একমুঠো সুপ্ত বাসনা পর্ব-১৪+১৫+১৬

0
469

#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
।। পর্বঃ ১৪।।

সকাল সকাল গ্রামের স্নিগ্ধ পরিবেশে ঘুম ভাঙে আনাজ পরিবারের। মোটামোটি সবাই উঠে গেছে ইয়ানা বাদে। আর আনাজের দাদু দিদা সে সাতসকালে উঠে গেছে। আঙিনার ধারের ছোট রান্নাঘরটায় রান্না করছেন আনাজের দিদা। তার পাশে বসে আছে আনজানা আর আয়না। সাথে টুকটাক গল্পও চলছে। আনাজ খোলা বারান্দাটায় একটা বেতের মোড়ার উপর বসে জরুরি আলাপ করছে। মনটা অস্থির লাগছে তার। কথা বলার কতক্ষণ পরেই ইয়ানার কাছে যায় সে। মেয়েটা যেভাবে মটকার মতো ঘুমোচ্ছে নিশ্চই আনাজের মুখে চুনকালি পড়বে!

–‘ইয়ানা? আর কতো ঘুমাবে? উঠবে না?

আনাজের কথায় ইয়ানার কোনো রেসপন্স পাওয়া গেলো না। সে ঘুমে মত্ত! আনাজ কোনো উপায় না পেয়ে টিউবওয়েল এর পাড়ে যেয়ে টিউবওয়েল চেপে হাতে খানিকটা পানি নেয়। ইয়ানার কাছে নিয়ে এসে হালকা করে ছিটিয়ে দিতে থাকে। ইয়ানার চোখমুখ কুঁচকে আসে। খুব জোর করে চোখের পাতা টেনে খুলাতেই আনাজকে হাসতে দেখে একপ্রকার বিষিয়ে ওঠে সে। বাজখাঁই কন্ঠে কিছু বলতে যাবে ওমনি আনাজ ইয়ানার মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে। এটাই এখন শ্রেয় নতুবা মেয়েটা তার দাদুবাড়িকে মাথায় তুলবে।
ইয়ানার মুখ চেপে ধরায় বাকরুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে ভাবে চেয়ে আছে সে। আনাজের হাসি যেনো থামতেই চাইছে না! ইয়ানাকে এভাবে জব্দ করতে পেরে নিজের মধ্যে একটা ব্র্যাভো ফিল আসছে তার।
ইয়ানা ঝাটকা দিয়ে নিমিষেই আনাজের হাত নিজের মুখ থেকে সরিয়ে নেয়। পরবর্তীতে আনাজের কলার চেপে ধরে বলে,

–‘ আপনি জাস্ট একটা টক্সিক লোক! এভাবে কেনো ওঠালেন হ্যা? ( আবার কলার ঝাকিয়ে)
জানেন আপনি, আমি নিলয়ের সাথে কি সুন্দর স্বপ্ন দেখছিলাম? ব্লাডি বিচ লোক!’
ইয়ানার কথা শুনে আনাজ আরো অট্টহাসি তে ফেটে পড়ে। ইয়ানা রেগে গিয়ে আনাজের ধরে থাকা কলার ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। আনাজ বেডে পড়ে গিয়ে আরো হাসতে থাকে। মেয়েটাকে রাগাতে দারুণ লেগেছে তার!

ইয়ানা ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে যায়। দিদার খিচুড়ি রান্নায় চারপাশটা মৌ মৌ করছে। কি সুন্দর জিভে জল আনা ঘ্রাণ। রান্না ঘরে ইয়ানা প্রবেশ করে,

–‘আমার নাতবউ টা তাহলে উঠছে এতোক্ষণে? বসো মা পাশে আসে বসো’

দিদার কথায় তার পাশে যেয়ে বসে ইয়ানা।

–‘দিদা হেল্প লাগবে আপনার?’

–‘না না তুমি এখানে পাশে আসছো এটাই অনেক।’ (দিদা)

ইয়ানা দিদার পাশে বসে থাকে। তার দিদা হরেক রকমের গল্প জুড়ে দেয়।

–‘বুঝছো দিদা, তোমাদের বাবা যখন ছোট ছিলো ওকে যখন খিচুড়ি বানায় দিতাম তখন সে শুধু আচার দিয়েই খিচুড়ি সাবার করতো। প্রচুর আচার পছন্দ করতো তোমাদের বাবা!’
ইয়ানা আর আনজানাকে লক্ষ্য করে দিদা বলেন। এসময় ইয়ানা বলে,

–‘তাই আমারও আচার ভিষণ পছন্দের,’

–‘আর আমারও দিদা’

–‘হ আমি জানতাম তোমরা পছন্দ করো, তাই তোমাদের জন্যে দুই বয়াম বানায় রাখছি। যাওয়ার সময় নিয়ে যাইয়ো গা!’

