এক ফালি সুখ পর্ব-১১+১২

0
267

#এক_ফালি_সুখ🌼 |১১|
#তাসনিম_জাহান_মৌরিন
_”ভালো না বলতে?”
তন্নির কথার প্রতিত্তরে ছোট করে এইটুকুই বললো মৌরিন। তন্নি ওর দিকে এগিয়ে এসে বলে,
_”বুঝতেই তো পারছো, তোমার বাড়ির দিকে যাওয়ার গলিটাতে অনেক বখাটে ছেলেরা বসে থাকে। আর এই সময়ে তুমি রিক্সাও পাবেনা ঐদিকে যাওয়ার জন্য, রাস্তাটা একদম ভুতুড়ে ভুতুড়ে লাগে। আমি গিয়েছিলাম দু তিনবার,তাই বলছি।”

মৌরিন সামান্য হেসে বলে,
_”সমস্যা নেই আপু,আমি ঠিক চলে যেতে পারবো।”

_”বলছো তো? তুমি চাইলে আমি তোমাকে ড্রপ করে দিতে পারি,সমস্যা হবেনা কোনো।”

_”তুমি যে আমায় নিয়ে ভাবছো তার জন্য ধন্যবাদ। তবে আমি একাই যেতে পারবো, এমন রাস্তা দিয়ে চলার অভ্যাস আমার আগে থেকেই আছে।”

তূর্য ফোনের দিকে নিজর রেখেই বলে উঠলো,
_”ওভারকনফিডেন্স থাকা ভালো নয়।”

ঠোঁটজোড়া প্রশস্ত করে হাসলো মৌরিন। আড়চোখে সেদিকে তাকালো তূর্য, মৌরিন তার দিকে না তাকিয়েই বললো,
_”প্রত্যেক মানুষই কোনো না কোনো বিষয়ে ওভারকনফিডেন্ট থাকে। কিছু কিছু বিষয়ে ওভারকনফিডেন্ট থাকাই আমাদের বিপদ থেকে বাঁচায়, তবে অন্যান্য বিষয়ে ওভারকনফিডেন্ট থাকা মানুষের জীবন ধ্বংস করে দেয়। আমার ওভারকনফিডেন্স আমার ক্ষতি করবে নাকি উপকার করবে সেটা আমি জানি। বাকিদের নিজেদের টা ভেবে দেখা উচিৎ।”

কপাল কুঁচকে মৌরিন এর দিকে তাকিয়ে রইলো তূর্য। মৌরিন সেদিকে দৃষ্টি না দিয়ে তন্নির উদ্দেশ্যে বললো,
_”আমি আসছি আপু, আর রাতুল ভাইয়াও বোধ হয় কালকের মধ্যে ফিরে আসবে।”

_”ওকে,এজ ইয়োর উইশ।”
রুবেল এর কাছে আরো একবার বলে অফিস থেকে বেরিয়ে এলো মৌরিন। তূর্য সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে সেদিকে আঙুল উঁচিয়ে বলে,
_”ও কি ইনডিরেক্টলি আমাকে বলে গেলো কথাটা?”

_”বলতেই পারে।”
কথাটা বলে তন্নি তূর্যর পাশের চেয়ারে এসে বসে পরলো।
তূর্য খানিকটা রাগী গলায় রুবেল এর দিকে তাকিয়ে বললো,
_”ঐ মেয়ে আমাকে ইনসাল্ট করলো ভাইয়া,আপনি বুঝতে পারছেন? আমাকে জ্ঞান দিয়ে গেলো?”

