এক চিলতে রোদ ২ পর্ব-০৩

0
637

#এক_চিলতে_রোদ- ২
#Writer_Nondini_Nila

৩.
‘ ইউ ইডিয়েট গার্ল! এটা কি করলে তুমি!দেখে চলতে পারো না। আমার ফোন‌।’ চেঁচিয়ে উঠলো ইহান। ধাক্কা খেয়ে ওর হাতের ফোন নিচে পরে গেছে। শুধু পরেই ক্ষান্ত হয়নি। কানে ছিলো ফোন ধাক্কায় কিছুটা হেলে গেছিলো ইহান এজন্য ওর হাত ছিটকে ফোন বাম পাশের দেয়ালে লেগে গ্লাস ভেঙ্গে একদম খামচোড়।

নিচে বসে লজ্জায় মাথা তুলতে পারছিলাম না। তখন সামনের ওই ধাক্কা দেওয়া খাটাশ লোকটার মুখে ককর্শ আওয়াজ শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল আমার‌। লজ্জা পেলেও আজকে এই ছেলেটার ধমকানি শুনে আমার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেল। আমি নিজের রক্তাক্ত হাতের দিকে তাকিয়ে পাশে তাকালাম। চুড়ি একটা ভেঙে পরে আছে আর চুড়ির আঘাতে হাত কেটে গেছে জ্বলছে। আমি সেসব ঠোঁট কামড়ে ধরে সহ্য করতে লাগলাম। তুলি আমাকে টেনে দাঁড় করালো।
শাড়ি ছিলো সাদা আহারে মাটিতে পরে ডিসকালার হয়ে গেছে।

‘ এই মেয়ে কথা বলছো না কেন? দেখে চলতে পারো না যতসব ফালতু। এভাবে কেউ ধাক্কা দেয়। আমার ফোনটা গেলো।’ আফসোস সুরে বলল ইহান।

শাড়ির কুঁচি ঠিক করে ধরে ছেলেটার দিকে তাকালাম। চোখ লাল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমাকে এইভাবে ফেলে দিয়ে সবার সামনে হাসির পাত্র করে এখন ধমকানো হচ্ছে কতো বড় বেয়াদব। রেগে গেলাম আমি।

‘ এই যে শুনুন। একদম আমাকে ধমক দিবেন না বলে দিচ্ছি। আমি আপনাকে ধাক্কা দিয়েছি মানে কি সব বলছেন। ধাক্কা তো আপনি আমাকে দিয়েছে। ফোনে কথা বলছিলেন এতো মগ্ন হয়ে যে এক জল জ্যন্ত মানুষ আসছে দেখেও না দেখার ভান করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন। চোখ কি পকেটে নিয়ে ঘুরেন??’

আঙুল তুলে কথাগুলো বললাম। রাগে ও লজ্জায় আমার শরীর কাঁপছে। আশেপাশে অনেকে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তা দেখে আরো রেগে গেছি।
আমার কথা শুনে সামনে জন আরো রেগে গেলো। তার পাশে আরো কয়জন দাঁড়িয়ে আছে। একটা ফর্সা করে শর্ট ড্রেস পড়া মেয়ে এগিয়ে এলো,

‘ এই মেয়ে সুন্দর ছেলে দেখলেই ধাক্কা দিতে মন চায় তাই না।’ চেঁচিয়ে বললো ফারিয়া।ফারিয়া এসব দেখে তো রেগে আগুন। ইহান এর সাথে কোন মেয়ের ধাক্কা লেগেছে দেখেই ওর রাগ উঠে গেছে।

‘ মুখ সামলে কথা বলুন। দোষ উনার উনি আমাকে ধাক্কা দিয়েছে।’

ইহান ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। একদম ফোনের স্ক্রিন শেষ। কিছুদিন‌ আগেই কিনেছিলো আই ফোন আর তা এই ইডিয়েট মেয়েটা নষ্ট করে দিলো। তার উপর আবার ওকেই দোষারোপ করছে। ফারিয়াকে সরিয়ে নিজে আবার বলতে লাগলো,

‘ এই মেয়ে, নিজের দোষ আমার উপর চাপাচ্ছ কেন? তোমার অসাবধানতার জন্য আমার এতো দাম এর ফোনটা গেলো।ইউস ও করতে পারলাম না।দোষ করে বড় বড় কথা বলছো খুব বেয়াদব তো তুমি।’

