#একটি_সাঁঝরঙা_গল্প
#তানিয়া_মাহি
#পর্ব_২৯
আবির, তোয়া মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। আশেপাশে শুনশান নীরবতায় ছেয়ে আছে। অন্ধকার আর নীরবতা যেন একে অপরের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। মাঝে মাঝে মৃদু হাওয়া এসে তোয়ার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে যাচ্ছে। তোয়া সেগুলো সামলাতে ব্যস্ত এমন সময় সামনে অবস্থানরত পুরুষটি বলল,
“রাতে এভাবে এখানে কী করছিস?”
তোয়া মাথা তুলে আবিরের দিকে চাইলো।
”ভাইয়ার সাথে এসেছি। বান্ধবী কল দিয়েছিল তাই কথা বলছিলাম।”
“আচ্ছা।”
“হুম।”
“এখানেই থাকবি নাকি ভেতরে যাবি?”
“ভেতরে যাব।”
“যা তাহলে।”
তোয়া কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলে উঠল,
”তুই আমার ওপর এখনো রেগে আছিস তাই না?”
আবিরের উল্টো প্রশ্ন,
“রেগে থাকব কেন?”
”তুই আমার সাথে ঠিকমতো কথা বলিস না।”
“চাচাতো বোনের সাথে আবার কীসের কথা? যা ভেতরে যা।”
তোয়া কিছুটা এগিয়ে এলো আবিরের দিকে। আলগোছে আবিরের ডান হাত নিজের দুই হাতের মুঠোয় নিল। আবির থতমত খেয়ে তোয়ার দিকে চাইলো।
“কী করছিস এসব? কে দেখলে কী ভাববে খেয়াল আছে?”
“ভাবুক। ভাবতে দে।”
“হাত ছাড়। এসব কেমন ব্যবহার? আমি তোর ভাই হই।”
“ধুর। ভাই ভাই করবি না তো। মেজাজ খারাপ হচ্ছে আমার। একদম গলায় কিন্তু ছু*ড়ি বসিয়ে দিব বলে দিলাম।”
“থাপ্পড় খাবি তুই। হাত ছাড়।”
”ছাড়ব না। কী করবি?”
আবির মিছেমিছি হাতটা ছাড়িয়ে নেওয়ার অভিনয় করল। তোয়া আরও শক্ত করে আবিরের হাতটা ধরে দাঁড়িয়ে রইল। একসময় হাত ছেড়ে আবিরের পায়ে পড়ে গেল। দুই হাত দিয়ে আবিরের দুই পা জড়িয়ে ধরে পায়ের সাথে মাথা হেলান দিয়ে বসে ফুঁপিয়ে উঠল। তোয়ার এমন আকস্মিক কান্ডে থ’ মেরে দাঁড়িয়ে রইল আবির। তোয়া অসহায় ভঙ্গিতে বলল,
“আমার দমবন্ধ হয়ে আসছে, আবির। তোকে এই যে, এত পর পর লাগছে এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। সেদিনের পর এতগুলো দিন চলে গিয়েছে আমি শুধু ছটফট করেছি তোকে দেখতে আর ঠিক আগের মতো সময় কাটাতে। আজ যখন দেখলাম, কথা বললি তখন থেকে তোকে অচেনা লাগছে। আমি সহ্য করতে পারছি না। পারছি না আমি।”
আবির তোয়ার চোখের আড়ালে খানিকটা হাসলো। বাঁকা হাসি তার ওষ্ঠাবৃত। শক্তগলায় সে বলে উঠল,
“তুই যে আবিরকে চাইছিস সে সেদিনই ইয়াদদের বাড়িতে খানিকটা আর রেলস্টেশনে খানিকটা মিলে পুরোটাই মা*রা গেছে। অস্তিত্ব নেই তার। এখন যে আছে সে শুধুই তোর ভাই।”
তোয়া নাক টেনে বলল,
“চাই না আমার ভাই চাই না। এরকম মানুষ চাই না আমি।”
“কী চাই তোর?”
“আগের আবিরকে।”
“সম্ভব না। পা ছাড়। উঠে দাঁড়া। সবাই ভেতরে আছে আর আমি এভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তোর ড্রামা দেখতে পারব না। ভেতরে যেতে হবে আমার। উঠে চোখমুখ মুছে নে। মানুষ হারিয়ে গেলে কান্নাকাটি করে মানুষ অথচ যারা হারিয়ে যায় তারা একসময় থেকে যাওয়ার জন্য যখন অনুনয় করত তখন তো মানুষের গায়ে ফোসকা পড়ে যেত। তুই আমাকে আর কখনো পাবি না তোয়া। কখনো না। আমি আর ফিরব না। অন্তত তোর জন্য আমি কখনোই ফিরব না। আমার ভালোবাসা সস্তা ছিল না তবুও তুই সহজে পেয়ে গেছিলি। কদর না করে হেলায় হারিয়েছিস। আমি আর ফিরব না।”
আবির নিজেই তোয়ার কাছে থেকে পা ছাড়িয়ে নিয়ে ভেতরের দিকে চলে গেল। তোয়া ওভাবেই বসে বসে কিছুক্ষণ আবিরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। কান্না পাচ্ছে তার। ভীষণ কান্না পাচ্ছে। ইচ্ছে করছে গগনবিদারী একটা চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটে পড়তে। সেটা আর হলো না। চোখটা মুছে নিয়ে নিজেও ভেতরের দিকে রওয়ানা দিল।
নিশো,জাভেদ সাহেব, রাবেয়া বেগম তিনজনে কথা বলছিল। ফালাক তখনো সেখানে উপস্থিত হয়নি। নিজের রুমে কী করছে কে জানে!
