#এক_রক্তিম_শ্রাবণে❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২৪
ভোরের আলো ফুটতে আরো ঘন্টাখানেকের মতো বাকি।আকাশটা কেমন লালচে বর্ণ ধারণ করেছে।তাঁরা গুলোকে মনে হচ্ছে এক একটা মুক্তকণা।বিশাল আকাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিছানো মুক্তোর টুকরো।এখনি বোধহয় একটা দুটো খসে পরবে গায়ের উপর।
গান শেষ হওয়া মাত্রই তিহানের কাঁধে মাথা এলিয়ে দিয়েছে তোহা।তিহান বারণ করেনি।সরিয়েও দেয়নি বরং নিজের মোড়া ঘুরিয়ে পাশাপাশি বসে তোহাকে আরাম করে মাথা রাখার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
তোহার হাতদুটো তার হাতের মুঠোয় বন্দি।নরম ছোট্ট হাতদুটো অনবরত নাড়াচাড়া করে যাচ্ছে তিহান।
তোহার চোখ বন্ধ।তিহান অনেকক্ষণ যাবতই তার চোখেমুখে তন্দ্রা ভাব লক্ষ্য করছে।কিন্তু নিজের কাছ থেকে সরাতেও ইচ্ছে করছে না মেয়েটাকে।শেষমেষ নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেয়েই সে বললো,
—“ঘুম পাচ্ছে?ঘরে যাবা না?রাত শেষ হতে চললো।”
তোহার সারাশব্দ পাওয়া গেলোনা।ভ্রু কুঁচকালো তিহান।মেয়েটাকি ঘুমিয়ে গেলো তবে?তোহার হাতদুটো ছেড়ে মুখের উপর আসা চুলগুলোকে কানের পিছে গুঁজে দিলো সে।হাল্কা গলায় ডাকলো,
—“তিহু”।
ঘুমের মাঝেই দুবার ঠোঁট কাঁমড়ালো তোহা।অত:পর তিহানের সাথে আরো একটু ঘনিষ্ঠ হয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে আবারো ঘুমে বিভোর হয়ে গেলো।কপালে চিন্তার ছাপসহই মৃদু হাসলো তিহান।তবুও নিজেকে প্রশয় দিলোনা।তোহাকে নিয়েই একটু নড়েচড়ে বসে তোহার ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করে বললো,
—“উঠো।তোমার ঘরে যাও।তারপর ঘুমিও।”
একরাশ বিরক্তি নিয়ে পিটপিট করলো তোহা।ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো,
—“এতো নড়ছেন কেনো?ঘুমোতে দেন না।”
ফুঁস করে শ্বাস ছাড়লো তিহান।বাসায় কেউ উঠে গেলে সমস্যা হবে।তোহাকে এখন পাঠিয়ে দেয়াটাই উওম।
অনেকক্ষন যাবত এখানে আছে।
তোহার হাতদুটো ধরে নিজের থেকে ছাড়িয়ে উঠে দাড়ালো তিহান।তোহা ঢুলুঢুলু চোখে তাকাচ্ছে।আচমকাই তাকে পাঁজাকোলা করে কোলে তুলে নিলো তিহান।তখন আর নিজের হুঁশে নেই তোহা।ঘুমে বেহুঁশ।বুঝতে পারলে এতোক্ষনে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিতো।তোহাকে নিয়ে নিজের বিছানায় শুইয়ে দিলো তিহান।হাত থেকে চুড়িগুলো খুলে ব্যাগের ভিতর রেখে বাইরে যেয়ে ফ্ল্যাটের দরজাদুটো খুলে ফিরে এলো।তারপর তোহাকে আবারো কোলে নিয়ে ধীরপায়ে এগিয়ে গেলো তোহার রুমের উদ্দেশ্য।
॥
