এক জোড়া নুপুর পর্ব-১৪

0
190

#এক_জোড়া_নুপুর (১৪)

সুন্দর থীমের সাথে সিদ্ধান্ত নির্বা যুগলের গান রেকর্ড করা হয়েছে। পুরো থীমে সিদ্ধান্ত আর নির্বা একে অপরের প্রতি বন্ধুত্বসুলভ আচরণ দেখিয়েছে। এই থীমটা প্রায় এক বছর পূর্বে সিদ্ধান্ত’র মাথাতে এসেছিল। তবে নির্বার সাথে তার সম্পর্কটা সহজ ছিল না। দুজনের মাঝে বিস্তর দূরত্ব। ঢাকায় আসার পর থেকে নির্বাকে যথেষ্ট সময় দিয়েছে সিদ্ধান্ত। সেই সুবাদেই তারা এখন বন্ধু। অসম বয়সের বন্ধুত্ব আসলেই সুন্দর। ছয় মিনিটের ভিডিও দেখে রীতিমতো কাঁপছে নির্বা। সে এসবে একদমই অভ্যস্ত নয়। সিদ্ধান্ত না থাকলে এই গান তার জন্য অসম্ভব ছিল। শুটিং শেষে সিদ্ধান্ত’র সাথে বাড়ি ফিরছিল নির্বা। সচরাচর ম দ্য পান করে না সিদ্ধান্ত। তবে আজ একটু খাওয়া হয়েছে। নির্বা তার পাশে আছে অথচ তার প্রতি কোনো বাজে আচরণ হয়নি। এই বিষয়টাই নির্বাকে পুনরায় মুগ্ধ করল। অন্যদিকে শাহান কিনা তাকে অত নিচুতে নামিয়ে দিয়েছিল। সিদ্ধান্ত তো তাকে বরাবরই স্নেহ করে। শাহান ও তাই করত। হঠাৎ করেই মানুষটা এত বদলে গেল? এসব কল্পনা করেই নির্বার সময়টা পেরিয়ে গেল। বাড়ির কাছে এসে গাড়ি থামাল সিদ্ধান্ত। নির্বা তখনো বসে।
“হেই গার্ল। এসে গেছি তো।”

“ও দেখি নি। সাবধানে যেও কেমন?”

“হুম।”

“বাড়ি পৌছে কল দিবে মনে থাকবে?”

“হু থাকবে।”

“আর লেবুর শরবতও খাবে।”

“খাব।”

“আর…”

“আবার কী?”

“কিছু না। গুড নাইট।” স্মিত হাসল সিদ্ধান্ত। এই মেয়েটা ওকে বরাবরই অবাক করে। ওর সমস্ত কিছু সিদ্ধান্ত’র ভালো লাগে। নির্বা একটু এগিয়ে বলল, “কি হলো যাচ্ছ না কেন?”

“তুমি যাও আগে।”

“তুমিও না।”

“যাও।”

“হুম।”

নির্বাকে যতক্ষণ দেখা গেল সিদ্ধান্ত তাকিয়ে রইল। পাতলা গড়নের মেয়েটি নিসন্দেহে দারুণ সুন্দরী।

নিশু ঘুমিয়ে ছিল। তাকে টেনে তুলল নির্বা। ঘুমে তলিয়ে গেছে মেয়েটি। বোনের গলা জড়িয়ে বলল, “কি হলো বুবু?”

“উঠ নিশু। দেখ কি এনেছি।”

“কি আনলে?”

“চকলেট।”

“চকলেট!”

নিশু এত জোরে চিৎকার করল যে কান চেপে ধরতে হলো নির্বার। নিশু উদ্বিগ্ন হয়ে বলল, “কোথায় বুবু?”

“তোর মাথায়।”

নিশু আসলেই নিজের মাথায় হাত দিল। নির্বা চোখ রাঙিয়ে বলল, “বে য়া দব।”

“চকলেট কোথায় রেখেছ?”

“দিচ্ছি। আগে ফ্রেস হয়ে নে।”

“ফ্রেস ই তো আছি।”

“মুখের অবস্থা দেখেছিস? নাকের কাছটা তেল চিটচিট করছে। নিজের যত্ন নে বোন।”

“তুমি আছ তো।”

“আমি যত্ন নিয়ে দিব?”

“হুম।”

“সারাজীবন আমি তোর সঙ্গে থাকব নাকি?”

