এক টুকরো মেঘ পর্ব-২৪+২৫

0
718

#এক_টুকরো_মেঘ ☁️
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::২৪

— দুইবার সুইসাইড করার চেষ্টা করলাম।। কিন্তু দেখ ,,,ভাগ্যের জোরে ঠিক তোকে জ্বালাতে বেঁচে ফিরে এলাম।। সরি রে তোর শেষ ইচ্ছেটা পূরন করতে পারলাম না।। মায়ের ঐঅশ্রু শীক্ত নয়নের দিকে তাকানোর সাহস অবধি আমার হয়নি।। তার দিকে তাকালে বারবার নিজেকে নিজের কাছে বড্ড স্বার্থপর লাগছিলো।।তবে তোকে একটা কথা দিচ্ছি,, আজকের পর থেকে আর কোনোদিন আমি তোকে জ্বালাবো না।।তোর সামনেও যাবো না।।কথা দিলাম।।(শুয়া থেকে উঠে বসে অরিশ)

যে মানুষটা আমাকে পাগলের মত ভালোবাসে,, আমার জন্য নিজের জীবনটা শেষ করতেও একবার ভাবে নি।।আজ সেই মানুষটি বলছে ,,আমাকে‌ জ্বালাবে না।। কিন্তু আমি যে এটা মেনে নিতে পারছি না।।আমি জানি,,, এটা অরিশের অভিমানের কথা।। যদি অভিমানের কথা না হতো তাহলে আমার চোখে চোখ রেখে কথাগুলো বলতো,,, কিন্তু তিনি তো অন্যদিকে ফিরে আছে।। আমাকে ছাড়া যে তিনি একপা চলতে পারে না।।আমি ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে অরিশের পাশে বসলাম।।কপালে থাকা ব্যান্ডজটা রক্তে লাল হয়ে গেছে।। আমি তার গালে হাত রেখে আমার দিকে ফিরিয়ে বললাম..

— বুঝে গেছি আমাকে এখন আপনার এক ফোঁটাও দরকার নেই।। কিন্তু আমার যে ,, এই আপনিময় তুমি টাকে খুব করে দরকার ।।আমি তো আপনাকে রাগের মাথায় অনেকগুলো কথা বলেছি ,,তখন তো আপনি এমন কিছু করেন নি।।আর সেদিনের সামান্য একটু কথায় এভাবে আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভেবে নিলেন।।আমি যে আপনাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।।

আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই আমার হাত দুটো নিজের গাল থেকে সরিয়ে ,, দুই বাহু চেপে ধরে ঝাকিয়ে বলতে লাগলেন…

— হাসালে আমাকে ।।আমি বাঁচি কিংবা মরি তাঁতে তোর কিছুই যায় আসবে না।।এতোদিন যেমন যায় আসে নি,, আই হোপ এখনও যায় আসবে না।। আর কখনো আমার আমার সামনে আসবি না,, যা এখান থেকে।।

প্রথম কথাগুলো শান্তশিষ্ট ভাবে বললেও শেষের কথাগুলো এক প্রকার চেঁচিয়ে বলে ,, একটা ধাক্কা দিয়ে আবার বেডে শুয়ে পড়লো।।ধাক্কাটা ততো একটা জোরে ছিলো না।।কিন্তু গ্ৰাম্য সাধারণ হসপিটাল হওয়ায় ,, কক্ষ গুলো খুব ছোট ছোট।।তাই দু কদম পিছিয়ে গিয়ে দেয়ালের সাথে লেগে মুখ থেকে আহহহ বেরিয়ে গেল।।রক্ত বের না হলেও কালচে দাগ পড়েছে।। না চাইতেও হাতটা আপনা আপনি মাথায় চলে গেল।। চোখের কোনে জমে গেলো নোনা জল।। ঝাঁপসা হয়ে এলো চোখ ।। চোখের পলক ফেলার সাথে সাথে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো দুফোটা ।।
একটু সময় অরিশ মুখ ফিরিয়ে থাকলেও ,, কষ্ট বুকের মাঝে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলো।। আমার মুখ থেকে আহহহ শব্দটা শুনে পেছনে ফিরে ,, তাড়াহুড়ো করে ছুটে এগিয়ে আসতে নিলেই ,, হাতে থাকা স্যালাইনের ক্যানেলটা একটু নড়ে রক্ত বের হয়ে গেল।। সাথে সাথে স্যালাইনে রক্ত উঠলেই ,,টান দিয়ে হাত থেকে ক্যানেলটা বের করে করলো।। পেছন থেকে সামনের দিকে ঘুরিয়ে কপালের হাত রাখতেই আঁতকে উঠলাম আমি।। টেনে বেডে বসিয়ে দিয়ে ,, টেবিলের উপর থাকা বক্সটা বের করে খুব যত্ন করে মলম লাগিয়ে দিলো।।মাঝে মাঝে ফু দিয়ে ব্যাথা কমিয়ে দিচ্ছি।।তার চোখে আমি আমার জন্য শুধু ভালোবাসা খুঁজে পাচ্ছিলাম,, ঘৃনা না।।আমি অরিশের হাতটা কপাল থেকে সরিয়ে দিয়ে অভিমানী সুরে বললাম…

— যদি তুমি মারা গেলে আমি খুশি হই ,,তাহলে তো আমার আঘাতে তোমার খুশি হওয়ার কথা,, কষ্ট পাচ্ছ কেন??

আর কিছু বলার আগেই টান দিয়ে আমার মাথাটা তার বুকে চেপে ধরলো।। এতোক্ষণে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলাম আমি।।এক নিমেষেই আমি আমার সব প্রশ্নের উত্তর যেন পেয়ে গেলাম।। কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে,, একজনের বেডে মধ্যে অর্ধেকটা জায়গা ছেড়ে আলতো হাতে আমাকে শুইয়ে দিয়ে নিজেও আমার পাশে শুয়ে,, আস্টপিস্টে ঝরিয়ে ধরে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো।।প্রথমে দম বন্ধ হয়ে আসলেই পরক্ষনে আমি তাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লাম।।আজ শান্তির ঘুম ঘুমাবো ।।কখনো রাতে স্লিপিং পিল খেয়ে কখনো না ঘুমিয়ে কাটিয়েছি তার হিসেব নেই।।

_______________________

সূর্যের আলো ছড়িয়ে গেছে দিগন্তর থেকে দিগন্তর।। যার আলো কেবিনের ভেতরে এসেও পৌঁছেছে।। সাথে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে শোনা যাচ্ছে।। গ্ৰামের নিত্ত্বদিনের একটা পরিবেশ।। সাথে যোগ হয়েছে বাহিরের ঠান্ডা হাওয়া।।যা এসে শরীরের লোম খাড়া হয়ে যাচ্ছে।। পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালাম আমি।চোখ খুলতেই চোখ জোড়া আঁটকে গেল অরিশ মুখের মধ্যে।।এখনো আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।।তার কান্ড দেখে মুচকি হাসি দিলাম।। রোদে এসে মুখ পড়ছে যাতে তার চোখজোড়াও পিটপিট করছে।। সাথে মাঝে মাঝে কপালটাও কুঁচকে যাচ্ছে।।আমি হাত দিয়ে রোদ আড়াল করলাম।। জানালা থাকলেও ,, তার থাই তো দূরে থাক একটা গ্ৰিল অবধি নেই ।। চোর এসে সব এক নিমিষেই চুরি করে নিয়ে যেতে পারবে ।। হঠাৎ চোখ পড়লো অরিশের মুখের দিকে।। কোথাও একটা পড়েছিলাম,, ঘুমন্ত মানুষের মুখ দেখতে নেই,, তাতে মায়া বাড়ে।। কিন্তু আমার যে তাকে শুধু প্রান ভরে দেখতে নয় ,, ছুঁতেও ইচ্ছে করছে।।ঠিক আগের মতো।। যখন তিনি আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়তো ,, তখন যেভাবে চুমু খেয়ে ছুতাম ঠিক তেমনি।। নিজের ইচ্ছেটাকে আর দমিয়ে রাখতে পারলাম না ঠোঁট দুটি ছুঁইয়ে দিয়ে,,,ব্যান্ডেজের উপরে।।ওমনি তিনি একটু নড়েচড়ে আবার শুয়ে পড়লো ,, হাতের বাঁধন একটু হালকা হতে উঠে আসতে নিলে টান দিয়ে তার বুকে উপর ফেলে দিলো।। এলোমেলো হয়ে যাওয়া চুলগুলো সোজা তার মুখে ।।একহাতে চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে অন্যহাতে কোমর আঁকড়ে ধরে আদুরে গলায় বলল….

— এতোক্ষণ তো ঘুমের ঘোরে আমার পুরুষত্বতা হনন করতে চেয়েছিলি।। এবার যদি আমি একটু করি তাহলে কি খুব বেশি কিছু যায় আসবে!!

লজ্জায় মুখ গুজলাম তার বুকে ।। তিনি খুব শক্ত হাতে আমায় জরিয়ে ধরলেন।।

— তোদের ঘুম ভেঙ্গেছে।।আমরা এ..!!আমি কিছু দেখি নি।।(রুমে ঢুকতে ঢুকতে আরশি)

আরশি কথা শুনে আমি তাড়াতাড়ি উঠে জামা কাপড় ঠিক করে ওর দিকে তাকালাম।।বেচারী এখনো অন্যদিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে।।সারারাত আমি অরিশ ভাইয়া কাছে ছিলাম ,, তাই সবাই বাড়িতে চলে গেছে ।। সেটা আমার অজানা ছিলো।।এখন সবাই এসেছে ,, অরিশকে দেখতে ।। অবশ্য না আসলেও চলতো ,, ৩ টের দিকে তাকেও রিলিজ করে দেয়া হবে।।তাই আমি আর দেরি না করে
আরশির সাথে বাড়ি চলে এলাম।।

_______________________

আমার কোলে মাথা রেখে ফোনে ভিডিও গেমস খেলছে আর স্যুপ খাচ্ছে।।খাচ্ছে বললে ভুল হবে,, আমি নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছি আর তিনি সামান্য একটু একটু মুখে তুলে খাচ্ছে।। বাড়িতে আসার পর থেকে আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে।। সাড়ে ৫ টার দিকে এক বাটি স্যুপ আর ২ পিস ডিম নিয়ে এসেছি তাকে খাইয়ে দিতে ।। কিন্তু সে তো সেই ।।এখন আটটার কাছাকাছি।।যেমন ডিম তেমন ।।স্যুপ একটু শেষ হয়েছে।। খাইয়ে দিতাম না ,, ডাক্তার কড়া ডোজের মেডিসিন প্রেসক্রাইব করেছে।।খালি পেটে সেগুলো খেলে অসুস্থ হয়ে পড়বে।।সাথে কিছু স্লিপিং পিল আছে ।। খেলে সকালের আগে ঘুম ভাঙবে না।। তাই বাধ্য হয়ে খাইয়ে দিচ্ছি।।
বেশ খানিকক্ষণ লাগিয়ে বাঁকি স্যুপটুকু শেষ করলো।। আমি রাতের মেডিসিন গুলো খাইয়ে দিলাম ,, অরিশের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।।অনেকক্ষন পর বুঝতে পারলাম ঘুমিয়ে পড়েছে তাই আলতো হাতে মাথাটা তুলে বালিশে রেখে ,,পাশে ভাঁজ করে রাখা নকশিকাঁথাটা এনে অরিশের গায়ে পেঁচিয়ে দিলাম।। তারপর রুমের লাইট টা অফ করে দরজাটা একটু ভিড়িয়ে দিয়ে ছাদের যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম।। ছাদে আড্ডার মজলিস বসেছে।। একটু আগে আরশি আমাকে ডেকে গেছে ।। কিন্তু আমি যেতে পারিনি।।কেন ডেকেছে জানা নেই।।

গরম গরম পকোড়া খাচ্ছি আমি।। একটু দূরে বঁটি দিয়ে আমের ছোলকা ফেলছে রাফি ।। ছোলকা ফেলার দায়িত্ব টা অবশ্য রাফির ছিলোনা সামিরার ছিলো ।।তিনি হাত কেটে বসে আছে ,, তার কাজ রাফি করে দিচ্ছে।। আর আমগুলো ফারহান পেরেছে আর আরশি নিচে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কুড়িয়ে এনেছে।।

২ টুকরো আম মুখে দিতে গেলেই কেউ হাতটা টেনে তার মুখের মধ্যে পুড়ে নিয়ে ।।রাগ আর বিরক্তি দুটো নিয়েই পাশে তাকাতেই অরিশকে দেখতে পেলাম।। দাঁত কেলিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।।যা দেখে আমার পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে।। কিন্তু একটু আগে তো আমি তাকে ঘুম পাড়িয়ে এলাম।।আমার ভাবনার মাঝেই হাত বাড়িয়ে আম মাখানো বাটিটা হাতে নিয়ে ,,, পুরোটা একা খেয়ে নিলো ।। নিচে পড়ে থাকা আমের মিষ্টি রসও ছাড়লো না ,, ডকডক করে খেয়ে ফেললো ।। তারপর আরশির ওরনার হাত মুছে বাটিটা সামিরার হাতে ধরিয়ে দিয়ে আমার কাঁধে মাথা রাখলো।।বেচাবী সামিরা এক ধ্যানে বাটিটার দিকে তাকিয়ে আছে ভেবেছিলো ,, জীবনে প্রথমবার লবন ,, মরিচ দিয়ে আম খাবে ।। কিন্তু তার ইচ্ছেটা ইচ্ছেই বয়ে গেল।।এক টুকরো কেউ খেতে পারলো না,, সবে মাত্র টেস্ট করতে আমাকে দেওয়া হয়েছিলো।।

— কি ভেবেছিলি তোরা হ্যা,, আমাকে স্লিপিং পিল খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে রেখে ।।এখানে এসে মজা করে আম বানিয়ে খাবি ।। আমি থাকলে তোদের ভাগ্যেয় কম পড়তো তাই না।। তাই এবার কারো ভাগ্যে জুটলো না।।

বলেই আবার হাসিতে ফেটে পড়লো ।।মেজাজটা আরো বিগড়ে গেলো।। হাতের কাছে থাকা মরিচ গুঁড়োর বাটিটা থেকে কিছু মরিচ নিয়ে মুখে পুড়ে দিলাম।। প্রথমে একটু ভালো লাগলেও পরক্ষনে অরিশের পাগলামি দেখে অস্থির হয়ে পড়লাম ।। পানি চিনি মিষ্টি খাইয়াতেও কমার নাম নিচ্ছে না।।

চলবে..💞💞

#এক_টুকরো_মেঘ ☁️
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::২৫

অরিশের এই ধরনের অবস্থা দেখে ভয়ে থমকে গেলাম আমি।।বুকের ভেতরে কেমন একটা অস্তির অস্তিত করে উঠলো।। চোখজোড়া লাল টকটক করছে ,,, যখন তখন পানি চুপসে পড়বে ।। নাকের ডগা লাল হয়ে গেছে,, সাথে গাল,, ঠোঁটজোড়া ঝালে লাল হয়ে,, কাঁপছে ।। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।।তখন রাগের মাথায় আর যাই হোক আমার একদম এমন করা উচিত হয়নি।।আমি অরিশকে আমার দিকে ফিরিয়ে চোখে মুখে ফু দিতে লাগলো।।তার এই ভয়ঙ্কর অবস্থা দেখে চোখের বাঁধ মানছে না।।ক্ষনে ক্ষনে কুপিয়ে কুপিয়ে কেঁদে চলেছি।।শরীরটা কাঁপছে ।। ইচ্ছে করছে ,, যেভাবেই হোক অরিশকে এই অবস্থা বের করে আনতে হবে।।

— বিশ্বাস করো আমি ইচ্ছে করে এমনটা করিনি ।। কিভাবে হয়ে গেলো সত্যিই বুঝতে পারি নি।।তোমার বিহেবে বিরক্তি হয়ে ,, কি করেছি নিজেই জানিনা।।(কাঁপা কাঁপা গলায় আমি)

আর কিছু বলার আগেই আমাকে টান মেরে তার কোলে বসিয়ে দিয়ে ,, আমার ঠোঁটের ভাজে নিজের ঠোঁট দুটি বসিয়ে দিল।। ঘটনাচক্রে আমি তো স্তব্দ হয়ে চোখ বড় বড় তাকিয়ে আছি।।আমি তার বুকে কিল ঘুষি মারছি,, কিন্তু থামার নামই নিচ্ছে না।।বরং আরো চেপে ধরছে।।প্রথমে ছাড়াতে চাইলে পড়ে আর ছাড়ালাম না।। হাত দুটি আস্তে অরিশের চুলের বাজে ঢুকিয়ে আমিও তার ডাকে সারা দিতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।। সবাই অরিশের জন্য আতঙ্ক থামিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে,, পরক্ষনে আবার অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে নিলো।।

ঠোঁট দুটি যেন ঝালে লাল হয়ে গেছে।। হাত দিয়ে চিনির বক্সটা এনে,, এতো গুলো চিনি মুখে পুড়ে নিলাম।।সবার দিকে তাকাতে দেখলাম,, সবাই আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে।। ইশারায় জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে।। কেউ কিছু না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।। এতোক্ষণে বুঝতে পারলাম ,, ওরা কেন হাসছে।। যেটা আমার মাথা থেকে একদম রেড়িয়ে গিয়েছিল।। তখনকার দৃশ্যটা মনে পড়তে লজ্জায় লাল হয়ে উঠলাম আমি।।কারো দিকে তাকাতে অবধি পারছি না।।যদি আমরা ছাদে বসে না থাকতাম তাহলে হয়তো মাটি খুঁড়ে ভেতরে ঢুকে যেতাম।। বেশকিছু ওভাবেই কেটে গেলো,, কিন্তু ওরা এখনো স্বাভাবিক হচ্ছে না।। শুধু মাথা নিচু করে হাসছে ,, অরিশের ভয়ে হয়তো মুখ ফুটে কিছু বলছে না।।আমি আর সেখানে না দাঁড়িয়ে নিচে চলে এলাম।।খেতে গেলে হয়তো আবার ওদের মুখ দেখতে হবে তাই না খেয়েই রুমের দিকে পা বাড়ালাম।। দরজাটা কোনো রকম ভিড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।।

____________________

এতো সকালে ঘুম ভাঙ্গার কোনো কারন খুজে পেলাম না।। অনেকক্ষন বেডে শুয়ে এপাশ ওপাশ করে বেরিয়ে এলাম রুম থেকে।। চারদিকে এখনো অন্ধকার বিরাজ করছে ।। বেশ কিছুক্ষণ আগে ফজরের আযান দিয়েছে ।। কিন্তু সূর্য মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলছে।। কালকে রাতে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছিলো।।সাথে মেঘ ডাকাডাকি ,, বাজ পরা তো ছিলোই।। এখানও আকাশের থাকা মেঘগুলো কাটেনি নি।। তবে বৃষ্টি থেমেছে।‌। রাস্তাঘাট পিচ্ছিল হয়ে গেছে,, হঠাৎ আমার চোখ গিয়ে আটকে গেল বকুল গাছ তলায়।।সেখানে অসংখ্য ফুল পড়ে আছে।। যেখানে গাছে থোকায় থোকায় ছিল ফুলের সমারোহ।। সেখানে ফুল দেখা ভাড়।।হয়তো গতরাতর ঝড়ে এই অবস্থা হয়েছে।। তাই ধীর পায়ে হেঁটে বকুল গাছের তলায় গিয়ে দাঁড়ালাম।। গাছের পাতায় থাকা পানিগুলো ঝরে ঝরে পড়ছে।। নিচের অনেক বকুল ফুল পড়ে আছে।।আমি একটু ঝুঁকে আলতো হাতে ফুলগুলোর তুলে নিলাম।।যাতে হাতের তালু কিংবা ফুলগুলো কাঁদা না লাগে।। কিন্তু দুর্ভাগ্যবসত সব ফুলেই কাদা লেগে আছে।। দুই হাত ভর্তি করে ফুলগুলো নিয়ে পুকুরপাড়ে চলে এলাম।। সেখানে বসে ফুলগুলো পুকুরের পানিতে ঝেড়ে ঝেড়ে ধুয়ে নিলাম। হঠাৎ আমার পাশে কারো উপস্থিতি পেয়ে তাকিয়ে অরিশকে দেখতে পেলাম।। কিছু বুঝে‌ উঠার আগে আমার মাথায় ঠান্ডা কিছু পড়িয়ে দিলো।।হাত দিয়ে ধরতে গিয়েও থেমে গেলাম।।কারন হাত ভর্তি করে বকুল ফুল গুলো আছে ।।আর তার থেকে এখন পানি পড়ছে।। তিনি তার হাত এগিয়ে দিয়ে আলতো হাতে ফুলগুলোর তার হাতে নিয়ে নিলেন ।।আমিও দিয়ে,,, নিজের মাথায় হাত দিলাম।।হাত দিতেই অবাক হয়ে গেলাম।। অনেকগুলো বকুল ফুল দিয়ে মালা বানানো ,, আর তার মাঝে একটা গোলাপগুলো ।।যেগুলো আমি হাত দিয়ে ছুয়ে অনুভব করেছি ।। নিজের মাথায় এই মাথাটা পড়ে আমাকে কি সত্যিই সুন্দর লাগছে,, নাকি ভালো লাগছে না ।। দোটানায় পড়ে মাথা নিচু করে পুকুরের দিকে আছি।।
হয়তো অরিশ আমার মনের কথাটা বুঝতে পেরেছে,, তাই বকুল ফুলের মালাটা পকেটে রেখে ফোনটা বের করে কয়েকটা ছবি তুলে আমাকে দেখালো আর বললো…

— আমার তরীরানী যেটা পড়বে , সেটাতে শুধু তাকে ভালো লাগবে নয়।।বরং বেস্ট লাগবে।।ঠিক তেমনি এটাতেই বেস্ট লাগছে।।

অরিশের কথায় লজ্জায় পড়ে গেলাম আমি।।ছবিতে আমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।।আমাকে এভাবে লজ্জা পেতে দেখে প্রিন্ট করে আবার বললো…

— জানো তোমার এই লজ্জায় রাঙা মুখটা দেখলে ইচ্ছেতো করে টুস করতে ধরে ঠুস করে খেয়ে ফেলি!!

— আমি কি খাওয়ার জিনিস যে তুমি আমাকে খেয়ে ফেলবে !! খেতে হলে অন্য কিছু খাও তবুও আমাকে ছাড়ো !!( লজ্জা মাখা চাওনি দিয়ে আমি)

— একদম ঠিক ।।আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে ,,তুই খাওয়ার জিনিস না।।খেতে হলে অন্য কিছু খেতে হবে ।। আর তুই তো আদর করার জিনিস ।। যতো ইচ্ছা আদর করা যায়।।তাহলে আমার কাজ শুরু করি !!

বলেই টেনে কোলে তুলে নিয়ে আস্তে আস্তে হাঁটা দিলো সামনের দিকে।। আজ আমি ছুটতে চাইলাম না বরং অরিশের গলাটা খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,, তার বুকে আমার লজ্জামাখা মুখটা গুজলাম।।আজকে কোলে বসেই আমি আজ গ্ৰামবাংলা দেখবো।। কালকেই তো চলে যাবো।।জানি না আবার কবে গ্ৰামে আসবো।।কবে আবার এমন একটা ভালোবাসার মুহুর্ত কাটাবো প্রিয় মানুষটির সাথে ।।

_________________________

সময় কখনো কারো জন্য অপেক্ষা করে না।। এরজন্যই হয়তো বলে,,, Time and tide Wait for none!! সময় এবং স্রোত কখনো কারো জন্য অপেক্ষা করে না।।সে ছুটে চলে তার নিজেস্ব গতিতে।। গ্ৰাম থেকে চলে এসেছি তাও মাস পেড়িয়ে গেছে।। বদলে গেছে আমাদের সবার জীবন ।। এখন সামিরা আর রাফি গ্ৰামেই থাকে ।। সামিরার বাবা মা ২ দিন পর আবার লন্ডনে চলে যাবে।।তাই এখন তার ভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেছে ।।মানে ফারহানদের বাড়ি।।হাজার রকমের আত্মীয়তা থাকার সত্ত্বেও কেমন একটা মনমালিন্য ফারহানদের পরিবারের সাথে।।সেটা ফারহান-আরশির সম্পর্কটার কারনে।।হয়তো তার জনই সামিরার বিয়েতে তার মামা আসেনি।। আমাদের সকলের বিশ্বাস একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে ।।
এদিকে ফারহান আর আরশি চুটিয়ে প্রেম করছে।। আরশির ভাব দেখলেই তা বোঝা যায়।।রাত বিরেতে ছাদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলা ,, একসাথে ঘুড়তে যাওয়া ।।আরো কতো কি?? সবকিছুর মাঝে একলা পড়ে গেছি আমি ।।। অফিসের কাজের ব্যস্ততার মাঝে আমাকে সময় দেওয়া ওর পক্ষে সম্ভব হচ্ছেনা।। একটু ঘুড়তে যাওয়া তো দূরে থাক কথা বলাটাও তেমন ভাবে হয়ে ওঠে না।। মাত্র ৩০ দিনে এতোটা দূরে এসেছি যে ,, ভাবতে পারিনি।।বাড়িতে ফিরলে তার ক্লান্তিমাখা মুখটা দেখলে সব ক্লান্তি যেন এক নিমেষেই দূর হয়ে যায়।