দাদির কথায় মুখে ঝকঝকে হাসি ফুটে ওঠে ইয়ানা আর আনজানার।

সবাই গল্প করতে যখন মগ্ন তখন আনাজ এলো, রান্নাঘরে।

–‘ আমি বাইরে হাঁটতে যাবো, এনিওয়ান ইন্টারেস্টেড উইথ মি? ‘

আনাজানা আর ইয়ানার দিকে তাকিয়ে আনাজ বলে। মুহূর্তেই আনজানা বলে ওঠে,

–‘ আসলেই তো, সকাল সকাল গ্রামের পরিবেশের আলাদা একটা সৌন্দর্য থাকে, যা মিস করার কোনো স্কোপ নেই। চল ভাইয়া আমি আর ভাবি দু’জনেই যাবো ‘
আনজানা কথাটা বলে ইয়ানাকে টানতে টানতে নিয়ে গেলো৷ ইয়ানার যাওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিলো না তবে আনজানাই তাকে বাধ্য করলো। আনাজ আবারও জিতে যাওয়ায় জয়ির হাসি হাসতে থাকে। সেটাও লক্ষ্যমান হয় ইয়ানার। আনাজের কাছে যেয়ে তাকে চিমটি কাটে, যার ফলস্বরূপ আনাজ হালকা চেচিয়ে ওঠে,

–‘আমি আপনার সাথে রেনডমলি যেতে চাইনি। তাই অহেতুক চিন্তাভাবনা করে মিটিমিটি হাসা বন্ধ করুন!’
আনাজের কথা না শুনেই সেখান থেকে সরে আসে ইয়ানা। সামনে থাকা আনজানার কাছে ছুটে যায় সে। আনজানা দারুণ গানে গুনগুনিয়ে প্রকৃতিবিলাস করছে। আর সামনে এগিয়ে চলছে। ইয়ানাও তার সাথে যোগ দেয়। স্নিগ্ধময় এই সকালটায় মানুষের আনাগোনা। শিশুরা ঘুরে বেরাচ্ছে। চারপাশে পাখির কলকাকলিতে গ্রামটা মুখরিত। এখানের মানুষগুলো খুব ফ্রেন্ডলি। একে অপরের সাথে কথা বলার সময় মুখের এক চিলেতে হাসি চকচক করে।

একসাথে হেঁটে চলছে তারা। এমন সময় কিছু বাচ্চা তাদের দিকে তাকিয়ে দেখছে। ইয়ানা বাচ্চাগুলোর কাছে গিয়ে তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

–‘ কি নাম তোমাদের? পিচ্চির দল!’

সবাই একে একে তাদের নাম বলতে শুরু করে। ইয়ানাও তাদের সাথে শিশুর ন্যায় মেতে ওঠে। বাচ্চারা এমন একজন বন্ধু পেয়ে আনন্দে আটখানা!
আনাজ মুগ্ধ নয়নে চেয়ে আছে ইয়ানার দিকে। মেয়েটা নিতান্তই মায়াবিনী! কি সুন্দর বাচ্চাদের সাথে মিশছে। তার ফোনে স্মৃতি জড়িয়ে ক্যাপচার করে নেয় মুহূর্তটিকে। তবে ইয়ানার অগোচরে!