‘ কিহহ বললেন আমি বেয়াদব। আপনি বেয়াদব। সবার সামনে ফেলে আমার শাড়ি নষ্ট করে দিলেন।’

ইহান কিছু বলতে যাবে সিয়াম ওর বাহু চেপে ধরলো। আর ফিসফিস করে বললো,

‘ প্লিজ চল এখানে থেকে।ছোট মেয়েদের সাথে এই ভাবে ঝগড়া করতে নেই। সবাই কিভাবে তাকিয়ে আছে দেখ। এখানে আমরা গেস্ট! নিজেদের রেপটেশণ কেন নষ্ট করছিস।’

‘ মেয়েটা আমার ফোনটা নষ্ট করে আবার বড় বড় কথা বলছে দেখছিস না। একবার সরিও বললো না উল্টা ঝগড়া করছে।’

‘ আরে বাদ দে তো। সুন্দরী মেয়েদের রাগ বেশি থাকে জানিস‌ই তো।আর তুই ও কম ঝগড়া করছিস না।’

‘ এই তুই আমার বন্ধু হয়ে ওই মেয়ের হয়ে কথা বলছিস।’

সিয়াম আর কথা না বলে ইহানকে টেনে নিয়ে গেলো।সাথে সবাই ওদের পেছনে গেলো শুধু ফারিয়া বাদে ও ঊষার দিকে কটমট করে তাকিয়ে পরে গেলো।

এদিকে
তুলি বললো, ‘ দোস্ত আমি এসব কি দেখছি? এটা কি আমার সেই ভীতু দোস্ত ঊষা নাকি অন্য কেউ?’

আমি তুলির কথা শুনে গরম চোখে করে তাকালাম।

‘ সত্যি ঊষা তুই এতো কথা বলতে পারিস আগে জানতাম না তো। এই ভাবে তালে তাল মিলিয়ে ঝগড়া করলি। আমি তো বিশ্বাস করতে পারছি না।’

‘ চুপ ফাজিল। ছেলেটা আমাকে কিভাবে অপমান করলো দেখলি তাও কিছু বললি না। চুপ করে তামাশা দেখলি শুধু।’

‘ আমি আর বলার সুযোগ কোথায় পেলাম। তুই তো কম বললি না।’

‘ তো বলবো না। এইভাবে আমাকে ফেলে কি অবস্থা করেছে দেখ। শাড়ির অবস্থা এটা পরে এখন আমি ভেতরে যাব কি করে?’

‘ তোর অবস্থা দেখেছি। কিন্তু ওই হ্যান্ডসাম ছেলেটার ফোন ভেঙে গেছে রে তাই রেগে গেছিলো।’

‘ তো আমি কি করবো। তার নিজের দোষ এ তার ফোন গেছে আমার কি দোষ। উনি নিজের ফোনটাও ভাঙলো সাথে আমার অবস্থা ও নাজেহাল করলো।’

‘ এই তোর হাত তো কেটে গেছে।’

‘ হুম।’

‘ আচ্ছা তুই দাড়া আমি আসছি।’

‘ কোথায় যাবি?’

তুলি ব্যান্ডেজ নিয়ে এলো পাশের দোকান থেকে। হাতে লাগিয়ে দিয়ে বললো,

‘ চল চেয়ারে বসে পরি। আর উঠবো না বসে অনুষ্ঠান দেখবো।’

‘ আমি বাসায় চলে যাই। এই ভাবে যেতে ইচ্ছে করছে না।’

‘ আরে কেউ খেয়াল করবে না আমাদের।ওই দেখ অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে।সবার মনোযোগ ওইখানে আমরা চেয়ারে বসে পরলো জাস্ট প্লিজ!’

