাথা পেয়েছেন।’

বলেই আমার মুখ থেকে হাতটা সরালেন।আমি যে ওনাকে আগেই দেখে ফেলেছি এটা বুঝতে দেওয়া যাবেনা।উনাকে দেখে আকাশ থেকে পড়েছি,বিশাল অবাক হয়েছি এমন একটা ভাব করতে হবে।আমার মুখ থেকে হাত টা সরানোর সময় আমি একদম চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে রইলাম।আস্তে আস্তে চোখ পিট পিট করে তাকানোর চেষ্টা করলাম।উনি ভয়ানক মুডে তাকিয়ে আছেন আমার মুখের দিকে।মনে হচ্ছে উনার জীবনের অপছন্দীয় কাউকে দেখছেন।এবার আমিও পুরো খুলে তাকালাম।একই সাথে দুজনে উচ্চারণ করলাম উনি বললেন, ‘তুমি?’
আর আমি বললাম, ‘আপনি?’
এবার রোশান স্যার সাথে সাথে হাত কপালে চালিয়ে দিয়ে বললেন,
‘ওহ শীট! শেষ পর্যন্ত কিনা তোমার মতো একট অসভ্য মেয়ে জুটল আমার কপালে।’
‘শেষ পর্যন্ত কিনা আমার কপালে আপনার মতো একটা গম্ভীর বুইড়া জুটল।কি এমন পাপ করেছিলাম জীবনে যে আপনার মতো একটা মানুষের সাথে আমার বিয়ে হলো।’
উনি তীব্র বিরক্তি নিয়ে বললেন,
‘আমার মতো মানে?হোয়াট ডু ইউ মিন। আর পাপ তুমি করবে কেনো?পাপ আমি করেছিলাম নিশ্চিত না হলে আমার কপালে এমন অসভ্য,বেয়াদব মেয়ে জোটে।’
‘দেখুন এটা আপনার ক্লাসরুম না যে এখানে ভদ্রতা শেখাবেন।তাই ভুলেও আমাকে আসভ্য টসভ্য বলবেন না।এটা আমি একদম সহ্য করব না।’
‘ক্লাস রুমে তো পেছনের বেঞ্চে বসে এমন ভাবে থাকো যেনো ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানো না।আর এখানে বেয়াদব এর মতো তর্ক করছো।’
‘আমাকে সেইসব মেয়ে ভাবলে ভুল করবেন।আমি চুপ চাপ মানুষের কথা হজম করা মেয়েনা।আর আমাকে বেয়াদব বলছেন কেনো আপনি।আপনার জন্য অধ্যক্ষ স্যার আমার বাড়ি নালিশ দিয়েছিলো।সেসব আমি ভুলিনি।’
‘আমার কলিগ রা যদি জানে সেই সমালোচিত মেয়ের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে তারা কি ভাববে।আমার ইজ্জত মান সব শেষ।’
‘আর আমার ফ্রেন্ড রা যদি জানে আপনার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে তাহলে কি আমার মান সম্মান থাকবে।’
‘এত মান সম্মানের ভ’য় বিয়ের আগে কার সাথে বিয়ে হচ্ছে জানতে চাওনি কেনো?’
‘আপনি জানতে চান নি ক্যানো?’
‘আমি তোমার মতো বেয়াদব নই যে বড়দের কথার বিরুদ্ধে যাবো।’
‘তাহলে শুনুন আমিও আপনার মতোই ভদ্র তাই বড়দের বিরুদ্ধে যায় নি।আমার ঘুম পাচ্ছে গুড নাইট।’
‘আমাকে অশুভ নাইটের শুভেচ্ছা জানানোর রিকুয়েষ্ট করছি।নাইট আর কোনদিন শুভ হবেনা আমার।’
বলেই রোশান স্যার আলমারি থেকে ট্রাউজার আর টি-শার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে প্রবেশ করলেন।উনার দিকে তাকিয়ে দেখি মারাত্মক সুদর্শন দেখাচ্ছে উনাকে।উনি
বিছানায় এসে সুয়ে পড়ে বললেন, ‘আমি ক্লান্ত লাইট অফ করে দাও।’
ঘুম পাচ্ছে আমারো ঘুমোবো কোথায়?’
জায়গা না পেলে খাটের নিচে যেতে পারো,বারান্দা, বাথরুম যেকোনো জায়গা যেতে পারো।আই হ্যাভ নো প্রব্লেম।’
অচেনা জায়গা ভ’য় ও লাগছে।কি করব বুঝতে পারছিনা।রুমের মাঝে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছি।
উনি কিছুক্ষণ পরে বললেন, ‘বাংলা মুভি দেখো তাইনা?’
‘ক্যানো?’
‘মানে ফ্লোরে ঘুমোনোর প্লান করছো।এটা কোনো শুটিং স্পট নয়।বিয়ে হয়েছে আমার সাথে তোমার।তাই চুপচাপ খাটে এসে সুয়ে পড়ো।তোমার রাইট আছে খাটে ঘুমোনোর।’

আস্তে করে গিয়ে গুটি সুটি মেরে সুয়ে পড়লাম।উনি উল্টো দিকে ঘুরে সুয়ে আছেন।এরই মাঝে আবার সমস্যায় পড়লাম।এবার বোধহয় মান ইজ্জত কিছুই থাকবেনা যা হতে চলেছে।পেটের মাঝে কেমন বুড়বুড় করছে।বুঝতে পারছি এটা কিসের লক্ষণ।চেপে রাখার মারাত্মক চেষ্টা করতেই ফুঁস শব্দ হলো।আর তাতেই পুরো ঘর দূর্গন্ধে ছড়িয়ে গেলো।রোশান স্যার এর বুঝতে বাকি নেই কিসের শব্দ।এখানে শেষ নয় আরো আছে।সব সীমা অতিক্রম করে বিকট শব্দে বায়ুদূষণ হয়ে গেলো।মানে এমন লজ্জা আমার বাপের জন্মে পায়নি।ইচ্ছে হচ্ছে ৭০ গজ মাটির নিচে পু’তে যায় আমি।

ঘুরে তাকিয়ে দেখি রোশান স্যার কি অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।চোখে চোখ পড়তেই সে কি লজ্জা।উনি বালিশ আর পাতলা কাথাটা নিয়ে নিয়ে আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে রুমে রাখা লম্বা মেরুণ কালারের ডিভানে গিয়ে সুয়ে পড়লেন।

উনি উঠে যেতেই আমি জানাল খুলে বাইরে থু থু ফেলতে গেলেই সেই থুথু জানালার গ্রিলে লেগে গেলো সম্পূর্ণ টা।

উনি আবার ও ডিভান থেকে উঁকি মারলেন আমার দিকে। কি অদ্ভুত সে চাহনি।

চলবে?.