।লন্ডনে ফেরা হবে কিনা জানিনা ,, তাই আমিও এখানে কাজ শুরু করে দিয়েছি।। আজকে একটা প্রোগ্ৰাম আছে।। প্রোগ্ৰামটা নেওয়ার ইচ্ছে ছিলো না ,, কিন্তু নিজের দেশের মানুষের কথা ভেবে না করতে পারি নি।। শাওয়ার নিয়ে চুলগুলো ভালোভাবে শুকিয়ে একপাশে
বেনী করে নিলাম।। আজকে লাল সবুজ রঙের একটা চুড়িদার পড়েছি ।। সেজেছি বলতে ,, হালকা ফেইস পাউডার ,, আর লিপিস্টিক লাগিয়েছি ।। হাতে একটা পার্স ব্যাগ আর হালকা উঁচু হিল।।‌ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৩.১৮ বাজে ।। তাই তাড়াতাড়ি নিচে নেমে ড্রাইনিং টেবিলের খেতে বসতেই আমার চোখ চড়কগাছ ।। আমার সামনের চেয়ারে বসে আছে ফারহান আর পাশে
আরশি।। কিছুক্ষণ ওদের দিকে ফেলফেল চোখে তাকিয়ে থাকলাম ।। তারপর চিংড়ি মাছের মালাই কারি প্লেটে তুলে নিয়ে ওদের প্রশ্ন করলাম।।

— সূর্যটা আজকে কোন দিক দিয়ে উঠেছে বুঝতে পারছি না।। নিজেরা প্রেম করা রেখে ,, আজ আমাদের বাড়িতে।। ( একটু থেমে আবার আমি) যাই বলিস আজকে কিন্তু তোদের একদম সময় দিতে পারবো না,, একটা প্রোগ্ৰাম আছে ,, সেখানে এটেন্ট করতে যাচ্ছি।।

— তোর তো প্রোগ্ৰাম সন্ধ্যা ৭ টায় ।। এখন ৪ টাও বাজে নি ।। এতো তাড়াতাড়ি ওখানে গিয়ে কি করবি!!(রান্না ঘর থেকে বের হয়ে আসতে আসতে তামান্না )

— কিযে বলো না তুমি।। আমি কি কখনো ওখানে গিয়েছিলাম নাকি ?? চেনা নেই জানা নেই অচেনা একটা জায়গা একটু আগে গেলে কি এমন ক্ষতি হবে শুনি।। তখন যদি ঠিক সময় পৌঁছাতে না পারি ,, কিহবে ভাবতে পারছো।।(খেতে খেতে আমি)

— আমি বলি তাহলে তোর যাওয়ার দরকার নেই।।

— অদ্ভুত কথা বলো তো ?! ওখানে হয়তো সব এরেন্ধ করা হয়ে গেছে ।। এখন তুমি বলছো যাবো না।।আজব!!(আমি)

— আন্টি আপনি প্লিজ এইসব নিয়ে চিন্তা করবেন না আমি আর আরশি তো তরীর সাথে যাবো।।‌(তামান্নাকে থামিয়ে দিয়ে ফারহান)

— তোরা যাবি আগে বলিসনি তো।।(কৌতূহল নিয়ে আমি)

— আরশি কখনো তরীর প্রোগ্ৰাম দেখেনি ।। আর তরী আমি ছাড়া কখনো কোনো প্রোগ্ৰাম করেনি ‌।আর অরিশ ভাইয়াও নেই ।।তাই ভাবলাম আমিও যাই।।

তারপর খাওয়া শেষ করে বেরিয়ে পড়লাম সেখানকার উদ্দেশ্য ।। আজ আরো একটা প্রোগ্ৰামে যাবো ,, গান গাইবো ।। হাজার হাজার লোকের ভালোবাসা ,, বাহবা ,,আনন্দ কুড়াবো কিন্তু আমার কাছে তুমি নামক প্রিয়টা রইলো না।।কোনো খারাপ লাগা নেই ।।জমে আছে একটু অভিমান।। হয়তো আজও তোমার অফিসে প্রচুর কাজের চাপ ।। তবে একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে ।।

চলবে …💞💞