একটি সাঁঝরঙা গল্প পর্ব-৩০ এবং শেষ পর্ব

0
106

#একটি_সাঁঝরঙা_গল্প
#তানিয়া_মাহি
#অন্তিমপর্ব_৩০(১)

আজ ফালাক-নিশোর বিয়ে। সবার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আজকের দিনটা বেছে নেওয়া হয়েছিল তাদের বিয়ের জন্য। বাহিরের কাউকেই বলা হয়নি এমনকি কাছেপিঠের কোন আত্মীয়দেরও না। বিয়েটা একদম শুধু দুইটা পরিবারের মানুষের সামনেই হবে। গতকাল শুধু নিশো ফালাককে নিয়ে বেরিয়েছিল একটা লাল টকটকে শাড়ি কিনতে। ফালাকের পছন্দমতো শাড়ি কেনা হলে দুজন আবার আগের মতো দুজনের বাড়িতে।
কথা হয়েছে আপাতত ফালাক নিজের বাড়িতেই থাকবে। কিছুদিন গেলে আবির আর তোয়ার সাথেই বিয়ের অনুষ্ঠান করে বড়সড় আয়োজন করে তাদের ঘরে তোলা হবে। জাফর সাহেবের কথায় কেউ আপত্তি করেনি।

সন্ধ্যা পরপরই আবির গেল জাফর সাহেব এবং নিশোকে তাদের বাড়িতে আনতে। বাড়িতে এসে দেখল সবাই তৈরি হলেও তোয়া এখনো তৈরি হয়নি। রূম্পা বেগম তৈরি হয়ে জাফর সাহেবের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত। আবির ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা তোয়ার ঘরে নক করল। ভেতর থেকে তোয়ার গলা ভেসে এলো,

“কে? এসো।”

আবির দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করল। সামনের দিকে তাকাতেই দেখল তোয়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে হালকা গোলাপি রঙের জামদানি শাড়ি। চুলে খোপা করে কাধের ওপর ফেলে রাখা হয়েছে। সাদা রঙের ব্লাউজের সাথে হালকা গোলাপি রঙের শাড়ি যেন আলাদাভাবে সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে দিয়েছে৷

তোয়া আয়নার দিকে তাকিয়ে খুব মনোযোগ সহকারে চোখে আইলাইনার দিচ্ছে। কোনদিকে তার খেয়াল নেই। একটু নড়াচড়া করলেই লাইনার ঘেটে ঘ’ হয়ে যাবে ভেবে খুব সাবধানের সাথে কাজটা করছে তোয়া। আবির এসে তোয়ার থেকে কিছুটা দূরে বিছানায় গিয়ে বসলো। তোয়া ব্যস্ত দেখে কোন কথা না বলে চুপচাপ তাকে দেখতে থাকল সে। মিনিট দুয়েক লাগলো চোখে লাইনার দিতে। পাশে রাখা ছোট ফ্যানটা অন করে মুখে বাতাস নিতে থাকলো। যখন বুঝল নষ্ট হওয়ার ভয় নেই তখন ছোট ছোট চোখে আবিরের দিকে তাকালো। মৃদু হেসে বলল,

“কেমন লাগছে আমাকে?”

আবির সহসা বলে উঠল,“প্রিন্সেস লাগছে। ইচ্ছে করছে আজই বিয়ে করে সাদা রঙের ঘোড়ায় চড়ে তোকে নিয়ে দূর-দূরান্তে পাড়ি জমাই। ভরসা করে যাবি না আমার সাথে?”

তোয়া আবিরের চোখে চোখ রেখে মৃদু গলায় বলল,“তোর সাথে যে পথে পাড়ি জমাবো সে পথের শেষটা প্রাপ্তি না লেখা থেকে যদি মৃ*ত্যু লেখা থাকে আমি তবুও যেতে চাই। প্রাপ্তি বা মৃত্যু সবেতেই শুধু তোকে লাগবে আমার, শুধু তোকে।”

আবির মুচকি হাসলো। দরজার দিকে একটু উঁকি দিয়ে দেখে উঠে দাঁড়ালো। তোয়ার কাছাকাছি এসে ঠিক সামনেটায় দাঁড়ালো। দুজনে কাছাকাছি, অনেক বেশি কাছাকাছি। তোয়া আবিরের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। আবিরও ঠিক একইভাবে তোয়ার চোখের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছে। সামনের ছোট চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দিয়ে বলল,

“আজ বিয়েটা করে নিলে ভালো হতো না? এত সুন্দর সাজ, মিস করে যাব?”
”মিস করবি কেন? দেখছিস তো!”
“একটু জড়িয়ে টড়িয়ে না ধরলে চলে নাকি? এই ধর, একটু কাছাকাছি এলাম, জড়িয়ে ধরলাম, একটু হাতটা ছুঁলাম, হাত, গাল, কপাল, ঠোঁটে চুমু খেলাম।”

আবির কথাটা শেষ করতেই মেকি রাগ দেখিয়ে পেটে ঘু*ষি দিয়ে বলল,

“এই শোন, একদম নোংরা- অশ্লীল কথাবার্তা বলবি না। ট্রেনে কীভাবে জব্দ করেছিলাম ভুলে গেছিস? আবার কিন্তু….”

তোয়াকে কথা শেষ করতে না দিয়ে সবচেয়ে আশ্চর্যের কাজটা করে বসল আবির। তড়িৎ বেগে তোয়ার গালে চুমু দিয়ে দূরে সরে গেল। তোয়া আশ্চর্যের শেষ সীমানায় পৌঁছল। হা করে আবিরের দিকে তাকিয়ে রইল। আবির মুচকি হেসে বলল,

“এবার কী করবি কর? শোধ নিবি? একটা দিয়েছি, তোর দুটো দিয়ে জিততে হবে।”
“হারামি একটা।”
“বাহিরে আছি, জান। তাড়াতাড়ি এসো। আজ প্রয়োজন অবিবাহিতা থেকে বিবাহিতা ট্যাগ লাগিয়ে দিতে সাহায্য করছি।”

তোয়াকে আর কিছু বলতে না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। তোয়া আবিরের যাওয়ার দিকে একভাবে তাকিয়ে মৃদু হাসলো শুধু। প্রেমের বহিঃপ্রকাশ আর ভিন্ন কী হতে পারে!
___

ফালাক- নিশোর বিয়ে সম্পন্ন হলো রাত দশটার দিকে। বাহিরের রুমে বসে সবাই তখনও গল্প করছে। মায়ের পাশে বসে আছে ফালাক। খয়েরী রঙের একটা জামদানী শাড়ি পরেছে সে। একই রঙের ব্লাউজ। গায়ের ফর্সা রঙটা যেন আরও টকটকে রঙ ধারণ করেছে। ঠোঁটে হালকা একটা রঙের লিপস্টিক, চোখে গাঢ় করে কাজল দেওয়া। কানে, গলায়, নাকে, কপালে স্বর্ণের অলংকার জ্বলজ্বল করছে। নারীর শরীরের সৌন্দর্য যেন স্বর্ণের গহনাতেই বেড়ে যায়। ফালাকের বেলাতেও সেটা। নাকে মোটা একটা নথ৷ ফালাককে ঠিক কতটা সুন্দর লাগছে সেটা সেটা নিশোর বারবার তাকানোটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে। সবার কথাবার্তার মাঝে সে কিছুক্ষণ পরপর ফালাককে চোরা-নজরে দেখে যাচ্ছে।

রাত এগারোটা ছুঁইছুঁই। তোয়া হাই তুলে রূম্পা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“মা, অনেক রাত হয়ে গেছে। এটা তোমার বা আমার শ্বশুরবাড়ি না। ভাইয়ার শ্বশুরবাড়ি। ও থাকুক। চলো আমরা বাড়ি যাই। আমার ঘুম পাচ্ছে। ”

রাবেয়া বেগম সামনের সোফা থেকে হেসে বললেন,
“মুখ ফুঁটে একবার আমার ছেলেটা বললে আজ এটা তোরও শ্বশুরবাড়ি হয়ে যেত, মা। চিন্তা করিস না খুব তাড়াতাড়ি এ বাড়িতে নিয়ে আসব তোকে। একদিনেই দুটো ছেলে-মেয়েকে বিয়ে দিলে আনন্দটা একদিনই করতে হতো, এখন দুইটা দিন পাব।”

তোয়া মুখ গোমড়া করে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল,“ আমি কি আমার বিয়ের কথা বলেছি না-কি! আমার ঘুম পেয়েছে সেটা বললাম। আমি বিয়ে করতে না পেরে ম-রে যাচ্ছি না। আর কিছুদিন শান্তিতে থেকে নিই।”

রাবেয়া বেগম আবার বলে উঠলেন,“আমার ছেলেকে বিয়ে করলে অশান্তিতে থাকবে না।”

সবার কথা চলল আরও কিছুক্ষণ। শেষ পর্যায়ে জাফর সাহেব বলে উঠলেন,“আজকের মতো উঠি৷ আসলেই অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। ”

জাভেদ সাহেব ঘড়িতে সময় দেখলেন। সাড়ে এগারোটা বাজে। তিনি আর আটকালেন না। জাফর সাহেব উঠে দাঁড়ালে তিনিও উঠে ভাইয়ের সাথে কোলাকুলি করে বললেন,

“তোমার ছেলেটা তাহলে আজ আমার বাড়িতে রইল, ভাই। আবির তোমাদের এগিয়ে দিয়ে আসুক।”

আবির সবাইকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে বের হলো। রাতের অন্ধকার আকাশ চাঁদের আলোতে আলোকিত হয়ে উঠেছে। চাঁদের চারপাশে বেশ কিছুটা জায়গায় আলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। জাফর সাহেব এবং রূম্পা বেগম আগে আগে হাঁটছেন। দুজনে বিভিন্ন কথাবার্তায় ব্যস্ত। আবির আর তোয়া পিছন পিছন হাঁটছে। বাড়ির ঠিক সামনে এসে তোয়াকে গেইট আটকাতে বলে রূম্পা বেগম এবং জাফর সাহেব ভেতরে চলে গেলেন।

তোয়া আবিরের থেকে বিদায় নিয়ে বলল,“সাবধানে বাড়ি যা। ফিরে আমাকে নক করিস। আমি অনলাইনে থাকব। সোজা বাড়ি চলে যাবি।”

আবির তোয়ার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,“তুই অশান্তির জন্য তৈরি হয়ে নে।”

আবিরের কথাটা ঠিক বুঝল না তোয়া। ভ্রু উঁচিয়ে শুধালো, “কী? কীসের অশান্তি? ”
“তুই বাড়িতে বললি না?”
“হুমায়ুন আহমেদ বলেছে না যে, বিয়ের পর তিন চারমাস সুন্দরী বউদের তাদের বর ঘুমাতে দেয় না? বুঝেছিস? আমি ওত ক্লিয়ারলি বললে আমাকে আবার অশ্লীল বলবি।”

তোয়া পায়ের স্যান্ডেল খুলে আবিরের দিকে অ*গ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,“যাবি তুই এখান থেকে! অশ্লীল একটা। বেয়াদব কোথাকার!”
________

ফালাক নিজের রুমে নিজের বিছানায় পা গুটিয়ে মাথায় লম্বা ঘোমটা টেনে বসে আছে। আজ নিজের চির পরিচিত, পুরোনো ঘরটা নতুন লাগছে। বড় হয়ে ওঠা এই একই ঘরে আজ অন্যরকম এক অনুভূতির জন্ম নিয়েছে।

ওয়াশরুমের দরজায় শব্দ হলো। সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা পরিহিত প্রায় বছর ত্রিশ বয়সের এক তাগড়া যুবক বেরিয়ে এলো। হাতে পাঞ্জাবির হাতা গুটানো। পাজামার কিছু অংশ ভাজ করে ওপরে তুলে রাখা। হাত- পা, মুখ ভেজা। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে শুকনো ঢোক গিললো নিশো। পাপসে পা মুছে ফালাকের দিকে তাকালো। ফালাক মাথানিচু করে বসে আছে। নিশো মৃদু গলায় বলল,

“তোমার তোয়ালেটা কোথায়?”

মাথা তুলে নিশোর দিকে চাইলো ফালাক। একদিকে ইশারা করে বলল,“ওই যে ওখানে।”

নিশো সেদিকে যেতে যেতে বলল,“শাড়ি পরে নামাজ পরতে পারবে? না পারলে চেঞ্জ করতে।”

ফালাক সংক্ষেপে বলল,“সমস্যা নেই৷ পারব।”

দুজনে নামাজ আদায় করে নিল। নিশোর আগে আগে নামাজ শেষ হলেও ফালাক বেশ সময় নিয়ে নামাজ শেষ করল। ফালাকের নামাজ শেষ হওয়ার আগ অবধি নিশো ঠিক একইভাবে পাশে বসে ছিল। নামাজ শেষ হতেই ফালাকের কোলে মাথা রেখে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পরল। ফালাকের দিকে তাকিয়ে বলল,

“কী চাইলে সিজদায়? এত বড় সিজদাহ! ”

ফালাক নিশোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“সেটা আপনাকে কেন বলব? ওটা আমার আর আমার আল্লাহর ব্যক্তিগত ব্যাপার।”

নিশো মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,“আমাদের ব্যক্তিগত কথা শুরু হবে না?”

ফালাক নড়েচড়ে বসল। জায়নামাজ কিছুটা গুছিয়ে বলে উঠল,“সরুন। উঠুন তাড়াতাড়ি।”

নিশো উঠে বিছানায় গিয়ে বসল। ফালাক জায়নামাজ দুটো ভাজ করে তাকে রেখে দিল। মাথার ওড়নাটা খুলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলের খোপাটা খুলে ফেলল। নিশোর দিকে এগিয়ে এসে বলল,

“একটা সাহায্য করবেন?”

নিশো ভ্রু উঁচিয়ে ইশারায় জানতে চাইল। ফালাক বলল,“চেঞ্জ করব। শাড়ির আঁচলের দিকের অংশটা পিঠের দিকে সেফটিপিন দিয়ে আটকানো। আমি হাতে নাগাল পাচ্ছি না। একটু খুলে দেবেন?”

ফালাকের কথা শুনে অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইল নিশো। নিশোকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফালাক আমতা আমতা করে বলল,

“খু খুলে দেবেন না? মা’র কাছে যাব? শুয়েছে হয়তো।”

“আমি হেল্প করছি।” বলেই উঠে দাঁড়ালো নিশো। ফালাকের পিছন দিকে গিয়ে দাঁড়ালো। পিঠ, কোমর ছাঁড়িয়ে হাঁটু পেয়ে যাওয়া চুলগুলো আলতো স্পর্শে সরিয়ে দিল নিশো। খোলা পিঠে এই প্রথম কোন পুরুষের স্পর্শ পেয়ে পুরো শরীরটা যেন একটা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল। চোখ বন্ধ করে নিয়ে ঢোক গিললো ফালাক।

নিশো সেফটিপিনের অংশ খুঁজে বের করল। পিঠের দিকে ব্লাউজের নিচের অংশ শাড়ির একাংশ আটকে রাখা। খুব সাবধানে শাড়ির আঁচলের নিচের অংশটা আলগা করল নিশো। খয়েরী রঙের ব্লাউজে ফালাকের শরীরটা যে আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে সেটা গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারল নিশো। খোলা পিঠ তাকে বারেবারে আকর্ষণ করছে। বারবার শ্বাস ফেলছে নিশো। কম্পনরত হাতটা ফালাকের পিঠে ছোঁয়ালো সে। হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে এলো ফালাকের। চোখ খিঁচে আবারও বন্ধ করে নিলো৷ তারও শ্বাস ঘনঘন ফেলছে। ফালাককে অবাক করে দিয়ে প্রায় উন্মুক্ত পিঠে ঠোঁট ছোঁয়ালো নিশো। বিদ্যুতের ঝটকার মতো নিশোর দিকে ঘুরল ফালাক। নিশোর দিকে ধীরে ধীরে তাকাল। নিশোর চোখে যেন নেশা। ছোট হয়ে এসেছে চোখ দুটো। ফালাকের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

“কী হলো?”

ফালাক নিশোর দিকে তাকিয়ে মৃদু গলায় বলল,“চেঞ্জ করে আসি?”

ফালাকের কথায় প্রত্তুত্তর করল না নিশো। নিজমনেই পাঞ্জাবির পকেট থেকে দুটো গোলাপ বের করল। একটা হলুদ আর আরেকটা লাল। ফালাকের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

“ফালাক, আজ তোমাকে পেয়ে যাওয়ার রাত। এই রাতে স্ত্রীকে কিছু একটা উপহার দিয়ে তাকে ছোঁয়ার অধিকার চেয়ে নিতে হয়। আমি তো বেকার। আল্লাহ চাইলে একদিন না হয় তোমার সব ইচ্ছে পূরণ করব৷ আজ এটা নেবে? গ্রহণ করবে আমাকে?”

ফালাক মৃদু হাসলো৷ শান্তি লাগছে তার। হাত বাড়িয়ে গোলাপটা নিয়ে বলল,“এতদিন একটা কথা বারবার বলতে চেয়েছিলেন। আজ শুনতে ইচ্ছে করছে। ভীষণ শুনতে ইচ্ছে করছে। বলবেন?”

নিশো এগিয়ে এলো। ফালাকের সামনে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত রেখে কাছে টেনে নিল। চিবুকে হাত রেখে ফালাকের মুখটা নিজের সবচেয়ে কাছে নিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,

“ভালোবাসি৷ ভালোবাসি। ভালোবাসি।”

বুকটা কেঁপে উঠল ফালাকের৷ এই শব্দটা অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি করল। খাঁমচে ধরল নিশোর পাঞ্জাবির বুকের অংশ। চোখ বন্ধ করে প্রাণহীন রোবটের মতো দাঁড়িয়ে রইল। নিশো সোজা হয়ে ফালাকের দিকে তাকিয়ে রইল৷ চোখ দুটো সমস্ত মুখটাকে পর্যবেক্ষণ করে ঠোঁটে এসে পৌছল। দুইহাত দিয়ে ফালাকের মুখটা আলগোছে স্পর্শ করে ঠোঁটের দিকে অগ্রসর হলো। মিললো অধরে অধর। বাঁধন শক্ত হলো৷ থেমে গেল যেন র*ক্ত সঞ্চালন। সমস্ত শরীরে এসে বারি খেল শীতল হাওয়া। সূচনা হলো নতুন অধ্যায়ের। একে অন্যকে পাওয়ার আগ্রহ তীব্র থেকে তীব্র হলো। নিজেদের অপরজনকে উদ্দেশ্য করে বাড়িয়ে দিল আরও এক ধাপ। এ রাতে দুটো প্রাণ যেন জান্নাতি আরও একটা সম্পর্কের উত্থান ঘটালো। মন ছুঁলো মনকে আর শরীর! শরীর পেল শরীরকে। রাত বাড়ার সাথে সাথে একে অপরকে পাওয়ার উন্মাদনা বাড়তে থাকলে। সাক্ষী হলো একটা অন্ধকার রাত আর রাতের আকাশে অবস্থানরত আলো ছড়ানো চাঁদ। সাঁঝের পর এই রাতে শুরু হলো আরও একটা গল্প। এ গল্পে দুটো প্রাণ উচ্ছ্বসিত হয়ে সময়ের সাথে তাল মেলালো৷ বেপরোয়া হয়ে উঠল একে অপরকে পেতে। এ রাতটা তাদের, শুধুমাত্র তাদের। এ রাত ভালোবাসার আর একটা নারীর অপেক্ষার অবসানের৷ এ রাত দুটো মন আর শরীরের পূর্ণতার। এ রাতের গভীরতার সাথে সবার অলক্ষ্যে ভালোবাসাও গভীর হোক।

#চলবে…..

#একটি_সাঁঝরঙা_গল্প
#তানিয়া_মাহি
#অন্তিমপর্ব_৩০_শেষাংশ

“বাবা আমি যদি তোয়াকে নিয়ে পালিয়ে এসেছি। ওর ইচ্ছে ছিল পালিয়ে বিয়ে করার। আমরা যদি এখন বিয়ে করে বাসায় ফিরি তাহলে কি তুমি আমাদের বাসা থেকে বের দেবে?”

সন্ধ্যা ছয়টা। কাজী অফিসে পাশাপাশি বসে আছে আবির আর তোয়া। নিজেদের দুজন দুজন করে সাক্ষীও রেখেছে তারা। বিকেলের দিকে তোয়া যখন আবিরের সাথে ফোনে কথা বলছিল তখন আবির হঠাৎ জিজ্ঞেস করে,

”তোর না পালিয়ে বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল, পালাবি?”

তোয়া চাপাস্বরে বলল,“সবাই তো মেনে নিয়েছে। পালাবো কেন তাহলে?”
“কেন আবার? ইচ্ছে পূরণ করতে। তুই একটা শাড়ি পরে লুকিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আয়। কেউ যেন টের না পায়। আমি বাহিরে অপেক্ষা করব। আজই আমরা বিয়ে করব।”

তোয়া আৎকে উঠল যেন। উঁচুস্বরে বলে উঠল,“পাগল তুই!”
“আসবি কি না ভেবে বল। এই অফার আমি তোকে বারবার দিব না।”
“বউ সাজব না আমি?”
“পরে তো সাজবিই কিন্তু এই সুযোগ আর পাবি না।”

তোয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,“কোন রঙের শাড়ি পরব?”
“লাল টকটকে রঙের।”
“আচ্ছা।”

আবির ফোন কাটলো। তোয়া ফোন রেখে মায়ের কিছু প্রয়োজন কি- না সেটা দেখে এসে তৈরি হয়ে আবিরের কথা মতো বেরিয়ে এসেছে। দুজন কোথাও দেরি না করে সোজা কাজী অফিসে চলে এসেছে। ওখানেই বসে বসে বাবাকে কল করে উক্ত কথাটি বলল সে। জবাবের আশায় চুপ রইল কিছুক্ষণ। ওপাশ থেকে জাভেদ সাহেব বলে উঠলেন,

“বাচ্চামিটা করলে কীভাবে দুজন?”
“বাবা, ওর কোন দোষ নেই। আমি ওকে ফোর্স করেছি।”
“তাড়াতাড়ি বাসায় এসো। আমি ভাইয়ের সাথে কথা বলছি। এ কথা যেন আশেপাশের কেউ না জানে। আমি রাতে আবার কাজী ডাকছি।”

আবির মৃদু হেসে সামনে অবস্থানরত কাজী সাহেবকে বলে উঠল,“কাজী সাহেব, বিয়ের কাজ শুরু করেন।”

মিনিট দশেকের মাঝেই বিয়ের কাজ সম্পন্ন হলো। কাজী সাহেবের টাকা মিটিয়ে দুজন বাহিরে এসে দাঁড়াতেই তোয়ার ফোনে জাফর সাহেবের কল এলো। তোয়া পার্সব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে ফোনস্ক্রিনে বাবার নম্বর দেখে মুখটা বাংলা পাঁচের মতো হয়ে গেল। তোয়ার মলিন মুখ দেখে আবির বলল,

“কী হয়েছে?”

তোয়া নিজের ফোনটা আবিরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,“বাবা কল করেছে। আমি কথা বলতে পারব না। তুই কথা বল।”

আবির তোয়ার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে কল রিসিভ করল। ওপাশ থেকে জাফর সাহেবের কণ্ঠস্বর ভেসে এলো।

“তোয়া?”

আবির সহসা জবাবে বলল,“আসসালামু আলাইকুম। তোয়ার বর বলছি।”
“কাঁচা কঞ্চির মাইর অনেকদিন পিঠে পড়েনি তোমার। কী সব গাধার মতো কাজ করলে দুজন? আছ কোথায়? বিয়ে করে নিয়েছ সত্যি সত্যি?”

আবির তোয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,“জি গাধামিটা করেই ফেললাম। কাজ সেরে কাজী অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। সামনেই বাইক। বউকে নিয়ে ঘণ্টাখানেকের একটা ট্যুর দিব। রাতে ফিরে আসছি।”

জাফর সাহেব গলার স্বর নরম করলেন। মৃদু গলায় বললেন,“সাবধানে বাড়ি ফিরে এসো। তোমাদের বাড়িতেই এসো সবাই ওখানেই থাকব। তোয়ার কাছে দাও।”

আবির তোয়ার দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিল। তোয়া ভয় পাচ্ছে। ঝোঁকের বশে কী একটা কাজ করে ফেলল সেটার জন্য এখন আফসোস লাগছে। বাবা যদি এখন বলে- তুমি এ বাড়িতে আর এসো না। তোমার জন্য এ বাড়ির দরজা আজ থেকে চিরকালের জন্য বন্ধ।

আবির তোয়ার হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে বলল,“কথা বল, ভয় নেই।”

তোয়া ফোনটা কানে নিল। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
“হ্যালো, বাবা। আ’ম স্যরি, বাবা।”

জাফর সাহেব তোয়ার গলা শুনতেই বললেন,“সাবধানে আবিরদের বাড়িতে চলে এসো। যা করেছ ভালোই করেছ৷ এখন রাগ দেখিয়ে তো লাভ হবে না দেখছি। সাবধানে এসো, কেমন?”
“ঠিক আছে।”
“রাখছি।”
“হুম।”

তোয়া কল কেটে জোরে করে শ্বাস ফেলল। আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
“বাবা, ওই বাড়িতে যাওয়া নিষিদ্ধ করেনি। বেঁচে গেছি।”

আবির বাইক আনলক করতে করতে বলল,“চল এবার বউ নিয়ে ঘুরে আসি।”
”তুই আছিস ঘুরাঘুরি নিয়ে আর এদিকে আমার কী ভয়টাই না লাগছিল!”
“ভয় পেয়ে কোন লাভ আছে? যা হওয়ার সেটা হবেই। উঠে আয়।”

তোয়া মেকি রাগ দেখিয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। বলল,
“তুমি করে না বললে উঠব না। বউয়ের সাথে কে তুই করে বলে?”

আবির কপাল চাপড়ে বলে উঠল,“কাউকে দেখেছেন বরের সাথে তুই করে বলতে?”
“আপনি করে বলতে হবে? পারব না৷ তুমি করে বলার চেষ্টা করতে পারি।”
“আমারও চেষ্টা চলুক তাহলে। এখন তাড়াতাড়ি উঠে বসুন, ম্যাম। এখনই আজান দিয়ে দেবে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ”

তোয়া বাইকে উঠে বসলো। বাইক চলতে শুরু করল নিজ গতিতে। সূর্য ডুবেছে অনেক আগেই। এখন ক্রমশ অন্ধকার নেমে আসছে। বাইকে দুজনের একটা কথাও হলো না। শুধু আশেপাশের পরিবেশ দর্শন চলল। আবিরের বাইক এসে থামলো চলনবিলের ফাঁকা রাস্তায়। তুলনামূলক ভাঙা রাস্তা। রাস্তার দুইপাশে সারি সারি বিভিন্ন ধরণের গাছ। নির্মল হাওয়া বইছে। বেশ ফাঁকে ফাঁকে দুই একজন করে দেখা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর পর দ্রুতগতিতে দুই একটা গাড়ি বেরিয়ে যাচ্ছে এপাশ ওপাশ থেকে।

রাস্তার দুইপাশে কিছুটা নিচু জমি আর তারপরই অল্প পরিমাণে পানি। যদিও চলনবিল নিজের নব্যতা হারিয়েছে তবুও বর্ষাকালে এটির মনোরম দৃশ্য চোখে পড়ে। কানায় কানায় পানি, নৌকা, পর্যটকের ভিড় যেন আলাদা মাত্রা যোগ করে। এই জায়গাটা তোয়ার ভিষণ পছন্দের৷ বাড়ির বাহিরে কোথাও গেলে বেশিরভাগ সময় সে এখানেই এসেছে। ইট, সিমেন্ট দিয়ে তৈরি বসার জায়গায় বসে বেশ খানিকটা সময় কাটিয়েছে সে।

বাইক থেকে নেমেই রাস্তা থেকে নিচের দিকে নামতে শুরু করল সে৷ ঢালু জায়গায় দাঁড়িয়ে আবিরকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“নতুন জীবন আমার পছন্দের জায়গা থেকে শুরু হলো যেন। তোকে অনেক ধন্যবাদ, আবির।”

আবির বাইক লক করে নিজেও তোয়ার পাশে এসে দাঁড়ালো। হাতের ডান দিকে বসার জায়গা দেখিয়ে বলল,

“বসবি ওখানে?”
“বসলে আর এই বাতাস ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করবে না। ঘুম পেয়ে যাবে।”
“আমি ঘুমোতে দিব না, আয়। মনে নেই? তিন-চার মাস তুই রাতে ঘুমোতে পারবি না। সন্ধ্যা পর মানে তো রাতই হলো।”

তোয়া হাতের পার্সব্যাগটা দিয়ে আবিরকে আঘা*ত করে বলল,“এত নির্লজ্জ কেন তুই?”

আবির হাসতে হাসতে বলল,”বউয়ের কাছে কে সাধু ভাই!”
“অসভ্য তুই।”
“অসভ্যের মতো একটা কাজও করিনি। কিছু না দেখেই এই তকমা?”

“দূরে থাক।” বলেই তোয়া ধীরে ধীরে ওপরের দিকে উঠে এসে বসল। আবিরও এক মুহূর্ত দেরি না করে তোয়ার পাশে বসতেই তোয়া বলল,

“কাছে আসবি না। একহাত দূরত্ব বজায় রাখবি।”

আবির তোয়ার কনুইয়ের অংশ ধরে তাকেই নিজের দিকে টেনে এনে বলল,“আমি না গেলাম, তোকে তো আনতেই পারি। ভালোবেসেছি, দূরত্ব সহ্য করেছি, শেষমেশ এত এত কাঠখড় পু*ড়িয়ে বিয়ে করেছি কি দূরে দূরে থাকার জন্য? সত্যি সত্যি দূরত্ব বাড়ালে এবার কাঁদতে হবে। মনে নেই কিছুদিন আগের কথা? নতুন বউ তুই। মুচকি হেসে, ইশারায় কাছে ডাকবি তা না দূর দূর করছিস! সাহস কম না তোর!”

