এক কাপ ঠান্ডা কফি পর্ব-১৮

0
195

#এক_কাপ_ঠান্ডা_কফি
#পর্ব:- ১৮

– সাদেকের সঙ্গী বললো, মেরে ফেললে যদি তার পরিবার টাকা দিতে রাজি না হয়?

– না হয়ে যাবে কোথায়? আর আমরা তো তাকে বলবো না যে একে মেরে ফেলেছি। ওরা যখন খুঁজে খুঁজে হয়রান হবে তখন এমনিতেই টাকা নিয়ে চলে আসবে।

– এক কোটি টাকা দেবে তো সাদেক ভাই?

– যেভাবে ভয় দিছি তাতে টাকা না দিয়ে কোনো উপায় নেই, পুরোটাই দিতে হবে।

এমন সময় দরজা আঘাতের শব্দ পেল। পুরনো আমলের বাড়ি তাই কলিং বেলের ব্যবস্থা এখানে নেই। সাদেক ও তার সঙ্গী দুজন মিলে দুজনের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর সাদেক নিজেই এগিয়ে গেল দরজার দিকে। সাজুকে যে রুমে রাখা হয়েছে সেটা ভালো করে বন্ধ করলো।
পিস্তল হাতে তাক করে আস্তে আস্তে দরজা খুলে দিল সাদেক।

দরজা খুলে সাদেক অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সে রিতীমত বিস্মিত হয়ে গেছে, এমনটা হয়তো সে কোনদিনই আশা করে নাই। তার নিজের মনের অজান্তেই মুখ থেকে বেরিয়ে গেল,

– রাব্বি ভাই আপনি এখানে?

চারিদিকে সামান্য চোখ বুলিয়ে রবিউল আস্তে করে বললো,
– যে ছেলেটাকে ধরে নিয়ে আসছো সে কোথায়?

★★

লিয়াকত আলী বাসায় এসেই পাগলের মতো হয়ে গেল। কারণ এইমাত্র সাজুর বাবা তার কাছে কল দিয়ে সাজুর কিডন্যাপারে কথা জানিয়েছে। সে বাসার সামনে আসতেই তার ফোনটা বেজে উঠে। সাজুর বাবার সঙ্গে তার পরিচয় ছিল, কল রিসিভ করে সালাম দিতেই বিপদের আশঙ্কা করে সে।

– কি হয়েছে আঙ্কেল?

– একটু আগে আমি সাজুর নাম্বারে কল দিলাম কিন্তু রিসিভ করছে অন্য কেউ। আমাকে বললো সাজুকে কিডন্যাপ করা হয়েছে, ৬ ঘন্টার মধ্যে এক কোটি টাকা লাগবে।

– বলেন কি? সাজু গতকাল রাতে আমার বাসায়ই ছিল, ওর সেই বন্ধু রামিশাও সঙ্গে ছিল। সকালে উঠে আমি অফিসে গেলাম আর সাজু চলে গেল উত্তর বাড্ডা।

– নতুন কোনো মামলায় জড়িয়েছে?

– হ্যাঁ আঙ্কেল। আমি ভেবেছিলাম আজকে বাসায় ফিরে ওর মামলাটা আমাদের ডিবি পুলিশের আন্ডারে নেবার বিষয় কথা বলবো। এটা অনেক বড় একটা চক্র, এদের সঙ্গে বেসরকারিভাবে মামলা সমাধান করা যাবে না।

– ওকে আমি হাজারবার নিষেধ করেছি কিন্তু কে শোনে কার কথা? সেই ছোটবেলা থেকে সাজুকে আমি কোনদিন সবসময় নিজের কাছে পাইনি। ওর মা তো দুনিয়া ছেড়ে গেল, আর ওকে যেন আমার কাছে না আনি সেই ওছিয়ত করে গেল। নাহলে ওকে ইউরোপে মানুষ করতে পারতাম।

– আসলে আঙ্কেল, সাজু সখের জন্য এসব কাজ করে। কিন্তু সেটা গ্রামের মধ্যে ছোটখাটো খুনের মধ্যে করা যায়, সমস্যা নেই। তবে শহরের মধ্যে বিশাল মাফিয়া চক্রের সঙ্গে লড়াই করার জন্য সরকারি কিছু সুবিধা দরকার। ওর সঙ্গে নিজেকে রক্ষা করার একটা পিস্তল পর্যন্ত নেই।

– আমি এখন কি করবো? ওর নাম্বার তো বন্ধ।

– আমি দেখছি কি করা যায়। তবে আমার মনে হয় ওই কিডন্যাপাররা সাজুর মোবাইল দিয়ে আর কল করবে না। ওরা নতুন নাম্বার দিয়ে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবে।

– আমি কি টাকার ব্যাবস্থা করবো?

