একমুঠো সুপ্ত বাসনা পর্ব-২৭+২৮+২৯

0
432

#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ২৭

—‘মা একজন, গুরুতর আহত পেশেন্ট এসেছে, অবস্থা খুব খারাপ এক্ষুনি আমাকে যেতে হবে’

শার্টের উপর তড়িঘড়ি করে শুভ্র রঙের এপ্রোনটা পড়তে পড়তে বলে আনাজ। বিন্দুমাত্র সময় নেই আর।

—‘কিন্তু আনজু? ওর খোঁজ কে করবে? ‘

ভাঙা ভাঙা গলায় বলেন আয়না। ইয়ানারও চোখ দিয়ে রীতিমতো অশ্রুধারা বয়ে চলতে শুরু করেছে।

–‘মা তোমারই শুধু মেয়ে হারিয়ে যায়নি, আমারও একটা বোন হারিয়েছে। হ্যা, আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি তাকে খুঁজে বের করার। তাই বলে তো এই নয়, তার জন্য একটা পেশেন্ট, চিকিৎসার অভাবে মারা যাক? লেট মি গো!’

বড় বড় পা ফেলে তরিৎ গতিতে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায় আনাজ। আয়না বুঝতে পারেন, তার ছেলে ভুল কিছু বলে নি।

নিচের ড্রাইভারকে বলে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরে আনাজ। প্রচন্ড তাড়া তার।সেখানের সহযোগী ডাক্তাররা সামলে নিচ্ছে তারপর আনাজ গেলে দেখে শুনে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হবে।

–‘ড্রাইভার ভাই, ফাস্ট চালান। টাইম নেই।’

–‘ঢাকা শহরের রাস্তা, এইখানে জলদি চলানো মুশকিল। সামনেই জ্যাম আইয়া পরবো’

–‘আপনি দেখেশুনে চালান।

আবার বেজে ওঠে আনাজের ফোন। চট করে রিসিভ করে অস্থিরতার সাথে বলে,

–‘হ্যা, কোনো খোঁজ পাওয়া গেলো? শাহবাগের ওদিকে দেখেছো? ভার্সিটির আসেপাশে ঠিকমতো দেখেছো? মেয়েটার প্রতেকটা বান্ধবীকে কল করা হয়েছে। সবাই বলছে আনজানা একা গেছে। এখন কই যে গেলো…’

–‘আচ্ছা শুনো, তোমরা অফিসে যাও, আমি দেখছি’

মুখ থেকে চ এর মতো শব্দ করে ফোন কেটে দেয় আনাজ। মাথা কাজ করছে না তার। বারবার ভয় হচ্ছে আনজানাকে নিয়ে। মেয়েটা কিছু হলো না তো? কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে যায়।

ড্রাইভার পার্কিং লটে গাড়ি ফেরায়। ফটাফট নেমে যায় আনাজ। হাসপাতালের ভেতরে যেয়ে লিফ্টের বাটনটায় চাপ দেয়। মুহূর্তেই বেজে ওঠে তার ফোন রিসিভ করেই বলে,

–‘জ্বি, আমি চলে এসেছি। উপরে আসছি’

টুট করে লাইন কেটে দেয়। লিফ্ট নিচে আসলে জলদি পা বাড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। কপালের কোনে বিন্দু বিন্দু নোনতা ঘাম চিক চিক করছে। হাতে থাকা সফ্ট ওয়াচটার দিকে পরখ করে নেয় সে। লিফ্ট চারতলায় উঠলেই নেমে যায় আনাজ। নার্সের কথায় ৪০৪ নম্বর রুমটাতে প্রবেশ করে সে। আনাজ যে রুমের দিকে যাচ্ছিলো সে রুমটার পাশেই ওয়েটিং সিটে বসে ছিলো আনজানা। ভাইয়াকে দেখতেই চটজলদি নিজেকে আড়াল করে নেয় সে। আনাজের তাড়া থাকায় ফটাফট রুমে প্রবেশ করে।

