এক‌দিন বিকা‌লে সকাল হ‌য়ে‌ছি‌লো পর্ব-১৯+২০

0
454

#এক‌দিন_বিকা‌লে_সকাল_হ‌য়ে‌ছি‌লো
‌লেখাঃ শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্বঃ ১৯

শশী ড্রে‌সিং টে‌বি‌লের সামনে ব‌সে চোখ বন্ধ ক‌রে কিছু একটা ভাব‌ছি‌লো। তখন এক জোড়া ঠোঁট এসে শশীর গাল ছুঁ‌য়ে দি‌লো। শশী মৃদু হাসল। মাত্র তিন-চার দি‌নেই রাযী‌নের স্পর্শ ও চি‌নে গে‌ছে। বেশ গভীরভা‌বে অনুভব কর‌তে পা‌রে রাযী‌নের স্পর্শ‌কে। রাযীন, শশীকে আষ্টে পি‌ষ্টে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
‘হ‌াস‌ছো কেন?’
‘‌কিছু না।’
‘আ‌রে লজ্জা পেও না ব‌লো?’
‘না। আপনা‌কে বলা যা‌বে না।’
‘ওকে। তা ম্যাডা‌মের মুড সুইং ক‌মে‌ছে?’
‘আপাতত ক‌দিন কম‌বে না বরং বাড়‌বে?’
‘এই তোমার পি‌রিয়ড হ‌য়ে‌ছে না‌কি?’
‘আপ‌নি কী করে জান‌লেন?’
‘‌মে‌য়েরা এই টাই‌মে চুলার উপরে দেওয়া খা‌লি গরম কড়াই‌য়ের ম‌তো হ‌য়ে থা‌কে, সে পা‌নি পড়ুক বা তেল অথবা সব‌জি ফস ক‌রে জ্ব‌লে উঠ‌বেই।’

রাযী‌নে কথা শু‌নে শশী শব্দ ক‌রে হাসল। তারপর বলল,
‘আপনার কথা বলার ভ‌ঙ্গি এত দুষ্টু যে, হা‌সি চে‌পে রাখা যায় না।’
‘আ‌রে হা‌সির ম‌তো কী বললাম? প্র‌তিমা‌সে এসব দি‌নে রো‌মিসা যা ফসফস ক‌রে। আমা‌কে ধ‌রে মা‌রে পর্যন্ত। কিছু ব‌লি না, এটা মে‌য়ে‌দের জন্য জরু‌রি ব‌লে।’
‘আপনি রোমিসার ডেট জা‌নেন?’
‘না। ত‌বে ওর আচর‌ণে বুঝতে পা‌রি। তখন ওর একটু বে‌শি কেয়ার ক‌রি। এ সময় মে‌য়েদের অধিক যত্ন দরকার। আর সে যত্ন প‌রিবা‌রের সবার করা উচিত, হোক মা-বাবা ভাই-‌বোন, কিংবা স্বামী। আমি ওর ভাই হ‌য়ে‌ছি তা‌তে কী? এসব নি‌য়ে আমা‌দের মাঝে কো‌নো ট্যাবুতা নেই। মা আমাদের দুজন‌কে সেভা‌বেই শিক্ষা দি‌য়ে বড় ক‌রে‌ছেন।’
শশী বলল,
‘আপনা‌দের বাসার সব‌চে‌য়ে চমৎকার মানুষ‌টি কে জা‌নেন?’
রাযীন মৃদু হে‌সে বলল,
‘আ‌মি।’
শশী রাযী‌নের গাল টে‌নে বলল,
‘জি না। সব‌চে‌য়ে চমৎকার মানুষ‌টি হ‌চ্ছেন আপনার মা। তার ম‌তো মানুষ আমি খুব কম দে‌খে‌ছি।’
রাযীন হে‌সে বলল,
‘আর আমি কেমন?’

শশী রাযী‌নের নাক চে‌পে ধ‌রে বলল,
‘এক নাম্বারের দুষ্টু। ব‌দের বাসা।’
‘ও ম্যাডাম আপ‌নি আম‌ার দুষ্টু‌মির কিছুই দে‌খে‌নি। একবার শুধু আপনাকে প‌টি‌য়ে ফে‌লি, দেখ‌বেন দুষ্টু‌মি কত প্রকার ও কী কী?’
‘আচ্ছা দেখা যা‌বে।’
‘আচ্ছা তোমার কি পেট ব্যথা কর‌ছে?’
‘নাহ। আমার এ সময়ে তেমন পেট ব্যথা ক‌রে না। ত‌বে আমার খুব হাত-পা ব্যথা ক‌রে। বি‌শেষ ক‌রে পা, পা ব্যথায় ম‌নে হয় অবশ হ‌য়ে যা‌বে।’
রাযীন শশী‌কে সা‌থে সা‌থে কো‌লে তু‌লে নি‌য়ে বলল,
‘শশী তুমি একটা তু‌লোর পুতু‌লের মতো। ছো‌টোখা‌টো আর নরম। তোম‌াকে সবসময় জ‌ড়ি‌য়ে রাখ‌তে মন চায়। নরম পুতুলগু‌লো জ‌ড়ি‌য়ে ধর‌তে যেমন আরাম লা‌গে, তোমা‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধর‌তেও তেমন আরাম লা‌গে।’

শশী লজ্জা পে‌য়ে মুখ ঘু‌রি‌য়ে নি‌লো। রাযীন শশী‌কে বিছানায় ব‌সি‌য়ে কপা‌লে চুমো খে‌য়ে, একটা ভয়াবহ কান্ড করল। টুপ ক‌রে শশীর ঠোঁ‌টে আলতো চু‌মো খে‌লো। শশী চোখ বড় বড় ক‌রে তা‌কি‌য়ে রাযী‌নের বু‌কে এলি‌য়ে পড়ল। রাযীন ভয় পে‌য়ে বলল,
‘কী হ‌য়ে‌ছে শশী?’
‘ম‌নে হ‌চ্ছে আমার হাত-পা, সারা শরীর অবশ হ‌য়ে গে‌ছে। হয় আমা‌কে ধ‌রে রাখুন, নয়‌তো বিছ‌ানায় শুই‌য়ে দিন। আমি নি‌জে নি‌জে না বস‌তে পারব, না উঠ‌তে।’

রাযীন শশী‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
‘স‌ত্যি করে ব‌লো তো, তোমার ঠোঁ‌টে এটা প্রথম কিস তাই না?’
‘কী ক‌রে বুঝ‌লেন?’
‘একব‌ার আলত ক‌রে ঠোঁট ছোঁয়াতেই যে অবস্থা হ‌য়ে‌ছে তা‌তেই বোঝা যায় আমার পূ‌র্বে কেউ তোমার ঠোঁট ছোঁয়‌নি।’
‘‌কে ছো‌ঁবে? কার এত সাহস?’
রাযীন একটু কে‌শে বলল,
‘সজল‌।’

