এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা ২ পর্ব-১৮+১৯+২০

0
992

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা(সিজন২)
১৮.
#WriterঃMousumi_Akter

–এক আকাশ রাগ,অভিমান নিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে বাড়িতে প্রবেশ করলাম।কিন্তু বাড়িতে প্রবেশ করেই বাড়ির প্রবেশ অন্যরকম মনে হলো।উঠানে আম্মু কাকিমনিদের সাথে পাড়ার কয়েকজন মহিলা দাঁড়িয়ে কথা বলছে।আমাকে দেখেই ভূত দেখার মতো চমকে গেলো যেনো সবাই।আম্মু আর কাকিমনিরা এগিয়ে এসে বললো দিয়া তুই এখন এই অসময়ে।আম্মু চোখে মুখে চিন্তার বলি রেখা ফুটে উঠেছে। আমার মন চাইছে এক্ষুনি ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দেই।

–পাশের বাসার আন্টি বলছেন,দিয়া বিয়ের একদিন হতে না হতেই বাপের বাড়ি রাগারাগি করে চলে এসেছো।তোমার আম্মুকে এইজন্য বলেছিলাম তোমার ভাতিজা এত বড় ডাক্তার তোমার মেয়ের সাথে মানিয়ে চলতে পারবে না।আম্মু একটু রেগেই বললো,দিয়া কি বলেছে ও রাগ করে এসছে বা মানিয়ে চলতে অসুবিধা হচ্ছে।আপনারা এসব বলছেন কেনো আগেই।পাশের বাসার আরেক আন্টি বললেন,আমাদের বাসার ভাড়াটিয়ার মেয়ে ও বিয়ের পরের দিন কি নিয়ে রাগারাগি করে চলে এসছিলো তারপর ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে।কতগুলো টাকা খরচ করে বিয়ে দিয়েছিলো,টাকা গেলো,সম্মান গেলো সব ই গেলো।পরে ওই ভাই স্ট্রোক করেই মারা গেলেন।আজকাল যুগে বিয়েই টিকে না।তোহা আপুর আম্মু বললেন দেখুন ভাবি সবাই তো আর এক নয়,আর বিহান কে তো চিনেন ওর মতো ছেলে লাখে কয়টা মিলে।আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে বললো,দিয়া তুমি কি রাগ করে এসছো?আম্মুর চোখে পানি ছলছল করছে সাথে আমার চোখেও।আমি বা কিভেবে এসছিলাম আর এখানে বা কি হচ্ছে।আম্মুর এই কঠিন প্রশ্নের উত্তর দিতে ঠোঁট কাঁপছে আমার।

–এমন সময় পেছন থেকে বিহান ভাই বললেন,কেনো ও রাগ করে আসবে কি নিয়ে ফুপ্পি।

–উনার ভয়েজ শুনে আশ্চর্য হয়ে পেছনে তাকালাম আমি।উনি কখন আসলেন,তাহলে কি আমায় ফলো করতে করতে চলে এসছেন।

–গায়ে হোয়াইট কালারের জ্যাকেট,পরণে সাদা জিন্স,জিন্সের পকেটে হাত গুজে কপালের চামড়ায় কয়েক ভাজ ফেলে দাঁড়িয়ে আছেন।উনার চোখে মুখে বিরক্তি দেখা যাচ্ছে।

–বিহান ভাই কে দেখে আম্মু একটু স্বস্তি নিয়ে বললো,বিহান তোরা আগে পিছে এসছিস তাই ভাবলাম রাগ করে এসছে দিয়া।

–দিয়া কার সাথে রাগ করবে ফুপ্পি,ও বাড়িতে কে আছে সে দিয়ার সাথে খারাপ ব্যবহার করবে আর সেজন্য দিয়া রাগ করে চলে আসবে।বিহান ভাই কপালে কিঞ্চিত ভাজ ফেলে পাশের বাসার আন্টিদের দিকে তাকিয়ে বললেন,ফুপ্পি এমন কোনদিন হবে না দিয়া রাগ করে চলে আসবে আর সেই আসায় শেষ আসা হবে।উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন রাগ করে এসছিস দিয়া তুই।

–আমি কি একবার ও বলেছি যে আমি রাগ করে এসছি।

–আমরা এক সাথেই এসছি,রাস্তায় একজনের সাথে দেখা তাই আমি তার সাথেই কথা বলছিলাম আর দিয়া এগিয়ে এসছে জাস্ট এটুকুই।আমার আর একটু লেট হলে দেখছি এটা নিউজ পেপারের হেড লাইনে ছাপা হয়ে যেতো।