বাহিরের সিটে নির্জীব হয়ে বসে আছে আনজানা। মাথা ধরে আসছে তার। এরকম একটা পরিস্থিতি হবে, তা কখনোই কল্পনা করতে পারেনি। বারংবার তার চোখে ভেসে উঠছে আদ্রর কীর্তিকলাপগুলো। লাইক সিরিয়াসলি? একটা মানুষের প্রতি একজনের কতোটা এফেকসন থাকলে এভাবে পাগলামি রটিয়ে দিতে পারে? নিজেকে তিলে তিলে শেষ করে ফেলছিলো আদ্র। বুক ভারী হয়ে আসে আনজানার। কাঁদতে ইচ্ছা করছে খুব। তবে, এটা হসপিটাল। জোরে জোরে কথা বলাও এলাউ নেই আর কাঁদা তো দূরেই থাক!

এক সময় মনে পড়ে যায়,ওহ তার তো একটা ফ্যামিলিও আছে! এতোক্ষণ আদ্রর প্রতি এতোটাই মত্ত হয়ে পড়েছিলো যে খেয়ালই নেই মা বাবাকে ফোন করার!

ফট করে ব্যাগ হাতড়িয়ে ফোনটা বের করে সে। ফোনটা পাওয়ার অফ করে রাখা। ছাৎ করে আৎকে উঠে সে। সবাই নিশ্চয়ই ফোন করে হয়রান হয়ে গেছে?

রিস্টার্ট দিতেই মাথা ঘুরে যায় তার। ফোনকলের নোটিফিকেশনে ফোনের স্ক্রিন সয়লাব! যেটার ভয় ছিলো সেটাই হলো। তবে সে মোটেও কাউকে বলতে চায় বা তাকে এভাবে উঠিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। নয়তো নিঃসন্দেহে বাবা আদ্রকে জেলের ভাত খাওয়াবেন। আর এটা মেটেও আনজানা চায় না। কাপা কাঁপা হাতে ফোন দেয় আয়না কে। সাথে সাথে রিসিভ করে নেন তিনি৷ এতোক্ষণ তো এটারই অপেক্ষার প্রহর গুণছিলেন। হাউমাউ করে কেঁদে কেঁদে বলেন,

–‘আনজু? মা তুই কই?’
গলা ভারী হয়ে আসে আনজানার। সামলে নিয়ে বলে।

—‘মা আমি ঠিক আছি, আর তুৃমি এভাবে কাঁদছো কেনো? আমার কিছু হয় নি তো। ফ্রেন্ড দের সাথে.এক..টু মজা করছিলা…
লাস্টের কথাটা জড়তা নিয়ে বলে আনজানা। তার কথা শেষ হতে না দিয়েই আয়না রাম ধমক দেন।

–‘চুপ! আজকাল একদম ফাজিল হয়ে গেছিস তুই। আমাদের একবার জানাবি না? বাসার সব কি অবস্থা জানিস? আর ফোন বন্ধ কেন ছিলো? কোন বান্ধবীর বাসায় ছিলি? তোর সব বান্ধবীর খোঁজ নেওয়া হয়েছে। সবাই বলছে তুই তাদের সাথে নেই? এই মেয়ে উত্তর দে….!’

চুপসে যায় আনজানা। মনে মনে আওড়ায়,

”যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যা হয়!’

–‘আ…আম্মু ওই অন্য একটা ফ্রেন্ডের সাথে গিয়েছিলাম, তোমরা ওকে চেনো না হয়তো। আর আমরা ওই পার্কের ওইদিকে ছিলাম।’

–‘বাসায় আয় ফাজিল! জলদি আয়। আমি সবাইকে জানিয়ে দেই, তোকে পাওয়া গেছে।’

রাগে গজগজ করলেও ভেতরে ভেতরে শান্তি লাগছে আয়নার। আফটার অল, মেয়েকে পাওয়া গেছে, যদিও সে নিজেই ধরা দিয়েছে! সবাইকে জানিয়ে দেন তিনি। প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলে ইয়ানাও।

———-

মা বললেও বাসায় যেতে মন চাচ্ছে না আনজানার। থাকতে ইচ্ছে করছে খুব। আদ্র ছেলেটার হুশ ফিরলে আনজানাকে না পেয়ে আবার না জানি কি পাগলামি করে বসে! তবে, মায়ের জন্য এখনই যেতে হচ্ছে। রীতিমতো দ্বন্দ্বে ভুগছে সে!