– আমি বাসায় গিয়ে আপনাকে জানাচ্ছি, আমি আমার টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করবো।

– সময় কিন্তু ছয় ঘন্টা।

– আচ্ছা ঠিক আছে চিন্তা করবেন না। তাছাড়া ওরা টাকা না পেলে সাজুকে কিছু করবে না এটা মনে হচ্ছে।

আমি তোমাকে একটু পরে আবার কল দেবো।

– ঠিক আছে আঙ্কেল।

বাসায় এসে নিজের স্ত্রী ও রামিশার কাছে সবটা বলার পরে রামিশা কান্না শুরু করে। লিয়াকত সাহেব তার অফিসে কল বিস্তারিত বলে দিলেন। আর সাজুর নাম্বারটা ওপেন হলেই যেন সেটা কোথায় আছে লোকেশান ট্রাক্ট করতে বলে দিল।

– রামিশা বললো, আমাকে সিএনজি নিয়ে যখন বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে আমি তখনই বুঝতে পেরেছি কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু ঘটনা এতটা ভয়ানক হবে আমি জানতাম না, তাহলে তাকে আমি কোনদিনই যেতে দিতাম না।

– লিয়াকত বললো, সাজু তোমাকে কোনজায়গা থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে? আচ্ছা সকাল বেলা তোমরা আমার বাসা থেকে বের হয়ে এখন পর্যন্ত কি কি ঘটেছে বলো আমাকে।

– আমরা প্রথমে থানায় গেলাম, ওসি সাহেবের সঙ্গে কথা হলো, তারপর সাজু ভাইকে কে যেন কল দিলো। সাজু ভাই তার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে জেলের মধ্যে একটা ছেলের সঙ্গে কথা বলে। এরপর আমরা সেখান থেকে বের হয়ে মাহিন নামের একটা ছেলের সঙ্গে দেখা করি। সেই ছেলে হচ্ছে খুন হওয়া মাহিশার বয়ফ্রেন্ড। তার সঙ্গে কথা বলতে বলতে আবারও ওসি সাহেব কল করেন। সাজু ভাইকে সেই বাড়িতে যেতে বলেন যে বাড়িতে খুন হয়েছে মাহিশা। তারপর আমরা দুজন মিলে রওনা দিলাম, কিন্তু সিএনজির ভিতরে থাকার সময় মাহিন কল করে। সাজু ভাইকে কিছু কথা বলে যেটা আমি জানি না, তবে তারপর সাজু ভাই সিএনজি থেকে নেমে যায়। আমাকে বোনের বাসায় যেতে বলে কিন্তু আমি সরাসরি আপনার বাসায় এসেছি।

– তারমানে সাজুর নাম্বারে আজকে যতগুলো কল এসেছে সবগুলো চেক করতে হবে। মাহিন ছেলেটা কেমন মনে হয় তোমার কাছে?

– ভালো মনে হচ্ছে।

– তার নাম্বার আছে তোমার কাছে?

– না।

– আচ্ছা সমস্যা নেই আমি বের করতে পারবো।

লিয়াকত সাহেব আবারও অফিসে কল দিলেন। সাজুর নাম্বারে আজকে যতগুলো কল এসেছে সবগুলোর ডিটেইলস বের করতে বললেন। তারপর কল কেটে দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো।

– রামিশা বললো, ভাই আপনি একটু সেই ওসি সাহেবকে কল দিবেন? তাকে জিজ্ঞেস করে তো জানতে পারবো যে সাজু ভাই তার সঙ্গে দেখা করতে গেছে কি না। সাজু ভাই সেই বাড়িতে যাবার আগেই কিডন্যাপ হয়েছে নাকি বাড়ি থেকে বের হবার পরে কিডন্যাপ হয়েছে।

বাহহ তাই তো। লিয়াকত সাহেব এটা মাথাতেই আনে নাই। ওই ওসিকে কল দিয়ে তো অনেক কিছু জিজ্ঞেস করতে পারে সে।

মোবাইল বের করে প্রথমে ওসি সাহেবের নাম্বার যোগাড় করলেন। তারপর তাকে কল দিলেন সঙ্গে সঙ্গে, ওসি সাহেব রিসিভ করে বললো,

– কে বলছেন?

– ডিবি অফিসার লিয়াকত আলী হাসান বলছি, সাজুর বিষয় একটু কথা বলতে চাই।

– কিহহ সাজু?

ওসি সাহেবের কণ্ঠ শুনে মনে মনে বিস্মিত হয়ে গেল লিয়াকত আলী। লোকটা এভাবে ঘাবড়ে গেল কেন?

★★

রামিশার নাম্বার পেয়েও এখনো কল দেয়নি মাহিন কারণ কি বলবে বুঝতে পারছে না। রামিশাকে কল দেবার চেয়ে সাদেকের কাছে কল দেবার কথা চিন্তা করলো সে, তাহলে হয়তো সবকিছু ভালো করে জানা যাবে। কিন্তু সবকিছু সত্যি সত্যি বলবে কিনা এটাই সন্দেহ তার মনে।

মাহিন তার নতুন নাম্বার দিয়ে সাদেকের কাছে কল দিল। তিনবার রিং বাজতেই রিসিভ করলো সাদেক, কিন্তু কিছু বললো না।

কথা বললো মাহিন,
– কিরে সাদেক, কোথায় তুই?

– কে?

– মাহিন আমি, কণ্ঠ শুনে চিনতে পারিস না?

– তুই? তুই আমাকে কল করেছিস কেন?

– সাজু ভাই তোর কাছে?

– হ্যাঁ, তো? সাজুর খোঁজ না নিয়ে নিজের কথা চিন্তা কর, এখনো মরিসনি?

– সাজু ভাইকে ছেড়ে দে, নাহলে ছটকুর মতো তোর কপালেও দুঃখ আছে।

– বললাম তো নিজের জীবন বাঁচা, আর যার কথা বলতে কল করেছিস তার লাশ এতক্ষণে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

– কি বললি?

– ঠিকই বলছি, কাজ শেষ।

– কাজটা ঠিক করিস নাই সাদেক, এরজন্য কিন্তু তোদের অনেক মূল্য দিতে হবে।

– আচ্ছা দেখা যাক।

– সাজু ভাইয়ের লাশ কোথায় ফেলেছিস?

– তোকে বলবো কেন? পোস্টমর্টেম করবি?

– সত্যি সত্যি তাকে মেরে ফেলেছিস?

– হ্যাঁ সত্যি সত্যি।

কল কেটে দিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে মাহিন। তখন বারবার নিষেধ করেছিল মাহিন কিন্তু সাজু ভাই তার কথা শোনেনি। যদি শুনতো তাহলে এমন বিপদে পড়তে হতো না, কপালে ছিল তাই আরকি। কিন্তু এমনটা সে আশা করে নাই, খবরটা দেবার জন্য রবিউলের পাঠানো নাম্বারে কল দিল সে।

– আমি মাহিন, সকাল বেলা আপনাদের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে।

– ভাইয়া আপনিই তো সাজু ভাইকে কল দিয়ে সাবধান করেছিলেন তাই না?

– জ্বি আপু।

– আপনি কি একটু আমার সঙ্গে দেখা করতে পারবেন? সাজু ভাইকে কারা যেন কিডন্যাপ করে নিয়ে গেছে, তারা এক কোটি টাকা দাবী করে। এখন আপনি সকাল বেলা সাজু ভাইকে কেন সাবধান করেছিলেন সেটা যদি বলতেন তাহলে আমরা তাকে উদ্ধার করতে পারবো। আপনি যখন বুঝতে পেরেছিলেন আগেই সেহেতু বিপদের সম্পর্কে ধারণা আছে আপনার।

মাহিন কিছুটা অবাক হলো। কিডন্যাপ? মুক্তিপণ, ইত্যাদি। অথচ সাদেক তাকে বলেছে সাজুকে নাকি মেরে ফেলেছে তারা। মাহিন বললো,

– কীভাবে জানলেন সাজু ভাই কিডন্যাপ হয়েছে।

– আঙ্কেলের কাছে ওরা কল করেছিল।

– আপনি এখন কোথায়?

– সাজু ভাইয়ের পরিচিত এক ভাইয়ের বাসায়।

– আপনি ঠিকানা দেন আমি আসছি।

★★

ওসি সাহেব বললেন,

– হ্যাঁ সাজু সাহেব আমার সঙ্গে সেই বাড়িতে দেখা করতে এসেছিলেন। আমি তাকে ডেকেছিলাম।

– আপনারা কতক্ষণ ছিলেন সেখানে?