ইয়ানা কথা বলে পিচ্চিগুলোর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এদিকে আসতেই দেখে আনাজ পলকহীনভাবে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে।

–‘আপনি যান নি আনজানার সাথে? ‘
ইয়ানার কথা গায়ে না মেখে আনাজ বলে,

–‘বাচ্চামি শেষ হলে অনুগ্রহপূর্বক সামনে চলুন।’

ইায়ানার দিকে এক ঝলক তাকিয়ে সামনে চলতে শুরু করে সে। ইয়ানা কিছু না বুঝে সামনে চলতে শুরু করে।

চলবে,

#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
।। পর্বঃ ১৫।।

সিলেটের বিছনাকান্দি ইয়ানার দেখা অন্যতম অপূর্ব । বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের খাসিয়া পাহাড়ের অনেকগুলো ধাপ দুই পাশ থেকে এসে বিছনাকান্দিতে মিলিত হয়েছে। সেই সাথে মেঘালয় পাহাড়ের খাঁজে থাকা সুউচ্চ ঝর্ণা বিছনাকান্দির প্রকৃতিকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা যা এক কথায় মন কাড়া।
ইয়ানা আর আনাজ বিছনাকান্দির সৌন্দর্য উপভোগ করতে ব্যস্ত। হানিমুনে প্রথমে না আসতে চাইলেও পরিবারের জড়াজড়িতে শুধু আনাজের সাথে এসেছে।পরে বুঝতে পারছে না আসলে কত কিছু মিস করে ফেলতো সে! বারবার ঘুরে ঘুরে দেখছে প্রকৃতির আপন সৌন্দর্যতত্ত্ব।
পাথরের উপর দিয়ে বয়ে চলা স্বচ্ছ জলধারা আর পাহাড়ে পাহাড়ে শুভ্র মেঘের উড়াউড়ি ইয়ানার মনে এক অন্যরকম ভালো লাগার সূচনা করেছে। জায়গাটি যেনো এক পাথরের বিছানা, আর স্বচ্ছ পানিতে গা এলিয়ে দেয় ইয়ানা। মুখের কোনে জ্বলজ্বল হাসি। আনাজেরও বেশ লাগছে। সবচেয়ে প্রশান্তি লাগছে ইয়ানাকে দেখে মেয়েটা মেয়েটা আপন অবলীলায় মেতে উঠেছে প্রকৃতির সাথে। মাঝে মাঝেই আনাজ মুহূর্ত গুলোকে ক্যাপচার করে রাখছে তার ক্যামেরায়। পাহাড়, নদী, ঝর্ণা আর পাথর মিলিয়ে প্রাকৃতিক মায়াজাল বিছিয়ে রেখেছে বিছানাকান্দি। সব ভুলে এসব উপভোগ করতে ব্যাস্ত আনাজ কাপল।

–‘ইয়ানা, বেশি ভিজো না। ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। দ্যান…

–‘প্লিজ এখানেও পারমিশনের জোর খাটিয়েন না। আপনি বরং আরো কয়েকটা ছবি তলুন তো!’

ইয়ানার কথায় মুচকি হেসে আনাজ তার কথামতো ছবি তুলতে শুরু করে। সত্যি আজ তারও ইচ্ছে হচ্ছে না মেয়েটাকে থামাতে। ইয়ানা এরকম খুশি কোনো দিনও হয়নি! তার এই খুশিটুকুকে ক্যামেরা বন্দি করতে ব্যস্ত হয়ে পরে আনাজ।

–‘ না মানে, সব কি সিংগেল পিক তুলবে? আর আমি মানুষটা এভাবেই কাকতাড়ুয়ার ন্যায় দাড়িয়ে ছবি তুলেই যাবো? ‘

ইয়ানার কাছে যেয়ে নিচু স্বরে বলে আনাজ। আনাজের কথা শুনে ইয়ানার অট্টহাসিতে ফেটে পড়ার উপক্রম!

–‘ তাহলে আপনিও রেন্ডমলি মজা করুন আমার সাথে’ বলে আবার হাসতে থাকে ইয়ানা।

–‘আমার উদ্দেশ্য তো সেটা কোনো কালেই ছিলো না! আমি জাস্ট চাচ্ছিলাম তোমার সাথে গুটিকয়েক কাপল পিক তুলতে। চারপাশে তাকিয়ে দেখো সব কাপলসরা ফায়ারে আছে! ‘

এবার ইয়ানার হাসি থামতেই চাইছে না। এরকম পাগলের মতো হাসি দেখে আশপাশের সবার দৃষ্টি ইয়ানায় ঠেকে! আনাজ এবার তার কাছে যেয়ে বলে,

–‘ষ্টুপিড গার্ল! হোয়াট দ্যা হেল? মানুষ কিভাবে দেখছে, একবার লক্ষ্য করেছো ?’

