এক রক্তিম আলো পর্ব-০৫

0
313

#এক_রক্তিম_আলো
#আরোহী_ইসলাম
#পর্ব:৫

রাহি হাত নেড়ে বললো ‘ তোমরা কে?ছাড়ো আমাকে বলছি।’
রাহির পাশে বসে থাকা মহিলা ধমক দিয়ে বললো ‘ সাপের মতো নড়াচড়া করছেন কেনো? চুপচাপ থাকেন।’
মহিলাটার কথায় রাহি রেগে কিছু বলবে কিন্তু আরেকটা মহিলার চোখ রাঙানো দেখে কিছু বললো না চুপ করে বসে রইলো। কিছুক্ষন পর রাহিকে দুইটা মহিলা ধরে থানায় নিয়ে আসলো।

এদিকে
অবনি রুমে এসে মায়ের ছবির দিকে তাকিয়ে কান্না করতেছে। ছোট থেকে সবার অত‍্যাচার সহ‍্য করছে। অবনির এক ফ্রেন্ড এর সৎ মা তাকে কত ভালোবাসে। সেই জন্য অবনিও ভেবেছিলো তার সৎ মা তাকেও অনেক ভালোবাসবে কিন্তু তার ভাগ্যেতে ভালোবাসা জুটলো না। অবনি কান্নারতো কন্ঠে বললো ‘ মা তুমি কেনো আমাকে ফেলে চলে গিয়েছো? তুমিও কি আমাকে পছন্দ করো না? আমি যে এই বয়সেই হাপিয়ে গিয়েছি। আর পারছি না বিশ্বাস করো।
অবনি এইগুলো বলতেছে হঠাৎ ফোনে কল বেজে উঠলো। কল বাজার শব্দে অবনি ফোনের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি মুছে কন্ঠ স্বাভাবিক করে কল রিসিভ করে বললো ‘ হ‍্যাঁ বলো।’

অপর পাশ থেকে আনিসুল আহমেদ বলে উঠলো ‘ নিয়ে এসেছি রাহি চৌধুরীকে এইবার তাড়াতাড়ি অফিসে চলে আসো।’

অবনি থমথমে গলায় বললো ‘ আআসছি।’
অবনির কথা শুনে আনিসুল আহমেদ কল কেটে দিলো। অবনি তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বের হয়ে দরজার কাছে আসতেই ধ্রুবের মা অবনি কে তাড়াতাড়ি যেতে দেখে ভ্রু কুচকে বললো ‘ কোথায় যাচ্ছিস তুই?

ধ্রুবের মায়ের কথা শুনে অবনি থেমে গিয়ে বললো ‘ একটু বাহিরে যাচ্ছি কাজ আছে।’
এই বলে অবনি চলে গেলো। ধ্রুবের মা অবনির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললো ‘ বাহিরে এখন আবার কি কাজ?

অবনির মা সন্দেহ চোখে অবনির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ধ্রুবের মাকে বললো ‘ শুনো আপা অবনি কিন্তু যেমন দেখাই ও তেমন না আমার মনে হয়। এতো বাহিরে কি কাজ থাকে ওর?

রাহির মায়ের কথা শুনে ধ্রুবের মা বিরক্ত মুখ করে বললো ‘ তুই না একটু বেশিই ভাবিস। ওর হয়তো এমনি কাজ আছে এর জন্য বাহিরে গেছে।’
এই বলে ধ্রুবের মা চলে গেলো। রাহির মা মনে মনে বললো ‘ অবনি কি খেলা খেলছে আমাদের সাথে?

এদিকে
রাহি কে থানায় নিয়ে এসে একটা চেয়ারে বসানো হলো। রাহি রেগে আনিসুল আহমেদ কে বললো ‘হু দ‍্যা হেল আর ইউ? আপনাদের সাহস কি করে হয় আমাকে এই ভাবে তু’লে আনার?

আনিসুল আহমেদ মুচকি হেসে বললো ‘ আমাদের সাহসের কি দেখেছেন মিস রাহি চৌধুরী?

রাহি তেতে উঠে বললো ‘ আমি এখনই আপনাদের নামে কমপ্লেন করবো?