তোয়া আবিরের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মৃদু গলায় বলল,“যেতে বললেই যাবি কেন? জানিস না মেয়েদের মুখের ভাষা আর মনের ভাষা বিপরীত হয়?”

বৃষ্টির ফোঁটা আবিরের কপাল বেয়ে পড়ল। বিষয়টা বুঝতে আকাশের দিকে তাকালো সে। ক্রমেই বৃষ্টির ফোটার তেজ বাড়ছে। দুই একটা করে গায়ে পড়ছেই ফোটা।

তোয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,“বৃষ্টি আসবে হয়তো। আমরা বাড়ি যাব কীভাবে?”

আবির তোয়ার হাত ধরে বড় একটা গাছের নিচে এসে দাঁড়ালো। বৃষ্টির তেজ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকল। দুজন ওভাবেই দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে। তোয়া পিছন ঘুরে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল,

“আজকের দিনটা অসম্ভব সুন্দর তাই না?”

তোয়া অনেকটা ভিজে গিয়েছে। গাছের ডালপালার ফাঁকফোকর দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়েছে। চোখ-মুখ, গাল বেয়ে পানি ঝড়ছে। আঁচল দিয়ে মুখ মুছে নেবে তখনই আবির খপ করে তোয়ার হাত ধরে ফেলল। তোয়া আবিরের দিকে তাকাতেই বুঝল আবির পলকহীন চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তোয়া শুকনো ঢোক গিললো। আবির দৃষ্টি না সরিয়েই বলে উঠল,

“তোর ঠোঁট আমাকে টানছে তোয়া। এতদিনে তোর হাতটাও না ধরা আমি স্থির থাকতে পারছি না।”

তোয়া কী বলবে বুঝতে পারছে না। সে চুপচাপ আবিরের দিকে চেয়ে রইল। আবির এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজের ব্লেজারটা খুলে ফেলল। তোয়াকে পিছন দিক থেকে মাথাসহ ঢেকে নিল। তোয়ার মনে পড়ল আদিত্যিয়া রয় আর শ্রদ্ধা কাপরের কথা। ঠিক এরকমই একটা অংশ দেখেছিল সে একটা গানে। এই মুহূর্তে তার গানের নাম মনে পড়ছে না। চেষ্টাও করল না সে। মূলত আবিরের চাহনিতে সব যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। আবির ধীরগতিতে তার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তোয়ার সারাশরীর কাঁপছে। থরথর করে কাঁপছে। আবির আর তার মাঝে এবার কোন দূরত্ব জায়গা রইল না। চোখ বন্ধ করে নিল সে। আবির তোয়ার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। হৃৎস্পন্দন বাড়লো তোয়ার। দুই হাত দিয়ে আবিরের পেটের দিকে শার্ট চেপে ধরল। কপাল, নাক, চোখ, গালে চুমু খেয়ে নজর এলো ঠোঁটে। তোয়া হয়তো পরবর্তী ধাপ বুঝতে পেরে আরও শক্ত করে চেপে ধরল আবিরকে। তোয়ার অবস্থা দেখে আবির বলল,

“চুমু খাব?”

তোয়া দুদিকে মাথা নাড়ল। ‘না’ বুঝালো। চোখ খুলে আবিরের দিকে চাইলো সে। আবির চোখে মুখে হাসি লেপ্টে বলল,

“মেয়েদের না মানেই হ্যাঁ। তার মানে তুই আমার চুমু চাইছিস।” বলেই তড়িৎ বেগে তোয়ার ঠোঁট ছুঁলো আবির৷ চোখ বন্ধ করে নিল তোয়া। গভীর চুম্বন চলল কিছুক্ষণ। তোয়া আবিরকে আর বাঁধা দিল না, মন চাইলো না তার। এ ছোঁয়া ভালোবাসার ছোঁয়া। প্রতিটা চুম্বনে মিশে আছে একরাশ ভালোবাসা। এ সাঁঝবেলা শুধু ভালোবাসার। এ অন্ধকারের কালো রঙটাও যেন ভালোবাসার রঙ৷ এটা একটি সাঁঝরঙা গল্প, ভালোবাসার গল্প। দুজনের কাছাকাছি আসার গল্প। মনে ঠাঁই পাওয়ার গল্প।

#সমাপ্ত।