#এতো_চাই_তোকে
#পার্ট_০৪
#Mst_Liza
আমাকে বাড়িতে ছেড়ে দিয়ে হৃদ ভাইয়া হসপিটালে ফিরে গেলো।বলল কাউকে না বলতে বিয়েটার কথা।আমার পেটে আবার কথা থাকে না বেশিক্ষণ। বিয়ে করলাম বেস্ট ফ্রেন্ডদের জানাবো না? দিলাম মিনি, নিশিকে কল আর বললাম হৃদ ভাইয়া আমাকে বিয়ে করে নিয়েছে।কথাটা শুনে ওদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার অবস্থা।আমি বেশ মজাই আছি।হৃদ ভাইয়া আমার স্বামী। উফফ দারুণ তো ব্যাপারটা। মিনি, নিশির ক্রাশ এখন শুধুই আমার।ভাবতে বেশ খুশি খুশি লাগছে।আমার কারণে ছ্যাঁকা খেলো দুজনে।ভালোবাসতে বলেছে হৃদ ভাইয়া আমাকে। ভাবতেও বলেছে। কিন্তু কি ভাবা যায়?
বিছানার উপরে গিয়ে গুটিশুটি হয়ে বসলাম। চোখ বন্ধ করলাম এবার। দেখতে পেলাম হৃদ ভাইয়ার রাগান্বীত মুখটা, ধমকানো কন্ঠস্বরটা।আমাকে ধমকিয়ে বলছে পড়া শেষ না করলে পড়ার টেবিলের থেকে উঠতে দেবে না।আমার একটু ঘুম ঘুম পাচ্ছে।চোখদুটো বন্ধ হয়ে আসতেই দিচ্ছে এক চড়।রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলছে রাতে কোনো ঘুম নাই।শুধু পড়া আর পড়া।এমন সময় কাকিমণি আর মায়ের কন্ঠ শুনতে পেলাম।চোখ মেলে তাকালে তাদের হাসিমুখটা দেখলাম।আমার পাশে বসে দুজনে একসাথে বলে উঠলো,
—“বিয়ে করবি ফুল? ভালো একটা ছেলে আছে। বি সি এস ক্যাডার।নূরের বিয়েতে তোকে একবার দেখে পছন্দ করে ফেলেছে।ছেলেটা মেঘেরই কাজিন হয়।বাবা-মাকে পাঠিয়েছে প্রস্তাব নিয়ে।তুই চাইলে একবার দেখতে পারিস।”
তাদের কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পরলাম। মা আমার হাতটা টেনে ধরে বলল,
—“কিরে চল।”
আমি মাথা নাড়িয়ে।হাতটা ছাড়িয়ে কাকিমণির দিকে তাকিয়ে বললাম,
—“আমি বিয়ে করবো না এখন।”
কাকিমণি বলল,
—“কেন করবি না? এতো ভালো ছেলে। আচ্ছা ফুল তুই কোনো রিলেশনে জড়িয়েছিস নাকি?”
আজব প্রশ্ন তো।এ কোন বিপদে পরলাম আমি? না থাক, এখন কিছু বলা যাবে না।যা করার হৃদ ভাইয়া করুক।আমার এতো প্রশ্নের জবাব দেওয়ার থেকে যা বলছে তাই শোনায় উত্তম। মা আর কাকিমণিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ইশারায় বললাম চলো।আমাকে দেখে যখন জিজ্ঞাসা করলো আমি রাজি কিনা আমি ঝট করে হ্যাঁ বলে রুমে চলে আসলাম। বাইরে কি কথা হচ্ছে তা আমার জানার দরকার নেই।
____________
________
রাত ১ঃ০০ বাজে। সকলেই ঘুমিয়ে পরেছে।হৃদ ভাইয়া ডিনারের সময় কথাটা জানতে পেরে খাবার ঠেলে নিজের রুমে চলে গেছে।তারপর আর রুম থেকে বের হতে দেখিনি।আমিও যাই নি তার কাছে।এখন পড়ার টেবিলে বসে হাই তুলছি আমি।ঝিমাচ্ছি কিন্তু ঘুমাচ্ছি না।অপেক্ষা করছি যদি হৃদ ভাইয়া আসে।হঠাৎ দরজার কড়াঘাত শুনতে পেলাম। আমি ছুটে গিয়ে দরজাটা খুললাম।দেখলাম হৃদ ভাইয়া খুব রাগি দৃস্টিতে তাকিয়ে আছে।আমি কিছু বলতে যাবো আমাকে এক ধাক্কায় ঘুরিয়ে নিয়ে দরজার সাথে চেপে ধরলো।এবার আমার মুখের দিকে তাকালো।আমি নিশ্চুপ হয়ে আছি।আমাকে ঝাঁকিয়ে বলল,
—“কোন সাহসে তুই বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলেছিস? চুপ করে আছিস কেন উত্তর দে? এমন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তোকে আমি দিয়েছে?”