মা-বাবার রুমে নিশোকে দেখে সেদিকে এগিয়ে গেল আবির। দরজার বাহিরে থেকেই হাসতে হাসতে বলল,
“কী ব্যাপার? ক্যাডারের পা পড়েছে আমাদের বাড়িতে! ভারি আশ্চর্যের বিষয়।”
নিশো বাহিরের দিকে তাকিয়ে ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
“ভাই, মাত্র প্রথম ধাপ সম্পন্ন হলো। এখনো দুই দুইটা বাকি। বাপের খুশিতে পানি ঢেলে দিতে চাই না বলে বাপের এতকিছু মেনে নিচ্ছি। কে জানে স্বপ্নপূরণ ভাগ্যে আছে কি না!”
আবির এসে নিশোর পাশেই দাঁড়ালো। পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল,
“আরে চিন্তা করিস না। ওগুলোও এটার মতোই পাশ করে যাবি ইন শা আল্লাহ। নিজের ওপর ভরসা রাখ আর আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস। তিনি তোকে এবার আর হতাশ করবেন না নিশ্চয়ই। ”
“আল্লাহ ভরসা।”
তোয়া ধীর পায়ে রুমে প্রবেশ করল। তাকে বেশ অন্যরকম লাগছে। ছন্নছাড়া, অবিন্যস্ত সবকিছু। রাবেয়া বেগম ডাকতেই মুহূর্তের মধ্যে নিজেকে সামলে নিল সে। মুখে মিথ্যে হাসি ফুঁটলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে রাবেয়া বেগমের পাশে গিয়ে বসলো।
আবির নিশোর দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোরা কথা বল। আমি যাই ফ্রেশ হই। মাথা ব্যথা করছে। মা, এক চাপ চা দিও তো প্লিজ।” শেষ কথাটা রাবেয়া বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলেই বেরিয়ে চলে গেল আবির।
রাবেয়া বেগম দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। জাভেদ সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। নিশোকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“তাহলে আব্বাজান, রাতে এখানে খেয়ে তারপর যাবি। আমি আর তো চাচি কাল তাহলে তোদের বাড়িতে যাচ্ছি, বিয়ের তারিখ ঠিক করতে। তোর বাকি পরিক্ষা, রেজাল্ট ওগুলো পরে দেখে নিস। আমার এত প্যারা নাই। একটু বের হতে হবে আমার কাজ আছে। আসছি তাহলে। ”
নিশো সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল। জাভেদ সাহেব বেরিয়ে গেলে রাবেয়া বেগম বললেন,
“ফালাক রুমেই আছে। কথা বলো যাও। আর তোয়া আমার সাথে চল, মা। দুজন রান্নাঘরে চা করতে করতে গল্প করি।”
রাবেয়া বেগম তোয়াকে সাথে করে রান্নাঘরে চলে এলেন। পানি গরম বসিয়ে দিয়ে তোয়ার দিকে চাইলেন তিনি।
“আবির এখনো তোর ওপর রেগে আছে, আম্মা?”
আচমকা এমন প্রশ্নে অবাক হলো তোয়া। ছোটবেলা থেকে রাবেয়া বেগমের কাছে আবিরকে নিয়ে বিচার দিয়ে এসেছে সে। আজ যখন তিনি নিজে থেকে জানতে চাইছেন তখন তোয়া কিছুই বলতে পারছে না। উগড়ে দিতে পারছে না কোন কথা। বলতে পারছে না- হ্যাঁ চাচি, আবির আমাকে খুব পো*ড়াচ্ছে। আমি কাঁদছি দেখেও ওর মন গলছে না।
তোয়ার উত্তর না পেয়ে রাবেয়া বেগম আবার শুধালেন,“ভালোবাসিস আমার ছেলেকে?”
তোয়া শুধু চেয়ে রইল। মুখে কোন কথা নেই। চোখে শুধু বিস্ময়। দুনিয়ার বিস্ময় যেন চোখে আটকেছে যখন তখন চোখসহ বেরিয়ে আসবে। মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করল সে- পুরোনো আবিরের তৃষ্ণা, আবিরের এই ব্যবহার, অবহেলা সহ্য করতে না পারাকে কি ভালোবাসা বলে?
