এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা পর্ব-০৭

0
1300

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৭.
#WriterঃMousumi_Akter

সমগ্র কাজিন গুষ্টির সামনে মান সম্মান এর বারোটা বাজিয়ে দিলেন বিহান ভাই।কি জানি সবাই আমাকে কোন চোখে দেখছে।কোনো কথা না বলে ওখান থেকে উঠে চলে গেলাম আমি লজ্জায়।

বিয়ে বাড়ি মানেই আনন্দ উল্লাস আর আমেজের শেষ নেই।একদিকে হলুদের জন্য উঠানেই প্যান্ডেল সাজানো হয়েছে।বাড়ির ছেলেগুলো সেখানেই বিজি।এইদিকে মেয়েরা ভীষণ বিজি আছে শাড়ি আর গহনা নিয়ে।সবার গালে মুখে হলুদের ভীষণ ছড়াছড়ি।আমি দুই হাত ভরে হলুদ নিয়ে বিভা আপুর গালে লাগিয়ে দিলাম।সবাই অনুষ্টান দেখছে কিন্তু এলিয়েন বিহান ভাই ই নেই।উনি খানিক টা দূরে চোখ মুখ ঘুচিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।মারাত্মক আকারের সুন্দর লাগছে উনাকে।ইস মেয়েগুলো হা করে তাকিয়ে আছে উনার দিকে।এ্যাশ কালারের পাঞ্জাবী তে মারাত্মক সুন্দর লাগছে উনাকে।আচ্ছা একটা ছেলেকে এতটা সুন্দর হতে হবে ক্যানো?এত সুন্দর ই বা ক্যানো উনি।হিংসা হচ্ছে আমার মেয়েগুলা হা করে তাকিয়ে আছে উনার দিকে।উনাকে দেখে অনিচ্ছাকৃত ভাল লাগার হাসি ফুটে ওঠে আমার ঠোঁটের কোণায়।বুকে হাত বেঁধে মারাত্মক বিরক্তি নিয়ে তাকিগে আছে।বিভা আপুর এক গাদা বান্ধবী এসে বিহান ভাই কে ফলো করছে।একজন রিতীমত এগিয়ে গেলো বিহান ভাই কে আবির মাখাবে।মেয়েটি এগিয়ে যেতেই মেয়েটি কোনো কথা বলার আগেই বিহান ভাই ফোন বের করে কানে দিয়ে অন্য দিকে রওনা হলো।মেয়েটি কে পুরাই ইগনোর করলো।যেনো ভীষণ বিরক্ত হচ্ছেন উনি।এইদিকে আবির মাখানোর জন্য আমার পিছে ছুটছে রিয়া আর মেহু।মেহু আর রিয়ার দৌঁড়ানিতে ছুটতে গিয়ে বিহান ভাই এর গায়ের উপর পড়লাম গিয়ে।বিহান ভাই এর এ্যাশ কালারের পাঞ্জাবীর বুকের কাছে হলুদে লেপ্টে গেলো।পড়েই যাচ্ছিলাম উনার পাঞ্জবির বুকের কাছে খামছি দিয়ে ধরে নিজেকে আটকালাম আর বিহান ভাই ও আমার কোমর জড়িয়ে ধরলেন।বিহান ভাই এর ভয়ানক বিরক্তির চোখ মুখ একবার আমাকে দেখছে আরেক বার পঞ্জাবীতে লেগে থাকা হলুদের দিকে।এই পাঞ্জাবীর জন্য কি আমাকে আজ ঘরে আটকে রাখবেন উনি।কিছুক্ষণ পরে স্বাভাবিক হলাম আমি।দ্রুত নিজের ওড়না দিয়ে পাঞ্জাবীর হলুদ মুছে দেওয়ার চেষ্টা করলাম।বিহান ভাই আমার হাত ধরে সরিয়ে দিলেন আর বললেন,সারাজীবন কি গভেট ই থেকে যাবি নাকি ঘটে বোধ বুদ্ধি কিছু আছে।পাঞ্জাবীর তো বারোটা বাজিয়েছিস এখন আবার নিজের ওড়না টা নষ্ট করতে চাস তাইতো।নিজের জিনিসের প্রতি তো কোনোমায়া দয়া নেই তোর।থাকবে কিভাবে চিটারির টাকায় এসব কেনা যে।উনার কথা শুনেই সাথে সাথে রেগে গেলাম আর বললাম দেখুন এটা আমাকে মামি কিনে দিয়েছে।এবার উনি কথার মোড় ঘুরিয়ে দিলেন।ওহ আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে আমাদের ফ্যামিলির টাকা মানে হালাল। হালাল মানে পুরাই হালাল এই টাকায় কোনো ভেজাল নেই।একটু রাগি মুডে বললাম,,আমার বংশ নিয়ে রোজ খোটা দেন আপনার কপালেও এমন শ্বশুর বাড়ি জুটবে।