“হুম, তাই তো। সিদ্ধান্ত ভাইয়ার তো কোনো ভাই নেই যে আমি তার গলায় ঝুলে পড়ব।”

কথা শেষ হতেই তেড়ে এল নির্বা। নিশু এক লাফে ছুটে গেল বাথরুমে। নির্বা হেসে ফেলল। নিশু একটা যা তা। অবশ্য এর পেছনে সিদ্ধান্ত’র ভূমিকা সব থেকে বেশি। ছেলেটার লাই পেয়েই না এই অবস্থা।

সিদ্ধান্ত অনেক গুলো চকলেট পাঠিয়েছে। প্রায় সময়ই এমন করে থাকে সে। নিশু ভারী খুশি হয়ে বলল, “হায় আল্লাহ আমার দুলাভাই দেখি পুরো দোকান পাঠিয়ে দিয়েছে।”

“তুই ঠিক হবি না?”

“বুবু তুমি কেন বুঝতে চাও না। সিদ্ধান্ত ভাই কত সুন্দর। তোমার সাথে পার্ফেক্ট লাগবে।”

“তোর সাথে বিয়ে দিয়ে দিব।”

“আমি রাজি।”

নিশুর কান টেনে দিল নির্বা। মেয়েটা হাল্কা চেচিয়ে বলল, “লাগছে বুবু।”

“লাগার জন্যেই তো দিলাম। খুব বেশি বলে যাচ্ছিস। সিদ্ধান্ত আর তোর বয়সের পার্থক্য জানিস? পুরো ১১ বছর।”

“তার জন্যেই তো বলেছি। তোমার সাথে বেশ মানাবে। তুমি বুঝো একটু।”

নির্বা না শোনার ভঙ্গিতে চলে গেল। নিশু বসে চকলেট গুনছে। সেই সাথে লিখছে ম্যাসেজ। সিদ্ধান্তকে একটা থ্যাংকস তো দিতেই হয়।

আঠারো বছর বয়সী পরিণত নারী নির্বা। তার দুনিয়া এখন ভীষণ রঙিন। তবে রঙের ও তো নির্দিষ্ট মাত্রা আছে। সময়ে অসময়ে রঙ ও নষ্ট হতে শুরু করে। নির্বা পড়াশোনাকে সর্বদাই গুরুত্ব দিয়েছে। সে মনে করে পড়াশোনার স্থান অন্য কাজের পূর্বে। গত দুই মাসে কত শো এটেন্ট করেছে হিসেব নেই। ইদানীং সিদ্ধান্তকে ছাড়াও কাজ করছে সে। তাদের যুগল গান রিলিজ হবে কিছুদিন পরে। একটা ছোট্ট গানকে ঘিরে মানুষের এত উত্তেজনা নির্বাকে অবাক করেছে। নির্বা ফেসবুকে ঘুরতে ঘুরতে একটা নিউজ দেখল। যেখানে সিদ্ধান্ত আর নির্বাকে নিয়ে প্রেমের গুঞ্জনের নিউজ করা হয়েছে। এসব নতুন কিছু নয়। নির্বা পাত্তা দিল না। বরং সিদ্ধান্ত’র জন্মদিন উপলক্ষ্যে সে কিছু আয়োজন করার পরিকল্পনা করল। তার বন্ধুরাও এই আয়োজনে সামিল রয়েছে। নির্বা খুব ভোরে পার্কে চলে এসেছে। সিদ্ধান্তকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায় নি সে। সুন্দর করে সাজালো আশপাশটা। ছোট টেবিলে একটা কেক রেখেছে। তার পাশে রয়েছে কিছু ফুল। খুবই সাধারণ তবে গোছানো কাজ। নির্বা আগে থেকেই প্ল্যান করে রেখেছে। সিদ্ধান্ত’র ম্যানেজারের ম্যাসেজ দেখে নির্বা ব্যস্ত হলো।
“সবাই লুকিয়ে পড়। সিদ্ধান্ত এসে গেছে।”

কথা মতো লুকিয়ে পড়ল সবাই। সুঠাম দেহের সুন্দর সিদ্ধান্ত এল। সকালের মিষ্টি রোদে তাকে স্নিগ্ধ লাগছে বেশ। এই সময়ে জগিং করে ছেলেটা। পার্কের এ প্রান্তে এসে একটু বেশিই চমকাল। তার নাম দেখে ভ্রু কুচকে ফেলল। ম্যানেজার এমন ভাব করে আছে যেন কিছুই জানে না। সিদ্ধান্ত শুরুতেই বুঝে ফেলল। স্মিত হেসে বলল, “গার্লস বেরিয়ে আসো। আমি জানি এসব কাদের কাজ।”

দু তিনবার ডাকার পর নির্বাকে বের হতে হলো। সে শুরুতেই মুখ গোমড়া করে বলল,”এটা কি হলো?”

“কি হবে?”