– বেশিক্ষণ নয়, হঠাৎ করে সাজু সাহেব অসুস্থ হয়ে পড়েন। মাথা ঘুরে পরে যাচ্ছিল, তাই আমি তাকে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে আসি। আমার সঙ্গে দুজন পুলিশ ছিল তারা ধরাধরি করে নামিয়ে এনেছিল নিচে।

– তাহলে তো সে আপনার কাছে থাকার কথা, একজন অসুস্থ মানুষ।

– আমি তাকে আমার গাড়িতে করে হাসপাতালে নিতে চাইলাম কিন্তু সে রাজি হলো না। আমাকে বললেন যে একটা সিএনজি ঠিক করে দিলেই সে চলে যেতে পারবে।

– আপনি কি করলেন?

– আমি তাকে সিএনজিতে উঠিয়ে দিলাম, একা একা চলে গেলেন তিনি।

– সাজু কিডন্যাপ হয়েছে, আর মুক্তিপণ হিসেবে এক কোটি টাকা দাবি করা হয়েছে।

– বলেন কি? এতটুকু সময়ের মধ্যে এতকিছু হয়ে গেল? আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না।

– আপনি কি আমার সঙ্গে কোনকিছু লুকচ্ছেন?

– না না কি লুকাবো?

– রামিশার কাছে সবকিছু শুনে মনে হচ্ছে আপনি নিজেও চান না সাজু এই মামলাটার রহস্য বের করুক। তাই আমার ধারণা আপনি নিজেও মনে হয় অপরাধীদের সাহায্য করছেন।

– দেখুন, আপনি সরাসরি এভাবে আমাকে দোষ দিতে পারেন না। আমাকে অপমান করার মতো কিছু আমি করিনি, বুঝতে পেরেছেন?

– আমি ঠিকই বুঝতে পারছি, কিন্তু আপনার মধ্যে যদি কোনো ঘাবলা থাকে তাহলে আমি আপনাকে খেয়ে ফেলবো।

লিয়াকত কল কেটে দিলে ওসি সাহেব টেবিলের উত্তর রাখা পানির বোতল থেকে ডগডগ করে পানি পান করলেন। এতটুকু সময়ের জন্য সাজুর গুমের কথা ডিবি পুলিশের কাছে চলে গেছে।
ও মাই গড।
এখন যদি ডিবি পুলিশ এগুলো তদন্ত করে তাহলে সে নির্ঘাত ফেসে যাবে তাতে সন্দেহ নেই।

ওসি সাহেব তাড়াতাড়ি দাদাজান নামের সেই ভদ্রলোকের কাছে কল দিল। কোনপ্রকার ভনিতা ছাড়া বললো,

– সাজুকে কিডন্যাপ করে টাকা দাবি করার কি দরকার ছিল স্যার?

– কি বলছো এসব? আমি তো এমন কিছু বলিনি, তাদের অন্য কিছু করতে বলা হয়েছে।

– আমাকে এইমাত্র ডিবি পুলিশ কল দিয়ে বললো যে তাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। আর মুক্তিপণ হিসেবে এক কোটি টাকা দাবি করা হয়েছে।

– পাগল নাকি? তাছাড়া এ খবর ডিবির কাছে কীভাবে গেল?

– আমি জানি না, আপনি একটু আপনার লোকের সঙ্গে কথা বলে দেখেন তারা গোপনে গোপনে টাকা দাবি করেছে মনে হয়।

– অসম্ভব, এটা কোনদিনই হবে না। তবে তুমি যখন বলছো তখন তখন আমি জিজ্ঞেস করে নিতে পারি। ভয় পেও না, আমি আছি।

★★

রামিশা আর লিয়াকত আলীর কাছে সবকিছু শুনে সাদেকের সঙ্গে তার কথোপকথন আর বলতে পারলো না। হতেও পারে সাদেক তাকে মিথ্যা কথা বলেছে, আবার সত্যি ও হতে পারে কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি দেখে সরাসরি মৃত্যুর খবর বলতে ইচ্ছে করছে না তার।
যদি সত্যি সত্যি মারা যায় তাহলে নিশ্চয়ই এরা জানতে পারবে সেই কথা। কেউ মারা গেলে তার মৃত্যুর খবর আপনজনদের কাছে দিতে কতটা কষ্ট হয় তাই না?
তাহলে ডাক্তাররা কেমন করে?
যখন একটা মা সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায় কিংবা কোনো মা-বাবার একমাত্র সন্তান মারা গেলে সেই খবর কীভাবে দেয়?
কঠিন হৃদয়ের মানুষ মনে হয়।