রুবেল তূর্যর কথায় তেমন পাত্তা না দিয়ে হেসে বললো,
_”ভুল কিছুতো আর বলেনি। আর আমি এটাও খেয়াল করেছি,তুই মৌরিন এর সাথে সবসময় খারাপ আচরণ করার চেষ্টা করিস। মেয়েটা খুব ইন্টেলিজেন্ট, তাই আর তুই পেরে উঠছিস না ওর সঙ্গে।”

কথাটা বলে আবারো হাসতে লাগলো রুবেল, তন্নিও তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাসতে হাসতে বললো,
_”ঠিকই বলেছেন রুবেল ভাই। আর হ্যা, তূর্যর জন্য কিন্তু এমনই একটা মেয়ে প্রয়োজন। তাহলেই ওর জেদগুলো কমবে।”

তূর্য কটমট চোখে তাকায় তন্নির দিকে। তন্নি তা দেখে বলে,
_”ভুল কিছুই বলিনি আমি। আমি শুধু বলেছি মৌরিন এর মতো মেয়ে, ওর কথা কিন্তু বলিনি।”

প্রতিত্তরে কিছু বললোনা তূর্য। কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে পাশ থেকে নিজের হেলমেট টা পরে নিলো। এরপর বাইকের চাবিটা হাতে নিয়ে বললো,
_”রুবেল ভাই,আমি চললাম।”

_”এখন ই যাচ্ছিস? একসাথে যেতে পারতাম তো।” (তন্নি)

_”তুই রাতুল ভাইয়ার জন্য এখানে বসেই ওয়েট কর। সে সকালে বেলা এসে তোকে নিয়ে যাবে।”

বেরিয়ে গেলো তূর্য। রুবেল জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তন্নির দিকে তাকিয়ে বললো,
_”তন্নি, তূর্য এটা কি বলে গেলো রে?”

তন্নি মাথা চুলকে আমতাআমতা করে বললো,
_”ও কিছুনা ভাইয়া,আপনি ওর কথা কানে তুলছেন কেন?”

_______
_”আমি লাস্ট বারের মতো দাঁড়াতে বলছি তোকে, এবার কিন্তু কান ধরে নিয়ে আসবো।”

নির্ঝর এর কথায় জ্যোতি থেমে যায়। পিছনে ঘুরে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে,
_”আমি কি তোমাকে ভয় পাই নাকি? আর আমাকে ডাকছো কেন? আমার আর কি প্রয়োজন?”

নির্ঝর বুকে হাত গুঁজেই এগিয়ে আসে জ্যোতির দিকে। একহাতে তার কপালে টোকা দিয়ে বলে,
_”কি হয়েছে বল তো, এমন অদ্ভুত বিহেভ করছিস কেন আমার সঙ্গে?”

কিছু বললোনা জ্যোতি। নির্ঝর কিছুক্ষন থেমে আবারো বললো,
_”কোথায় আমায় একটু হেল্প করবি, তা না নিজেই রেগে বসে আছিস?”

_”আমি আর কি হেল্প করবো তোমাকে?”

_”এই যেমন মেয়েদের মন কি করে জয় করা যায়। পুরো তিনদিন ধরে দিনরাত দিয়াকে পটানোর চেষ্টা করছি, আর সেই মেয়ে কিনা আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না। কিছু টিপস..”

নির্ঝর এর কথা শেষ না হতেই জ্যোতি আরো রেগে গিয়ে বলে,
_”পারবোনা আমি কোনো টিপস দিতে। তোমার যে এত অবনতি হয়েছে সেটাতো ফুফুকে জানাতে হবে আমার, শেষ পর্যন্ত তার ছেলে কিনা দিয়ার মতো নির্লজ্জ মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।”

আবারো উল্টোদিক ঘুরে হাটা শুরু করলো জ্যোতি। তার কথাটা নির্ঝর এর ঠিক পছন্দ হলোনা। সে আবারো জ্যোতির পিছনে হাটতে হাটতে বললো,
_”এই তুই কোন সাহসে দিয়াকে নির্লজ্জ বলছিস? ও ভীষণ স্মার্ট একটা মেয়ে। তোকে আমি দাঁড়াতে বলেছি জ্যোতি..”

_____
সেই শুনশান রাস্তা থেকেই হেটে যাচ্ছে মৌরিন। তার মধ্যে তেমন কোনো ভাবান্তর সেই, স্বাভাবিকভাবেই চলছে সে। কথাটা সত্যিই বলেছে, এমন রাস্তা দিয়ে হাটার অভ্যাস তার আগে থেকেই রয়েছে।
তবে তন্নির কথা সত্যি না হলেও ঘটলো অন্য এর ঘটনা। রাস্তায় আজ প্রকাশ্যে কোনো বখাটে ছেলে এখন পর্যন্ত দেখেনি মৌরিন। তবে তার সামনে পরলো একজন মুখোশধারী ব্যক্তি, যার নাম আরাফ।
দাঁত কিড়মিড় করে মৌরিন এর দিকে তাকিয়ে আছে আরাফ, রাগে ফুঁসছে সে। হঠাৎ এমন রাস্তার মাঝে তাকে দেখেও ভড়কালো না মৌরিন, এমন কিছুর জন্য যেন প্রস্তুত ছিলো সে। এভাবে বাবা মায়ের সামনে ছোট হয়েছে, এত সহজে নিশ্চই ছেড়ে দেবেনা মৌরিন কে।

আরাফকে দেখেও না দেখার ভঙ্গিতে চলে যেতে নিলো মৌরিন,তবে আরাফ তার পথ আটকে দিলো। মৌরিন শান্ত কণ্ঠে বললো,
_”পথ ছাড়ুন।”

_”ছাড়বো না, কি করবে করো। খুব সাহস তাইনা তোমার? এবার আমিও দেখবো, তুমি কি করে পালাতে পারো।”

_”শেষবার বলছি, হাতটা সরিয়ে নিন।”

আরাফ এবার আরো বড় একটা কাজ করে বসলো, মৌরিন এর এক হাত শক্ত করে চেপে ধরে বললো,
_”আমিও বলছি, ছাড়বো না।”

মৌরিন একনজর হাতটার দিকে তাকালো,এরপর অগ্নিচোখে তাকালো আরাফের দিকে। এক ঝটকায় নিজের হাতটা ছাড়িয়ে ঠা*স করে চ’ড় মার’লো আরাফের গালে। আরাফ ঘুরে তার দিকে তাকাতে নিলেই মৌরিন একহাতে চেপে ধরলো তার শার্টের কলার,অন্যহাতে থাকা লাল রঙের পাউডার জাতীয় কিছু আরাফের চোখের উপর ছুড়ে মারতেই সেকেন্ড এর মধ্যে দুচোখ চেপে ধরে কাতরাতে শুরু করে আরাফ। বোঝা গেলো,ঐ পাউডার জতীয় বস্তুটি ছিলো মরিচের গুড়ো।

আরাফকে সামনে দেখেই নিজের নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য ব্যাগের ভিতর ছোট প্যাকেটে থাকা মরিচের গুড়ো বের করে হাতে রেখেছিল মৌরিন। এখন তার ই উপযুক্ত ব্যবহার করলো। আরাফের কলার চেপে ধরেই শান্ত কন্ঠে বলে,
_”আপনি ডাকটা খুব সম্মানের,আর তোমার প্রতি আমার বিন্দুমাত্র সম্মান অবশিষ্ট নেই। বলছিলে না, আমি কি করতে পারি? তাহলে যেনে রাখো মিস্টার আরাফ, আমি যা করতে পারি তার একভাগ ও এখনো তুমি দেখো নি। আমায় বাকিদের মতো দূর্বল ভেবে ভীষণ ভুল করলে।”

চোখে এতই জ্বালা করছে আরাফের,যে মৌরিন এর কথাগুলোও কানে নিতে চাইছেনা সে। তবে এখন এখানে থাকাটা যে তার জন্য সুখকর হবেনা,এটা বেশ ভালোই বুঝতে পারলো। তাই মৌরিন কলার চেপে ধরে রাখা হাতটা আলগা করতেই কোনোমতে পথ দেখে বাড়ির দিকে ছুটে পালালো সে।

তার দিকে দু সেকেন্ড তাকিয়ে নিজের হাতটা ঝেড়ে নিলো মৌরিন। উল্টোদিকে ফিরে তাকাতেই তার চোখ যায় কিছুটা ব্যাবধানে দাঁড়িয়ে থাকা একজন লোকের দিকে,পাশেই একটা বাইকও রয়েছে। মৌরিন সেদিকে তাকিয়ে বললো,
_”কে ওখানে?”

#চলবে?

#এক_ফালি_সুখ🌼 |১২|
#তাসনিম_জাহান_মৌরিন
আবছা আলোয় কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বাইকের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটিকে পরখ করে নিতে সক্ষম হয় মৌরিন। এটা আর কেউ নয়, তাকে এক মুহূর্তের জন্যও সহ্য না করতে পারা তূর্য। ভ্রুযুগল কিঞ্চিৎ কুঁচকে নিলো মৌরিন, তূর্যর বাড়ি এদিকে নয়। তাই এইসময় তার এখানে থাকারও কথা নয়।

চোর যখন চুরি করে ধরা পরে যায়,তখন তার মুখভঙ্গি আর বর্তমানে তূর্যর মুখভঙ্গির মাঝে একটু হলেও মিল রয়েছে। মৌরিন এর থেকে দ্বিতীয়বার কোনো প্রশ্ন না পেয়ে বুঝতে পারলো, মৌরিন তাকে চিনতে পেরেছে। এখন হয়তো প্রশ্ন করবে এখানে কি করছে?
এই রোডটা মেয়েদের জন্য কতটা ডেঞ্জারাস হতে পারে সেটা তূর্য নিজেই খুব ভালো করেই জানে। মৌরিন আত্মবিশ্বাস নিয়ে বেরিয়ে এলেও চিন্তা হচ্ছিল তূর্যর। কেন? সেটা জানা নেই। তাই ধীর গতিতে বাইক চালিয়ে মৌরিন এর পিছন পিছন আসছিলো সে। এতটুকু তূর্য নিজেও স্বিকার করতে বাধ্য,মৌরিন ভীষণ সাহসী মেয়ে। বাকিদের মতো নিজেকে দূর্বল মনে করেনা সে, তাই নিজেকে সামলে নেওয়ার ক্ষমতাও তার রয়েছে।
আরাফকে মৌরিন এর পথ আটকে দাড়াতে দেখে প্রথমে কিছুটা অবাক হয়েছিলো তূর্য, ভালো ঘরের ছেলেই তো মনে হচ্ছে তাকে। কিছুক্ষন পরে মনে হয়েছিল মৌরিন তাকে চেনে, বেশ আগ্রহ নিয়েই তূর্য দেখতে চাইছিল মৌরিন কি করে। তবে মৌরিন যা করলো এর জন্য সে খুব একটা প্রস্তুত ছিলোনা। তাই অবাক হয়ে কেবল তাকিয়ে ছিলো মৌরিন এর দিকে।

তূর্যর ধারণা বরাবরের মতো এবার ও ভুল প্রমাণিত হলো। মৌরিন তার থেকে চোখ সরিয়ে হাতব্যাগ এর চেইন টা খুলে পানির বোতলটা বের করলো, এরপর আবারো নিজের পথে হাটা শুরু করলো। এত অদ্ভুত কেন মেয়েটা? তার মনে কি কখনো কোনো প্রশ্ন আসে না? নিজে থেকে কখনো কোনো প্রশ্ন কেনো করেনা সে? তূর্যকে একবারের জন্যও জিজ্ঞেস করলোনা সে এখানে কি করছে?

এই ব্যবহারগুলো মাঝেমধ্যে অপমানের মনে হয় তূর্যের কাছে। মৌরিন কি তাকে ইগনোর করছে? যাকে দেখার জন্য মেয়েরা উৎসুক হয়ে থাকে সেই তূর্যকে দেখে সে এভাবে ইগনোর করতে পারে কি করে? নিজের ভাবনায় নিজেই ইতি টানে তূর্য, আজ তার অপমানবোধ হচ্ছেনা। তবে জানতে ইচ্ছে করছে মৌরিন এর এমন ব্যবহার এর কারণ।

বাইকে চেপে আবারো মৌরিন এর সঙ্গে যেতে লাগলো তূর্য, বাইক এতো আস্তে চালাচ্ছে যে কেউ বুঝতে পারবে ও কাউকে ফলো করছে। তবে মৌরিন যেহেতু একবার বুঝতেই পেরে গেছে,তখন আর লুকিয়েই বা লাভ কি? কয়েক মিনিট এভাবেই চললো, মৌরিন তার মতো হাটছে আর তূর্য ও তার প্রায় পাশেপাশেই বাইক নিয়ে চলছে। এবার আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলোনা তুর্য, বাইক থামিয়ে মৌরিন এর উদ্দেশ্যে বললো,
_”মৌরিন দাড়াও..”

