এক রক্তিম আলো পর্ব-০২

0
394

#এক_রক্তিম_আলো
#আরোহী_ইসলাম
#পর্ব:২

ধ্রুব অবনির যাওয়ার ‍দিকে তাকিয়ে বললো ‘ এই কাচ গুলো কে উঠাবে এখন?
ধ্রুব কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে রুম থেকে বের হয়ে কাজের লোককে ডেকে কাচ গুলো উঠালো। এদিকে অবনি ধ্রুবের রুম থেকে দৌড়ে নিজের রুমে যাবে হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা লেগে মাথায় ব‍্যথা পেতেই আউচ করে উঠলো। অবনি সামনে তাকিয়ে দেখে রাহি দাঁড়িয়ে আছে। অবনি কিছুটা অবাক হয়ে বললো ‘ তুই আমার রুমে কেনো এসেছিস?

অবনির কথায় রাহি তখন কিছুটা ভয় পেয়ে বললো ‘ কিছু না এমনি এসেছি।’
এই বলে রাহি তাড়াতাড়ি করে চলে গেলো। অবনি রাহির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রুমে এসে দেখে বিছানা এলোমেলো হয়ে আছে। অবনি তাড়াতাড়ি করে বিছানা ঠিক করে ড্রয়ারের ভিতর থেকে চাবি বের করে আলমারি খুলে ফাইলগুলো দেখে শান্তির নিশ্বাস ফেললো। অবনি ফাইল গুলোতে হাত বুলিয়ে ভয়ার্ত কন্ঠে বললো’ এই ফাইল গুলো আমার জীবন, এইটা কোনো ভাবে কারো হাতে পরে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।’

নিচ থেকে ধ্রুবের মায়ের কন্ঠ স্বর শুনে অবনি তাড়াতাড়ি করে আলমারি আটকিয়ে চাবিটা ড্রয়ারে রেখে নিচে আসলো। অবনি নিচে এসে ধ্রুবের মাকে বললো ‘ কি হয়েছে শাশুড়ি মা?

ধ্রুবের মা তখন বললো’ ধ্রুবের সাথে শপিংমলে যাবি।’

অবনি শাশুড়ি মা বলাতে রাহি মুখ বাকা করে বললো ‘ বিয়ে হতে না হতেই শাশুড়ি মা ডাকতেছিস?

রাহির কথায় অবনি তখন মুচকি হেসে বললো ‘ বাহ রে শাশুড়িকে শাশুড়ি মা ডাকবো না তো কি ডাকবো?

রাহি তখন রেগে বললো ‘ ভুলে যাস না ধ্রুব কিন্তু এই বিয়ে মানে না। ধ্রুব আমাকে ভালোবাসে তোকে না।’

অবনি রাহির দিকে তাকিয়ে বললো ‘ ভালো বাসে না তো কি হয়েছে বাসবে।

রাহি তখন বললো’ সেটা কোনোদিনও হবে না।’
এই বলে রাহি নিজের রুমে চলে গেলো। রাহির কথায় অবনি তাচ্ছিল্য হাসলো। ধ্রুবের মা অবনি কাধে হাত রাখলো। অবনি ভেজা কন্ঠে বললো’ এই বিয়ের তো কোনো মানেই নেই? আমি জানি কোনোদিনও ধ্রুবের ভালোবাসা পাবো না আমি। তবুও আমি শেষ চেষ্টা করবো যাতে ধ্রুবও আমাকে ভালোবাসে।’

ধ্রুবের মা মুচকি হেসে বললো’ আমি জানি তুই পারবি। আমি তোর পাশে আছি।’
ধ্রুবের মায়ের কথায় অবনি মুচকি হাসলো।

এদিকে
রাহি রেগে মেগে রুমে আসলো। রাহির চোখ মুখ লাল দেখে রাহির মা বললো ‘ কি হয়েছে রাহি? রেগে আছিস কেনো?