ইয়ানা চারপাশে পরখ করে দেখে আসলেই চারপাশের মানুষ ব্যাতিব্যস্ত হয়ে তাকে দেখছে। এবার ইয়ানা কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায়। আসলেই সে বেশি বেশি করে ফেলেছে। সে সব উপেক্ষা করে আনাজের কাছে যেয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাড়ায় সে। আনাজ এবার তার অবস্থা দেখে খিলখিলিয়ে হাসছে। ইয়ানার এতে খানিকটা রাগ হয়। নিচে থাকা স্বচ্ছ পানিগুলো পা দিয়ে ছলাৎ করে আনাজের দিকে ছিটিয়ে দেয়। আনাজ কিছু বুঝে ওঠার আগেই। শুভ্র রঙের শার্ট আর জিন্সটা ভিজে যায় তার।

–‘ছিঃ এই পানিগুলো কতো জিবাণুযুক্ত জানো তুমি?’.

আনাজের রিয়াকশন দেখে মনে হচ্ছে যেনো ইয়ানার দ্বারা মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেছে!

–‘আপনার হাসার শাস্তি! এভাবে হাসছিলেন কেনো? ‘

–‘তো? কি করতাম? তোমার পাগলামি দেখে সবাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে!’

আনাজের আবার হাসি পায়। তা দেখে ইয়ানা আবার পানি তার শরীরে ছিটিয়ে দেয়। আনাজও প্রতিশোধস্বরূপ তার গায়ে ছিটিয়ে দেয়। চলতে থাকে তাদের খুনসুটি।

.

একটা লোককে ডাক দিয়েছে আনাজ। তাদের কাপল পিক তুলে দেওয়ার জন্য। লোকটার হাতে ক্যামেরা ধরিয়ে দিয়ে আনাজ এসে ইয়নার সাথে দাড়িয়ে যায়। ইয়ানার পিঠে হাত রেখে বলে,

–‘জ্বি তুলুন এবার’

ইয়ানা হাতটা সরিয়ে দিতে যেয়ে ব্যার্থ হয়।

–‘চুপ থাকো রাস্কেল!’
ইয়ানা অগত্যাই সামনে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসি দেয়। ভেতরটা জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে তার। এভাবে তাকে রাস্কেল বলা খুব দরকার ছিলো?

——
ঘোরাঘুরি শেষ করে ক্লান্ত বেশে তাদের রিসোর্টে ফিরে আনাজ ইয়ানা। তাদের হানিমুনের জন্য রিসোর্টে ওঠা। যদিও এসবের কোনো ইনটেনশন ছিলো না তবে, তার মায়ের কথা ফেলতে পারলো না আনাজ।ভেতরে যেয়ে তাদের জন্য সুসজ্জিত মনোরম রুমে গেলো তারা। রুমটায় আসলে মনের মাঝে এক অন্যরকম প্রশান্তির আমেজের ভাব আসে। রুমে যেয়েই আনাজ সবার আগে ওয়াশরুমে যায়। এসব পানি গায়ে লাগিয়ে আনাজ এতোক্ষণ কিভাবে ছিলো, তা নিজেই জানে।
ইয়ানা রুমের সাথে এটাচড্ ব্যালকোনিতে চেয়ে দেখছে। ব্যালকোনির সামনের পরিবেশটা এককথায় অসাধারণ। সামনে অনেক রকম গাছগাছালির সমারোহে প্রকৃতিটা সবুজাভ স্নিগ্ধতার পরশ একেই চলছে। চোখ ফেরানো দায়।

কতক্ষণ পরে আনাজ ওয়াশরুম থেকে বের হয়। রিসোর্টের থেকে থেকে দেওয়া ক্রিম কালারের স্যুটটা পড়েছে সে। রাতের ঘুমানোর জন্য বেশ আরাম দায়ক হবে। ভেজা চুলগুলো মুছতে মুছতে ব্যালকোনিতে যায় সে।

–‘ তুমি এতোক্ষণ এই ভেজা শাড়িটাতেই বসে আছো? এই মেয়ে ঠান্ডা দেখছি ঠান্ডা লাগিয়ে ছাড়বে! যাও যাও চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে আসো।’

ইয়ানাকে পাঠিয়ে দেয় আনাজ। ব্যালকোনিতে বসে সেও সৌন্দর্যে ভরপুর পরিবেশটাকে উপভোগ করতে থাকে। এক সময় ফোন নিয়ে স্ক্রল করতে শুরু করে সে। একসময় স্ক্রিনে ভেসে ওঠে তার মায়ের নম্বর। ফোনটা রিসিভ করতেই অপাশ থেকে ভেসে ওঠে তার মায়ের আওয়াজ।

–‘কিরে বাবা! তোরা ঠিকঠাক রিসোর্টটায় পৌছেছুস তো? ঠিক আছিস তো তোরা?’