শশী বেশ গম্ভীরভা‌বে বলল,
‘নাহ। ওর সা‌থে আমার সম্পর্ক জ‌ড়ি‌য়ে ধরা, আর কপা‌লে চু‌মো পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছি‌লো। এর বাই‌রে না ও সাহস ক‌রে‌ছে, না আমি সাহস করার ম‌তো সু‌যোগ দি‌য়ে‌ছি।’
শশীর কথা শু‌নে রাযীন ম‌নে ম‌নে খু‌শি-ই হ‌লো। তারপর দুষ্টু‌মি ক‌রে বলল,
‘আ‌মি কি আরেকটা চান্স নি‌বো?’
শশী রাগী চো‌খে তাকা‌তেই রাযীন ওর চো‌খে চু‌মো খে‌য়ে, এবার গভীর ভা‌বে ঠোঁ‌টে চু‌মো খে‌লো। চু‌মো শেষ ক‌রে শশীর দি‌কে তাকা‌তেই দেখল শশী এবার স‌ত্যি স‌ত্যি বেহুশ হ‌য়ে গে‌ছে।

রাযীন বোকা ব‌নে গেল। নি‌জে নি‌জে বলল,
‘আমার চুমো‌তে কি ক্লো‌রোফর্ম আছে না‌কি যে বেহুশ হ‌য়ে গে‌ল। বি‌য়ের দিন থে‌কে দেখ‌ছি এ মে‌য়ে কথায় কথায় বেহুশ হয়, মৃগী ব্যারাম ট্যারাম আছে না‌কি আবার? কই বি‌য়ের আগে তো ওর সব‌কিছু জানলাম, এটা তো জান‌তে পারলাম না।’

রাযীন শশী‌কে বিছানায় শু‌য়ে পা‌নির ছিটা দি‌তেই শশীর জ্ঞান ফি‌রে। জ্ঞান ফির‌তেই রাযীন‌কে মারা শুরু ক‌রল শশী। আর বল‌তে লাগল,
‘ফা‌জিল লোক, কথা নেই, বার্তা নেই দুমদাম একটা কাজ ক‌রে ব‌সে। আজ আপনার খবর আছে।’
রাযীন আনন্দ ম‌নে শশীর মার খে‌তে লাগল। মার খাবার এক পর্যা‌য়ে শশী‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে ওকেসহ ‌বিছানায় শু‌য়ে প‌ড়ে। রাযী‌নের প্রশস্ত শরীরটার নি‌চে শশীর ছোট্ট শরীরটা ছটফট কর‌তে লাগল। রাযীন আবার শশীর ঠোঁটে নি‌জের ঠোঁট ডোবাল।একটু সময় বা‌দে রাযীন মাথা তুলতেই দেখল শশী আবার বেহুশ।

রাযীন নি‌জের হাত, ওর মু‌খের সাম‌নে এনে নি‌জের নিঃশ্বা‌সের গন্ধ নি‌য়ে বলল,
‘কই আমার নিঃশ্বাসে তো কো‌নো বা‌জে গন্ধ নেই, ত‌বে এ মে‌য়ে কেন বার বার বেহুশ হ‌চ্ছে? সামান্য চু‌মো‌তে এ অবস্থা। না জা‌নি…!’
রাযীন আপন ম‌নে হে‌সে শশীর না‌কে চু‌মো খে‌য়ে বলল,
‘ভীত‌ু পাগলী একটা। আই লাভ ইউ।’

‌কিছুক্ষণ পর শশীর আবার জ্ঞান ফির‌তেই শশী দু’হাত দি‌য়ে নি‌জের ঠোঁট চে‌পে ধ‌রে বলল,
‘অসভ্য লোক আপ‌নি আমার থে‌কে দশ হাত দূরত্ব বজায় রাখ‌বেন।’
রাযীন শব্দ ক‌রে হাসল। তারপর শশীর কা‌ছে গি‌য়ে বলল,
‘এরকম বল‌লে কিন্তু আবার বেহুশ ক‌রে দিব। আর বেহুশ হ‌লে আমি কিন্তু অনেক কিছু দে‌খে নিব।’
শশী বা‌লিশ দি‌য়ে রাযীন‌কে মার‌তে মার‌তে বলল,
‘বদ লোক। রুম থে‌কে বের হোন। আর যদি এমন কাজ কর‌ছেন তো, মে‌রে ঠ্যাং ভে‌ঙে দিব।’
রাযীন হাসল খুব। ম‌নে ম‌নে বলল,
‘যাক শশী ত‌বে আমার সা‌থে ধী‌রে ধী‌রে স্বাভা‌বিক হ‌চ্ছে।’
রাযীন শশীর হাত থে‌কে বা‌লিশটা নি‌য়ে ওকে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
‘একশ বার করব, হাজার বার করব। দে‌খি তু‌মি কী করো?’
শশী শুধু রাগী চো‌খে তাকাল।

২৫!!

গতকাল রাত থে‌কে রেনু একব‌ারও শিহা‌বের সাথে কথা ব‌লে‌নি। শিহাব অনেকবার কথা বলার চেষ্টা ক‌রে‌ছে কিন্তু রেনু কো‌নো না কো‌নো ভা‌বে‌ এড়ি‌য়ে গে‌ছে। শিহাব ভাবলো, রা‌তে ঘুমা‌তে এলে কথা বল‌বে কিন্তু রেনু তখন আসলো, যখন শিহাব গভীর ঘ‌ুমে। রুমে ঢু‌কে শিহাব‌কে ঘু‌মে দে‌খে নি‌জেও বিছ‌ানার এক পা‌শে গু‌টিশু‌টি মে‌রে শু‌য়ে পড়ল। সকা‌লে ফজ‌রের নামা‌জের সময় শিহাব নামাজ প‌ড়ে ফি‌রে আর রেনু‌কে দেখ‌তে পায়‌নি। রান্নাঘ‌রে খুঁ‌জেও রেনু‌কে পায়‌নি। পা‌বে কী ক‌রে? রেনু তো শশীর রুমে গি‌য়ে শুয়ে ছি‌লো।

শশীর রুমটা এখন খা‌লি, রেনু তাই সেখা‌নে গি‌য়েই কিছুক্ষণ শু‌য়ে রইল। তারপর রান্নাঘ‌রে গি‌য়ে নাস্তা তৈরী করল। নাস্তা বানা‌নোর সময় হা‌সি বেগম আর লি‌পি, রেনু‌কে ইঙ্গিত ক‌রে বলল,
‘মা, আজ আকাশে এত মেঘ কেন?’
হা‌সি চাপা হে‌সে বলল,
‘রা‌তে শিহাব বোধ হয় আবার কিছু বল‌ছে। করুক মেঘ তাতে আমা‌দের কী? সকাল সকাল কিছু মানুষের মুখ দেখ‌লে দিনটা খারাপ যায়।’

‌রেনু অশ্রু‌সিক্ত নয়নে রান্না ঘর ত্যাগ করল। রুমে গি‌য়ে বস‌বে তার উপায় নেই, শিহা‌বের সাম‌নে যে‌তে চায় না। রেনু চুপচাপ ছাদে চ‌লে গেল। ছ‌া‌দের পা‌নির ট্যা‌ং‌কির কর্ণা‌রে ব‌সে কাঁদল অনেক্ষণ। শিহাব নাস্তা করার সময়ও রেনু‌কে দেখল না। যাব‌ার সময়ও রেনু‌কে পায়‌নি। রেনু ছা‌দেই ব‌সে রইল। সারা‌দিন রেনু কিছু খে‌লো না। রা‌তে শিহাব ঘ‌রে ফেরার শব্দ হ‌তেই রেনু শশীর রু‌মে গি‌য়ে ব‌সে রইল। ওখা‌নে ব‌সে শশীর রাখা দু-একটা গ‌ল্পের বই পড়‌তে লাগল। রা‌তে খাবার সময়ও শিহাব রেনু‌কে খুঁজল কিন্তু শিহাব ভাব‌তেও পা‌রে‌নি রেনু, শশীর রুমে।

