এবং তুমি পর্ব-০৮

0
498

গল্পের নাম— #এবং_তুমি♥
লেখিকা— #সোনালী_আহমেদ
পর্ব– ৮

সেদিনের ভয়ংকর স্বপ্নের বিশেষ প্রভাব আমার উপর পড়েছিলো। ইশান এক পলকের জন্য চোখের আড়াল হলেই আমার বুক কাঁপে। নিঃশ্বাস আটকে যায়। সে যতক্ষণ বাসায় থাকে তাকে ততক্ষণ আমি চোখে চোখে রাখি। বারবার তার আশেপাশে ঘুরঘুর করি। সে যখন চলে যায় তখন তার শার্ট আর টিশার্ট গুলো গায়ে জড়িয়ে নেই। চোখ বন্ধ করে ঘরময় পায়চারী করি। বারবার হাতে নিয়ে নাকে লাগিয়ে শুকে শরীরের ঘ্রাণ নিই। কি অদ্ভুত মাতাল করা সুভাস। আমি অন্যরকম হয়ে গেলাম। সারাক্ষণ তাকে নিয়েই ছিলো চিন্তা-ভাবনা। বিষয়গুলো আমি নিয়মের মধ্যে ফেলে দিলাম। ইশান হয়তো খেয়াল করেন না। তিনি আমার সাথে কথাবার্তাও বলেন না। প্রথম দু-দিন ঠিকমতো ঘরে আসলেও এরপর আর সময় মতো আসেন না। রাত -বিরাতে আসেন। কখনও ১ টা কখনও ২ টা এমনকি ৩ টায়ও আসেন। বাড়ীর কারো এ নিয়ে তেমন ম্যাথাব্যাথা নেই। ইশান নাকি আগেও এমন রাত করে আসতো। তার যখন ঘরের চাপ বেশি পড়ে যায় তখন। কিন্তু আমি জানি ইশান এখন কাজের চাপের জন্য নয় বরং আমার উপর রাগের কারণেই এত দেরীতে আসেন। ইশান আমার উপর রেগে আছেন। রীতিমত ভয়ংকর রাগ। তার এই রাগের একমাত্র কারণ হলো চিঠি। ইশান সেদিন বাবার কাছ থেকে জেনেছিলেন আমি চিঠি টা রেখেছি। কিন্তু এ কথা আমি জানতাম না। তাই সে যখন জিজ্ঞেস করেছিলো তখন আমি জবাব দিয়েছিলাম, –না, আমি কোনো চিঠি রাখি নি। তখন ই ইশানের আমার উপর থেকে বিশ্বাস চলে গিয়েছিলো। সে হা হা হা করে হেসে বললো,— তোমাদের স্বভাব ই বোধ হয় মিথ্যা বলা তাই না?
আমি চমকে বললাম,– আমি মিথ্যা বলবো কেনো?

— এত চমকানোর তো কিছু নেই? এটা তো স্বাভাবিক বিষয়, তাই না? তুমি চিঠি রাখতেই পারো। এটা তো তোমাদের প্ল্যানেরই অংশ তাই না।

আমি জবাব দিলাম না। শুধুই আমতা আমতা করছিলাম। ইশান আবারো বললো, —তা চিঠিতে কি নতুন পরিকল্পনা ছিলো? আমাকেও জানাও।

—আমি জানি না।

—ওহ,মাই গড! তাই নাকি?

—আমি সত্যি জানি না। বিশ্বাস করুন, আমি খুলেও দেখি নি। বাবা যেভাবে দিয়েছিলেন ওভাবেই আছে।

ইশান হাসতে হাসতে বললো,

— আমার কপালে কি বোকা লেখা। না মানে তুমি বলছো আর আমি বিশ্বাস করবো। এটা ভাবলে কি করে?

— স্যার,আমি সত্যি কথা বলছি। বিশ্বাস না হলে দেখুন এখনো চিঠিতে আঠা লাগানোই রয়েছে।

ইশান হেসে উড়িয়ে দিলেন। আমি জেদ করে তাকে এনে দেখালাম। সে দেখলো সত্যিই আমি দেখি নি। ইশান চিঠি টা খুললেন। দু এক লাইন পড়েই ভাজ করে ফেললেন। বেশ কিছুক্ষণ খামটির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে গম্ভীর হয়ে বসেছিলেন। আমি বললাম, — কি লেখা ওখানে?

ইশান রেগে বললো,
—নাটক কম করো। তোমরা দুবোন কীভাবে এত নাটক করো আমার জানা নেই। ভাবতেই অবাক লাগে, আমার আন্ডারে এত দিন কাজ করেও তোমাকে আমি চিনতে পারি নি।

আমি অত্যন্ত শান্তস্বরে বললাম,— আমি সত্যিই চিঠির ব্যাপারে কিছুই জানি না।

ইশান থামলেন। ফোস করে নিঃশ্বাস ফেলে কিছুক্ষণ চিন্তা করলেন। আমি তার দিকেই তাকিয়েছিলাম। সে চিঠি নিয়ে উঠে যেতে যেতে বললো, — এভাবে তাকানোর তো কোনো কারণ নেই। প্রেমপত্র নিশ্চই দিবে না। তোমার আর তোমার বাবার যেনো খেয়াল রাখি সেটাই লিখেছে।

—আর কিছু লিখে নি? এত লম্বা চিঠিতে শুধু এ কথা?