–রিয়ার আম্মু বললো,বিহান আমরা তো তোমাকে চিনি বাবা।আসলে আজকাল যুগে এমন হচ্ছে চারদিকে তাই উনারা বলে ফেলছেন।যাও ভেতরে যাও।আম্মু কিছু না বলেই আমাদের ভেতরে আসতে বলে ভেতরে চলে গেলো কাকি মনিরা ও ভেতরে চলে গেলো।পাশের বাসার আন্টিরা খুব লজ্জিত হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে রইলেন।উনাদের সন্দেহ কি পুরোটা ক্লিয়ার হয়েছে।বিহান ভাই উনাদের দিকে উনার হাত এগিয়ে দিলেন আমার দিকে উনার হাতটা ধরার জন্য।আমি শান্ত নয়নে উনার দিকে তাকালাম, উনার চোখ এক দৃষ্টিতে নির্বিকার তাকিয়ে আছে আমার দিকে।পরিস্হিতি সামলাতে উনার হাতের উপর আমার হাত টা রাখলাম।আমার হাত উনার হাতের উপরে রাখার সময় আমার হাত খুব কাঁপছিলো।উনি আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরলেন।আমার হাত ধরেই উনি বাড়ির ভেতরে রওনা হলেন।খুব অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে,এই হাত ধরাটা কেনো সত্য হলো না।কেনো উনার বলা কথাগুলো আমার জন্য সত্য হলো না।কেনো উনার সেই শ্বশুরের মেয়ে আমি হলাম না।এইভাবে উনার হাত ধরে সাত জনম কাটিয়ে দিতে চাই আমি।কেনো ভালবাসলেন না আমায় বিহান ভাই।আমি আপনার মতো সুন্দর না,আপনার মতো হাইট নেই,ভাল স্টুডেন্ট না এইজন্য।ভালবাসলে কেউ সামান্য তার ফোনের কথা শোনার অপরাধে এত বকতো না।কেনো বার বার এত অভিনয় করে দূর্বল করেন আমাকে।আপনার আমার সাথে করা সব অভিনয় আমার কাছে সত্য মনে হয়।আপনার অভিনয় কে সত্য ভেবে দিনে দিনে ভীষণ দূর্বল হয়েছি আমি।কেনো ওই শিউলি ফুলের মালা,কেনোই বা ভুল করে আমাকে ঘুমের মাঝে স্পর্শ করা আর কেনোই বা পরম আবেশে আমার হাত ধরেছেন।আমাকে তো ভালবাসেন না তাহলে রাগ করে চলে এসেছি আপনি আবার মিথ্যা বলে কেনো আমার সম্মান বাঁচাতে এসছেন।কেনো ধরেছেন আমার হাত আবার তো ছেড়েই দিবেন।আমি বহুবার রাগ করেছি অনেক বিরক্ত হয়েছি,অতিষ্ট হয়েছি তবুও আপনার জন্য আলাদা জায়গা রেখেছি মনের মাঝে।আমার জীবনে আপনার মতো চমৎকার মানুষ আর দ্বীতীয় টা দেখি নি,যতই আপনি বিরক্ত করেন আপনার মতো একজন লয়াল আর কেয়ারিং মানুষ কে স্বামি হিসাবে পাওয়া ভাগ্যর ব্যাপার।কেনো মিথ্যা সম্পর্কের জালে জড়ালেন।সেই তো ছেড়েই যাবেন।তখন কিভাবে থাকবো আমি।ভেবেই চোখে পানি ছলছল করছে করছে আমার।আমি উনার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছি আর উনি আমার হাত শক্ত ভাবে ধরে হাতে আঙুল উনার হাতের আঙুল দিয়ে স্লাইড করছেন।যা আমার মাঝে লজ্জার ও সৃষ্টি করছে।

–ঘরে ঢোকার আগেই উনি হাত ছেড়ে দিলেন আর আমার দিকে তাকিয়ে একটা টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বললেন,এই যে বালিকা দয়া করিয়া আপনার চোখের পানি মুছুন।না হলে এ জেলায় বন্যা প্রবাহিত হবে।আমি উনার টিস্যু না নিয়ে নিজের ওড়না দিয়েই মুছলাম।

–আম্মু আর কাকিমনি দ্রুত নাস্তা রেডি করছে।বিহান ভাই বললেন প্লিজ ফুপ্পি এখন কিছুই দিও না।এখন কিছুই খাবো না দিয়ার কি বই বাকি আছে সেটা নিতে হবে।রিয়া এগিয়ে এসে বললো আমি তো বই দিয়েই এসছিলাম।বিহান ভাই বললেন আর একটা বাকি আছে বই।

–আম্মু বিহান ভাই কে নাস্তা খেতে দিয়ে আমাকে আম্মুর রুমে নিয়ে ডেকে নিয়ে বললো,কি হয়েছে দিয়া সত্যি করে বল তো।
আম্মুকে আর টেনশন দিতে ইচ্ছা করছে না।তাই বললাম না আম্মু কিছুই হয় নি,কি হবে।

আমি জানি দিয়া তোর বিয়েটা হয়তো এভাবে দেওয়া ঠিক হয়নি। কিন্তু দিয়া একটা কথা মাথায় রাখিস মা বিয়ের পর স্বামি ই কিন্তু সব।হুট হাট করে এইভাবে চলে আসলে মানুষ কত বাজে কথা বলে দেখেছো তো।বিহানের জীবনের সুখ শান্তি তোমার উপর নির্ভর করছে।

একটু হেসে বললাম মানুষ যা ভাবে তা সব সময় সত্য হয় না আম্মু।ভেবো না আম্মু আমি চেষ্টা করবো সংসার করার।

বিয়ের পরে একটা মেয়ের অনেক কিছুই বদলে যায় সেটা আজ বুঝলাম।বাবার বাড়ি ও ইচ্ছা মতো আর আসা যায় না।

সেদিন বিহান ভাই এর সাথে আবার ও ফিরে এলাম উনার বাড়িতে।উনার সাথে আর একটা কথা ও বলি নি আমি।চুপচাপ সুয়ে আছি বিছানায়।উনি মন দিয়ে পড়াশুনা করছেন।কয়েক ঘন্টা হয়ে গিয়েছে দুজনে আর কোনো কথা বলি নি।সন্ধ্যায় একবার বিহান ভাই এসছিলেন আমার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে চলে গিয়েছে কারণ বিহান ভাই লেখাপড়া করছেন।একটা মানুষ এত দীর্ঘ টাইম কিভাবে বই পড়তে পারে।