মাহিন বললো,
– টাকার ব্যবস্থা আমি করবো, আপনি আপনার পুলিশে খবর দেন। ওরা টাকা নিতে এলেই তাদের গ্রেফতার করা হবে।

– এক কোটি টাকা আপনি দিবেন?
বিস্ময় নিয়ে কথাটা বললেন লিয়াকত।

– হ্যাঁ আমি দেবো, চিন্তা করবেন না।

– কিন্তু এতো টাকা কোথায় পাবেন?

– সেটা আপনাকে চিন্তা করতে হবে না, আর সেই টাকা আসল নয় নকল।

– মানে?

– আমি বুঝতে পারছি।
বললো রামিশা।

– কি?

– উনি সকাল বেলা বলেছিলেন এর আগে নাকি নকল জাল টাকার ব্যবসা করে তারা। মনে হয় নকল টাকা দিয়ে কাজটা করতে চায়।

– কি? নকল টাকা?

– হ্যা।

– আমি একজন আইনের লোক। আর এতগুলো নকল টাকার অনুমতি দিতে পারি না।

– আমি এখব ওসব ছেড়ে দিয়েছি, আমিও চাই এদের এই দলটা ধ্বংস হয়ে যাক। তাই আপনারা যেরকম সাহায্য চান আমি করতে পারি।

লিয়াকত চোখ বন্ধ করে রইল। হঠাৎ করে মাহিন বললো,
– স্যার আপনি তো ডিবি পুলিশ তাহলে মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশান ট্রাক্ট করতে পারবেন?

– হ্যাঁ কিন্তু কার নাম্বার?

– যিনি আমাকে রামিশা আপুর নাম্বার দিয়েছেন তিনি বলেছিলেন সাদেক নামের একটা ছেলের হাতে সাজু ভাই বন্দী। আমার কাছে সাদেকের মোবাইল নাম্বার আছে আর সেটা চালু।

– তাহলে তো অনেক ভালো, তাড়াতাড়ি নাম্বারটা দাও। আরেকটা কাজ করি, তুমি আমার সঙ্গে চলো আমার অফিসে। বারবার কল দিয়ে তাদের সঙ্গে কথা না বলে নিজে যাবো।

– ঠিক আছে চলেন।

লিয়াকত আলী ও মাহিন বের হবার সময় রামিশা বললো,
– আমি আপনাদের সঙ্গে যাবো ভাই।

– ঠিক আছে চলো তাহলে।

খাবার জন্য বাসায় এসে না খেয়েই বাসা থেকে বের হয়ে গেল লিয়াকত আলী। মাহিন বাইকে করে আর রামিশা ও লিয়াকত সাহেব তার গাড়িতে করে রওনা দিল। পথে রামিশা বললো,

– ওই নাম্বারটা নিয়ে কল দিয়ে সাজু ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলা যাবে না ভাই?

– মনে হয় না তারা কথা বলতে দেবে, তাছাড়া সেখানে আমরা কল দেওয়া ঠিক হবে না।

– কেন?

– কারণ ওই নাম্বার আমরা মাহিনের কাছে পাচ্ছি তাই না? কিন্তু এটা তো তারা জানে না, আমরা যদি কল করি তাহলে নাম্বার বন্ধ করে ফেলবে।

– বুঝতে পেরেছি।

অফিসে এসে দ্রুত নিজের ডেস্কে গেল লিয়াকত। সাদেকের নাম্বার বাসা থেকে বের হবার আগেই অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এতক্ষণে নিশ্চয়ই সব বের করা হয়েছে তাই ফলাফল জানতে হবে।
একটু পরে একটা ছেলে এলো, তারপর বললো,

– স্যার আপনাকে কল দিলাম কয়েকবার।

– গাড়িতে ছিলাম তো।

– স্যার যে নাম্বারটা দিয়েছেন সেটা তখন থেকেই বন্ধ, নাম্বারটা কোথায় আছে সেটা বের করতে পারিনি।

চলবে….

মোঃ সাইফুল ইসলাম।