চলবে,

#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ২৮

হ্যান্ড গ্লাভস গুলো খুলতে খুলতে বের হচ্ছে আনাজ। মুখে দুটো সর্জিক্যাল মাস্ক এখনো লাগানো আছে। অপারেশন করতে হয় নি তাকে। হাতের বিক্ষত অংশে ড্রেসিং করিয়ে দিয়েছে। আর কিছু চেক আপ করেছে। পেশেন্টের ফ্যামিলির সাথে কথা বলতে সিটে দিকে এগোয় আনাজ। ভরকে যায় আনজানা। কাঁপাকাপি শুরু করে দেয় সে। হাত দিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে নিজের চেহারাকে আড়াল করার। ভয়টা বেড়ে দ্বিগুণ! অন্যদিকে তাকালেও ব্যর্থ হয় সে। আনাজ তার সামনে আসতেই অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে যায়! আনজানা নিজেকে অগোচর করতে ব্যর্থ হয়ে মাথা নিচু করে নতজানু হয়ে বসে থাকে। কপাল বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে, হৃদ স্পন্দন অতি বেগে স্পন্দিত হচ্ছে।

–‘আনজু তুই এখানে? ‘
(জোড়ে চিৎকার দিয়ে বলে আনাজ)

আনজানার কোনো রেসপন্স নেই। মাথা নিচে লরে বসে আছে সে।

ঠসসসস্! আনজানার গালে ঠাটিয়ে চড় বসিয়ে দেয় আনাজ। অবাকের দৃষ্টিতে তাকায় আনজানা। চোখ থেকে এক ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পরে। এটা কি সত্যিই তার ভাই? নাকি সে স্বপ্ন দেখছে? আজ পর্যন্ত আনজানার গায়ে হাত লাগায়নি আনাজ। তবে আাজ?!

–‘এই মেয়ে, তুই এখানে কি করছিস হ্যা? তুই জানিস বাড়ির সবাই তোকে না পেয়ে কেমন নাজেহাল হয়ে বসে আছে? ইউ নো হোয়াট, বিকাল থেকে সবাই কেমন পাগলের মতো তোকে খুঁজছি? আর ফোন ফোন অফ কেন হ্যা!???

গরগর করে আওড়িয়ে দেয় আনাজ। ম্লান হাসি দেয় আনজানা। ভেতরে ভেতরে কষ্টে পাথর হয়ে যাচ্ছে সে। একসময় চোখ দিয় স্রোতধারার ন্যায় উপচে উপচে কষ্টগুলো গড়িয়ে পরতে থাকে। আনাজ কে ধরে কান্না জুড়ে দেয় সে। নরম হয়ে যায় আনাজ। একটু বেশি করে ফেলেছে সে। অবশ্য, নিজের প্রিয় কিছু হারালে সবাই উন্মাদনায় মত্ত হয়ে যায়! তবে, আনজানার অবস্থাটাও জানা উচিত ছিলো তার। দু-হাত দিয়ে পরম অবলীলায় জড়িয়ে ধরে আনজানাকে। আনাজানা এখনো ছোট শিশুর মতো কান্না জুড়ে দিয়েছে। আনাজ টুপ তার করে কপালে চুমু খায়। শীতল কন্ঠে বলে,

–‘আম এক্সট্রিমলি সরি আনজুপাখি। তোকে না জেনে এভাবে হার্ট করা উচিত হয় নি আমার। কষ্ট হচ্ছে খুব। তবে, তোর ভাইটার কথাও একবার চিন্তা কর। তোকে না পেয়ে কি অবস্থা হয়েছিলো তার ভেবে দেখেছিস একটিবার?’