‘একদম ই ঠিক বলেছিস তোর বংশেই বিয়ে হবে আমার।’

‘কথাটা শুনেই বুক কেঁপে উঠলো তার মানে তোহা আপুর সাথে ব্যাপার টা একদম ই সত্য।’

‘জাস্ট ডিজগাস্টিং আর নেওয়া যাচ্ছে না।’

‘কি হলো বিহান ভাই।’

‘তোদের এইসব ন্যাকামি কখন শেষ হবে।’

‘এইগুলা কি ন্যাকামি।’

‘ন্যাকামি ছাড়া কি।তোরা মেয়েরা পারিস ও বটে।আর এগুলা কি গানে নাচ গান করছে মেয়েগুলা।আমার এই দামি কানের প্রেজটিজ নষ্ট হয়ে গেলো এই গানের অত্যাচারে।সিরিয়াসলি এই অত্যাচার আর নেওয়া যাচ্ছে না।’

‘গানের মাঝে খারাপ কি?’

‘এগুলা কি গানে নাচ হচ্ছে বধূবেশে কন্যা যখন এলোরে।ওয়েডিং এর যে এত্ত ভালো ভালো গান আছে সেটা রেখে ওহ গড কার রুচিতে এই গান প্লে হচ্ছে।’

‘বিভাপুর বান্ধবীদের।’

‘এই মেয়ে গুলো এত গায়ে পড়া স্বভাব এর কেনো রে?বার বার কথা বলার জন্য এগিয়ে আসছে।’

‘কি কাহিনী কি?আপনার না গফ আছে বিহান ভাই।’

‘হুম আছে তো।লুকিয়ে লুকিয়ে ফোনের কথা শোনার অভ্যাস হয়েছে তাইনা।’

‘আপনি যে জোরে কথা বলছিলেন এমনিতে নড়াইল শহরের সবাই শুনেছে।এনি ওয়ে আপনার গফ আছে মেয়ে গুলা জানে।’

‘হুম জানে তো!’

‘জেনেও এমন করছে।’

‘আই থিংক তারা আমাকে দেখে ক্রাশ খাচ্ছে।’

‘আপনার মাঝে কি এমন বিশেষত্ত্ব আছে যা দেখে ওরা ক্রাশ খাবে।’

‘তুই মেয়ে না অন্য কিছু।তা না হলে চোখের সামনে একটা হ্যান্ডসাম ছেলে বড় হয়ে গেলো তুই কখনো ক্রাশ খেলি না।এর থেকে প্রমান হয় সুন্দর জিনিস তোর নজরে পড়ে না।’