তোহাকে বিছানার মাঝখানটায় শুইয়ে দিয়েছে তিহান।তারপর আবার যেয়ে শাড়ি আর চুড়ির ব্যাগ টা নিয়ে এসেছে।এই ভোরবেলা এই ফ্ল্যাট ওই ফ্ল্যাট করতে করতে রীতিমত ঘাম ছুটে গেছে তিহানের।তবুও মেয়েটার ঘুম যে ভাঙেনি এতেই শান্তি।
আশেপাশে নজর ঘুরালো তিহান।বিছানার এলোমেলো চুড়িগুলো নিজেই গুছিয়ে দিলো।আলমারি খুলে সব যথাস্হানে রেখে ঘরের পর্দা টেনে দিলো।কাঁক ডাকার শব্দ শোনা যাচ্ছে।ভোর হয়ে গেছে প্রায়।বামকাত হয়ে ফিরে ঘুমালো তোহা।গায়ের উপর দেয়া কাঁথাটা ইতিমধ্যেই সরে গেছে।বের হতে যেয়েও আবার ফিরে এলো তিহান।গায়ের কাঁথাটা ঠি ক করে দিয়ে তোহার মাথায় হাত বুলিয়ে গলার স্বর নামিয়ে বললো,
—“ঘুমাও নিদ্রাপরী।তোমার ঘুমন্ত স্বপ্নগুলো শুধু আমিময় হোক।”
_______________
তিহানের কোলে ছোট্ট মৌরি।বয়স তিনবছর।দুহাতে তিহানের গলা জড়িয়ে রেখেছে সে।হাতে দুটো চকলেট।ভাঙা ভাঙা শব্দে কথা বলতে পারে।তাকে কোলে নিয়েই সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে তিহান।মোরির হাতের চকলেট দুটো কিনতে দোকানে গিয়েছিলো।ছুটির দিন তাই বাসায়ই আছে সে।
মোরি থাকে তাদের নিচের ফ্ল্যাটটায়।এই পুরো বাড়ির সবারই বেশ আদুরে বাচ্চাটা।আর তিহানের একটু বেশিই আদুরে।কারণ বাচ্চাকাচ্চা একটু বেশিই পছন্দ করে তিহান।
মৌরির মা তাদের ফ্ল্যাটে আছে।আফিয়ার সাথে কথা বলছে।মৌরিকে সাথে নিয়ে এসেছিলো সেজন্যই তাকে নিয়ে দোকানে চকলেট কিনতে গিয়েছিলো তিহান।
দুহাতে দুটো বালতি নিয়ে বেরিয়েছে তোহা।বালতি ভর্তি ধোঁয়া কাপড়।কপাল গলায় ঘাম।ছুটির দিনেও বাসার কাজে সাহায্য করার মেয়েটা আসেনি।প্রায় একসপ্তাহের কাপড় জমে আছে।আতিয়া ভেবেছে আজ সব ধোঁয়াবে কিন্তু না সকালেই মেয়েটা ফোন করে বলেছে আজসহ আগামী একসপ্তাহ সে আসতে পারবেনা।সে গ্রামে যাচ্ছে।ফিরলে তবেই আসবে।
মায়ের চেঁচামেচিতে একপর্যায়ে টি কতে না পেরে নিজেই কাপড়গুলো নিয়ে বাথরুমের ঢুকেছিলো তোহা।প্রায় দুঘন্টা লাগিয়ে কাপড়গুলো ধুয়ে এখন ছাদে যাবে শুকাতে দিতে।
ফ্ল্যাটের দরজা আটকে ঘুরে দাড়াতেই তিহানকে চোখে পড়লো তার।গটগট পায়ের শব্দ তুলে সিঁড়ি ভেঙে উঠে এসেছে তিহান।মৌরির দিকে তাকিয়ে মলিন মুখেই মিষ্টি করে হাসলো তোহা।জবাবে মৌরিও হাসলো।
—“কি হয়েছে তোর?চেহারার এমন বিধস্ত অবস্থা বানিয়ে রেখেছিস কেনো?খালামনির সাথে ঝগড়া হয়েছে নাকি?”ভ্রু কুচকে বললো তিহান।
উওরে ক্ষেপে গেলো তোহা।ক্ষ্যাপাকন্ঠে বললো,
—“আপনি সবসময় এতো বেশি বুঝেন কোনো তিহান ভাই?এই সবগুলো কাপড় আমি ধুয়েছি।সেজন্যই ক্লান্ত লাগছে।আপনি জানেন কাপড় ধুতে কতো কষ্ট?”
—“তুমি বাইয়ার তাতে তিল্লাত্তো কেনো তোয়াপু?”
মৌরির কথায় ভ্রু উচিয়ে তাকালো তোহা।অবাক হওয়া কন্ঠে বললো,
—“আপনি এই বাচ্চাটাকেও হাত করে ফেলেছেন তিহান ভাই?”