আরো জোড়ে কেঁদে দেয় আনজানা। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আনাজকে। এটাই হয়তো ভাইবোনের ভালোবাসা।

–‘সরি ভাইয়া, আমার এভাবে না জানানো ঠিক হয়নি’

হেঁচকি তুলে কাঁদছে সে। আনাজ তার চুলে পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,

–‘ছেলেটা কে? দেখ আমাকে যদি সত্যিসত্যিই ভাই মনে করে থাকিস, তাহলে মিথ্যে বলবি না।’

ঢোক গিলে আনজানা। তাহলে ধরা পরেই গিয়েছে। অবশ্য না পরেই বা থাকতো কতক্ষণ?
আমতা আমতা করে বলে,

–‘ভা…ভাইয়া তুমি যা ভাবছো মোটে…ও সেরকম কিছু না। ও জাস্ট ওজাস্ট আমার ফ্রেন্ড! ‘

–‘খুব সুন্দর করে মিথ্যে বললি!’
হাসি দিয়ে আনাজ বলে। আবার ঠোঁট যুগল প্রসারিত করে আনাজ।

–‘ তাহলে ছেলেটা আমার জান আমার জান বলে চিল্লাচ্ছিল কেনো?’

থতমত খেয়ে যায় আনজানা। ছেলেটা তার বারোটা বাজিয়ো ছারবে দেখছি! রাগ লাগে তার, অসম্ভব রাগ। ছেলেটা ইয়ানার প্রেস্টিজটাই খেয়ে দিয়েছে!
কি বলবে বুঝতে পারছে না আনজানা। আবারও নতজানু হয়ে বসে রইলো সে।

-‘তুই কি ছেলেটাকে ভালোবাসিস? ‘

–‘আ, হ্যা..না! ‘
কি বলবে বুঝতে পারছে না আনজানা। সত্যিটাও বলতে পারছে না। নতুবা আদ্রকে এখনি টুকরো টুকরো করে ফেলবে আনাজ।

–‘কি হ্যা না লাগিয়েছিস? ক্লিয়ারলি বলতে এতো লজ্জা করছে। নিজের ভাইকে একবার বলেও দেখলি না কাউকে ভালোবাসিস? কি করে ছেলেটা? দেখতে শুনতে তো ভালোই মনে হচ্ছে। তবে, তুই একটা ড্রিন্ক করা ছেলের সাথে এসব করতে পারলি? সো শেইম অন ইউ!’

মাথা তুলে ফট করে আনাজের দিকে তাকায় ইয়ানা। আনাজের দৃষ্টি স্বাভাবিক হলেও ভেতরে ভেতরে আবার রাগটা তীব্র হয়েছে।

–‘ভাইয়া তুমি যা ভাবছো, তা একদমই না। ট্রাস্ট মি। আর এসব ব্যাপারে তোমাকে পরে বলবো আগপ বলো আদ্র ঠিক আছে? ‘

তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে আনাজ।

–‘আজকাল ফ্যামিলির থেকে তোর ওই থার্ড ক্লাস মার্কা প্রেমিকই বেশি ইমপোর্টেন্স পাচ্ছে দেখছি? নিজের ফ্যামিলির দিকে ঘুরেও না দেখে তোর সো কলড্ প্রেমিকের পিছনে জান দিচ্ছিস? যাহ একটু দেখা করে আয়। সেন্স ফিরতেই সে জান জান বলে ভেবাচ্ছে। তুই না গেলে আবার হার্টবিট ঠিক থাকবে না। আবার আমার খাটনি। যা দেখা কর। আর হ্যা, তোর সো কলড্ প্রেমিককে এটাও বলবি যাতে ড্রিংক একটু কম করে। নাহলে নিঃসন্দেহে এর এফেক্ট তার বডিতে প্লাস তোর উপর পরবে। গট ইট? ‘