রাবেয়া বেগম এগিয়ে এসে তোয়ার গালে হাত ছোঁয়ালেন। তোয়া চোখ তুলে রাবেয়া বেগমের দিকে চাইলো। চোখ দুটো ছলছল করছে। রাবেয়া বেগম বললেন,
“অমত করার কথা আমাদের। এই দুই বাড়ির মানুষদের। আর তোরাই কি না নিজেদের মধ্যে ঝামেলা পাকালি? ছোটবেলা থেকে কেউ কারো অনুপস্থিতি সহ্য করতে পারিস না। সবসময় ঝগড়া, মারা-মারি লেগেই থাকতো। আবার অন্যকেউ ঝামেলা করতে এলে দুজন দুজনের পক্ষ নিতি। তোর মনে হয়নি তুই আবিরকে ভালোবাসিস? আমি তো তোর এই চোখজোড়া দেখে বেশ বুঝতে পারছি তুই এখনো বুঝিসনি?”
তোয়া চোখ দুটো মুছে বলল,“চাচি, আবির আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করছে।”
“ও কবে তোর সাথে কবে ভালো ব্যবহার করল?”
“ও সবসময় কষ্ট দিয়ে কথা বলছে। সবসময় কেমন করে কথা বলছে।”
“তুইও তো সেদিন ওকে বলেছিলি। অনেক কষ্ট পেয়েছে আমার ছেলেটা।”
তোয়া মাথানিচু করে মৃদু গলায় বলল,
“স্যরি বলেছি তো। অনেকবার বলেছি তবুও এমন করছে।”
“কেমন করছে?”
“এই যে আমাকে পাত্তা দিচ্ছে না, চাচাতো ভাই হয় এটা বারবার বলছে, আগের মতো কথা বলছে না।”
”ও কিন্তু বাড়িতে বলেছে মেয়ে দেখতে।”
তোয়া ভ্রু কুঁচকে শুধালো, “কেন?”
“বিয়ে করবে বলে। আমি জানি আমার ছেলে তোর ওপর অসম্ভব অভিমান করে আছে। সেটা এতটাই বেশি যে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে অবধি করতে চাইছে। আমি বেশ বুঝতে পারছি তুই আবিরকে ভালোবাসিস। তুই নিজে বুঝতে পারছিস না? আবির যদি রাগ, অভিমান আর জিদের বশে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে নেয় তাহলে তোরা দুইজন তো কষ্ট পাবিই সাথে সেই মেয়েটাও কষ্ট পাবে। সময় থাকতে সবকিছু ঠিক করে নে, মা।”
তোয়া কিছু বলল না শুধু পলকহীন চোখে চেয়ে রইল রাবেয়া বেগমের দিকে আর মনে মনে অংক মেলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল- আসলেই সে আবিরকে ভালোবাসে?
_________
নিশো ফালাকের রুমের দরজায় নক করল। একবার, দু’বার, তিনবার নক করার পরও দরজার ওপাশ থেকে কোন সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করল নিশো। রুমের এ কোণা থেকে ও কোণা কোথাও ফালাক নেই। বাহিরেও নেই রুমেও নেই। কোথাও নেই। নিশো চেয়ারে গিয়ে বসলো। ফালাকের ফোনে কল দিবে তখনই টেবিলের ওপর একটা কাগজ। ভাজ খুললো নিশো। ভেতরে লেখা ‘ভ্যানিটি রুমে আসুন।’
নিশো মুচকি হেসে কাগজটা হাতে নিয়েই পাশের ছোট রুমটার দরজা খুলল। ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখল ফালাক জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে সাদা রঙের লং ড্রেস। সাদা ওড়নায় সমস্ত শরীর ঢাকা। নিশোকে আসতে দেখে মুচকি হাসলো সে। এগিয়ে এলো নিশোর দিকে। নিশোর ঠিক সামনেটায় এসে দাঁড়ালো সে। নিশোর দিকে মৃদু হেসে শুধালো,
“আমার রাজ্যে আপনাকে স্বাগতম নিশো সাহেব।”
নিশো চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। একদিকে বড় একটা আলমারি টাইপ আসবাব রাখা। কাঠের পরিবর্তে কাচ ব্যবহার করা হয়েছে। ভেতরে নানারকম বোরখা ঝুলছে। অন্যপাশে কাপড় রাখা। রুমের প্রতিটা জায়গা বিভিন্ন জিনিসপত্র দিয়ে ভরতি করে রাখা। দেয়াল পুরোটা হালকা গোলাপি আর বেগুনী রঙে রাঙানো৷
ফালাক নিশোর এভাবে মুগ্ধচোখে পর্যবেক্ষণে বাঁধা দিয়ে বলল,“এত মনোযোগ দিয়ে তো কখনো আমাকে দেখেননি। খুবই অন্যায্য কাজ এটা।”
নিশো ফালাকের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। পাশে রাখা চেয়ারটা ফালাকের দিকে এগিয়ে দিয়ে ইশারায় বসতে বলল। ফালাক সেখানটায় বসলে নিশো মাথা বাঁকিয়ে হাসি হাসি মুখ করে বলে উঠল,
“দেখতে চাইলে দেখতে দেবেন আপনি? বসে থাকুন তবে এক যুগ। আমি দেখতে থাকি। আপনার দিক থেকে নজর হটানো মুশকিল বলেই আপনাকে আমি মন ভরে দেখি না।”
“বাহ! এত সুন্দর কথা শিখলেন কবে, সাহেব?”
“কথা শিখতে হয়? সুন্দর মানুষ সামনে থাকলে সুন্দর কথা মুখ দিয়ে আপনা-আপনি বেরিয়ে আসে। ”
“আচ্ছাহ! তারপর?”
ফালাকের দিকে একপলকে তাকিয়েই নিশো বলতে থাকলো,“আরও অনেক কথা বলতে ইচ্ছে করে। কষ্ট করে চেপে রাখতে হয়৷ মনকে শুধাই, বউকে নিয়ে কী করব, কী ভাববো, কীভাবে ভালোবাসব সেটা অন্য মেয়েকে কেন বলতে যাব?”
ফালাক ভ্রু উঁচিয়ে শুধালো,“অন্য মেয়ে আমি?”
“নও?”
“ না।”
“কে তুমি?”
”আপনার…”
“হুম, কী? আমার কী?”
“আপনার…. ”
“বলো।”
”আমার কোন পরিচয় নেই আপনার সাথে সময় এগুনোর মতো৷ কাজিন পরিচয় দিতে ইচ্ছে করছে না।”
“হবু বউ বললে পারতে।”
লজ্জা পেল ফালাক। লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলল সে। লজ্জামাখা মুখ দেখে নিশো হো হো করে হেসে উঠল। বেশ কিছুক্ষণ কথা চলল দুজনের মাঝে।
কথা বলার এক পর্যায়ে নিশো আলতো গলায় বলে উঠল,”একটা কথা বলতে ইচ্ছে করছে। এই যে, কণ্ঠনালিতে এসে আটকে আছে।”
ফালাক বাঁধা দিয়ে বলল,“না, ওটা বলবেন না।”
“একবার বলি। ভালোবাসি বলতে না পারায় ভীষণ যন্ত্রণা।”
” না, না, না। ওটা আমি এখন কিছুতেই শুনব না। আপনি কথা দিয়েছিলেন ওটা আপনি একমাত্র আপনার বউকে বলবেন।”
“না বলে থাকা মুশকিল।”
“বিয়ে করে নিন জলদি।”
নিশো ফালাকের দিকে পলকহীন চোখে চেয়ে বলল,”তাছাড়া উপায় দেখছি না। বড্ড জ্বা*লাচ্ছো তুমি।”
__________
রাবেয়া বেগম আবিরের জন্য চা বানিয়ে তোয়ার হাত দিয়ে পাঠিয়েছেন। তোয়া ভয়ে ভয়ে চায়ের কাপটা নিয়ে আবিরের রুমে প্রবেশ করল। আবির মাত্রই গোসল শেষ করে বেরিয়েছে। ভালোমতো চুল মুছছিল সে। উন্মুক্ত শরীর। মাথা থেকে দরদর করে পানি ঝরছিল বুক, পিঠে। আবিরের দিকে চোখ যেতেই মুহূর্তের মধ্যে তার পিঠের দিকে চোখ আটকে গেল তোয়ার। এক পলকে আবিরের দিকে চেয়ে রইল সে। হঠাৎ মুহূর্তের মধ্যে চোখ নামিয়ে নিল তোয়া। মৃদু গলায় বলল,
”চা নিয়ে এসেছি।”
বিদ্যুৎ বেগে পিছনে ঘুরে তাকালো আবির। তোয়াকে দেখে পাশে রাখা কালো রঙের টিশার্টটা পরে নিল সে। এগিয়ে এসে দরজার দিকে দেখে গম্ভীর গলায় বলল,
“একটা প্রাপ্তবয়স্ক ছেলের ঘরে আসার আগে নক করে আসতে হয় এই কমনসেন্সটুকু নেই তোর? এখন কি তোকে বাচ্চাদের মতো এটিকেট আর ম্যানার শেখাতে হবে?”
তোয়া একবার পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখে বলল,
“একটু আস্তে কথা বল। চা দিতে এসেছি। খু*ন করতে আসিনি আমি। এভাবে চিল্লাবি না। আর রইল রুমে নক করে আসার কথা, তোর রুমে কেন নক করে আসতে হবে? খালি গায়ে চুল মোছার জন্য তোর ওয়াশরুম নেই? নিজেই রুমে এসে এসব করবেন আবার কেউ আসলে তার দোষ।”
আবির দাঁত চেপে বলল,“এটা আমার ব্যক্তিগত রুম, তোয়া।”
“রুম ঘুমানোর জন্য, ব্যক্তিগত সময় কাটানোর জন্য, ওয়াশরুমের কাজ রুমে করার জন্য না। তোর সাহস বেড়ে গেছে। অতিরিক্ত কথা শুনাচ্ছিস তুই আমাকে। তোর এই ব্যবহার সহ্য হচ্ছে না আমার।”
“আসিস না কাছে তাহলেই তো হয়ে গেল।”
“কাছে না সামনে এসেছি শুধু।”
“চা নিয়ে যা। যে চা তুই ছুঁয়েছিস সেটা আমার লাগবে না। কখনো আমার সামনে আসবি না।”
আবিরের কথাটা শেষ হতেই শব্দ করে চায়ের কাপটা টেবিলের ওপর রাখলো তোয়া। আবিরের দিকে এগিয়ে গিয়ে সল্প দূরত্বে ঠিক সামনেটায় দাঁড়ালো। মাথা উঁচু করে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোকে ছুঁয়ে দিলেও কি তুই ‘তোকে’ দিয়ে দিবি আমাকে?”
দমে গেল আবির। তোয়ার দিকে তাকিয়ে রইল সে। এসব কী বলছে তোয়া? তাকে ভরসা নেই৷ ছোটবেলা থেকে এই মেয়েকে ভালোভাবে চিনে সে। জিদের বশে যা ইচ্ছে করে ফেলতে পারে ভেবেই তাকে ইগনোর করার চালটা চেলেছিল আবির কিন্তু তার চালের ফলাফল এত তীক্ষ্ণ হবে সেটা আন্দাজ করেনি সে। শুকনো ঢোক গিললো আবির। তারপর মেকি রাগ দেখিয়ে বলল,
“অসভ্য মেয়ে মানুষের মতো কথা বলবি না, তোয়া। এসব ভালো ফ্যামিলির মেয়েরা বলে না।”
তোয়া চোখ-মুখ শক্ত করে বলল,“আমি বলি। আমি অসভ্য। গায়ে পড়া মেয়ে মানুষ। ছেলে মানুষের উন্মুক্ত শরীর দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে। অসভ্য যেহেতু হয়েছি সেহেতু অসভ্যতা তো করতেই হবে। ভদ্রতা দেখিয়ে দেখেছি মানুষ পাত্তা দেয় না।”
দরজার দিকে ইশারা করে আবির বলে উঠল,
“দরজা ওদিকে। বেরিয়ে যা এক্ষুনি। আমার চোখের সামনে থেকে বেরিয়ে যা নইলে কিন্তু আমি তোর গায়ে হাত তুলতে বাধ্য হব।”
তোয়া ভাঙা ভাঙা গলায় বলল,
“তোর অবহেলা আমি সহ্য করতে পারছি না। তোর পরিবর্তন আমি মেনে নিতে পারছি না। মরে যেতে ইচ্ছে করছে আমার। ছোটবেলা থেকে এখন অবধি যারা আমাকে কষ্ট দিয়েছে তাদের ছায়াও মাড়াইনি আমি কিন্তু তোর এই ব্যবহার আমি কিছুতেই সহ্য করতে পারছি না আবার দূরেও থাকতে পারছি না । তোর অবহেলা যেন চুম্বকের মতো টানছে আমাকে। মনটা ছটফট করছে। আহ*ত হতে বারবার তোর কাছেই ছুটে আসছি মনে অন্যকিছু পাবার আশায়। মিলছে না, কিছুতেই শান্তি মিলছে না আমার। আমি টিনেজার মেয়েদের মতো আচরণ করছি। কান্না পাচ্ছে আমার। আমার চোখের পানি তোকে স্পর্শ করছে না দেখে মরে যেতে ইচ্ছে করছে। বারবার প্রত্যাখ্যান সহ্য হচ্ছে না তবুও তুই-ই যেন গন্তব্য। আমি পারছি না, আবির। আমার কষ্ট হচ্ছে। আমি তোর থেকে দূরে থাকতে পারছি না। আমি কষ্ট সহ্য করতে পারছি না। শুনতে পাচ্ছিস তুই?”
তোয়া পরক্ষণেই তাড়াহুড়ো করে অবিন্যস্তভাবে নিজের চোখ, গাল, মুখ মুছে নিল। নিজেকে ধাতস্থ করতে বার কয়েক শ্বাস প্রলম্বিত করল। আবিরের মুখে কোন কথা নেই। সে এক পলকে অন্যমনস্ক হয়ে তোয়াকে দেখে যাচ্ছে। এতদিন তো সে এটাই চেয়েছিল। সে মনে মনে চেয়েছিল তোয়া তাকে পেতে ছটফট করুক। বুঝুক সেও ভালোবাসে। নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে দূরত্ব সহ্য করা যায় না। নিজের জন্য প্রিয় মানুষের করা এটুকু পাগলামিতে মন ভরলো না আবিরের। নিজের মেকি চরিত্রে অটল রইল সে। বলল,
“তোয়া, বেরিয়ে যা। তোকে বের করে দিতে আমার ভালো লাগবে না। নিজ থেকে চলে যা। তোর এসব কথা, কান্না আসলেই আমাকে আর স্পর্শ করে না। তোর প্রতি আমার আর একটুও ভালোবাসা অবশিষ্ট নেই। তুই তোর পছন্দের মানুষের সাথে ভালো থাকিস, দোয়া থাকবে।”
তোয়া এবার সবরকম বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে হিংস্র সিংহীর ন্যায় আবিরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। টি-শার্টের কর্লার চেপে ধরে মাড়ি শক্ত করে বলে উঠল,
“তোকে চাই আমার। তোকেই চাই। আমি কিচ্ছু জানি না আর।”
“তোকে চাই আমার। তোকেই চাই। আমি কিচ্ছু জানি না আর।” কথাটা বারবার আবিরের কানে বাজছে। ঘনঘন শ্বাস ফেলছে সে। বুকটা ওঠানামা করছে। চোখে প্রবল আস্থা। বিশ্বাস করতে চাইছে সে তোয়াকে। বিশ্বাস করতে বাধ্য মনে হচ্ছে নিজেকে। নিজেকে অশান্ত লাগছে তার। বুকটা খাঁ খাঁ করছে।
তোয়া তখনও আবিরের টিশার্ট ধরে আছে। দুজনের শ্বাস-প্রশ্বাস যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। আবির চোখে সরাতে পারছে না তোয়ার ওপর থেকে। তোয়ার চোখও আবিরের চোখে নিবদ্ধ।
“তুই বললি না, আমার ছোঁয়া জিনিস তোর লাগবে না? এবার তোকে দিয়ে দে প্লিজ।” হঠাৎ কথাটা বলেই আবিরের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবালো তোয়া। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক কাজটা সে বিনা অনুমতি আর বিনা নোটিশে করে ফেলল।
মুহূর্তের মধ্যে কী হয়ে গেল সেটা বুঝতে সময় লাগলো আবিরের৷ শ্বাস প্রশ্বাসের গতি কমলো দুজনের। দুই জোড়া চোখ নিমিষেই অন্ধকারে ডুব দিল। তোয়ার দুই হাত আবিরের টিশার্ট ছেড়ে গালের দুই পাশ স্পর্শ করল।
সময় খুব বেশি অতিবাহিত হলো না। আবিরের সৎবিৎ ফিরতেই এক ধাক্কায় সরিয়ে দিল তোয়াকে৷ তোয়া আবিরের কাছে থেকে ছিটকে গিয়ে দূরে দাঁড়ালো। এতটা সে কিছুতেই আশা করেনি আবির। এত পাগলামি সে চিন্তাও করেনি। তোয়া শুধুমাত্র জিদের বসে এমন একটা কাজ করে ফেলল ভাবতেই রাগ হচ্ছে তার৷ রাগের মাত্রা তরতর করে বেড়েই চলল। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে তোয়ার গালে চড় বসিয়ে দিল। আকস্মিক এমন কান্ডে, ব্যথায় বেদনাদায়ক চিৎকার করে উঠল তোয়া। গালে হাত দিয়ে অবাকচোখে আবিরের দিকে তাকালো সে।
আবির তোয়ার দিকে রাগীচোখে তাকিয়ে বলে উঠল,
“এমন একটা কাজ তুই কীভাবে করতে পারলি, তোয়া? আজ নিজেকে তুই কী বলবি? সেদিন ট্রেনে আমি শুধু বলেছিলাম। মুখ দিয়ে শুধু উচ্চারণ করেছিলাম তাতেই তোর ব্যবহারের কথাটা মনে করে দেখ। মনে করে দেখ একটু। আর আজ! এটা কী করলি তুই? ছি! তোকে এখন ঘৃণা লাগছে আমার। প্লিজ আমার চোখের সামনে থেকে চলে যা। তোর মতো মেয়েকে আমি পছন্দ করেছিলাম? ইশ! শীট!”
কথাগুলো বলেই হাতের উল্টোপাশ দিয়ে বারবার ঠোঁট মুছতে থাকলো আবির৷ তোয়া আগের মতোই গালে হাত দিয়ে এক পলকে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। এখন বুঝতে পারছে ঘোরের মধ্যে বাস করে কী ভুলটাই না সে করেছে! লজ্জা লাগছে তার সাথে নিজের প্রতি ঘৃণা লাগছে।
“ছি কী কাজ করে ফেললাম আমি! আ’ম স্যরি, স্যরি আমি। স্যরি।” বলেই তোয়া আবিরের রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
তোয়া বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই আবির বুঝতে পারল তোয়াকে চড় দেওয়াটা তার উচিত হয়নি। এতদিন সে যা করেছে তার জন্যই তোয়া এমন করছিল। তোয়া একটা ভুল করে ফেলেছে তাই বলে এত জোরে থাপ্পড় দেওয়া তার মোটেও উচিত হয়নি। এটার জন্য যদি বড় কোন কান্ড সে করে বসে! হিতে বিপরীত ঘটনা ঘটে যাবে তো। তোয়া অন্যরকম কিছু ঘটাতে পারে ভেবেই গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেল আবিরের। নাহ, ঘটনা আর প্যাঁচানো ঠিক হবে না বুঝে আবির বেরিয়ে এলো। বাহিরে নিশো, ফালাক, রাবেয়া বেগম এবং তোয়া দাঁড়িয়ে। আবিরকে দেখে নিশো বলে উঠল,
”বাসায় আসিস। কাল দেখা হচ্ছে তাহলে। এখন যাই, রাত হয়ে যাচ্ছে।”
আবির তোয়ার দিকে দেখে নিশোর দিকে তাকালো। আমতা আমতা করে বলল,
“নিশো, তোয়ার সাথে একটু দরকার আছে। তুই যা। আমি ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ওকে রেখে আসব৷ আমি নিজেই রেখে আসব।”
নিশো তোয়ার দিকে তাকালো। তোয়া শান্ত, স্থীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুখটা মলিন সেটা নিশো দেখেই বুঝতে পারল। নিশোর চোখে চোখ পড়তেই তোয়া বলল,
“ভাইয়া, ভালো লাগছে না। বাড়ি যাব আমি।”
নিশো কী বলবে বুঝতে পারছে না। সে একবার আবির আর আরেকবার তোয়ার দিকে দেখছে। নিশোকে চুপ থাকতে দেখে আবির আবার বলে উঠল,
“প্লিজ নিশো, একটা ভরসা রাখ আমার ওপর। আমি ওকে রেখে আসব। ভরসা করিস তো আমার ওপর তাই না?”
