এক খোলা অন্তরিক্ষ পর্ব-০৭

0
262

#এক_খোলা_অন্তরিক্ষ
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৭
আর্শিয়া মন খারাপ করে অরিনকে বলে,
–তোর ভাইয়ের আসতে মন না চাইলে আসতো না। আমাদের নৌকায় উঠা কেন বন্ধ করে!

–থাক বাসায় চল। আবার আসব ভাইয়াকে ছাড়া।

আর্শিয়া গাল ফুলিয়ে চলতে লাগল। পথে ওরা ঝালমুড়ি, ফুচকা এসব খেয়ে বাড়ি ফিরল। অরিন ওর বাবা-মায়ের কথা কিছুটা শুনেছিল যখন রাহানকে বলছিল। অরিনের মনে হয় আর্শিয়া রাজি হবে না তবে সে মনে মনে চায় আর্শিয়া রাজি হোক। অরিন আর্শিয়াকে রাতে ঘুমানোর সময় মজার ছলে বলে,

–আমার ভাইকে তোর কেমন লাগে?

আর্শিয়া খুব সাধারণ জবাব,
–ভালো।

অরিন ঠোঁট ভিজিয়ে একটু নিজের মনে সাহস সঞ্চার করে বলে,

–না মানে, ছেলে হিসেবে কেমন লাগে?

আর্শিয়া ফোনের দিকে মনোযোগ দিয়ে বলে,
–ভালোই।

অরিন দেখল আর্শিয়ার মনোযোগ নেই। আর্শিয়ার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে অরিন বলে,

–আচ্ছা শোন, তোর সাথে যদি ভাইয়ার বিয়ে হয়, তাহলে কেমন হয় বলতো?

আর্শিয়া তির্যক দৃষ্টিতে অরিনের দিকে তাকালো। অরিন জোরপূর্বক হেসে বলে,

–না মানে ভাব, তোর সাথে ভাইয়ের বিয়ে হলো! তারপর?

আর্শিয়া হাই তুলে বলে,
–ইন ইউর ড্রিমস। রাহান ভাইরে দেখলে আমার ভাই ভাই ফিলিংস আসে। লাইক শাহরিফ ভাইয়ের মতো। তাই তুই তোর দিবাস্বপ্ন তোর কাছেই রাখ।

অরিন বোকা বনে গেল। আর কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। কিছু চিন্তা-ভাবনা শেষে বলল,

–মামাতো ফুফাতো ভাই-বোনের তো বিয়ে হয়। বিয়ে জায়েজ আছে তাইনা?

–হলে হয়। কিন্তু রাহান ভাইয়াকে আমার ভাই টাইপ লাগে। বাদ দে। ফোন দে। মুভি দেখব।

অরিন হতাশ হলো। আর্শিয়া মুভি দেখতে শুরু করলো।

_______

সপ্তাহ খানেক পরে আর্শিয়া নিজের বাড়ি ফিরতে চাইলে ওর মামা ওকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। আর্শিয়া সরাসরি মানা করে। সে এখন বিয়ের সম্পর্কে যেতে ইচ্ছুক না। ওর মামা ওকে অনুরোধ করে সাথে ভেবে দেখতে বলে। এদিকে অরিন মৃদুলাকেও ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে। মৃদুলার এখন চার মাস চলে। সে আর্শিয়াকে ফোন করে রাজি করাতে। আর্শিয়া রাজি হচ্ছেই না। শাহরিফও রাজি আবার রাজি না। তাও মামা-মামির ইচ্ছে ও ডিভোর্সি জেনেও নিজেদের অবিবাহিত ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছে তাই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। আর্শিয়ার চাচি, ফুফি সবাই আর্শিয়াকে এভাবে বলে যে,

“এখনও তোকে কেউ কিছু বলছে না কিন্তু সবসময় আশেপাশের মানুষ কিন্তু চুপ থাকবে না। তোকেই দোষবে। তোর দোষ আছে কি নেই তা দেখবে না। রাহান ছেলে ভালো। পরিবার তো তোর জানাই। ভালো জব করে। সব মিলে তুই নিজের জীবনকে আবার সুযোগ দে। আল্লাহ নিশ্চয়ই তোর জন্য ভালো কিছু রেখেছে। তোর মুভ অন করা উচিত।”

পৃথিবীতে দিনে হাজারও মন ভাঙে। তারা ঠিক ঘুরে দাঁড়ায় নয়তো ঝরে যায়। আর্শিয়া সবার কথা ভাবলো। দুইদিন ভেবে আর্শিয়া রাজি হলো। আর্শিয়া রাজি হওয়া মাত্রই ওর মামা-মামি আংটিবদলের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সবকিছুতে আর্শিয়া মৌন রইল। তার মন এখনও পুরোপুরি রাজি না।

আংটিবদলের সময় আর্শিয়া বলল,
–আংটি পড়াতে হবে না। একে অপরের আংটি এক্সচেঞ্জ করলেই হবে। আমি চাইছি না পড়াতে।

রাহান দ্বিমত করলো না। রাহানের মা কিছু বলতে নিলেও রাহান বাধা দিলো। আর্শিয়া এখন তার মামা বাড়ি থেকেই ভার্সিটিতে অ্যাটেন্ড করছে। একা একা বাড়িতে থাকবেই বা কি করে? মৃদুলা আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছিল তাই মৃদুলার মামা-মামি ওকে আসতে দিচ্ছে না। শাহরিফের এই মাসে অনেক কাজ তাই শাহরিফ পরের মাসে আসবে। আর্শিয়া কয়েকদিন এখানে থেকে মৃদুলা একটু সুস্থ হলে বাড়ি ফিরবে ওকে নিয়ে।