মামি অনেক বার খাওয়ার জন্য ডাকাডাকি করেছে,শরীর খারাপ বলে আর যায় নি।মামা মামিকে বলেছে তোমার মাথায় কি কিছুই নেই মারুফা কে দিয়ে দুজনের খাবার ঘরে দিয়ে এসো দুজনে ঠিক ই খেয়ে নিবে। মারুফা খালা খাবার দিয়ে গিয়েছে সেই সন্ধ্যার পরেই।আর এখন রাত বারোটা বাজে।উনি বই পড়েই যাচ্ছেন।উনার মুড অফ হলে বই ছেড়ে আর ওঠেন না।

কেউ একজন উনার ফোনে ফোন দিয়েছেন,উনি প্রচন্ড রাগে বকাঝকা করে কথা বলে ফোন সোফার উপর ফেলে দিলেন।গায়ের উইন্টার ড্রেস খুলে ওয়াশ রুমে গেলেন।এই প্রচন্ড ঠান্ডায় উনি সাওয়ার নিচ্ছেন কেনো?অদ্ভুত মানুষ তো উনি।সোফার উপর ফোন অনেক বার বাজছে তো বেজেই যাচ্ছে।আমি অতিষ্ট হয়ে উঠে এলাম ফোনের উপর ভাষছে প্রেয়সী নাম।সেই নামের কল প্রায় ত্রিশ বার।কত গুলো মেসেজ ও পাঠিয়েছে উনার ফোন লক থাকায় মেসেজের সব টা পড়া যাচ্ছে না।শুধু দেখলাম প্লিজ সরি আর এমন হবে না।একবার ফোন তোলো।মেসেজ দেখে বুঝতে আর বাকি রইলো না এই সেই প্রেমিকা যার সাথে মনোমালিন্য হওয়াতে উনার মুড অফ।এইজন্য রেগে আছেন আর এই শীতে সাওয়ার নিচ্ছেন।উনি সাওয়ার থেকে বেরিয়ে দেখেন আমার হাতে উনার ফোন।চুলের পানি ঝাড়তে ঝাড়তে বাইরে বেরিয়ে এলেন।অবাক করা নয়নে আমার দিকে তাকালেন।উনাকে বেরিয়ে আসতে দেখে আমি ফোনটা রেখে একটা চাঁদর নিয়ে আর একটা বালিশ নিয়ে ফ্লোরে গিয়ে সুয়ে পড়লাম।উনি শিতল নয়নে দেখলেন আমি কি করছি।বেশ অবাক ও হলেন আমার কাজ দেখে।

উনার পরনে সাদা টাওয়াল এই প্রথম বার উনার নাভি দেখলাম আমি।ছেলেদের নাভি ও এত সুন্দর হয়।ছেলে মানুষ তবুও সব সময় নিজেকে আগলে রাখেন উনি সব সময়।কারো সামনে খালি গায়ে থাকেন না।নাভির একটু নিচেই টাওয়াল এর গিট,ভেজা চুল গুলো কপালে দলা পাকিয়ে পড়ে আছে গায়ে পানি চিকচিক করছে।কৃত্রিম আলোতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে সদ্য সাওয়ার নেওয়া বিহান ভাই কে।খালি গায়ে ড্রেসিন টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে লোসন লাগালেন গায়ে।এক’পা,দু’পা করে এগিয়ে এলেন আমার দিকে।উনি আমার কাছে হাঁটু ভাজ করে বসে বললেন,এখানে কেনো?ঠান্ডা লাগবে তো!
আমি কোনো উত্তর দিলাম না।
উনি উনার চুল ঝাঁকি দিয়ে আমার মুখে পানি ছিটিয়ে বললেন, আমি কিছু বলেছি দিয়া উত্তর দিচ্ছিস না কেনো?ঠান্ডা লেগে জ্বর হলে খুব ভাল লাগবে?
আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে সুয়ে রইলাম।
উনি আমাকে বললেন ভাল কথায় না গেলে অন্য ভাবে নিতে হবে।

চলবে,,

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা (সিজন২)
১৯(বোনাস পার্ট)
#WriterঃMousumi_Akter

–ভাল কথায় না গেলে অন্য ভাবে নিতে হবে কথাটা বলেই উনি জোর করে আমাকে পাজা কোলে তুলে বিছানায় এনে ফেললেন।

মানুষের হাত এত শক্ত হয় কিভাবে জানিনা?চেষ্টা করেও উনার হাতের বাঁধন থেকে মুক্তি পেলাম নাহ।আমি অগ্নিচোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।আমার অনিচ্ছায় উনি আমাকে বিছানায় এনে ফেললেন।

“এভাবে না খেয়ে থাকার মানে কি?”

“আমার ইচ্ছা।”

“শরীর খারাপ হলে তখন কি হবে?”

“আপনাকে কে ভাবতে বলেছে।”

“কেউ কিছু বলে কি আমাকে কখনো করাতে পেরেছে।আমি যা করি নিজের ইচ্ছাতেই করি ইউ নো ভেরি ওয়েল দিয়া।”

“আপনার সব ইচ্ছার দাম আছে আর আমার ইচ্ছার দাম নেই তাইনা?আপনার ইচ্ছা হলে আমাকে বিয়ে করবেন,ইচ্ছা হলে নিজের প্রেমিকার গল্প শোনাবেন,ইচ্ছা হলে নিজের প্রেমিকা ভেবে কাছে টেনে নিবেন,ইচ্ছা হলে প্রমের সংলাপ বলবেন,ইচ্ছা হলে অপমান করবেন,ইচ্ছা হলে জোর করে বিছানায় নিয়ে আসবেন, ইচ্ছা হলে বের করে দিবেন।আপনার নিজের ইচ্ছার এত দাম বিহান ভাই।একটা মেয়ে হিসাবে কি দাম আছে আমার।না কিছু আমার ইচ্ছাতে হয়,না কেউ আমায় বোঝে, না কেউ বোঝার চেষ্টা করেছে।যার যা মন চাই আমার উপর চাপিয়ে দেয়।”