রাহি তখন রেগে বললো ‘ ওই অবনি আমাকে ইনসাল্ট করছে। ওকে তো আমি এক তুড়িতেই শেষ করে দিতে পারি কিন্তু,

রাহির মা প্রশ্ন চাহনিতে বললো ‘ কিন্তু কি?
রাহি ভাবুক সুরে বললো ‘ দেখো মা আমাদের বিজনেসের ম‍্যানেজার জয় শেখ হঠাৎ করেই উধাও এরপর অবনির অস্বাভাবিক আচরণ। আগে অবনি আমাদের কথায় উঠতো আর বসতো আর এখন আমরা কিছু বললে ও আমাদের উপরে কথা বলে।

রাহির মা বললো ‘ জয় শেখ উধাও হয়ে গেছে এর জন্য অযথা অবনিকে সন্দেহ করিস না।’

রাহি পৈশাচিক হাসি দিয়ে বললো ‘ হুম কিন্তু অবনি ভেজা বিড়ালের মতো থাকে কিন্তু ও ভেজা বেড়াল না ও একটা কুমির। ওর আসল রুপ অতি তাড়াতাড়ি সবার সামনে বের করবোই আমি।’

” ধ্রুবের বাবা একজন বিজনেস ম‍্যান। রাহি ধ্রুবের বাবার সাথে সেই বিজনেস সামলাই। কিছু দিন আগে হঠাৎ করে রাহির ম‍্যানেজার জয় শেখ নিখোঁজ। পুলিশ তাকে খুজতেছে। এই নিয়ে রাহি অনেক চিন্তিত।”

ধ্রুবের মা ধ্রুবকে ডাক দিয়ে বললো ‘ ধ্রুব অবনির কিছু জামাকাপড় লাগবে। তুমি একটু অবনির সাথে বাহিরে যাও।’

ধ্রুব বিরক্ত কন্ঠে বললো ‘ পারবো না আমি ওর সাথে যেতে।’

ধ্রুবের কথা শুনে ধ্রুবের মা তখন চোখ রাঙিয়ে বললো ‘ধ্রুব ও তোমার বিয়ে করা বউ। ওর সাথে তুমি এই ভাবে কথা বলতে পারো না বুঝেছো?

ধ্রুব তখন রেগে বললো ‘ এই বিয়ে আমি মানি না। এইটা একটা এক্সিডেন্টে হয়েছে,,
ধ্রুবকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ধ্রুবের মা বললো ‘ তুমি কি আমার কথা শুনবে?

ধ্রুব তখন বললো’ ঠিক আছে তাড়াতাড়ি রেডি হতে বলো।’

ধ্রুবের কথায় অবনি মুচকি হেসে বললো ‘ একটু দাড়ান সেন্টি জামাই। আমি এই যাবো আর এই আসবো।’ এই বলে অবনি দ্রুতগতিতে রুমে আসলো। অবনির যাওয়ার পানে তাকিয়ে ধ্রুব বললো’ এই মেয়ে আমায় কি বললো? সেন্টি জামাই?

‘ হ‍্যাঁ। তুমি বুঝি কানে কম শুনো?

অবনির কথা শুনে ধ্রুব ভ্রু উল্টে বললো ‘ তুই এই না গেলি এতো তাড়াতাড়ি আসলি যে? উড়ে এলি নাকি?

অবনি মুচকি হেসে বললো ‘ যেটা তুমি মনে করো।’

ধ্রুবের মা হেসে বললো ‘ এখন যা তোরা।’
মায়ের কথা শুনে ধ্রুব আচ্ছা বলে এক পা আগাতেই পিছন থেকে রাহি বলে উঠলো’ কোথায় যাচ্ছো ধ্রুব?

ধ্রুব পিছন ঘুরে নিচু সুরে বললো’ একটু বাহিরে যাচ্ছি।’

রাহি অবনির দিকে তাকিয়ে শান্ত চাহনিতে বললো’ আমিও যাবো তোমার সাথে।’
এই বলে রাহি ধ্রুবের হাত ধরলো। ধ্রুব শ্বাস নিয়ে বললো ‘ চলো।’

অবনি দ্রুতগতিতে ধ্রুবের থেকে রাহির হাত সরিয়ে নিজে ধ্রুবের হাত ধরে রাহিকে বললো’ বরটা আমার তোর না। ওনার হাত আমি ধরবো তুই না।’

অবনির কথায় রাহি রেগে বললো
‘ ধ্রুব তোমার সামনে ও আমাকে ইনসাল্ট করছে তুমি কিছু বলবে না? ওর কালা জাদুতে তুমিও কি বশ হয়ে গেছো নাকি?

রাহির কথায় ধ্রুব চিৎকার করে বললো
‘ Stoppp.! তোমরা শপিং করতে যাবে নাকি আমি একাই চলে যাবো?