_____

আরও পনেরো দিনের মতো কে*টে গেছে। আর্শিয়া ও তার আত্মীররা বাদে কাউকে বিয়ে ঠিক হবার কথা জানানো হয়নি। নিহাদের পরিবারকেও না। নিহাদের পরিবারের কারও সাথেই আর্শিয়ার আর যোগাযোগ নেই।
আর্শিয়া মৃদুলাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলো। আর কয়েকদিন পর শাহরিফ দেশে আসবে। মৃদুলার কয়েকদিন পর পাঁচ মাস হবে। এখন আর্শিয়া অনেকটা ব্যাস্ত। ক্লাস সাথে একটা এনজিওতে আছে সবমিলিয়ে সে নিজেকে ব্যাস্ত রাখছে। বান্ধুবীদেরও বিয়ে ঠিক হবার কথা জানায়নি কারণ শাহরিফ দেশে এসে মামা-মামির সাথে কথা বলবে। শাহরিফ চেষ্টা করছে আর্শিয়াকে বিদেশ নিয়ে যেতে। অফিস দুবাই থেকে ইতালিতে সুইচ করবে। আর্শিয়ার পাসপোর্ট ও ভিসা সে আর্শিয়ার ডিভোর্স হবার আগে থেকেই ঠিক করতেছিল। কথা বলে বিয়েটা পিছাতে চায় শাহরিফ। আর্শিয়ার লেখাপড়া শেষ হলে বিয়েটা হোক সেটা চায়।

ভাগ্যের লিখন অন্যকিছু ছিল! শাহরিফ দেশে ফেরার পর ওর মামা-মামির সাথে কথা হয়। তারা আর্শিয়ার পড়ালেখা নিয়ে মানা করেনি কিন্তু বিয়েটা এখন হোক চায়। শাহরিফ ওদের সবার কথা শুনে ভাবলো হোক তবে! কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো যখন আর্শিয়া দোয়া চাইতে রফিক সাহেবকে ফোন করলেন। রফিক সাহেব ও তার স্ত্রী বিয়ের ব্যাপারে শুনে খুশি হলেন। নিহাদের মৃত্যুর আগে আর্শিয়া মুভ অন করবে তাই। খুশি হতে পারলো না নিধি! সে পাথরের মূর্তির ন্যায় জমে গেছে। তার ভালোবাসার মানুষটা অন্যকারও হবে সে কল্পনাও করতে পারছে না।

চার মাস আগে নিহাদের ক্যান্সারের কথা জানার পর নিধি আর্শিয়াদের থেকে লুকাতে রাহানের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদ করায়। রাহানের সাথে তার দুই বছরের সম্পর্ক। সে বাধ্য হয়েছিল বিচ্ছেদ ঘটাতে। নিধি উতলা হয়ে আর্শিয়াকে আনব্লক করে মেসেজ, কল সব দিচ্ছে কিন্তু আর্শিয়া তখন অরিনের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল। আজ মৃদুলা, আর্শিয়া ও শাহরিফের দাওয়াত রাহানদের বাড়িতে।

নিধি আর্শিয়ার রেসপন্স না পেয়ে রাহানদের বাড়িতে ছুটে যায়। প্রকৃতিতে সন্ধ্যা নামছে। রাস্তায় যেতে যেতে রাহানকে ফোন করছে। রাহান এতোদিন পর নিধির ফোন দেখে অবাক হয়। নিধি চার মাস আগে নিহাদের জের ধরে সম্পর্ক ছেদ করেছিল আর বলেছিল,

“আপনার সাথে সম্পর্ক রাখা আমার হচ্ছে না। ভাইয়া ও আশুর সম্পর্ক খারাপ হওয়ায় আমার মনে হয় না আপনার পরিবার আমাকে মানবে। ভালো থাকবেন।”

রাহান ভাবলো রিসিভ করবে না কিন্তু বারংবার ফোন আসাতে সে নিধির ফোন রিসিভ করলে নিধি হড়বড়িয়ে বলতে থাকে,

–প্লিজ রাহান আপনি একটু আপনাদের পাশের বাসার ছাদে আসেন। প্লিজ। আপনাদের ছাদে তো আমি আসতে পারব না।

কথাটা বলেই উত্তরের প্রতীক্ষা না করে নিধি ফোন কেটে দেয়। রাহান বুঝলো না কি হয়েছে। হুট করে পাশের বাড়ির ছাদেই বা কেনো? রাহান ভাবলো যাবে না কিন্তু নিধির কন্ঠস্বর শুনে মনে হচ্ছিল নিধি কান্না করছে। মাগরিবের আজান পরে গেছে। রাহান মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে পাশের বাসার ছাদে গেলো। পাশের বাসাতে নতুন কাজ চলছে বলে ছাদে তালা নেই। অন্ধকারে ছাদে গেলেও কেউ দেখবে না।

এদিকে আর্শিয়া মাগরিবের নামাজ পড়ে ছাদে এসেছে একা। খোলা অন্তরিক্ষে চোখ বন্ধ করে উপভোগ করছে। সামনের সপ্তাহে নাকি বিয়ে পড়াবে এমন কথা হয়েছে। এতোক্ষণ অরিন ওকে পাশে বসিয়ে হাজারও প্ল্যানিং করলো। আর্শিয়া জোরপূর্বক মুখে হাসির রেশ রেখেছিল। তার মনে এখনও শঙ্কিত ভবিষ্যত নিয়ে।

চলবে ইনশাআল্লাহ,