“উনি রুম হিটার টা অন করতে করতে বললেন,এত রাগ অভিমান।না খেয়ে থাকলে রাগ আরো বাড়বে ছাড়া কমবে না।”

“আমার রাগ নিয়ে খাওয়া নিয়ে আপনাকে আর ভাবতে হবে না বিহান ভাই।আপনি আপনার রাগ নিয়ে ভাবুন না। আপনার প্রেমিকার সাথে মনোমালিন্য হয়েছে বলে আপনি মুড অফ করে দেখি ৫-৬ ঘন্টা এক ভাবে বই পড়েই যাচ্ছেন।আপনার কফি ঠান্ডা হয়েছে সেটাও খান নি।কারো সাথে কথাও বলেন নি।তো যান না তার সাথে সব মিটিয়ে নিন।”

“সে চেষ্টাই তো করছি দিয়া।”

“তো করুণ এখানে কি চাই?”

“তুই না খেলে ওর রাগ ভাঙবে কিভাবে?”

“আমার খাওয়ার সাথে আসলে কি সম্পর্ক।”

“তুই খেয়ে মাথা ঠান্ডা করলে তোর থেকে বুদ্ধি নিবো।”

“আমি অতটা বুদ্ধিমতি নই বুঝেছেন।বাবাহ কি প্রেম আপনার।বলবো আমি মামিকে তোমার ছেলে নিজের প্রেমিকার সাথে রাগ করে কয়েক ঘন্টা মুড অফ করে আছে।”

“আসলে ওর সাথে মিসবিহেভ করে ফেলছি?”

“ওহ আচ্ছা তাই?”

“আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম।আমি চাইনা ও বুঝে যাক আমি ওকে কতটা ভালবাসি।ও যদি আমার ভালবাসার সঠিক মূল্যায়ন না করতে পারে তাই চাইছি আরেক টু সময় নেয়।”

“উনার কথা শুনে কম্বল মুড়ি দিয়ে সুয়ে পড়লাম।একদম ই বিরক্ত লাগছে আমার উনার কথা।উনার এই প্রেমিকা নিয়ে কোনো কথা আমি সহ্য করতে পারি না।উনি ভাত মাখাতে মাখাতে বললেন দিয়া মুখ তোল আমি খাইয়ে দিচ্ছি।আমি কম্বল থেকে একটু মুখ বের করে তাকিয়ে দেখি উনি ভাত মাখিয়ে টুল নিয়ে খাটের সাইডে বসে আছেন।আমি সত্যি অবাক উনি খাবার হাতে আমাকে খাওয়ানোর জন্য বসে আছে।এটা ও বিশ্বাস করতে হবে।কি হয়েছে উনার ভূতে টুতে আবার ধরে নিতো।কম্বল মুড়ি দিয়ে জোরে বললাম আমি খাবো না কিন্তু।”

“উনি আমাকে শুনিয়ে বললেন,সারাদিন আমি খাই নি কিছু।একজন যদি চাই আমি না খেয়ে থাকি তাহলে ঘুমিয়ে যাক।আমি এখন ব্যাগ গোছাচ্ছি এখনি ঢাকা চলে যাচ্ছি।”

“উনার কথা শুনেই আমি উঠে বসলাম কারণ আমি জানি উনি যা বলবেন তাই ই করবেন।তাছাড়া উনি না খেয়ে আছেন ভেবেই কষ্ট হচ্ছে।”

“উনাকে শুনিয়ে বললাম কেউ খাইয়ে দিতে চাইছে যখন দিক।নেক্সট টাইম যেনো আমাকে আর না বকে।”

“উনি হেসে দিয়ে আমার মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে বললেন,দিয়া জানিস ই তো তোকে একটু বকি।তাই বলে তুই রাগ করে চলে যাবি।তুই আমার সাথে কথা না বলে ছিলি কেনো?তুই কথা বলছিলি না দেখেই তো আমার আরো রাগ হচ্ছিলো?”

“আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম,কেনো বিহান ভাই?এমন অদ্ভুত কথা কেনো বলেন আপনি?যাই হোক বাদ দেন।আপনার শ্বশুরের মেয়ে কে খুব ভালবাসেন তাইনা?”

“অনেক ভালবাসি বাট সে তো বোঝেনা।উলটা আমাকে ভুল বুঝে কষ্ট দেয় শুধু।”

“কেনো বোঝেনা?..”

“কারণ সে জানেই না তার আম্মুর জামাই তার জন্য কতটা পাগল।”

“আমাকে দেখান তো দেখতে কেমন?”

“দেখলে চোখ ফেরাতে পারবি না।পৃথিবীর সেরা সুন্দরী সে।”

“ওহ আচ্ছা!তা তাকে বলে দিন আপনার মনের কথা।”

“ভয় পাচ্ছি।”

“কেনো?”