সরু চোখে তাকালো তিহান।মৌরিকে একটা চকলেটের প্যাকেট খুলে হাতে দিয়ে বললো,”আমার কাওকে হাত করা লাগেনা।সবাই এমনেই হাত হয়ে যায়।”
বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকালো তোহা।দুহাতে দুটো বালতি উঠিয়ে নিয়ে তড়িঘড়ি করে বললো,
—“সরুনতো সামনে থেকে।আপনার জন্য আমার কতো দেরি হয়ে গেলো।”
সরে দাড়ালো তিহান।তোহা একসিঁড়ি উঠতেই মৌরিকে একহাতে আগলে ধরে অপরহাতে তোহার হাত থেকে একটা বালতি নিয়ে ঠাট্টার সুরে বললো,”এতটুকু শরীর নিয়ে দুটো বালতি নিয়েছিস।কখন যেনো উল্টিয়ে পাল্টিয়ে পরে যাস।”
এবারো ফুঁসে উঠলো তোহা।তিহানের হাত থেকে বালতি নেয়ার চেষ্টা করে বললো,
—“ছাড়ুন।লাগবেনা আপনার সাহায্য করা।আমি একাই পারব।”
একটানে তোহার হাত থেকে বালতিটা ছিনিয়ে নিলো তিহান।তাকে পাশ কাটিয়ে কয়েকধাপ উপরে উঠে গিয়ে বললো,
—“বেশি কথা না বলে আয়তো।তোর এই বেশি কথার চাপে কোনদিন যেনো নিজেই চাপা পরে যাবি।”
আর কথা বাড়ালোনা তোহা।একাহাত দিয়ে মাথায় ওড়না টেনে নিয়ে তিহানের পিছে পিছে উপরে উঠতে লাগলো।
____________
সবগুলো কাপড় প্রায় রোদে দেয়া শেষ।মৌরি কে কোলে নিয়ে ছায়ার দাড়িয়ে আছে তিহান।মৌরি কোলে না থাকলে সে নিজেই দিয়ে দিতো কাপড়গুলো।তোহার কাপড় দেয়া শেষ হতেই এগিয়ে গেলো তিহান।একহাতেই খালি বালতিদুটো তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই মৌরি দুহাত বারিয়ে বললো,
—“তোয়াপু যাবো।” অর্থ্যাৎ সে তোহার কোলে যেতে চাচ্ছে।
আড়চোখে তাকালো তিহান।তোহা তখন ব্যস্ত ওড়না দিয়ে মুখের ঘাম মুছে নিতে।
—“নিতে পারবি ওকে?”গলা ঝেড়ে বললো তিহান।
—“দিন।”বলে হাত বারিয়ে দিলো তোহা।তৎক্ষনাত তার কোলে লাফিয়ে এলো মৌরি।তোহা হাসলো।মৌরির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
—“তিহান ভাই পঁচা বুঝলে?তিহান ভাইয়ের কোলে যাবানা।”
—“তোমাকে কে বলেতে তোয়াপু?বাইয়াতো আমাকে খুব আদল কলে।তোমাকে কলেনা?”প্রতিবাদ করে বললো মৌরি।
শব্দ করে হেসে ফেললো তিহান।তোহা বোকা বোকা চাহনী দিয়ে চেয়ে আছে।তিহান দুষ্টু কন্ঠে বললো,
—“কলে আপু।বাইয়া চবাইকেই আদল করে।তোমার তোয়াপু কেন বাদ যাবে?”
মুখ বিকৃতি করে তাকালো তোহা।মুখ দিয়ে অষ্পষ্ট স্বরে “অসহ্যকর” শব্দটা বের করে দ্রুতপায়ে নিচে নেমে গেলো।
~চলবে~
#এক_রক্তিম_শ্রাবণে❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২৫
বিকেলের তেজহীন রোদ উঁকি দিচ্ছে সাদা মেঘের ফাঁকফোকর দিয়ে।একটু পর পর যানবাহনের হর্ণের শব্দ শোনা যাচ্ছে।বিকেলটাও আজকাল বড্ড ব্যস্ত থাকে।কেমন যেন কোলাহলময়।তোহার মতে বিকেলবেলাটা হবে শান্ত,নির্মল।অর্ধেক দিনের ব্যস্ততা শেষে মানুষ এককাপ চা নিয়ে বারান্দায় বসবে।দু একটা চুমুক দিয়ে প্রিয় মানুষের সাথে একটু আধটু আলাপে মেতে উঠবে।কিন্তু না,সময়টাও আজকাল ভারি হয়ে উঠেছে।মানুষজনের শ্বাস ফেলার অবকাশ নেই।মন মস্তিষ্ক জুড়ে শুধু কাজ কাজ আর কাজ।