শেষের কথাটা আনজানাকে ঠেস মেরে বলে আনাজ। আনজানা অপপাত সহ্য করে নিচ্ছে। সব দিক থেকেই বিপদটা দারুনভাবে আক্রমণ করেছে। জলদি উঠে চোখের জলগুলো হাতের পিঠ দিয়ে মুছে নেয় সে। রাগ, ক্রোধ, ক্ষোভ এসব সম্মিলিতভাবে মনে আক্রমণ করছে তাকে। ধীরে ধীরে হসপিটালের রুমের ভেতরে যায় সে। পেছন পেছন যায় আনাজও।
আনজানা ভেতরে পৃরবেশ করতেই দেখে শুয়ে থাকা আদ্রকে। ধবধবে ফরসা হাতটায় ড্রেসিং করানো। মারাত্মকভাবে আঘাত লেগেছে হাতে। ঠোঁটের নিচ অংশেও খানিকটা কেটেছে। যার দরুন সেখানেও ব্যান্ডেজ।আস্তে আস্তে আদ্রর দিকে এগোয় সে। আদ্র আনজানার দিকে দৃষ্টি দিতেই থমকে যায় সে। উৎসুক চাহনি তার। আনজানার প্রতি। আনাজের ফোন বেজে উঠতেই বাহিরে চলে যায় সে। রুমের মধ্যে শুধু আনজানা আর আদ্র আছে। আদ্রর বেডের মাথার কাছে যেয়ে বসে আনজানা। আদ্র অবাক হচ্ছে। আনজানাকে তো এভাবে কোনোদিন কাছে আসতে দেখেনি! তাকে আরেক দফা অবাক করে দিয়ে তার ঘন কালো চুলগুলোয় আলতো করে হাত বুলিয়ে দেয় আনজানা।

চলবে,,,

#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ২৯

আদ্রর ঘন কালো চুলে আঙুলের আলতো পরশ একে চলছে আনজানা। আদ্রর বিষ্ময় সূচক চাহনি আবদ্ধিত আনজানাতে। মেয়েটার এরকম ব্যবহার ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না। তবে, ভেতরে ভেতরে খুশির জোয়ারে ভেসে চলছে। হয়তো, মেয়েটার মনে জায়গা করে নিতে পেরেছে!

–‘কি দরকার ছিলো, এসব করার? নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করে লাভটা কি হলো? ‘

অন্যপাশে তাকিয়ে বলে আনজানা। কন্ঠস্বরে তার সকল অভিমান তরতর করে উপচে পড়ছে!

–‘আনজানার মন জয় করা গেলো! তার ভালোবাসার স্বর পাওয়া গেলো আর কি লাভ হলো শুনবে? তার মিষ্টি স্নিগ্ধ মাতাল করা পরশ!’

আদ্রর কথায় খানিকটা বিষম খায় আনজানা। গোটা শরীরে যেনো এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যায়। চট করে হাতটা আদ্রর চুল থেকে সরিয়ে আনে। আনজানা কি থেকে কি করে বসেছিলো ভাবতেই ভ্যাবাচেকা বনে যায়! মনে মনে জন্ম নিতে থাকে রাগগুলো। দমানো সম্ভব হবে না অপপাত, যতক্ষণ না আদ্রর উপর সেগুলো ঝাড়বে।

–‘এই বিচ লোক, আপনার সেন্স ফিরতেই আপনি কি কান্ড ঘটিয়েছেন জানেন হ্যা? ‘

–‘আমার সব সম্মানগুলোকে ধুয়ে দিয়েছেন আপনি, বিচ লোক!’
আনজানার গলার লার স্বরটা ঝাঁঝালো হয়ে তীরের মতো কানে এসে লাগে।

–‘কি করেছি আমি? আমার আনজুপরির পাকা ধানে মই কবে দিলাম? ‘

আনজানার মনের ভেতরে জ্বলতে থাকা আগুনে যেনো ঘি ঢেলে দিলো আদ্র।

–‘এই লোক, কি করেছেন জানেন না? সেন্স ফেরার পর জান জান করে গরুর মতো ভ্যাবানোর কি খুব দরকার ছিলো? আমার ভাইয়ের কাছে কি জবাব দিবো আমি? ‘