আমি চোখ বন্ধ করে আস্তে করে বললাম,
—“এতে আমার কি দোষ, হৃদ ভাইয়া? কি বলতাম আমি?”
আমাকে ছেড়ে দিলো।আমি চোখ খুলে দেখলাম হৃদ ভাইয়ার চোখের চাহনীতে রাগ নেই।আমি এবার বললাম,
—“আমার খুব ভয় লাগে হৃদ ভাইয়া। এভাবে কেন কথা বলো আমার সাথে সবসময়?”
হৃদ ভাইয়া বলল,
—“ভয় পাওয়ার কি আছে।আমি তোর স্বামী।আমার কাছে না শুনে তুই কিচ্ছু করবি না।”
আমি বললাম,
—“স্বামী? কখনো সেই ভাবে কথা বলেছো আমার সাথে তুমি? যখনই সামনে আসো চিৎকার, চেচামেচি আর রাগ।জোর করে কখনো নিজের স্বীদ্ধান্ত চাপিয়ে দাও আমার উপর।তো কখনো ইচ্ছার বিরুদ্ধে একশটা আদেশ চাপিয়ে দাও। ভালোবাসার কখনো সুযোগ দিয়েছো?”
কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে ছুটে বিছানার এপাশে এসে বসলাম। মুখটা টিপে ধরে রেখেছি। এভাবে কখনো হৃদ ভাইয়াকে বলবো আগে ভাবি নি।এখন হৃদ ভাইয়া কি বলবে সেটা শুনার অপেক্ষা।
হৃদ ভাইয়া এসে একটানে আমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো।ভয় করছে আমার।হাত, পা কাঁপছে থরথর করে।আমাকে অবাক করে দিয়ে দু’গাল আকড়ে ধরে বলল,
—“আর ভয় পেতে হবে না আমাকে।এখন থেকে স্বামী মনে করে যা বলতে ইচ্ছে হয় আমাকে বলিস।”
কথাটা যেন নেশার মতোন টানতে লাগলো।আমি এক ঘোরের মধ্যে ডুব দিলাম। হৃদ ভাইয়ার চোখে চোখ রাখলাম। ট্রি শার্টটা খামচে ধরে বললাম,
—“কিস মি।”
আমাকে সরিয়ে দাড়িয়ে পরল হৃদ ভাইয়া।মুখটা ঘুরিয়ে নিয়ে বলল,
—“কি বলছিস ফুল? রাত অনেক হয়েছে ঘুমিয়ে পর।”
আমি নড়েচড়ে উঠলাম।হৃদ ভাইয়া রুম থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।কিছুটা এগিয়ে থেমে গেলো। ঘুরে এসে আমার পাশে বসলো।আমার গালটা শক্ত করে আকড়ে ধরে আমার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট জোড়া মিলিয়ে দিলো।মুহূর্তের মধ্যে কিছু বুঝতে পারলাম না।চোখ দুটো বন্ধ করে নিলাম। তখনই ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে বলল হয়েছে? আমি মাথা ঝাঁকালাম। আস্তে করে বললাম,
—“কিছুই বুঝলাম না।কি হলো এটা?”
হৃদ ভাইয়া আমার চুলের ভাজে হাত ডুবালো।মাথাটা শক্ত করে আকড়ে ধরে সারা গালে, বুকে আর গলায় ঠোঁটের আলতো পরস ছুঁইয়ে দিয়ে আমাকে ছেড়ে দিলো।যখনই উঠে দাড়ালো আমি হাতটা ধরে মুখটা মলিন করে বললাম,
—“যেও না হৃদ ভাইয়া।”
হৃদ ভাইয়া মৃদু হেসে বলল,
—“তুই একটু অপেক্ষা কর।আমি দরজাটা বন্ধ করে আসছি।”
আমি হাতটা ছেড়ে দিলাম। হৃদ ভাইয়া দরজাটা বন্ধ করে এসে আলোটা নিভিয়ে দিলো।
চলবে,,,