এক মুঠো অনুভূতি পর্ব-৭+৮

0
366

#এক_মুঠো_অনুভূতি💖
লেখিকা- তাহসীন নাওয়ার রীতি
পর্ব:০৭

বারান্দায় বসে বসে সন্ধ্যার আকাশ দেখছে আশ্বিন। সেদিন ওহিকে তার বাসায় পৌঁছে দেওয়ার পর থেকে আর দেখা হয়নি তাদের।
মেয়েটিকে বিরক্ত করে তার রাগী রাগী সেই মুখটা দেখতে খুব ভালো লাগে আশ্বিনের। ওহির কথা মনে হতেই একটা মুচকি হাসি দেয় সে।

–এখানে বসে কি করছো বাবা?
আশ্বিন পাশে ফিরে মায়ের দিকে তাকিয়ে,
–কিছু না আম্মু। এমনি বসে আছি।
–এই নাও তোমার কফি।
আশ্বিন মুচকি হেসে কফির মগ হাতে নিয়ে।
–এটাই দরকার ছিলো এখন। ধন্যবাদ আম্মু।
আশ্বিনের মা তার মাথায় হাত বুলিয়ে,
–মন খারাপ, বাবা?
–না আম্মু। কাল তো ভার্সিটিতে নবীন বরণ। এই ক’দিন ধরে অনুষ্ঠানের জন্য ব্যাস্ত ছিলাম। এখন খুব টায়ার্ড লাগছে। তার উপর আবার ওই চিরকুট লেখককে নিয়ে টেনশনে আছি। যেভাবে হুমকি দিচ্ছে, আবার কোনো ঝামেলা না করে বসে।
–আশ্বিন, কোন সমস্যা হলে সাথে সাথে তোমার বাবাকে ফোন করে জানাবে। একা একা ঝামেলায় জড়িয়ে যেও না আবার।
–তুমি চিন্তা করো না আম্মু। আমিও ভেবেছিলাম আব্বুর সাহায্য নিবো। এখন দেখা যাক কি হয়।

আশ্বিনের মা মুচকি হেসে মাথা নেড়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে,
–তারপর বলো, তার কি খবর?
আশ্বিন মায়ের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে,
–কার কথা বলছো তুমি?
–আরে তার, ওইদিন রোদ বললো না কোন মেয়ে। সানগ্লাস নাকি চশমা, কি জানি বললো রোদ্দুর?
আশ্বিন মায়ের থেকে মুখ ফিরিয়ে হেসে উঠে,
–ফাইজার কথা বলছো?
–আচ্ছা, তাহলে মেয়েটার নাম ফাইজা..।
–হুম। এক মিনিট, কি ভাবছো তুমি? আম্মু, তুমি যা ভাবছো তেমন কিছুই না। ফাইজা এবার ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছে। এসেই এক কাহিনীর মাধ্যমে তার সাথে আমার পরিচয়। তুমি জানো, সে আমাকে চ্যালেঞ্জ করেছে আমার রেজাল্টের রেকর্ড ভাঙার?
–তাই নাকি? তার মানে খুব ভালো স্টুডেন্ট সে।
–হুম। মেয়েটা না, একদম বাচ্চাদের মতো। একটুতেই রেগে যায়, গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। তাকে রাগাতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। সেদিন কি হয়েছে জানো?

আশ্বিন হেসে উঠে মায়ের দিকে ফিরে কথাটা বলে আপনমনে ওহির গল্প মাকে বলতে থাকে। আশ্বিনের মা মুচকি হেসে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে তার কথাগুলো শুনতে থাকে। এই প্রথম আফরা ছাড়া অন্য কোন মেয়েকে নিয়ে আশ্বিনের মুখে প্রকাশ পাচ্ছে এতো সব গল্প! মা আগ্রহী নয়নে তাকিয়ে আছে আশ্বিনের দিকে।

রাতে,

ওহি পড়ার টেবিলে বসে আপন মনে বই পড়ছে হঠাত ফোনের দিকে চোখ যেতেই সকালের কথা মনে পড়ে যায় তার। মুহূর্তেই সোজা হয়ে বসে সে। কিছুক্ষণ ফোনের দিকে একধ্যানে তাকিয়ে বইটা বন্ধ করে ফোন হাতে নেয়। আজ আফরার কাছ থেকে আশ্বিনের নম্বর নিয়ে এসেছে সে।
সেদিনের পর থেকে এতোদিন ভার্সিটিতে আশ্বিন না আসায় ওহি নিজের অজান্তেই কাজটা করে ফেলেছে।
যার থেকে সে পালিয়ে বেড়াতে চায়, তার এই অনুপস্থিতি যে তাকে এভাবে মিস করাবে জানা ছিলো না ওহির। প্র্যাক্টিস শেষে অডিটোরিয়ামে যখন একা বসে থাকে তখন তাকে বিরক্ত করে রাগিয়ে দেওয়ার জন্য আশ্বিন এই ক’দিন না থাকায়, আজ তাকে ফোন দিয়ে দুটো বকা দিবে ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে।

ফোন হাতে নিয়ে আশ্বিনের নম্বর বের করে কল দিবে কিনা এই নিয়ে কিছুক্ষণ দো’টানে ভুগে অবশেষে ফোন দিয়েই বসে।
কিন্তু দুবার রিং হওয়ার পর আশ্বিন ফোন রিসিভ না করায় ওহি যেই না ফোন কেটে দিবে তখনই ফোনের অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসে চিরচেনা সেই কণ্ঠ,
–হ্যালো!
মুহূর্তেই চুপসে যায় ওহি। আশ্বিনের উপর রাগ করে তাকে বকে দেওয়ার জন্য ফোন দিয়ে থাকলেও এখন তার কণ্ঠ দিয়ে কোন কথাই আসছে না আর। এদিকে, অপর প্রান্ত থেকে ক্রমশ ভেসে আসছে আশ্বিনের কণ্ঠ,
–হ্যালো, কে বলছেন? আজব তো! কথা বলছেন না কেনো?
এবার ওহি নিচু সুরে বলে উঠে,
–আশ্বিন ভাইয়া, আমি ওহি বলছি।

হঠাত করে ওহির কথায় আশ্বিন কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে থেকে ফোনের স্ক্রিনে নম্বরের দিকে তাকিয়ে,
–তুমি আমাকে ফোন দিয়েছো? আমার নম্বর কোথায় পেয়েছো?
–আফরা আপু দিয়েছে। কেনো? কোনো সমস্যা?
–না, সমস্যা কেনো হবে? কিছু বলবে?
আশ্বিনের কথায় ওহি কিছুক্ষণ চুপ থেকে পড়ার টেবিল থেকে উঠে ধীরে ধীরে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে,
–আপনি এই কদিন ধরে ভার্সিটি আসছেন না। তাই ফোন দিলাম..।
–হুম। নবীন বরণের প্রস্তুতির কাজ নিয়ে এই ক’দিন খুব ব্যস্ত ছিলাম। ভার্সিটিতে গিয়েছিলাম দু এক বার, তখন তোমাদের ক্লাস ছিলো না হয়তো।
–ওহ!
–হুম। আমাকে মিস করেছো নাকি?
আশ্বিনের সোজা সাপ্টা কথায় মুহূর্তেই ওহির বুক ধক করে উঠে। মিস তো করেছেই সে, তাই তো আফরার কাছে নম্বর নিয়ে তাকে ফোন দেওয়া। কিন্তু আশ্বিনের কাছে তা প্রকাশ করলে মুহূর্তেই সে হয়ে উঠবে একজন হাসির পাত্রী। তিল’কে তাল বানিয়ে ফেলতে দু’মিনিট ও ভাববে না আশ্বিন। তাই কথাটা চেপে গিয়ে ওহি বলে উঠে,
–মিস করবো কেনো? আপনি আমার সিনিয়র ভাইয়া, ভার্সিটিতে আসছেন না। তাই আরকি খোঁজখবর নিলাম। তাছাড়া কিছুই না।
ওহির কথায় আশ্বিন শব্দ করে হেসে উঠে,
–দেখেছো? কদিন ভার্সিটি যাইনি, এর মধ্যেই আমার বিরক্ত করাগুলো মিস করছো তুমি। নিশ্চয়ই আমার মতো অন্য কারো উপর রাগ দেখাতে পারছো না। তাই না?
–আপনাকে কে বলেছে এই কথা? শুধু শুধু বেশি বোঝেন। আপনার খোঁজ নেওয়াই দেখছি আমার ভুল হয়েছে।
–আচ্ছা ঠিক আছে, মেনে নিলাম তোমার কথা। এখন রাখছি, কাল দেখা হবে। বাই।

আশ্বিনের কাছে বিদায় জানিয়ে ওহি বারান্দার দোলনায় বসে পড়ে। সত্যিই কি এই ক’দিনেই আশ্বিনের বিরক্ত গুলো খুব মিস করছে সে? উত্তর জানা নেই তার। আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমে চলে আসে।
এদিকে, ওহির সাথে কথা বলে আশ্বিন এখনো মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে ফোনের দিকে। নম্বরটা সুন্দর করে চশমা লিখে সেভ করে রেখেছে সে।
মনের অজান্তে দুজনেই মিশে যাচ্ছে দুজনের রোজকার অভ্যাসে। আর, মনের অন্তরালে প্রকাশ পাচ্ছে এক মুঠো অনুভূতির।

পরদিন,

ফারজানা বেগম সকাল থেকে ওহিকে শাড়ি পড়িয়ে চুল আঁচড়ে দিচ্ছেন। ওসমান একবার ওহির রুমে এসে,
–এতোক্ষণ লাগে তোর রেডি হতে? ঘুম থেকে উঠেই দেখছি লেগে পড়েছিস, এখনও হয়না তোর?
–ভাইয়া, আমি কোন সিনেমার নায়িকা না যে, শাড়ি পড়ে চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে চোখে একটু কাজল দিলেই একদম রেডি হয়ে যাবো। মা শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে এখন হালকা করে সাজিয়ে দিবে তারপর আমি রেডি।
–তোকে ভার্সিটি নামিয়ে দিয়ে আমার ক্লাসে যেতে হবে। আজ মনে হচ্ছে আর ক্লাস করতে হবে না আমার।
ওসমান কথাটা বলে ওহির ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। ওহি গাল ফুলিয়ে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে,
–মা, দেখেছো তুমি ভাইয়া কেমন করলো?
–দুই ভাই বোন মিলে সারাদিন ঝগড়া করাই তো তোমাদের কাজ। এখন দেখি, তাকাও আমার দিকে।
ওহি আর কথা না বাড়িয়ে মায়ের দিকে ফিরে।

কিছুক্ষণ পর ওহি রেডি হয়ে ড্রইং রুমের দিকে আসতেই ওসমান তার দিকে তাকিয়ে,
–সুন্দর লাগছে তোকে। কিন্ত তোর চশমা কোথায়?
–সাজগোজ করেছি তাই আজ চশমা পড়বো না।
–উষ্টা খেয়ে পড়ে গিয়ে যখন দাঁত ভেঙে ফেলবি, তখন বুঝবি এই সাজগোজ করে তোর কতো লাভ’টাই হয়েছে।
ওসমানের কথায় ফারজানা বেগম মাথা নাড়ল,
–ওসমান ঠিক বলেছে ওহি। চশমা সাথে নিয়ে যাও। ছবি তোলার সময় আর গানের সময় নাহয় চশমা খুলে রেখো।
মায়ের কথায় ওহি চশমা পড়ে ওসমানের সাথে বেরিয়ে এসে জাইমাকে কল করে,
–কোথায় আছিস তুই?
–আমি তো রেডি হচ্ছি। আর বেশিক্ষণ লাগবে না আমার।
–ঠিক আছে। আমি ভাইয়ার সাথে চলে যাচ্ছি। তুই ভার্সিটি পৌঁছে আমাকে ফোন করিস।
–ঠিক আছে।

ওসমান ওহিকে ভার্সিটির সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। ওহি চুপচাপ ভার্সিটিতে প্রবেশ করে আশেপাশে সবাইকে দেখতে থাকে।
আজ ভার্সিটি খুব সুন্দর করেই সাজানো হয়েছে। মেয়েরা সুন্দর করে শাড়ি পড়ে এসেছে আর ছেলেরা পাঞ্জাবী। ওহি তাদের দিকে তাকিয়ে সামনে ফিরে দেখে দূর থেকে আশ্বিন আর রোদ্দুর কথা বলতে বলতে এগিয়ে আসছে।
আশ্বিনকে দেখে ওহি স্তব্ধ হয়ে যায়। এতদিন পর তাকে দেখতে পেয়ে ওহির ঠোঁটের কোণে হাসি ফুঁটে উঠে। এদিকে আশ্বিন কথা বলতে বলতে সামনে তাকাতেই ওহিকে দেখে থমকে যায়। শ্যামবর্ণের অধিকারী এই মায়াবী পিচ্ছি মেয়েটাকে শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখে, আশ্বিনের চোখ আটকে যায় তার দিকেই। ওহিও দূর থেকে তাকেই দেখছে।
আশ্বিন ধীর পায়ে ওহির দিকে এগিয়ে আসতে নিতেই হঠাত রাফিন চলে আসে ওহির কাছে। রাফিনকে দেখে আশ্বিন থেমে যায় তারপর কিছুক্ষণ তাদের দিকে তাকিয়ে রোদ্দুরের সাথে চলে যায় সে।
ওহি রাফিনের সাথে কথা বলার সময় আড়চোখে আশ্বিনের চলে যাওয়া দেখে ক্ষুব্ধ হয়। মনে মনে বলে উঠে,
–দেখা করে গেলে কি এমন হতো? আমিও এখন আর কথা বলতে যাবো না। দেখি কি করেন উনি।

–চলবে(ইনশাআল্লাহ)

#এক_মুঠো_অনুভূতি💖
লেখিকা- তাহসীন নাওয়ার রীতি
পর্ব:০৮

অডিটোরিয়ামের সিটে বসে আছে ওহি। তার পাশেই বসে রাফিন অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা করছে কিন্ত ওহির সেদিকে কোন খেয়াল নেই। সে দূর থেকে আশ্বিনের সব কর্মকান্ড লক্ষ্য করছে। কিভাবে ব্যাস্ত পাখির মতো এদিক সেদিক সবকিছু খেয়াল করছে আশ্বিন। রোদ্দুরও তার সাথে তাল মিলিয়ে ঘুরছে।
–তুমি কি আমার কথা শুনতে পারছো, ওহি?
রাফিনের কথায় ওহি আশ্বিনের থেকে চোখ সরিয়ে তার দিকে তাকিয়ে,
–জি, শুনেছি।
–ওহ! যেভাবে আশেপাশে তাকিয়ে আছো, আমি ভাবলাম আমার কথা হয়তো খেয়ালই করছো না তুমি।
–না আসলে, অডিটোরিয়ামের ডেকুরেশনটা দেখছিলাম। খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।
–হুম। আচ্ছা, তুমি বসো। আমি একটু ওদিকটা দেখে আসছি।
ওহি মাথা নাড়াতেই রাফিন সেখান থেকে চলে যায়।

এদিকে,
হাতের চিরকুট পড়ে চুপচাপ একটা চেয়ারে বসে আছে আশ্বিন। রোদ্দুর তার পাশে দাঁড়িয়ে হিসেবের খাতা দেখছে। আফরা তাদের কাছে এসে,
–আশ্বিন, রোদ দেখ তো আমাকে কেমন লাগছে।
আফরার কথায় আশ্বিন একবার তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে,
–খুব সুন্দর লাগছে তোকে আফরা। তোকে সব সময়ই সুন্দর লাগে।
আফরা মুচকি হেসে রোদ্দুরের দিকে ফিরে তাকিয়েই দেখে সে চিন্তিত হয়ে হিসেবের কাগজ দেখছে।
–কি হয়েছে তোদের? কোন সমস্যা?
রোদ্দুর মাথা তুলে আফরার দিকে তাকিয়ে,
–ওই চিরকুট লেখক অনেক বড় কাহিনী করেছে আফরা। নিজ হাতে এতগুলো দিন আমরা যা যা ঠিক করেছি, এখন তার কোন কিছুই ঠিক ভাবে নেই।
–মানে?
–মানে, এই দেখ খাবার, ফুল কোনকিছুই আমাদের দেওয়া হিসেবের মতো আসেছি। সাউন্ড বক্স এর অর্ডার নাকি দেওয়া হয়নি। আরো সব ছোট ছোট বিষয় বাদ পড়েছে। অথচ আমরা নিজ হাতে কাল বিকেলে সব ঠিকঠাক করেই বাসায় ফিরেছি।
আফরা অবাক হয়ে আশ্বিনের দিকে তাকায়।
–সব থেকে বড় কথা হলো, বিশেষ অতিথি আর প্রধান অতিথিদের নাকি কোন আমন্ত্রণ পত্র পাঠানো হয়নি। কিন্ত, ফাংশনের তারিখ ঠিক হওয়ার পরদিনই আমি আর আশ্বিন মিলে উনাদের আমন্ত্রণ পত্র দিয়ে এসেছি। এখন উনারা বলছেন, তারা নাকি এই বিষয়ে কিছুই জানেন না। এখন তুই বল, হাসান স্যারকে আমরা কি জবাব দিবো? স্টুডেন্ট সবাই আসতে শুরু করেছে, একটু পর ফাংশন শুরু হবে।

রোদ্দুরের কথায় আফরা আশ্বিনের হাত থেকে চিরকুট নিয়ে দেখে সেখানে লেখা আছে,

“কেমন সারপ্রাইজ দিলাম আশ্বীন? এখন কীভাবে সবটা সামলাবে তুমি? আমার তো ভয় হচ্ছে, হাসান স্যার না এবার তোমাকে লিডার থেকেই বাদ দিয়ে দেন। বেচারা আশ্বীন!”

–এখন কি করবি আশ্বিন?
আফরার কথায় আশ্বিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়িয়ে,
–আশ্বিন এতো সহজে হেরে যেতে শিখেনি, আফরা। ওই চিরকুট লেখকের সব প্ল্যান নষ্ট করে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি আমি। তুই চিন্তা করিস না, গিয়ে ফাইজার সাথে বসে থাক। দেখ, একা একাই বসে কিভাবে রেগে এদিকে তাকিয়ে আছে।

আশ্বিনের কথায় আফরা ওহির দিকে ফিরে মুচকি হেসে তার কাছে চলে যায়। আফরা চলে যেতেই আশ্বিন আর রোদ্দুর বেরিয়ে পড়ে।
——————

ওহি আর জাইমা একসাথে বসে আছে। ইতিমধ্যে হাসান স্যার স্টেজে সকলের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিচ্ছেন। হঠাত রোহান এসে ওহির পাশে বসে,
–কেমন আছো চশমিশ?
ওহি রোহানের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে,
–আরে, রোহান ভাইয়া! আমি ভালো আছি, আপনি ভালো আছেন তো?
–হুম। চশমিশ, কাপল ডান্স করবে নাকি আমার সাথে?
রোহানের কথায় ওহি রাগে দাঁতে দাঁত চেপে একটা হাসি দিয়ে,
–অবশ্যই ভাইয়া। কেনো না? তবে তার আগে, আমার কাছে একটা ভিডিও আছে। দেখুন তো পছন্দ হয় কিনা।
ওহি রোহানের সামনে তার ফোন দেয়। রোহান ভিডিও দেখে ওহির দিকে শক্ত ভাবে তাকাতেই ওহি হেসে উঠে।
–পছন্দ হয়নি ভাইয়া? হাসান স্যারকে ভিডিওটি দেখালে কিন্ত স্যার খুশিই হবেন।

রোহান ওহির হাত থেকে ফোন ছিনিয়ে নিতে চাইলে ওহি ফোন সরিয়ে ফেলে।
–ভিডিওটা ডিলিট করেও লাভ নেই ভাইয়া। আমি আরো অনেকের কাছেই ভিডিওটা পাঠিয়ে দিয়েছি।
রোহান রেগে ওহিকে হুমকি দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। রোহান চলে যেতেই জাইমা ওহিকে ধরে,
–কিসের ভিডিও এটা?
–রোহান আর মিতু কিছুক্ষণ আগেই একটা ছেলেকে বাজে ভাবে বিরক্ত করছিলো। ছেলেটা সহজ সরল দেখে তাদের কথায় ভয় পেয়ে, কথা মতো কাজ করছিলো।
সেদিন রোহান বলেছিলো না, স্যারকে তাদের কথা বললেও লাভ নেই কারণ আমাদের কাছে কোন প্রমাণ নেই। তাই এখন প্রমাণ জোগাড় করেছি।
–ভালো করেছিস। এবার এই ভিডিওর ভয় দেখিয়ে এদের মানুষ করবো।
ওহি কিছু না বলে মাথা নেড়ে হ্যা বোঝায়।

কিছুক্ষণ পর হাসান স্যার সকল নবীনদের ফুল দিয়ে স্বাগতম জানাতে বললে দুজন ছেলে মিলে সবাইকে একটি করে লাল গোলাপ দিতে শুরু করে। কিন্ত দুর্ভাগ্যক্রমে ওহির কাছে আসতেই ফুল শেষ হয়ে যায়। আফরা তাদের কাছে এসে,
–সাদমান, কি হয়েছে?
–ফুল শেষ হয়ে গিয়েছে, আফরা।
আফরা কিছুক্ষণ চুপ থেকে ওহিকে কিছু বলতে নিবে তখনই আশ্বিন আর রোদ্দুর তাদের সামনে আসে। আশ্বিনকে দেখে ওহি বলে উঠে,
–সমস্যা নেই আপু। অনুষ্ঠানের যিনি দায়িত্বে ছিলেন, তিনি সবসময় আমাকে গণনার বাহিরে রেখেই কাজ করেন। তাই তো আমাকে দেওয়ার সময়ই ফুল শেষ হয়ে গিয়েছে।
ওহির কথায় আফরা আশ্বিনের দিকে তাকাতেই দেখে সে ওহির দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে। হঠাত রাফিন তাদের কাছে এসে,
–ফুল শেষ হয়ে গিয়েছে? এটা কি করে সম্ভব? আশ্বিনের কাজে তো কখনো ভুল থাকে না। যাই হোক আশ্বিন, প্রধান আর বিশেষ অতিথিরা কি আসবেন না নাকি? না মানে, কখনও তো এতো দেরি করেন না তাই বললাম। উনারা চলে আসলে আমি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি শুরু করবো।

রাফিনের কথা শুনে আফরা মাথা নিচু করে ফেলে। দোষ না করেও প্রিয় বন্ধুকে এভাবে সবার সামনে ছোট হতে হবে কথাটা মানতে পারছেনা সে।
আশ্বিন রাফিনের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনই তার পিছনে ফিরে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে,
–এইতো চলে এসেছেন।
আশ্বিনের কথায় সবাই একসাথে পিছনে তাকিয়ে দেখে হাসান স্যার অতিথিদের নিয়ে অডিটোরিয়ামে প্রবেশ করছেন, তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন আশ্বিনের বাবা। তাদের প্রবেশ করতে দেখে আশ্বিন আর রোদ্দুর চলে যায় আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। আফরা তা দেখে যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচে। রাফিন কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে,
–ওহি। সবার আগে তোমার গান দেওয়া হয়েছে। এসো আমার সাথে।
রাফিনের কথায় ওহি তার পিছু পিছু চলে যায়।
——————-

স্টেজে বসে আপনমনে গান গাইছে ওহি। সবাই মুগ্ধ নয়নে তার দিকে তাকিয়ে তার গান উপভোগ করছে। আশ্বিন একটু দূরে বসে এক ধ্যানে ওহির দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা অনেক বেশি অভিমানী। সামান্য ফুল নিয়েও আশ্বিনের উপর রাগ দেখাতে ছাড় দেয়নি সে। অথচ এখন সব রাগ ভুলে আপন মনে গান গেয়ে যাচ্ছে।
আশপাশ থেকে কড় তালির শব্দ শুনে ধ্যান ভাঙে আশ্বিনের। ওহি গান শেষে মুচকি হেসে স্টেজ থেকে নেমে পড়েছে। ওহিকে যেতে দেখে আশ্বিনও কিছু একটা ভেবে উঠে পড়ে।