থামলো মৌরিন,তবে পিছন ঘুরে তাকালো না। তূর্য বাইকটা নিয়ে এবার ঠিক মৌরিন এর অপর পাশে এসে থামলো। দুজনের মাঝে দূরত্ব অনেকটা, রাস্তার একপাশে মৌরিন আর অন্যপাশে তূর্য। মৌরিন নিজের হাতে থাকা পানির বোতলটা খুলে কিছুটা পানি খেয়ে বললো,
_”বলুন”

_”তুমি আমাকে দেখে কিছু বললেনা কেন?”

মৌরিন বোতলের মুখ আটকাতে আটকাতে বলে,
_”কী বলবো?”

তূর্য বলার মতো কিছু খুজে পেলো না। মৌরিন বোতলটা ব্যাগে রেখে মৃদু হাসলো। তূর্যের দিকে তাকিয়ে বললো,
_”আপনি যে আমায় ফলো করছিলেন এটা আমি আগেই ধারণা করেছিলাম,তাই খুব বেশি অবাক হইনি।”

তূর্য ঘাড়ে হাত ঘষে বলে,
_”আমি মোটেই তোমাকে ফলো করছিলাম না।”

মৌরিন আবারো স্মিত হেসে হাটা শুরু করলো। এই মেয়ে পালটা একটা প্রশ্ন ও করবে না! তূর্য ও কিছু না বলে ধীরেধীরে বাইক চালিয়ে মৌরিন এর পাশাপাশি চলতে লাগলো।
কয়েক কদম এগিয়ে থামলো মৌরিন,থামলো তূর্য ও। মৌরিন সামনের দিকে তাকিয়েই গম্ভীর গলায় বললো,
_”আমার জন্য নিজের সময় নষ্ট করার কোনো দরকার ছিলো না। সময়ের অনেক দাম আছে।”

_”তোমার কথা শুনতে হবে আমায়?”

_”কেন আমার সঙ্গে আসছেন সেটাও জানি। তাই বলছি, আমায় নিয়ে ভাবার প্রয়োজন নেই। আমি নিজেকে প্রটেক্ট করতে জানি।”

_”সবসময় ত্যাড়াভাবে কথা না বললে চলে না?”

_”ত্যাড়া বা সোজা কোনোভাবেই কথা না বললে আমার জন্য আরো বেশি ভালো হয়।”

কথাটা বলেই আবারো হাটা শুরু করলো মৌরিন। তূর্যও তার সঙ্গে এগিয়ে বললো,
_”ব্যাগে নিশ্চই কারিকরি মরিচের গুড়ো রেখে দাওনি তুমি। আর এখানে যতটা আলো দেখছো সামনে গিয়ে ততটাও আলো পাবেনা।”

মৌরিন স্মিত হেসে বলে,
_”তো কি হয়েছে,আমার তো অন্ধকার ভালোই লাগে।”

তূর্য তার দিকে তাকিয়ে বললো,
_”সামনে গিয়ে কোনো বিপদে পরলে তখন?”

_”নাটক সিনেমার মতো হিরো এসে আমাকে বাঁচাবে না এটুকু তো জানি। আর আল্লাহ আমায় সুস্থ সবল রেখেছেন এখনো, হাত পা সবই রয়েছে। যেকোনো বিপদ থেকে কি করে বেঁচে ফিরবো সেটা নিয়েও আমাকেই ভাবতে দিন। আপনাকে খামোখা মাথা ঘামাতে হবেনা এই নিয়ে।”

একনজর তূর্যের দিকে তাকিয়ে এবার বেশ দ্রুতই পা চালিয়ে বাড়ির দিকে চলে গেলো মৌরিন। তূর্য তবুও খানিকটা পথ ওর পিছনে এসেছিল, মুখ থেকে আর টু শব্দটি ও বের করেনি মৌরিন। তূর্যও কিছু বলেনি, এই মেয়ের সাথে কথায় টিকে থাকতে পারবেনা সে এটুকু অন্তত বোঝা হয়ে গেছে।