বিহান ভাই এর কথা শুনে ওখান থেকে চলে গেলাম।উনি হলের জাস্ট একটা অসহ্য মানুষ।

বিভা আপুকে গোসলের সময়ে গোলাপ এর রজনীগন্ধার গহনা দিয়ে হলুদ মাখানো হবে।আর হলুদের পরে আর্টিফিশিয়াল ফুলের সুন্দর গহনা পরানো হবে।এমন টাই প্লান করা হয়েছে।এই ফুলের গহনা টা নড়াইল ভাল গুলো পাওয়া যায় না।তাই বিভা আপু বিহান ভাই এর কাছে আবদার করেছে বিহান ভাই যেনো ঢাকা থেকে যে কোনো ভাবে গহনা আনিয়ে দেয়।বলতে গেলে গহনা টা বিভা আপুর জন্য বিয়ের গিফট হিসাবে দিয়েছেন বিহান ভাই।গহনা টা বিহান ভাই এর বিছানার উপর রাখা আছে আমাকেই পাঠানো হলো আনার জন্য।গহনা টা খুলেই চোখে তাক লেগে গেলো আমার।দেখে বোঝার উপায় নেই এগুলা আর্টিফিশিয়াল ফুল।বেলি আর গোলাপের ফুল দিয়ে বানানো গহনা টা।সময় থাকলে ঠিক ই বিভোর ভাই কে বলতাম আমাকে এমন একটা গহনা আনিয়ে দিতে।বিভোর ভাই ঠিক ই আমাকে আনিয়ে দিতো।কিন্তু বিহান ভাই কে বললে বলবে বিয়ে কি তোর না বিভা আপুর।তুই সাজবি ক্যানো?ছেলেদের ইমপ্রেস করতে চাস তাইতো।ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম গহনার দিকে।বাইরে সবাই সাজুগুজু নাচ গানে বিজি আছে।আমি এসেছি গহনা নিতে।যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত পোহায় আমাকে বার বার যে কোনো কারণে বিহান ভাই এর রুমেই আসতে হয়।

হঠাত মনে হলো যেনো মনের মাঝে বিস্ফোরণ ঘটলো।মাথার এক গোছা চুল টেনে ধরে বিহান ভাই বলেন,এভাবে গহনার দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো?উনাকে দেখেই দুঃচিন্তা দানা বাঁধলো মনের ভেতরে।এক্ষুণি কি আজে বাজে কথা শুরু করবে উনি।কোনো কথা না বলে রুম থেকে বেরোনোর চেষ্টা করলাম আমি।উনি সাথে সাথে আমার সামনে দুই হাত মেলে দাঁড়ালেন।আমাকে আটকানোর চেষ্টা করছেন।আমি চোখ পিট পিট করে তাকিয়ে বললাম দেখুন আমি বিয়ে করতে চায় না।

‘বিহান ভাই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলেন আমাকে বিয়ে করতে চাস না তাইতো।কিন্তু কে তোকে প্রেসার দিয়েছে বিয়ে করার জন্য।’

‘না মানে আপনি এক্ষুণি বলতেন গহনার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলি কি জন্য।বিয়ে কি তোর নাকি।তুই গহনার লোভ করছিস কেনো?’

‘উনি আমার সামনে একটা সেইম গহনা ধরে বললেন এটা নে।’

‘আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম উনি মানে বিহান ভাই গহনা দিচ্ছেন কিন্তু হুয়াই?উনি বিহান ভাই তো। ‘

‘আমাকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলেন কি হলো নে।তোর জন্য এক্সট্রা আট হাজার টাকা দিয়ে এটা আনিয়েছি।গহনা টা দেখেই আমার পছন্দ হয়েছিলো আর আমি জানতাম এটা তোর ও পছন্দ হবে তাই ষোল হাজার টাকা দিয়ে এনেছি।এখন যদি এটা না পরিস তাহলে তোর খবর আছে মারাত্মক খবর।এই টাকা তোর মামা মামি দেয় নি।একদম ই আমার হালাল উপার্জন এর টাকা।আমার টাকার মূল্য অনেক।যদি এই গহনা না নিস তাহলে এই দো’তলা থেকে ফেলে দিবো।’

‘আমি আবার ও তাকিয়েই রইলাম কোনো কথা বললাম না।আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। এটা কি আসলেই বিহান ভাই।মানে এটা বিহান ভাই তো।’

‘বিহান ভাই আমাকে অবাক করে দিয়ে,নিজেই ফুলের গহনা টা আমায় পরিয়ে দিলেন।নিজের হার্টবিট অতিশয় দ্রুত চলাচল শুরু করেছে।’

‘বিহান ভাই একটা ধমক দিয়ে বললেন এত নড়ছিস কেনো?একটা দিবো কানের নিচে।চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাক।।’

আমার কোনো কথা বলার শক্তি থাকলো না।সবাই মাত্রই গোসল করে হলুদ তুলে এখন শাড়ি আর গহনা নিয়ে বিজি।আমিও মাত্রই শাড়ি পরে এসেছি। একটা হলুদ সিল্কের শাড়ি সাথে এই চমৎকার সুন্দর গহনা।বিহান ভাই ফোন বের করে একটা সেল্ফি নিলেন আমাদের দুজনের।উনার আইফোনে ছবিটা ভীষণ সুন্দর লাগছে।আমার এত সাজুগুজুর পরেও আমার থেকে বিহান ভাই কেই বেশী সুন্দর লাগছে।আসলে কি বলবো বুঝছিলাম না।রুমের মাঝে দাঁড়িয়ে রইলাম আমি।উনি পাঞ্জাবীর বোতাম গুলো এক হাত দিয়ে খুলতে খুলতে আরেক হাত দিয়ে আমার ছবি তুলছিলেন।বেশ শান্ত কন্ঠে বললেন পাঞ্জাবী চেঞ্জ করবো সেটা কি তোর সামনেই করবো।আমি উনার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতেই আমার ফোন বেজে উঠলো টুংটাং সাউন্ড এ।ফোন এর মেসেজ খুলে দেখি বিহান ভাই এর মেসেজ।

“এ শহর আজ ফুলে ফুলে সজ্জিত হোক
এ শহরে আজ ফুলের রাণী এসছে
তাকে আজ ফুল কণ্যায় অসম্ভব সুন্দর লাগছে”

মেসেজ টা দেখে ভাল লেগেছে আবার খারাপ ও লেগেছে।গফ থাকতে আমাকে এসব দেয় কেনো?.

আমি বাইরে বেরোতেই চারদিক থেকে সবাই বলছে দিয়া তোকে অনেক সুন্দর লাগছে।সবার প্রশংশায় মুখরিত চারপাশ।

সন্ধ্যায় আপুর হাতে মেহেদী পরাবো। আপুর ফ্রেন্ড রা সহ সবাই আমার সামনে হাত ধরেছে সবাই কে মেহেদী পরিয়ে দিতে হবে।এমন সময় রিয়া বলে উঠলো বিহান ভাই আপনি দিয়া কে গহনা এনে দিয়েছেন কাহিনী কি?

বিহান ভাই কাহিনী ইজ ভেরি ক্রিটিক্যাল রিয়া।এ কাহিনী মারাত্মক। সব দোষ দোকানদারের।আমি একটার অর্ডার করেছিলাম কিন্তু ওরা দুইটা পাঠিয়ে দিয়েছে।ওদের নাকি কমিশন চলছে তাই ভাবলাম দিয়েছে যখন একটা গফ কে দিয়ে দিবো।কিন্তু দিয়া বিভা আপুর টা আনতে গেছিলো গিয়ে দেখি দুইটা দেখে একটা নিজেই পরে বসে আছে।

আমি রাগি রাগি চোখে উনার দিকে তাকালাম।

আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো দিয়া এভাবে রিয়্যাক্ট করছিস ক্যানো?সবাই ভাববে আমি মিথ্যা বলছি।

তাহলে কি সত্যি বলছেন।

আচ্ছা সত্যি টা হলো আমি দিয়াকে গহনা পরিয়ে দিয়েছি গাইস।দিয়া তুই হ্যাপি এবার বলেই বাকা একটা হাসি দিলেন।

তোহা আপু বলে উঠলো আমি জীবনেও বিলিভ করি না বিহান ভাই পরিয়ে দিয়েছে।

বিহান ভাই বললেন,বিলিভ না করলে আর কিরার বইন।

রাগে যে কি অস্হির লাগছে আমার।এই মুহুর্ত ভীষণ প্রতিশোধ নিতে ইচ্ছা করছে।

হুট করে বিহান ভাই এর ফোনে কল বেজে উঠলো,বুকটা ফাইট্যা যায় বুকটা ফাইট্যা যায়।বন্ধু যখন বউ লইয়া আমার বাড়ির সামনে দিয়া রঙ্গ কইরা হাইটা যায়।

বিহান ভাই এর মুখের যা অবস্থা। উনার ফোনে এমন রিংটোন ভাবা যায়।ইংলিশ,চাইনিজ হিন্দি ছাড়া যে শোনে না।

চলবে,,