–‘জ্বি মা! তুমি টেনশান নিও না। আমরা ঠিক আছি। ‘

আনাজের কথায় আয়না শান্ত হয়।

–‘ইয়ানা? কই সে? মেয়েটার কি এখনো মন খারাপ?’

–‘উহু মোটেও না। এতো খুশি সে কোনো দিনও হয়নি বাচ্চাসুলভ বিহেভ শুরু করে দিয়েছে’

আনাজের কথায় বড় নিঃশ্বাস নেন আয়না।

–‘মেয়েটাকে আগলে রাখিস বাবা!’

–‘হ্যা মা, তোমরা ভালো আছো তো? ‘.

–‘হ্যা সবাই ঠিক আছি। তোরা এনজয় কর। রাখি’.
ফোন রেখে দেন আয়না। আনাজ সামনের দিকে দৃষ্টি দেয়।

–‘আআআআ’

ইয়ানার চিল্লানিতে দৌড়ে যায় আনাজ।

–কি কি হয়েছে?
ব্যাস্ত হয়ে আনাজ বলে।

–‘এটা কি ড্রেস? ‘
ইয়ানার হাতে থাকা ড্রেসটার দিকে তাকায় আনাজ।

–‘ষ্টুপিড ওয়ান, এটা কোনো ড্রেস না। এটাকে নাইটি বলে। বড় বড় হোটেলস বা রিসোর্টসে রাতে পড়তে দেয়, ডোন্ট ইউ নো দ্যাট? আর এভাবে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছো যেনো…’

–‘হ্যা! এটাকে নাইট ড্রেস বলে সেটা আমিও জানি আপনাকে বুঝ দিতে বলিনি। কথা হচ্ছে এটা আমি আপনার সামনে পড়ে ঘুরবো? ‘

–‘অভিয়াসলি! এটা ছাড়া কোনো কাপড় নেই!’

–‘নোপপপ! এই হাটুর উপরে থাকা কাপড় আমি আপনার সামনে পড়তে পারবো না। ‘

–‘তাহলে এটা পড়ে ওয়াশরুমে থাকো। আই নেভার মাইন্ড! ‘

বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে রেখে আনাজ বলে।

–‘এটা কাপলদের জন্যই ডিজাইন করা। এখন তোমার যদি আমার সামনে আসতে অসুবিধা হয় তাহলে লাইট অফ করে দিয়ে আমি শুয়ে পড়ছি। ‘

বলে আনাজ ল্যাম্পটা অফ করে দিতে যায় ওমনি ইয়ানা আরেক দফা চিল্লানি দেয়,

–‘এই না! অন্ধকারকে আমি প্রচুর ভয় পাই তো!’

আনাজ ভ্রু কুঁচকে দেয়।

–‘আচ্ছা মুসিবত রে বাবা! তাহলে আমি কি করতে পারি? ‘

–‘উমমম, আপনি একটা কাজ করুন, ওপাশে পাশ ফিরে শুয়ে যান। আর হ্যা, ভুলেও এপাশে ফিরবেন না।’

–‘ঠিক আছে, ঠিক আছে ‘

ওপাশে শুয়ে পড়ে আনাজ। ছোট করে শ্বাস নেয় ইয়ানা। অবশেষে পারা গেছে!