“তুমি বুঝলে কি করে?”

“বোকা,উইস করো নি তুমি। তাহলে এই আয়োজন কার দ্বারা হতে পারে?”

“অন্যকেউ ও তো হতে পারত।”

“তা হতে পারত। তবে তোমার কথাই মাথায় আসছে। কই তোমার দলবল?”

নির্বা সবাইকে ডেকে নিল। সব গুলো মেয়ে কেমন করে তাকিয়ে আছে। সিদ্ধান্তকে এত কাছ থেকে দেখতে পাওয়া তাদের জন্য স্বপ্ন বটে। নির্বা আর সিদ্ধান্ত কেক কাটিং করল। মজা করে একটু কেক গালে মাখিয়ে দিল সিদ্ধান্ত। সন্ধ্যা নামার পূর্বেই এই সব ছবি ছড়িয়ে গেল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সিদ্ধান্ত খবর গুলো দেখে হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ছে। নির্বা ফোনের এপাশ থেকে বলল, “এই সাংবাদিকদের কি কাজ নেই?”

“এগুলোই তো ওদের কাজ।”

“তাই বলে এমন নিউজ করবে!”

“খারাপ কি করেছে? চলো বিয়ে করে ফেলি।”

“একেবারে যা তা তুমি।”

“আচ্ছা এখন এসব দেখার টাইম নেই। শোনো কালকের প্রোগ্রামের জন্য প্রস্তুতি নাও। আমাদের গানের প্রোমোশনের জন্য সেরা সুযোগ রয়েছে।”

“হুম।”

পরদিন একটা চ্যানেলের প্রোগ্রামে এল সিদ্ধান্ত আর নির্বা। শাড়িতে দারুণ লাগছে মেয়েটিকে। সিদ্ধান্ত মাথাত হাত বুলিয়ে বলল, “সুন্দর লাগছে।”

“থ্যাংক ইউ ম্যান।”

“আমাকে কেমন লাগছে?”

“বরাবরের মতোই বিদঘুটে।”

হো হো করে হাসল সিদ্ধান্ত। ক্যামেরাম্যান আসতেই নিজের পজিশন নিয়ে নিল। শো তে হোস্ট শুরুতেই প্রশ্ন করল কেমন যাচ্ছে সিদ্ধান্ত আর নির্বার দিন। দুজনে নিজেদের মতামত প্রকাশ করল। শো এর শুটিং শেষ হতেই সাংবাদিকের চক্করে পড়ল ওরা। না চাইতেও বসতে হলো ওদের। গতদিন সিদ্ধান্ত’র জন্মদিন ছিল। তাই তারা মুখিয়ে ছিল। সিদ্ধান্ত আর নির্বা নিজেদের গান নিয়ে জানাল। মাঝ থেকে একজন বলল, “নির্বা আর সিদ্ধান্ত’র সম্পর্কটা কি ভাই বোনের মতো?”

নির্বা সিদ্ধান্তের দিকে তাকাল। সিদ্ধান্ত হেসে বলল, “একদমই নয়।”

“তাহলে?”

“বন্ধুর মতো।”

“তাহলে আমরা যে গুঞ্জন শুনতে পাচ্ছি সেসব সত্যি হওয়ার সম্ভবনা আছে?”

“না থাকার কোনো কারণ আছে কি?”

সিদ্ধান্ত এমন পাল্টা জবাবের কারণে সাংবাদিক নিজেই ভরকে গেল। সিদ্ধান্ত হাসল। নির্বা ওর কান্ড দেখে মিটিমিটি হাসছে। ছেলেটার এই পাওয়ারের জন্যেই যত সফলতা।
“যদি দর্শক চায় তবে সিদ্ধান্ত আর নির্বা বিয়ে ও করতে পারে। তবে আমাদের বিয়ে থেকে শুরু করে দশ পনেরো জেনারেশনের খরচ দর্শকদের ই দিতে হবে। কি,তারা কি রাজি? তবে আমাদের ও সমস্যা নেই।”

সিদ্ধান্ত’র এমন জোকস শুনে সবাই হাসতে লাগল। ফের এই বিষয়ে বিশেষ কিছু না বলে নিজেদের গান নিয়ে জানাল তারা। তবু সাংবাদিকরা পিছুই ছাড়ছিল না। এক পর্যায়ে নির্বাকে টেনে নিয়ে বের হলো সিদ্ধান্ত। গাড়িতে এসে রীতিমতো হাপাচ্ছে ওরা। নির্বা বেশ মজায় আছে। সে শুধু হেসে চলেছে আর ঝড় বইছে সিদ্ধান্ত’র উপর।

চলবে…..
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি