এক বেরঙ চিলেকোঠায় পর্ব-৬০+৬১

0
561

#এক_বেরঙ_চিলেকোঠায়
#লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্ব-৬০+৬১

বাইক গ্যারেজে পার্ক করে টাইটা ঢিলে করে শার্টের হাতা টানতে টানতে বাসায় ঢুকলো আরাব। বাসায় ঢুকে ড্রয়িংরুমে মুফতাহির আর টুইঙ্কেল ছাড়া সবাইকে খুজে পেলো ও। তৌফিকা মেঝের দিকে তাকিয়ে বসে। দোয়া অসহায়ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে। তৌফিক ওয়াহিদ নিজে শক্ত হয়ে বসে আছেন। মিসেস ওয়াহিদ আচল মুখে ফুপাচ্ছেন। আরাবকে আসতে দেখেই এগিয়ে আসছিলেন মিসেস ওয়াহিদ। তার আগেই উঠে দাড়ালো তৌফিকা। আরাব বেশ বুঝতে পারলো কিছু ঘটেছে বাসায়। বোনের দিকে এগোতে এগোতে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

-কি হয়েছে মা? সবাই এভাবে…

-আ্ আরাব…

-আমি বলছি।

তৌফিকা থামিয়ে দিলো ওর মা কে। উঠে দাড়ালো এবার ও। ওর হাতে থাকা পাসপোর্ট আর ভিসার কাগজ দেখে কপাল কুচকালো আরাব। ওগুলো বাসায় পৌছে দিয়ে গেছে দেখে অবাক না হয়ে পারলো না ও। এরমধ্যেই তৌফিকা দেখলো আরাবের পেছনে মুফতাহির এপ্রোন স্থেটোস্কোপ হাতে ভেতরে ঢুকছে মুফতাহির। শক্তভাবে পাসপোর্টটা একহাতে মুঠো করে নিলো ও। চোখ বেয়ে টুপটাপ দুফোটা জল বেরিয়ে আসলো ওর। বোনের চোখে জল দেখেই মাথা ফাকা হয়ে গেলো আরাবের। পেছন ফিরে মুফতাহিরকে দেখে চোখমুখে তীব্র রাগ ফুটে উঠলো। হাত মুঠো করে আবারো সামনে বোনের দিকে তাকিয়ে বললো,

-তোর চোখে পানি কেনো আপু?

….

-আপু কাদছিস কেনো বল!

-কাদছিস কেনো? কে কাদিয়েছে তোকে?

চেচিয়ে বললো আরাব। তৎক্ষনাৎ সশব্দে চড় পরলো ওর গালে। থমকে গেছে পুরো রংধনু। দোয়া আতকে উঠে কেদে দিলো। তৌফিক ওয়াহিদ তার কান্নারত মিসেসকে আটকালেন। গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে রয়েছে আরাব। তৌফিকা কাদতে কাদতে বললো,

-তুই কাদিয়েছিস আমাকে! তুই ঠকিয়েছিস আমাকে! তুই আরাব! তুই!

আস্তেধীরে মাথা তুললো আরাব। দোয়া একপা এগিয়ে কম্পিতকন্ঠে বললো,

-আপু…

হাত দিয়ে ওকে থামিয়ে দিলো আরাব। আঙুল নাড়িয়ে না বুঝালো ওকে। তৌফিকা বললো,

-একটা এতোটা নিকৃষ্ট মানুষের সাথে দিনের পর দিন সংসার করেছি। এতোগুলো দিন যাবত ভালো না বেসে শুধু টাকার জন্য আমাকে ঠকিয়ে এসেছে সে লোকটা। ভালোমানুষির মুখোশ পরে থেকেছে আমাদের সবার সামনে। আর তুই সেটা জেনেও আমাকে জানতে দিস নি আরাব!

….

-তার চেয়েও বড় কথা,সেই মানুষটা দোয়ার বাবার এন্টিডোড কেলেংকারীর জন্য দায়ী। ওই‌ লোকটার জন্য আট আটটে নিষ্পাপ শিশু মারা গেছে। ওই লোকটার জন্য দোয়া আজ পিতৃহীন। দোয়ার মা বিধবা। ওদের পুরো পরিবার এতো কষ্টে থেকেছে এতোগুলো দিন। ডক্টর সুমনের মতো সেই মানুষটাও চরম শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে। এই সবটা জানা তোর আরাব। আর সবটা জেনে তুই তাকে আইনের হাতে তুলে না দিয়ে এতোগুলো দিন আইনের হাত থেকে বাচিয়ে এসেছিস তুই আরাব! আইনকে ফাকি দিয়েছিস তুই! অপরাধ করেছিস তুই!

….

-দোয়া না হয় আমাকে ভালোবাসে,তোকে ভালোবাসে,টুইঙ্কেলকে ভালোবাসে,নিজের ভাইকে ভালোবাসে। তাই নিজের ভাইয়ের জীবন বাচানো লোকটাকে বাচিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তুই কেনো লুকিয়ে গেলি আরাব? কেনো? শুধু বোনকে ভালোবাসিস বলে? বোনের সংসার বাচাবি বলে? এজন্য তুই এই জঘন্য লোকটার বিশ্বাসঘাতকতাকে মেনে নিলি? ওর অপরাধকে লুকিয়ে গেলি? ওর শাস্তিকে বাচিয়ে দিলি? বল আরাব? বল?

তৌফিক ওয়াহিদ বললেন,

-এতোবড় অন্যায় তোমার কাছ থেকে আশা করিনি আরাব। এতোগুলো দিন সত্যিটা লুকিয়ে তুমি আমাদের আরো বেশি দুর্বল করে দিয়েছো। আগে বললে…

আরাব মাথা নিচু করে বললো,

-আমি ওকে শাস্তি দিতাম বাবা। আপু দেশের বাইরে গেলেই আমি…

-কেনো? কেনো এতোদিন অপেক্ষা করবি তুই? যাতে আমি কষ্ট না পাই এজন্য? এতে আমাকে ঠকানো হলো না আরাব? ওই‌ লোকটা যদি মিথ্যে বলে আমাকে ঠকিয়ে থাকে,তুইও আমার কাছ থেকে সত্যিটা লুকিয়ে আমাকে ঠকিয়েছিস আরাব!

বোনের কথাগুলো শুনে আরাবের চারপাশে অদৃশ্য এক ঝড় বইতে লাগলো যেনো। দোয়া কাদছিলো। বলে উঠলো,

-আপু আরাব তো তোমার জন্যই…

-একটাও কথা নয় দোয়া। একটাও কথা নয়!

কড়া গলায় দ্বিতীয়বারের মতো দোয়াকে থামিয়ে দিলো আরাব। তৌফিকা দোয়ার দিকে তাকালো। ওর ভাই ওর জন্য দোয়ার সাথেও এভাবে কথা বলছে। দোয়ার দিকে এগিয়ে হাতজোড় করে বললো,

-আমাকে ক্ষমা করে দিস বোন। ক্ষমা করে দিস। আমার জন্য তুই ন্যায় পাসনি আজও। আমার জন্য তোর বাবা আজও‌ ন্যায় পায়নি। সবকিছুর জন্য আমার প্রতি আরাবের স্বজনপ্রীতি দায়ী! সবকিছুর জন্য আমি দায়ী! আমার জন্যই…

দোয়া ওর হাত জরিয়ে ধরলো। কেদেকেদে বললো,

-ওভাবে বলো না আপু। বলো না প্লিজ!

তৌফিকা এবার মুফতাহিরের দিকে তাকালো। মুফতাহির সবধরনের পরিবেশের জন্য প্রস্তুত এমন এক ভঙিমায় দাড়িয়ে শান্তভাবে তৌফিকার দিকে তাকিয়ে রইলো। ওর সামনে গিয়ে তৌফিকা দাতে দাত চেপে বললো,

-তোমাকে অপমান করতেও আমার রুচিতে বাধছে মুফতাহির। আমার জীবনের সবচেয়ে মুল্যবান জায়গাটায় বসিয়েছিলাম তোমাকে। বিনিময়ে এতোবড় মুল্য চুকাতে হলো আমাকে। ভালোবাসার বিনিময়ে বিশ্বাসঘাতকতার বিষাক্ত ছুড়িকাঘাত…হাহ্! মানুষ কতোটা নিকৃষ্ট হয়,আমার ধারনার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানুষটা তার উদাহরন হয়ে গেলো।

-আমি যা করেছি,ক্ষমা প্রাপ্য না আমার। শাস্তি প্রাপ্য। শাস্তিই চেয়েছিলাম আরাবের কাছ থেকে। কিন্তু তুমি আর টুইঙ্কেল…

-টুইঙ্কেলের নাম নেবে না তুমি! নেবে না তুমি টুইঙ্কেলের নাম! আমার লাইফটা শেষ করে দিয়েছো তুমি! আমার মেয়ের জীবনে তোমার কুৎসিত ছায়াও চাইনা আমি! গট ইট?

উত্তেজিত হয়ে পরলো তৌফিকা। তৌফিক ওয়াহিদ গিয়ে জরিয়ে ধরলেন ওকে। কয়েকজন পুলিশ ভেতরে ঢুকলো তখনই। আরাব চুপচাপ দেখছে শুধু। তৌফিকা প্রমান পেয়ে পুলিশকেও ডেকেছে। আঙুল তুলে মুফতাহিরের দিকে তাক করে তৌফিকা বললো,

-এই ব্লাডি কার্লপ্রিটকে এখান থেকে নিয়ে যান এখনি অফিসার! এর সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করুন! এমনভাবে শাস্তি দেবেন একে, কাউকে ঠকানোর শাস্তি কতোটা ভয়ানক,তার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে যেনো! নিয়ে যান একে! নিয়ে যান!

কাদতে কাদতে মেঝেতে লুটিয়ে পরলো তৌফিকা। দোয়া ছুটে গিয়ে জরিয়ে ধরলো ওকে। মুফতাহিরকে হাতকড়া পরিয়ে টানতে টানতে নিয়ে গেলো পুলিশ। উপরের ঘরের দিকে তাকিয়ে ধুকতে ধুকতে চললো মুফতাহির। শেষবারের মতো টুইঙ্কেলকে দেখার ইচ্ছে হচ্ছিলো ওর প্রচন্ড। কিন্তু তৌফিকার প্রতিক্রিয়ার জন্য কিছুই বলে উঠতে পারলো না। অনেকক্ষন চিৎকার করে কাদলো তৌফিকা। আস্তেধীরে আরাব বোনের কাছে হাটু গেরে বসলো। তৌফিকা সরে গেলো সাথেসাথে। চোখ মুছে,নাক টেনে দোয়াকে বললো,

-আমাকে একটা কথা দিবি দোয়া?

আরাব অসহায়ের চোখে তাকালো বোনের দিকে। আজ ওর বোন ওর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। যাকে ও সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে,সে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আস্তেকরে বললো,

-আপু?

-একদম কাছে আসবি না আমার! কোনো আপু নেই তোর! আপু বলে ডাকবি না তুই আমাকে! তোর মতো এক অন্যায়ের প্রশ্রয়কারীর মুখে আপু ডাক শুনতে চাইনা আমি! শুনতে চাইনা! মরে গেছে তোর আপু! মরে গেছে!

চেচিয়ে বললো তৌফিকা। পাগলের মতো মাথার চুলগুলো উল্টে ধরে উঠে দাড়ালো আরাব। এরইমাঝে টুইঙ্কেলের আওয়াজ আসায় সবাই উপরে তাকালো একবার। তৌফিকা দোয়ার দিলে ফিরে বললো,

-আজ তোর কাছে কিছু চাইবো দোয়া। আর তোকে তা দিতেই হবে!

দোয়ার চোখ দিয়ে জল গরাচ্ছিলো। শ্বাস আটকে বসে রইলো ও। কেনো যেনো মনে হচ্ছিলো,তৌফিকার এই একটা কথায় ওর সবটা বদলে যেতে চলেছে। সবটা! ভয়ে স্তব্ধ শরীরের অসাড় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আর জমে যাওয়া রক্তসঞ্চালনেও দুচোখ তার দায়িত্ব পালন করেই চলেছে। সিক্ত নয়নযুগলে অশ্রু নির্বাধ!

রাতের গভীরতা বেড়েছে। সেপ্টেম্বরের বৃষ্টিতে ভিজছে রাতের শহরের পিচঢালা পথ। হয়তো বাগানের ফোটা ফুলগুলোর গায়ে বৃষ্টির ফোটা পরে অসম্ভব সুন্দর কম্পন তুলে দিচ্ছে। আপাতত সে সৌন্দর্য র‌ধনুর কারো চোখে পরার নয়। ল্যাপটপের কিবোর্ডে অনবরত আঙুল চালাচ্ছে দোয়া। মাঝেমধ্যে ল্যাপটপের স্ক্রিন আর পাশের উন্মুক্ত ফাইলের পৃষ্ঠা উল্টে কিছু মিলিয়ে দেখছে। চোখের মোটা ফ্রেমের চশমাটায় স্ক্রিনের উজ্জল আলো প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশেই টেডিবেয়ার জরিয়ে ঘুমোচ্ছে টুইঙ্কেল। একপলক ওর দিকে তাকিয়ে চাদরটা আরো ভালোমতন গায়ে জরিয়ে দিলো দোয়া। আবেশে আরো ভালোভাবে শুয়ে পরলো টুইঙ্কেল। মুচকি হেসে চশমাটা চোখে ঠেলে দিয়ে আবারো কাজে মনোযোগ দিলো দোয়া। এরই মাঝে মিসেস ওয়াহিদ রুমে ঢুকলেন। টুইঙ্কেলকে ঘুমোতে দেখে দোয়ার দিকে এগিয়ে এসে বললেন,

-ঘুমাবি না?

দোয়া মাথা তুলে তাকালো। মুখে হাসি ফুটিয়ে চশমাটা খুলে ফেললো ও। কোল থেকে ল্যাপটপটা নামিয়ে বললো,

-মা? ঘুমোও নি তুমি এখনো?

-যেখানে মায়ের সন্তান রাতের পর রাত নির্ঘুম থেকে কাটিয়ে দিচ্ছে,মা কি করে ঘুমোয় রে মা?

দোয়া মাথা নামিয়ে নিলো। আবারো চেহারায় হাসি ফুটিয়ে বললো,

-তাজীনের ছেলে হয়েছে মা। নিরব ভাইয়া টেক্সট করেছিলো।

মিসেস ওয়াহিদ ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলেন দোয়ার দিকে। দোয়া মুখ লুকোবে বলে ব্যস্ততা দেখিয়ে বললো,

-কিছুক্ষন আগে। ব্ বলছিলাম যাই,ওরা মানা করলো। এতো রাতে যেতে হবে না।

-আব্…তোমার ও্ ওষুধটা খেয়েছো? বাবা খেয়েছে ওষুধ?

-জানো মা? আজকে অফিসে কিছু ক্লায়েন্টস্…

-এভাবে আর কতোদিন দোয়া? আর কতোদিন এভাবে মরে মরে বাচবি তুই?

দোয়া আটকে গেলো। ও বেশ বুঝতে পারছে,মিসেস ওয়াহিদ আবারো সেই একই কথা বুঝাতে এসেছেন ওকে। ধীর গলায় বললো,

-চলো ঘরে পৌছে দিচ্ছি তোমাকে।

-আমার কোনো ঘর নেই!

-কি বলছো মা? এটাই তো তোমার ঘর,তোমার সংসার!

-আর তোর ঘর? তোর সংসার? তা কবে জুড়বি তুই দোয়া?

দোয়া উঠে দাড়ালো এবার। নিজের হাতজোড়া শক্তভাবে একত্র করে বললো,

-এসব কি বলছো তুমি মা? এ্ এটা তো আমারও ঘর।

-এটাকে ঘর বলে না দোয়া। না একে সংসার বলে। শুধু চার দেয়ালে আটকানো এক প্রকোষ্ঠ বলে। যে প্রকোষ্ঠে,একবিন্দু ভালোবাসা,একবিন্দু শান্তি তোর জন্য অবশিষ্ট নেই। তুইই শুধু আছিস। দায়িত্বের বোঝা বয়ে বেরাবি বলে। তোকে এভাবে আমি আর দেখতে পারছি না দোয়া! আর পারছি না!

মিসেস ওয়াহিদ কাদতে লাগলেন। দোয়া এসে কাধে হাত রাখলো তার। নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো,

-দায়িত্বপালন কেনো মা? আমি যা করছি,ভালোবেসে করছি। জানো তো তুমি।

-কিন্তু যাকে ভালোবেসে করছিস,সে তো…এভাবে কতোদিন দোয়া? কতোদিন বলতে পারিস? আর কতোদিন চোখের সামনে তোকে একা একা টুইঙ্কেল,অফিস,রংধনু,আমরাদের সামলাতে দেখবো বলতে পারিস? যাদের জন্য তোর জীবনটা এলোমেলো,তাদের জন্যই‌ কেনো নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছিস তুই? ভুলে যা না সবটা! একটা নতুন করে শুরু কর? আমি কথা দিচ্ছি,আমি আর তোর বাবা তোর পাশে আছি। আজীবন থাকবো। আমরা জানবো,আমাদের একটাই মেয়ে। দোয়া। তুই আবার ব্…

-ঘরে যাও মা। চলে যাও এখান থেকে।

-কিন্তু দোয়া…

-প্লিজ মা! প্লিজ! আমি চাইনা টুইঙ্কেলকে নিয়ে,এতো রাতে,এই বৃষ্টিতে এ বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে। প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড!

চোখ বন্ধ করে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলেন মিসেস ওয়াহিদ। পারলেন না। আঁচলে মুখ ঢেকে কাদতে কাদতে উনি বেরিয়ে গেলেন দোয়ার রুম থেকে। এতোক্ষনে দোয়ার চোখের জল বেরিয়ে এলো। মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়লো ও। দম বন্ধ করে এভাবেই কান্না আটকে রাখা অভ্যেস হয়ে গেছে ওর এ আটমাসে। বিছানায় বসে ঘাড় ঘুরিয়ে ব্যালকনির দিকে তাকালো ও।ফুলগাছগুলোতে ফুল ফুটেছিলো। ঝড়ে গেছে। আগে ব্যালকনির ওই গাছের ফুল গোনা থাকতো দোয়ার কাছে। আর এখন শুধু দায়িত্বপালনে,গাছে পানি দিতে ব্যালকনিতে যায় ও। জীবনের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত বসন্ত ওর অগোচরে পার হয়ে গেছে। সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত কালবৈশাখীর ঝড়ো হাওয়া উপেক্ষিত হয়ে গেছে। কাঙ্ক্ষিত কৃষ্ণচুড়ার লাল,শ্রাবনের দক্ষিনা বাতাস সবকিছুর উপস্থিতি ফিকে পরে গেছে ওর কাছে। বাইরের বৃষ্টিটা দেখে ওর মনে পরলো,বৃষ্টিটা সেই শীতের অসময়ী বৃষ্টি নয়,সেই কাঙ্ক্ষিত কদমফোটা বর্ষারও বৃষ্টি নয় এটা। এ বৃষ্টি তো সেপ্টেম্বরের কোনো জমকালো অন্ধকার রাতের বৃষ্টি। যা নিরলসভাবে স্মৃতিচারনের চেষ্টারত। চোখ বন্ধ করে নিলো দোয়া। চোখের কোনা বেয়ে জল গরাচ্ছে ওর। বৃষ্টিপরা শব্দে দোয়ার নিশব্দ অশ্রুপ্রবাহ যেনো তাল মিলিয়ে বলে উঠলো,

‘ আমি আপনাকে অনুভব করতে পারছি আরাব। অনুভব করতে পারছি। আপনি যেখানেই আছেন,আমাকেই অনুভব করছেন তাইনা? ওইযে বলেছিলাম না? চোখ বন্ধ করলেই আপনাকে খুজে পাই আমার কাছে। খুব কাছে। ইচ্ছে তো করে চিরতরে চোখ বন্ধ করে নেই। যাতে এভাবেই আপনার সান্নিধ্য রয়ে যায় আমার কাছে। সবসময় শুধু আপনার অবয়বেই ডুবে থাকি আমি। কিন্তু কি করবো বলুন? অর্ধাঙ্গীনীর পরিবর্তে আপনার বলা সর্বাঙ্গীনীর পরিচয়ের জন্য এই দায়িত্বগুলো যে আমাকে চিরতরে ঘুমানোর অনুমতি দেয়ই না।
কেনো এমনটা করলেন আরাব? না চাইতেও আমাকে সবকিছু দিয়ে আপনি পরিপুর্ন করেছিলেন। আর যেইনা আমি কিছু চেয়ে বসলাম,আপনি মুখ ফিরিয়ে নিলেন? কিই বা বেশি চেয়েছিলাম আমি বলুনতো? কি বেশি চেয়েছিলাম? শুধু আজীবন পাশে চেয়েছিলাম আপনাকে। সবসময় কাছে চেয়েছিলাম আপনাকে। সবকিছু দিলেও আমার একমাত্র চাওয়াকে রাখেন নি আপনি আরাব। রাখেন নি! আমার জীবনকে রাঙিয়ে,আবারো আপনার অনুপস্থিতি নামক অন্ধকার অতলে রেখে গেছেন আমাকে আপনি। আপনার অনুপস্থিতিতে আমার সবে রাঙা মনমাঝার আজ গুমরে মরছে আরাব,অন্ধকারাচ্ছন্ন,আধারে ডোবা কোনো *এক বেরঙ চিলেকোঠায়*…

#চলবে…