চলবে,

#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ১৬

সূয্যিমামার হাসির কিরণে সিলেট শহরটা ঝলমলিয়ে উঠেছে। সকাল সকাল চারপাশের খোলা ফুরফুরে বাতাস আর পাখিদের গুঞ্জনে প্রকৃতি মুখরিত। জানালার গ্লাস খুলেই কালকে রাতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো ইয়ানা। শীতল হাওয়ার স্পর্শে বেশ ঘুম হয়েছে রাতে। জানালা থেকে উঁকি দেওয়া আলোর স্পর্শে চোখ মুখ কুঁচকে আসে ইয়ানার। টেনে টেনে চোখ খুলতেই মুখে আসা আলো দেখে মুখে রাগের আভাস ফোটে ওঠে তার। একটু শব্দ করেই গ্লাসটা লাগিয়ে দেয়। এরমাঝেই লক্ষ্যিত হয় রোদের আলোয় ঝকঝক করা সিলেটের একাংশ। গাছের পাতাগুলো দারুনভাবে চিক চিক করছে।
আনাজের দিকে একবার তাকায় সে। আনাজ এখনোও ঘুমে বিভোর। বাহিরের সৌন্দর্য ভরপুর পরিবেশটাকে একটু দর্শন করে আসবে ভেবে বেড থেকে উঠে পড়ে ইয়ানা। মুহূর্তেই মনে পড়ে যায় সে এখনো নাইট ড্রেস পরিহিত। সাথে সাথে বুকটা দ্রিম করে ওঠে। চট করে আনাজের দিকে একবার পরখ করে নেয়। নাহ, লোকটা তাকায় নি!
ফটাফট ওয়াশ রুমে চলে যায় সে। চেঞ্জ করতে।

—–

ব্যালকোনি সহ এদিক ওদিক পায়চারি করতে করতে বিরক্ত ইয়ানা। সে কখন থেকে এটা ওটা করেই চলছে। প্রথম প্রথম ব্যালকোনির দৃশ্য দেখতে অপূর্ব লাগলেও এখন এক ঘেয়েমি লাগছে। আনাজেরও ওঠার নাম গন্ধ নেই। মটকা মেরে পড়ে আছে! সাথে সাথে মনে আসে, কালকে আনাজ তাকে পানি ছিটিয়ে ঘুম ভাঙিয়ে ছিল। মাথায় শয়তানি বুদ্ধি খেলে যায় তার। বলেনা, ‘আইডল ব্রেইন ইজ ডেভিলস ওয়ার্কশপ’ তার সাথেও ঠিক এমনই হয়েছে।
আনাজের কাছে যায় সে। আনাজের ঘুমিয়ে থাকা ইনোসেন্ট মুখটা ইয়ানার বেশ লাগে। তার মুখের দিকে খানিকটা ঝুকে পড়ে সে। তার কাঁকড়ায় আটকানো চুলের গুচ্ছ সামনে আনে। কিছু চুল হাতের মুঠোয় পুড়ে আনাজের কানে সুড়সুড়ি দিতে থাকে সে। খানিকটা বিরক্তি নিয়ে কানে হাত দেয় আনাজ। চোখ এখনও বন্ধই আছে।
ইয়ানা নিঃশব্দে হেসে ওঠে। পুনরায় আস্তে করে আনাজের হাতটা সরিয়ে দেয়। তারপর চুলের মুষ্ঠি আনাজের কানের কাছে সুড়সুড়ি দিতে আনাজ অতিকষ্টে চোক্ষুজোড়া খোলার চেষ্টা চালায়। ইয়ানা ফট করে সরে যেয়ে দৌড়াতে নিলেই আনাজ তার হাত খপ করে ধরে ফেলে। ইয়ানার বুঝতে বেগ পেতে হলো না, সে ধরা পড়ে গেছে!
ইয়ানা হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করেও শেষমেশে ব্যর্থ হয়। বরং আনাজ ইয়ানাকে তার দিকে হেঁচকা টান দেয়। আনাজের মুখের কাছে পড়ে ইয়ানা। মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে তার।

–‘ এভাবে চুুলের খোঁচায় ঘুমটা না ভাঙিয়ে যদি পরমাদরে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুমটা ভাঙাতে তাহলে কিন্তু মন্দ হতো না ‘
মুখে বাঁকা হাসি রেখে আনাজ বলে।

–‘অ্যাহ! আমার অতো ঠ্যাকাও পড়েনি যে আপনাকে অতো যত্নে সত্নে ঘুম ভাঙাবো! ‘

–‘ তুমি শুধরাবে না ইয়ানা ‘
হাসতে হাসতে আনাজ বলে।

–‘ কি শুধরাবো আমি? আপনি শুধরান যত্তসব! ‘
ঠোঁট উল্টিয়ে বলে ইয়ানা।

–‘আচ্ছা বাদ দাও। এখানের সকালের ন্যাচারটা দেখেছো? ‘

–‘সেটা দেখাতেই তো ডাকছিলা..
কথাটা ভুলক্রমে বলে দু-হাত দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরে ইায়ানা। একথাটা মোটেও বলতে চায়নি সে।