আবির থামতেই তোয়া আবার বলে উঠল,
“আমি বাড়ি যাব।”
নিশো তোয়ার দিকে এগিয়ে এসে তোয়ার মাথায় হাত রাখলো। হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“দুজন একটু কথা বলে মান অভিমানের পর্ব মিটিয়ে নে। ও বাসায় দিয়ে আসবে। আমি আসছি।”
নিশো রাবেয়া বেগম এবং ফালাককে বলে বেরিয়ে গেল। ফালাক আর রাবেয়া বেগম তখনও চুপচাপ আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে৷ আবির রাবেয়া বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“তোয়ার সাথে আমার কথা আছে, মা।”
রাবেয়া বেগম বুঝলেন এবার হয়তো সব ঠিকঠাক হয়ে যেতে পারে। তিনি আর কথা না বাড়িয়ে ফালাককে নিয়ে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালেন।
তোয়া ঠিক আগের মতোই দাঁড়িয়ে ছিল সেখানটায়। শুধু একটাই পার্থক্য পূর্বে সবার থেকে নিজের কষ্ট আড়াল করে রেখেছিল আর এখন সেটা আহ্লাদী হয়ে শ্রাবণের বারিধারার রূপ নিয়েছে।
আবির এগিয়ে এসে তোয়ার হাত ধরতেই তোয়া হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু আবিরের সাথে সে পেরে উঠল না। আবির শক্ত করে হাতটা ধরে বলল,
“রুমে আয় কথা আছে।”
তোয়া ভারি গলায় বলল,
”বাড়ি যাব আমি।”
আবির তোয়াকে অবাক করে দিয়ে মুহূর্তের মধ্যে কোলে তুলে নিল। পরে যাওয়ার ভয়ে সাথে সাথে আবিরের টিশার্ট খাঁমচি দিয়ে ধরল তোয়া। নামার জন্য নড়াচড়া করতে থাকলে এক ধমকে থামিয়ে দিল আবির।
নিজের রুমে প্রবেশ করে কোলে থেকে তোয়াকে নামালো সে। দরজা আটকে আবার তোয়ার হাত ধরে বিছানার দিকে নিয়ে গেল। তোয়ার দুই বাহু ধরে বিছানায় বসিয়ে দিল। নিজে একটা চেয়ার টেনে তোয়ার সামনে বসলো সে।
তোয়ার চোখ আর গাল মুছে দিল আবির। বামগালে হাতের স্পর্শ পেতেই ‘আহ’ শব্দ করে উঠল তোয়া। সাথে সাথে হাত সরিয়ে নিল আবির। নরমস্বরে বলল,
“খুব জোরে লেগেছে তখন? স্যরি।”
আবিরের ভিন্নসুরে কথা শুনে তোয়া আবিরের দিকে তাকালো। আবির আবারও আদুরে গলায় বলল,
“স্যরি। আর কখনো এমন হবে না। খুব বেশি জোরে মে*রেছি তাই না?”
তোয়া সহসা বলে উঠল,“জোরে মা*রলে জোরে লাগবে না? মে*রে আবার এখন দরদ দেখাতে এসেছিস। চলে যেতে বলেছিস, চলেই তো যাচ্ছিলাম আবার আটকালি কেন?”
আবির তোয়ার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,“স্যরি বলতে।”
”কীসের স্যরি?”
“এই যে চড় দেওয়ার জন্য।”
“চড়ের চেয়ে তো তোর বাজে ব্যবহার আঘা*ত করে বেশি।”
“তার মানে ধমক না দিয়ে চড় দেওয়া উচিত? ”
তোয়া গাল ফুলিয়ে আবিরের দিকে চেয়ে রইল। আবির মৃদু হেসে বলল,“আমার বিয়ের কথা চলছে। খুব তাড়াতাড়ি ভাবি পেয়ে যাবি।”
তোয়া উঠে দাঁড়ালো। মুখভাড় করে বলল,
“বাড়ি দিয়ে আয় আমাকে। আমি এখানে থাকব না। তোর এসব কথা আমার শুনতে ইচ্ছে করছে না।”
আবির তোয়ার হাত ধরে টেনে আবার বসালো। মুগ্ধচোখে তোয়ার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ।
“কী শুনলে ভালো লাগবে?”
তোয়াও এবার আবিরের চোখে চোখ রাখলো। আনমনে বলে উঠল,
“ভালোবাসিস সেটা বল।”
“এখন আর ভালোবাসি না তো। মিথ্যে বলব?”