রা‌তে সবার ঘুমা‌নোর পর রেনু, শিহা‌বের রু‌মে আসলো। শিহাব তখন গভীর ঘু‌মে ত‌লি‌য়ে র‌য়ে‌ছে। হাঁট‌তে খুব কষ্ট হ‌চ্ছে রেনুর। গতকাল রাত থে‌কে কিছুই খাওয়া হয়‌নি ওর। শরীর যে‌নো আর চল‌ছে না ওর। মাথাটা ঘোরা‌চ্ছে। চু‌পি চু‌পি গিয়ে শিহা‌বের পাশে শু‌য়ে পড়ল।

ফজ‌রের নামা‌জের সময় শিহা‌বের ঘুম ভাঙতেই দেখল রেনু গু‌টিসু‌টি মে‌রে ঘু‌মিয়ে আছে। শিহাব রেনুর কাছে গি‌য়ে বসল। কা‌ছে গি‌য়ে ব‌সে বলল,
‘‌মে‌য়েটা এত অভিমানী! এত কষ্ট পে‌তে পা‌রে? দে‌খো চোখ মুখ একদম ব‌সে গেছে। ম‌নে হ‌চ্ছে ঠিকম‌তো খায়নি।’
অথচ শিহাব জা‌নে না, রেনু পরশু সন্ধ্যার পর থে‌কে কিছুই খায়‌নি। শিহাব রেন‌ুর গা‌লে হাত দি‌তেই চম‌কে উঠল। জ্ব‌রে রেনুর গা পু‌ড়ে যা‌চ্ছে।

শিহাব বেশ চি‌ন্তিত হ‌য়ে, রেনুকে ডাকল,
‘‌রেনু! রেনু!’
‌রেনু পিট‌পিট ক‌রে চোখ মেলল। শিহাব বলল,
‘‌তোমার গা‌য়ে এত জ্বর! আমা‌কে ডাক‌লে না কেন?’
‌রেন‌ু খ‌ু্ব ধী‌র বলল,
‘‌চিন্তা কর‌বেন না। আমি ঠিক আছি।’

‌শিহাব রেনুর কপা‌লে হাত দি‌য়ে বলল,
‘জ্ব‌রে গা পু‌ড়ে যা‌চ্ছে আর তু‌মি বল‌ছো ঠিক আ‌ছো? কেমন কথা বল‌ছো?’
‌শিহাব থা‌র্মো‌মিটার এনে রেনুর জ্বর মাপল। জ্বর ১০১°। শিহাব বেশ চি‌ন্তিত হ‌য়ে বলল,
‘‌তোমার তো অনেক জ্বর।’
তারপর শিহাব রেনুর প্রেসারটাও মাপ দি‌লো। প্রেসার ৯০/৪০। শিহাব মাথায় হাত দি‌য়ে বলল,
‘‌রেনু তোমার প্রেসার এত লো কেন? তু‌মি রা‌তে কিছ‌ু খাও‌নি?’

রেনু কিছুই বলল না। শিহাব আর ফজ‌রের নামাজ পড়‌তে মস‌জি‌দে গেল না, রুমে ব‌সেই পড়ল। তারপর ভেজা কাপড় নি‌য়ে রেনুর মাথাটা মু‌ছে দি‌য়ে, রেনু‌কে শুকনা কিছু খাবার খাওয়া‌নোর চেষ্টা করল। কিন্তু রেনু খেল না। একটু সকাল হতেই শিহাব ওর মা অার লি‌পি‌কে ডে‌কে বলল, রেনুর অবস্থার কথা। তারপর জি‌জ্ঞেস করল,
‘মা রেনু রা‌তে কিছ‌ু খে‌য়ে‌ছি‌লো?’
হা‌সি বেগম বল‌লেন,
‘আ‌মি দে‌খি‌নি।’
‌লি‌পি বলল,
‘আ‌মিও কিছু খে‌তে দে‌খি‌নি ওকে।’

তখন ছোট্ট সা‌হির বলল,
‘চাচ্চু, ছোট্ট মা কাল দুপু‌রেও ভাত খায়‌নি, সকা‌লে নাস্তাও করে‌নি, রা‌তে খে‌য়ে‌ছে কিনা দে‌খি‌নি। শিহা‌বের ম‌নে পড়ল, রেনু এর আগের দিন রা‌তেও শিহা‌বের উপর অভিমান ক‌রে কিছু খায়নি। শিহাব বলল,
‘তার মা‌নে রেনু পরশু রাত থে‌কে না খাওয়া? সে কার‌ণেই তো প্রেসার এত লো। মা, ভা‌বি আপনারা কী একবারও ওকে খে‌তে ডা‌কেন‌নি?’

হা‌সি বেগম আর ‌লি‌পি কী বলবে ভে‌বে পা‌চ্ছে না! তারা তো একবারও ওকে খে‌তে ডা‌কে‌নি। এমন‌কি রেনু খেয়ে‌ছে কিনা তাও জন‌তে চায়‌নি বা খেয়াল করে‌নি।
‌লি‌পি বিড়‌বিড় ক‌রে বলল,
‘‌দেখ‌লেন মা কেমন চালাক মে‌য়ে? শিহাব বকা দি‌য়ে‌ছি‌লো ব‌লে আমা‌দের জব্দ কর‌তে না খাওয়ার নাটক করল।’
হা‌সি বলল,
‘এ মে‌য়ে দেখ‌ছি উল্টো আমা‌দের-ই ‌শিহা‌বের কা‌ছে দোষী বা‌নি‌য়ে দি‌লো।’

‌শিহাব তা‌দের দি‌কে তা‌কি‌য়ে কিছু না ব‌লে নি‌জেই রান্না ঘ‌রে গেল কিছু রান্না কর‌তে। লি‌পি, শিহা‌বের কা‌ছে এগি‌য়ে বলল,
‘‌শিহাব ভাই আমা‌কে দিন। আমি রান্না ক‌রে দিচ্ছি।’
‌শিহাব হাত উঁচু ক‌রে লি‌পি‌কে থা‌মি‌য়ে বলল,
‘থাক, ভা‌বি এখন আর দরকার নেই। একটা মানুষ গত পরশু রাত থে‌কে না খাওয়া, অথচ আপনারা কেউ কিছু জা‌নেন-ই না বা তা‌কে কেউ খে‌তেও ডা‌কেননি।’
‌লি‌পি রাগ ক‌রে বলল,
‘‌রেনু আপনার স্ত্রী। সো আপনার বেটার জানার কথা সে খে‌য়ে‌ছে কিনা?’
‘হ্যাঁ ভুলটা স‌ত্যি আমার। আমার উচিত হয়‌নি সে‌দিন আপনার আর মা‌য়ের কথা শু‌নে একতরফা বিচার করার! আর তাছাড়া আপনারা তিনজন তো সবসময় সবার শে‌ষে একসা‌থে খে‌তেন বে‌শির ভাগ সময়। সে কার‌ণে আমি ভে‌বে‌ছিলাম রেনু হয়‌তো খে‌য়ে‌ছে। কিন্তু আমার ভাবনাটা ভুল ছি‌লো। আমার উচিত ছি‌লো নি‌জেই রেনু‌কে জি‌জ্ঞেস করা।’

শিহাব কথা বল‌তে বল‌তেই বে‌শি ক‌রে দুধ, আর প‌রিমাণ ম‌তো চি‌নি দিয়ে সেমাই রান্না করল। বা‌টি‌তে ক‌রে সেমাই এনে রেনু‌কে ধ‌রে বসা‌লো। তারপর বলল,
‘‌রেনু! একটু খে‌য়ে নাও প্লিজ।’
ভাঙা গলায় রেনু বলল,
‘না। সব‌কিছু তে‌তো লাগ‌ছে আমা‌কে পা‌নি দিন।’

‌শিহাব পা‌নির বদ‌লে ফ‌লের জুস দি‌লো। রেনুর পে‌টে প্রচন্ড খিদা কিন্তু জ্বর মু‌খে খে‌তে ইচ্ছা কর‌ছে না। পরশু থে‌কে কিছ‌ু না খাবার কার‌ণে শরী‌রে বিন্দু মাত্র শ‌ক্তি নেই। জু‌সের গ্লাসটা‌কেও তু‌লতে পার‌ছে না। ম‌নে হ‌চ্ছে গ্লাসটার ওজন ক‌য়েক মণ। শিহাব নিজেই রেনু‌কে খাই‌য়ে দিলো। শিহা‌বের কাঁ‌ধে ভর দি‌য়ে রেনু শু‌য়ে রইল। জুসটা খাওয়া শে‌ষে, শিহাব রেনু‌কে বা‌লিশ উঁচু ক‌রে দি‌য়ে বসাল, তারপর নিজ হা‌তে সেমাই খাই‌য়ে দিল। তারপর জ্ব‌রের ওষুধ খাই‌য়ে দি‌লো। খাবার পর রেনুর একটু ভা‌লো লাগ‌ছে। য‌দিও জ্ব‌রের কার‌ণে শরীর প্রচন্ড খারাপ লাগ‌ছে।

‌কিছুক্ষণ পর নূর ইসলামসহ বা‌কি সবাই রেনু‌কে দেখ‌তে আসল। রেনু কম্বল পে‌ঁচি‌য়ে জুবুথুব হয়ে বসল। নূর ইসলাম শিহাব‌কে বললেন,
‘‌শিহাব তোর কাছ থে‌কে এমনটা আমি কখ‌নও আশা ক‌রি‌নি। শুধু তোর কাছ থে‌কে কেন আম‌ার তিন ছে‌লে‌ মে‌য়ে‌কে আমি যেভা‌বে বড় ক‌রে‌ছি, তা‌তে তা‌দের কাছ থে‌কে কো‌নো রকম অন্যায় আমি আশা ক‌রি না।’

শিহাব বলল,
‘বাবা কী বল‌ছেন বুঝ‌তে পার‌ছি না।’
‘তুই পরশু নামা‌জের পর রেনু‌কে দি‌য়ে তোর মা‌য়ের কা‌ছে মাফ চাই‌য়ে‌ছিস?’
‌শিহাব মাথা নিচু ক‌রে বলল,
‘হ্যাঁ।’
ক‌ঠিন গলায় নূর ইসলাম বল‌লেন,
‘‌কেন?’
‘ও অন্যায় ক‌রে‌ছি‌লো। মা‌কে কষ্ট দি‌য়ে‌ছি‌লো।’
‘তো‌কে কে বলল?’
‘মা ব‌লে‌ছেন।’
‘তুই তোর মা‌য়ের কথা শুন‌লি বিশ্বাস ক‌র‌লি কিন্তু একবারও রেনুর কথা শু‌নে‌ছি‌লি?’

‌শিহাব মাথা নিচু ক‌রে রইল। নূর ইসলাম বল‌লেন,
‘আমা‌কে সাজ্জাদ সব ব‌লে‌ছে। তুই একতরফা বিচার কীভা‌বে কর‌তে পার‌লি? বিচার কর‌তে হ‌লে দুই প‌ক্ষেরই কথা শুন‌তে হয়। যখন তুই তা ক‌রিস‌নি তখন দোষ তোর। এখন তুই সবার সাম‌নে রেনুর কা‌ছে ক্ষমা চাই‌বি। স‌রি বল রেনু‌কে।’
শিহাব মাথা নিচু ক‌রে রেনু‌কে বলল,
‘স‌রি রেনু।’
‌রেন‌ু চ‌ুপ ক‌রে ব‌সে রইল।

নূর ইসলাম বল‌লেন,
‘আর স‌ত্যিটা শুন‌তে চাস তো শোন, আমি পরশুদিন ওদের সা‌থেই ছিলাম। দোষ ‌রেনুর নয় বরং তোর মা‌য়ের। তোর মা-ই প্রথ‌মে আকার ইঙ্গিতে রেনু‌কে অনেক বা‌জে কথা ব‌লে‌ছি‌লো, ছোট ক‌রে‌ছি‌লো। রেনু শুধ‌ু তোর মায়ের কথার ইনডায়‌রেক্ট‌লি প্র‌তিবাদ ক‌রে‌ছে। এখা‌নে আমি রেনুর কো‌নো দোষ দেখি না। বরং ও ঠিক ক‌রে‌ছে।
মেয়েটা ‌বি‌য়ে ক‌রে আস‌ছে অব্দি থে‌কে তোর মা, শশী, লি‌পি কথায় কথায় মে‌য়েটাকে কটু কথা ব‌লে। পার‌তে সাধ্যে রেন‌ু তা‌দের জবাব দেয়‌নি। আর জবাব দি‌লেও তা সুন্দরভা‌বে দি‌য়ে‌ছে। তোর মা, বোন, ভা‌বি‌কে অপমান না করে। তারা যা‌তে কষ্ট না পায় সেভা‌বে। তুই তো সারা‌দিন অফি‌সে থা‌কিস। ঘ‌রে কী হয় তার সি‌কি ভাগও তুই জা‌নিস না। রেনুর সা‌থে সবাই কেমন আচরণ ক‌রে তা ত‌ুই জানিস? তুই তোর মা‌য়ের কথা শুন‌লি, রেনুর কথা কেন শুন‌লি না?
‌শোন শিহাব, কো‌নো পুরুষ‌কেই মা‌য়ের আঁচ‌লে কিংবা বউ‌য়ের আঁচ‌লে বাঁধা ভেড়া হওয়া ঠিক না। পুরুষ, সে থাক‌বে পুরু‌ষের ম‌তো। তার ব্য‌ক্তিত্ব থাক‌বে আলাদা। সে বিচার কর‌লে, তার বিচার হ‌বে সূক্ষ্ণ এবং স‌ঠিক। তোর মা যেমন রেনু‌কে কটু কথা ব‌লে অপমান ক‌রেছি‌লে‌া, রেনু তেমন ইনডাইরেক্ট‌লি উদাহরণ দি‌য়ে তার প্র‌তিবাদ ক‌রে‌ছে। এতে ওর দোষটা কোথায়? তোর উচিত ছি‌লো দুজনার কথা শে‌ানা তারপর দুজন‌কে একসা‌থে ব‌সি‌য়ে দুজনার সা‌থে মিল ক‌রি‌য়ে দেয়া।
কিন্তু তুই মা‌য়ের বানা‌নো ভেড়ার ম‌তো ভেড়া হ‌লি। যে, পুরুষ মা‌য়ের কথায় বউ‌কে আর বউ‌য়ের কথায় মা‌কে অপমান ক‌রে, উল্টা বিচার ক‌রে সে পুরুষ না বরং ভেড়া।
‌শিহাব মাথা নিচু ক‌রেই রইল। মাথা উঁচু ক‌রে রেন‌ুর দি‌কে তাকা‌নোর ম‌তো মুখ নেই ওর।

তারপর হা‌সি বেগ‌মের দিকে তা‌কি‌য়ে নূর ইসলাম বল‌লেন,
‘হা‌সি তোমার এ জঘণ্য রূপটা আমি মে‌নে নি‌তে পার‌ছি না! এত বছর লি‌পি আর তোমা‌কে দে‌খে আমার গর্ব হ‌তো। সবসময় আল্লাহর কা‌ছে শুক‌রিয়া আদায় করতাম তোমা‌দের এত সুন্দর সম্পর্ক দে‌খে। সেই তু‌মি রেনুর সা‌থে কী ব্যবহারটা ক‌রছো? কেন? মে‌য়েটা আগে বিধবা ছি‌লো ব‌লে? রেনু কিন্তু তোমা‌র ছে‌লে‌কে জোর ক‌রে বি‌য়ে ক‌রে‌নি। বরং তোমার ছে‌লেই রেনুর প‌রিবার‌কে বাধ্য ক‌রে‌ছে, ওর কাছে রেনু‌কে বি‌য়ে দেয়ার জন্য। রেনুর কতগু‌লো বি‌য়ে তোমার ‌ছে‌লে ভে‌ঙে‌ছে তা তু‌মি জানো?

নি‌জের ছে‌লে‌কে ধোয়া তুলসী পাতা ভাবার আগে একবার ছে‌লের সম্প‌র্কে জান‌তে? তোমার ছে‌লের বয়স সাঁইত্রিশ আর রেনুর চ‌ব্বিশ। ভে‌বে দে‌খে‌ছো তোমার ছে‌লে রেনুর চে‌য়ে কত বড়? রেনু চাই‌লে তোমার ছেলের হাজার গুন ভা‌লো ছে‌লে‌কে বি‌য়ে কর‌তে পারত। তাও তোমার ছে‌লের কার‌ণে হয়নি। রেনুর চেহারার দি‌কে তাকাও আর নি‌জের ছে‌লের চেহারার দি‌কে তাকাও। রেনুর সৌন্দ‌র্যের কা‌ছে তোমার ছে‌লে ওর ন‌খের যোগ্যও না। এমন ফুটফু‌টে একটা মে‌য়ে‌কে তোমরা সবাই মি‌লে কষ্ট দি‌চ্ছো। কেন? শুধু ওর একটা খারাপ অতীত আছে ব‌লে? আচ্ছা ও বিধবা, দোষটা কি ওর? ওর প্রথম স্বামী দূর্ঘটনায় মারা গেছে। সেটা আল্লাহর ম‌র্জি ছি‌লো। ও তো খুন ক‌রে‌নি তা‌কে। আর তাছাড়া ও তো কো‌নো নোংরা‌মি ক‌রে‌নি বা কো‌নো অন্যায়ও ক‌রে‌নি। তাহ‌লে তোমরা ওকে পছন্দ ক‌রো না কেন?’

হা‌সি বেগম মাথা নিচু ক‌রে রইল। বলার ম‌তো কো‌নো কথা তার মু‌খে নেই। নূর ইসলাম বল‌লেন,
‘হা‌সি ভু‌লে যেও না তু‌মিও এক মে‌য়ের মা। তোমার মে‌য়েরও বি‌য়ে হ‌য়ে‌ছে। আজ তোমার মে‌য়ের সা‌থে এমন হ‌লে তু‌মি কী কর‌তে? আল্লাহ না করুক, তোমার করা অন্যা‌য়ের ভার না, আবার আমার মে‌য়েটার উপর প‌ড়ে। তোমার মে‌য়েও কম ছি‌লো না তোমার চে‌য়ে। ননদ তো ওর-ও আছে। দোয়া ক‌রি ওর ননদ যা‌তে ওর ম‌তো না হয়।
হা‌সি তু‌মি মা ছি‌লে মা-ই থাক‌তে, শাশুড়ি হবার চেষ্টা কেন কর‌লে? তোমা‌কে ঐ খারাপ রূ‌পে মানায় না। আমা‌দের বিয়া‌ল্লিশ বছরের সংসারে কখ‌নো তোমার ভিতর নিচুতা দেখি‌নি, যতটা নিচুতা গত দুই-‌তিন মা‌সে তু‌মি দেখা‌লে।’
তারপর কিছুক্ষণ চুপ থে‌কে, তি‌নি সবার দি‌কে তা‌কি‌য়ে বল‌লেন,
‘আমার কথার প্র‌তিউত্ত‌রে কা‌রও কিছু বলার আছে? না থাক‌লে রুম থে‌কে বের হও। রেনু‌কে বিশ্রাম নি‌তে দাও। আর শিহাব তোমা‌দের স্বামী-স্ত্রীর সম্প‌র্কে আমি হস্ত‌ক্ষেপ করব না। সেটা তোমরা নি‌জে‌দের ম‌তো গু‌ছি‌য়ে নাও।’

নূর ইসলাম রুম থে‌কে বের হ‌য়ে গে‌লেন সা‌থে বা‌কি সবাইও। সবাই চ‌লে যে‌তেই শিহাব রেনুর কা‌ছে এসে বসল। রেনু এতক্ষণ চুপ ক‌রে নূর ইসলামের কথা শু‌ন‌ছি‌লে‌া। ওর বলার ম‌তো কিছু ছি‌লো না। তাছাড়া জ্ব‌রে, ক্লা‌ন্তি‌তে শরীরটাও কিছ‌ু বলার অনুম‌তি দি‌চ্ছে না। শিহাব রেনুর কা‌ছে এসে ওর হাত ধ‌রে বলল,
‘স‌রি রেনু। আমার ভুল হ‌য়ে‌ছে। ক্ষমা ক‌রে দাও প্লিজ।’
‌রেনু কী বল‌বে ভে‌বে পে‌লো না। কারণ ও যা বল‌তো, তা ওর শ্বশুর ব‌লে‌ দি‌য়ে‌ছে, বরং তার চে‌য়ে বে‌শি ব‌লে দি‌য়ে‌ছি। তাই কিছুক্ষণ চুপ থে‌কে বলল,
‘আচ্ছা ঠিক আছে।’
‌শিহাব রেনু‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
‘মানলাম না হয় আমি ভুল ক‌রে‌ছি। তা ব‌লে আমার উপর রাগ ক‌রে, না খে‌য়ে নি‌জে‌কে কষ্ট দি‌বে? এটা কো‌নো কথা?’
‌রেনু কিছ‌ুই বল না। চ‌ুপচাপ শিহা‌বের বু‌কে মাথা দি‌য়ে রাখল।

‌শিহাব আজ অফি‌সে গে‌ল না। ছু‌টি নি‌য়ে‌ছে রেনুর জন্য। আজ বিকা‌লে শশী-রাযীনও চট্টগ্রাম চ‌লে যা‌বে। ওদের সা‌থে দেখা কর‌তে সবাই এয়ার‌পোর্ট যাবে। তখন রেনু‌কেও ডাক্তা‌রের কা‌ছে নি‌য়ে যা‌বে। আজ রেনুর অ্যাপ‌য়েন্ট‌মেন্ট রাত আটটায় নেয়া হ‌য়ে‌ছে।

চল‌বে……

#এক‌দিন_বিকা‌লে_সকাল_হ‌য়ে‌ছিলো
‌লেখকঃ শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্বঃ ২০

২৬!!
শশী আর রাযীন‌কে বিদায় জানা‌তে দুই প‌রিবা‌রের প্রায় সব সদস্যই এয়ার‌পো‌র্টে হা‌জির হ‌লো। সবার কাছ থে‌কে বিদায় নি‌য়ে ওরা রওনা হ‌লো।
‌প্লে‌নে উঠে রাযীন‌কে চুপচাপ ব‌সে থাক‌তে দে‌খে শশী বলল,
‘রাযীন।’
‘হুঁ।’
‘‌তোমার কি মন খারাপ।’
‘না তো, কেন?’
‘সবসময় তো পটর পটর কর‌তেই থা‌কো। হুট ক‌রে এত চুপ হ‌য়ে গে‌লে?’

রাযীন হে‌সে বলল,
‘শশী, তোমার মুখ থে‌কে তু‌মি ডাক শুন‌তে মধুর চে‌য়ে মধুর লাগ‌ছে।’
শশী নাক ক‌ুঁচ‌কে বলল,
‘কাল রা‌তে কীভা‌বে ব্ল্যাক‌মেইল করে আপ‌নি থে‌কে তু‌মি‌তে আন‌ছো ম‌নে আছে?’
রাযীন হাসল।
গতকাল রাতে রাযীন, শশী‌কে বলল,
‘শশী আমা‌কে আপ‌নি আপ‌নি ব‌লো না তো। নি‌জের কা‌ছে নি‌জে‌কে বু‌ড়ো লা‌গে।’
‘‌তো কী বলব?’
‘তু‌মি সম্বোধন কর‌বে।’
‘স‌রি, পারব না।’
‘পার‌বে না?’
‘না।’
‘আবার জি‌জ্ঞেস কর‌ছি, পার‌বে না?’
‘না।’
‘‌শেষবার জি‌জ্ঞেস কর‌লাম, পার‌বে না।’
‘একশবার জি‌জ্ঞেস কর‌লেও পারব না।’
রাযীন বসা অবস্থায় খপ ক‌রে শশী‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধরল। এ‌কে অপ‌রের নিঃশ্বাস একে অপ‌রের মুখ মন্ড‌লে লাগ‌ছে। শশী নি‌জে‌কে ছাড়া‌নোর চেষ্টা ক‌রে ব্যর্থ হ‌লো। রাযীন বলল,
‘তু‌মি ব‌লো।’
‘না।’
‘না বল‌লে কিন্তু আব‌ার বেহুশ করব। আর এবার এমনভা‌বে বেহুশ করব যে, আধাঘন্টায়ও হুশ আস‌বে না। ভে‌বে দে‌খো সে আধাঘন্টায় আমি পু‌রো তোমা‌কে কতভা‌বে দেখ‌তে পা‌রি।’

শশী একরকম বাধ্য হ‌য়েই তু‌মি বল‌তে রাজী হলো।
‌প্লেনে বসে রাযীন হে‌সে বলল,
‘সোজা আঙু‌লে ঘি না উঠ‌লে আঙুল শুধু বাঁকা‌লেই হয় না, দরকার হলে চামচ দি‌য়েও ওঠা‌তে হয়।’
রাযী‌নের কথা শু‌নে শশী হে‌সে রাযী‌নের না‌কে চাপ দি‌য়ে বলল,
‘তু‌মি ভয়ানক লে‌ভে‌লের দুষ্টু। তোমার মা ব‌লেন, তুমি নাকি খুব শান্ত আর লক্ষী ছে‌লে অথচ তোমার মা‌ কী জা‌নেন তু‌মি আমার সা‌থে কেমন কান্ড ক‌রো?’
‘মা‌য়ের যা জানার তা তি‌নি জানেন। মা জা‌নেন ছে‌লে হিসা‌বে আর তুমি জা‌নো স্বামী হিসা‌বে। তো দুজনার জানার ম‌ধ্যে পার্থক্য তো থাক‌বেই।’
শশী হাসল শুধু।

‌কিছুক্ষণ পর শশী বলল,
‘‌প্লেন কখন ছাড়‌বে?’
‘এই‌তো আর দশ মি‌নিট পর।’
শশী হাই তুল‌তে তুল‌তে রাযী‌নের কাঁধে মাথা দি‌য়ে ওর হাতটা জ‌ড়ি‌য়ে ধরল। রাযীন বলল,
‘‌তোমার ঘুম পা‌চ্ছে?’
‘ভীষণ।’
‘‌কেন?’
‘ক‌দিন যাবত রাতে ঘুম হয় না ঠিকম‌তো। যার কার‌ণে দি‌নে ঘুম আসে।’
‘রা‌তে ঘুম কেন হয় না?’
‘বিয়ের দিন থে‌কে তো তুমিই ঘুমা‌তে দিচ্ছ না।’
রাযীন শশীর ঠোঁ‌টে আঙুল চে‌পে বলল,
‘হুস। আস্তে। লো‌কে শুন‌লে কী ভাব‌বে?’
‘কী ভাব‌বে?’
রাযীন হে‌সে বলল,
‘তু‌মি স‌ত্যি বুঝ‌তে পার‌ছো না কী ভাব‌তে পা‌রে?’

শশী লজ্জায় চোখ বন্ধ ক‌রে ধী‌মি আওয়াজে বলল,
‘আ‌মি অন্য কিছু মিন ক‌রে ব‌লি‌নি। সারা রাত পটর পটর কর‌তেই থা‌কো। তো ঘুমা‌বো কী করে?’
‘‌সেটা তু‌মি আমি জা‌নি, পাব‌লিক তো জা‌নে না।’
‘চুপ। আমা‌কে ঘুমা‌তে দাও।’
‘আধা ঘন্টা পৌ‌নে একঘন্টার তো মাত্র পথ, তাও ঘু‌মি‌য়ে কাটা‌বে?’
‘চট্টগ্রাম পৌঁ‌ছে গ‌ন্তব্যে পৌঁছাতে কতক্ষণ লাগ‌বে?’
‘জ্যাম না থাক‌লে এক ঘন্টা। জ্যাম থাক‌লে কয় ঘন্টা তা বল‌তে পার‌ছি না।’
‘তাহ‌লে আমি প্লে‌নে আর গা‌ড়ি‌তে ঘু‌মি‌য়েই কাটাব।’
‘ও‌কে তোমার ইচ্ছ‌া।’

শশী রাযী‌নের কাঁ‌ধে মাথা দি‌য়ে চোখ বুঝল। রাযীন পরম আবে‌শে শশীর কপা‌লে ঠোঁট ছোঁয়াল।
ও‌দের খুনশু‌টিময় কথাগু‌লো পিছনে ব‌সে আরেকজন শুন‌ছে সে আর কেউ নয় বরং সজল। সজল‌কে, রাযীন‌ দে‌খে‌ছে সে কার‌ণেই ওর চোখে মুখে চিন্তার ছাপ। কিন্তু শশী সজ‌ল‌কে দে‌খে‌নি। রাযীন চায়না শশী, সজলকে দেখুক। অনেক ক‌ষ্টে শশী‌কে স্বাভা‌বিক কর‌ছে রাযীন। সামান্য কার‌ণে সে কষ্ট বিফ‌লে যে‌তে দিতে চায় না ও। রাযীন আবার শশীর মাথায় ঠোঁট ছু‌ঁয়ে বলল,
‘শশী !’
‘হুম।’
‘ভা‌লোবা‌সি ভীষণ।’
‘জা‌নি।’