মায়ের সাথে কথা বলতে ভার্সিটির মাঠে চলে আসে ওহি। কথা শেষ করে সামনে তাকাতেই দেখে একটা মেয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে,
–তোমার নাম কি ওহি?
–জি। আমিই ওহি।
ওহির কথায় মেয়েটি মুচকি হেসে একটি ফুল এগিয়ে দিয়ে,
–আমাদের ভার্সিটিতে তোমাকে স্বাগতম!
ওহি অবাক হলেও মেয়েটির হাত থেকে ফুল নিয়ে,
–ধন্যবাদ আপু।
মেয়েটি মুচকি হেসে চলে যেতেই হঠাত আর একটি ছেলে এসে তার দিকে ফুল দিয়ে,
–ভার্সিটিতে তোমাকে স্বাগতম!
ওহি তার হাত থেকে ফুল নিয়ে কিছু বলতে নিবে তার আগেই ছেলেটি চলে যায়।
একে একে কয়েকজন এসে ওহিকে একই ভাবে ফুল দিয়ে চলে যাচ্ছে। ওহি অবাক হয়ে তাদের কর্মকান্ড দেখছে। তখন ছোটু এসে ওহির দিকে একটা ফুল দিয়ে,
–তোমারে ভার্সিটিতে স্বাগতম পিচ্চি আপা।
ওহি ফুল নিয়ে ছোটুকে ধরে,
–এই ছোটু, এই ফুল কে দিয়েছে তোকে?
ছোটু হেসে ওদিকে ইশারা করেই দৌড়ে চলে যায়। ওহি সেদিকে ফিরে দেখে লাল পাঞ্জাবী পড়া একটি ছেলে তার দিকেই এগিয়ে আসছে। চোখে রোদ পড়ায় তার চেহারা দেখতে পারছে না ওহি। ছেলেটি কিছুটা সামনে এগিয়ে আসতেই ওহি স্তব্ধ হয়ে যায়। মুখ দিয়ে অজান্তেই বেরিয়ে যায়,
–আশ্বিন!

আশ্বিন ধীরে ধীরে ওহির সামনে এসে দাঁড়াতেই ওহি মাথা নিচু করে হাতে থাকা ফুলগুলোর দিকে তাকায়।
–ফুলগুলো আপনি পাঠিয়েছেন?
–কি মনে হয়? এরা সবাই মিলে একটা পিচ্চিকে আমাদের ভার্সিটিতে স্বাগতম জানিয়েছে।
–আমি মোটেও পিচ্চি না।
–পিচ্চিই তুমি। বয়সের দিকে না হলেও হাইটের দিকে তুমি পিচ্চি। পিচ্চি বলেই একটুতেই রেগে যাও।
ওহি একনজর আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কাটে। আশ্বিন ওহির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে একটা সাদা গোলাপ তার দিকে এগিয়ে দেয়। ওহি কিছুটা অবাক হয়েই ফুল নিয়ে,
–সাদা গোলাপ! আমার খুব পছন্দের ফুল। ধন্যবাদ।
ওহি মুচকি হেসে কথাটা বলে ফুলের ঘ্রাণ নিতে থাকে। আশ্বিন ঘোর লাগা দৃষ্টিতে ওহির দিকে তাকিয়ে,
–অদ্ভুত ব্যাপার তাই না? একটা ফুল পাওনি বলেই তুমি অভিমানী হয়েছো। ফুলকে কি ফুল দিয়ে স্বাগতম জানানো যায়?

আশ্বিনের কথায় মুহূর্তেই ওহির বুক ধক করে উঠলো। অবাক নয়নে আশ্বিনকেই দিকে তাকাতেই দেখে সে ওহির হাতের ফুলের দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো মনের অজান্তেই মুখ ফোঁসকে কথাটা বলে ফেলেছে সে। মুহূর্তেই একটা বাহানা ধরে ওহির সামনে থেকে পালিয়ে যায় আশ্বিন। ওহি মুগ্ধ নয়নে আশ্বিনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। বাতাসে তার সামনের ছোট চুলগুলো মুখের উপর এসে পড়ছে, হাত দিয়ে চুলগুলো কানের পিঠে গুজে একটা লাজুক হাসি দেয় ওহি।

–চলবে(ইনশাআল্লাহ)