“মিথ্যেই বল। আমার আর ভালো লাগছে না, আবির। আমি এখন বুঝি, তোকে ছাড়া আমার চলছে না। আমার এরকম আগে কখনো হয়নি। বিশ্বাস কর,এরকম আগে কখনো মনে হয়নি কিন্তু এখন আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারি না। তুই আঘা*ত দিয়ে কথা বলিস তবুও আমি তোর কাছেই আসি। আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। সাধ্য হারিয়েছি আমি। আমি বুঝতে পারি, আমি তোকে ছাড়া আর চলতে পারছি না।”
তোয়ার ছোট চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে আবির মৃদু গলায় বলল,”ভালোবাসিস?”
তোয়া আর কোনকিছু না ভেবে ওপর-নিচ মাথা নাড়ল। আহ্লাদী গলায় বলল,
“সুস্থ রেখেছিস নাকি? ভালো না বেসে উপায় আর একটাও ছেড়ে রেখেছিস আমার জন্য?”
“রাখতে ইচ্ছে করেনি৷ চেয়েছিলাম তুইও আমার মতো আমাকে পেতে একটু ছটফট কর৷ একটু বুঝে নে, ভালোবাসার মানুষকে না পেলে আর তার করা অবহেলা ঠিক কতটা পো*ড়ায়!”
“স্যরি।”
স্যরি বলেই আবিরের দিক থেকে চোখ সরিয়ে মেঝের দিকে তাকালো তোয়া। আবার বলল,
“ভালোবাসিস না আর আমায়?”
“তোর কী মনে হয়? আমার চোখের দিকে তাকিয়ে মনটা পড়ে দেখ তো। মনের কথা চোখেই দেখতে পাবি।”
তোয়া মেঝের দিকেই তাকিয়ে বলল,“চোখ যদি বলে তুই আর ভালোবাসিস না তাহলে আমার আবার কান্না পাবে। আমি আর নিব্বিদের মতো কাঁদতে চাইছি না। তবুও কান্না পেয়ে যাবে।”
আবির তোয়ার চিবুকে আঙুল রেখে মুখটা উঁচু করে নিজে তোয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,”তাকা আমার চোখের দিকে।”
তোয়া তাকালো। আবিরের চোখে চোখ রাখতেই আবির বলল, ”ভালোবাসি তোকে। আমার ভালোবাসা বোঝাতেই তোর থেকে দূরত্ব বাড়িয়েছিলাম। আর দূরে থাকব না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোকে আমার কাছে নিয়ে আসব। তোকে ছাড়া আমারও দিন কাটানো মুশকিল হয়ে পড়েছে। দূরত্বে মনের টান বেড়েছে।”
তোয়া ঠোঁট উল্টে আবিরের দিকে তাকালো।
“তাহলে তুই আমাকে থাপ্প*ড় দিলি কেন?”
আবির ভ্রু কুঁচকে বলে উঠল,“চুমু খেয়েছিস কেন? ঠোঁট কি ফ্রিতে পেয়েছিস নাকি?”
তোয়া আবিরের বাহুতে শক্তপোক্ত কয়েকটা কিল, ঘু*ষি দিয়ে বলল,“তাই বলে তুই ওত জোরে মা*রবি। একশো বিশ বার চুমু খাব তোর কী? তুইও আমার আর তোর ঠোঁটও আমার।”
আবির বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল। মাথা নিচু করে তোয়ার দিকে চেয়ে থেকে বলল,
“লজ্জা কর একটু, তোয়া। কী সব আজেবাজে কথাবার্তা! চারপাশে কেমন শেমলেস পিপলস। ছি ছি ছি।”
তোয়াও উঠে দাঁড়ালো। মাথা উঁচু করে আবিরের দিকে তাকিয়ে মেকি রাগ দেখিয়ে বলল,“বিয়েটা আগে হতে দে।”
“কী করবি? ক্ষণে ক্ষণে এভাবে চুমু খেয়ে আমাকে নষ্ট করে দিবি?”
”প্রয়োজন হলে তাই করব।”
”দে, এখন একটু নষ্ট করে দে।”
“বেয়াদব একটা। বাড়ি দিয়ে আয় আমাকে।”
“আমার শ্বশুরবাড়ি?”
“হবু।”
“একটা চুমু দিয়ে যাবি না।”
“নির্লজ্জ তুই।”
“অথচ লজ্জাজনক কাজ করেছিস তুই।”
“খোঁচা দিবি না বলে দিলাম। চড় দিয়েছিস এখানে একটা চুমু দে পারলে। জ্বল*ছে আমার।।” বলেই তোয়া গালটা এগিয়ে দিল আবিরের দিকে। আবিরও মৃদু হেসে গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“এই চুমুটা পাওনা রইলি। চল এগিয়ে দিয়ে আসি। অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে।”
“আই লাভ ইয়্যু বলবি না? শুনতে ইচ্ছে করছে।”
আবির মুচকি হেসে তোয়ার দুই গালে হাত দিয়ে তার মুখটা নিজের দিকে সামনাসামনি করে বলল,
“ভালোবাসি তোকে। খুব বেশি ভালোবাসি৷ তুই যতটুকু ভাবতে পারিস তার চেয়েও বেশি৷ অনেক বেশি ভালোবাসি।”
#চলবে……