— লিখেছে তো। তার প্রেমের কাহিনী। যা পড়ার বিন্দু পরিমাণ ইচ্ছা আমার নেই। তাই এটা এখন আমি ছিঁড়ে ফেলে দিবো।

ইশান ততক্ষণে বেরিয়ে গিয়েছিলো। আমি তখনও ঘোরের মধ্যে ছিলাম। আপা এইসব কথা তো মুখেও বলতে পারতো। চিঠিতে বলার কি দরকার ছিলো। কথাগুলো বিশ্বাস করতে না পারলেও ইশানের বলার ভঙ্গি দেখে বিশ্বাস করে নিলাম। অদ্ভুতভাবে সেদিন থেকে আমার ভেতরে ইশানকে হারানোর ভয় বাসা বেঁধে যায়। অথচ সে আমার কেউই ছিলো না। নাম মাত্র স্বামী ছিলো। যাকে আমি বুঝতেও পারতাম না। ক্ষণে ক্ষণে তার রুপ বদলাতো। কখনো কথা বলে, কখনো কথা বলে না, কখনো কেয়ার করে আবার কখনো ফিরেও দেখে না। আমার মনে হচ্ছিলো, ইশান কোনো দ্বিধায় ভুগছে যার ফলে সে একেকবার একেক রকম আচরণ করছে। তার প্রতি এত মায়া জন্মানোর কারণ আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। শুধু স্বামী বলেই কি এ টান নাকি অন্য কোনো কারণ। এটা ঠিক, বিয়ের পূর্বে তাকে আমি পছন্দ করতাম। পছন্দ টা ঠিক ‘মোহ’র মতো ছিলো। আমার ধারনা টিভি-সিরিয়ালের নায়কদের যেমন পছন্দ করতাম তাকেও ঠিক সেরকম পছন্দ করতাম। শুধু আমি নয়, অফিসের আরো দুজনও পছন্দ করতেন। স্যারের বিয়ের খবর শুনে তো তারা রীতিমত স্ট্রোক করার মতো রিয়েকশন দিয়েছিলেন। আমার অবশ্য তেমন কোনো রিয়েকশন আসে নি। তবে সুচ ফোঁটার মতো একটুখানি সুক্ষ্ম যন্ত্রণা অনুভূত হয়েছিলো।

আজ মাদার-ইন-লো হাইপার হয়ে আছেন। বসার ঘরে সোফায় পা মেলে বসেছেন। আমাদের সবাইকেও বসিয়ে রেখেছেন। শশুড়মশাই এর কপালে চিন্তার ভাজ। আমার ধারনা গুরুত্বর কোনো ঘটনা ঘটেছে। আমার মেঝ ভাসুর এ নিয়ে সাত বার পানি খেয়েছেন। তার অস্থিরতা দেখে মেঝ ভাবী অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। তিনি ফিসফিস করে কতবার যে জিজ্ঞাস করেছেন,-কি হয়েছে? তার কোনো ইয়াত্তা নেই। মেঝ ভাসুর বোধ হয় শুনেন নি। উনার কানে সমস্যা। কম শুনেন। ঠোঁট নাড়তে দেখলে নিজের মতো ধারনা করে কথা বলেন। বেচারি মেঝ ভাবীর কথা কি আর বলবো? তিনি নিজেদের রুমে কথা বললে রাস্তার মানুষ পর্যন্ত শুনেন।
সেদিন আমি ইতস্ত কন্ঠে বললাম,– ভাবী রাতে আপনি একটু আস্তে কথা বলিয়েন। আসলে আমার রুমে সব শুনা যায়।

ভাবী কপাল চাপড়ে দ্বিগুন স্বরে বললেন,– আমি কি সাধে জোরে কথা বলি? তোমার ভাসুর ই তো শুনে না। কাল আমি তাকে বললাম কাছে আসো, সে বলে,– মুতে আসো, আরে আমি তো মাত্রই মুতে এসেছি। আমি আবারো বললাম,— আরে না,কাছে আসো। সে বলে, — না বলো ক্যান? তুমি কি বাথরুমে ডুকে দেখছো আমি মুতি নাই। আমি বললাম,– আরে বাল, বলছি কাছে আসো। সে চিল্লিয়ে বলে, — কাল কখন মুতে আসতো বলছো? কেমন লাগে বলো? তখন রাগে আমি চিল্লিয়ে বলছিলাম,—কাছে আসতে বলছি, শুনছোস। কাছে আসতে বলছি। সে এইবার বুঝলো। কিন্তু বুঝে কি লাভ বলো তো? ততক্ষণে তো আমার রোমান্টিক মুডের বারোটা বেজে গেছিলো।

আমি ভাবির কথায় ভীষণ দুঃখ প্রকাশ করলাম। বেচারির মুখভঙ্গি দেখে হাসার সাহস করলাম না। অথচ তখন আমার দম ফাটা হাসি আসছিলো।

#চলবে….

®সোনালী আহমেদ