টিভির রঙচঙে স্ক্রীনের দিকে অবসন্ন চোখদুটোকে কোনরকমে নিবদ্ধ করে রেখেছে তোহা।মুখজুড়ে তেঁতোভাব।ফ্যানের উষ্ণ বাতাসটাতেও বিষন্নতার ছোঁয়া।পাশে আতিয়া বসে আছে।তার দৃষ্টি উৎসুক।
গভীর মনোযোগ আর প্রাণবন্ত মন নিয়ে বাংলা নাটক দেখছে সে।ড্রইং রুমে তারা ব্যতিত তৃতীয় কোনো ব্যক্তির অস্তিত্ব নেই।তোহার বাবা ঘরে ঘুমোচ্ছে।আর তূর্য ঘন্টাখানেক আগেই কি কাজে যেনো বেরিয়েছে।সোফায় পা উঠিয়ে বসে হাতের বাটিটা থেকে পেঁয়াজ মরিচ দিয়ে চানাচুর মাখা খেতে খেতে মায়ের সাথে টিভি দেখছে তোহা।
—“আর খাবা আম্মু?”হাতের বাটিটা মায়ের দিকে এগিয়ে ধরলো তোহা।
আতিয়া তাকালো।বিরস মুখে আবারো মুখ ফিরিয়ে বললো,
—“নাহ,তুই লবণ কম দিয়েছিস।মেটমেটা স্বাদ।তুই ই খা।”
মায়ের কথায় কপাল কুঁচকালো তোহা।আরেক চামচ মুখে পুড়ে নিয়ে চিবাতে চিবাতে বললো,”তাহলে লবণ দিয়ে আনি আরেকটু।”
হাসলো আতিয়া।বললো,
—“আচ্ছা আন।”
গা মুচরিয়ে আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাড়ালো তোহা।অনেকক্ষণ একধ্যানে বসে থাকার কারণে মনে হচ্ছে হাড্ডিতে জং ধরে গেছে।হাটাহাটি করা দায়।টলমলে পায়ে রান্নাঘরে গেলো সে।তিন চিমটি লবণ দিয়ে হাত দিয়ে মেখে নিলো।মায়ের হাতে বাটিটা দিয়ে হাত ধুয়ে আবারো ড্রইংরুমে যেতে নিতেই মেজাজ খারাপ করা কলিংবেল বেজে উঠলো।
গাল ফুলিয়ে শ্বাস ছাড়লো তোহা।গেটটা খুলে তিহানকে দেখে বিশেষ একটা অবাক হলোনা সে।ভেবেছিলোই তিহান অথবা আফিয়া এসেছে।তিহানকে ভেতরে ঢোকার জায়গা দেয়ার জন্য একটু পাশে চেপে যেতেই তার বামহাতটা নিজের হাতের মাঝে টেনে নিলো তিহান।অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো তোহা।মিনমিনে কন্ঠে বললো,
—“হাত ছাড়ুন,আম্মু ড্রইংরুমে।”
তিহান হাত ছাড়লোনা।উল্টো জুতো পায়েই একটু ভেতরে ঢুকে গলা উঁচিয়ে ডাকলো,
—“খালামনি?”
চমকে উঠলো তোহা।তড়িঘড়ি করে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে চাপা স্বরে বললো,
—“তিহান ভাই..”
এর মাঝেই ফিরে তাকালো আতিয়া।তিহানকে দেখে মুখে হাসি টেনে বললো,
—“বল বাবা।কিছু দরকার?”
—“তিহু কে একটু আমার সঙ্গে নিয়ে যাই খালামনি?এই সামনের মার্কেটে যাবো।মা কিছু জিনিস আনতে বলেছে।ভাবলাম তিহু তো বাসায়ই আছে।ওকে সাথে নিয়ে যাই।যাবো খালামনি?”বলে চমৎকার করে হাসলো তিহান।এই অসহ্য সুন্দর হাসির বিনিময়ে কোনোকিছুতে মানা করা সম্ভব নয়।আতিয়ার ক্ষেত্রেও ব্যাতিক্রম হলোনা।মাথা নাড়িয়ে সাঁয় দিয়ে সে বললো,
—“আচ্ছা যা বাবা,সমস্যা নেই।”
অনুমতি পেতেই মুচকি হাসলো তিহান।তোহার হাত ধরে টেনে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই তোহা হকচকানো কন্ঠে বললো,
—“এভাবেই যাবো নাকি?জামাটাতো বদলে আসি?”