‘ এইটা থানা কারো বাড়ি নয়।’
হঠাৎ পিছন থেকে অবনি বলে উঠলো। অবনিকে দেখে সবাই পিছনে ঘুরলো। অবনিকে দেখে আনিসুল আহমেদ মুচকি হেসে বললো ‘ অবনি চৌধুরী।

রাহি অবনিকে দেখে অবাক হয়ে বললো ‘ এই তাহলে অবনি চৌধুরী? যে অনেক বড় বড় ক্রিমিনালদের ধরে তাদের উচিত শা’স্তি দিয়েছে?

অবনি শার্ট আর জিন্স পরা, মুখে মাক্স পরা যার কারনে রাহি অবনিকে চিনতে পারলো না। অবনি বেশি কারো সামনে আসে না যার কারনে সবাই শুধু অবনির নাম শুনেছে তবে মুখ দেখেনি। অবনি গম্ভীর কন্ঠে বললো ‘ হ‍্যাঁ আমিই হলাম অবনি চৌধুরী।’

রাহি তখন অবনির কথা শুনে ভাবুক কন্ঠে বললো ‘ এক সেকেন্ড আপনার কন্ঠ আর আমার বোন হয় ওর কন্ঠ এক রকম কেনো? আর নামটাও না এক রকম।’

অবনি তখন মুচকি হেসে বললো ‘ নাম তো অনেকের থাকে এক রকম, আর কন্ঠ এক হতে পারে এতে অবাক হওয়ার তো কিছু নেই মিস রাহি চৌধুরী।’

অবনির কথা শুনে রাহি মুখ বাকা করে বললো ‘ হ‍ুম। ওর মতো গাইয়া, যে নাকি ক্লাস টেন পযর্ন্ত পড়েছে সে তো আর এতো বড় অফিসার হতে পারবে না।’

রাহির কথা শুনে অবনি গম্ভীর সুরে বললো ‘ শুনেন আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করার জন্য এইখানে আনা হয়েছে।’

রাহি প্রশ্ন চাহনিতে বললো ‘ হুম বলেন।’

অবনি আনিসুল আহমেদের দিকে তাকালো। তিনি অবনির দিকে তাকিয়ে হেসে বললো ‘ ওনাকে প্রশ্ন করো।’ আনিসুল আহমেদের কথা শুনে অবনি শান্ত কন্ঠে বললো ‘ কিছুদিন আগেই একটা আশ্রম থেকে শিশুদের শিশু পাচার কারীর দলরা তুলে নিয়ে গিয়েছে।’

রাহি বিরক্ত কন্ঠে বললো ‘ হুম কি হয়েছে তাহলে?
অবনি শান্ত কন্ঠে বললো ‘ ওই আশ্রমটা তো আপনারাই দিয়েছিলেন?
রাহি বললো ‘ হুম। অবনি বললো ‘ বাচ্চাদেরকে তুলে নিয়েছে এর পিছনে কে আছে বা কিছু জানেন?

রাহি রাগান্বিত কন্ঠে বললো ‘ আমি কেমনে জানবো? আপনি কি বলছেন এর পিছনে আমার হাত আছে?

অবনি মুচকি হেসে বললো ‘ আরে এতো রেগে যাচ্ছেন কেনো? আমি তো জিজ্ঞেস করছি কিছু জানেন নাকি?

রাহি অবনির কথায় ঘেমে গেছে। রাহি বললো ‘ না আমি জানিনা।’ রাহির কথায় আনিসুল আহমেদ মুচকি হেসে বললো ‘ যারা দোষ করে তারা পুলিশদের দেখে ভয় পাই। কিন্তু আপনি তো দোষ করেননি বলছেন তাহলে ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছেন কেন?