“রিজেক্ট করে যদি।”

“আপনাকে আবার কেউ রিজেক্ট করবে।আমাকে ঠিকানা দিন আমি বলে দিবো।”

“তোকেই বলবো সিওর।বাট আজ ঘুমিয়ে পড়।এই ক্ষুদা নিয়ে ঘুমোচ্ছিলি ক্ষেপি একটা। আর হ্যাঁ প্রাইভেট যাবি নাকি সুয়ে থাকবি।”
“আমি অসহায় হয়ে বললাম প্রাইভেট যাওয়ার থেকে সুয়ে থাকা বেশী উত্তম”

উনি আর কথা না বাড়িয়ে ট্রাউজার আর গেঞ্জি পরে ঘুমিয়ে গেলেন।উনি ঘুমিয়ে গেলে উনার সুচে ফোটা আঙুল এ হাত বোলালাম আমি।মন চাইছিলো ঠোঁট ছুইয়ে দেই কিন্তু পারলাম নাহ।

কেটে গেছে প্রায় এক মাস আর কয়েক দিন বাকি আছে মাত্র।বিহান ভাই এর ছুটি ও শেষ প্রায়।উনি ঢাকা ফিরে যাবেন শুনছি।উনার ব্যাগ ও গোছানো হয়ে গিয়েছে।
সকাল ছয়টায় গোসল করে ওয়াশ রুম থেকে মাথায় টাওয়াল পেচিয়ে বের হলাম।বেরিয়েই দেখি বিহান ভাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।আমার চোখ তখন মাথায় ওঠার অবস্থা, উনি জেগে আছেন।আমি ভ্রু নাচিয়ে বললাম কি ব্যাপার আপনি জেগে গিয়েছেন কখন।

–উনি আড়মোড়া দিয়ে বললেন,হঠাত ঘুমের মাঝে ঘুরে সুতে গিয়ে দেখি আমার সামনে বিশাল ওই ড্রেসিন টেবিলের আয়নায় এক রমনী শাওয়ার নিচ্ছে।তারপর আর আয়না থেকে চোখ সরাতে পারিনি।এতক্ষণ দেখলাম অনেক কিছুই।এখন আমার এই নিষ্পাপ চোখের কি হবে দিয়া।আজ যা দেখেছি তা দেখে ভীষণ ভাবে শিহরিত, কম্পিত,চমকিত আরো অনেক কিছুই আমি।

–আমার সামনের বিশাল ড্রেসিন টেবিলের আয়না আর একবার ওয়াশ রুমের দিকে তাকিয়ে উনার দিকে তাকালাম।চোখে,মুখে বিস্ময় আমার।

–আপনি একদম ই মিথ্যা বলবেন না,দরজা তো দেওয়ায় ছিলো।

–নিজের মন কে নিজে সান্ত্বনা দিয়ে কি হবে দিয়া।আমি সত্যি যা দেখেছি তা প্রকাশ করতে পারছি না।

–আপনি এত বিশ্রি রকমের অসভ্য মানুষ কেনো?এভাবে৷ তাকিয়ে ছিলেন কেনো?

–থাক এখন আর লজ্জা পেতে হবে না।যা দেখার তো দেখেই ফেলেছি।এখন তো আর তা ফেরানো যাবে না।

–আমি আজ ই বাড়ি চলে যাবো, এই বাড়িতে আর থাকবো না।চব্বিশ টা ঘন্টা আমাকে বিরক্ত করেই যাচ্ছেন আপনি।

–উনি আমার হাত টেনে ধরে বললেন,ও বাড়িতে গিয়ে কি করবি সব রাজাকার কে এক জায়গা করবি,বাটপারি আমার সাথে চলবে না মিসেস দিয়া।কি ধুরন্ধর বুদ্ধি ভাবা যায়।একটা সদ্য বিবাহিতা মেয়ে বিয়ের পরের দিন বাবার বাড়ি গিয়ে কি বলবে আমি আর তোমাদের জামাই এর সাথে থাকবো না।এর কারণ হিসাবে মানুষ কি ভাববে শুনি।মানুষ না ভাবলেও তুই বলবি আমার জামাই এর সমস্যা আছে,মহা সমস্যা যে সমস্যার জন্য আমি চলে এসছি।তা না হলে আমার মতো হ্যান্ডসাম একটা ছেলের বউ থাকবে না এটা কি হতে পারে।

সব সময় দুই লাইন বেশি বলেন আপনি?

–তাতো বুঝলাম, কি ব্যাপার কি দিয়া এত সকালে গোসলের কারণ কি?

–কোনো কারণ নেই এমনি করেছি।

–এটাও কি আমাকে বিলিভ করতে হবে আপু?

–বাবাহ আপু!জীবনে প্রথমবার আপনার মুখে আপু ডাক শুনে আহত হওয়ার উপক্রম আমার বিহান ভাই।এনি ওয়ে আপনি বিলিভ করলে করেন না করলে না করেন আই ডোন্ট কেয়ার।

–এই বিবাহিত বেয়াদব মহিলা আমাকে অনুকরণ করে কথা বলে।হাউ ডেয়ার ইউ দিয়া।
গোসল করার কারণ কি?

–মানুষ কেনো গোসল করে?

–যে মেয়ে শীতের সময় সাতদিন গোসল করে না একভাবে সে এত ভোরে গোসল করেছে তার কারণ কী?বড়ই সন্দেহের ব্যাপার।

–আমি সাত দিন গোসল করি না।কে বলেছে এমন বাজে কথা।আপনি ছাড়া কেউ বলবে না।

–কাহিনী কী এত সকালে?

–আপনি কি প্রথম দেখলেন কাউকে এত ভোরে গোসল করতে।

–বিবাহিত সব কাপল দের ই দেখেছি!আমি কি বুঝে নিবো তুই ও তাই।

–যা ইচ্ছা বুঝেন কিন্তু আমি আসল সত্য বলতে পারবো না।

–না বললেও তো অনেক কিছু বুঝি।

–কি বুঝলেন।

–কিভাবে আম্মুর এই নিষ্পাপ ছেলেটার ঘুমের ফায়দা নিচ্ছে এক বিবাহিত মহিলা।

–ঘুমের ফায়দা।

–তো তাই ছাড়া কি?এইভাবে আমাকে ঘুমের মাঝে অপবিত্র না করলেই কি নয় মিসেস বিহান।

–আর একবার ও বাজে কথা বলবেন না।আমাকে কি ওই রকম ভাবেন আপনি?আমি কি জন্য আপনার সাথে এসব করতে যাবো।

–এখন আর অস্বীকার করে লাভ কি?যায় আমিও গোসল করে আসি।এই নিষ্পাপ ছেলেটার ভার্জিনিটি এইভাবে নষ্ট করে দিলে।বিশাল বড় একটা নিউজ পেপারে উঠে আসা উচিত এই নিউজ।

–এই থামুন আপনাকে উঠতে হবে না।আপনি যা ভাবছেন তা নয়।

–আমি যা ভাবছি তাই ই।আমি তোর কাজিন দের সবাইকে এক্ষুনী কল দিয়ে বলতেছি ওয়েট।

–দেখুন কাল প্রচন্ড ঠান্ডায় আমি গোসল করতে পারি নি।এইজন্য সারারাত ঘুম হয় নি।তাই এত সকালে গোসল করেছি।

–ইয়াক থু দিয়া!এইজন্য রুমে এত বিশ্রি দূর্গন্ধ বেরোচ্ছিলো।প্রচুর বমি পাচ্ছে আমার।পিশাচিনী একটা।

দেখুন জান বাঁচানো ফরজ,ঠান্ডায় না মরার থেকে গোসল না করা উত্তম।ভুলভাল মানে খুজছেন তো কি করবো।বলেই বেরিয়ে গেলাম রুম থেকে।

কিছুক্ষণ পরেই বিহান ভাই বেরিয়ে গেলেন ঢাকার উদ্দেশ্য। উনার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি এক নজরে।উনার এইবারের যাওয়া যেনো আরো বেশী কাঁদাচ্ছে আমাকে।এতদিন সব সময় চোখের সামনে ছিলো ঝগড়া করলেও ভাল ছিলাম,তৃপ্তি পেয়েছি।

ফোনে টুংটাং করে মেসেজ এসছে,মেসেজ টা উনার ই।ইনবক্স ওপেন করে দেখি,,

“বুঝলে প্রিয়…
ভালোবাসাটা পিথাগোরাসের উপপাদ্য নয় যে প্রমাণ করতেই হবে!!
ভালোবাসাটা হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষের কবিতার মতো, যা শুধুই উপলব্ধি করতে হবে! ভালবাসি মুখে বলে বোঝানো যায় না।”(কপি)

চলবে,,

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা(সিজন ২)
২০.
#WriterঃMousumi_Akter

পড়ন্ত বিকালে সূর্য হেলে গিয়েছে পশ্চিমাকাশে।সারাদিন ই আজ সূর্যের তাপ কম।উত্তরে ছেড়েছে হীম বাতাস।শহরে যেনো আজ শীতের ঢল নেমেছে। উত্তরা বাতাসে শীতের জোয়ার বইছে।চারদিক শীতে কাঁপছে শীততাপে।আজ সন্ধ্যা হওয়ার আগেই যেনো কুয়াশাছন্ন হয়ে গিয়েছে ধরনী।চারদিকে তাকালে মনে হচ্ছে ধোঁয়া উড়ছে।সাদা মেঘের ন্যায় কুয়াশার চাঁদর আজ ছেয়ে গিয়েছে। বিহান ভাই এর সেই চাদর টা গায়ে জড়িয়ে ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছি।আনমনে তাকিয়ে আছি রাস্তার দিকে।দেখছি মানুষের আনাগোনা।এই শহরে রোজ কত মানুষের যাতায়াত কিন্তু তার দেখা নেই।যাকে দেখার জন্য ছটফট করছে এই কিশোরী মন।এই শত শত মানুষের ভীড়ে আমার দু’চোখ খুজে চলেছে সেই মানুষ টাকে।যে মানুষদের টা আমার মনের দখলদার।আজ প্রায় একশ ত্রিশ দিন তার সাথে আমার দেখা নেই।তাকে দেখার তৃষ্ণায় ভেতর শুকিয়ে যাচ্ছে,ক্লান্ত হয়ে আসছে,চারদিকে যেনো ভীষণ ক্ষরা।সে আসুক না আমাকে জালাক পোড়াক তবুও আসুক,এই মুহুর্তে আমার তাকে চাই।তাকে দেখার আকুতিতে ভেতরে জ্বলছে খুব।এই শহরের সব কিছুই তিক্ত লাগছে আমার।সে আমাকে বিরক্ত করুক, ভীষণ বিরক্ত করুক বার বার তার শ্বশুরের মেয়ের কথা বলুক কষ্ট হলেও মেনে নিবো তবুও আমার সামনে আসুক।কেনো আসে না সে।সে কি ঢাকায় তার প্রিয় মানুষ নিয়ে এতটাই ব্যাস্ত আছে যে একদিনের জন্য হলেও আসতে পারছে না।কেনো পারছে না আসতে।ভীষণ কাঁন্না পাচ্ছে তাকে ভেবে।বেহুদা চোখ দিয়ে তার নামের অশ্রু ঝরছে।

ছাদে লাগানো প্রতিটি টবে ফুটে আছে হলুদ গাদা ফুল,রক্তগাদা ফুল।ফুল মানেই প্রকৃতির সৌন্দর্যের অন্যরুপ।এই ছাদে লাগানো সমস্ত ফুল ই তার এনে দেওয়া।রোজ এই ফুল গুলো তার কথা ভাবায় আমাকে।সে জানে ফুল আমার ভীষণ প্রিয়।এতটাই প্রিয় আমার ভীষণ মন খারাপ ভাল হয়ে যায় ফুল দেখলে।হঠাত রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখলাম একজোড়া কপোত কপোয় হেঁটে যাচ্ছে।দুজনের হাতেই আইসক্রিম।ছেলেটি খুব যত্নে তার প্রেমিকার হাত ধরে রাস্তা পার করে নিয়ে যাচ্ছে।ভালবাসার মানুষের হাত দুটি মানুষ কত নিঁখুত ভাবে আগলে রাখে।ইচ্ছা করছে তার হাতটাও আমি ধরি, বা সে এভাবেই আগলে আমার হাত টা ধরুক।আকাশের পানে তাকিয়ে নিলাম একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস।

কাল যে আমার জন্মদিন সেটাও তার মনে নেই।আমি জন্মনিয়েছিলাম যে দিনে সে দিন টা কেনো এতটা স্পেশাল হতে যাবে যদি আমার স্পেশাল মানুষের সেটা মনেই না থাকে।তার মনেই বা থাকবে কেনো।তার কাছে আমি একটা বাচ্চা মেয়ে তাই আমাকে বাচ্চাদের মতো রাগালে আমি রেগে গেলেই সে তৃপ্তি পায়।সে কি আমার ভেতর কখনো বুঝতে চেয়েছে।সারাদিন তাকে ফোন দিলাম একটা বার ও রিসিভ করলো না।গত তিনদিন সে আমার ফোন ও তোলে না,আমাকে ফোন ও দেয় না।আমি কি তাকে খুব বিরক্ত করছি।ভেবেছিলাম সে ফোন তুললে বলবো একটাবার আসবেন প্লিজ,আপনি আসলে আমার আর কোনো দামী গিফট লাগবে না।আমার কোনো চাওয়া কি কখনো পূরণ হয়েছে।আমি চাইলে ই বা কি আর না চাইলেই বা কি।আবার ও এক আকাশ দীর্ঘশ্বাস।

নেট অন করলাম তাকে মেসেঞ্জারে একটা মেসেজ করার জন্য।নেট অন করে ফেসবুকে ঢুকতেই,বিহান ভাই কে ট্যাগ করা একটা পোস্ট আমার সামনে এলো।নিঃশ্বাস যেনো আরো ভারী হয়ে আসলো আমার।কষ্ট টা আরো তীব্র রূপ ধারণ করলো।নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমার।শাহরিয়া শাকিল নামের একটা আইডি বিহান ভাই এবং প্রেয়সী কে ট্যাগ করে একটা পার্টির পিকচার শেয়ার করেছেন।দেখেই বোঝা যাচ্ছে কারো জন্মদিনের পার্টি।সেখানে ক্যাপশনে লিখেছেন,বিহান দোয়া করি তোর শ্বশুরের মেয়ে আমাদের ভাবিজান অনেক বড় হোক জীবনে।এই শাহরিয়া শাকিল কেনো বিহান ভাই আর প্রেয়সী কে একসাথে ট্যাগ করলো।তার মানে কি?এই প্রেয়সী ই বিহান ভাই এর সেই শ্বশুরের মেয়ে। হ্যাঁ এই মেয়েই তো সেদিন কল আর মেসেজ দিচ্ছিলো।আজ বহুদিন পর খুজে পেয়েছি তাকে।প্রেয়সী রহমান এর আইডি তে গিয়ে চোখ আরো ঝাপসা হয়ে গেলো আমার।তার দেওয়া সব পোস্ট ই বিহান ভাই কে ট্যাগ করা,আর বিভিন্ন ধরনের রোমান্টিক কিছু লেখা।বাহ বিহান ভাই নিজের প্রেয়সীর জন্মদিন সেলিব্রেশন করে বেড়াচ্ছেন আর আমার ফোন ধরার সময় ই হয় না।আমি কি কিছুই না আপনার।জানি আমাকে ভালবাসেন না আপনি,কিন্তু আমি যে ভীষণ ভালবাসি আপনাকে।কেনো আমাকে ভালবাসলেন না বিহান ভাই।ছাদের রেলিং ধরেই নিচে বসে পড়লাম আমি।ভালবাসা এতটা পোড়ায় কেনো?কেনো এত যন্ত্রণা দেয় এক তরফা ভালবাসা।চোখ ভিজে গিয়েছে আমার।ভীষণ কাঁন্নায় ভেঙে পড়লাম আমি।

এর ই মাঝে বিহান ভাই এর নাম্বার থেকে ফোন এসছে।

চোখ মুছে একটু স্বাভাবিক হয়ে ফোন টা রিসিভ করতেই ওপাস থেকে গড় গড় করে বললেন,’কি সমস্যা কি দিয়া এত বার কল দিচ্ছিস কেনো?’

‘আপনি কল রিসিভ করছিলেন না কেনো?.’

‘গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ করছিলাম।’

‘কাজটা কি?শ্বশুরের মেয়ের জন্মদিন সেলিব্রেশন।’

‘তুই কিভাবে জানলি আমার শ্বশুরের মেয়ের জন্মদিন।’

‘জেনেছি।’

‘হুম ওর জন্মদিন আর তুই বারবার ডিস্টার্ব করছিলি কেনো?আমি অন লাইনে ওর জন্যই কিছু জিনিস অর্ডার করছিলাম।এই দিকে তোর ফোনে ঠিক ভাবে জিনিস পত্র চয়েজ করতে পারছিলাম না।’

‘জন্মদিন তো আরো অনেকের ই আছে বিহান ভাই সেটা কি ভুলে গিয়েছেন।’

‘ও বাদে আমি আমার জন্মদিন তাই ভুলে যায়।এত মানুষের জন্মদিন মনে রেখে লাভ কি বুঝলাম না।’

‘ওহ আচ্ছা রাখছি তাহলে।’

‘আর কিছু বলবি?’

‘আমি কিছু না বলেই ফোন টা রেখে দিলাম।’

রাস্তায় রিয়া আর বিভোর ভাই কথা বলছে।আজ অনেকদিন পর দেখছি দুজনে ঝগড়া ছাড়া চুপচাপ কথা বলছে।কি কথা বলছে জানিনা তবে দুজনের মুখেই বেশ হাসি।দুজনে আবার কথা বলতে বলতে খানিক টা সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।রিয়া আর বিভোর ভাই কে সত্যি খুব মানায়।মেহু আপুর হাত ধরে আয়রা ও রাস্তার দিকে যাচ্ছে।বুঝলাম না সবাই রাস্তার দিকে কোথায় যাচ্ছে।কেউ তো আমাকে কিছুই বলছে না আমাকে না নিয়েই সবাই ঘুরে বেড়াচ্ছে।ভাইয়া বাজার নিয়ে এসছে টার্মিনাল থেকে।আম্মুকে বলছে আম্মু বিরিয়ানি রান্না করো আর চিংড়ি ও রান্না করো।আম্মু ব্যাগ চেক করে বললো শষা কই আবির?শষা আর গাজর নিয়ে আয়।ভাইয়া আবার ও বাজারের দিকে বেরিয়ে গেলো।রাস্তায় গিয়ে মেহু আপুর চুল ধরে একটা টান দিয়ে আবার বেরিয়ে গেলো।

কিছুক্ষণের মাঝেই তোহা আপু হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বললো,এই দিয়া দেখ বিহান ভাই ফেসবুকে বিশাল বড় একটা স্টাটাস দিয়েছেন।এই জীবনে প্রথম কি আশ্চর্য তাইনা?বিহান ভাই ও ফেসবুকে প্রেমের সংলাপ লিখতে পারে।কি রোমান্টিক হয়ে গিয়েছেন বিহান ভাই দিয়া।

ফোনের দিকে তাকিয়ে স্টাটাস টা দেখে নিশ্চুপ রইলাম আমি।

শ্যামাপাখি,
জানো আল্লাহর দেওয়া প্রতিটা দিনের জন্য আমি শুকরিয়া আদায় করি।কিন্তু আল্লাহর দেওয়া সব দিন গুলোর মাঝে বিশেষ একটি দিনের কাছে আমি ভীষণভাবে কৃতজ্ঞ আর খুশি।এতটায় খুশি যে খুশি আমরণ থেকে যাবে আমার জীবনে।আমার সুখ হয়েই এ পৃথিবীতে তোমার জন্ম হয়েছিলো সত্যি বলতে আমি ভীষণ সুখের অধিকারী মানুষ এখন।বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি দিনে এই পৃথিবীতে আগমণ হয়েছিলো তোমার।সেই দিনটা না এলে এ জীবন এত রঙিন,এত সুন্দর উপভোগ ই করতে পারতাম না।জীবনে ভাল থাকার এত বড় একটা কারণ আমি খুজেই পেতাম না।তুমি ভূমিষ্ট হওয়ার সাথে সাথে তোমার কাঁন্নায় এক ঝাক সুখ পাখি ডানা মেলে আমার কাছে উড়ে গিয়েছিলো আমার জীবনের চিরতম সুখের আগমনের খবর দিতে।পাখিরা কলরব করছিলো,ঝর্ণা প্রবাহিত হয়ে আমাকে জানান দিচ্ছিলো আমার জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ টা আমার জন্য এ পৃথিবীতে চলে এসেছে।সেদিন থেকেই আমার শহরে ভীষণ ভাবে নিষিদ্ধ ছিলো অন্য কারো প্রবেশ। যদিও তখন আমি খুব ছোট তবুও সেই ছোট বয়স থেকেই আমার মন অন্য কারো দিকে ছুটে নি।কিভাবে ছুটবে সব ই যে উপর থেকে ঠিক করা ছিলো।সেই কিশোর বয়সে তোমাতে হারিয়েছিলো মন।যে বয়সে ঘন্টায় ঘন্টায় নতুন নতুন মেয়ে দেখে ক্রাশ খাওয়ার কথা সে বয়সে সেকেন্ডে সেকেন্ডে তোমাকে দেখে বার বার মুগ্ধ হয়েছি আমি।তোমার মাঝে এত মুগ্ধতা কেনো বলোতো।এই কঠিন ছেলেটাকে মনের বাঁধনে বেধেছো অনেক শক্ত ভাবে।দিন রাত যত অতিবাহিত হয়েছে ততই আকৃষ্ট হয়েছি তোমার ওই মিষ্টি হাসিতে।বাম পাজরে তৈরি তোমাকে আমি ভীষণ ভালবাসি।

স্টাটাস টা কয়েক মিনিট পরেই ওয়ানলি মি করে দিলেন উনি।এমন সুন্দর একটা উইশ তো উনি আমার জন্য ও করতে পারতেন।

সন্ধ্যায় ঘরের লাইট অফ করে বিছানায় মন খারাপ করে বসে আছি আমি।আম্মু রুমের লাইট অন করে দেখলো আমি চোখের পানি মুছছি।আম্মু আমার কাধে হাত দিয়ে বললো কি হয়েছে দিয়া।পৃথিবীতে মায়ের থেকে মমতাময়ী আর কেউ নেই।আম্মুকে দেখে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম নাহ।আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়ে বললাম কেনো বিয়ে দিলে আমার আম্মু।আমাকে তোমার কাছে রেখে দাও প্লিজ আম্মু।আম্মু বুঝতে পেরেছে নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে আমার।আমাকে জড়িয়ে ধরে আম্মু ঘন ঘন কয়েকটা নিঃশ্বাস নিয়ে বললো সব ঠিক হয়ে যাবে মা।আমি কেঁদে বললাম,আমি কি এতই খারাপ আম্মু কারো সত্যিকারের ভালবাসা ই জুটলো না কপালে।

চলবে,,