অবনি তখন শান্ত চাহনিতে বললো ‘ চলো এখন।’
তারপর অবনি,ধ্রুব আর রাহি বাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়ির কাছে আসলো। অবনি ধ্রুবের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে গাড়ির কাছে আসতেই হাতটা ছেড়ে দিলো। ধ্রুব গাড়িতে বসতেই রাহি যেয়ে ধ্রুবের পাশের সিটে বসতে যাবে অবনি রাহির হাত ধরে বললো ‘ ধ্রুব ভাইয়ার পাশে আমি বসবো তুই না।’
এই বলে অবনি ধ্রুবের পাশের সিটে বসলো। ধ্রুব অবনির দিকে চোখ মুখ শক্ত করে বললো ‘ আমি তোকে ভালোবাসি না বুঝেছিস? তারপরও কেনো বউয়ের অধিকার ফলাচ্ছিস আমার উপরে?

রাহি বললো ‘ ধ্রুব ওকে তাড়াতাড়ি ডিভোর্স দিয়ে দাও। ওর জন্য আমাদের দূরত্ব বেড়ে গেছে। ওর মতো মেয়েদেরকে তোমার সাথে মানাই না।’

রাহি আর ধ্রুবের কথায় অবনি কষ্ট পেলো। অবনি মলিন কন্ঠে বললো ‘ আমি তোর বড় বোন হয় রাহি।
তুই আমাকে এই কথা বলছিস? আর ধ্রুব ভাইয়া যতদিন পযর্ন্ত আমরা এই পবিত্র বিয়ের বন্ধনে আছি ততদিন তোমাকে আমার এইগুলো সহ‍্য করতেই হবে।’

ধ্রুব চোখ রাঙিয়ে অবনির দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাতে লাগলো। রাহি কিছু বলতে যাবে অবনি বললো ‘ সেন্টি জামাই ফুলের দোকানে গাড়িটা দাড় করিও তো।’

ধ্রুব ড্রাইভ করতে করতে বললো’ সেন্টি জামাই বলছিস কেনো আমাকে?

অবনি মুচকি হেসে তখন বললো’ এই যে তুমি আমার বোনকে বিয়ে করতে পারলে না এর জন্য ছ‍্যাকা খেলে। তাই তোমাকে ছ‍্যাকা জামাই না বলে সেন্টি জামাই বললাম।’

ধ্রুব চোখ রাঙিয়ে বললো ‘ রাহিকে আমি বিয়ে করবো আর সেটা তোর সামনেই।’

অবনি তখন বললো ‘ এমনো তো হতে পারে তুমি আমাকে ভালোবেসে ফেলতে পারো।’

ধ্রুব তখন বললো’ আর একটাও কথা বলবি না।’ ধ্রুবের কথায় অবনি মুখে হাত দিয়ে চুপ করে রইলো।
কিছুক্ষন পর
ধ্রুবরা শপিংমলে এসে ড্রেস কিনতেছে। ধ্রুব রাহির জন্য ড্রেস দেখতেছে। আর অবনি বাড়ির সবার জন্য ড্রেস দেখতেছে। ধ্রুবের হঠাৎ চোখ যায় কালো একটা শাড়ির দিকে। ধ্রুব শাড়িটার কাছে এসে শাড়িটা হাতে নিয়ে অবনির কাছে এসে বলে’ নিজের জন্য তো কিনতেছিস না। এই নে তোর শাড়ি।’

ধ্রুবের কথা শুনে অবনি হেসে শাড়িটা নিলো। রাহি ধ্রুবকে বললো ‘ ধ্রুব তুমি ওকে ড্রেস চয়েস করে দিচ্ছো কেন?

ধ্রুব বললো’ তুমি তো শাড়ি পরো না যার জন্য ওই শাড়িটা অবনিকে দিলাম।

অবনি মুচকি হাসলো। রাহি কিছু বললো না। শপিং করা শেষ শপিংমল থেকে বেড় হতেই অবনির ফোনে হঠাৎ কল বেজে উঠলো। অবনি ফোনটা ধরে ধ্রুবকে বললো’ তুমি একটু এই ব‍্যাগ গুলো বাসাই নিয়ে যাও। আমাকে এক জায়গাই যেতে হবে।’
এই বলে অবনি ব‍্যাগ গুলো গাড়িতে রেখে তাড়াতাড়ি করে ওইখান থেকে চলে গেলো। অবনির যাওয়া দিকে তাকিয়ে রাহি কিছুটা অবাক হয়ে বললো,,

#চলবে…