রাহি তখন কাপা কাপা গলায় বললো ‘ কই ঘামছি?
আনিসুল আহমেদ বললো ‘ আমরা দেখতে পাচ্ছি।’
অবনি রাগি কন্ঠে বললো ‘ রাহি চৌধুরী আপনাকে ভালো ভাবে বলতেছি আপনি কি কিছু জানেন? পরে যদি জানতে পারি এর পিছনে আপনি আছেন তাহলে আপনাকে কিন্তু অনেক কঠিন শাস্তি পেতে হবে।’
অবনি আনিসুল আহমেকে বললো ‘ ওনাকে ছেড়ে দাও এখন। ওনার পরিবার ওনাকে খুজতে পারে।
অবনির কথায় আনিসুল আহমেদ আচ্ছা বললো।
অবনি বললো ‘ আপনি যেতে পারেন এখন। অবনির কথায় রাহি চলে গেলো। অবনি আনিসুল আহমেদ কে বললো ‘ স‍্যার আমিও যায় না হলে সন্দেহ করবে।’ আনিসুল আহমেদ বললো ” আচ্ছা যাও।’ অবনি মুচকি হেসে বাড়িতে চলে গেলো।

——–
অবনি বাড়িতে এসে দেখে ধ্রুব বসে আছে। অবনি ধ্রুবের কাছে এসে বললো ‘ সেন্টি জামাই?

ধ্রুব অবনির কথায় বললো ‘ হুম বল? অবনি হেসে বললো ‘আরে বাহ্ সেন্টি জামাই বললাম আর তুমি উত্তর দিলে। এই তুমি কি আমাকে ভালো টালো বেসে ফেললে নাকি?

রাহি রূঢ় কন্ঠে বললো ‘ একটা কথা কি জানিস একটা হাসের ইচ্ছা হয়েছিল সে ময়ূর হওয়ার। হাসটা ময়ূরদের সাথে থাকতো। কিন্তু যখন কথা বললো তখন সবাই বুঝতে পারলো সে ময়ূর না সে আসলে হাস।’

রাহির কথায় অবনি মুচকি হেসে বললো ‘ কে ময়ূর আর কে হাস সেটা সময় হলেই দেখা যাবে।’

ধ্রুব বিরক্ত হয়ে বললো ‘ উফ থামবে তোমরা? তোমাদের জন্য বাড়িতে থাকতেই ইচ্ছা হয় না।’

রাহি রেগে বললো ‘ ধ্রুব তুমি এমন করছো কেনো? আমি কি করছি? অবনিই তো..

রাহিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ধ্রুব ধমক দিয়ে বললো ‘ কথা বলবে না কেউ।’
ধ্রুবের কথায় আর কেউ কথা বললো না। রাহি অবনির পাশে এসে বললো ‘ তুই কখনো ধ্রুবের ভালোবাসা পাবি না তাই ওকে তুই ডিভোর্স দিয়ে দে।’

অবনি শান্ত কন্ঠে বললো ‘ ওনার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে যেভাবেই হোক না কেনো আমি ওনাকে ডিভোর্স দিবো না।’
এই বলে অবনি পানি এনে ধ্রুবেকে দিতে যাবে হটাৎ কিছুতে বেজে পানি ধ্রুবের শার্টে পরলো। অবনি চোখ মুখ খিচে বললো ‘ সরি সরি আমি দেখিনি?

ধ্রুব শার্টের দিকে তাকিয়ে শ্বাস নিয়ে বললো ‘ আমি চেঞ্জ করে আসছি, এই বলে ধ্রুব উপরে চলে গেলো। আর অবনি মুচকি হেসে রাহিকে বললো ‘ ওনি আমার দেওয়াই শার্ট পরে আন্টিদের সামনে আসবে। তোর দেওয়া শার্ট পরে না এই বলে অবনিও ধ্রুবের সাথে সাথে চলে গেলো। রাহি রেগেমেগে আম্মুর রুমে চলে গেলো।

কিছুক্ষন পর
অবনি আর ধ্রুব মেহমানদের সাথে কথা বলছে। ধ্রুবের মা মিষ্টি হেসে অবনিকে বললো ‘ অবনি যা তো ওনাদের জন্য শরবত নিয়ে আয়।’

অবনি মুচকি হেসে রান্নাঘরে এসে শরবতের গ্লাসগুলো নিয়ে ড্রয়িং রুমে আসতে লাগলো।
এদিকে রাহি অবনিকে আসতে দেখে পৈশাচিক হাসি দিয়ে অবনির পায়ের কাছে নিজের পা রাখলো যাতে অবনি পা বেজে পরে যায় কিন্তু অবনি জানতো এই রকম কাজ ও করবে সেই জন্য অবনি রাহির পায়ের উপর দিয়ে যেয়ে রাহিকে চোখ টিপ দিয়ে বললো,,

#চলবে….
( ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।)