একনজর তাকালো তিহান।তোহাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করে নিলো।অত:পর শক্তপোক্ত কন্ঠে বললো,
—“এভাবেই যাবি।জুতোটা পরে নে শুধু।”
মুখ লটকালো তোহা।তিহান তার হাত ছাড়েনি।একহাত দিয়ে পাশের জুতো রাখার র্যাক থেকে জুতো বের করলো সে।পরে নিয়ে বললো,
—“আপনাকে নিয়ে আর পারিনা।চলুন।”
_________________
রাস্তায় আজ তেমন একটা জ্যাম নেই।অবশ্য বিকেল গড়িয়ে গেছে বলেই হয়তো যানবাহনের আনাগোনা কম।ধীরগতিতে ড্রাইভ করছে তিহান।পরণে ব্লু জিন্সের সাথে ধূসর রংয়ের হাফহাতা টি-শার্ট।চুলগুলো একটু এলোমেলো।গালের চাঁপদাড়ি গুলো নিখুঁতভাবে শেভ করা হয়েছে।বামগালের কাঁটা জায়গাটা এখনো লাল হয়ে আছে।
তোহা ঠোঁটে ঠোঁট চেপে একদৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে সেদিকে।চেহারায় কোনো আবেগ নেই অনুভুতি নেই শুধুই কৌতুহলী প্রেমিকার মতো সুঁচালো দৃষ্টি।আড়চোখে একবার তাকালো তিহান।তিহান তাকিয়ে আছে বুঝতে পেরেও চোখ সরালোনা তোহা।
—“এভাবে কি দেখছিস?কি হয়েছে?”
তোহা উওর দিলোনা।জীবন্ত পুতুলের মতো তিহানের দিকে চেয়ে দুবার পলক ঝাপটালো।ভ্রু কুঁচকালো তিহান।ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ স্হাপনের চেষ্টা করে অস্বস্তি ভরা কন্ঠে বললো,
—“অন্যদিকে তাকা তিহু।এভাবে দেখার কি আছে?”
শুকনো গলায় ছোট্ট করে একটা ঢোঁক গিললো তোহা।দৃষ্টি না সরিয়ে হুট করে তিহানের দিকে ঝুঁকে তার ঘাড় হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরতেই তিহান মৃদু ধমক দেয়ার চেষ্টা করে বললো,
—“তিহু সর।সামনে দেখতে পাচ্ছিনা আমি।এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে কিন্তু..”
তিহানের বাঁধা নিষেধ শুনেনা তোহা।কিছু না ভেবে আচমকাই এক অদ্ভুত কাজ করে ফেলে সে।মুখ নামিয়ে চোখ বন্ধ করে আলতো স্পর্শে তিহানের বামগালের বাদামী তিলটায় ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়।প্রচন্ডভাবে চমকে উঠে তিহান।তোহা যে এমন কিছু করবে ভাবতেও পারেনি সে।আচমকা ধাক্কাটা নিতে না পারায় হঠাৎই তার পুরুষ মনেও অদ্ভুত লজ্জা খেলে যায়।লজ্জায় অস্থির হয়ে উঠে চোখের ধূসর চাহনী।
কি করে ফেলেছে তা বুঝে আসতেই চট করে সরে যায় তোহা।লজ্জিত ভঙ্গিতে নিজেকে একটু গুটিয়ে নিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়।
চুলে হাত চালিয়ে নি:শব্দে ঠোঁট চেপে হেসে ফেলে তিহান।পরমূহুর্তেই নিজেকে সামলে নিলেও ঠোঁটের কোণের মিটমিটিয়ে হাসিটা আজ আর সরার নয়।তোহার দিকে একবার তাকিয়েই বুঝতে পারে তার সাথে এখন আর কথা বলতে পারবেনা মেয়েটা।তুমুল লজ্জা ঘিরে ধরেছে তাকে।
বেশ কিছুক্ষণ সব চুপচাপ।তোহা একবারও তাকায়নি।
অনেকক্ষণ বাদে দমবন্ধকর পরিবেশ একটু শিথিল হতেই তিহান তোহার মাথার পড়ে যাওয়া ঘোমটাটা একহাত দিয়ে টেনে উঠিয়ে দিতে দিতে আস্তে করে বলল,
—“তুমি আমার ক্ষণিকের মোহ নও চারুপ্রিয়া,তুমি আমার আমরণ প্রেমতৃষ্ণা।তোমার এই একটু আধটু প্রেমের ছোঁয়ায় এই পিপাসা মিটবেনা।বরং তোমাকে কাছে পাওয়ার আকাঙ্খাটা বেড়ে যাবে আরো বহুগুন।তবুও তুমি কোনো এমন করছো বলোতো?এতো অবিচার তোমার এই প্রেমিক পুরুষের সইবেনা কিন্তু।”
~চলবে~