______
ছুটে এসে এবার জ্যোতির হাত টেনে ধরলো নির্ঝর। থেমে যেতে বাধ্য হলো জ্যোতি। পিছনে না ঘুরেই বললো,
_”হাতটা ছাড়ো,যেতে দাও আমাকে।”

নির্ঝর ওর হাত ধরে রেখেই সামনে এসে বলে,
_”যেখানে খুশি যা, কিন্তু দিয়াকে নিয়ে কোনো বাজে কথা বলবিনা।”

_”বাবাহ,তোমার খুব গায়ে লাগছে তাইনা?”

_”লাগবেই তো,আমার হবু বউকে নিয়ে কোনো বাজে কথা শুনবো না আমি।”

_”কে তোমার হবু বউ?”

_”কে আবার? দিয়া, আরে আজ মানছে না তো কি হয়েছে। আমি ঠিক ওকে মানিয়ে নেবো। তাই নিজের ফিউচার ভাবিকে সম্মান করতে শেখ।”

জ্যোতি কিছুটা নরম স্বরে বললো,
_”তুমি সত্যিই ওকে ভালোবাসো?”

_”তা নয়তো কি আমি মিথ্যে বলছি?”

_”তোমার সাথে ওকে একদম মানায় না এটা কি বুঝতে পারছো না?”

_”কেন মানাবে না শুনি? আমি কি দেখতে খারাপ নাকি?”

_”আরে বাবা,তুমি দিয়ার চেয়ে ভালো মেয়ে ডিজার্ভ করো।”

_”ওর চেয়ে সুন্দরি মেয়ে আমার দরকার নেই ভাই।”

জ্যোতি বিরক্তির ভাব নিয়ে বললো,
_”তূর্য ভাইয়ের বাতাস লাগলো নাকি তোমার?”

_”মানে?”

_”তুমি আবার কবে থেকে সৌন্দর্যের পিছনে ঘোরা শুরু করলে শুনি? সুন্দর হলেই যে সে ভালো হবে এমন তো কোনো কথা নেই।”

নির্ঝর জ্যোতির কথা কানে না নেওয়ার ভাব নিয়ে বললো,
_”জ্ঞান দিসনা তো।”

_”বেশ, দেবোনা জ্ঞান।”

দু কদম এর বেশি এগোতে পারলো না জ্যোতি কারণ নির্ঝর এখনো তার হাতটা ছাড়ে নি।

_”আরে আবার কোথায় যাচ্ছিস?”

_”জাহান্নামে যাচ্ছি, যাবে?”

_”আচ্ছা তুই দিয়াকে সহ্য করতে পারিস না কেন বল তো।”

জ্যোতি চোখ বন্ধ করে রাগী নিঃশ্বাস ছেড়ে নির্ঝর এর সামনে আঙুল উঁচিয়ে বললো,
_”আর একবার দিয়ার নাম নিলে তোমাকে আমি..”

নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে ওর আঙুলটা নামিয়ে দিয়ে বললো,
_”কেন বলবনা? আরে তোর কাছে না বললে কার কাছে বলবো বল তো?”

_”যাকে খুশি বলো,আমাকে কিছু বলবে না এই নিয়ে ব্যাস।”

নির্ঝর কিছু বললো না, জ্যোতি তার দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে বললো,
_”আর ঐ মেয়েও না কখনো তোমার প্রপোজাল এক্সেপ্ট করবে না মিলিয়ে নিও। তখন আবার আমার কাছে এসে বলোনা যেন ‘জ্যোতি,আই কান্ট টলারেট দ্যাট। প্লিজ গিভ মি সাম সান্ত্বনা।”

শেষের কথাটা কিছুটা অভিনয়ের ভাব নিয়ে বললো জ্যোতি। আর নির্ঝর সরু চোখে তাকিয়ে কেবল তাকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।

#চলবে?