চট্টগ্রাম পৌঁ‌ছে প্লেন থে‌কে নে‌মে রাযীন, শশী ওদের গা‌ড়ি‌তে বসল। রাযীন শশী‌কে গাড়ি‌তে ব‌সি‌য়ে বলল,
‘তু‌মি ব‌সো আমি দুই মি‌নি‌টে আস‌ছি।’
রাযীন কিছ‌ুদূর গিয়ে সজ‌লের কাঁ‌ধে হাত রাখল। সজল ওর দি‌কে ঘু‌রে তাকা‌তেই, সজ‌লের নাক বরাবর ঘু‌ষি মারল। সজল নাক চে‌পে ধ‌রল। নাক বে‌য়ে দরদর ক‌রে রক্ত পড়‌ছে। নাক চেপে ধ‌রে সজল বলল,
‘‌কে আপ‌নি? আর আমাকে মার‌লেন কেন?’
‘নাটক মারাস? বা‌ড়ি থে‌কে বের হবার পর থে‌কে দেখ‌ছি ত‌ুই আমা‌দের ফ‌লো কর‌ছিস। কেন?’
‘‌মিথ্যা কথা।’
‘আবার না স্বীকার যাস। মে‌রে ঠ্যাং ভে‌ঙে দিব হারামজাদা। আমার আর শশীর চারপা‌শেও যে‌নো তো‌কে না দে‌খি। যা ভাগ।’
সজল কী বল‌বে ভে‌বে পা‌চ্ছে না। এভা‌বে ও ধরা প‌ড়ে যা‌বে ভাব‌তেও পা‌রে‌নি। ভে‌বে‌ছি‌লো ওদের ফ‌লো ক‌রে ও‌দের বা‌ড়ি চি‌নে, শশীর সাথে যোগা‌যোগ কর‌বে কিন্তু রাযীন কীভা‌বে দেখলো সেটাই বুঝতে পার‌ছে না! সজল বিড়‌বিড় ক‌রে বলল,
‘শালা এত জো‌রে ঘু‌ষি মার‌ছে যে, মাথা যন্ত্রনা হ‌চ্ছে। ওদের তো আমি যেভা‌বে হোক খুঁ‌জে বের করব। তার আগে ডাক্তার দে‌খি‌য়ে নি। আমার ভা‌লোবাসা‌কে কে‌ড়ে নি‌য়ে সুখী হ‌তে পার‌বি না তুই। তো‌কে খ‌ুঁ‌জে বের করব-ই আমি।

২৭!!

শিহাব, রেনু‌কে ডাক্তার দে‌খি‌য়ে ফির‌ছি‌লো। রেনুর তেমন কো‌নো সমস্যা হয়‌নি। ভাইরাল ফিবার আর না খাওয়ার কার‌ণে প্রেসার খ‌ুব লো। ক‌দিন আগেই মিসক্যা‌রে‌জের কার‌ণে ওর শরীরটা এম‌নি দুর্বল, তার উপর গত দেড়‌দিন না খে‌য়ে থাকায় শরীর আরও দুর্বল হ‌য়ে গে‌ছে। শিহাব গা‌ড়ি চালা‌চ্ছে আর রেনু চুপচাপ ব‌সে আছে। সবসময় কত কথা ব‌লে অথচ আজ ও কো‌নো কথাই বল‌ছে না। শিহাব একটা রেস্টু‌রেন্ট এর সাম‌নে গা‌ড়ি থা‌মি‌য়ে বলল,
‘চ‌লো ফুচকা খাই।’

মন খারাপ ক‌রে রেনু বলল,
‘আমার ইচ্ছা করছে না।’
‌শিহাব গা‌ড়ির ম‌ধ্যে ঢু‌কে বসল। তারপর জানালার কাচ তু‌লে বলল,
‘‌রেনু ভুল মানুষ-ই ক‌রে। আমি তো মহামানব নই যে, ভুল হ‌বে না। প্লিজ এবা‌রের ম‌তো মাফ ক‌রে দাও।’
‌রেনু শান্ত ক‌ণ্ঠে বলল,
‘একটা কথা বলুন, আপনার সম্প‌র্কে কেউ বা‌জে কিছু বল‌লে, তা কী আমার বিশ্বাস ক‌রা উচিত? তারপর আপনার সাথে সিন‌ক্রি‌য়েট করা উচিত? না‌কি আগে বিষয়টা ভা‌লোভা‌বে জে‌নে বু‌ঝে পর্যবেক্ষণ ক‌রে তারপর পদ‌ক্ষেপ নেয়া উচিত?’
‌শিহাব মাথা নিচু ক‌রে বলল,
‘আর লজ্জা দিও না প্লিজ রেনু। আমি য‌থেষ্ট অনুশোচনায় ভুগ‌ছি। এরপর থে‌কে কিছু না ভে‌বে এমন হুটহাট কথা বল‌বো না?’

দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে রেনু বলল,
‘আপনা‌কে আমি অনেক ম্যা‌চিওর ব‌লেই জানতাম কিন্তু পরশুর পর কেমন জা‌নি সে ভরসাটা ক‌মে গে‌ছে।’
এবার শিহা‌বের চোখ টলমল কর‌ছে।রেনু‌কে বলল,
‘তু‌মি কি আমা‌কে আর ভরসা কর‌তে পার‌ছো না রেনু?’
‘আপনার উপর ভরসা আমার এখনও তীব্র কিন্তু হুট ক‌রে ভরসাটা একটু নড়ব‌ড়ে হ‌য়ে গে‌ছে। এখন আপ‌নি-ই তা আগের ম‌তো পাকাপোক্ত কর‌তে পার‌বেন।’

‌শিহাব রেনু‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে কপা‌লে চুমো খেল। তারপর বলল,
‘একটু সময় দাও তোমার ভরসা আবার পাকা‌পোক্ত ক‌রে দিব।’
‌রেনু মৃদু হে‌সে বলল,
‘সময় কিন্তু বে‌শি দিব না।’
‘এখন ফুচকা খা‌বে?’
‘দুই প্লেট খা‌বো, বে‌শি ঝাল দি‌য়ে।’
‘যত খু‌শি খাও বাট ঝাল কম দি‌য়ে, তু‌মি এখনও সুস্থ হও‌নি।’

‌রেনু কৃ‌ত্রিম রাগ দে‌খি‌য়ে বলল,
‘ধূর্! খা‌বোই না। ঝাল টক ছাড়া ফুচকা সে ফুচকা না ছাই‌য়ের ম‌তো টেস্ট।’
‌শিহাব হে‌সে বলল,
‘তু‌মি ছাই খে‌য়ে‌ছি‌লে?’
‘না খাই‌নি ত‌বে, একবার শখ ক‌রে ছাই দি‌য়ে দাঁত মে‌জে‌ছিলাম।’
‘কত বছর আগে?’
‌রেনু বেশ দুষ্টুমি ক‌রে বল‌ল,
‘যখন আপ‌নি নি‌ব্বা ছি‌লেন আর আমি সদ্য জন্ম নেয়া শিশু।’
‘‌দেখো রেনু, বয়স নি‌য়ে একদম খোটা দিবা না।’
‘একশ বার দিব, হাজার বার দিব, কী কর‌বেন আপ‌নি?’