ভ্রুকুঞ্চন দৃষ্টিতে তাকায় আদ্র।

–‘হোয়াট? তোমার ভাই কিভাবে শুনলো? এখানে তোমার ভাই আছে? ‘

আদ্রর সন্দিহান কন্ঠ কানে বাড়ি খেতেই আনজানা ঢোক গিলে বলে,

–‘ওই মানে, আসতেও তো পারতো নাকি? ‘

প্রথম কথাটা জড়তার সাথে বললেও পরের কথাটা তীব্রভাবে বলে আনজানা। অপপাত সে মোটেও চাচ্ছে না তার ভাই ডাক্তার সেটা আদ্র জানুক। নতুবা বিচটা তার ভাইয়ের সামনে আবার কান্ড বাঁধিয়ে ফেলবে!
আনজানার কথায় কিছুই বুঝতে পারেনা আদ্র। তবে মনে মনে বেজায় খুশি। আনজানার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে মনে মনে বলতে থাকে,

–‘তোমার এই ভালোবাসার জন্য আমি রোজ নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করতে রাজি আনজুপরি। তোমার উন্মাদকর মুখশ্রীর প্রেমে ডুবতেও সর্বদা একরোখাই থাকবো। ঠোঁটের নিচের তিলটার প্রতিও মাতাল হয়ে নিজেকে হত করে ফেলতে চাই বারংবার, সর্বদাই!’

তবে তা শুনতে পায়নি আনজানা। আফসোস, বড্ড বেশি আফসোস হয় আদ্রর। আনজুপরি তার ভালোবাসাটাকে বুঝছে না, তবে একদিন না বুঝেও পারবে না।

–‘কি হলো? কি মনে করে মিটিমিটি হাসছেন? আবার কি কান্ড ঘটাতে চাচ্ছেন? ‘

আদ্রর মুখের দিকে খানিকটা ঝুকে পরে আনজানা। এতে আদ্র খানিকটা ভরকে যায়। আনজানা, আদ্রর চোখে চক্ষুস্থির করে।

–‘কি কান্ড ঘটাবেন হুঁ?’

‘আহহহ’ বলে চেচিয়ে ওঠে আদ্র। আদ্রর হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে ব্যান্ডেজ খুলে গিয়ে বেডশিটটা রক্তে মাখামাখি!

—‘আরেএএ, কি ভাবে হলো?’
চেচিয়ে ওঠে আনজানা। আদ্রর উপর ঝুঁকে থাকার সময় খেয়ালই করে নি যে তার হাতটায় ব্যান্ডেজ করা। আনজানার দেহের চাপ পড়ে খুলে গিয়েছে সেটা। আনজানা চিৎকার করে ডাকতে থাকে,

–‘ভাইয়াআআআ….
দেখ আদ্রর হাত দিয়ে ব্রিডিং হচ্ছে। জলদি আয়!’

আনজানার চিৎকারে ছুটে আসে আনাজ। আসেই দেখে বলে,

–‘ওহ নো! কিভাবে হলো? থামেন নার্সকে এনটিস্যাপটিক আনতে বলি।’

চলমান নার্সকে ব্যান্ডেজ আনতে বলেই ভেতরে আসে আনাজ। দ্রুত আদ্রর কাছে যায়। একজন নার্স চট করে সব নিয়ে এসে আদ্রর হাতে সুবিধামতো তুলা দিয়ে মুছে পরে ব্যান্ডেজ করে দিতে থাকে। আদ্রর সেদিকে লক্ষ্য নেই। সে ভাবছে, তার মানে ডা. আনাজ আনজানার ভাই হয়?
আনজানাও ভেতরে ভেতরে ভয় পাচ্ছে। আদ্র তো জেনে গেলো আনাজ তার ভাই। এরপর যদি আদ্র কিছু করে ফেলে। গলা শুকিয়ে আসে তার।

–‘তুই এখনো যাসনি? ‘

শান্ত গলায় বলে আনাজ। কিন্তু ভেতরে ভেতরে সীমাহীন রাগ লাগছে, আনজানার প্রতি। বিষয়টা ভালো করে ধরতে পারে আনজানা। গলাটা শুকিয়ে যাচ্ছে যেনো। ভয়ে ভয়ে বলে…..

চলবে,