মনটাই খারাপ হয়ে গেছে ওই অসভ্য ছেলেটার জন্য। তাও ভেতরে গিয়ে চতুর্থ সারিতে বসলাম। বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে।গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে।
প্রথম সারিতে সেই অসভ্য ছেলেটাকে দেখলাম। হেসে হেসে বন্ধুদের সাথে কথা বলছে। আমি ভেংচি কেটে চোখ সরিয়ে নিলাম।
আমাদের ক্লাসের দীপ্তি নাচ করলো। ও খুব সুন্দর নাচে প্রতি অনুষ্ঠানে নাচে অংশ গ্ৰহণ করে। ছেলেরা তো লাফালাফি করছে। দীপ্তির দিকে তাকিয়ে আছি মেয়েটা ভালো নাচে কিন্তু এখন না নাচলেই ভালো হতো। কারণ ছেলেরা বাজে নজরে ওকে দেখে।
পরপর নাচ গান, নাটক হলো। বারোটা বাজে বিরতি দিলেই আমি চলে যাব।

এদিকে ইহানের গানের সময় দিয়েছে বিরতির পর। তাই ওর রেগে আছে। গান না করেই চলে যাব বলছে কারণ বিকেলে ওর ইলা আপুকে আনতে যেতে হবে এয়ারপোর্ট এ।
নাদিম চলে গেলো কথা বলতে। আর বললো বিরতির আগেই ওর গানের ব্যবস্থা করে দিবে‌।

আমি পেয়াজু খাচ্ছি। তুলি কিনে এনেছে কিছু খাবার।আমি আর উঠি নাই‌।তুলি কয়েকটা পিক তুললো আমি শুধু মুখের ছবি তুললাম।
আমার পাশে বসে আছে মায়া আর ওর বন্ধুরা। ওরা কাকে নিয়ে যেন কথা বলছে। ক্রাশ খেয়েছে বলছে। মায়া ওর বান্ধবীদের বলছে।

‘ আমি ওই যে প্রথম সারিতে দেখ কাঁধে গিটার ওয়ালা নীল রঙের শার্ট পরা ছেলেটা! ফর্সা তার উপর ক্রাশ খাইছি। কি সুন্দর হাসি রে। আর দেখতেও হ্যান্ডসাম কতো। মনে হয় গান করে কাঁধে গিটার রাখা‌।’

আমিও ওদের কথা শুনে তাকিয়ে দেখি সেই ধাক্কা দেওয়া ছেলেটা।‌ ওই খাটাশ ছেলেটার উপর ক্রাশ খাইছে আল্লাহ! তখন দেখলাম ওই ছেলে গিটার হাতে স্টেজে যাচ্ছে। এই ফাজিল ছেলেটার গান গাইবে নাকি…
ভেবে তাকিয়ে আছি স্টেজ এর দিকে।

ইহানের নাম ডাকতেই উঠে যায় ও। তারপর গান গাইতে লাগে চোখ বন্ধ করে।

তুমি হাসলে আমার ঠোঁটে হাসি,
তুমি আসলে জোনাকি রাশি রাশি…
রাখি আগলে তোমায় অনুরাগে,
বলো কিভাবে বুঝায় ভালোবাসি..
সব চিঠি সব কল্পনা জুড়ে,
রঙ মিশে যায় রদ্ধ দুপুরে,
সেই রঙ দিয়ে তোমাকেই আঁকি আর কিভাবে বলো ভালোবাসি,
প্রাণ দিতে চাই, মন দিতে চাই সবটুকু ধ্যান সারাক্ষণ দিতে চায় তোমাকে, ওওওতোমাকে,
স্বপ্ন সাজাই নিজেকে হারাই,
আর দুটি নয়নে রোজ শুতে যাই তোমাকে ওওও তোমাকে,
জেনেও তোমার আঁখি চুপ করে থাকি,
রোজ দুই ফোঁটা যেন আর ভালো লাগে,
লারে অভিসারে,চায় শুধু বারে বারে তোমাকে ওওও তোমাকে….
যেদিন কানে কানে সব বলবো তোমাকে,
বুকের মাঝে জাপ্টে জরিয়ে ধরবো তোমাকে…
পথ চেয়ে র‌ই, দেরি করো না যত‌ই, আর ভুলা যাবে না জীবনে কখনো তোমাকে ওওও তোমাকে, ওওও তোমাকে..
জেনেও তোমার আঁখি চুপ করে থাকি,
রোজ দুই ফোঁটা যেন আর ভালো লাগে,
লারে অভিসারে,চায় শুধু বারে বারে তোমাকে ওওও তোমাকে….

ফাজিল হলেও গান তো ভালোই গায়। মুগ্ধ হয়ে গেলাম। গান শেষ করে চোখ খুললো। আমি চোখ সরিয়ে নিলাম। আর হাত তালি দিলাম না। আমি ছাড়া সবাই হাত তালি দিলো।

#চলবে……