‌শিহাব ফস ক‌রে নিঃশ্বাস ছে‌ড়ে বলল,
‘কী আর করব? অসহায় এ পুরুষজা‌তির হা‌তে কিছু আছে না‌কি? বউ বয়‌সে যতই ছো‌টো হোক না কেন, রাজ্য আর রাজত্ব তো তার-ই চ‌লে।’
‌রেনু আবারও হাসল। শিহাব রেনুর গা‌লে হাত দি‌য়ে বলল,
‘‌প্লিজ এভা‌বেই হা‌সিখু‌শি থা‌কো সবসময়। তু‌মি হা‌সিখু‌শি থাক‌লে আমার মনটা সবসময় ভালো থা‌কে। তু‌মি আমার ভা‌লো থাকার ট‌নিক।’
‘আমার হা‌সির কারণও আপ‌নি শিহাব। আপ‌নি হাসা‌লে আমি হা‌সি, আপ‌নি কাঁদ‌া‌লে আমি কাঁদব।’

‌শিহাব-রেনু এ‌কে অপ‌রের দি‌কে অপলক চো‌খে তা‌কি‌য়ে রইল। কিছুক্ষণ পর শিহাব বলল,
‘‌রেনু!’
‘হ্যাঁ।’
‘তু‌মি আমা‌কে অনেক বে‌শি ভা‌লো‌বে‌সে ফে‌লে‌ছো তাই না?’
‘হ্যাঁ। আপনার চিন্তার বাই‌রে ভা‌লো‌বে‌সে ফে‌লে‌ছি আপনা‌কে।’
শিহাব অপলক চোখে রেনুর পা‌নে চে‌য়ে রইল। ম‌নে ম‌নে বলল,
‘‌রেনু আমি জা‌নি না কত‌দিন তোমা‌কে হাসা‌তে পারব। আজ আবারও নওশীন‌কে দে‌খে‌ছি আমি। নওশী‌নের সাথে জড়া‌নো আমার স‌ত্যিটা জান‌লে তুমি মান‌তে পার‌বে তো? তখন তোমার এই মু‌খের হা‌সি টা না আবার চির দুঃ‌খের হ‌য়ে যায়।’

‌শিহাব রেনুর হাত ধ‌রে বলল,
‘এখা‌নে ব‌সেই রাত পার কর‌বে না‌কি? আচ্ছা ফুচকা খাবার দরকার নেই। এম‌নিও রাত প্রায়-ই দশটা বা‌জতে চলল। তার চে‌য়ে বরং রা‌তের খাবারটা খে‌য়েই বা‌ড়ি যাই।’
‘আপনার যেমন ইচ্ছা।’
‘কী খা‌বে?’
‘‌ভিত‌রে গি‌য়ে দে‌খি কী‌ আছে।’
‘চ‌লো।’

শিহাব কা‌চ্চি বি‌রিয়া‌নি নি‌লো আর রেনু নি‌লো সাদা ভাত আর গরুর গোসত। খাবার খে‌য়ে শিহাব বিল দি‌তে গি‌য়ে অবাক হ‌য়ে চে‌য়ে রইল। কারণ ওর পা‌শে নওশীন দাঁড়া‌নো। নওশীনও অবাক হ‌য়ে শিহা‌বের দি‌কে চে‌য়ে রইল। নওশীনের চোখ দু‌টো অশ্রুতে ভ‌রে উঠল। শিহ‌া‌বের হাত ধ‌রে বলল,
‘‌শিহাব ভাই! অব‌শে‌ষে তোমা‌কে পেলাম। কত‌দিন ধ‌রে তোমা‌কে পাগ‌লের ম‌তো খুঁজ‌ছি।’

‌শিহাব কী বল‌বে ভে‌বে পা‌চ্ছে না। অতীতের কথাগু‌লো ম‌নে ম‌নে প‌ড়ে ওর চোখ জোড়া ভ‌রে উঠ‌তে চাইলো। কিন্তু অতিক‌ষ্টে শিহাব নি‌জে‌কে নিয়ন্ত্রণ করল। তারপর মু‌খে ম‌লিন হা‌সির রেখা টে‌নে বলল,
‘‌কেমন আছিস?’
নওশীন জড়ানো ক‌ণ্ঠে বলল,
‘ভা‌লো আছি। তু‌মি?’
‘হ্যাঁ ভা‌লো।’
‘আ‌ন্টি কেমন আছেন?’
নওশীন চোখ মুছ‌তে মুছ‌তে বলল,
‘‌তি‌নি বেঁ‌চে নেই। বছর দুই আগে গত হ‌য়ে‌ছেন।’
‘ওহ। স‌রি।’
‘‌শিহাব ভাই তু‌মি একটাবারও আমা‌দের খোঁজ কর‌লে না? মু‌ক্তি আপুর মৃত্যুর পর সেই যে এলে, তারপর তোমার আর কো‌নো খোঁজ পেলাম না।’

মু‌ক্তি নামটা শুন‌তেই শিহা‌বের ম‌নে পড়ল সে রক্তাক্ত বি‌কালের কথা। শিহাব ক‌ষ্টের ঢোক গি‌লে, নি‌জে‌কে সাম‌লে নওশীন‌কে বলল,
‘নওশীন, ও তোর ভা‌বি রেনু।’
‌রেনু এতক্ষণ ওদের কথা শু‌নছি‌লো, আর শিহাব, নওশী‌নের মু‌খের হাবভাব খেয়াল কর‌ছি‌লো। কিন্তু কিছুই বুঝ‌তে পারল না। রেনু নওশী‌নের দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল,
‘কেমন আছেন আপু?’
নওশীন, রেনুর প্র‌শ্নের জবাব দি‌লো না। রেনু‌কে সম্পূর্ণ ভা‌বে ইগ‌নোর ক‌রে, বেশ গম্ভীর ক‌ণ্ঠে শিহাব‌কে জি‌জ্ঞেস করল,
‘তু‌মি বি‌য়ে ক‌রে‌ছো শিহাব ভাই?’
‘হ্যাঁ। প্রায়ই তিনমাস হ‌তে চলল।’
‘আচ্ছা। আমি চললাম। তোমার ফোন নাম্বার আর বাসার ঠিকানাটা দি‌বে?’
‌শিহাব ঠিকানা দি‌তে বেশ ইতস্ত‌বোধ কর‌ছি‌লো। তাও রেনুর সাম‌নে ব‌সে না কর‌তে পারল না। একরকম বাধ্য হ‌য়েই ঠিকানা দি‌লো।’

নওশীন ফোন নাম্বার আর ঠিকানা নোট ক‌রে বলল,
‘শীঘ্রই দেখা হ‌চ্ছে শিহাব ভাই।’
নওশীন রেস্টু‌রেন্ট থে‌কে বের হয়ে শিহাব‌কে মে‌সেজ করল,
‘তু‌মি যে কষ্ট আমাদের দি‌য়েছো, তা আমরা আজও ভুল‌তে পা‌রি‌নি। ত‌বে তুমি কী‌ভা‌বে সু‌খে সংসার ক‌র‌ছো? শীঘ্রই তোমার সংসার ভাঙ‌তে আস‌ছি আমি। বি রে‌ডি মিস্টার শিহাব। আই হেট ইউ।’

চল‌বে…..