–‘হে হে হে সত্যি কথা অবশেষে বেড়িয়েই গেলো।’

আনাজের কাছ থেকে উঠে গিয়ে ব্যালকোনিতে চলে গেলো ইয়ানা। লোকটাকে জাগিয়ে দেওয়া চরম ভুল হয়ে গেছে। রিসোর্টের দিকে তাকিয়ে দেখে মানুষের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে। ফোনের রিংটোনটা বেজে ওঠতেই ভেতরে যায় সে। আনাজ রুমে নেই৷ গেলো কই? ওয়াশরুমে হতে পারে চিন্তা করে ফোনের কাছে যায় সে। সুহানার নম্বর চোখে পড়তেই ফোনটা রিসিভ করে নেয় সে।

–‘কিরে আপু, কেমন আছিস? সিলেটে যেয়ে আমাদের তো ভুলেই গিয়েছিস…’ (সুহানা)

–‘ আরেহ না না, এসব মনে করিস না,আসলে কালকে ঘোরাঘুরির পর একটু টায়ার্ড হয়ে পড়েছিলাম তো তাই ঘুমিয়ে পড়েছি। তোদের সাথে কথা বলার সুযোগ হয় নি ‘

–‘ সে কি! ঘুমিয়ে পড়েছিলি? ‘

–‘ হ্যা তো কি অতো রাতে তোর সাথে কথা বলতাম? ‘ (ইয়ানা)

–‘তাহলে আবার রিসোর্ট বুক করালি কেনো? আচ্ছা বাদ দে, কেমন ঘুরলি আমার জিজুকে নিয়ে তাই বল’ (সুহানা)

–‘ খুব সুন্দর সিলেট জায়গাটা। একদম মনে হচ্ছে আমি স্বর্গে এসেছি। ‘

–‘ হয়েছে হয়েছে আর বলিস না, যেতে ইচ্ছে করছে। ‘

হেসে ওঠে ইয়ানা।

–‘ নো ওয়ারি, নেক্সট ইয়ার সবাই এক সাথে আসবো। ‘

–‘ওকে, হোয়াটেভার তুই এনজয় কর। আর সুন্দর করে ফটোসেশান করবি। আমি দেখবো কিন্তু। হ্যাপি হানিমুনিং’

–‘আচ্ছা বাই’

লাইন কেটে যায়। বোনের সাথে কথা বলার পর একটা রিফ্রেশ ফিল আসছে।

——-

নিচের ভিলাটায় ব্রেকফাস্ট করতে গিয়েছে আনাজ ইয়ানা। চারদিকে একবার তাকায় ইয়ানা। চারপাশে কাপলদের সমাহার। পুরো জায়গাটা জুড়ে সফ্ট মিউজিক বাজছে, যা থিমটার সাথে দারুণ শোভা পাচ্ছে। ইয়ানা আনাজের সাথে একটা হার্ট শেপড্ টেবিলে বসে। কিছুক্ষণের মাঝেই একজন ম্যানেজারের কথায় একজন ওয়েটার টাইপ কেউ এসে জানতে চায় তাদের সকালসহ সারাদিনের মেন্যু কেমন হবে, আনাজ ইয়ানার মতামত নিয়ে তদনুযায়ী তাকে বুঝিয়ে দেয়।

ওয়েটার চলে যায় তাদের কাঙ্খিত ব্রেকফাস্ট আনতে। আনাজ ইয়ানার সাথে গল্প করছে। ইয়ানাও গল্পে মত্ত হয়ে পড়েছে। মনে আনন্দেরা ভুলকি দিচ্ছে। ইয়ানার দিকে তাকিয়ে ছিলো আনাজ। হঠাৎ সামনের দিকে চোখ পড়তেই সেদিকে দৃষ্টি আবদ্ধ হয়ে যায় তার। কথা বলাও রীতিমতো বন্ধ হয়ে যায়। থরথর করে কাঁপতে শুরু করে সে। ইয়ানা কি থেকে কি হলো কিছুই বুঝে ওঠতে পারে না।

–‘ আনাজ আপনি ঠিক আছেন? ‘

আনাজের কোনো রেসপন্স পাওয়া গেলো না। সে কেঁপেই চলছে! পরিস্থিতি বোঝার জন্য সেদিকে তাকায় ইয়ানা। তাকাতেই দেখে….

চলবে,